প্রশ্ন: কেউ যদি আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী পার্টিকে সাপোর্ট করে সে কি মুসলিম থাকবে?
উত্তর: কেউ যদি জেনে-বুঝে বিশ্বাস করে যে, ইসলাম কেবল নামাজ, রোজা, হজ-উমরা, দুআ, তাসবিহ, জিকির, গরুর গোশত খাওয়া, খতনা, বিয়ে, তালাক ইত্যাদি ব্যক্তিগত বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ইসলামের সাথে শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, রাষ্ট্র, সংবিধান, বিচার কার্য ইত্যাদির কোনও সম্পর্ক নাই অথবা যদি সে মনে করে, এ সব বিষয়ে ইসলামের বিধান গ্রহণযোগ্য নয় কিংবা বর্তমান যুগে অচল অথবা বিশ্বাস করে যে, এ সব বিষয়ে অন্য কোনও মতবাদ ইসলাম থেকে উন্নত তাহলে সে সর্বসম্মতভাবে কাফির-মুরতাদ (ইসলাম থেকে বিচ্যুত)। চাই সে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বাম দল, সমাজবাদী/কম্যুনিস্ট পার্টি ইত্যাদি যে দলের সাথেই সম্পৃক্ত থাকুক না কেন।
কেননা কেউ যদি কুরআনের কিছু অংশ মানে আর কিছু অংশ অস্বীকার করে সে কাফির বলে গণ্য হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ ۚ فَمَا جَزَاءُ مَن يَفْعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰ أَشَدِّ الْعَذَابِ ۗ وَمَا اللَّـهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
“তবে কি তোমরা কিতাবের (কুরআনের) কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দুর্গতি ছাড়া তাদের আর কোন প্রাপ্য নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেওয়া হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন।” [সূরা বাকারা: ২৫]
আর আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে দাখিল হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেছেন এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।
তিনি বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
“হে ইমানদারগণ, তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” [সূরা বাকারা: ২০৮]
সুতরাং ব্যক্তিগত বা পারিবারিক টুকিটাকি কিছু বিষয়ে ইসলাম মানবেন আর অন্যান্য সব বিষয়ে শয়তানের অনুসরণ করবেন এতে করে ইসলামের গণ্ডীর মধ্যে থাকার সম্ভাবনা নাই। (আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমিন)
– ইসলামই একমাত্র চূড়ান্ত সত্য আল্লাহর মনোনীত দ্বীন (জীবন আদর্শ বা জীবন ব্যবস্থা):
কিন্তু বাস্তবতা হল, বর্তমানে যারা ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি মতবাদে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে বা এগুলোর সাথে সম্পৃক্ত তারা অধিকাংশই তাদের মূল আকিদা-বিশ্বাস এবং আদর্শ সম্পর্কে না জেনেই করে থাকে। হয়ত দলের কোন এক নেতার প্রতি ভালবাসা ও অন্ধভক্তি, বিশেষ স্বার্থ উদ্ধার, অর্থকড়ি বা নেতৃত্বের লোভ-লালসা, ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা অনেক সময় পরিস্থিতির চাপে পড়ে এসব দলকে সমর্থন করে। তাই তো দেখা যায়, স্বার্থ সিদ্ধি না হলে বা প্রত্যাশিত সুযোগ-সুবিধা না পেলে নতুন সুযোগের প্রত্যাশায় এরা একদল থেকে অন্য দলে নাম লেখায়। এদের সমর্থন কোন আদর্শিক পরিচয় বা আকিদা-বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত নয়। এ জাতীয় লোকরা ইসলাম থেকে বের হবে না। তবে যারা সবকিছু জেনেবুঝে এই সকল ভ্রান্ত রাজনৈতিক মতাদর্শকে মনে-প্রাণে লালন করবে তারা অবশ্যই ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত মুরতাদ-কাফের।
– বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসীদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য:
আমাদের কর্তব্য, সকল রাজনৈতিক ও দলীয় দৃষ্টিভঙ্গীর উর্দ্ধে উঠে এবং সব ধরনের বস্তাপচা জাহেলিয়াত পূর্ণ থিওরি ও মতবাদের বিপরীতে একমাত্র ইসলামকে জীবন আদর্শ হিসেবে মেনে চলার এবং মহান স্রষ্টা আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান জানানো।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
তিনি আরও বলেন,
🛑 জরুরি সতর্কবার্তা: বর্তমানে কিছু মানুষ ইসলামের নামে রাজনীতি করতে গিয়ে আপাদমস্তক পাশ্চাত্য গণতন্ত্রে হাবুডুবু খায়, ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনেও ইসলামি আদর্শকে তেমন একটা অনুসরণ করার প্রয়োজন মনে করে না অথবা জোড়াতালি দিয়ে আইওয়াশ মার্কা কিছু ইসলামি ভাবধারা প্রদর্শন করে করে, কিছু মানুষ আবার নিজেদেরকে তথাকথিত মডারেট মুসলিম ভাবে। এরা ইসলামের নামে সাধারণ মানুষের ধর্মানুভূতি ও আবেগকে কাজে লাগিয়ে স্বার্থসিদ্ধিতে লিপ্ত রয়েছে। এদের কাছে ইসলাম মুখ্য বিষয় নয়। মুখ্য বিষয় হলো ক্ষমতা দখল এবং বৈষয়িক স্বার্থ। এই সকল ধর্মব্যবসায়ী এবং ধান্দাবাজদের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকা অপরিহার্য।
No comments:
Post a Comment