Thursday, January 23, 2025

বিদাতিদের সাথে সখ্যতা ও সম্পর্ক এবং মেলামেশা

 বিদাতিদের সাথে সখ্যতা, সম্পর্ক ও মেলামেশা

(সাথে রয়েছে দাঈদের জন্য বিশেষ নসিহত)

প্রশ্ন: আমরা জানি যে, ইমামদের মধ্যেও ইখতেলাফ (মতবিরোধ) ছিল। তারপরেও তারা একে অপরকে বন্ধু হিসেবে মেনে নিতো। আমার প্রশ্ন হলো, এখনকার মানুষরা যে বিভিন্ন মাজহাব মেনে চলেন তারা তো কোনও না কোনও ইমামকেই অনুসরণ করেন। তারা যা করেন সেটা তো আহলে হাদিস তথা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের মতে অনেক কিছুই বিদাতত। আর যতটুকু জানি, হাদিসে বিদাতিদের সাথে বন্ধুত্ব রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। তাহলে ইমামদের মধ্যে পরস্পর বন্ধুত্ব রাখা আর আমাদের সাধারণ মানুষদের মধ্যে বিদাতিদের সাথে বন্ধুত্ব না রাখা টা কেমন সাংঘর্ষিক মনে হচ্ছে না? বিষয় টা একটু বুঝিয়ে বললে উপকৃত হবো ইনশাআল্লাহ।
উত্তর: শাখাগত বিভিন্ন মাসআলা বিষয়ে আমাদের পূর্বসূরি ইমামগণ মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছেন। আকিদাগত ও দ্বীনের মৌলিক বিষয়ে মতবিরোধ ছিল খুবই সীমিতG তারপরও তাদের একে অপরের সাথে সম্পর্ক বজায় ছিল। এর কারণ হলো, তারা কুরআন-সুন্নাহর দলিলকে কেন্দ্র করে মতবিরোধ করেছেন। তাদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্য ছিল, সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। এখানে তাদের ব্যক্তিগত কোন উদ্দেশ্য বা স্বার্থ ছিল না। তবে যারা আকিগতভাবেই পথভ্রষ্ট ও বিদাতি ছিল আমাদের পূর্বসূরিগণ তাদের সাথেও কথা বলেছেন, তাদের কাছে গেছেন এবং তাদের সাথে বিতর্ক করেছেন। উদ্দেশ্য ছিল, তাদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে নিয়ে আনা বা তাদের বাতিল আকিদাকে মানুষের কাছে প্রকাশ করে দেওয়া। যাতে অন্যরা তাদের ভ্র্রষ্টতা সম্পর্কে সচেতন হয়। যেমন: আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. খারেজি সম্প্রদায়ের সাথে বিতর্ক করেছেন, ইবনে তায়মিয়া রাহ. বিভিন্ন বিদাতি গোষ্ঠীর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছেন। এর উদ্দেশ্য ছিল যেন, তারা সঠিক পথে ফিরে আসে বা অন্য মানুষ যেন তাদের মাধ্যমে প্রতারিত না হয়।

বিদাতিদের সাথে এ ধরণের সম্পর্ক বর্তমানেও অব্যাহত রাখা যাবে। তবে সাধারণ মানুষ নয় বরং যারা দ্বীনের বিষয়ে গভীর জ্ঞান রাখেন এবং বাতিলের সাথে মোকাবেলা করার যোগ্যতা রাখেন কেবল তারা। সাধারণ মানুষ তাদের সাথে সম্পর্ক রাখার ফলে নিজেরাই গোমরাহির দিকে ধাবিত হতে পারে।

কিন্তু যদি তাদের সাথে সম্পর্ক রাখায় কোন কল্যাণের আশা না থাকে তাহলে তাদের সাথে কথা বলা যাবে না বা তাদের সাথে উঠবস করা যাবে না। শরয়ি স্বার্থ ছাড়া তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা হলে এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِينَ يَخُوضُونَ فِي آيَاتِنَا فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ حَتَّىٰ يَخُوضُوا فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ ۚ وَإِمَّا يُنسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرَىٰ مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

“যখন আপনি তাদেরকে দেখেন, যারা আমার আয়াত সমূহে ছিদ্রান্বেষণ করে, তখন তাদের কাছ থেকে সরে যান যে পর্যন্ত তারা অন্য কথায় প্রবৃত্ত না হয়, যদি শয়তান আপনাকে ভুলিয়ে দেয় তবে স্মরণ হওয়ার পর জালেমদের সাথে উপবেশন করবেন না।” [সূরা আনআম: ৬৮]

হাসান রহ. বলেন,

لا تجالسوا أهل الأهواء ولا تجادلوهم ولا تسمعوا منهم

“প্রবৃত্তির অনুসারীদের সাথে উঠবস করো না, তাদের সাথে বিতর্ক করো না এবং তাদের কথা শুনিও না।” [লালাকাঈ]

মোটকথা, যোগ্য আলেমগণ বিদাতি ও বাতিল আকিদাপন্থী লোকদের সাথে বন্ধুত্ব নয় বরং তাদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বা মানুষকে তাদের গোমরাহি মূলক আকিদা ও আমল সম্পর্কে সচেতন করার উদ্দেশ্যে সম্পর্ক ও যোগাযোগ রাখা যাবে। তবে সাধারণ মানুষ তাদের সাথে আন্তরিক বন্ধুত্ব রাখা, তাদের সাথে উঠবস করা, তাদের বক্তব্য শোনা, তাদের ভিডিও দেখা, তাদের দরসে বসা এবং তাদের লিখিত বই-পুস্তক পড়া ইত্যাদি থেকে যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রাখবে যেন তারা বিদাতিদের বাতিল আকিদা দ্বারা প্রভাবিত হওয়া থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়। আল্লাহ তাওফিক দানকারী।

❑ বিদাতিদের সাথে সখ্যতা ও সম্পর্ক:

সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা শাইখ বিন বায রাহ. কে প্রশ্ন করা হয় যে, বিদাতপন্থীদের সঙ্গে উঠবস করা এবং তাদের দরসে অংশ গ্রহণ করা কি বৈধ?

উত্তরে তিনি বলেন,
لا يجوز مجالستهم ولا اتخاذهم أصحابًا، ويجب الإنكار عليهم وتحذيرهم من البدع، نسأل الله العافية

“তাদের সঙ্গে উঠবস বা মেলামেশা করা অথবা তাদেরকে বন্ধু বানানো বৈধ নয় বরং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা এবং তাদের বিদাত থেকে সাবধান করা আবশ্যক। আল্লাহ আমাদের নিরাপত্তা দিন। আমিন। [মাজল্লাতুল ফুরকান, সংখ্যা ১০০, রবিউস সানি ১৪১৯ হিজরি-তে প্রকাশিত। শাইখ ইবন বায-এর ফতোয়া ও প্রবন্ধসমূহ, ২৮/২৬৭]

❑ দাঈদের জন্য বিশেষ নসিহত:

বিন বায রাহ. বিদাতিদের সাথে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে দাঈদের উদ্দেশ্যে বলেন,
الدعاة عليهم البلاغ والبيان والنصيحة، والله يهدي من يشاء، وإذا دعوتهم إلى الخير، إلى التوحيد والإيمان والسنة، وترك البدع، فلم يستجيبوا؛ فقاطعهم، لا تكن صاحبًا لهم، قاطعهم، واهجرهم، ولا تدعهم إلى بيتك، ولا تجب دعوتهم حتى يدعوا ما هم عليه من الباطل؛ لأنك إذا صحبتهم ودعوتهم، وأجبت دعوتهم؛ أظهرت الرضا بأعمالهم.

فلا ترضى بأعمالهم، لكن النصيحة، استمر فيها، النصيحة والدعوة والتوجيه، وإرسال من ترى أنهم يقدرون ترسله إليهم؛ لعله يدعوهم إلى الله، ولعلهم يستجيبون

“দাঈদের দায়িত্ব হলো, পরিষ্কারভাবে বার্তা পৌঁছে দেওয়া, উপদেশ দেওয়া এবং সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করা। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দিবেন। আপনি যদি তাদেরকে কল্যাণ, তাওহিদ, ঈমান ও সুন্নাহর পথে ডাকেন এবং বিদাত পরিত্যাগে আহ্বান করেন, তবুও তারা সাড়া না দিলে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করুন। তাদের বন্ধু হবেন না। তাদের সঙ্গে মেলামেশা ত্যাগ করুন। তাদেরকে বাড়িতে আমন্ত্রণ করবেন না এবং তাদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করবেন না যতক্ষণ না তারা তাদের ভুল পথ পরিত্যাগ করে। তাদের কাজকে অনুমোদন করবেন না। তবে উপদেশ অব্যাহত রাখুন। দাওয়াত, দিকনির্দেশনা ও সঠিক পথে ফেরানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। এমন কাউকে পাঠান যাকে আপনি উপযুক্ত মনে করেন। হয়তো সে তাদেরকে আল্লাহর পথে ডাকবে এবং হয়তো তারা সাড়া দেবে।” [binbaz]
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

বিদআতিদের সাথে বসার বিধান উপকারিতার ওপর নির্ভরশীল

 প্রশ্ন: সম্মানিত শায়েখ, দাওয়াতের প্রয়োজনের জন্য-বিশেষত সুফিদের সাথে যারা দেশে অনেক বেড়ে গিয়েছে এবং সঠিক আকিদাধারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তাদের সাথে বসা কি জায়েজ? আমাদের দয়া করে জানান। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।

উত্তর: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি।

মূলতঃ বিদআতিদের (দ্বীনে সংযোজন-বিয়োজনকারীদের) সাথে ওঠাবসা জায়েজ নয়। কারণ এতে তাদের বাতিল কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দেওয়া হয় এবং তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায়। তবে যদি এর পেছনে কোনো শরয়ি উপকার থাকে, যেমন: তাদের জবাব দেওয়া বা তাদের বাতিল কর্মকাণ্ড প্রকাশ করে দেওয়া তাহলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। তবে এটি শুধুমাত্র সেই ব্যক্তি করতে পারে, যার গভীর ইলম (জ্ঞান) রয়েছে এবং যারা তাদের ভুল যুক্তি খণ্ডন করতে সক্ষম।

যেমন: ইবনে আব্বাস রা. খারিজিদের সাথে মোনাজারা (তর্ক-বিতর্ক) করেছিলেন এবং শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াও বিদআতিদের সাথে মোনাজারা করেছেন।
তবে সাধারণ মানুষ এ ধরনের কাজে প্রবেশ করতে পারবে না।‌ কারণ এতে তারা তাদের ভুল যুক্তি দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।
তাই তাদের সাথে বসা বা তাদের কথা শোনা শরয়ি মুনাফার উপর নির্ভর করে। যদি এতে কোনো মুনাফা না থাকে তবে তাদের কথা শোনা বা তাদের সাথে বসা উচিত নয়। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِذَا رَأَيْتَ الَّذِينَ يَخُوضُونَ فِي آيَاتِنَا فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ حَتَّىٰ يَخُوضُوا فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ ۚ وَإِمَّا يُنسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرَىٰ مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
“আর যখন তুমি তাদেরকে দেখতে পাবে যারা আমার আয়াতসমূহ নিয়ে তর্ক করছে, তখন তুমি তাদের থেকে ফিরে যাও যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় লিপ্ত হয়। আর যদি শয়তান তোমাকে ভুলিয়ে দেয়, তবে স্মরণ হওয়ার পর তুমি তাদের জালিম সম্প্রদায়ের সাথে বসবে না।” [সূরা আনআম: ৬৮]

ইমাম হাসান রহ. বলেছেন,

يقول الحسن رحمه الله يقول: لا تجالسوا أهل الأهواء ولا تجادلوهم ولا تسمعوا منهم
“বিদআতিদের সাথে উঠাবসা করো না, তাদের সাথে তর্ক করো না এবং তাদের কথা শুনো না।”
(ইমাম লালাকাই কর্তৃক বর্ণিত)। আল্লাহু আলাম‌
সোর্স: ইসলাম ওয়েব।
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।

রমজান মাসে রোজা অবস্থায় বা সেজদারত অবস্থায় মৃত্যুর জন্য দুআ করার বিধান

 প্রশ্ন: এভাবে দুআ করা যাবে কি যে, হে আল্লাহ, আমার মৃত্যু যেন রমজান মাসে হয় বা নামাজের সেজদারত অবস্থায় হয়?

উত্তর: সালাতের সেজদারত অবস্থায়, রোজা অবস্থায়, আল্লাহর পথে জিহাদে লিপ্ত থাকা, কালিমা পাঠ, হজের তালবিয়া উচ্চরণ, কুরআন তিলাওয়াত বা অন্য যে কোনো ইবাদতরত অবস্থায় অথবা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শহর মদিনায় মৃত্যুর জন্য দুআ করা শরিয়ত সম্মত। কেননা এগুলো ‘হুসনুল খাতিমা’ বা কল্যাণের উপর মৃত্যুর জন্য দুআর অন্তর্ভুক্ত।

❂ উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি এ বলে দুআ করতেন:

اللَّهُمَّ ارْزُقْنِي شَهَادَةً فِي سَبِيلِكَ، وَاجْعَلْ مَوْتِي فِي بَلَدِ رَسُولِكَ صلى الله عليه وسلم

“হে আল্লাহ, আমাকে তোমার রাস্তায় শাহাদাত লাভের তাওফিক দান কর এবং আমার মৃত্যু তোমার রসুলের শহরে প্রদান কর।” [বুখারি: ১৮৯০, অধ্যায়: ২৯/১৩]

❂ আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

‏ إِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدٍ خَيْرًا اسْتَعْمَلَهُ ‏”‏ فَقِيلَ كَيْفَ يَسْتَعْمِلُهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏”‏ يُوَفِّقُهُ لِعَمَلٍ صَالِحٍ قَبْلَ الْمَوْتِ

“আল্লাহ তাআলা যখন তার বান্দা সম্পর্কে কল্যাণের ইচ্ছা করেন তখন তাকে আমল করতে দেন। বলা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কীভাবে তিনি তাকে আমল করতে দেন?

তিনি বললেন, “মৃত্যুর পূর্বে তিনি তাকে নেক আমলের তাওফিক দিয়ে দেন।” [সুনান তিরমিজি (ইফা), অধ্যায়: ৩৫/ তকদির, পরিচ্ছেদ: আল্লাহ তাআলা জান্নাতিদের জন্য এবং জাহান্নামিদের জন্য একটি কিতাব (রেজিস্টার) লিখে রেখেছেন। সহিহ]

◆ সহিহ বুখারির ভাষ্যকার ইবনে হাজার রহ. আসকালানি বলেন,

ومن ثم شرع الدعاء بالثبات على الدين وبحسن الخاتمة

“এখান থেকেই দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা এবং হুসনুল খাতিমা বা কল্যাণের উপর মৃত্যুর জন্য দুআ করা শরিয়ত সম্মত হওয়ার বিষয়টি সাব্যস্ত হয়েছে।” [ফাতহুল বারি ১১/৪৯৯]

◆ মাজমাউল আনহার গ্রন্থের লেখক বলেন,

وأعظم الحاجات سؤال حسن الخاتمة وطلب المغفرة

“সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন হল, কল্যাণের উপর মৃত্যু এবং ক্ষমার জন্য দুআ করা।”

❑ মানুষ যে অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে কেয়ামত দিন তাকে সে অবস্থায় উত্থিত করা হবে:

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, মানুষ যে অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে কেয়ামতের দিন তাকে সে অবস্থায় উঠানো হবে। অর্থাৎ কেউ যদি পাপ-পঙ্কিলতা ও আল্লাহর নাফরমানিতে ডুবে থাকা অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে তাহলে কেয়ামতের দিন তাকে এই অবস্থাতেই উঠানো হবে আর কেউ যদি আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি ও সৎকর্মে লিপ্ত থাকা অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে তাহলে পরকালে এই অবস্থাতেই তাকে উঠানো হবে।
আর এ কথায় কোন সন্দেহ নেই যে, কেয়ামতের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহর ইবাদতরত অবস্থায় আল্লাহর দরবারে দণ্ডায়মান হওয়ার মত মর্যাদা ও সৌভাগ্যের বিষয় আর কিছু হতে পারে না।

জাবির রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

يُبعَثُ كلُّ عبدٍ على ما مات عليه المُؤمِنُ على إيمانِه والمُنافِقُ على نِفاقِه

“প্রত্যেক বান্দাকে ঐ অবস্থায় কিয়ামতের দিন উঠানো হবে যে অবস্থার উপর সে মৃত্যু বরণ করেছে। মুমিনকে উঠানো হবে ঈমানের উপর এবং মুনাফিককে উঠানো হবে নিফাকির উপর।” [সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৭৩১৩]

ইমাম নওয়াবি রহ. উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, উক্ত হাদিসে আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মর্মে খবর দিচ্ছেন যে, প্রত্যেক বান্দাকে চাই সে পুরুষ হোক অথবা নারী হোক কিয়ামতের দিন ঐ অবস্থায় উত্তোলন করা হবে যে অবস্থায় উপর সে মৃত্যু বরণ করেছিল। সে যদি ভালো কাজ ও কল্যণের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে তাহলে কল্যাণের উপরই তাকে উঠানো হবে। আর অকল্যাণ ও খারাপিতে লিপ্ত থাকা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে সে অবস্থায় উঠানো হবে। এই কল্যাণ ও অকল্যাণের যত অর্থ ও রূপ আছে সবই এখানে প্রযোজ্য।
সুতরাং প্রতিটি মানুষের এই আগ্রহ থাকা উচিৎ, যেন ভালো অবস্থায় (সৎকর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা অবস্থায়) তার মৃত্যু হয়। উক্ত হাদিসে এ মর্মে বান্দাকে উৎসাহিত করা হয়েছে যে, সে যেন সদা সর্বদাই কল্যাণ ও আমলে সালেহ বা সৎকর্মে লিপ্ত থাকে। কেননা, কেউ জানে না, সে কখন মৃত্যু বরণ করবে।”

হে আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে হুসনুল খাতিমা তথা কল্যাণময় মৃত্যু দান করুন এবং এমন অবস্থার উপর মৃত্যু দান করুন, যে অবস্থায় মৃত্যু হলে তোমার সন্তুষ্টি অর্জন করে চির সুখের নীড় জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। নিশ্চয় তুমি দুআ কবুল কারী। আমিন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

মহিলাদের মাথার চুল কাটার বিধান

 প্রশ্ন: মহিলাদের মাথার চুল কাটার বিধান সম্পর্কে জানতে চাই।

উত্তর: আমাদের সমাজে নারীদের চুল কাটা নিয়ে বিভিন্ন ভুল ধারণার প্রচলন রয়েছে। কারো ধারণা, নারীরা একেবারেই চুল কাটতে পারবে না। কেউ মনে করে, চার আঙ্গুলের বেশি কাটা যাবে না। কেউ বলে, মাথার সামনের দিক থেকে কাটা বা ছোট করা যাবে না, খুব বেশি দরকার হলে, কেবল পেছন দিক থেকে সামান্য কাটা যাবে। আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে, বিশেষ সময় ছাড়া নারীদের জন্য চুল কাটা নিষিদ্ধ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইসলামি শরিয়তে এসব কথার কোনও ভিত্তি নেই। নিম্নে হাদিস এবং আলেমদের ফতোয়ার আলোকে মহিলাদের চুল কাটার বিধান অতি সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো:

নিম্নোক্ত অবস্থায় মহিলাদের মাথার চুল কাটা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। যথা:

◈ যদি কাফের-ফাসেক নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা উদ্দেশ্য হয়।
◈ যদি এমন স্টাইলে চুল কাটা হয় যা অবিকল পুরুষদের মত বুঝা যায়।
◈ যদি পর পুরুষের মাধ্যমে চুল কাটা হয় (যেমনটি বর্তমান যুগে কিছু কিছু সেলুনে ঘটে থাকে।)
◈ যদি বিবাহিত নারীর স্বামীর অনুমতি ছাড়া হয় তাহলে তা হারাম। হারাম হওয়ার কারণও স্পষ্ট। কিন্তু যদি স্বামীর সামনে নিজের চুলের সৌন্দর্য অবলম্বন করা উদ্দেশ্য হয় বা লম্বা চুলের কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে হয় বা এ জাতীয় গ্রহণযোগ্য উদ্দেশ্যে হয় তাহলে সঠিক মতানুযায়ী চুল ছোট করা জায়েজ আছে।

এ মর্মে হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে,

كَانَ أَزْوَاجُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْخُذْنَ مِنْ رُءُوسِهِنَّ حَتَّى تَكُونَ كَالْوَفْرَةِ

“রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রীগণ এমনভাবে তাদের মাথার চুল কাটতেন যে, তা কাঁধ থেকে একটু নিচে যেত বা কান বরাবর হত।” [সহীহ মুসলিম, হা/৩২০]

❂ ইমাম নওয়াবি রহ. উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,

فيه دليل على جواز تخفيف الشعور للنساء

“এতে প্রমাণিত হয় যে, নারীদের চুল কেটে হালকা করা জায়েজ।” [শরহে মুসলিম, ৫/৪]

❂ আল্লামা উসাইমিন রাহ. বলেন, এই মূহুর্তে আমার এমন কোন দলিল জানা নাই যা দ্বারা নারীদের চুল কাটা হারাম প্রমাণিত হয়। হারাম বলার মত দুর্বল; এর কোন যৌক্তিকতা নেই। মকরুহ বলার মতটিও প্রশ্নবিদ্ধ। আর বৈধ হওয়ার মতটিই দলিল এবং মূলনীতির কাছাকাছি। যেহেতু রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালের পর তার এর স্ত্রীদের চুল কাটার হাদিস সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। (শাইখের বক্তব্যের সার সংক্ষেপ)

❂ সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. কে প্রশ্ন করা হয়, সামনের দিক থেকে চুল কাটা কি হারাম যদি তা শুধুমাত্র সৌন্দর্যের জন্য হয়?

তিনি উত্তরে বলেন,

لا حرج في ذلك، الحمد لله، المهم صيانة ذلك عن الأجنبي، فإذا كان عندما يظهر الزوج والنساء والمحارم، فلا حرج في ذلك

“এতে কোনও সমস্যা নেই, আলহামদুলিল্লাহ। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পুরুষদের থেকে তা গোপন রাখা। যদি এটি কেবল স্বামী, মহিলা এবং মাহরাম পুরুষদের (যেসব পুরুষদের সামনে স্থায়ীভাবে বিবাহ হারাম, যেমন: পিতা, সন্তান, দাদা, চাচা মামা ইত্যাদি) সামনে প্রকাশিত হয় তাহলে এতে কোনও অসুবিধা নেই।”

❂ হানাফি মাজহাবের বিখ্যাত দুটি ফতোয়ার কিতাবে বলা হয়েছে, “পুরুষদের সঙ্গে, বিধর্মী বা ফাসেকদের সঙ্গে সাদৃশ্য না হলে সৌন্দর্য বাড়াতে নারীদের জন্য তুলনামূলক চুল ছোট করা জায়েজ আছে।” [ফাতাওয়া শামি ৯/৫৮৩, ফাতাওয়া আলমগিরি, ৫/৩৫৮]

মোটকথা, একজন নারী যদি মাথার চুল ছোট করার প্রয়োজন মনে করে তাহলে উপরোক্ত শর্তসাপেক্ষে তা কাটতে বা ছাটতে কোনও সমস্যা নেই। তবে উদ্দেশ্যে যেন হয়, কেবল সৌন্দর্য বর্ধন বা লম্বা চুলের কষ্ট লাঘব। কোনও কাফের-ফাসেক নায়িক বা তথাকথিত মডেলের সাদৃশ্য অবলম্বন করা উদ্দেশ্য নয়। আর এতটা ছোট যেন না করে যাতে পুরুষদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে যায়।

উল্লেখ্য যে, মাথার বিশেষ কোনও সমস্যায় মাথার চুল মুণ্ডন করা অপরিহার্য না হলে মহিলাদের মাথার চুল মুণ্ডন করা হারাম।
আল্লাহু আলাম (আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন)।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

আমেরিকার লস এঞ্জেলসের ভয়াবহ দাবানল বা অগ্নিকাণ্ডে মুসলিমদের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত

 প্রশ্ন: আমেরিকার লস এঞ্জেলসের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মুসলিমদের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত? যেখানে আমাদের মসজিদও পুড়ে গিয়েছে। আমাদের অনেক দ্বীনী ভাই এই আগুন লাগাকে আল্লাহর আজাব বা অভিশাপ বলে প্রচার করছেন। এ ক্ষেতে আমাদের স্ট্যান্ড কী হওয়া উচিত?

উত্তর: আলিমগণ বলেছেন, কাফেরদের উপরে বিপদ-বিপর্যয়, ভূমিকম্প, দাবানল, মহামারী ইত্যাদি আপতিত হলে নিঃসন্দেহে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে আজাব (শাস্তি) এবং অন্যান্যদের জন্য সতর্কীকরণ। আর মুমিনদের ওপরে আপতিত বা এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। যারা এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে অর্থাৎ যারা তকদিরের লিখনে সন্তুষ্ট থেকে দ্বীনের উপর অবিচল থাকবে, বিপদে ধৈর্য ধারণ করবে, অস্থিরতা প্রকাশ করবে না ও হাহুতাশ করবে না এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে না আল্লাহ তাদের গুনাহ মোচন করেন, আখিরাতে মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং তাদেরকে দান করবেন অবারিত প্রতিদান।

❂ মহান আল্লাহ বলেন,

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنْ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنْ الْأَمْوَالِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرْ الصَّابِرِينَ

“আর অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ, জীবন এবং ফল-ফসলেরে ক্ষতি সাধনের দ্বারা। আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।”
[সূরা আল-বাকারা: ১৫৫]

❂ আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,

إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ

“নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের প্রতিদান তাদের পরিপূর্ণভাবে দেয়া হবে হিসাব ছাড়াই।” [সূরা যুমার: ১০]

❂ মুসলিম শরিফের হাদিসে বলা হয়েছে:

عَجَبًا لأَمْرِ الْمُؤْمِنِ، إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ، وَلَيْسَ ذَاكَ لأَحَدٍ إِلاَّ لِلْمُؤْمِنِ: إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ، وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ

“মুমিনের অবস্থা আশ্চর্যজনক! তার সমস্ত বিষয়ই কল্যাণময়। আর এটি মুমিন ব্যতীত কারো জন্য হয় না। যদি তার কাছে সুখের কিছু পৌঁছায়, সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, আর সেটি তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি তাকে দুঃখ স্পর্শ করে, সে ধৈর্য ধারণ করে, আর সেটিও তার জন্য কল্যাণকর হয়।” [সহিহ মুসলিম]

❂ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন:

الأنبياءُ ثم الأمثلُ فالأمثلُ يُبتَلى الناسُ على قدرِ دِينِهم فمن ثَخنَ دِينُه اشتدَّ بلاؤه ومن ضعُف دِينُه ضعُفَ بلاؤه وإنَّ الرجلَ لَيصيبُه البلاءُ حتى يمشيَ في الناسِ ما عليه خطيئةٌ
“মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার সম্মুখীন হন, নবীগণ। তারপর তাদের পর যারা উত্তম, তারপর তাদের পর যারা উত্তম। একনাগাড়ে বান্দার উপর বিপদ আপতিত হতে থাকে, যতক্ষণ না তা তাকে এমন অবস্থায় পৌঁছে দেয় যে, সে পৃথিবীতে পাপমুক্ত হয়ে চলতে থাকে।” [সহিহ তারগিব, ৩৪০২]

❂ আহমদ তার মুসনদে আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
ما يزالُ البلاءُ بالمؤمنِ والمؤمنةِ في نفسِه وولدِه ومالِه حتَّى يلقَى اللهَ تعالَى وما عليه خطيئةٌ
“মুমিন পুরুষ বা মুমিন নারীর জীবন, সন্তান বা সম্পত্তিতে বিপদ আপতিত হতে থাকে, যতক্ষণ না সে আল্লাহর সঙ্গে পাপমুক্ত অবস্থায় সাক্ষাৎ করে।” [আত তারগিব ২/২২৬-সহিহ বা হাসান]

পক্ষান্তরে আল্লাহ দ্রোহী জালিম গোষ্ঠী ধ্বংস হলে তাদের জুলুম, অন্যায়-অবিচার, পাপাচার এবং অনিষ্ট থেকে মানুষ-জীবজন্তু-পশুপাখি সবাই নিষ্কৃতি লাভ করে। আল্লাহর জমিন থেকে পাপ পঙ্কিলতা হ্রাস পায়। জালিমদের ধ্বংসের ফলে মজলুমের মনে প্রশান্তি আসে। এই কারণে আমরা আল্লাহর জমিনে পাপ পঙ্কিলতা ও নোংরামি বিস্তৃত কারী জালিমদের ধ্বংসে আনন্দ অনুভব করব।

এ বিষয়ে বিখ্যাত ফতোয়ার ওয়েব সাইট ইসলাম ওয়েব (islamweb) এ লেখা হয়েছে:

فإذا فرح المسلم بما يصيب الظلمة والكفرة من المصائب؛ لكون ذلك يقلل من فسادهم وشرهم، أو يكف شيئا من بأسهم، أو يكون عبرة وذكرى لهم ولغيرهم، أو غير ذلك مما يوافق مراد الشرع، ولا يخالف الفطرة، ففرحه هذا محمود، وقد مر على رسول الله صلى الله عليه وسلم بجنازة، فقال: مستريح ومستراح منه، قالوا: يا رسول الله، ما المستريح والمستراح منه؟ قال: العبد المؤمن يستريح من نصب الدنيا وأذاها إلى رحمة الله، والعبد الفاجر يستريح منه العباد والبلاد والشجر والدواب. رواه البخاري ومسلم.

“যদি কোনও মুসলমান অত্যাচারী ও অবিশ্বাসীদের বিপদ বা দুঃখে আনন্দিত হয় এই কারণে যে, তা তাদের অন্যায়-অপকর্ম ও মন্দ কার্যক্রম কমিয়ে দেয় অথবা তাদের কোনও ক্ষতি থেকে বিরত রাখে অথবা তাদের ও অন্যদের জন্য শিক্ষার উপাদান হয়, কিংবা এমন কিছু হয় যা শরিয়তের উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং ফিতরতের বিপরীত না হয় তাহলে এই আনন্দ প্রশংসনীয়।
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একবার একটি জানাজার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি বললেন: “কেউ শান্তি পেয়েছে এবং কারো কাছ থেকে শান্তি পাওয়া হয়েছে।” সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আল্লাহর রসুল, কে শান্তি পেয়েছে এবং কার কাছ থেকে শান্তি পাওয়া হয়েছে?” তিনি বললেন: “মুমিন বান্দা দুনিয়ার ক্লান্তি ও কষ্ট থেকে আল্লাহর রহমতের দিকে শান্তি পায়, আর পাপী বান্দা থেকে মানুষ, দেশ, গাছপালা এবং জীবজন্তু শান্তি পায়।” [এটি বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে]”

❑ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যের মুমিনদের অবস্থান কী হওয়া উচিত?

◈ ১. মুমিনগণ এসব প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে গ্রহণ করবে। তারা বিশ্বাস করে আল্লাহর শক্তি অসীম। তিনি অপরাজেয় শক্তির অধিকারী। তার শক্তিমত্তা ও পরাক্রমের সামনে সৃষ্টি জগত অত্যন্ত তুচ্ছ। ফলে সে আরও বেশি আল্লাহর প্রতি অভূমিখী হবে এবং তার আনুগত্যের সামনে নিজেকে সমর্পণ করবে।
◈ ২. পাশাপাশি সে আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করবে। অর্থাৎ যখন মানুষ শান্তি ও নিরাপদে থাকে তখন সে আল্লাহর কত বড় নিয়ামতে ডুবে থাকে সে কথা স্মরণ করে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায় করবে এবং যে সময় সে আল্লাহর ব্যাপারে গাফেল থাকে বা তাকে ভুলে থাকে সে জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে।
◈ ৩. এসব ভূমিকম্প, দাবানল ইত্যাদি বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখে সে কিয়ামতের ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা স্মরণ করবে।
◈ ৪. সে আরও বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর এসব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাধ্যমে বান্দাকে ভীতি প্রদর্শন করেন যেন, তারা তাদের পাপাচার থেকে তওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসে। আল্লাহ বলেন,

وَمَا نُرْسِلُ بِالْآيَاتِ إِلَّا تَخْوِيفًا

“আর আমরা নিদর্শনসমূহ প্রেরণ করি কেবল ভয় প্রদর্শনের জন্য।”
[সূরা ইসরা: ৫৯]

কাতাদা রহ. বলেছেন,

“إِنَّ اللَّهَ يُخَوِّفُ النَّاسَ بِمَا شَاءَ مِنْ آيَاتِه لَعَلَّهُمْ يَعْتَبِرُونَ، أَوْ يَذَّكَّرُونَ، أَوْ يَرْجِعُونَ”

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহের মাধ্যমে মানুষকে যেভাবে ইচ্ছা ভয় প্রদর্শন করেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে, স্মরণ করে বা ফিরে আসে।”

❑ জালিম সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহর নিকট বদদুআ করা:

– নুহ আলাইহিস সালাম সীমা লঙ্ঘনকারী জালিমদের ধ্বংসের জন্য দোয়া করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

{ وَقَالَ نُوحٞ رَّبِّ لَا تَذَرۡ عَلَى ٱلۡأَرۡضِ مِنَ ٱلۡكَٰفِرِينَ دَيَّارًا }
{ إِنَّكَ إِن تَذَرۡهُمۡ يُضِلُّواْ عِبَادَكَ وَلَا يَلِدُوٓاْ إِلَّا فَاجِرٗا كَفَّارٗا }
“নুহ আরও বলেছিলেন, ‘হে আমার রব! জমিনের কাফিরদের মধ্য থেকে কোনও গৃহবাসীকে ছেড়ে দিবেন না ।আপনি তাদেরকে ছেড়ে দিলে তারা আপনার বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করবে এবং জন্ম দিতে থাকবে শুধু দুষ্কৃতিকারী-কাফির।” [সূরা নূহ: ২৬ ও ২৭]
– মুসা আলাইহিস সালাম ফেরান এবং তার অনুসারীদের জন্য বদ দোয়া করেছিলেন। আল্লাহ বলেন,

{ وَقَالَ مُوسَىٰ رَبَّنَآ إِنَّكَ ءَاتَيۡتَ فِرۡعَوۡنَ وَمَلَأَهُۥ زِينَةٗ وَأَمۡوَٰلٗا فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا رَبَّنَا لِيُضِلُّواْ عَن سَبِيلِكَۖ رَبَّنَا ٱطۡمِسۡ عَلَىٰٓ أَمۡوَٰلِهِمۡ وَٱشۡدُدۡ عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ فَلَا يُؤۡمِنُواْ حَتَّىٰ يَرَوُاْ ٱلۡعَذَابَ ٱلۡأَلِيمَ }

“মুসা বললেন, ‘হে আমাদের রব! আপনি তো ফিরাউন ও তার পরিষদবর্গকে দুনিয়ার জীবনে শোভা ও সম্পদ দান করেছেন। যা দ্বারা তারা মানুষকে আপনার পথ থেকে ভ্রষ্ট করে। হে আমাদের রব।
হে প্রভু-পরওয়ারদিগার! তাদের সম্পদ নষ্ট করে দিন আর তাদের অন্তর শক্ত করে দিন। ফলে তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত ঈমান আনবে না।”[ সুরা ইউনুস: ৮৮]

– নবী করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম নিজেও যে সকল মুশরিকরা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল তাদের বিরুদ্ধে বদ দোয়া করেছেন ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর সমকালীন দুর্ভিক্ষের মতো দুর্ভিক্ষ দেওয়ার জন্য। এবং বাস্তবেও তা ঘটেছিল। [সহিহ বুখারী]

❑ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পড়ে যেসব ইমানদার-সৎকর্মশীল মৃত্যু বরণ করে তাদের পরিণতি কী?

এ কথা সত্য যে, পৃথিবীতে যখন বিপদ-বিপর্যয় ও বলা-মসিবত নেমে আসে তখন কাফের-মুশরিকদের পাশাপাশি ইমানদার ও অপরাধ ভালো মানুষ, শিশু বাচ্চা ইত্যাদি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটাই পৃথিবীতে আল্লাহর নিয়ম।

এক্ষেত্রে কথা হলো, বিপদাপদ ও দুর্যোগে যেসব সৎকর্ম শীল ও ভালো মানুষ মৃত্যু বরণ করবে এবং যারা শাস্তির হকদার ছিল না তারপরও শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন তাঁর জ্ঞানের আলোকে তাদের নিয়ত অনুযায়ী তাদের সাথে আচরণ করবেন। অর্থাৎ ইমানদার সৎকর্ম শীলদেরকে তিনি আখিরাতে তাদেরকে উত্তম বিনিময়ে ভূষিত করবেন। কিন্তু যারা কাফের-মুশরিক ও আল্লাহ দ্রোহী তারা দুনিয়াতে যেমন ধ্বংসে সম্মুখীন হয়েছিলো তারা আখিরাতেও ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। অর্থাৎ তাদেরকে তিনি আখিরাতের জাহান্নামের ভয়াবহ আগুনে নিক্ষেপ করবেন।
আল্লাহু আলম। আল্লাহ আমাদেরকে সবধরনের বিপদাপদ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

মোহর ও কাবিন এর পরিচয় ও গুরুত্ব এবং উভয়ের মধ্যে পার্থক্য

 প্রশ্ন: কাবিন এবং মোহর কি এক নাকি এ দুটির মধ্যে পার্থক্য আছে? ইসলামের দৃষ্টিতে মোহরের গুরুত্ব কতটুকু?

উত্তর: নিম্নে মোহর ও কাবিনের পরিচয়, পার্থক্য এবং ইসলামে মোহরের গুরুত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:

মোহর এবং কাবিন সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। নিম্নে এ দুটি জিনিসের পরিচয় ও পার্থক্য প্রদান করা হল:

◈ মোহর কী?

মুসলিম আইন অনুযায়ী মোহর হলো, বিয়ের অন্যতম শর্ত। এই শর্ত অনুযায়ী স্ত্রী স্বামীর নিকট থেকে বিয়ের সময় কিছু অর্থ বা সম্পত্তি পায় বা পাওয়ার অধিকার লাভ করে।
মোহর বিয়ের সময়ই ধার্য বা ঠিক করা হয়। এটি স্ত্রীর একটি বিশেষ অধিকার।

মোহর সম্পর্কে ইসলামি ফিকহ বিশ্বকোষে উল্লেখ করা হয়েছে:

المهر كما في الموسوعة الفقهية: هو المال الذي تستحقه الزوجة على زوجها بالعقد عليها أو بالدخول بها . وهو حق واجب للمرأة على الرجل عطية من الله تعالى مبتدأة، أو هدية أوجبها على الرجل بقوله تعالى: وَآَتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً {النساء: 4} إظهارا لخطر هذا العقد ومكانته، وإعزازا للمرأة وإكراما لها

“এটি সেই সম্পদ, যা স্ত্রীর জন্য স্বামী কর্তৃক প্রাপ্য হয়, বিয়ের চুক্তির ফলে বা তার সাথে সহবাসের মাধ্যমে। এটি এমন একটি অধিকার, যা আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে নারীর জন্য নির্ধারিত হয়েছে এবং পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন: “তোমরা নারীদের তাদের মোহর যথাযথভাবে প্রদান করো।” [সূরা নিসা: ৪] এই বিধান বিয়ের চুক্তির গুরুত্ব এবং তার মর্যাদা প্রকাশের জন্য, নারীর সম্মান বৃদ্ধি এবং তাকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার জন্য নির্ধারিত।”

◈ মোহর পরিশোধের গুরুত্ব:

স্বামীর জন্য তার স্ত্রীকে নির্ধারিত মোহর পরিশোধ করা ফরজ। এটা ঋণের মত। কোনও স্বামী যদি জীবদ্দশায় মোহর পরিশোধ না করে থাকে তাহলে তার মৃত্যুর পর তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে প্রথমে মোহর পরিশোধ করতে হবে। তারপর বাকি সম্পদ তার ওয়ারিশদের মধ্যে বণ্টিত হবে। তবে বিয়ের পর স্ত্রী যদি নির্ধারিত মোহর থেকে কিছু ছাড়া দেয় বা মাফ করে দেয় সেটাও তার অধিকার। এতে স্বামীকে তার পক্ষ থেকে সহায়তা করা হয়।
এটাকে দেনমোহর বা মোহরানাও বলা হয়। আরবি ভাষায় এর আরেক নাম ‘সিদাক’ (الصداق)।

❂ আল্লাহ কুরআনে বলেন,

وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا
“আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশী মনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।” [সূরা নিসা: ৪]

ইবনে আব্বাস রা. বলেন, نِحْلَةً শব্দের অর্থ: المهر মোহর।

– ইবনে কাসির রাহ. বলেন,

أن الرجل يجب عليه دفع الصداق إلى المرأة حتما وأن يكون طيّب النفس

“একজন পুরুষের জন্য তার স্ত্রীকে মোহরানা প্রদান করা ওয়াজিব এবং তা উদার মন ও সৎ ইচ্ছার সঙ্গে হওয়া কর্তব্য।”

– তাফসিরে কুরতুবিতে বলা হয়েছে,

هذه الآية تدل على وجوب الصداق للمرأة ، وهو مجمع عليه ولا خلاف فيه

“এই আয়াতে প্রমাণিত হয় যে, স্ত্রীকে মোহর দেওয়া ওয়াজিব। এটি সর্বসম্মত অভিমত। এতে কোনও দ্বিমত নেই।”

❂ আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,

وَإِنْ أَرَدتُّمُ اسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَّكَانَ زَوْجٍ وَآتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنطَارًا فَلَا تَأْخُذُوا مِنْهُ شَيْئًا ۚ أَتَأْخُذُونَهُ بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُّبِينًا
وَكَيْفَ تَأْخُذُونَهُ وَقَدْ أَفْضَىٰ بَعْضُكُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ وَأَخَذْنَ مِنكُم مِّيثَاقًا غَلِيظًا

“যদি তোমরা (তালাকের মাধ্যমে) এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী পরিবর্তন করতে ইচ্ছা কর এবং তাদের একজনকে (মোহর হিসেবে) প্রচুর ধন-সম্পদ প্রদান করে থাক, তবে তা থেকে কিছুই ফেরত গ্রহণ করো না। তোমরা কি তা অন্যায়ভাবে ও প্রকাশ্য গোনাহের মাধ্যমে গ্রহণ করবে?
তোমরা কিরূপে তা গ্রহণ করতে পার, অথচ তোমাদের একজন অন্য জনের সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে গমন করেছ এবং নারীরা তোমাদের কাছে থেকে সুদৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে।” [সূরা নিসা: ২০ ও ২১]

❂ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (আব্দুর রহমান রা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি বিবাহ করেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সে কে? তিনি বললেন, জনৈকা আনসারি মহিলা। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কী পরিমাণ মোহর দিয়েছ?
আব্দুর রহমান রা. বললেন, “খেজুরের এক আঁটি পরিমাণ স্বর্ণ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, একটি ছাগল দিয়ে হলেও ওলিমা (বৌভাত এর ব্যবস্থা কর।” [সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),অধ্যায়: ৩৪/ ক্রয়-বিক্রয়, পরিচ্ছেদ: ৩৪/১. আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে]
এছাড়াও মোহর বিষয়ে বহু হাদিস বিদ্যমান রয়েছে।

◈ কাবিন কী?

কাবিন বলতে বিয়ে সম্পাদনের লিখিত চুক্তি বোঝায়। একে কাবিননামা বা নিকানামা বলেও উল্লেখ করা হয়। বিয়ে সম্পাদনের জন্য বা বিয়ে বৈধ হওয়ার জন্য ‘কাবিননামা’ অপরিহার্য নয়। কাবিননামা একটি আইনি বাধ্যবাধকতা। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, সরকার কর্তৃক মনোনীত কাজি সরকার নির্ধারিত ছকে কাবিননামা সম্পাদন করে থাকেন। স্ত্রীর প্রাপ্য দেনমোহর আদায়, স্ত্রীর ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার নির্ণয়, সন্তানের পিতৃত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে যথাযথভাবে নিবন্ধিত কাবিননামা একটি আইনি দলিল। [সূত্র: বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় ই-তথ্যকোষ]

উল্লেখ যে, আমাদের সমাজে অনেক সময় মোহর শব্দের পরিবর্তে ‘কাবিনের টাকা’ বলা হয়। সুতরাং ‘কাবিনের টাকা’ দ্বারা মোহরই উদ্দেশ্য। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

মজি বা কামরস কি পাক নাকি নাপাক

 প্রশ্ন: মজি বা কামরস কি পাক নাকি নাপাক? এক শাইখ বলেছেন, যে মজি নাপাক নয়। তবে এতে ওজু ভেঙ্গে যাবে। এ কথা কি সঠিক?

উত্তর: “মজি বা কামরস পাক নয়” এ কথা সঠিক নয়। কিন্তু এতে ওজু ভেঙ্গে যায়, এ কথা সঠিক। নিম্নে মজি বা কামরস পাক নাকি নাপাক এবং তা শরীরে বা কাপড়ে লাগলে তা পবিত্র করার পদ্ধতি সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ আলোচনা পেশ করা হলো:

মজি (পাতলা কামরস যা স্ত্রী শৃঙ্গার বা যৌন চিন্তার সময় বীর্যপাতের পূর্বে বের হয়)-এর ব্যাপার সঠিক কথা হলো, তা নাপাক। এটাই সবচেয়ে সঠিক কথা। অনেক আলেম এ ব্যাপারে ইজমা তথা সর্বসম্মত মত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কেউ তা পাক বললে তা নিতান্ত শায বা বিচ্ছিন্ন মত।

◈ শাওকানি রাহ. বলেন,

اتفق العلماء على أن المذي نجس، ولم يخالف في ذلك إلا بعض الإمامية

“আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, মজি নাপাক। এ ব্যাপারে কিছু ইমামিয়া (শিয়া) ছাড়া কেউ দ্বিমত করেনি।” [নাইলুল আওতার, ১/৭৩]

◈ নওয়াবি রাহ. বলেন,

“أجمعت الأمة على نجاسة المذي

“এ ব্যাপারে উম্মত একমত যে, মজি নাপাক।” [আল মাজমু, ২/৫৭১]

❑ এ ব্যাপারে দলিল উল্লেখ পূর্বক সে বিষয়ে পর্যালোচনা পেশ করা হলো:

◆ ১ম দলিল:

আলি রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বেশি বেশি মজি বের হত। আমি এ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জিজ্ঞেস করতে লজ্জাবোধ করতাম। কারণ তার কন্যা (ফাতিমা রা.) ছিল আমার স্ত্রী। তাই আমি মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ রা. কে (এ সম্পর্কে জানতে) বললাম। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন তিনি বললেন,

يَغْسِلُ ذَكَرَهُ ويَتَوَضَّأُ

“এতে তার পুরুষাঙ্গ ধুয়ে ফেলবে এবং ওজু করে নিবে।” [সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), অধ্যায়: ৩। হায়েজ বা ঋতুস্রাব, পরিচ্ছেদ: ৪. মজির বিবরণ]

অন্য বর্ণনায় এসেছে,

عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : ” كُنْتُ رَجُلًا مَذَّاءً فَجَعَلْتُ أَغْتَسِلُ حَتَّى تَشَقَّقَ ظَهْرِي فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْ ذُكِرَ لَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( لَا تَفْعَلْ ، إِذَا رَأَيْتَ الْمَذْيَ فَاغْسِلْ ذَكَرَكَ وَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ لِلصَّلَاةِ

আলি রা. বলেন, আমি এমন একজন ব্যক্তি ছিলাম, যার থেকে অধিক পরিমাণে মজি বের হতো। এতে আমি বারবার গোসল করতাম। ফলে আমার পিঠ ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়।

এরপর আমি এ বিষয়টি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উল্লেখ করলাম বা এ বিষয়টি তাঁর কাছে উল্লেখ করা হলো। তখন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “এ কাজ করো না। যখন মজি দেখতে পাবে, তখন তোমার পুরুষাঙ্গ ধুয়ে নাও এবং নামাজের জন্য যেমন ওজু করা হয়, তেমনি ওজু করে নাও।” [আবু দাউদ ২০৬-সহিহ]

এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, মজি নাপাক। ফলে পুরুষাঙ্গ ধুয়ে ফেলা ওয়াজিব। এতে ওজু নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু গোসল করা ফরজ হয় না।

◆ ২য় দলিল:

সাহল ইবনে হুনাইফ রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, মজি (পাতলা কামরস) বের হওয়ার কারণে আমি কঠিন অবস্থার মধ্যে ছিলাম। কেননা এ কারণে আমাকে প্রায়ই গোসল করতে হত। আমি ব্যাপারটা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বর্ণনা করলাম এবং তার বিধান জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, “এটা বের হলে তোমার জন্য ওজুই যথেষ্ট।” আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল, তা যদি আমার কাপড়ে লেগে যায় তবে কী করব?
তিনি বললেন, “এক অঞ্জলি পানি তোমার কাপড়ের যে অংশে মজি দেখতে পাও সেখানে ছিটিয়ে দাও। এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট।” [ইবনে মাজাহ, হা৫০৬-হাসান]

উপরোক্ত হাদিস দ্বয় দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মজি অবশ্যই নাপাক। অন্যথায় মজি নির্গত হলে লজ্জা স্থান এবং কাপড়ের যে স্থানে তা লেগেছে তার উপর পানি ছিটানোর কথা বলা হতো না।

শাওকানি তার “নাইলুল আওতার” (১/৭৩) গ্রন্থে বলেছেন:

اتفق العلماء على أن المذي نجس، ولم يخالف في ذلك إلا بعض الإمامية ، محتجين بأن النضح لا يزيله ، ولو كان نجسا لوجبت الإزالة ؟
ويلزمهم القول بطهارة العذرة ؛ لأن النبي – صلى الله عليه وسلم – أمر بمسح النعل منها بالأرض ، والصلاة فيها، والمسح لا يزيلها ؛ وهو باطل بالاتفاق .
وقد اختلف أهل العلم في المذي إذا أصاب الثوب فقال الشافعي وإسحاق وغيرهما: لا يجزيه إلا الغسل أخذا برواية الغسل ، على أن رواية الغسل إنما هي في الفرج ، لا في الثوب الذي هو محل النزاع ؛ فإنه لم يعارض رواية النضح المذكورة في الباب معارض، فالاكتفاء به صحيح مجز”

“আলেমগণ ঐক্যমত্যে পৌঁছেছেন যে, মজি (যৌন উত্তেজনার সময় লজ্জা স্থান থেকে নির্গত তরল পদার্থ) অপবিত্র। এই বিষয়ে শুধুমাত্র কিছু ইমামিয়া (শিয়া) ভিন্ন মত পোষণ করেছে। তাদের যুক্তি হল, মজি পরিষ্কার করতে শুধু ছিটানো (النضح) যথেষ্ট। কিন্তু যদি এটি অপবিত্র হতো তবে সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার করা আবশ্যক হতো।
তাদের এই যুক্তির ভিত্তিতে মল মূত্রও পবিত্র হতে হবে। কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মল-মূত্র দূর করতে জুতা মাটিতে ঘষতে বলেছেন এবং সেই জুতা পরেই নামাজ পড়তে অনুমতি দিয়েছেন। অথচ মাটিতে ঘষে সম্পূর্ণরূপে অপবিত্রতা দূর করা সম্ভব নয়। এই যুক্তি সর্বসম্মতভাবে অগ্রহণযোগ্য।

আলেমগণের মধ্যে মজি যদি কাপড়ে লাগে তবে তা পরিষ্কার করার পদ্ধতি নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। ইমাম শাফিয়ি, ইসহাক এবং অন্যান্যদের মতে, শুধু ধৌত করাই যথেষ্ট। কারণ ধৌত করার বর্ণনা এসেছে। তবে এই বর্ণনা যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; কাপড়ে নয়। যেখানে কেবল ছিটানোর (النضح) বর্ণনা রয়েছে এবং এই বর্ণনার কোনও বিরোধিতা নেই। তাই শুধু (النضح) তথা পানি ছিটানোই যথেষ্ট।” (শাওকানির বক্তব্য সমাপ্ত)

❑ মজি কি নাজাসাতে গলীযা (ভারী নাপাকি) নাকি নাজাসাতে খাফীফা (হালকা নাপাকি)? তা পবিত্র করার পদ্ধতি কী?

যেহেতু উপরোক্ত হাদিস সমূহে কাপড়ের যে স্থানে মজি লাগবে সে স্থানে পানি ছিটানো (النضح) এর কথা এসেছে তাই এতে প্রমাণিত হয় যে, এটা পেশাব-পায়খানার মত নাজাসাতে গলীযা বা ভারী নাপাক নয় বরং তা নাজাসাতে খাফীফা বা হালকা নাপাকি।

❂ শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,

المذي نجس، لكنه نجاسة مخففة، فإذا رشه بالماء ونضحه بالماء في ثوبه أو في فخذه كفى

“মজি নাপাক, তবে এটি হালকা ধরনের নাপাক। যদি এটি পানি দিয়ে ধুয়ে দেওয়া হয় বা কাপড় বা উরুতে স্পর্শ করলে পানি ছিটিয়ে দেওয়া হয়, তবে সেটি যথেষ্ট।” [binbaz]

❂ islamqa তে বলা হয়েছে, “মজি হলো, সাদা স্বচ্ছ পিচ্ছিল পানি। যৌন উত্তেজনার সময় এটি বের হয়; যৌন চিন্তার ফলে কিংবা অন্য কোন কারণে। এটি বের হওয়ার সময় সুখানুভূতি হয় না এবং এটি বের হওয়ার পর যৌন নিস্তেজতা আসে না।
এটি নাপাক। এটি শরীরে লাগলে তা ধুয়ে ফেলা ফরজ। কাপড়ে লাগলে কাপড় পবিত্র করার জন্য পানি ছিটিয়ে দেওয়াই যথেষ্ট। কামরস বের হলে ওজু ভেঙ্গে যাবে কিন্তু গোসল ফরজ হয় না।”

যেমনটি দুধ পান করে এমন ছোট ছেলে শিশু পেশাব নাপাক কিন্তু তা হালকা। অর্থাৎ কাপড়ে যে স্থান এমন ছোট ছেলে শিশুর পেশাব লাগে সেখানে পানির ছিটা দিলেই তা পবিত্র হয়ে যাবে। (অধিক বিশুদ্ধ মতানুসারে)।

অবশ্য হানাফি মাজহাবে মজি এবং দুগ্ধপৌষ্য ছেলে শিশুর পেশাবকে নাজাসাতে গালীযা বা ভারী নাপাকি বলা হয়েছে। অর্থাৎ তাদের মতে, এ ক্ষেত্রে পানি ছিটানো যথেষ্ট নয় বরং তা পানি দ্বারা ভালোভাবে ধৌত করতে হবে। কারণ النضح শব্দের দুটি অর্থ রয়েছে। ধৌত করা ও পানির ছিটা দেওয়া। তারা ধৌত করার অর্থ গ্রহণ করেছেন।

যাহোক, জুমহুর বা অধিকাংশ আলেম النضح শব্দটিকে পানির ছিটা অর্থে গ্রহণ করেছেন। সে কারণে তাদের মতে ধৌত করা অবশ্যক নয় বরং পানির ছিটা দিলেই তা পবিত্র হয়ে যাবে। এটাই অধিকাংশ আলেমের অভিমত এবং এটাই অধিক বিশুদ্ধ ইনশাআল্লাহ। তবে সতর্কতার স্বার্থে যদি ধুয়ে ফেলা হয় তাহলেই উত্তম। আল্লাহু আলাম।

▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

বিয়ের পর জানা গেল যে স্বামী আহলে কুরআন

 প্রশ্ন: এক বোন বিয়ের আগে জানতো তার দীনি পরিবারে বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর জানতে পারে যে, তার স্বামী ও শাশুড়ি আহলে কুরআন। বোনটির এখন কী করণীয়?

উত্তর: আহলে কুরআনের অপর নাম হাদিস অস্বীকারকারী। এদের মধ্যে কেউ কেউ সম্পূর্ণ হাদিসকে অস্বীকার করে। আর কেউ কেউ দাবি করে যে, তারা কেবল ওই হাদিসগুলোকে মানে যেগুলো কুরআনের সাথে মিলে। আর বাকিগুলোকে অস্বীকার করে। তাদের মধ্যে আবার কেউ বলে, যে সব হাদিস তাদের যুক্তিতে ধরে সেগুলো মানবে; বাকিগুলো অস্বীকার করবে।

কিন্তু আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের সকল আলেম একমত যে, কেউ যদি বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত একটিও হাদিসকে অস্বীকার করে সে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত মুরতাদ-কাফের বলে গণ্য হবে। কেননা হাদিস মূলত আল্লাহর ওহি। আর যে আল্লাহর ওহিকে অস্বীকার করবে সে কখনো মুসলিম থাকতে পারে না।

যাহোক, হাদিস অস্বীকারকারী গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত কারও সাথে কোন মুসলিমের বিয়ে বৈধ নয়।‌ অসতর্কতার কারণে এমন ব্যক্তির সাথে বিয়ে হয়ে গেলে অনতিবিলম্বে তালাকের মাধ্যমে সংসার ভঙ্গ করা ওয়াজিব। অন্যথায় গুনাগার হতে হবে।
অতএব, আপনার স্বামী যদি হাদিস মানার অপরিহার্যতা অস্বীকার করে (অর্থাৎ নিজ ভ্রান্ত আকিদার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকলে) তাহলে কাল বিলম্ব না করে খোলা তালাকের মাধ্যমে বিবাহ ভঙ্গ করে নিজ পরিবারে ফিরে আসুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনার জন্য উত্তম বিকল্প দান করবেন। আল্লাহর উপরে ভরসা রাখুন এবং তার কাছে দোয়া করুন। আল্লাহ সাহায্যকারী।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মসজিদে জুমার নামাজ আদায়ের বিধান

 সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি ইমাম আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. কে প্রশ্ন করা হয়, এক এলাকায় একটি আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে একটি মসজিদ রয়েছে এবং সেখানে ক্লাস চলাকালীন সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়। তবে ছুটির সময় পড়াশোনা বন্ধ থাকে। এমন মসজিদে কি জুমার নামাজ আদায় করা জায়েজ?

উত্তর:
هذا فيه التفصيل: إذا كان المسجد حوله مساجد أخرى تقام فيها الجمعة لا يجوز أن تقام فيه، بل على الطلبة وغيرهم أن يصلوا الجمعة مع الناس في الجوامع الموجودة، أما إذا كان القرية ما فيها جامع قريب والجوامع عنها بعيدة في القرى الأخرى فلهم أن يقيموها في هذا المسجد إذا كان حول المسجد أناس مقيمون، ولو أنهم ثلاثة فأكثر، إذا كانوا مقيمين مستوطنين فلهم أن يصلوا الجمعة ومن حضر معهم من الناس من طلبة وغيرهم، إلا إذا كان هناك مسجد قريب يسمعون النداء لا يشق عليهم الذهاب إليه وجب عليهم أن يذهبوا إلى المسجد القريب ويكفي،
لكن متى كانت المساجد بعيدة التي تقام فيها الجمعة ويشق عليهم الذهاب إليها ولا يسمعون النداء، يعني النداء بغير المكبرات، النداء العالي عند خلو الأصوات وعدم وجود ما يمنع عن السماع فإنهم في هذه الحالة لهم أن يصلوا الجمعة في مسجدهم، إذا كان المسجد حوله أناس مستوطنون ثلاثة أو أكثر في أصح قولي العلماء، ولا يشترط أن يكونوا أربعين ولا اثني عشر، ليس على هذا دليل، بل متى وجد ثلاثة أو أربعة أو خمسة مستقيمون مستوطنون في البلد فإنهم يصلون الجمعة إذا كان ما حولهم جوامع بعيدة عنهم.
“এ বিষয়টি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। যদি মসজিদের আশেপাশে অন্য মসজিদ থাকে যেখানে জুমার নামাজ হয় তাহলে তাদের সেই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করা জায়েজ নয়। বরং ছাত্র ও অন্যান্যদের উচিত, কাছাকাছি জুমার মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করা। তবে যদি উক্ত এলাকায় কোনও জুমার মসজিদ না থাকে এবং অন্যান্য দূরবর্তী এলাকায় মসজিদ থাকে, তাহলে এই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করা যেতে পারে, যদি মসজিদের আশেপাশে বসবাসরত লোক থাকে এবং যদি তারা তিন বা ততোধিক হয়। যদি তারা স্থানীয় বাসিন্দা এবং স্থায়ীভাবে বসবাসকারী হয় তবে তারা এই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে পারে। তাদের সাথে ছাত্র ও অন্যান্য আগত লোকজনও নামাজ পড়তে পারে। তবে যদি কাছাকাছি কোনও মসজিদ থাকে যেখানে আজান শোনা যায় এবং সেখানে যাওয়া কষ্টকর না হয় তাহলে তাদের সেই মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজ আদায় করা ওয়াজিব।
কিন্তু যদি জুমার মসজিদ দূরে থাকে এবং সেখানে যাওয়া কষ্টসাধ্য হয় বা কোনও প্রতিবন্ধকতা না থাকার পরও আজান শোনা না যায় (অর্থাৎ মাইক্রোফোন ছাড়া সাধারণ আজান) তবে ইসলামি আইনবিদদের সঠিক মতানুসারে তাদের নিজেদের মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করার অনুমতি রয়েছে। এই শর্তে যে, মসজিদের আশেপাশে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী তিনজন বা তার বেশি ব্যক্তি থাকতে হবে। জুমার নামাজের জন্য ৪০ জন বা ১২ জন উপস্থিত থাকার শর্ত নেই। তিন, চার বা পাঁচজন স্থায়ী বাসিন্দা থাকলেও জুমার নামাজ আদায় করা যাবে যদি নিকটবর্তী কোনও জুমার মসজিদ না থাকে।
উপস্থাপক: আল্লাহ আপনাাকে উত্তম প্রতিদান দিন।
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।

Translate