সালাম ফিরানোর পর ইমামের ঘুরে না বসা বা মাথায় হাত রেখে দু‘আ পড়া বা দু আঙ্গুল দিয়ে চোখ মোছা
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর স্বলাত- এর অংশবিশেষশায়খ মুযাফফর বিন মুহসিন
অধিকাংশ মসজিদে দেখা যায়, ইমাম সালাম ফিরানোর পর ক্বিবলামুখী হয়ে বসে থাকেন। শুধু ফজর ও আছর স্বলাতে ঘুরে বসেন। এটা সুন্নাত বিরোধী কাজ। বরং সুন্নাত হল, প্রত্যেক ফরয স্বলাতে মুক্তাদীদের দিকে ঘুরে বসা। যেমন হাদীছে এসেছে-
عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ قَالَ كَانَ النَّبِىُّ إِذَا صَلَّى صَلاَةً أَقْبَلَ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ.
সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) বলেন, নবী (ﷺ) যখনই কোন স্বলাত আদায় করতেন, তখনই আমাদের দিকে মুখ করে ঘুরে বসতেন।[1] রাসূল (ﷺ) প্রত্যেক স্বলাতেই সালাম ফিরানোর পর মুক্তাদীদের দিকে ঘুরে বসতেন।[2] অতএব শুধু ফজর ও আছর স্বলাতে ঘুরে বসা ঠিক নয়। কারণ এর পক্ষে কোন দলীল নেই। সালাম ফিরানোর পর ইমামের
✔ (২০) সালাম ফিরানোর পর সাথে সাথে উঠে যাওয়া :
উক্ত কাজ সুন্নাত বিরোধী এবং বদ অভ্যাস। দেশের প্রায় সব মসজিদেই উক্ত বাজে অভ্যাস চালু আছে। মুছল্লীরা সালাম ফিরানোর পরপরই তাড়াহুড়া করে উঠে যায়। অথচ এটা রাসূল (ﷺ)-এর কাছে অপরাধযোগ্য। ওমর (রাঃ) একজনকে ঘাড় ধরে বসিয়ে দিলে রাসূল (ﷺ) বলেন, ওমর তুমি ঠিক করেছ।[1]
✔ (২১) সালাম ফিরানোর পর মাথায় হাত রেখে দু‘আ পড়া :
✔ সালাম ফিরানোর পর মাথায় হাত রেখে দু‘আ পড়ার প্রমাণে কোন সহিহ দলীল নেই। বরং যা বর্ণিত হয়েছে, তার সবই জাল ও যঈফ।
(أ) عَنْ كَثِيْرِ بْنِ سُلَيْمٍ أَبِىْ سَلَمَةَ قَالَ سَمِعْتُ أَنَسًا كَانَ إِذَا صَلَّى مَسَحَ بِيَدِهِ الْيُمْنىَ عَلَى رَأْسِهِ وَ يَقُوْلُ بِسْمِ اللهِ الَّذِىْ لاَ إِلَهَ غَيْرَهُ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ اللهُمَّ أَذْهِبْ عَنِّىْ الْهَمَّ وَ الْحُزْنَ.
(ক) কাছীর ইবনু সুলায়মান আবু সালামা বলেন, আমি আনাসের নিকট শুনেছি, রাসূল (ﷺ) যখন স্বলাত আদায় করতেন, তখন ডান হাত তার মাথায় রাখতেন এবং বলতেন, আল্লাহর নামে শুরু করছি যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। যিনি পরম করুণাময়, দয়ালু। হে আল্লাহ! আমার থেকে চিন্তা ও শঙ্কা দূর করে দিন।[1]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। এর সনদে কাছীর বিন সুলাইম নামে রাবী রয়েছে। ইমাম বুখারী ও আবু হাতিম বলেন, সে মুনকার রাবী। শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, এই হাদীছের সনদ নিতান্তই যঈফ।[2] তিনি আরো বলেন, এটা জাল।[3]
✔ (ب) عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ كَانَ إِذَا قَضَى صَلاَتَهُ مَسَحَ جَبْهَتَهُ بِيَدِهِ الْيُمْنىَ ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ الرَّحْمَنُ الرَّحِيْمُ اللهُمَّ أَذْهِبْ عَنِّىْ الْهَمَّ وَ الْحُزْنَ.
(খ) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) যখন তার স্বলাত শেষ করতেন, তখন ডান হাত দ্বারা তার মাথা মাসাহ করতেন এবং উক্ত দু‘আ পড়তেন।[4]
তাহক্বীক্ব : এর সনদ জাল। সালাম আল-মাদাইনী অভিযুক্ত। সে ছিল দীর্ঘ পুরুষ, ডাহা মিথ্যাবাদী।[5] উক্ত মর্মে আরো বর্ণনা আছে।[6] তবে সেগুলোর সনদও জাল।[7]
অতএব সালাম ফিরানোর পর মাথায় হাত দিয়ে দু‘আ পড়ার প্রথা বর্জন করতে হবে। কারণ জাল হাদীছ দ্বারা কখনো কোন আমল প্রমাণিত হয় না।
✔ (২২) আয়াতুল কুরসী পড়ে বুকে ফুঁক দেয়া :
ফরয স্বলাতের পর ‘আয়াতুল কুরসী’ পড়া অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ। রাসূল (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয স্বলাতের পর আয়াতুল কুরসী পড়বে, তাকে মৃত্যু ব্যতীত কোন কিছু জান্নাতে প্রবেশ করতে বাধা দিতে পারবে না।[1] তবে এ সময় বুকে ফুঁক দেয়ার শারঈ কোন ভিত্তি নেই। যদিও আমলটি সমাজে খুবই প্রসিদ্ধ। অতএব এই বিদ‘আতী প্রথা পরিত্যাগ করতে হবে।
[1]. নাসাঈ, আল-কুবরা হা/৯৯২৮; সিলসিলা সহিহাহ হা/৯৭২। উল্লেখ্য যে, মিশকাতে যে বর্ণনা এসেছে, তার সনদ যঈফ। আলবানী, মিশকাত হা/৯৭৪, ১/৩০৮ দ্রঃ।
✔ (২৩) ‘ফাকাশাফনা আনকা গিত্বাআকা’.. পড়ে চোখে মাসাহ করা :
সূরা ক্বাফ-এর (২২ নং) উক্ত আয়াত পড়ে বৃদ্ধা আঙ্গুলে ফুঁক দিয়ে চোখে মাসাহ করার প্রথা চলে আসছে দীর্ঘকাল যাবৎ। কিন্তু নির্দিষ্ট করে উক্ত আয়াত পড়ার কোন প্রমাণ নেই। তবে পবিত্র কুরআন আরোগ্য দানকারী বিধান। তাই যেকোন আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট আরোগ্য কামনা করা যায় (সূরা বাণী ইসরাঈল ৮২)।
No comments:
Post a Comment