স্বলাতে রাফউল ইয়াদায়েন না করা- এ সংক্রান্ত সহীহ দলিল ও ব্যাখ্যা
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর স্বলাত- এর অংশবিশেষশায়খ মুযাফফর বিন মুহসিন
স্বলাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা এক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। এর পক্ষে শত শত সহিহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে অধিকাংশ মুছল্লী উক্ত সুন্নাতকে প্রত্যাখ্যান করেছে। উক্ত ঠুনকো যুক্তিগুলোর অন্যতম হল, কতিপয় জাল ও যঈফ হাদীছ। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা পেশ করা হল-
✔ ((১) عَنْ عَلْقَمَةَ قَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ مَسْعُوْدٍ أَلَا أُصَلِّىْ بِكُمْ صَلَاةَ رَسُوْلِ اللهِ ؟ قَالَ فَصَلَّى فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلَّا مَرَّةً.
(১) আলক্বামা (রাঃ) বলেন, একদা আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বললেন, আমি কি তোমাদেরকে রাসূল (ﷺ)-এর স্বলাত শিক্ষা দিব না? রাবী বলেন, অতঃপর তিনি স্বলাত পড়ালেন। কিন্তু একবার ছাড়া তিনি তার দুই হাত উত্তোলন করলেন না।[1] উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন কিতাবে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর নামে আরো কতিপয় বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে।[2]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। ইমাম আবুদাঊদ (২০৪-২৭৫ হিঃ) উক্ত হাদীছ বর্ণনা করে বলেন, هَذَا حَدِيْثٌ مُخْتَصَرٌ مِّنْ حَدِيْثٍ طَوِيْلٍ وَلَيْسَ هُوَ بِصَحِيْحٍ عَلَى هَذَا اللَّفْظِ ‘এই হাদীছটি লম্বা হাদীছের সংক্ষিপ্ত রূপ। আর এই শব্দে হাদীছটি সহিহ নয়’।[3] উল্লেখ্য যে, ভারতীয় ছাপা আবুদাঊদে উক্ত মন্তব্য নেই। এর কারণ প্রকাশকরাই ভাল জানেন।
ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (১১৮-১৮১ হিঃ) বলেছেন, স্বলাতে রাফউল ইয়াদায়েন
قَدْ ثَبَتَ حَدِيْثُ مَنْ يَرْفَعُ يَدَيْهِ وَذَكَرَ حَدِيْثَ الزُّهْرِىِّ عَنْ سَالِمٍ عَنْ أَبِيْهِ وَلَمْ يَثْبُتْ حَدِيْثُ ابْنِ مَسْعُوْدٍ أَنَّ النَّبِىَّ لَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلاَّ فِىْ أَوَّلِ مَرَّةٍ.
‘যে ব্যক্তি রাফ‘উল ইয়াদায়েন করে তার হাদীছ সাব্যস্ত হয়েছে। অতঃপর তিনি সালেম বর্ণিত যুহরীর হাদীছ পেশ করেন। তবে রাসূল (ﷺ) একবার ছাড়া রাফ‘উল ইয়াদায়েন করেননি মর্মে ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বর্ণিত হাদীছ সাব্যস্ত হয়নি।[4]
উক্ত হাদীছ সম্পর্কে ইবনু হিববান বলেন,
هَذَا أَحْسَنُ خَبَرٍ رَوَى أَهْلُ الْكُوْفَةِ فِىْ نَفْيِ رَفْعِ الْيَدَيْنِ فِي الصَّلاَةِ عِنْدَ الرُّكُوْعِ وَعِنْدَ الرَّفْعِ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْحَقِيْقَةِ أَضْعَفُ شَيْءٍ يُعَوَّلُ عَلَيْهِ لِأَنَّ لَهُ عِلَلاً تُبْطِلُهُ.
‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ না করার পক্ষে কূফাবাসীদের এটিই সবচেয়ে প্রিয় দলীল হলেও এটিই সবচেয়ে দুর্বল দলীল, যার উপরে নির্ভর করা হয়। কারণ এতে এমন ত্রুটি রয়েছে, যা একে বাতিল বলে গণ্য করে’।[5]
আল্লামা ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) আলোচনা শেষে বলেন,
فَثَبَتَ بِهَذَا كُلِّهِ أَنَّ حَدِيْثَ ابْنِ مَسْعُوْدٍ لَيْسَ بِصَحِيْحٍ وَلاَ بِحَسَنٍ بَلْ هُوَ ضَعِيْفٌ لاَ يَقُوْمُ بِمِثْلِهِ حُجَّةٌ وَأَيْنَ يَقَعُ تَحْسِيْنُ التِّرْمِذِىِّ مَعَ مَا فِيْهِ مِنَ التَّسَاهُلِ وَتَصْحِيْحُ ابْنِ حَزَمٍ مِنْ طَعْنِ أُولَئِكَ الْأَئِمَّةِ.
‘অতএব এ সমস্ত দলীল দ্বারা প্রমাণিত হল যে, ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বর্ণিত হাদীছ সহিহ নয়, হাসানও নয়। বরং যঈফ। এরূপ হাদীছ দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না। কোথায় থাকবে ইমাম তিরমিযীর হাসান বলে মন্তব্য করা, যাতে আছে শৈথিল্য? এছাড়া হাদীছের ইমামগণের দোষারোপের মুখে ইবনু হাযামের সহিহ হওয়ার মন্তব্য কিভাবে গ্রহণযোগ্য হবে?[6]
জ্ঞাতব্য : উক্ত মন্তব্য সমূহের পরও আলবানী এই বর্ণনাকে সহিহ বলে মন্তব্য করেছেন। তবে তিনি যারা রাফ‘উল ইয়াদায়েন করে না, তাদেরকে উক্ত হাদীছের প্রতি আমল করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘রুকূতে যাওয়ার সময় এবং রুকূ থেকে উঠার পর রাফ‘উল ইয়াদায়েন করার পক্ষে রাসূল (ﷺ)-এর পক্ষ থেকে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। বরং মুহাদ্দিছ ওলামায়ে কেরামের নিকট এটি ‘মুতাওয়াতির’ পর্যায়ের বর্ণনা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এছাড়া প্রত্যেক তাকবীরেই রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা সম্পর্কে বহু হাদীছ রয়েছে। ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর সূত্র ছাড়া রাসূল (ﷺ) থেকে এই আমল পরিত্যাগ করার কোন সহিহ প্রমাণ নেই। তবে ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর হাদীছের উপর আমল করা উচিত নয়। কারণ এটি না-বোধক। আর হানাফীসহ অন্যান্যদের নিকট এটি বারবার উল্লেখিত হয় যে, হ্যাঁ-বোধক না-বোধকের উপর প্রাধান্য পায়। একটি হ্যাঁ-বোধক থাকার কারণে যদি এমনটি হয়, তাহলে একটি ঐক্যবদ্ধ জামা‘আত থাকলে এই মাসআলার সিদ্ধান্ত কী হতে পারে?
فَيَلْزَمُهُمْ عَمَلاً بِهَذِهِ الْقَاعِدَةِ مَعَ انْتِفَاءِ الْمُعَارِضِ أَنْ يَّأْخُذُوْا بِالرَّفْعِ وَأَنْ لاَ يَتَعَصَّبُوْا لِلْمَذْهَبِ بَعْدَ قِيَامِ الْحُجَّةِ وَلَكِنَّ الْمُؤَسَّفَ أَنَّهُ لَمْ يَأْخُذْ بِهِ مِنْهُمْ إِلاَّ أَفْرَادٌ مِنَ الْمُتَقَدِّمِيْنَ وَالْمُتَأَخِّرِيْنَ حَتَّى صَارَ التَّرْكُ شِعَارًا لَهُمْ.
‘সুতরাং তাদের উচিত হবে, উক্ত মূলনীতির আলোকে বিরোধিতাকে প্রত্যাখ্যান করে এই আমলকে অাঁকড়ে ধরা। অর্থাৎ তারা রাফ‘উল ইয়াদায়েন করবে এবং দলীল সাব্যস্ত হওয়ার পর মাযহাবী গোঁড়ামী প্রদর্শন করবে না। কিন্তু দুঃখজনক হল, পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের মধ্যে কতিপয় ব্যক্তি ছাড়া, তাদের কেউ এই আমল গ্রহণ করেনি। ফলে উক্ত আমল বর্জন করা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে’।[7]
উল্লেখ্য যে, আলবানীর দোহায় দিয়ে অনেকে উক্ত হাদীছ উল্লেখ করে রাফ‘উল ইয়াদায়েনের বিরুদ্ধে কথা বলেন এবং বিভ্রান্তি ছড়ান। কিন্তু আলবানীর মূল বক্তব্য পেশ করেন না। এটা এক ধরনের প্রতারণা। অতএব পাঠক সমাজ সাবধান!
✔ ((২) عَنْ عَبْدِ الله قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ وَأبِىْ بَكْرٍ وَعُمَرَ فَلَمْ يَرْفَعُوْا أَيْدِيْهِمْ إِلَّا عِنْدَ اِفْتِتَاحِ الصَّلَاةِ.
(২) আব্দুল্লাহ (ইবনু মাস‘ঊদ) (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ), আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-এর সাথে স্বলাত আদায় করেছি, কিন্তু তারা স্বলাত আরম্ভের তাকবীর ছাড়া আর কোথাও হাত উত্তোলন করেননি।[8]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি ভিত্তিহীন।[9] ইমাম বায়হাক্বী ও দারাকুৎনী উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু জাবের এককভাবে বর্ণনাটি উল্লেখ করেছে। হাম্মাদ থেকে এবং সে ইবরাহীম থেকে যঈফ হাদীছ বর্ণনাকারী।[10]
✔ (৩) عَنِ الْبَرَاءِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ رَفَعَ يَدَيْهِ إِلَى قَرِيْبٍ مِنْ أُذْنَيْهِ ثُمَّ لَا يَعُوْدُ.
(৩) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন স্বলাত আরম্ভ করতেন, তখন দুই কানের নিকটবর্তী পর্যন্ত দুই হাত উত্তোলন করতেন। অতঃপর তিনি আর এরূপ করতেন না।[11]
তাহক্বীক্ব : ‘অতঃপর তিনি আর হাত তুলতেন না’ কথাটুকু উক্ত হাদীছের সাথে পরবর্তীতে কেউ সংযোগ করেছে। আর ইমাম আবুদাঊদের ভাষ্য অনুযাযী এটা কূফাতে হয়েছে। কারণ মুসলিম বিশ্বের কোথাও এমনটি ঘটেনি। যেমন ইমাম আবুদাঊদ বলেন,
حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ يَزِيْدَ نَحْوَ حَدِيْثِ شَرِيْكٍ لَمْ يَقُلْ ثُمَّ لَايَعُوْدُ قَالَ سُفْيَانُ قَالَ لَنَا بِالْكُوْفَةِ بَعْدُ ثُمَّ لَايَعْوْدُ. وَرَوَى هَذَا الْحَدِيْثَ هُشَيْمٌ وَخَالِدٌ وَ إِدْرِيْسَ عَنْ يَزِيْدَ لَمْ يَذْكُرُوْا ثُمَّ لَايَعُوْدُ.
‘সুফিয়ান আমাদের কাছে ইয়াযীদ থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন, যা পূর্বের শারীক বর্ণিত হাদীছের ন্যায়। কিন্তু ‘অতঃপর আর করতেন না’ একথা বলেননি। সুফিয়ান বলেন, ‘পরবর্তীতে কূফায় আমাদেরকে উক্ত কথা বলা হয়েছে’। তিনি আরো বলেন, ‘ইয়াযীদ এই হাদীছটি হুশাইম, খালেদ ও ইদরীস থেকে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ‘অতঃপর পুনরায় আর হাত তুলেননি’ কথাটি উল্লেখ করেননি’।[12] তাছাড়াও হাদীছটি যঈফ। এর সনদে ইয়াযীদ বিন আবু যিয়াদ আছে। সে যঈফ রাবী। ইমাম আহমাদ বলেন, হাদীছটি নিতান্তই যঈফ।[13]
আসলে বর্ণনাটি একেবারেই উদ্ভট; বরং একে জাল বলাই শ্রেয়। কারণ ‘পুনরায় আর করেননি’ এই অংশটুকু কূফাতে কোন ব্যক্তি কর্তৃক সংযোজিত হয়েছে। মুহাদ্দিছ আবু ওমর বলেন, ইয়াযীদ একাকী বর্ণনা করেছে। অনেক মুহাদ্দিছ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন, কিন্তু কেউই ‘পুনরায় আর হাত তুলেননি’ এই বক্তব্য উল্লেখ করেননি।[14] ইমাম ইবনু মাঈন বলেন, এই হাদীছের সনদ সহিহ নয়। ইমাম আবুদাঊদ, ইমাম খাত্বাবী, ইমাম আহমাদ, বাযযার প্রমুখ মুহাদ্দিছ এই হাদীছকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। মূলকথা হল, শীর্ষস্থানীয় মুহাদ্দিছগণ এ মর্মে একমত যে, হাদীছের শেষাংশে সংযোজিত বাড়তি অংশটুকু কোন মানুষের তৈরি, হাদীছের অংশ নয়।[15] অতএব উক্ত বর্ণনা কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়।
✔ (৪) حَدَّثَنَا سُفْْيَانُ بِإِسْنَادِهِ بِهَذَا قَالَ فَرَفَعَ يَدَيْهِ فِىْ أَوَّلِ مَرَّةٍ وَقَالَ بَعْضُهُمْ مَرَّةً وَاحَدَةً.
(৪) আবু সুফিয়ান আমাদের কাছে উক্ত সনদে হাদীছ বর্ণনা করে বলেন যে, তিনি প্রথমবার দুই হাত উত্তোলন করেছেন। তাদের কেউ বলেন, মাত্র একবার।[16]
তাহক্বীক্ব : একবার হাত উত্তোলন করা যে কূফার আমল, তা সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ)-এর বর্ণনায় ফুটে উঠেছে। যা পূর্বেও বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে। তাই ইমাম বুখারী ও ইবনু আবী হাতেম এ সংক্রান্ত বর্ণনাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।[17] তাছাড়া কারো ব্যক্তিগত আমল শরী‘আতের দলীল হতে পারে না।
✔ (৫) عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ رَفَعَ يَدَيْهِ حِيْنَ افْتَتَحَ الصَّلَاةَ ثُمَّ لَمْ يَرْفَعْهُمَا حَتَّى اِنْصَرَفَ.
(৫) বারা ইবনু আযেব (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে দেখেছি, তিনি যখন স্বলাত আরম্ভ করতেন, তখন দু’হাত উত্তোলন করতেন। অতঃপর স্বলাত শেষ করা পর্যন্ত তিনি আর দু’হাত উত্তোলন করতেন না।[18]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। এর সনদে ইবনু আবী লায়লা নামে যঈফ রাবী আছে। ইমাম বায়হাক্বী বলেন, তার হাদীছ দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না।[19] তাছাড়া ইমাম আবুদাঊদ হাদীছটি উল্লেখ করে বলেন, هَذَا الْحَدِيْثُ لَيْسَ بِصَحِيْحٍ ‘এই হাদীছ সহিহ নয়’।[20]
(৬) عَنِ اِبْنِ عُمَرَ أنَّ النَّبِىَّ كَانَ يَرْفَعُ يَدَهُ اِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ ثُمَّ لَا يَعُوْدُ.
(৬) ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন স্বলাত আরম্ভ করতেন, তখন দুই হাত উত্তোলন করতেন। অতঃপর আর তুলতেন না।[21]
তাহক্বীক্ব : ইমাম বায়হাক্বী ও হাকেম বলেন, বর্ণনাটি বাতিল ও মিথ্যা।[22]
(৭) عَنْ مُجَاهِدٍ قَالَ صَلَّيْتُ خَلْفَ ابْنِ عُمَرَ فَلَمْ يَكُنْ يَرْفَعُ يَدَيْهِ إِلاَّ فِي التَّكْبِيرَةِ الْأُولَى مِنَ الصَّلَاةِ.
(৭) মুজাহিদ বলেন, আমি ইবনু ওমর (রাঃ)-এর পিছনে স্বলাত আদায় করলাম। তিনি প্রথম তাকবীর ছাড়া আর রাফ‘উল ইয়াদায়েন করলেন না।[23]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আবুবকর ইবনু আইয়াশ নামে একজন রাবী আছে। ইমাম বুখারীসহ অন্যান্য মুহাদ্দিছ তাকে ত্রুটিপূর্ণ বলেছেন।[24] আলবানী বলেন, ‘বর্ণনাটি শায। কারণ এটি অতি পরিচিত হাদীছের বিরোধী।[25]
জ্ঞাতব্য : কেউ কেউ উক্ত বর্ণনাগুলোর আলোকে বলতে চেয়েছেন, ইবনু ওমর (রাঃ) রাসূল (ﷺ)-এর মৃত্যুর পর রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা ছেড়ে দিয়েছিলেন।[26] কিন্তু উক্ত দাবী সঠিক নয়। কারণ অনেক সহিহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে যে, ইবনু ওমর (রাঃ) আজীবন রাফ‘উল ইয়াদায়েন করে স্বলাত আদায় করেছেন। সরাসরি বুখারী ও মুসলিমে সহিহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
عَنْ نَافِعٍ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ إِذَا دَخَلَ فِي الصَّلَاةِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَإِذَا رَكَعَ رَفَعَ يَدَيْهِ وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَفَعَ يَدَيْهِ وَإِذَا قَامَ مِنْ الرَّكْعَتَيْنِ رَفَعَ يَدَيْهِ وَرَفَعَ ذَلِكَ ابْنُ عُمَرَ إِلَى نَبِيِّ اللهِ .
নাফে‘ (রাঃ) বলেন, ইবনু ওমর (রাঃ) যখন স্বলাত শুরু করতেন, তখন তাকবীর দিতেন এবং দুই হাত উত্তোলন করতেন। যখন রুকূ করতেন তখনও দুই হাত উঠাতেন, যখন ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলতেন এবং যখন দুই রাক‘আতের পর দাঁড়াতেন তখনও দুই হাত উত্তোলন করতেন। ইবনু ওমর (রাঃ) এই বিষয়টিকে রাসূল (ﷺ)-এর দিকে সম্বোধন করেছেন।[27]
عَنْ نَافِعٍ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ إِذَا رَأَى رَجُلًا لَا يَرْفَعُ يَدَيْهِ إِذَا رَكَعَ وَإِذَا رَفَعَ رَمَاهُ بِالْحَصَى.
নাফে‘ (রাঃ) বলেন, নিশ্চয় ইবনু ওমর (রাঃ) যখন কোন ব্যক্তিকে দেখতেন যে, সে রুকূতে যাওয়া ও উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করছে না, তখন তিনি তার দিকে পাথর ছুড়ে মারতেন।[28]
সুধী পাঠক! যারা যঈফ, জাল ও মিথ্যা বর্ণনার পক্ষে উকালতি করেন, তারা এখন কী জবাব দিবেন?
✔ (৮) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ مَنْ رَفَعَ يَدَيْهِ فِى الصَّلَاةِ فَلَا صَلَاةَ لَهُ.
(৮) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি স্বলাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করে, তার স্বলাত হয় না’।[29]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি বাতিল বা মিথ্যা।[30] মুহাম্মাদ তাহের পাট্টানী বলেন, ‘এর সনদে মামূন বিন আহমাদ আল-হারূবী রয়েছে, সে দাজ্জাল। সে হাদীছ জালকারী।[31] আবু নু‘আইম বলেন, ‘সে খাবীছ, হাদীছ জালকারী। সে ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির নামে মিথ্যা হাদীছ রচনাকারী’।[32]
✔ (৯) عَنْ أَبِىْ جُعْفَةَ الْقَارِىِّ أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ كَانَ يُصَلِّىْ بِهِمْ فَكَبَّرَ كَمَا حَفَضَ وَرَفَعَ وَكَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حِيْنَ يُكَبِّرُ وَيَفْتَتِحُ الصَّلاَةَ.
(৯) আবু জা‘ফর বলেন, আবু হুরায়রা আমাদের সাথে একদা স্বলাত আদায় করলেন, তিনি স্বলাতে উঠা-বসা করার সময় তাকবীর দিলেন। কিন্তু শুধু স্বলাত শুরুর সময় হাত উঠালেন।[33]
তাহক্বীক্ব : উক্ত শব্দে বর্ণনাটি পরিচিত নয়। বরং এটি সহিহ হাদীছের বিরোধী। কারণ প্রসিদ্ধ হাদীছের মধ্যে একবার রাফ‘উল ইয়াদায়েনের কথা নেই।[34] তাছাড়া আবু হুরায়রা (রাঃ) স্বলাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন মর্মে সহিহ বর্ণনা এসেছে। যেমন-
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّهُ كاَنَ إِذَا كَبَّرَ رَفَعَ يَدَيْهِ وَإِذَا رَكَعَ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوْعِ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) যখন তাকবীর দিতেন, যখন রুকূ করতেন এবং যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন তখন রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[35] সুতরাং আবু হুরায়রা (রাঃ) রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন না- এমন দাবী সঠিক নয়।
✔ (১০) عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ رَفَعَ يَدَيْهِ فِى الرُّكُوْعِ فَلَا صَلَاةَ لَهُ.
(১০) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি রুকূতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করবে, তার স্বলাত হবে না।[36]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা। ইমাম দারাকুৎনী বলেন, ‘মুহাম্মাদ ইবনু উকাশা নামক রাবী হাদীছ জালকারী’।[37] ইমাম জাওযকানী বলেন, ‘এই হাদীছ বাতিল। এর কোন ভিত্তি নেই। মামূন বিন আহমাদ দাজ্জাল, মিথ্যুক, হাদীছ জালকারী।[38]
(১১) عَنْ أَبِىْ حَنِيْفَةَ أَنَّهُ قَالَ مَنْ رَفَعَ يَدَيْهِ فِى الصَّلَاةِ فَسَدَتْ صَلَاتُهُ.
(১১) আবু হানীফা (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি স্বলাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করবে, তার স্বলাত নষ্ট হয়ে যাবে।[39]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা। আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) উক্ত বর্ণনা তার জাল হাদীছের গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেন, ‘এই হাদীছটি মুহাম্মাদ বিন উকাশা আল-কিরমানী জাল করেছে। আল্লাহ তার উপর গযব নাযিল করুন’।[40]
✔ (১২) قَالَ أَبُوْ حَنِيْفَةَ عَنْ حَمَّادٍ عَنْ اِبْرَاهِيْمَ عَنِ الْأسْوَدِ أنَّ عَبْدَ اللهِ ابْنَ مَسْعُوْدٍ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِىْ أَوَّلِ التَّكْبِيْرِ ثُمَّ لَايَعُوْدُ إِلَى شَيْئٍ مِّنْ ذَلِكَ وَيَأْثُرُ ذَلِكَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ .
(১২) আবু হানীফা হাম্মাদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি ইবরাহীম থেকে, ইবরাহীম আসওয়াদ থেকে বর্ণনা করেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) প্রথম তাকবীরে হাত উত্তোলন করতেন। অতঃপর আর হাত উত্তোলন করতেন না। এটা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এরই নিয়ম।[41]
তাহক্বীক্ব : আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর বর্ণনা সম্পর্কে আমরা পূর্বে বিস্তারিত আলোচনা পেশ করেছি। সুতরাং এই বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া এই বর্ণনা অনেক ত্রুটিপূর্ণ। কারণ ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর নামে যে সমস্ত বর্ণনা এসেছে, মুহাদ্দিছগণ সেগুলোর ব্যাপারে অনেক আপত্তি তুলেছেন।[42]
জ্ঞাতব্য : রাফ‘উল ইয়াদায়েন সম্পর্কে ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম আওযাঈ (রহঃ)-এর মাঝে কথোপকথন হয়েছিল মর্মে একটি ঘটনা প্রচলিত আছে। এতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন না করার বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়।[43] অথচ এটা চরম মিথ্যাচার। ওবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন, وَالْقِصَّةُ مَشْهُوْرَةٌ بَيْنَ الْحَنَفِيَّةِ لَكِنْ لاَ يَشُكُّ مَنْ لَهُ أَدْنَى عَقْلٍ وَدِرَايَةٍ أَنَّهَا حِكاَيَةٌ مُخْتَلَقَةٌ وَأَكْذُوْبَةٌ مُخْتَرَعَةٌ ‘হানাফীদের মাঝে ঘটনাটি খুবই প্রসিদ্ধ। কিন্তু যার যৎ-সামান্য জ্ঞান-বুদ্ধি আছে, তার নিকট পরিষ্কার যে, এটি একটি বানোয়াট গল্প ও অভিনব মিথ্যাচার’।[44] এমনকি ‘মুসনাদুল ইমামুল আযম’ গ্রন্থে উক্ত ঘটনা উল্লেখ করা হলেও তার টীকাকার ভিত্তিহীন বলেছেন।[45]
✔ (১৩) عَنْ عَاصِمٍ بْنِ كُلَيْبٍ عَنْ أَبِيْهِ قَالََ رَأَيْتُ عَلِىَّ ابْنَ أَبِىْ طَالِبٍ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِى التَّكْبِيْرَةِ الْأُوْلَى مِنَ الصَّلَاةِ الْمَكْتُوْبَةِ وَلَمْ يَرْفَعُهُمَا فِيْمَا سِوَى ذَلِكَ.
(১৩) আছেম ইবনু কুলাইব তার পিতা হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেছেন, আমি আলী (রাঃ)-কে ফরয স্বলাতের প্রথম তাকবীরে দুই হাত উত্তোলন করতে দেখেছি। এছাড়া তিনি অন্য কোথাও হাত তুলতেন না।[46]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি নিতান্তই দুর্বল। মুহাদ্দিছ ওছমান দারেমী বলেন, আলী (রাঃ)-এর নামে দুর্বল সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম বায়হাক্বী বলেন, আলী সম্পর্কে এই ধারণা সঠিক নয় যে, তিনি রাসূল (ﷺ)-এর কর্মের উপর নিজের কর্ম প্রাধান্য দিয়েছেন। বরং এর রাবী আবুবকর নাহশালীই দুর্বল। কারণ সে এমন রাবী নয়, যার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় এবং কোন সুন্নাত সাব্যস্ত হয়। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, আলী, ইবনু মাস‘ঊদ এবং তাদের থেকে যারা হাদীছ বর্ণনা করেছেন, তারা স্বলাতের শুরুতে ছাড়া রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন না মর্মে যে কথা বর্ণিত হয়েছে তা সঠিক নয়।[47]
✔ (১৪) عَنْ أَبِىْ إِسْحَاقَ قَالَ كَانَ أَصْحَابُ عَبْدِ اللهِ وَأَصْحَابُ عَلِىٍّ لاَ يَرْفَعُوْنَ أَيْدِيْهِمْ إِلاَّ فِىْ افْتِتَاحِ الصَّلاَةِ قَالَ وَكِيْعٌ ثُمَّ لاَ يَعُوْدُوْنَ.
(১৪) আবু ইসহাক্ব বলেন, আব্দুল্লাহ (ইবনু মাসঊদ) ও আলী (রাঃ)-এর সাথীরা কেউই স্বলাতের শুরুতে ছাড়া তাদের হাত উঠাতেন না। ওয়াকী বলেন, তারা আর হাত উঠাতেন না।[48]
তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনাও মুনকার। কারণ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর পক্ষে কিছু বর্ণনা পাওয়া গেলেও আলী (রাঃ) সম্পর্কে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করার স্পষ্ট সহিহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।[49] সুতরাং উপরের বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
عَنْ عَلِىِّ بْنِ أَبِىْ طَالِبٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ أَنَّهُ كَانَ إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلاَةِ الْمَكْتُوْبَةِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ وَيَصْنَعُ مِثْلَ ذَلِكَ إِذَا قَضَى قِرَاءَتَهُ وَأَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ وَيَصْنَعُهُ إِذَا رَفَعَ مِنَ الرُّكُوْعِ وَلاَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِى شَىْءٍ مِنْ صَلاَتِهِ وَهُوَ قَاعِدٌ وَإِذَا قَامَ مِنَ السَّجْدَتَيْنِ رَفَعَ يَدَيْهِ كَذَلِكَ وَكَبَّرَ.
আলী (রাঃ) রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি যখন ফরয স্বলাতে দাঁড়াতেন, তখন তাকবীর দিতেন এবং কাঁধ বরাবর দুই হাত উত্তোলন করতেন। যখন তিনি ক্বিরাআত শেষ করতেন ও রুকূতে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখনও তিনি অনুরূপ করতেন। যখন তিনি রুকূ থেকে উঠতেন তখনও তিনি অনুরূপ করতেন। তবে বসা অবস্থায় তিনি রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন না। কিন্তু যখন তিনি দুই রাক‘আত শেষ করে দাঁড়াতেন, তখন অনুরূপ রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন এবং তাকবীর দিতেন। [50]
সুধী পাঠক! যারা উক্ত মিথ্যা বর্ণনার পক্ষে উকালতি করেন, তারা কি আলী (রাঃ)-কে রাসূল (ﷺ)-এর অবাধ্য প্রমাণ করতে চান?
✔ (১৫) عَنِ الْأَسْوَدِ قَالَ رَأَيْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِىْ أَوَّلِ تَكْبِيْرَةٍ ثُمَّ لَا يَعُوْدُ.
(১৫) আসওয়াদ (রাঃ) বলেন, আমি ওমর (রাঃ)-কে একবার দুই হাত উত্তোলন করতে দেখেছি। অতঃপর তিনি আর করতেন না।[51] উল্লেখ্য যে, উক্ত মর্মে ওমর (রাঃ)-এর নামে আরো কিছু বর্ণনা এসেছে।[52]
তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনা যঈফ। ইমাম হাকেম বলেন, ‘বর্ণনাটি অপরিচিত। এর দ্বারা দলীল সাব্যস্ত করা যাবে না’।[53] যদিও ইমাম তাহাবী তাকে বিশুদ্ধ বলতে চেয়েছেন।[54] কিন্তু ইবনুল জাওযী তার দাবীকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।[55] মূলতঃ ওমর (রাঃ)-এর নামে এ সমস্ত বর্ণনা উল্লেখ করাই মিথ্যাচার। কারণ ওমর (রাঃ) রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন মর্মে সহিহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ عُمَرَ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِى الرُّكُوْعِ وَعِنْدَ الرَّفْعِ مِنْهُ.
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ওমর (রাঃ) রুকূতে যাওয়ার সময় এবং রুকূ থেকে উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[56]
✔ (১৬) عَنِ اِبْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُ قَالَ الْعَشَرَةُ الَّذِيْنَ شَهِدَ لَهُمُ النَّبِىُّ الجْنَةَ مَاكَانُوْا يَرْفَعُوْنَ أَيْدِيْهِمْ إِلَّا فِىْ اِفْتِتَاحِ الصَّلَاةِ.
(১৬) ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) যে দশজন ছাহাবীর জন্য জান্নাতের সাক্ষ্য দিয়েছেন, তারা কেউই স্বলাতের শুরুতে ছাড়া রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন না।[57]
তাহকবীক্ব : বর্ণনাটি জাল। আলাউদ্দীন আল-কাসানী (মৃঃ ৫৮৮) তার ‘বাদাইউছ ছানায়ে‘-এর মধ্যে উল্লেখ করেছেন। সেখান থেকে আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী সহিহ বুখারী ও আবুদাঊদের ভাষ্যে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কেউই কোন সূত্র উল্লেখ করেননি। মূলতঃ উক্ত বর্ণনা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। ড. তাক্বিউদ্দীন বলেন, وَلاَ عِبْرَةَ بِهَذَا الْأَثَرِ مَا لَمْ يُوْجَدْ سَنَدُهُ عِنْدَ مَهْرَةِ الْفَنِّ مَعَ ثُبُوْتِ خِلاَفِهِ فِىْ كُتُبِ الْحَدِيْثِ ‘এই সনদে কোন উপদেশ নেই। কারণ এ বিষয়ে যারা বিশেষজ্ঞ তাদের নিকটেই এর সনদে কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তাছাড়াও হাদীছের গ্রন্থ সমূহে এর বিরোধী দলীলই বিদ্যমান’।[58] কারণ ইবনু আববাস (রাঃ) নিজে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন মর্মে সহিহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
عَنْ أَبِىْ حَمْزَةَ مَوْلَى بَنِىْ أَسَدٍ قَالَ رَأَيْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ يَرْفَعُ يَدَيْهِ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلاَةَ وَإِذَا رَكَعَ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوْعِ.
বনী আসাদের গোলাম আবু হামযাহ বলেন, আমি ইবনু আববাস (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি যখন স্বলাত শুরু করতেন, যখন রুকূ করতেন এবং যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন তখন রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[59]
عَنْ عَطَاءٍ قَالَ رَأَيْتُ أَبَا سَعِيْدٍ الْخُدْرِيَّ وَابْنَ عُمَرَ وَابْنَ عَبَّاسٍ وَابْنَ الزُّبَيْرِ يَرْفَعُوْنَ أَيْدِيَهُمْ.
আত্বা (রাঃ) বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরী, ইবনু ওমর, ইবনু আববাস ও ইবনু যুবাইর (রাঃ)-কে দেখেছি, তারা সকলেই স্বলাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[60]
✔ (17) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِي اللهُ تَعَالَى عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ قَالَ لا تُرْفَعُ الأَيْدِىْ إِلاَّ فِىْ سَبْعِ مَوَاطِنَ حِيْنَ يَفْتَتِحُ الصَّلاةَ وَحِيْنَ يَدْخُلُ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ فَيَنْظُرُ إِلَى الْبَيْتِ وَحِيْنَ يَقُوْمُ عَلَى الصَّفَا وَحِيْنَ يَقُوْمُ عَلَى الْمَرْوَةِ وَحِيْنَ يَقِفُ مَعَ النَّاسِ عَشِيَّةَ عَرَفَةَ وبِجَمْعٍ وَالْمَقامَيْنِ حِيْنَ يَرْمِى الْجَمْرَةَ.
(১৭) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন, সাতটি স্থান ব্যতীত হাত উত্তোলন করা যাবে না। যখন স্বলাত শুরু করবে, যখন মসজিদে হারামে প্রবেশ করে কা‘বা ঘর দেখবে, যখন ছাফা ও মারওয়া পাহাড়ে উঠবে, যখন আরাফার ময়দানে সকলে একত্রে অবস্থান করবে এবং যখন পাথর মারবে তখন দুই স্থানে হাত উত্তোলন করবে।[61]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি মিথ্যা ও বাতিল।[62] এমনকি ‘হেদায়ার’ ভাষ্যকার ইবনুল হুমামও তার বিরোধিতা করেছেন। যেমন-
لَمْ يَسْمَعِ الْحَكَمُ عَنْ مَقْسَمٍ إِلاَّ أَرْبَعَةَ أَحَادِيْثَ لَيْسَ هَذَا مِنْهَا فَهُوَ مُرْسَلٌ وَغَيْرُ مَحْفُوْظٍ قَالَ وَأَيْضًا فَهُمْ يَعْنِي أَصْحَابَنَا خَالَفُوْا هَذَا الْحَدِيْثَ فِىْ تَكْبِيْرَاتِ الْعِيْدَيْنِ وَتَكْبِيْرَةِ الْقُنُوْتِ.
‘হাকাম মাক্বসাম থেকে মাত্র চারটি হাদীছ শুনেছে। সেগুলোর মধ্যেও এটি নেই। সুতরাং তা মুরসাল ও অরক্ষিত। তাছাড়া আমাদের মাযহাবের লোকেরা ঈদ ও জানাযার তাকবীরের ব্যাপারে বিরোধীতা করেছে।[63] দুঃখজনক হল, উক্ত বাতিল বর্ণনার আলোকেই ‘হেদায়া’ কিতাবে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতে নিষেধ করে বলা হয়েছে যে,وَلَا يَرْفَعُ يَدَيْهِ إلَّا فِي التَّكْبِيْرَةِ الْأُولَى ‘প্রথম তাকবীর ছাড়া আর হাত উঠাবে না’। উক্ত বর্ণনাটি যাচাই না করেই ‘হেদায়া’ গ্রন্থকার রাফ‘উল ইয়াদায়েনের বিরুদ্ধে উক্ত বর্ণনা পেশ করেছেন।[64]
সুধী পাঠক! জাল ও যঈফ হাদীছ পেশ করে যদি সুন্নাতের উপর আমল করতে বাধা প্রদান করা হয়, তবে মানুষ কিভাবে হাদীছের দিকে ফিরে আসবে? পরবর্তীতে মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) যে উদারতা প্রদর্শন করেছেন তাও ‘হেদায়া’ সংকলক দেখাতে পারেননি। মাওলানা রাফ‘উল ইয়াদায়েনের পক্ষে লিখেছেন, ‘রুকু করার নিয়মঃ রাসূলুল্লাহ (ছ) কেরাআত শেষে সামান্য কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে তার পর তাকবীরে তাহরীমার সময়ের মত উভয় হাত তুলে তাকবীর বলতেন এবং রুকুতে যেতেন’।[65]
✔ মানসূখ সংক্রান্ত বর্ণনা : হাদীছ জাল করার এক অভিনব কৌশল
✔ অবশেষে যখন রাফ‘উল ইয়াদায়েনকে প্রতিরোধ করার আর কোন পথ পাওয়া যায়নি তখন বলা হয়েছে যে, রাফ‘উল ইয়াদায়েনের হাদীছগুলো মানসূখ বা হুকুম রহিত হয়ে গেছে। অথচ উক্ত দাবীর পক্ষে যে সমস্ত বর্ণনা পেশ করা হয় তা ডাহা মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক।
(১৮) أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنِ الزُّبَيْرِ رَاىَ رَجُلًا يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِى الصَّلَاةِ عِنْدَ الرُّكُوْعِ وَعِنْدَ رَفْعِ رَأْسِهِ مِنَ الرُّكُوْعِ فَقَالَ لَا تَفْعَلْ فَإنَّ هَذَا شَيْىٌ فَعَلَهُ رَسُوْلُ اللهِ ثُمَّ تَرَكَهُ.
(১৮) একদা আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ) এক ব্যক্তিকে দেখলেন, স্বলাতে রুকূতে যাওয়ার সময় ও রুকূ হতে উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করছে। তিনি তখন বললেন, তুমি এটা কর না। কারণ এগুলো সবই রাসূল (ﷺ) করেছেন, তবে পরবর্তীতে বাদ দিয়েছেন।[1]
তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনা মিথ্যা ও বাতিল। রাফ‘উল ইয়াদায়েনের প্রসিদ্ধ আমলকে প্রতিরোধ করার জন্য উক্ত মিথ্যা বর্ণনা রচনা করা হয়েছে। কারণ উক্ত বর্ণনা কোন হাদীছ গ্রন্থে পাওয়া যায় না। যেমন মুওয়াত্ত্বা মুহাম্মাদের ভাষ্যকার বলেন,
لَكِنَّ هَذَا الْأَثَرَ لَمْ يَجِدْهُ الْمُخَرِّجُوْنَ الْمُحَدِّثُوْنَ مُسْنَدًا فِىْ كُتُبِ الْحَدِيْثِ مَعَ أَنَّهُ أَخْرَجَ الْبُخَارِىٌّ فِىْ رِسَالَةِ رَفْعِ الْيَدَيْنِ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الزُّبَيْرِ أَنَّهُ كاَنَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ عِنْدَ الْخَفْضِ وَالرَّفْعِ.
‘কিন্তু এই আছারের সন্ধান কোন মুহাদ্দিছ কোন হাদীছ গ্রন্থে পাননি। বরং ইমাম বুখারী তার ‘জুযউ রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ) রুকূতে যাওয়া ও রুকূ থেকে উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[2]
অথচ ‘হেদায়া’ কিতাবে বলা হয়েছে, وَاَلَّذِىْ يُرْوَى مِنْ الرَّفْعِ مَحْمُوْلٌ عَلَى الِابْتِدَاءِ كَذَا نُقِلَ عَنِ ابْنِ الزُّبَيْرِ ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে, তা মূলতঃ ইসলামের প্রথম যুগের বিষয়। যেমন ইবনু যুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে’।[3] সেই সাথে হেদায়ার টীকাকার হাশিয়ার মধ্যে ইবনু যুবাইরের বর্ণনা উল্লেখ করেছেন।[4] তাছাড়া বাংলায় অনুবাদ করতে গিয়ে অনুবাদকমন্ডলী টীকায় উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করেছেন।[5] অথচ তার যে কোন ভিত্তি নেই সে বিষয়টি লক্ষ্য করেননি। এই মিথ্যাচার সম্পর্কে অনুবাদকমন্ডলীকে জিজ্ঞেস করলে তারা কী জবাব দিবেন?
আরো আফসোসের বিষয় হল, ইমাম বুখারী সহিহ বুখারীতে রাফ‘উল ইয়াদায়েনের পাঁচটি হাদীছ পেশ করেছেন। সেই হাদীছগুলোকে রদ করার জন্য তার টীকায় ভাষ্যকার আহমাদ আলী সাহারাণপুরী উক্ত মিথ্যা বর্ণনা উল্লেখ করেছেন।[6] অনুরূপভাবে আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ আল-বুখারীতে রাফঊল ইয়াদায়েনের হাদীছগুলোকে যবাই করার জন্য উক্ত বানোয়াট বর্ণনা পেশ করা হয়েছে এবং এই অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতকে বাতিল আখ্যা দেয়া হয়েছে।[7] অনুবাদকমন্ডলী এবং প্রকাশক বিচারের মাঠে আল্লাহর সামনে কী জবাব দিবেন?
সুধী পাঠক! এটাই হল ফেক্বহী গ্রন্থের আসল চেহারা। মাযহাবকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য হাদীছের উপর এভাবেই আক্রমণ করা হয়েছে। অন্যদিকে আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর (রাঃ)-এর উপর মিথ্যাচার করা হয়েছে। কারণ তিনি যে নিজেই রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন তার প্রমাণে ইমাম বুখারী সহিহ হাদীছ বর্ণনা করেছেন।
عَنْ عَطَاءٍ قَالَ رَأَيْتُ أَبَا سَعِيْدٍ الْخُدْرِيَّ وَابْنَ عُمَرَ وَابْنَ عَبَّاسٍ وَابْنَ الزُّبَيْرِ يَرْفَعُوْنَ أَيْدِيَهُمْ.
আত্বা (রাঃ) বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরী, ইবনু ওমর, ইবনু আববাস ও ইবনু যুবাইর (রাঃ)-কে দেখেছি, তারা সকলেই স্বলাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[8]
অতএব পাঠক সমাজকে সহিহ দলীলের দিকে ফিরে আসতে হবে। বানোয়াট বর্ণনা ও প্রতারণা থেকে সাবধান থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন- আমীন!
✔ (19) عَنِ ابْن عَبَّاس قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَرْفَعُ يَدَيْهِ كُلّمَا رَكَعَ وَكُلَّمَا رَفَعَ ثمَّ صَارَ إِلَى افْتِتَاح الصَّلَاة وَتَرَكَ مَا سِوَى ذَلِك.
(১৯) ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) যখন রুকূ করতেন এবং রুকূ থেকে উঠতেন, তখন দুই হাত উত্তোলন করতেন। পরে তিনি শুধু স্বলাত শুরু করার সময় করতেন। আর অন্যান্য স্থানে ছেড়ে দিতেন।[9]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল ও বানোয়াট। ইবনুল জাওযী বলেন, هَذَانَ الْحَدِيْثَانِ لاَ يَعْرِفَانِ أَصْلاً وَإِنَّمَا الْمَحْفُوْظُ عَنْهُمَا خِلاَفُ ذَلِكَ (ইবনু আববাস ও যুবাইর-এর নামে বর্ণিত) ‘এই দুই হাদীছের কোন ভিত্তি নেই। বরং তাদের থেকে এর বিরোধী যা বর্ণিত হয়েছে, তা-ই সহিহ’। ড. তাক্বিউদ্দীন বলেন, لَكِنَّهُ أَثَرٌ لَمْ يَثْبُتْهُ الْمُحَدِّثُوْنَ وَالثَّابِتُ عَنْدَهُمْ خِلاَفُهُ ‘বরং এটি এমন আছার, মুহাদ্দিছগণই যার সন্ধান পাননি। বরং তাঁদের নিকট থেকে এর বিরোধী বর্ণনাই প্রমাণিত’।[10]
সুধী পাঠক! রাসূল (ﷺ) যদি পরবর্তীতে উক্ত আমল ছেড়ে দেন, তাহলে ইবনু আববাস (রাঃ) নিজে কেন রাফ‘উল ইয়াদায়েন করবেন? মূলতঃ উক্ত বর্ণনাটি পেশ করে তার নামে মিথ্যাচার করা হয়েছে। কারণ সহিহ হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ حَمْزَةَ مَوْلَى بَنِىْ أَسَدٍ قَالَ رَأَيْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ يَرْفَعُ يَدَيْهِ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلاَةَ وَإِذَا رَكَعَ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوْعِ.
বনী আসাদের গোলাম আবু হামযাহ বলেন, আমি ইবনু আববাস (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি যখন স্বলাত শুরু করতেন, যখন রুকূ করতেন এবং যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন তখন রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[11]
✔ (20) عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ رَفَعَ رَسُوْلُ اللهِ فَرَفَعْنَا وَتَرَكَ فَتَرَكْنَا.
(২০) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) হাত উত্তোলন করতেন আমরাও করতাম। তিনি ছেড়ে দিয়েছেন আমরাও ছেড়ে দিয়েছি।[12]
তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আলাউদ্দীন আল-কাসানী উক্ত বানোয়াট বর্ণনা পেশ করে রাফ‘উল ইয়াদায়েনের সুন্নাতকে মানসূখ সাব্যস্ত করতে চেয়েছেন।[13] একজন জলীলুল ক্বদও ছাহাবীর নামে উক্ত বর্ণনা পেশ করার পূর্বে যাচাই করার দরকার ছিল। এ সমস্ত মাযহাবী গোঁড়ামী অত্যন্ত দুঃখজনক।
জ্ঞাতব্য : রাফ‘উল ইয়াদায়েনের সুন্নাতকে রহিত করার জন্য আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর, আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এই অন্যতম শ্রেষ্ঠ কয়েকজন ছাহাবীর নামে উক্ত হাদীছগুলো জাল করা হয়েছে। যাতে করে সহজেই সাধারণ মানুষকে উক্ত প্রতারণার জালে আটকানো যায়। বাস্তবতাও তাই। অসংখ্য মুছল্লী এই ধোঁকায় পড়ে গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত থেকে বঞ্চিত হয়েছে। উক্ত সুন্নাত থেকে মুছল্লীদেরকে বিরত রাখার জন্য গভীর খাল খনন করেছেন ‘দলিলসহ স্বলাতের মাসায়েল’ বইয়ের লেখক আব্দুল মতিন। তার সামনে সহিহ হাদীছগুলো প্রকাশিত হওয়ার পরও মানসূখ বলে বাতিল সাব্যস্ত করেছেন এবং জাল ও যঈফ বর্ণনা দ্বারা সুন্নাতের বিরোধিতা করেছেন।[14] এর পরিণাম যে কত ভয়াবহ তা হয়ত তিনি ভুলে গেছেন (সূরা নিসা ১১৫)।
✔ মানসূখ কাহিনী : ঐতিহাসিক মিথ্যাচার
রাফ‘উল ইয়াদায়েনের সুন্নাতকে প্রতিরোধ করার জন্য হুকুম রহিত হওয়ার যে কাহিনী পেশ করা হয় তা মূলতঃ মিথ্যাচার। কারণ রাসূল (ﷺ) যদি পরবর্তীতে উক্ত আমল ছেড়ে দিতেন, তাহলে ছাহাবায়ে কেরাম কেন করবেন? বরং রাসূল (ﷺ) নিজেই মৃত্যু পর্যন্ত উক্ত আমল অব্যাহত রেখেছিলেন।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ إِذا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ رَفَعَ يَدَيْهِ وَإِذَا رَكَعَ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوْعِ وَكَانَ لَا يَفْعَلُ ذَلِكَ فِى السُّجُوْدِ فَمَا زَالَتْ تِلْكَ صلَاتُهُ حَتَّى لَقِىَ اللهَ تَعَالَى.
ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) যখন স্বলাত শুরু করতেন, যখন রুকূতে যেতেন এবং যখন রুকূ হতে মাথা উত্তোলন করতেন, তখন রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন। সিজদার সময় তিনি এমনটি করতেন না। আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করা পর্যন্ত তাঁর স্বলাত সর্বদা এরূপই ছিল।[1]
عَنْ أَبِىْ حُمَيْدِ السَّاعِدِىِّ قَالَ فِىْ عَشَرَةٍ مِنْ أَصْحَابِ رَسُوْلِ اللهِ أَنَا أَعْلَمُكُمْ بِصَلَاةِ رَسُوْلِ اللهِ قَالُوْا فَاعْرِضْ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلَاة يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ ثُمَّ يُكَبِّرُ ثُمَّ يَقْرَأُ ثُمَّ يُكَبِّرُ وَيَرْفَعُ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ ثُمَّ يَرْكَعُ وَيَضَعُ رَاحَتَيْهِ عَلَى رُكْبَتَيْهِ ثُمَّ يَعْتَدِلُ فَلَا يُصَبِّي رَأْسَهُ وَلَا يُقْنِعُ ثُمَّ يَرْفَعُ رَأْسَهُ فَيَقُوْلُ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ ثُمَّ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ مُعْتَدِلًا ثُمَّ يَقُوْلُ اللهُ أَكْبَرُ ثُمَّ يَهْوِىْ إِلَى الْأَرْضِ سَاجِدًا فَيُجَافِىْ يَدَيْهِ عَن جَنْبَيْهِ وَيَفْتَحُ أَصَابِعَ رِجْلَيْهِ ثُمَّ يَرْفَعُ رَأْسَهُ وَيُثْنِىْ رِجْلَهُ الْيُسْرَى فَيَقْعُدُ عَلَيْهَا ثُمَّ يَعْتَدِلُ حَتَّى يَرْجِعَ كُلَّ عَظْمٍ إِلَى مَوْضِعِهِ مُعْتَدِلًا ثُمَّ يَسْجُدُ ثُمَّ يَقُوْلُ اللهُ أَكْبَرُ وَيَرْفَعُ وَيَثْنِىْ رِجْلَهُ الْيُسْرَى فَيَقْعُدُ عَلَيْهَا ثُمَّ يَعْتَدِلُ حَتَّى يَرْجِعَ كُلُّ عَظْمٍ إِلَى مَوْضِعِهِ ثُمَّ يَنْهَضُ ثُمَّ يَصْنَعُ فِي الرَّكْعَةِ الثَّانِيَةِ مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ إِذَا قَامَ مِنَ الرَّكْعَتَيْنِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ كَمَا كَبَّرَ عِنْدَ افْتِتَاحِ الصَّلَاةِ ثُمَّ يَصْنَعُ ذَلِكَ فِي بَقِيَّةِ صَلَاتِهِ حَتَّى إِذَا كَانَتِ السَّجْدَةُ الَّتِىْ فِيهَا التَّسْلِيْمُ أَخَّرَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَقَعَدَ مُتَوَرِّكًا عَلَى شِقِّهِ الْأَيْسَرِ ثُمَّ سَلَّمَ. قَالُوْا صَدَقْتَ هَكَذَا كَانَ يُصَلِّىْ.
আবু হুমাইদ সায়েদী (রাঃ) একদা রাসূল (ﷺ)-এর দশ জন ছাহাবীর কাছে বললেন, আমি রাসূল (ﷺ)-এর স্বলাত সম্পর্কে আপনাদের অপেক্ষা অধিক অবগত। তাঁরা বললেন, তাহলে আমাদের কাছে পেশ করুন। তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন স্বলাতের জন্য দাঁড়াতেন, তখন দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন এবং তাকবীর বলতেন। তারপর ক্বিরাআত পড়তেন। অতঃপর তাকবীর বলতেন এবং কাঁধ বরাবর দুই হাত উঠাতেন। অতঃপর রুকূ করতেন এবং দুই হাতের তালু দুই হাঁটুর উপরে রাখতেন। এ সময় পিঠ সোজা রাখতেন। অতঃপর রুকূ করতেন ও ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলতেন এবং সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। অতঃপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সিজদার জন্য যমীনের দিকে ঝুঁকে সিজদা করতেন। এ সময় দুই হাত দুই পার্শ্ব হতে পৃথক রাখতেন এবং দুই পায়ের আঙ্গুলসমূহ ক্বিবলার দিকে মুড়িয়ে দিতেন। তারপর বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসতেন। অতঃপর তিনি সোজা হয়ে বসতেন, যাতে প্রত্যেক হাড় নিজ নিজ জায়গায় ফিরে যায়। অতঃপর (দ্বিতীয়) সিজদা করতেন। তারপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে মাথা উঠাতেন এবং বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসতেন। এমনভাবে বসতেন, যাতে সমস্ত হাড় নিজ জায়গায় ফিরে যায়।
অতঃপর দ্বিতীয় রাক‘আতের জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন। দ্বিতীয় রাক‘আতেও অনুরূপ করতেন। অতঃপর যখন দুই রাক‘আতের পর দাঁড়াতেন, তখন তাকবীর দিতেন এবং কাঁধ বরাবর দুই হাত উত্তোলন করতেন, যেমন প্রথম তাকবীরের সময় করেছিলেন। অবশিষ্ট স্বলাতেও তিনি অনুরূপ করতেন। অবশেষে যখন শেষ রাক‘আতে পৌঁছতেন, তখন বাম পা ডান দিকে বের করে দিতেন এবং বাম নিতম্বের উপর বসতেন। অতঃপর সালাম ফিরাতেন। তখন উক্ত ছাহাবীরা বললেন, আপনি সত্যিই বলেছেন। রাসূল (ﷺ) এভাবেই স্বলাত আদায় করতেন।[2]
সুধী পাঠক! রাসূল (ﷺ)-এর মৃত্যুর পর ছাহাবীরা কিভাবে স্বলাত আদায় করতেন, তার বাস্তব চিত্র উক্ত হাদীছে ফুটে উঠেছে। তাহলে মানসূখ কাহিনী কোথায় পাওয়া গেল?
عَنِ الْحَسَنِ قَالَ كَانَ أَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ يَرْفَعُوْنَ أَيْدِيَهُمْ إِذَا رَكَعُوْا وَإِذَا رَفَعُوْا رُءُوْسَهُمْ مِنَ الرُّكُوْعِ كَأَنَّمَا أَيْدِيْهُمْ مَرَاوِحُ.
হাসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)-এর ছাহাবীগণ যখন রুকূ করতেন এবং যখন রুকূ হতে তাদের মাথা উঠাতেন, তখন তারা রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন। তাদের হাতগুলো তখন পাখার মত মনে হত।[3]
عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ رَفْعِ الْيَدَيْنِ فِى الصَّلاَةِ فَقَالَ هُوَ شَىْءٌ يُزَيِّنُ بِهِ الرَّجُلُ صَلاَتَهُ كَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ يَرْفَعُوْنَ أَيْدِيَهُمْ فِى الاِفْتِتَاحِ وَعِنْدَ الرُّكُوْعِ وَإِذَا رَفَعُوْا رُءُوْسَهُمْ.
সাঈদ ইবনু জুবাইর (রাঃ)-কে স্বলাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এটা এমন একটি কর্ম যার দ্বারা মুছল্লী তার স্বলাতকে সৌন্দর্যপূর্ণ করে। রাসূল (ﷺ)-এর ছাহাবীগণ স্বলাত শুরু করার সময়, রুকূতে যাওয়ার সময় এবং রুকূ থেকে মাথা উঠানোর সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[4]
সুধী পাঠক! স্বলাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করার হুকুম যদি রহিতই হবে, তবে উক্ত হাদীছগুলো কী প্রমাণ করে?
✔ অপব্যাখ্যা ও তার জবাব :
(১) রাফ‘উল ইয়াদায়েনকে মুসলিম সমাজ থেকে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য যঈফ ও জাল হাদীছ এবং বানোয়াট কেচ্ছা-কাহিনী ছাড়াও সহিহ হাদীছের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে। যেমন নিম্নের হাদীছটির ব্যাপারে ড. ইলিয়াস ফয়সাল ‘নবীজীর স. স্বলাত’ বইয়ে অনেক চর্বিতচর্বণ করেছেন।[1]
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ كُنَّا إِذَا صَلَّيْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ قُلْنَا السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَأَشَارَ بِيَدِهِ إِلَى الْجَانِبَيْنِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ عَلاَمَ تُوْمِئُوْنَ بِأَيْدِيْكُمْ كَأَنَّهَا أَذْنَابُ خَيْلٍ شُمُسٍ إِنَّمَا يَكْفِىْ أَحَدَكُمْ أَنْ يَضَعَ يَدَهُ عَلَى فَخِذِهِ ثُمَّ يُسَلِّمُ عَلَى أَخِيْهِ مَنْ عَلَى يَمِيْنِهِ وَشِمَالِهِ.
জাবের ইবনু সামুরা (রাঃ) বলেন, আমরা যখন রাসূল (ﷺ)-এর সাথে স্বলাত আদায় করতাম, তখন ‘আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’, ‘আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’ বলতাম। মুছল্লী তার দুই পার্শ্বে দুই হাত দিয়ে ইশারা করত। ফলে রাসূল (ﷺ) বলেন, তোমরা কেন তোমাদের হাত দ্বারা ইঙ্গিত করছ, যেন তা অবাধ্য ঘোড়ার লেজ। তোমাদের কোন মুছল্লীর জন্য যথেষ্ট হবে তার হাত তার রানের উপর রাখা। অতঃপর তার ডানে ও বামের ভাইকে সালাম দেয়া।[2]
পর্যালোচনা : উক্ত মর্মে সহিহ মুসলিমে পরপর তিনটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। হাদীছটিতে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, তাশাহ্হুদের সময় হাত তুলে সালাম দিতে নিষেধ করা হয়েছে। তাছাড়া তিনটি হাদীছ একই রাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। অথচ অপব্যাখ্যা করে বলা হচ্ছে যে, রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইমাম মুসলিম যদি এই হাদীছকে রাফ‘উল ইয়াদায়েনের বিরুদ্ধে পেশ করতে চাইবেন, তবে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করার পক্ষে কেন তিনি পাঁচটি হাদীছ উল্লেখ করলেন? [3] অবশ্য যারা অপব্যাখ্যা করেন, তাদের অন্তরও হয়ত সঠিক বিষয়টি জানে। মাযহাবী গোঁড়ামীর কারণে তারা প্রকাশ করেন না। তবে আল্লাহ গোপন ও প্রকাশ্য সবই জানেন। আল্লাহ রক্ষা করুন এবং হেদায়াত দান করুন!
জ্ঞাতব্য : উক্ত মর্মে একটি জাল হাদীছও বর্ণিত হয়েছে। অবশ্য সেটা হয়ত তাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি। সহিহ হাদীছের অপব্যাখ্যা না করে এটি পেশ করলেও ততটা আফসোস হত না।
✔ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِىِّ قَالَ كَأنِّىْ بِقَوْمٍ يأتوْنَ مِنْ بَعْدِىْ يَرْفعوْنَ أيْدِيَْهِمْ فِى الصَّلاَةِ كَأَنَّهَا أَذْنَابُ خَيْلٍ شُمْسٍ.
ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আমি এমন এক সম্প্রদায়ের সাথে রয়েছি, যারা আমার পরে আসবে। তারা অবাধ্য ঘোড়ার লেজের ন্যায় স্বলাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করবে ।[4]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি মিথ্যা ও মুনকার। কারণ সহিহ মুসলিমে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, এটি তার বিরোধী।[5]
(২) মিথ্যাচার করা হয় যে, মূর্তিপূজার ভালবাসা ছাড়তে না পেরে ছাহাবীরা গোপনে বগলে পুতুল রাখতেন। ফলে তাদেরকে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই যুগে যেহেতু কেউ পুতুল রাখে না সুতরাং রাফ‘উল ইয়াদায়েন করার প্রয়োজন নেই।
পর্যালোচনা : প্রথমতঃ উক্ত ঘটনার কোন প্রমাণ নেই। এটা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন? মূতলঃ হাদীছ জাল করার মত এটাও একটি সাজানো মিথ্যা কাহিনী। দ্বিতীয়তঃ ছাহাবীদের বিরুদ্ধে মূর্তি পূজা ও তার প্রতি ভক্তির মিথ্যা অপবাদ কী পরিমাণ জঘন্য কাজ হতে পারে? ছাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা সম্পর্কে না জানার কারণেই তাদের উপর এই অপবাদ দেয়া হয়েছে। মূল কথা হড়, তাদের পক্ষে যদি রাসূল (ﷺ)-এর নামে জাল হাদীছ রচনা করা সম্ভব হয়, তাহলে এটা তো কোন ব্যাপারই নয়।
(৩) ‘হানাফীদের কয়েকটি জরুরী মাসায়েল’ নামক পুস্তকের প্রণেতা মাওলানা মোঃ আবুবকর সিদ্দীক এ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে কতিপয় উদ্ভট ও অসত্য কথা লিখেছেন। যেমন- ‘ইমাম বুখারী যে ১৭ জন ছাহাবার রফে ইয়াদাইনের হাদীছ বর্ণনা করেছিলেন, তাদের মধ্যে হযরত উমর, হযরত আলী, ইবনে উমার, আবূ সাঈদ, ইবনে যোবায়ের রফে ইয়াদাইন ত্যাগ করেছিলেন।… সুতরাং ইমাম বুখারীর রফে ইয়াদাইনের হাদীছ গ্রহণযোগ্য নয়’।[6]
পর্যালোচনা : উক্ত মন্তব্য অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র, যা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। মূলতঃ মানসূখ কাহিনী রচনা করার জন্য যে সমস্ত বর্ণনা জাল করা হয়েছে, সেগুলো উক্ত লেখকের উপর ভর করেছে। ফলে দিশেহারা হয়ে গেছে। আল্লাহ হেদায়াত দান করুন-আমীন!
✔ দৃষ্টি আকর্ষণ :
(ক) উপরিউক্ত বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে যে, রাফ‘উল ইয়াদায়েনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমলটি জাল হাদীছের ফাঁদে আটকা পড়ে আছে। আর এর কারখানা ছিল ইরাকের কূফা ও বছরায়। তাই ইমাম তিরমিযী (২০৯-২৭৯ হিঃ) বলেন, وَهُوَ قَوْلُ سُفْيَانَ الثَّوْرِىِّ وَأَهْلِ الْكُوْفَةِ ‘এটা সুফিয়ান ছাওরী ও কূফাবাসীর বক্তব্য’।[7] একটি যঈফ বর্ণনায় এসেছে, একবার শুধু হাত উত্তোলন করতেন আর কোন স্থানে হাত উঠাতেন না। উক্ত বর্ণনা প্রসঙ্গে ইমাম আবুদাঊদ (২০৪-২৭৫ হিঃ) বলেন, قَالَ سُفْيَانُ قَالَ لَنَا بِالْكُوْفَةِ بَعْدُ ثُمَّ لاَ يَعْوْدُ ‘সুফিয়ান বলেন, ‘পুনরায় আর হাত তুলতেন না’ কথাটি পরবর্তীতে কূফায় আমাদেরকে বলা হয়েছে’।[8] এছাড়া অন্যান্য কতিপয় বিষয়ও কূফাবাসী পরিবর্তন করে দিয়েছে। ঈদের তাকবীর, জানাযার তাকবীর, তারাবীহ্র রাক‘আত সংখ্যা ইত্যাদি অন্যতম।
(খ) উপরে অনেক জাল ও যঈফ হাদীছ উল্লেখ করা হয়েছে। সংখ্যা দেখে কেউ যেন ধোঁকায় না পড়ে। কারণ ‘জিরোর’ পর যত জিরোই বসানো হোক, তার যেমন কোন মূল্য নেই, তেমনি হাযারো জাল হাদীছ থাকলেও একটি সহিহ হাদীছের সামনে সেগুলোর কোন মূল্য নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ছোট্ট একটি বাণীই উক্ত ধাঁধার জবাব হতে পারে :
فَمَا بَالُ رِجَالٍ يَشْتَرِطُوْنَ شُرُوْطًا لَيْسَتْ فِىْ كِتَابِ اللهِ مَاكَانَ مِنْ شَرْطٍ لَيْسَ فِىْ كِتَابِ اللهِ فَهُوَ بَاطِلٌ وَإِنْ كَانَ مِائَةَ شَرْطٍ فَقَضَاءُ اللهِ أَحَقُّ وَشَرْطُ اللهِ أوْثَقُ.
‘মানুষের কী হল যে, তারা বেশী বেশী শর্তারোপ করছে, অথচ তা আল্লাহর বিধানে নেই? মনে রেখ, যে শর্ত আল্লাহর সংবিধানে নেই তা বাতিলযোগ্য, যদিও তা একশ’ শর্তের বেশী হয়। মনে রেখ, আল্লাহর সিদ্ধান্তই সর্বাধিক অভ্রান্ত এবং তাঁর শর্তই সর্বাধিক চূড়ান্ত’।[9]
✔ রাফ‘উল ইয়াদায়েন করার সহিহ হাদীছ সমূহ :
✔ عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ وَإِذَا كَبَّرَ لِلرُّكُوْعِ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنْ الرُّكُوْعِ رَفَعَهُمَا كَذَلِكَ أَيْضًا وَقَالَ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ وَكَانَ لَا يَفْعَلُ ذَلِكَ فِى السُّجُوْدِ.
সালেম ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) যখন স্বলাত আরম্ভ করতেন, তখন কাঁধ বরাবর দুই হাত উত্তোলন করতেন। অনুরূপ যখন রুকূ করার জন্য তাকবীর দিতেন এবং যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও দুই হাত উত্তোলন করতেন এবং ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ রাববানা ওয়া লাকাল হামদ’ বলতেন। তিনি সিজদায় এমনটি করতেন না।[1]
✔ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ إِذَا قَامَ فِى الصَّلَاةِ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يَكُوْنَا حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ وَكَانَ يَفْعَلُ ذَلِكَ حِيْنَ يُكَبِّرُ لِلرُّكُوْعِ وَيَفْعَلُ ذَلِكَ إِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنْ الرُّكُوْعِ وَيَقُوْلُ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ وَلَا يَفْعَلُ ذَلِكَ فِى السُّجُوْدِ.
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)-কে দেখেছি তিনি যখন স্বলাতে দাঁড়াতেন, তখন কাঁধ বরাবর দুই হাত উত্তোলন করতেন। যখন তিনি রুকূর জন্য তাকবীর দিতেন তখনও এটা করতেন। রুকূ থেকে যখন মাথা উঠাতেন, তখনও দুই হাত উঠাতেন এবং ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলতেন। তিনি সিজদায় এমনটি করতেন না।[2]
✔ عَنْ عَلِىِّ بْنِ أَبِىْ طَالِبٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ أَنَّهُ كَانَ إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلاَةِ الْمَكْتُوْبَةِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ وَيَصْنَعُ مِثْلَ ذَلِكَ إِذَا قَضَى قِرَاءَتَهُ وَأَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ وَيَصْنَعُهُ إِذَا رَفَعَ مِنَ الرُّكُوْعِ وَلاَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِىْ شَىْءٍ مِنْ صَلاَتِهِ وَهُوَ قَاعِدٌ وَإِذَا قَامَ مِنَ السَّجْدَتَيْنِ رَفَعَ يَدَيْهِ كَذَلِكَ وَكَبَّرَ.
আলী (রাঃ) রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি যখন ফরয স্বলাতে দাঁড়াতেন, তখন তাকবীর দিতেন এবং কাঁধ বরাবর দুই হাত উত্তোলন করতেন। যখন তিনি ক্বিরাআত শেষ করতেন ও রুকূতে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখনও তিনি অনুরূপ করতেন। যখন তিনি রুকূ থেকে উঠতেন তখনও তিনি অনুরূপ করতেন। তবে বসা অবস্থায় তিনি রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন না। কিন্তু যখন তিনি দুই রাক‘আত শেষ করে দাঁড়াতেন, তখন অনুরূপ রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন এবং তাকবীর দিতেন। [3]
✔ عَنْ نَافِعٍ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ إِذَا دَخَلَ فِي الصَّلَاةِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَإِذَا رَكَعَ رَفَعَ يَدَيْهِ وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَفَعَ يَدَيْهِ وَإِذَا قَامَ مِنْ الرَّكْعَتَيْنِ رَفَعَ يَدَيْهِ وَرَفَعَ ذَلِكَ ابْنُ عُمَرَ إِلَى نَبِيِّ اللهِ .
নাফে‘ (রাঃ) বলেন, ইবনু ওমর (রাঃ) যখন স্বলাত শুরু করতেন, তখন তাকবীর দিতেন এবং দুই হাত উঠাতেন। যখন রুকূ করতেন তখনও দুই হাত উঠাতেন, যখন ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলতেন এবং যখন দুই রাক‘আতের পর দাঁড়াতেন, তখনও দুই হাত উত্তোলন করতেন। ইবনু ওমর (রাঃ) এই বিষয়টিকে রাসূল (ﷺ)-এর দিকে সম্বোধন করতেন।[4]
✔ عن عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ رَأَيْتُ النَّبِيَّ افْتَتَحَ التَّكْبِيْرَ فِى الصَّلَاةِ فَرَفَعَ يَدَيْهِ حِيْنَ يُكَبِّرُ حَتَّى يَجْعَلَهُمَا حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ وَإِذَا كَبَّرَ لِلرُّكُوْعِ فَعَلَ مِثْلَهُ وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَعَلَ مِثْلَهُ وَقَالَ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ وَلَا يَفْعَلُ ذَلِكَ حِيْنَ يَسْجُدُ وَلَا حِيْنَ يَرْفَعُ رَأْسَهُ مِنْ السُّجُوْدِ.
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)-কে তাকবীর দিয়ে স্বলাত শুরু করতে দেখেছি। তিনি যখন তাকবীর দিতেন তখন দুই হাত উত্তোলন করতেন এবং কাঁধ বরাবর উঠাতেন। আর যখন রুকূর জন্য তাকবীর দিতেন এবং ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলতেন তখনও দুই হাত উত্তোলন করতেন। তখন তিনি ‘রাববানা ওয়া লাকাল হামদ’ বলতেন। এমনটি তিনি সিজদার সময় করতেন না এবং সিজদা থেকে মাথা উঠানোর সময়ও এমনটি করতেন না।[5]
সুধী পাঠক! মাত্র কয়েকটি বর্ণনা এখানে উল্লেখ করা হল। তবে রাফ‘উল ইয়াদায়েনের হাদীছের সংখ্যা অনেক।[6] রুকূতে যাওয়া ও রুকূ হতে উঠার সময় ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ করা সম্পর্কে চার খলীফা সহ প্রায় ২৫ জন ছাহাবী থেকে বর্ণিত সহিহ হাদীছ রয়েছে। একটি হিসাব মতে ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’-এর হাদীছের রাবী সংখ্যা ‘আশারায়ে মুবাশশারাহ’ সহ অন্যূন ৫০ জন ছাহাবী[7] এবং সর্বমোট সহিহ হাদীছ ও আছারের সংখ্যা অন্যূন চার শত।[8] এ জন্য ইমাম সুয়ূত্বী, আলবানীসহ প্রমুখ বিদ্বান ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’-এর হাদীছকে ‘মুতাওয়াতির’ পর্যায়ের বলে স্বীকৃতি দান করেছেন।[9] ফালিল্লা-হিল হামদ।
✔ রাফ‘উল ইয়াদায়েনের গুরুত্ব ও ফযীলত :
(১) ইবনু ওমর (রাঃ)-এর ভূমিকা-
عَنْ نَافِعٍ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ إِذَا رَأَى رَجُلًا لَا يَرْفَعُ يَدَيْهِ إِذَا رَكَعَ وَإِذَا رَفَعَ رَمَاهُ بِالْحَصَى.
নাফে‘ (রাঃ) বলেন, নিশ্চয় ইবনু ওমর (রাঃ) যখন কোন ব্যক্তিকে দেখতেন যে, সে রুকূতে যাওয়া ও উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করছে না, তখন তিনি তার দিকে পাথর ছুড়ে মারতেন।[1]
(২) উক্ববা বিন আমের (রাঃ)-এর দাবী-
قَالَ عُقْبَةُ بْنُ عَامِرٍ الْجُهَنِىُّ صَاحِبُ رَسُوْلِ اللهِ إِذَا رَفَعَ يَدَيْهِ عِنْدَ الرٌّكُوْعِ وَعِنْدَ رَفْعِ رَأْسِهِ مِنَ الرٌّكُوْعِ فَلَهُ بِكُلِّ إِشَارَةٍ عَشْرُ حَسَنَاتٍ.
রাসূল (ﷺ)-এর ছাহাবী উক্ববা ইবনু আমের আল-জুহানী (রাঃ) বলেন, যখন মুছল্লী রুকূতে যাওয়ার সময় এবং রুকূ থেকে উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করবে, তখন তার জন্য প্রত্যেক ইশারায় দশটি করে নেকী হবে।[2] শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) উক্ত হাদীছ বর্ণনা করার পর বলেন, একটি হাদীছে কুদসী এই কথার সাক্ষী। আল্লাহ বলেন, .. যে ব্যক্তি একটি নেকীর কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করবে অতঃপর তা করে ফেলবে, আল্লাহ তার জন্য ১০ থেকে ৭০০ নেকী লিপিবদ্ধ করবেন’।[3]
(৩) ইমাম বুখারীর উস্তায আলী ইবনুল মাদীনী (১৬১-২৩৪ হিঃ) ইবনু ওমর (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীছ সম্পর্কে বলেন,
هَذَا الْحَدِيْثُ عِنْدِىْ حُجَّةٌ عَلَى الْخَلْقِ كُلُّ مَنْ سَمِعَهُ فَعَلَيْهِ أَنْ يَعْمَلَ بِهِ لِأَنَّهُ لَيْسَ فِيْ إِسْنَادِهِ شَيْءٌ.
‘এই হাদীছ আমার নিকটে সমগ্র উম্মতের জন্য দলীল স্বরূপ। প্রত্যেকে যে এই হাদীছ শুনবে তার উপরই আমল করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। কারণ এই হাদীছের সনদে কোন ত্রুটি নেই’।[4]
(৪) ইমাম বুখারী (১৯৪-২৫৬ হিঃ) বলেন,
لَمْ يَثْبُتْ عَنْ أَحَدٍ مِنْهُمْ تَرْكُهُ.. قَالَ وَلَا أَسَانِيْدَ أَصَحُّ مِنْ أَسَانِيْدِ الرَّفْعِ .
‘ছাহাবীদের মধ্যে কোন একজনের পক্ষ থেকেও প্রমাণিত হয়নি যে, তিনি রাফ‘উল ইয়াদায়েন ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি আরো বলেন, রাফ‘উল ইয়াদায়েনের হাদীছের সনদের চেয়ে সর্বাধিক বিশুদ্ধ আর কোন সনদ নেই’।[5]
(৫) ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন,
وَذَكَرَ الْبُخَارِيُّ أَيْضًا أَنَّهُ رَوَاهُ سَبْعَةَ عَشَرَ رَجُلًا مِنَ الصَّحَابَةِ وَذَكَرَ الْحَاكِمُ وَأَبُو الْقَاسِم بْنِ مِنْدَهْ مِمَّنْ رَوَاهُ الْعَشَرَةُ الْمُبَشَّرَةُ وَذَكَرَ شَيْخُنَا أَبُو الْفَضْلِ الْحَافِظُ أَنَّهُ تَتَبَّعَ مَنْ رَوَاهُ مِنْ الصَّحَابَةِ فَبَلَغُوْا خَمْسِيْنَ رَجُلًا.
‘ইমাম বুখারী ১৭ জন ছাহাবী থেকে রাফ‘উল ইয়াদায়েনের হাদীছ বর্ণনা করেছেন। হাকেম ও আবুল ক্বাসেম মান্দাহ জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ১০ জন ছাহাবী থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। আর হাফেয আবুল ফাযল অনুসন্ধান করে ছাহাবীদের থেকে যে সমস্ত বর্ণনা উল্লেখ করেছেন, তার সংখ্যা ৫০ জনে পৌঁছেছে’।[6]
(৬) শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী বলেন, وَالَّذِيْ يَرْفَعُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّنْ لاَّ يَرْفَعُ فَإِنَّ أَحَادِيْثَ الرَّفْعِ أَكْثَرُ وَأَثْبَتُ ‘যে ব্যক্তি রাফ‘উল ইয়াদায়েন করে, ঐ ব্যক্তি আমার নিকট অধিক প্রিয়- ঐ ব্যক্তির চেয়ে, যে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করে না। কারণ রাফ‘উল ইয়াদায়েন-এর হাদীছ সংখ্যায় বেশী ও অধিকতর মযবুত’।[7]
(৭) আলবানী বলেন,
وَهَذَا الرّفْعُ مُتَوَتِرٌ عَنْهُ وَكَذَلِكَ الرَّفْعُ عِْندَ الْاِعْتَدَالِ مِنَ الرُّكُوْعِ وَهُوَ مَذْهَبُ الْأَئِمَّةِ الثَّلاَثَةِ وَغَيْرِهِمْ مِنْ جَمَاهِيْرِ المُْحَدِّثِيْنَ وَالْفُقَهَاءِ وَهُوَ اَّلذِىْ مَاتَ عَلَيْهِ مَالِكٌ رَحِمَهُ اللهُ.
‘এই রাফ‘উল ইয়াদায়েনের আমল রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণিত ‘মুতাওয়াতির’ পর্যায়ের হাদীছ দ্বারা অনুমোদিত। রুকূ থেকে উঠে দাঁড়িয়েও রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতে হবে। এটা তিন ইমামের মাযহাব এবং অন্যান্য অধিকাংশ মুহাদ্দিছ ও ফক্বীহর মাযহাব। ইমাম মালেকও এর উপরই মৃত্যু বরণ করেছেন’।[8]
No comments:
Post a Comment