Thursday, January 23, 2025

কেউ যদি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী পার্টিকে সাপোর্ট করে সে কি মুসলিম থাকবে

 প্রশ্ন: কেউ যদি আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী পার্টিকে সাপোর্ট করে সে কি মুসলিম থাকবে?

উত্তর: কেউ যদি জেনে-বুঝে বিশ্বাস করে যে, ইসলাম কেবল নামাজ, রোজা, হজ-উমরা, দুআ, তাসবিহ, জিকির, গরুর গোশত খাওয়া, খতনা, বিয়ে,‌ তালাক ইত্যাদি ব্যক্তিগত বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ইসলামের সাথে শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, রাষ্ট্র, সংবিধান, বিচার কার্য ইত্যাদির কোনও সম্পর্ক নাই অথবা যদি সে মনে করে, এ সব বিষয়ে ইসলামের বিধান গ্রহণযোগ্য নয় কিংবা বর্তমান যুগে অচল অথবা বিশ্বাস করে যে, এ সব বিষয়ে অন্য কোনও মতবাদ ইসলাম থেকে উন্নত তাহলে সে সর্বসম্মতভাবে কাফির-মুরতাদ (ইসলাম থেকে বিচ্যুত)। চাই সে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বাম দল, সমাজবাদী/কম্যুনিস্ট পার্টি ইত্যাদি যে দলের সাথেই সম্পৃক্ত থাকুক না কেন।

কেননা কেউ যদি কুরআনের কিছু অংশ মানে আর কিছু অংশ অস্বীকার করে সে কাফির বলে গণ্য হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ ۚ فَمَا جَزَاءُ مَن يَفْعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰ أَشَدِّ الْعَذَابِ ۗ وَمَا اللَّـهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ

“তবে কি তোমরা কিতাবের (কুরআনের) কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দুর্গতি ছাড়া তাদের আর কোন প্রাপ্য নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেওয়া হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন।” [সূরা বাকারা: ২৫]

আর আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে দাখিল হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেছেন এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।

তিনি বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ

“হে ইমানদারগণ, তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ‌ করো। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” [সূরা বাকারা: ২০৮]

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
أَفَحُكۡمَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ يَبۡغُونَۚ وَمَنۡ أَحۡسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكۡمٗا لِّقَوۡمٖ يُوقِنُونَ
“তবে কি তারা জাহেলিয়াতের বিধি-বিধান কামনা করে ? আর দৃঢ় বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে আর কে শ্রেষ্ঠতর?”
[সূরা মায়েদা: ৫০]

সুতরাং ব্যক্তিগত বা পারিবারিক টুকিটাকি কিছু বিষয়ে ইসলাম মানবেন আর অন্যান্য সব বিষয়ে শয়তানের অনুসরণ করবেন এতে করে ইসলামের গণ্ডীর মধ্যে থাকার সম্ভাবনা নাই। (আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমিন)

– ইসলামই একমাত্র চূড়ান্ত সত্য আল্লাহর মনোনীত দ্বীন (জীবন আদর্শ বা জীবন ব্যবস্থা):

আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, মহান আল্লাহ মানবজাতির জন্য একমাত্র জীবনাদর্শ হিসেবে ইসলাম দান করেছেন। এটি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চূড়ান্ত জীবন ব্যবস্থা। তাই ইসলাম ছাড়া অন্য যত মতবাদ, মতাদর্শ, আইডোলজি এবং থিয়োলজি রয়েছে সবই বাতিল, অগ্রহণযোগ্য ও জাহেলিয়াত হিসেবে প্রত্যাখ্যাত। যেমন: ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, কম্যুনিজম বা সমাজতন্ত্র ইত্যাদি। কোন মুসলিমের জন্য এ সকল মতবাদে বিশ্বাস রাখা জায়েজ নাই। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু (ধর্ম বা মতাদর্শ) অনুসন্ধান করে, কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্থ।” [সূরা আলে ইমরান: ৮৫]
ইসলাম হচ্ছে, বিশ্ব মানবতার জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট একমাত্র মনোনীত ও গ্রহণীয় জীবন ব্যবস্থার নাম। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّـهِ الْإِسْلَامُ
“আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা বা জীবন আদর্শ) ইসলাম।” [সূরা আলে ইমরান: ১৯]

কিন্তু বাস্তবতা হল, বর্তমানে যারা ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি মতবাদে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে বা এগুলোর সাথে সম্পৃক্ত তারা অধিকাংশই তাদের মূল আকিদা-বিশ্বাস এবং আদর্শ সম্পর্কে না জেনেই করে থাকে। হয়ত দলের কোন এক নেতার প্রতি ভালবাসা ও অন্ধভক্তি, বিশেষ স্বার্থ উদ্ধার, অর্থকড়ি বা নেতৃত্বের লোভ-লালসা, ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা অনেক সময় পরিস্থিতির চাপে পড়ে এসব দলকে সমর্থন করে। তাই তো দেখা যায়, স্বার্থ সিদ্ধি না হলে বা প্রত্যাশিত সুযোগ-সুবিধা না পেলে নতুন সুযোগের প্রত্যাশায় এরা একদল থেকে অন্য দলে নাম লেখায়। এদের সমর্থন কোন আদর্শিক পরিচয় বা আকিদা-বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত নয়। এ জাতীয় লোকরা ইসলাম থেকে বের হবে না। তবে যারা সবকিছু জেনেবুঝে এই সকল ভ্রান্ত রাজনৈতিক মতাদর্শকে মনে-প্রাণে লালন করবে তারা অবশ্যই ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত মুরতাদ-কাফের।

– বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসীদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য:

আমাদের কর্তব্য, সকল রাজনৈতিক ও দলীয় দৃষ্টিভঙ্গীর উর্দ্ধে উঠে এবং সব ধরনের বস্তাপচা জাহেলিয়াত পূর্ণ থিওরি ও মতবাদের বিপরীতে একমাত্র ইসলামকে জীবন আদর্শ হিসেবে মেনে চলার এবং মহান স্রষ্টা আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান জানানো।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ ۖ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
“আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন হেকমত (প্রজ্ঞা) ও উপদেশপূর্ণ নম্র কথার মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন সবচেয়ে উত্তম পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে।” [সূরা নাহল: ১২৫]

তিনি আরও বলেন,

وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّـهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ
“যে আল্লাহর দিকে আহবান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন আজ্ঞাবহ-মুসলিম তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার হতে পারে?” [সূরা ফুসসিলাত: ৩৩]
এ সম্পর্কে অনেক কুরআনের আয়াত ও হাদিস বিদ্যমান রয়েছে।

🛑 জরুরি সতর্কবার্তা: বর্তমানে কিছু মানুষ ইসলামের নামে রাজনীতি করতে গিয়ে আপাদমস্তক পাশ্চাত্য গণতন্ত্রে হাবুডুবু খায়, ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনেও ইসলামি আদর্শকে তেমন একটা অনুসরণ করার প্রয়োজন মনে করে না অথবা জোড়াতালি দিয়ে আইওয়াশ মার্কা কিছু ইসলামি ভাবধারা প্রদর্শন করে করে, কিছু মানুষ আবার নিজেদেরকে তথাকথিত মডারেট মুসলিম ভাবে।‌ এরা ইসলামের নামে সাধারণ মানুষের ধর্মানুভূতি ও আবেগকে কাজে লাগিয়ে স্বার্থসিদ্ধিতে লিপ্ত রয়েছে। এদের কাছে ইসলাম মুখ্য বিষয় নয়।‌ মুখ্য বিষয় হলো ক্ষমতা দখল এবং বৈষয়িক স্বার্থ। এই সকল ধর্মব্যবসায়ী এবং ধান্দাবাজদের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকা অপরিহার্য।

আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামি শরিয়ার সাথে সাঙ্ঘর্ষিক সকল মতবাদ ও মতাদর্শ থেকে মুক্ত হয়ে ইসলামি আদর্শে জীবন গঠনের মাধ্যমে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জন এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এক আল্লাহর দাসত্বকে বরণ করার পাশাপাশি তাঁর অবারিত সত্য, সুন্দর ও আলোকিত রাজপথের দিকে মানুষকে আহ্বান করার তাওফিক দান করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম। আল্লাহ সর্বময় জ্ঞানের অধিকারী।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate