আমাদের জীবনটা একটা পথচলা…….??
আল্লাহ আমাদেরকে জান্নাতি হিসেবে কবুল করে নিন।
আমাদের জীবনটা একটা পথচলা…….??
আল্লাহ আমাদেরকে জান্নাতি হিসেবে কবুল করে নিন।
*শাউওয়াল মাসের সিয়াম সম্পর্কে ২০টি মাস‘আলা*
সমাপ্ত
রমযান মাসের সমাপ্তি
ভাইয়েরা আমার! অতি শীঘ্রই রমযান মাস আমাদের নিকট থেকে বিদায় নিচ্ছে ও নতুন একটি মাস আসছে, কিন্তু রমযান মাস আমাদের জন্য সাক্ষী থাকবে। এ মাসে যে ব্যক্তি ভাল আমল করতে পেরেছে, সে যেন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে ও শুভ পরিণামের অপেক্ষায় থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ভাল আমলকারীর আমল নষ্ট করেন না। আর যে ব্যক্তি এ মাসে অন্যায় কাজ করেছে, সে যেন তার প্রভূর কাছে খালেছ তওবা করে। আল্লাহ তাআলা তওবাকারীর তওবা কবুল করেন। তিনি আমাদের জন্য এ পোশাক শেষে এমন কিছু ইবাদত নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন হয়, বৃদ্ধি পায় ঈমানী শক্তি, সমৃদ্ধ হয় আমলনামা। যেমন সদকাতুল ফিতর আদায় করা এবং ঈদের চাঁদ উঠার পর থেকে ঈদের সালাত আদায় পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
﴿ وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٨٥ ﴾ [البقرة: ١٨٥]
‘যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়াত দান করার দরুন আল্লাহর তাআলার মহত্ব বর্ণনা কর (তাকবীর বল)। যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে পার’। {সূরা আল-বাকারা : ১৮৫}
তার পদ্ধতি হল, অধিক হারে নিম্নের এ তাকবীর পড়া :
اللهُ أكْبَرُ اللهُ أكْبَرُ لاَ إلَهَ إَلاَّ الله واللهُ أكْبَرُ اللهُ أكْبَرُ اللهُ أكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
পুরুষগণ ঘরে, বাজারে এবং মসজিদে অর্থাৎ সকল জায়গায় আল্লাহর মহত্বের ঘোষণা দিয়ে ইবাদতের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। উক্ত তাকবীর উচ্চস্বরে বলা সুন্নত। মহিলাদের জন্য নিচু স্বরে বলা সুন্নত। যেহেতু তারা নিজেদের ও নিজেদের কণ্ঠস্বরকে গোপন করার জন্য আদিষ্ট হয়েছে। মুসলমানদের ঈদের দিনটি কত চমৎকার! পূর্ণ একমাস সিয়াম সাধনা শেষে তারা সর্বত্র তাকবীর ধ্বনি দ্বারা আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ব প্রকাশ করে এবং তারা আল্লাহর তাকবীর, প্রশংসা ও একত্ববাদের ঘোষণা দিয়ে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তোলে। তারা আল্লাহর রহমতের আশাবাদী এবং তার আজাবের ভয়ে শংকিত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা ঈদের দিন বান্দাকে ঈদের সালাতের হুকুম দিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে তার উম্মতের নারী-পুরুষ সকলকে আদেশ করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ আল্লাহর হুকুমের মতই।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
﴿ ۞يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَلَا تُبۡطِلُوٓاْ أَعۡمَٰلَكُمۡ ٣٣ ﴾ [محمد: ٣٣]
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর। তোমাদের আমলসমূহকে নষ্ট কর না’। {মুহাম্মদ : ৩৩}
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের ঈদের সালাত আদায়ের জন্য ঈদগাহে যেতে বলেছেন। যদিও তাদের জন্য ঈদের সালাত ব্যতীত অন্যান্য সালাত ঘরে পড়াই উত্তম।
উম্মে আতিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাতে সালাতের উদ্দেশ্যে বের হতে বলেছেন। এমনকি ঋতুবতী নারীকেও। ঋতুবতী নারীগণ সালাতে অংশগ্রহণ করবে না। ঈদগাহের এক পাশে থাকবে এবং দুআয় শরিক হবে। তিনি বলেন, আমি আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের প্রত্যেকের পর্দা করার চাদর নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, সে তার বোনের চাদর নিয়ে হলেও ঈদের সালাতে শরিক হবে।
ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া সুন্নত। আলী বিন আবী তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
العيد ماشيا. رواه الترمذي
বুখারীতের আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি রেশমী পোশাক বাজার থেকে এনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এটা ক্রয় করে ঈদের দিন এবং মেহমানের উপস্থিতিতে ব্যবহার করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেশমী কাপড়ের দরুন অসুন্তুষ্ট হলেন এবং বললেন, রেশমী পোশাক ঐ ব্যক্তিদের জন্য যারা আখেরাতের কিছুই পাবে না। পুরুষের জন্য রেশমী পোশাক বা স্বর্ণালঙ্কার ব্যবহার করা বৈধ নয়। যেহেতু এটা উম্মতে মুহাম্মদীর পুরুষদের জন্য হারাম। নারীগণ সাজসজ্জা ও আতর ব্যবহার ব্যতীত এবং পূর্ণ পর্দাসহ ঈদগাহে যাবে। কারণ তাদেরকে বাইরে বের হওয়ার সময় উলঙ্গপনা, সৌন্দর্য প্রদর্শন এবং সুঘ্রাণ ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। গোপনীয়তা ও পর্দার আদেশ করা হয়েছে। ঈদের সালাত একাগ্র চিত্তে আল্লাহর ভয়-ভীতি সহকারে আদায় করবে। বেশী বেশী করে আল্লাহর জিকির করবে ও দোয়া পড়বে। তার রহমতের আশা ও আজাবের ভয় করবে। সকলে একত্রিত হয়ে আল্লাহকে ডাকার মধ্যে অধিক মর্যাদা আছে। যেহেতু মানুষের মধ্যে কেউ অধিক পুণ্যবান, কেউ আল্লাহ ভীরু, আবার কেউ মধ্যম স্তরের। বিধায় সকলে একত্রিত হয়ে দোয়া ও কান্নাকাটি করা অধিক লাভজনক ও আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
﴿ ٱنظُرۡ كَيۡفَ فَضَّلۡنَا بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۚ وَلَلۡأٓخِرَةُ أَكۡبَرُ دَرَجَٰتٖ وَأَكۡبَرُ تَفۡضِيلٗا ٢١ ﴾ [الاسراء: ٢١]
‘হে নবী, আপনি লক্ষ্য করুন, আমি তাদের কতককে কতকের ওপর সম্মান দান করেছি। আর যে পরকালে মর্যাদা লাভ করে সে প্রকৃত মর্যাদা লাভকারী’। {সূরা বানী ইসরাঈল : ২১}
পোশাক আগনে আল্লাহর নিকট শুকরিয়া জ্ঞাপন করবে। কেননা তিনি বান্দার জন্য সালাত, সিয়াম, কুরআন তেলাওয়াত, সদকা ইত্যাদি ইবাদত সহজ করে দিয়েছেন। ইবাদত করার তাওফীক পাওয়া সবচেয়ে বড় নিয়ামত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
﴿ قُلۡ بِفَضۡلِ ٱللَّهِ وَبِرَحۡمَتِهِۦ فَبِذَٰلِكَ فَلۡيَفۡرَحُواْ هُوَ خَيۡرٞ مِّمَّا يَجۡمَعُونَ ٥٨ ﴾ [يونس: ٥٨]
‘হে নবী! আপনি বলুন, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা প্রাপ্ত হয়েছে, তাদরে এতে খুশি হওয়া উচিৎ। মানুষ যে সম্পদ অর্জন করে, এটা তা থেকে অধিক উত্তম’। {ইঊনুস : ৫৮}
যেহেতু আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় রমযানের সিয়াম ও রাত জাগরণ গুনাহ মাফের উপায়। সুতরাং মুমিনগণ রমযান মাস ফেলে খুশ হয়। আর দূর্বল ঈমানদার রমযান মাস ফেলে নারাজ হয় ও সে সিয়াম পালনকে কষ্টকর মনে করে।
হে আমার ভাই সকল! রমযান মাস শেষ হয়ে গেল। কিন্তু মুমিনের আমল তো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শেষ হবে না।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
﴿ وَٱعۡبُدۡ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأۡتِيَكَ ٱلۡيَقِينُ ٩٩ ﴾ [الحجر: ٩٩]
‘আপনি আপনার প্রভূর ইবাদত করুন, আপনার মৃত্যু আসা পর্যন্ত’। {আল-হিজর : ৯৯}
তিনি আরো ইরশাদ করেন :
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٠٢ ﴾ [ال عمران: ١٠٢]
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে যথাযথ ভয় কর। তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না’। {আলে-ইমরান : ১০৬}
রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে,তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। এখানে মৃত্যুকে মানুষের আমলের সমাপ্তি ধরা হয়েছে। সুতরাং মানুষ যত দিন বেঁচে থাকবে ততদিন রমযান ঘুরে ঘুরে আসতে থাকবে।
আবূ আইউব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
যে ব্যক্তি রমজানে সিয়াম পালন করেব, অতঃপর শাওয়ালের আরো ছয়টি সিয়াম পালন করবে, সে সারা বছর সিয়াম রাখার সমতুল্য সওয়াব প্রাপ্ত হবে। এ ছাড়া প্রতি মাসে তিনটি করে সিয়াম পালন করা। [মুসলিম]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমাকে আমার বন্ধু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি বিষয়ে অসিয়ত করেছেন। এক. প্রতি মাসে তিন দিন সিয়াম পালন করবে। অর্থাৎ আইয়্যামে বিজ বা চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে সিয়াম পালন করবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূজর কে বললেন, হে আবূ জর! তুমি যখন প্রতি মাসে তিন দিন সিয়াম পালন করবে তখন তা ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে পালন করবে। [আহমদ ও নাসায়ী]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আরাফার দিনের সিয়ামের ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি উত্তর দিলেন, তা এক বছরের আগের গুনাহ ও এক বছরের পরের গুনাহের কাফ্ফারা স্বরূপ। আশুরার সিয়াম পূর্বের এক বছরের গুনাহ মাফ মোচন করে দেয়। প্রতি সোমবারের সিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেন, সোমবার আমি জন্মগ্রহণ করেছি ও সোমবার নবুওয়্যাত প্রাপ্ত হয়েছি এবং সোমবার আমার উপর কুরআন নাযিল করা হয়েছে। [মুসলিম]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হল, পোশাক পরে কোন মাসে সিয়াম পালন উত্তম? তিনি উত্তর দিলেন, মুহাররম মাসের সিয়াম। [মুসলিম]
রমযান মাস শেষ হওয়ার দ্বারা রাত জাগরণ শেষ হয় না, বরং বছরের প্রত্যেক রাতে নফল সালাত ও তাহাজ্জুদ পড়ার মাধ্যমে রাত জাগরণ করা উচিৎ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা বছর রাতে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন।
আর রাতের সালাতে সব ধরণের নফল এবং বিতর অন্তর্ভুক্ত। রাতের সালাত দু’ দু’ রাকাত করে আদায় করতে থাকবে। সময় শেষ হওয়ার ভয় হলে এক রাকাত মিলিয়ে বিতর পড়ে নেবে।
দৈনিক ১২ রাকাত সুন্নাতে মুআক্কাদাহ আদায় করবে। চার রাকাত জোহরের পূর্বে ও দু’ রাকাত পরে। দু’ রাকাত মাগরিবের পর। দু’ রাকাত এশার পর ও দু’রাকাত ফজরের পূর্বে।
প্রতি ফরজ সালাত আদায়ের পর কিছু সময় জিকির করবে। যেহেতু জিকির করতে আল্লাহ হুকুম করেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
﴿ فَإِذَا قَضَيۡتُمُ ٱلصَّلَوٰةَ فَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ قِيَٰمٗا وَقُعُودٗا وَعَلَىٰ جُنُوبِكُمۡۚ ﴾ [النساء: ١٠٣]
‘অতঃপর যখন তোমরা সালাত সম্পন্ন কর, তখন দণ্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিকির করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি যখন ফরজ সালাত থেকে সালাম ফিরাতেন, তখন তিনবার ইস্তেগফার করতেন। অতঃপর এ দুআ পড়তেন।
اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ.
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.
তাহলে তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও আল্লাহ তা মাফ করে দিবেন। [মুসলিম]
সুতরাং হে আমার ভাইগণ! আপনারা অধিক পুণ্যের কাজ করুন। পাপ থেকে বেচে থাকুন। যাতে আপনাদের পার্থিব জীবন সুখময় হয়। মৃত্যুর পর চিরস্থায়ী শান্তির অধিকারী হতে পারেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
﴿ مَنۡ عَمِلَ صَٰلِحٗا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَلَنُحۡيِيَنَّهُۥ حَيَوٰةٗ طَيِّبَةٗۖ وَلَنَجۡزِيَنَّهُمۡ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٩٧ ﴾ [النحل: ٩٧]
‘পুরুষ ও নারীদের মধ্য থেকে যে ঈমান সহ সৎকর্ম করে, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে কর্মের উত্তম পুরস্কার দেব’। {আন-নাহল : ৯৭}
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের ঈমানের উপর মজবুত রাখুন এবং আমলে সালেহ করার তাওফীক দিন। হায়াতে তায়্যিবাহ দান করুন। আমাদেরকে পুণ্যবান ব্যক্তির সঙ্গী বানান। সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি বিশ্ব জগতের পালনকর্তা। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার পরিবার, সাহাবা ও সকল সৎকর্মশীল ব্যক্তির উপর। আল্লাহ তাআলা আমাদের ইখলাছের সাথে আমল করার, ঈমান ও সৎ আমলের উপর অটল থাকার তাওফীক দিন ও সৎ কর্মশীলদের অন্তভুক্ত করুন। আমীন
লেখক : মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমিন
অনুবাদক: মোঃ সানাউল্লাহ নাজির আহমদ
সম্পাদনা : আলী হাসান তৈয়ব
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
আল্লাহ্ তাআলার উপর ভরসা ইসলামে একটি বিরাট বিষয়। এর গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম।
আল্লাহর প্রতি ভরসা ছাড়া কোন বান্দাই কোন মূহুর্ত অতিবাহিত করতে পারে না। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও বটে। কেননা এর মাধ্যমে আল্লাহর তাওহীদের সাথে সম্পর্ক গাড় ও গভীর হয়।
আল্লাহ্ বলেন:وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ“আর ভরসা কর সেই জীবিত সত্বার (আল্লাহর) উপর, যিনি কখনো মৃত্যু বরণ করবেন না।” [সূরা ফুরক্বান-৫৮]
এই আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে তাঁর উপর ভরসা করার আদেশ করেছেন। তিনি ছাড়া অন্য কারো নিকট নিজেকে পেশ করবেন না। কেননা তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু নেই। তিনি পরাক্রমশালী, কোন কিছুই তাঁকে পরাজিত করতে পারে না। যে ব্যক্তিই তাঁর উপর নির্ভর করবে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট হবেন- তাকে সাহায্য ও সমর্থন করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো উপর ভরসা করবে, সে তো এমন কিছুর উপর ভরসা করল যে মৃত্যু বরণ করবে, বিলীন ও ক্ষয় হয়ে যাবে। দুর্বলতা ও অপারগতা তাকে চারদিক থেকে ঘিরে রয়েছে। এ কারণে তার প্রতি ভরসা কারীর আবেদন বিনষ্ট হয়ে যায়, সে হয়ে যায় দিশেহারা।
এ থেকেই বুঝা যায় আল্লাহর উপর ভরসা করার ফযীলত ও মর্যাদা কি?! তাঁর সাথে হৃদয়ের সম্পর্ককে গভীর করার গুরুত্ব কতটুকু?!
হাদীছ গ্রন্থ সমূহেও তাওয়াক্কুলের গুরুত্ব ও তার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। ওমার বিন খাত্তাব (রা:) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা যদি সঠিকভাবে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করতে তবে তিনি তোমাদেরকে রিযিক দান করতেন- যেমন পাখিকে রিযিক দান করে থাকেন- তারা খালি পেটে সকালে বের হয় এবং পেট ভর্তি হয়ে রাতে ফিরে আসে।” (আহমাদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনু মাজাহ্)
জাবের বিন আবদুল্লাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন, “কোন প্রাণী তার নির্দিষ্ট রিযিক পরিপূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত সে মৃত্যু বরণ করবে না। সুতরাং তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর এবং রিযিক অনুসন্ধানের জন্য সুন্দর (বৈধ) পন্থা অবলম্বন কর। যা তোমাদের জন্য হালাল করেছেন তা গ্রহণ কর,আর যা হারাম করেছেন তা পরিত্যাগ কর।” (ইবনু মাজাহ্, হাকেম ও ইবনু হিব্বান)
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, বিশুদ্ধভাবে আল্লাহর উপর ভরসার সাথে আবশ্যক হল, জীবিকার উপায়-উপকরণ অনুসন্ধান করা ও কাজ করা- ভরসা করে বসে না থাকা।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,وَاتَّقُوا اللَّهَ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلْالْمُؤْمِنُونَ “তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আর মু’মিনগণ যেন আল্লাহর উপরই ভরসা করে।” [সূরা মায়েদা-১১]
এখানে ভরসা করার সাথে সাথে আল্লাহকে ভয় করার কথা বলা হয়েছে। আর তা নির্দেশিত যাবতীয় বিষয়ের উপকরণকে শামিল করছে। সুতরাং নির্দেশিত উপকরণ অবলম্বন না করে বা কাজ না করে শুধু ভরসা করে বসে থাকা বিরাট ধরণের অপারগতা- যদিও এতে তাওয়াক্কুল পাওয়া যায়। সুতরাং কোন বান্দার জন্য উচিত নয় যে,ভরসাকে অপারগতায় রূপান্তরিত করবে অথবা অপারগতাকে ভরসায় রূপান্তরিত করবে। বরং যে সমস্ত উপকরণ সে অবলম্বন করবে তার মধ্যে ভরসাও শামিল থাকবে।
এ অর্থে একটি হাদীছও বর্ণিত হয়েছে। আনাস (রা:) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন: জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল,হে আল্লাহর রাসূল! উটটিকে বাঁধার পর আল্লাহর উপর ভরসা করব? নাকি আল্লাহর উপর ভরসা করে (না বেঁধেই) ছেড়ে দিব? তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: “আগে তা বেঁধে দাও,তারপর আল্লাহর উপর ভরসা কর।” (তিরমিযী)
উল্লেখ্য যে, ভরসার ক্ষেত্রে মানুষের দুর্বলতা একমাত্র তাক্বদীরের প্রতি ঈমানের দুর্বলতা থেকেই সৃষ্টি হয়। কেননা মানুষ যখন তার যাবতীয় বিষয় আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে, আর তিনি যা ফায়সালা করেন তাতে সন্তুষ্ট হয়ে যায় ও তা পসন্দ করে, তাহলে সে প্রকৃত ভাবে তাওয়াক্কুল বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু সে যদি আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো উপর ভরসা করে এবং তার সাথেই স্বীয় হৃদয়কে সংশ্লিষ্ট করে, তবে নি:সন্দেহে সে লাঞ্ছিত হবে, স্বীয় মহান রব থেকে উদাসীন।
ইবনু মাসঊদ (রা:) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “কোন ব্যক্তি যদি অভাবী হয়, অত:পর তার অভাবের কথা মানুষের কাছে পেশ করে, তবে তার অভাব দুর করা হবে না। আর যে ব্যক্তি তা আল্লাহর কাছে পেশ করে, অনতিবিলম্বে আল্লাহ্ তাকে অভাব মুক্ত করে দিবেন।” (আবু দাউদ )
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া (র:) বলেন: কোন মাখলুকের কাছে যে ব্যক্তি আশা করবে এবং তার উপর ভরসা করবে, তার উক্ত ধারণা নি:সন্দেহে বাতিল হবে এবং সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর সে হবে মুশরিক।
১) এমন বিষয়ে তাওয়াক্কুল করা- যে ব্যাপারে আল্লাহ্ ছাড়া কারো কোন ক্ষমতা নেই। যেমন, কোন কোন মানুষ মৃত ব্যক্তি এবং তাগুতের উপর ভরসা করে এই আশায় যে, তারা তাদেরকে সাহায্য করবে, তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করবে, তাদের জন্য শাফাআত করবে… এগুলো সবই বড় শিরক যা ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে বের করে দিবে।
২) বাহ্যিক উপায়-উপকরণ ও বস্তুর উপর ভরসা করা। যেমন কোন আমীর বা বাদশার উপর ভরসা করা এমন বিষয়ে যা বাস্তবায়নের ক্ষমতা আল্লাহ্ তাকে দিয়েছেন। যেমন চাকরীর ব্যবস্থা করা বা নির্দিষ্ট কোন বিপদ দূর করা। এটা ছোট শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
একজন মানুষ অপরজনকে তার পক্ষ থেকে কোন কাজ আদায় করার দায়িত্ব দেয়া। দায়িত্বপ্রাপ্ত
তাওয়াক্কুলের বাস্তবায়ন এবং বৈধ উপায়-উপকরণ অবলম্বন করার সাথে সাথে হৃদয়কে আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করার জন্য এ উদাহরণটি উল্লেখযোগ্য: রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিজরতের সময় মদিনার দিকে যাওয়ার জন্য মক্কা থেকে উল্টা দিকে গমন করেন। আর তা ছিল রাতের আঁধারে। অত:পর তাঁরা ‘ছওর’নামক গুহায় আত্মগোপন করেন। আবু বকর (রা:) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হিজরতের ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, আমরা যখন ‘গারে ছওরে’ ছিলাম তখন আমি উপর দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখলাম মুশরেকদের পা আমাদের মাথার ঠিক উপরেই। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের কেউ যদি নিজের পায়ের দিকে তাকায় তাহলেই আমাদেরকে দেখতে পাবে। তখন তিনি আমাকে বললেন, “আমাদের দুজন সম্পর্কে তোমার ধারণা কি হে আবু বকর! আল্লাহ্ আমাদের তৃতীয় জন। অর্থাৎ আমাদের সাহায্যকারী।” (বুখারী ও মুসলিম)
আল্লাহ্ বলেন,وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ“যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।” (সূরা ত্বালাক-৩)
আল্লাহ্ আমাদেরকে তাঁর প্রতি সঠিকভাবে ভরসা করার তাওফীক দান করুন। আমীন॥
প্রশ্নঃ তাস বা দাবা খেলা কি ইসলামের দৃষ্টি তে জায়েজ ?
উত্তরঃ উলামাগন স্পষ্ট ভাবে ঘোষনা করেছেন যে, উভয় প্রকার খেলাই হারাম। যেমন আমাদের শেইখ এবং উস্তাদগনও তা উল্লেখ করেছেন। তাদের এই সিদ্ধান্তের কারন এই যে, যে কোন খেলা খেলাতে মানুষের মাঝে উদাস্য ও আল্লাহর জিকির এবং ইবাদতে বাধা সৃস্টি করে। মানে খেলা তাকে নেশার মত আকৃষ্ট করে। আবার অনেক সময় খেলাকে কেন্দ্র করে উভয় দলের খেলোয়াড়দের মাঝে শত্রুতার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। যা মুসলিম সমাজের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে। আবার অনেক সময় খেলোয়াড়দের উপর বাজি ধরা হয়, যা শরিয়তের দৃষ্টিতে হারাম। শরিয়ত শুধু ৩টি প্রতিযোগিতার অনুমতি দিয়েছে, আর তা হলঃ তীর, ঘোড়া, উট এর প্রতিযোগিতা।
অপর দিকে যারা তাস বা দাবা খেলায় মত্ত থাকে,তারা নিজেরাই বুঝতে পারছে যে তারা কিভাবে সময়ের অপচয় করছে। যেখানে কোন আল্লাহভীতির কিছু নেই এবং দুনিয়াবিও কোন সাফল্য নেই!
ফাতাওয়া তে, এখানে মূলত শুধু দাবা কে খাছ করা হয়নি ! সমস্ত খেলার বিধান কেই শামিল করা হয়েছে !
উলামায়ে কেরামকে যারা অবজ্ঞা করে তারা মূলত: ইসলামকেই অবজ্ঞা করে। দেখুন সাহাবায়ে কেরামের ফতোয়া: আলী (রা.) বলেছেন, দাবা হচ্ছে অনারবদের জুয়া। ইবনে ওমারকে দাবা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ওটা পাশা খেলা থেকেও নিকৃষ্ট। আবু মূসা আশআরী বলেন, গুনাহগার ছাড়া কেউ দাবা খেলে না। উবাইদুল্লাহ বিন জা’ফার বলেন, আবু সাঈদ খুদরী রা. দাবা খেলাকে ঘৃণা করতেন। তাবেঈ ইবনে শিহাব যুহরীকে দাবা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এটা বাতিল বিষয়, আর আল্লাহ বাতিল পছন্দ করেন না।
ইমাম মালেক মুয়াত্তায় বলেন, দাবা হচ্ছে পাশা খেলার অন্তর্ভুক্ত। বাইহাকী ৬০১৬।
ঠিক পরের লাইনে আছে, “আর দাবা সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) বলেছেন যে, ওটাতো চওসর থেকেও খারাপ, এটা জুয়া ও পাশার মত।।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আপনার মোবাইল ফোনটি সাইলেন্ট অবস্থায় রেখেছেন, সেই সময়েই হঠাৎ দেখলেন মোবাইলটি খুঁজে পাচ্ছেন না। সাধারণ ভাবে মোবাইল কাছে-পিঠে কোথাও লোপাট হলে, অন্য কোনও ফোন থেকে নিজের নম্বরটি ডায়াল করাই সেই ফোনকে খুঁজে পাওয়ার সহজতম পন্থা। মোবাইলটি বাজতে শুরু করলেই সেই আওয়াজ অনুসরণ করে সহজেই আপনি খুঁজে পেয়ে যাবেন মোবাইলটি। কিন্তু ফোন যদি সাইলেন্ট মোডে থাকে তাহলে এই কৌশল কার্যকর হবে না। তা হলে সেই অবস্থায় কীভাবে খুঁজে পাবেন সেই হারানো মোবাইল? জেনে নিন, কৌশল।