এক নযরে স্বলাতের পদ্ধতি
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর স্বলাত- এর অংশবিশেষশায়খ মুযাফফর বিন মুহসিন
মুছল্লী ওযূ করার পর মনে মনে স্বলাতের সংকল্প করবে। অতঃপর ক্বিবলামুখী হয়ে স্বলাতে দাঁড়িয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে ‘তাকবীরে তাহরীমা’ সহ দু’হাত কান অথবা কাঁধ বরাবর উঠিয়ে বুকের উপর বাঁধবে।[1] এ সময় বাম হাতের উপরে ডান হাত কনুই বরাবর রাখবে অথবা বাম হাতের কব্জির উপরে ডান হাতের কব্জি রেখে বুকের উপরে হাত বাঁধবে।[2] জামা‘আতের সাথে স্বলাত আদায় করলে কাতারের মাঝে পরস্পরের পায়ের সাথে পা, টাখনুর সাথে টাখনু এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে।[3] সেই সাথে সিজদা বা তার এরিয়ার মধ্যে দৃষ্টি রাখবে।[4] অতঃপর ছানা পাঠ করবে-
اَللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِىْ وَبَيْنَ خَطَايَاىَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ اَللَّهُمَّ نَقِّنِىْ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ اَللَّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَاىَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَد.
অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি আমার ও আমার গোনাহ সমূহের মধ্যে এমন দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন, যেমন দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে পরিচ্ছন্ন করুন গোনাহ সমূহ হতে, যেমন পরিচ্ছন্ন করা হয় সাদা কাপড় ময়লা হতে। হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহ সমূহকে ধুয়ে ছাফ করে দিন পানি দ্বারা, বরফ দ্বারা ও শিশির দ্বারা’।[5] এক নযরে স্বলাতের পদ্ধতি
ছানা পাঠ শেষ করে ‘আ‘ঊযুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্ব-নির রজীম মিন হামযিহী, ওয়া নাফখিহী ওয়া নাফছিহী[6] ও ‘বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম’ সহ সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।[7] এভাবে পড়বে প্রথম রাক‘আতে। পরের রাক‘আতগুলো ‘বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম’ বলে সূরা ফাতিহা শুরু করবে। জেহরী স্বলাতে ‘বিসমিল্লাহ’ নীরবে পড়বে[8] এবং ফাতিহা শেষে উচ্চৈঃস্বরে ‘আমীন’ বলবে।[9] জেহরী স্বলাতে মুক্তাদীগণ ইমামের সাথে সাথে শুধু সূরা ফাতিহা পড়বে।[10] ক্বিরাআত শেষে ইমাম আমীন বলা শুরু করলে মুক্তাদীও তার সাথে মিলে এক সঙ্গে আমীন বলবে।[11] উল্লেখ্য, ইমামের আমীন বলার আগেই মুক্তাদীর আমীন বলার যে অভ্যাস চালু তা বর্জন করতে হবে।
ক্বিরাআত : সূরা ফাতিহা পাঠ শেষে ইমাম হলে কিংবা মুছল্লী একাকী হলে প্রথম দু’রাক‘আতে কুরআন থেকে অন্য সূরা বা কিছু আয়াত পাঠ করবে। তবে মুক্তাদী হলে জেহরী স্বলাতে ইমামের সাথে সাথে শুধু সূরা ফাতিহা পড়বে। অতঃপর ইমামের ক্বিরাআত মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করবে।[12] আর যোহর ও আছরের স্বলাতে ইমাম মুক্তাদী উভয়ে প্রথম দুই রাক‘আতে সূরা ফাতিহা সহ অন্য সূরা পড়বে।[13] আর শেষের দু’রাক‘আতে কেবল সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।[14]
রুকূ : ক্বিরাআত শেষে ‘আল্লা-হু আকবার’ বলে দু’হাত কান কিংবা কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ করে রুকূতে যাবে।[15] হাঁটুর উপরে দু’হাতে ভর দিয়ে পিঠ ও মাথা সোজা রাখবে। এ সময় বাহুসহ দুই হাত ও হাঁটুসহ দুই পা শক্ত করে সোজা রাখবে।[16] অতঃপর রুকূর দু‘আ পড়বে।[17]
কওমা : অতঃপর রুকূ থেকে উঠে সোজা হয়ে প্রশান্তির সাথে দাঁড়াবে এবং কান বা কাঁধ বরাবর দুই হাত উঠিয়ে ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ করবে।[18] এ সময় ‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’ বলে দু‘আ পাঠ করবে।[19] তারপর বলবে- رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ ‘রববানা লাকাল হাম্দ’ বলবে। অথবা বলবে- رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُّبَارَكًا فِيْهِ ‘রববানা ওয়া লাকাল হাম্দু হাম্দান কাছীরান ত্বাইয়েবাম মুবা-রাকান ফীহি’।[20] সেই সাথে দুই হাত স্বাভাবিকভাবে ছেড়ে দিবে।[21]
সিজদা : অতঃপর ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে প্রথমে দু’হাত ও পরে দু’হাঁটু মাটিতে রেখে সিজদায় যাবে ও দু‘আ পড়বে।[22] এ সময় হাত দু’খানা ক্বিবলামুখী করে মাথার দু’পাশে কাঁধ বরাবর মাটিতে রাখবে।[23] হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে রাখবে।[24] কনুই উঁচু রাখবে ও বগল ফাঁকা রাখবে।[25] হাঁটু বা মাটিতে ঠেস দিবে না।[26] সিজদা লম্বা হবে ও পিঠ সোজা থাকবে। যেন নীচ দিয়ে একটি বকরীর বাচ্চা যাওয়ার মত ফাঁকা থাকে।[27] দুই পা খাড়া করে এক সঙ্গে মিলিয়ে রাখবে।[28] এ সময় আঙ্গুলগুলো ক্বিবলামুখী করে রাখবে।[29] অতঃপর سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى বলবে কমপক্ষে তিনবার বলবে।[30] সিজদাতে পঠিতব্য আরো দু‘আ আছে।
সিজদা থেকে উঠে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে ও ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবে। এ সময় প্রশান্তির সাথে বসবে এবং বলবেاَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِىْ وَارْحَمْنِىْ وَاجْبُرْنِىْ وَاهْدِنِىْ وَعَافِنِىْ وَارْزُقْنِىْ ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপরে রহম করুন, আমার অবস্থার সংশোধন করুন, আমাকে সৎপথ প্রদর্শন করুন, আমাকে সুস্থতা দান করুন ও আমাকে রূযী দান করুন’।[31]
অতঃপর ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে দ্বিতীয় সিজদায় যাবে ও দু‘আ পড়বে। ২য় ও ৪র্থ রাক‘আতে দাঁড়ানোর সময় সিজদা থেকে উঠে শান্তভাবে বসবে। অতঃপর মাটিতে দু’হাত রেখে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে।[32] উল্লেখ্য যে, রুকূ ও সিজদায় কুরআন থেকে কোন দু‘আ পড়বে না।[33]
বৈঠক : ২য় রাক‘আত শেষ করার পর বৈঠকে বসবে। ১ম বৈঠক হলে কেবল ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়বে।[34] তারপর মাটির উপর দুই হাত রেখে ভর দিয়ে ৩য় রাক‘আতের জন্য দাঁড়িয়ে যাবে।[35] আর যদি শেষ বৈঠক হয়, তবে ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ার পরে দরূদ, দু‘আয়ে মাছূরাহ পড়বে।[36] ১ম বৈঠকে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে এবং শেষ বৈঠকে ডান পায়ের তলা দিয়ে বাম পায়ের অগ্রভাগ বের করে নিতম্বের উপরে বসবে এবং ডান পা খাড়া রাখবে ও আঙ্গুলগুলো ক্বিবলামুখী করবে।[37] এ সময় আঙ্গুলগুলো সাধারণভাবে খোলা রাখবে।[38] বৈঠকের সময় বাম হাতের আঙ্গুল বাম হাঁটুর উপর ক্বিবলামুখী করে রাখবে। আর ডান হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল মধ্যমা আঙ্গুলের পিঠে রেখে মুষ্টিবদ্ধ করে শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত ইশারা করবে।[39] অন্য হাদীছে এসেছে, ৫৩-এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ রেখে সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত শাহাদাত অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করতে থাকবে।[40] এ সময় শাহাদাত আঙ্গুলের দিকে দৃষ্টি রাখবে।[41] দুই তাশাহ্হুদেই ইশারা করবে।[42]
‘আত্তাহিইয়া-তু’, ‘দরূদ’, দু‘আ মাছূরা ও অন্যান্য দু‘আ পড়া শেষ করে ডানে ও বামে ‘আসসালামু আলায়কুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলে সালাম ফিরাবে।[43] উল্লেখ্য যে, প্রথম সালামের সাথে ‘ওয়া বারাকা-তুহু’ যোগ করা যায়।[44] সালাম ফিরিয়ে প্রথমে সরবে একবার ‘আল্লা-হু আকবর’ বলবে।[45] তারপর তিনবার বলবে ‘আস্তাগফিরুল্লা-হ’। সেই সাথে বলবে اَللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ. ‘হে আল্লাহ আপনিই শান্তি, আপনার থেকেই আসে শান্তি। বরকতময় আপনি, হে মর্যাদা ও সম্মানের মালিক’।[46]
এ সময় ইমাম হলে প্রত্যেক স্বলাতে ডানে অথবা বামে ঘুরে সরাসরি মুক্তাদীদের দিকে মুখ করে বসবে।[47] অতঃপর ইমাম মুক্তাদী সকলে সালামের পরের যিকির সমূহ পাঠ করবে।[48] সালাম ফিরানোর পর পরই দ্রুত উঠে যাবে না। এটা বদ অভ্যাস।[49] বরং এ সময় ‘আয়াতুল কুরসী’সহ অন্যান্য দু‘আ পাঠ করবে।[50] এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা দেখুন : লেখক প্রণীত ‘শারঈ মানদন্ডে মুনাজাত’ বই।
No comments:
Post a Comment