দুই সিজদার মাঝে দুআ না পড়া ও না বসে সরাসরি উঠে যাওয়া
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর স্বলাত- এর অংশবিশেষশায়খ মুযাফফর বিন মুহসিন
রাসূল (ﷺ) দুই সিজদার মাঝে দু‘আ পড়তেন। কিন্তু উক্ত সুন্নাত সমাজ থেকে উঠে গেছে। অধিকাংশ মুছল্লী আমল করে না। এভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে একটি সুন্নাতকে প্রত্যাখ্যান করা গর্হিত অন্যায়।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يَقُوْلُ بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ اللهُمَّ اغْفِرْ لِىْ وَارْحَمْنِىْ وَعَافِنِىْ وَاهْدِنِىْ وَارْزُقْنِىْ.
ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) দুই সিজদার মাঝে এই দু‘আ পড়তেন- اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِىْ وَارْحَمْنِىْ وَعَافِنِىْ وَاهْدِنِىْ وَارْزُقْنِىْ ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপরে রহম করুন, আমার অবস্থার সংশোধন করুন, আমকে সৎপথপ্রদর্শন করুন ও আমাকে রূযী দান করুন’।[1] অথবা বলবে ‘রবিবগ্ফিরলী’ ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন’। দুইবার বলবে।[2] দুই সিজদার মাঝে দুআ না পড়া
✔ (১৩) দ্বিতীয় ও চতুর্থ রাক‘আতের জন্য উঠার সময় সিজদা থেকে উঠে না বসে সরাসরি উঠে যাওয়া :
সিজদা থেকে উঠে প্রশান্তির সাথে বসে তারপর দুই হাত মাটির উপর রেখে ভর করে দ্বিতীয় ও চতুর্থ রাক‘আতের জন্য দাঁড়াতে হবে। কিন্তু সিজদা থেকে সরাসরি উঠে যাওয়ার যে প্রথা চালু আছে, তার হাদীছ জাল বা মিথ্যা।
✔ (أ) عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ … ثُمَّ يَقُوْمُ كَأَنَّهُ السَّهْمُ لا يَعْتَمِدُ عَلَى يَدَيْهِ.
(ক) মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি তীরের মত দাঁড়িয়ে যেতেন, দুই হাতের উপর ভর দিতেন না।[1]
তাহক্বীক্ব : এর সনদে খাছীব বিন জাহদার নামে মিথ্যুক রাবী আছে।[2] তাছাড়াও সহিহ হাদীছের বিরোধী। কারণ রাসূল (ﷺ) ধীরস্থিরভাবে বসতেন এবং হাত দিয়ে মাটির উপর ভর করে দাঁড়াতেন।[3]
✔ (ب) عَنْ عَلِىٍّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ مِنَ السُّنَّةِ أَنْ لَّاتَعْتَمِدَ عَلَى يَدَيْكَ حِيْنَ تُرِيْدُ أَنْ تَقُوْمَ بَعْدَ الْقُعُوْدِ فِى الرَّكْعَتَيْنِ.
(খ) আলী (রাঃ) বলেন, সুন্নাত হল দুই রাক‘আতের বসার পর যখন তুমি দাঁড়াবে, তখন তুমি দুই হাতের উপর ভর দিয়ে উঠবে না।[4]
তাহক্বীক্ব : নিতান্তই যঈফ।[5]
✔ (ج) عَنْ اِبْنِ عُمَرَ قَالَ نَهَى رَسُوْلُ اللهِ أَنْ يَّعَتَمِدَ الرَّجُلُ عَلَى يَدَيْهِ إِذَا نَهَضَ فِى الصَّلَاةِ.
(গ) ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, স্বলাতে কোন ব্যক্তি যখন বসা থেকে দাঁড়াবে তখন হাতের উপর ভর দিয়ে উঠতে রাসূল (ﷺ) নিষেধ করেছেন।[6]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি মুনকার বা সহিহ হাদীছের বিরোধী। এর সনদে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল মালেক আল-গাযযাল নামে যঈফ রাবী আছে। উক্ত হাদীছের দুইটি অংশ। প্রথম অংশ সহিহ।[7]
✔ (د) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ كَانَ النَّبِىُّ يَنْهَضُ فِى الصَّلَاةِ عَلَى صُدُوْرِ قَدَمَيْهِ.
(ঘ) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) স্বলাতের মধ্যে দুই পায়ের অগ্রভাগের উপর ভর করে দাঁড়াতেন।[8]
তাহক্বীক্ব : যঈফ। এর সনদে খালেদ ইবনু ইলিয়াস নামে দুর্বল রাবী আছে। ইমাম তিরমিযী উক্ত হাদীছ উল্লেখ করে বলেন, মুহাদ্দিছগণের নিকটে সে দুর্বল।[9]
✔ হাতের উপর ভর করে উঠার সহিহ হাদীছ :
عَنْ مَالِكِ بْنِ الْحُوَيْرِثِ اللَّيْثِىِّ أَنَّهُ رَأَى النَّبِىَّ يُصَلِّى فَإِذَا كَانَ فِىْ وِتْرٍ مِنْ صَلاَتِهِ لَمْ يَنْهَضْ حَتَّى يَسْتَوِىَ قَاعِدًا .
মালেক বিন হুওয়াইরিছ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) যখন বেজোড় রাক‘আতে থাকতেন, তখন সুস্থির হয়ে না বসে দাঁড়াতেন না।[1] অন্য হাদীছে এসেছে যে, وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ عَنِ السَّجْدَةِ الثَّانِيَةِ جَلَسَ وَاعْتَمَدَ عَلَى الأَرْضِ ثُمَّ قَامَ ‘যখন তিনি দ্বিতীয় রাক‘আতে সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন, তখন বসতেন এবং যমীনের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন’।[2]
অনেকে ব্যাপক ভিত্তিক হাদীছের আলোকে সরাসরি উঠে যান।[3] অথচ উক্ত হাদীছদ্বয়ে নির্দিষ্ট আমল বর্ণিত হয়েছে। আর এই হাদীছই বেশী। ইমাম বুখারীও একে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।[4] তাছাড়া বৃদ্ধ বয়সে হাতের উপর ভর দিয়ে উঠা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। তাই ইমাম ইসহাক্ব ইবনু রাহওয়াইহ (রহঃ) বলেন,مَضَتِ السُّنَّةُ مِنَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَّعْتَمِدَ عَلَى يَدَيْهِ وَيَقُوْمُ شَيْخًا كَانَ شَابَا ‘রাসূল (ﷺ) থেকে এই সুন্নাত চলে আসছে যে, মুছল্লী যুবক হোক আর বৃদ্ধ হোক দুই হাতের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াবে।[5] সুতরাং শান্তিপূর্ণভাবে বসে তারপর দাঁড়াতে হবে।
>>>কৃতজ্ঞতাঃ- hadithonlinebd<<<
No comments:
Post a Comment