নীরবে বা স্বরবে আমীন বলা
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর স্বলাত- এর অংশবিশেষশায়খ মুযাফফর বিন মুহসিন
সুন্নাত হল সরবে আমীন বলা। নীরবে আমীন বলার পক্ষে যে কয়টি বর্ণনা এসেছে, তার সবই যঈফ ও জাল।
(أ) عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَائِلِ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّهُ صَلَّى مَعَ رَسُوْلِ اللهِ فَلَمَّا بَلَغَ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَاالضَّالِّيْنَ قَالَ آَمِيْنِ وَأَخْفَى بِهَا صَوْتَهُ.
✔ (ক) আলক্বামা ইবনু ওয়ায়েল তার পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে স্বলাত আদায় করেন। যখন তিনি ‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালাযযা-ল্লিন’ পর্যন্ত পৌঁছলেন, তখন আমীন বললেন। তিনি আওয়ায করলেন নিম্নস্বরে।[1]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি নিতান্তই যঈফ। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, নীরবে বা স্বরবে আমীন বলা
سَمِعْت مُحَمَّدًا يَقُوْلُ حَدِيْثُ سُفْيَانَ أَصَحُّ مِنْ حَدِيثِ شُعْبَةَ فِي هَذَا وَأَخْطَأَ شُعْبَةُ فِىْ مَوَاضِعَ مِنْ هَذَا الْحَدِيْثِ فَقَالَ عَنْ حُجْرٍ أَبِي الْعَنْبَسِ وَإِنَّمَا هُوَ حُجْرُ بْنُ عَنْبَسٍ وَيُكْنَى أَبَا السَّكَنِ وَزَادَ فِيهِ عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَائِلٍ وَلَيْسَ فِيْهِ عَنْ عَلْقَمَةَ وَإِنَّمَا هُوَ عَنْ حُجْرِ بْنِ عَنْبَسٍ عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ وَقَالَ وَخَفَضَ بِهَا صَوْتَهُ وَإِنَّمَا هُوَ وَمَدَّ بِهَا صَوْتَهُ.
ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, মুহাম্মাদকে (ইমাম বুখারীকে) বলতে শুনেছি যে, সুফিয়ানের হাদীছ শু‘বার হাদীছের চেয়ে অধিক সহিহ। এই হাদীছে শু‘বা অনেক জায়গায় ভুল করেছে। সে বর্ণনা করেছে হুজর আবুল আনবাস থেকে। অথচ তিনি হলেন, হুজর বিন আনবাস। তার উপাধি আবু সাকান। সে বৃদ্ধি করেছে আলক্বামা বিন ওয়ায়েল। অথচ তাতে আলক্বামা নেই। মূলত তা হবে ওয়ায়েল বিন হুজর থেকে হুজর বিন আনবাস। এছাড়া সে বলেছে, ‘তিনি নিম্নস্বরে বলেন’। অথচ তা হবে ‘তিনি তার স্বর উচ্চ করেন’।[2] ইমাম তিরমিযী আরো বলেন, سَأَلْتُ أَبَا زُرْعَةَ عَنْ هَذَا الْحَدِيْثِ فَقَالَ حَدِيْثُ سُفْيَانَ فِيْ هَذَا أَصَحُّ مِنْ حَدِيْثِ شُعْبَةَ ‘এই হাদীছ সম্পর্কে আমি আবু যুর‘আকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি উত্তরে বললেন, শু‘বার হাদীছের চেয়ে সুফিয়ান বর্ণিত হাদীছ অধিকতর সহিহ।[3]
(ب) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ إِذَا تَلاَ (غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ) قَالَ آمِيْنَ حَتَّى يَسْمَعَ مَنْ يَلِيْهِ مِنَ الصَّفِّ الأَوَّلِ.
✔ (খ) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) যখন ‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন’ তেলাওয়াত করতেন, তখন এমনভাবে ‘আমীন’ বলতেন, যাতে প্রথম কাতারে যারা নিকটে থাকত তারা তা শুনতে পেত।[4]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। এর সনদে বাশার বিন রাফে‘ ও আবু আব্দুল্লাহ নামে দুইজন যঈফ রাবী আছে।[5] তাছাড়া উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলার পক্ষে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে সহিহ আছার বর্ণিত হয়েছে।[6]
জ্ঞাতব্য : উক্ত বর্ণনাগুলো ছাড়াও কতিপয় ছাহাবী ও তাবেঈর নামে কিছু আছার বর্ণিত হয়েছে, যা বাজারে প্রচলিত ‘স্বলাত শিক্ষা’ পুস্তকগুলোতে পাওয়া যায়।[7] সেগুলো দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। কারণ সেগুলোর কোনটিই সহিহ নয়। আমাদেরকে সহিহ বর্ণনার সামনে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
✔ জোরে আমীন বলার সহিহ হাদীছ সমূহ : সরবে আমীন বলার একাধিক সহিহ হাদীছ রয়েছে।
✔ (1) عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ إِذَا قَرَأَ وَلاَ الضَّالِّيْنَ قَالَ آمِيْنَ وَرَفَعَ بِهَا صَوْتَهُ.
(১) ওয়ায়েল ইবনু হুজর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) যখন ‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন’ বলতেন, তখন তিনি আমীন বলতেন। তিনি আমীনের আওয়াযটা জোরে করতেন।[1]
✔ (2) عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ قَرَأَ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّيْنَ فَقَالَ آمِيْنَ وَمَدَّ بِهَا صَوْتَهُ.
(২) ওয়ায়েল ইবনু হুজর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) যখন ‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন’ বলতেন তখন তাকে আমীন বলতে শুনেছি। তিনি আমীনের আওয়ায জোরে করতেন।[2] ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন,
وَبِهِ يَقُوْلُ غَيْرُ وَاحِدٍ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ وَالتَّابِعِيْنَ وَمَنْ بَعْدَهُمْ يَرَوْنَ أَنَّ الرَّجُلَ يَرْفَعُ صَوْتَهُ بِالتَّأْمِيْنِ وَلَا يُخْفِيْهَا وَبِهِ يَقُوْلُ الشَّافِعِيُّ وَأَحْمَدُ وَإِسْحَقُ.
‘রাসূলের ছাহাবী, তাবেঈ এবং তাদের পরবর্তী মুহাদ্দিছগণের মধ্যে অনেকেই এই কথা বলেছেন যে, মুছল্লী আমীন জোরে বলবে, নীরবে নয়। ইমাম শাফেঈ, আহমাদ ও ইসহাক্ব এ কথাই বলেছেন’।[3]
✔ (3) عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ أَنَّهُ صَلَّى خَلْفَ رَسُوْلِ اللهِ فَجَهَرَ بِآمِيْنَ.
(৩) ওয়ায়েল ইবনু হুজর (রাঃ) একদা রাসূল (ﷺ)-এর পিছনে স্বলাত আদায় করেন। তখন রাসূল (ﷺ) জোরে আমীন বলেন।[4]
✔ (4) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ قَالَ إِذَا أَمَّنَ الْإِمَامُ فَأَمِّنُوْا فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ تَأْمِيْنُهُ تَأْمِيْنَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَقَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَقُوْلُ آمِيْنَ.
(৪) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘ইমাম যখন আমীন বলবেন, তখন তোমরা আমীন বল। কারণ যার আমীন ফেরেশতাদের আমীনের সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। ইবনু শিহাব বলেন, রাসূল (ﷺ) আমীন বলতেন।[5]
✔ (5) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ إِذَا قَالَ الْإِمَامُ غَيْرِالْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّيْنَ فَقُوْلُوْا آمِيْنَ فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.
(৫) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন, ইমাম যখন ‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন’ বলবেন, তখন তোমরা ‘আমীন’ বল। কারণ যার কথা ফেরেশতাদের কথার সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সকল পাপ ক্ষমা হয়ে যাবে’।[6] অন্য হাদীছে এসেছে, তোমরা আমীন বল আল্লাহ তোমাদের দু‘আ কবুল করবেন।[7] অন্য বর্ণনায় আছে, ক্বারী যখন আমীন বলবেন, তখন তোমরা ‘আমীন’ বল।[8]
ইমাম বুখারী (রহঃ) অনুচ্ছেদ রচনা করে বলেন, بَابُ جَهْرِ الْإِمَامِ بِالتَّأْمِيْنِ وَقَالَ عَطَاءٌ آمِيْنَ دُعَاءٌ أَمَّنَ ابْنُ الزُّبَيْرِ وَمَنْ وَرَاءَهُ حَتَّى إِنَّ لِلْمَسْجِدِ لَلَجَّةً… ‘ইমামের উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলা অনুচ্ছেদ। আত্বা বলেন, আমীন হল দু‘আ। ইবনু যুবাইর এবং তার পিছনের মুছল্লীরা এমন জোরে আমীন বলতেন, যাতে মসজিদ বেজে উঠত..’। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন- بَابُ جَهْرِ الْمَأْمُوْمِ بِالتَّأْمِيْنِ ‘মুক্তাদীর উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলা অনুচ্ছেদ’।[9]
জ্ঞাতব্য : অনেকে দাবী করেন, উক্ত হাদীছগুলোতে আমীন জোরে বলার কথা নেই। অথচ হাদীছে বলা হয়েছে ‘যখন ইমাম আমীন বলবে তখন তোমরা আমীন বল’। তাহলে ইমাম ‘আমীন’ জোরে না বললে মুক্তাদীরা কিভাবে বুঝতে পারবে এবং কখন আমীন বলবে? তাছাড়া মুছল্লীদের আমীনের সাথে ফেরেশতাদের আমীন কিভাবে মিলবে? অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ مَا حَسَدَتْكُمُ الْيَهُوْدُ عَلَى شَيْءٍ مَا حَسَدَتْكُمْ عَلَى السَّلاَمِ وَالتَّأْمِيْنِ.
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘তোমরা ‘সালাম’ ও ‘আমীন’ বলার কারণে ইহুদীরা তোমাদের সাথে সবচেয়ে বেশী হিংসা করে’।[10]
ইহুদীরা যদি আমীন না শুনতে পায় তাহলে তারা হিংসা করবে কিভাবে? অতএব উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলার সুন্নাত গ্রহণ করাই হবে প্রকৃত মুমিনের দায়িত্ব। কিন্তু দুঃখজনক হল, এতগুলো হাদীছ থাকা সত্ত্বেও ‘হেদায়া’ কিতাবে বলা হয়েছে, মুক্তাদীরা নিম্নস্বরে ‘আমীন’ বলবে’।[11] এটাই মাযহাবী শিক্ষা। এছাড়াও ‘মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে’ বইটিতে নানা কৌশল ও অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেয়া হয়েছে।[12]
অনুরূপভাবে আল্লামা মুনীর আহমদ মুলতানী প্রণীত, রুহুল্লাহ নোমানী অনূদিত এবং আল-মাকবাতুতু (আল-মাকতাবাতুত) তাওফিকিয়্যাহ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম প্রকাশিত ‘আহলে হাদীসের প্রতি ওপেন চ্যালেঞ্জ’ নামে পুস্তকে উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলার সুন্নাতের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে। ফেরেশতাগণ আমীন আস্তে বলেন তাই আমীন আস্তে বলার দাবী করা হয়েছে। কিন্তু ইমাম আমীন জোরে না বললে মুক্তাদীরা যে শুনতে পাবে না এবং ইমামের সাথে আমীন বলতে পারবে না, তা লেখক বুঝেননি। তাছাড়া যঈফ হাদীছ উল্লেখ করে গলাবাজি করেছেন এবং সহিহ হাদীছগুলোকে গোপন করে পাঠকদেরকে ধোঁকা দিয়েছেন আহলে হাদীসের প্রতি ওপেন চ্যালেঞ্জ, পৃঃ ৮৫-৮৭। মাযহাবী সম্পদকে রক্ষা করতে গিয়ে মিথ্যা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। এর পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ (বাক্বারাহ ৬৫; মায়েদাহ ৬০)।
উল্লেখ্য যে, ‘আহলে হাদীসের প্রতি ওপেন চ্যালেঞ্জ’ বইটিতে প্রথমে ১২টি মাসআলা আলোচনা করা হয়েছে এবং চ্যালেঞ্জ করে ২০ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। উক্ত ১২ মাসআলার মধ্যে অধিকাংশই স্বলাত সংক্রান্ত, যা আমাদের বইয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আসলে মাসআলা বর্ণনা করা লেখকের মূল লক্ষ্য নয়; বরং অসত্য কথা বলে গালিগালাজ করা ও পাঠকদেরকে প্রতারণার ফাঁদে আটকানোই মূল উদ্দেশ্য। বইটির শেষে আহলে হাদীসের প্রতি ১০০টি প্রশ্ন করা হয়েছে। তার মধ্যে ৮৬টি প্রশ্নই তাকলীদ সংক্রান্ত, যার শারঈ কোন ভিত্তি নেই। অথচ আহলেহাদীছগণ কখনো বাজে কাজে সময় নষ্ট করেন না। তারা পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদীছের প্রতিনিধিত্ব করেন। শিরক, বিদ‘আত ও নব্য জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন, যা তাদের চিরন্তন বৈশিষ্ট্য (মুসলিম হা/৫০৫৯; আহমাদ হা/৪১৪২)। উক্ত লেখক ও অনুবাদক রূপকথার গল্প শুনিয়ে এবং অর্থের লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন। কুরআন-হাদীছ যেন তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। মুখরোচক কথা বলে অর্থে বিনিময়ে বিক্রয় করতে চায়। এধরনের চাকচিক্যময় কথা দ্বারা আদম সন্তানকে বিপদগামী করা কার স্বভাব, তা হয়ত তারা ভুলে গেছেন (আন‘আম ১১২-১১৩)। আমরা আশা করি হক্ব পিয়াসী মুমিনকে যখন শয়তান প্রতারণায় ফেলতে ব্যর্থ হয়, তখন তল্পীবাহক তথাকথিত মাযহাবী গোলামরাও ব্যর্থ হবে ইনশাআল্লাহ।
জ্ঞাতব্য : অনেক মসজিদে ইমাম ‘আমীন’ বলার পূর্বেই মুক্তাদীরা আমীন বলে থাকে। সে জন্য ইমাম ‘য-ল্লীন’ বলার পর ওয়াক্ফ না করেই একই সঙ্গে ‘আমীন’ বলে দেন। কোনটিই সঠিক নয়। বরং ইমাম ওয়াক্ফ করবেন।[13] অতঃপর ইমাম আমীন বলা শুরু করলে মুক্তাদীরাও একই সঙ্গে আমীন বলবে। যাতে করে ইমাম-মুক্তাদীর আমীন ও ফেরেশতাদের আমীন এক সঙ্গে হয়। অন্যথা আমীন বলার ফযীলত থেকে বঞ্চিত হবে।[14] আরো উল্লেখ্য যে, কোন মসজিদে ইমামের আমীন বলা শেষ হলে তারপর মুক্তাদীরা আমীন বলে। এটাও বাড়াবাড়ি।
✔ (৫) সূরা ফাতিহা শেষে তিনবার আমীন বলা :
অনেক স্থানে স্বলাতে সূরা ফাতিহা শেষ করে তিনবার আমীন বলার প্রচলন দেখা যায়। কিন্তু উক্ত মর্মে যে দু’একটি বর্ণনা পাওয়া যায় তা যঈফ।
✔ (أ) عَنْ عَبْدِ الْجَبَّارِ بن وَائِلٍ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ دَخَلَ فِى الصَّلاةِ فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ فَاتِحَةِ الْكِتَابِ قَالَ آمِيْنَ ثَلاثَ مَرَّاتٍ.
(ক) আব্দুল জাববার ইবনু ওয়ায়েল তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে স্বলাতে প্রবেশ করতে দেখেছি। যখন তিনি সূরা ফাতিহা শেষ করতেন, তখন তিনবার আমীন বলতেন।[1]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আবু ইসহাক্ব ও সা‘দ ইবনু ছালত নামে দুইজন যঈফ রাবী আছে।[2]
✔ (ب) عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَا حَسَدَتْكُمْ الْيَهُوْدُ عَلَى شَيْءٍ مَا حَسَدَتْكُمْ عَلَى آمِيْنَ فَأَكْثِرُوْا مِنْ قَوْلِ آمِيْنَ.
(খ) ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ইহুদীরা তোমাদের ‘আমীন’ বলার প্রতি যত হিংসা করে অন্য কোন বিষয়ে তত হিংসা করে না। সুতরাং তোমরা বেশী বেশী ‘আমীন’ বল।[3]
তাহক্বীক্ব : যঈফ। এর সনদে ত্বালহা ইবনু আমর আল-হাযরামী নামে একজন যঈফ রাবী আছে।[4]
অতএব স্বলাতে একবারই আমীন বলতে হবে। রাসূল (ﷺ) ও ছাহাবায়ে কেরাম একবারই আমীন বলেছেন।[5]
✔ (৬) সূরা ফাতিহার পর সাকতা করা :
জেহরী স্বলাতে তাকবীরে তাহরীমার পর ইমামের সাকতা করা সুন্নাত। কারণ এই সময় ‘বাইদ বায়নী..’ পড়তে হয়।[1] কিন্তু সূরা ফাতিহার পর কিংবা ক্বিরাআত শেষে সাকতা করার কোন সহিহ হাদীছ নেই। যে বর্ণনাগুলো এসেছে সেগুলো যঈফ।
✔ (أ) عَنْ سَمُرَةَ قَالَ سَكْتَتَانِ حَفِظْتُهُمَا عَنْ رَسُولِ اللهِ فَأَنْكَرَ ذَلِكَ عِمْرَانُ بْنُ حُصَيْنٍ وَقَالَ حَفِظْنَا سَكْتَةً فَكَتَبْنَا إِلَى أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ بِالْمَدِيْنَةِ فَكَتَبَ أُبَىٌّ أَنْ حَفِظَ سَمُرَةُ قَالَ سَعِيدٌ فَقُلْنَا لِقَتَادَةَ مَا هَاتَانِ السَّكْتَتَانِ قَالَ إِذَا دَخَلَ فِى صَلاَتِهِ وَإِذَا فَرَغَ مِنَ الْقِرَاءَةِ ثم قال بعد ذلك وإذا قرأ (ولا الضالين )..
(ক) সামুরা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) থেকে দুইটি সাকতা মুখস্থ করেছি। কিন্তু ইমরান বিন হুছাইন এর বিরোধিতা করে বললেন, আমি একটি সাকতা মুখস্থ করেছি। তখন আমরা মদীনায় উবাই ইবনু কা‘বের কাছে লিখে জানতে চাইলাম। অতঃপর তিনি লিখলেন যে, সামুরা সঠিকটা মুখস্থ করেছে। সাঈদ বলেন, আমরা ক্বাতাদাকে বললাম, কোথায় সাকতা করতে হবে? তিনি বললেন, যখন তিনি স্বলাত শুরু করতেন এবং যখন ক্বিরাআত শেষ করতেন। অতঃপর বলেন, যখন গায়রিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন’ বলতেন। [2]
✔ (ب) عَنِ الْحَسَنِ عَنْ سَمُرَةَ قَالَ سَكْتَتَانِ حَفِظْتُهُمَا عَنْ رَسُولِ اللهِ قَالَ فِيْهِ قَالَ سَعِيدٌ قُلْنَا لِقَتَادَةَ مَا هَاتَانِ السَّكْتَتَانِ قَالَ إِذَا دَخَلَ فِى صَلاَتِهِ وَإِذَا فَرَغَ مِنَ الْقِرَاءَةِ ثُمَّ قَالَ بَعْدُ وَإِذَا قَالَ (غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ ).
(খ) হাসান থেকে বর্ণিত, সামুরা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) থেকে দু’টি সাকতা আয়ত্ব করেছি। সাঈদ বলেন, আমরা ক্বাতাদা (রাঃ)-কে বললাম, কোন দু’টি সাকতা? তিনি বললেন, যখন রাসূল (ﷺ) স্বলাত শুরু করতেন এবং যখন ক্বিরাআত শেষ করতেন। অতঃপর বলেন, যখন গায়রিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন’ বলতেন।[3]
✔ (ج) عَنِ الْحَسَنِ قَالَ قَالَ سَمُرَةُ حَفِظْتُ سَكْتَتَيْنِ فِى الصَّلاَةِ سَكْتَةً إِذَا كَبَّرَ الإِمَامُ حَتَّى يَقْرَأَ وَسَكْتَةً إِذَا فَرَغَ مِنْ فَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَسُوْرَةٍ عِنْدَ الرُّكُوْعِ قَالَ فَأَنْكَرَ ذَلِكَ عَلَيْهِ عِمْرَانُ بْنُ حُصَيْنٍ قَالَ فَكَتَبُوْا فِىْ ذَلِكَ إِلَى الْمَدِيْنَةِ إِلَى أُبَىٍّ فَصَدَّقَ سَمُرَةَ.
(গ) হাসান থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, সামুরা (রাঃ) বলেছেন, স্বলাতের মধ্যে দুইটি সাকতা আমি সংরক্ষণ করেছি। একটি হল, যখন ইমাম তাকবীর দেয় তখন থেকে ক্বিরাআত পাঠ করা পর্যন্ত। অন্যটি হল, রুকূর সময় যখন সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা পড়া ইমাম শেষ করেন। ইমরান ইবনু হুছাইন তার এই বর্ণনা অস্বীকার করলেন। রাবী বলেন, অতঃপর তারা এ বিষয়টি লিখে উবাই (রাঃ) বরাবর লিখে মাদীনায় পাঠালেন। তারপর তিনি সামুরা (রাঃ)-কে সত্যায়ন করলেন।[4]
✔ (د) عَنِ الْحَسَنِ عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ عَنِ النَّبِىِّ أَنَّهُ كَانَ يَسْكُتُ سَكْتَتَيْنِ إِذَا اسْتَفْتَحَ وَإِذَا فَرَغَ مِنَ الْقِرَاءَةِ كُلِّهَا.
(ঘ) হাসান থেকে বর্ণিত, সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) নবী (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি দুইটি সাকতা করতেন। যখন স্বলাত শুরু করতেন এবং যখন সমস্ত ক্বিরাআত পড়া শেষ করতেন।[5]
তাহক্বীক্ব : উপরিউক্ত চারটি বর্ণনাই যঈফ। উক্ত সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। কারণ হাসান বাছরী সামুরা থেকে উক্ত হাদীছ শ্রবণ করেননি।[6] তাছাড়া প্রথম দু’টি বর্ণনাতে বলা হয়েছে, স্বলাতের শুরুতে এবং সূরা ফাতিহা শেষ করে ‘সাকতা’ করতেন। আর পরের দু’টি বর্ণনায় এসেছে, স্বলাতের শুরুতে এবং ক্বিরাআত শেষে রুকূর পূর্বে সাকতা করতেন। একই রাবী থেকে এধরনের বিরোধপূর্ণ বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়।
উল্লেখ্য যে, উক্ত বর্ণনাকে বিশুদ্ধ প্রমাণ করার জন্য কেউ কতিপয় ‘মুতাসাহিল’ বা শিথিলতা প্রদর্শনকারী মুহাদ্দিছ এবং মুহাদ্দিছ নন এমন কিছু ব্যক্তির উদ্ধৃতি পেশ করার চেষ্টা করে থাকেন। অথচ তাদের মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়- যদি তাদের মন্তব্যের সাথে পূর্বের হক্বপন্থী প্রকৃত মুহাদ্দিছগণের মন্তব্য না মিলে।[7] অতএব সাকতার হাদীছের ব্যাপারে শিথিলতা দেখানোর কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া আলবানীর বক্তব্যকে বিশ্লেষণ করে উক্ত বর্ণনাগুলোকে বিশুদ্ধ বলাও উচিত নয়। কারণ তিনি সব শেষে উক্ত বর্ণনাগুলোকে যঈফ হাদীছের মধ্যে শামিল করেছেন। উল্লেখ্য যে, আলবানী (রহঃ) রুকূর পূর্বের সাকতাকে শর্ত সাপেক্ষে সঠিক বলতে চেয়েছেন এবং ইবনু তায়মিয়া এবং ইবনু ক্বাইয়িম (রহঃ)-এর উদ্ধৃতি পেশ করেছেন।[8] কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ে উক্ত বর্ণনাকেও তিনি যঈফের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।[9] তাছাড় এটা সূরা ফাতিহা পড়ার সাকতা নয়; বরং ক্বিরাআত ও রুকূর তাকবীর থেকে পৃথক করার জন্য সামান্য সাকতা।[10] তাই আলবানীর নাম উল্লেখ করেও কোন লাভ নেই।
✔ (ه) قَالَ أَبُوْ سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ لِلْإِمَامِ سَكْتَتَانِ فَاغْتَنِمُوْا فِيْهِمَا الْقِرَاءَةَ.
(ঙ) আবু সালামা বিন আব্দুর রহমান বলেন, ইমামের জন্য দুইটি সাকতা রয়েছে। তোমরা দুই সাকতার মাঝে ক্বিরাআত পড়াকে গণীমত মনে করো।[11]
তাহক্বীক্ব : মারফূ‘ হিসাবে বর্ণনাটি ভিত্তিহীন। বক্তব্যটি তাবেঈ বিদ্বান আবু সালামা বিন আব্দুর রহমান বিন আওফ-এর নিজস্ব। শায়খ আলবানী বলেন, আবু সালামা পর্যন্ত সনদ ‘হাসান’। কিন্তু ‘বক্তব্যটি রাসূলের মারফূ’ হাদীছ হওয়ার কোন ভিত্তি নেই’। বরং উক্তিটি আবু সালামা পর্যন্ত হওয়ার কারণে মাক্বতূ। আর যদি এটাকে মারফূ ধরে নেওয়া হয়, তবে আবু সালামা ‘মুরসাল’ তাবেঈ হওয়ার কারণে হাদীছটি যঈফ।[12]
(و) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ صَلَّى صَلاَةً مَكْتُوبَةً مَعَ الإِمَامِ فَلَيَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فِىْ سَكَتَاتِهِ وَمَنِ انْتَهَى إِلَى أُمِّ الْقُرْآنِ فَقَدْ أَجْزَأَهُ.
✔ (চ) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমামের সাথে ফরয স্বলাত আদায় করবে, সে যেন ইমামের সাকতার সময় সূরা ফাতিহা পাঠ করে। আর যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা শেষে আসবে, তার জন্য উহা যথেষ্ট হবে।[13]
তাহক্বীক্ব : যঈফ। এর সনদে ইবনু উমাইর নামে একজন মুনকার রাবী আছে। তাকে কেউ পরিত্যক্তও বলেছেন।[14]
✔ (ز) عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ النَّبِىَّ قَالَ إِذَا كُنْتَ مَعَ الْإِمَامِ فَاقْرَأْ بِأُمِّ الْقُرْآنِ قَبْلَهُ إِذَا سَكَتَ.
(ছ) আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যখন তুমি ইমামের সাথে থাকবে, তখন তুমি আগেই সূরা ফাতিহা পড়ে নিবে, যখন তিনি চুপ থাকেন।[15]
তাহক্বীক্ব : যঈফ। এর সনদেও ইবনু উমাইর নামে একজন মুনকার রাবী আছে। তাকে কেউ পরিত্যক্তও বলেছেন।[16]
✔ ইবনু তায়মিয়া ও আলবানীর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা :
দাবী করা হয়েছে যে, ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেছেন, ছানা পড়াকালীন সাকতায় সূরা ফাতিহাও পড়া যায়। অথচ তিনি ইমামের সাকতা করার সময় সূরা ফাতিহা পড়ার যেমন বিরোধী, তেমনি জেহরী স্বলাতে ইমামের পিছনে কিরাআত পড়ারও বিরোধী। সম্পূর্ণ আলোচনা না পড়েই কিংবা কিতাব না দেখেই উক্ত দাবী করা হয়েছে।[17] অনুরূপ ইমাম নাছিরুদ্দীন আলবানী সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘ইমামের সাকতা করা এবং সে সময় মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পড়া সম্পর্কে কোন সহিহ হাদীছ নেই’ মর্মে তিনি যে আলোচনা পূর্বে করেছেন, তা পরবর্তীতে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সেই সাথে সাকতার সময় সূরা ফাতিহা পড়াকে ওয়াজিব বলেছেন। উক্ত দাবীও সঠিক নয়। কারণ উক্ত অংশ যে বই থেকে নেয়া হয়েছে তা মূল বই নয়। মাত্র কয়েক পৃষ্ঠার সূচী মাত্র।[18] অথচ এর ৭ বছর পর প্রকাশিত তাঁর মূল বইয়ে তিনি ইমামের পিছনে জেহরী স্বলাতে সূরা ফাতিহা পড়াকে ‘মানসূখ’ বা হুকুম রহিত বলেছেন।[19] তার এই মতই প্রসিদ্ধ। সাকতার তো কোন কথাই নেই।
অতএব জেহরী স্বলাতে ইমামের পিছনে নীরবে সূরা ফাতিহা পাঠ করার জন্য সাকতা করার কোন সহিহ দলীল নেই। সমাজে যে সমস্ত বর্ণনা প্রচলিত আছে তা ত্রুটিপূর্ণ। তাই ইমামের সাথে চুপে চুপে শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। সূরা ফাতিহা পড়া সংক্রান্ত আলোচনা দ্রঃ। মূলতঃ একটি সাকতাই সহিহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। আর তা হল- তাকবীরে তাহরীমার পর, ক্বিরাআতের পূর্বে। রাসূল (ﷺ) এরপর সাকতা করলে ছাহাবীরা জিজ্ঞেস করতেন, যেমন ঐ সাকতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছেন।[20] অতএব এই ত্রুটিপূর্ণ ও সন্দেহ জনক বিষয় নিয়ে চরমপন্থা অবলম্বন করা উচিত নয়। তাছাড় ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ, শায়খ আলবানীসহ প্রমুখ বিদ্বান মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পড়ার জন্য ইমামের সাকতা করার আমলকে ‘বিদ‘আত’ বলেছেন।[21]
✔ (৭) জেহরী স্বলাতে ‘আঊযুবিল্লাহ’ ও ‘বিসমিল্লাহ’ সরবে পড়া :
অনেক মসজিদে উক্ত আমল দেখা যায়। ঐ সমস্ত ইমামদের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছালেও কোন গুরুত্ব দেন না। এটা গোঁড়ামী মাত্র। কারণ ‘আঊযুবিল্লাহ’ ও ‘বিসমিল্লাহ’ নীরবেই পড়তে হবে। ‘বিসমিল্লাহ’ জোরে বলার পক্ষে যে বর্ণনা রয়েছে তা যঈফ। আর ‘আঊযুবিল্লাহ’ জোরে বলার কোন দলীলই নেই।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ صَلَّى مُعَاوِيَةُ بِالْمَدِيْنَةِ صَلاَةً فَجَهَرَ فِيْهَا بِالْقِرَاءَةِ فَلَمْ يَقْرَأْ (بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ) لأُمِّ الْقُرْآنِ وَلَمْ يَقْرَأْ بِهَا لِلسُّورَةِ الَّتِى بَعْدَهَا وَلَمْ يُكَبِّرْ حِيْنَ يَهْوِى حَتَّى قَضَى تِلْكَ الصَّلاَةَ فَلَمَّا سَلَّمَ نَادَاهُ مَنْ سَمِعَ ذَلِكَ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ وَالأَنْصَارِ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ يَا مُعَاوِيَةُ أَسَرَقْتَ الصَّلاَةَ أَمْ نَسِيْتَ قَالَ فَلَمْ يُصَلِّ بَعْدَ ذَلِكَ إِلاَّ قَرَأَ ( بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ) لأُمِّ الْقُرْآنِ وَلِلسُّورَةِ الَّتِى بَعْدَهَا..
একদা মু‘আবিয়া (রাঃ) মদীনার মসজিদে এশার স্বলাতের ইমামতি করেন। সেখানে তিনি সরবে ক্বিরাআত করেন। কিন্তু ‘সূরা ফাতিহার সাথে ‘বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রাহীম’ পড়লেন না। এরপর অন্য সূরা পাঠ করার সময়ও ‘বিসমিল্লাহ’ পড়লেন না। যখন রুকূতে গেলেন তখন তাকবীরও দিলেন না। যখন তিনি সালাম ফিরালেন তখন বিভিন্ন দিক থেকে আনছার ও মুহাজির ছাহাবীরা এসে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি স্বলাত চুরি করলেন না ভুলে গেলেন? তারপর থেকে তিনি আর কখনো সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরার সাথে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া ছাড়েননি অর্থাৎ সরবে পড়েছেন।[1]
তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনা যঈফ। ইমাম দারাকুৎনী উক্ত আছার বর্ণনা করেই তাকে যঈফ বলেছেন। কারণ এর সনদে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন উবাইদ বিন উমাইর নামক যঈফ রাবী আছে।[2] ইবনু মাঈন, নাসাঈ, আলী ইবনুল মাদীনী প্রমুখ মুহাদ্দিছ যঈফ বলেছেন।[3]
✔ ‘বিসমিল্লাহ’ নীরবে বলার সহিহ হাদীছ :
عَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ وَأَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ رَضِي الله عَنْهُمَا كَانُوْا يَفْتَتِحُوْنَ الصَّلَاةَ بِ-الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ.
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ), আবুবকর ও ওমর (রাঃ) ‘আল-হামদু লিল্লা-হি রাবিবল ‘আলামীন’ দ্বারা স্বলাত শুরু করতেন।[1]
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ صَلَّيْتُ خَلْفَ النَّبِىِّ وَأَبِى بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ فَكَانُوْا يَسْتَفْتِحُوْنَ بِ (الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ) لاَ يَذْكُرُوْنَ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ فِىْ أَوَّلِ قِرَاءَةٍ وَلاَ فِىْ آخِرِهَا.
আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ), আবুবকর, ওমর ও ওছমান (রাঃ)-এর পিছনে স্বলাত আদায় করেছি। তারা ‘আল-হামদু লিল্লা-হি রাবিবল ‘আলামীন’ দ্বারা স্বলাত শুরু করতেন। ক্বিরাআতের প্রথমে বা শুরুতে ‘বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম’ উল্লেখ করতেন না।[2]
>>>কৃতজ্ঞতাঃ- hadithonlinebd<<<
No comments:
Post a Comment