Thursday, January 23, 2025

ভিডিওতে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যবহার ও এ জাতীয় ভিডিও শেয়ার এবং অন্যের ভিডিও কনটেন্ট তার অনুমতি ছাড়া নিজের চ্যানেলে আপলোড করার বিধান

 প্রশ্ন: প্রথমত: আমরা ইসলামিক ভিডিওগুলো এডিট করে তাতে ব্যাকগ্রাউন্ডে মিউজিক ব্যবহার করি। আবার অনেকে মিউজিকের মত ভোকাল সাউন্ড ব্যবহার করে। এগুলো কি জায়েজ হবে? যদি নাজায়েজ হয় তাহলে আমাদের এতো দিনের ভিডিওগুলো কি ডিলিট করতে হবে?

দ্বিতীয়ত: মিউজিক ব্যাকগ্রাউন্ড সহ ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করার বিধান কী?
তৃতীয়ত: আমরা কারো ইউটিউব বা ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিও নিয়ে এডিট করে তাদের লোগো কেটে আমাদের নিজস্ব লোগো ব্যবহার করি। এতে কি বান্দার হক নষ্ট হবে? উত্তরগুলো দিলে অনেক মানুষের উপকার হবে আশা করি।
উত্তর: নিম্নেে এ তিনটি প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর দেওয়া হলো:

❑ ১. ইসলামের দৃষ্টিতে মিউজিক সর্বাবস্থায় হারাম। চাই তা ইসলামি ভিডিও হোক বা সাধারণ কোনও ভিডিও হোক। চাই তাতে সরাসরি মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট বা বাদ্যযন্ত্র, সফটওয়্যার, মোবাইল অ্যাপ ইত্যাদি ব্যবহার করে সাউন্ড ইফেক্ট দেওয়া হোক কিংবা ভোকাল সাউন্ড ব্যবহার করে মিউজিক সাদৃশ্য সাউন্ড দেওয়া করা হোক।

শাইখ ড. আব্দুল্লাহ বিন জিবরিন রাহ. (মৃত্যু: ২০০৯ খৃষ্টাব্দ) কে প্রশ্ন করা হয় যে, মুখ থেকে এমন শব্দ বের করার বিধান কী যা বাদ্যযন্ত্রের শব্দের মতো শোনায়?

উত্তরে তিনি বলেন,
نرى أنه يحرم لأنه يقوم مقام آلات اللهو وهي آلات محرمة تصد عن ذكر الله وما قام مقامها فهو محرم . والله أعلم .
“আমরা মনে করি, এটি হারাম। কারণ এটি বাদ্যযন্ত্রের ভূমিকা পালন করে। আর বাদ্যযন্ত্র এমন এক মাধ্যম যা আল্লাহর স্মরণ থেকে মানুষকে বিরত রাখে এবং যা এর ভূমিকা পালন করে তা-ও হারাম। আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞানী।” [islamqa]

মোটকথা, ভিডিওর মধ্যে মিউজিকের ব্যবহার গর্হিত কাজ। আর তা যদি কোন ইসলামিক কনটেন্টে ব্যবহার করা হয় তাহলে তা আরও বেশি গর্হিত কাজ। সুতরাং তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। তবে প্রয়োজন বোধে পশুপাখির ডাক, নদীর শব্দ, সাগর তরঙ্গ, ঝর্ণা পতন, ঝড়ো হাওয়া ইত্যাদি সাউন্ড ইফেক্ট (যেগুলো কোনও মিউজিকের অনুরূপ নয় সেগুলো) ব্যবহারে কোন দোষ নেই ইনশাআল্লাহ ।
সুতরাং ইতোপূর্বে যদি কোন ভিডিওতে মিউজিক বা গান-বাজনা ইত্যাদি ব্যবহার করে ইউটিউব ফেসবুক, টিকটক ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা হয়ে থাকে তাহলে সেগুলো অনতিবিলম্বে ডিলিট করতঃ মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা জরুরি। তৎসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় এটা প্রচার করে দিতে হবে যে, তার মিউজিক সম্বলিত ভিডিওগুলো অন্য কেউ আপলোড দিয়ে থাকলে সেও যেন ডিলিট করে দেয়। তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহ ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরম দয়ালু ও ক্ষমাশীল।

❑ ২. মিউজিক ব্যাকগ্রাউন্ড সহ ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করার বিধান কী?

প্রশ্ন: কিছু ব্লগ বা ফোরামে মিউজিক ব্যাকগ্রাউন্ড সহ ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করা কি বৈধ যদি সেটি সম্পর্কে সতর্ক করা হয় বা শব্দ কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়? এটি কি যথেষ্ট?
উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ। কোনও ওয়েবসাইটের মালিক বা ভিজিটরের জন্য এমন কোনও ভিডিও বা অডিও ক্লিপ শেয়ার করা বৈধ নয়, যাতে মিউজিক ব্যাকগ্রাউন্ড থাকে। কারণ এটি পাপ প্রচারে সহায়তার শামিল। ওয়েবসাইটের ভিজিটরদেরকে এ বিষয়ে সতর্ক করা যথেষ্ট নয়। কারণ এটি জানা কথা যে, যারা এই ক্লিপটি ডাউনলোড করবে, তাদের সবাই এই সতর্কতা মেনে চলবে না। ফলে পোস্ট কারী তাদের পাপ করার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

তিরমিজি (৩৫২৯) তার সুনানে বর্ণনা করেছেন এবং এটি আলবানির মতে সহীহ যেখানে আবু বকর সিদ্দিক রা. বলেছেন, “হে আল্লাহর রসুল! আমাকে শিখিয়ে দিন যে আমি সকালে ও সন্ধ্যায় কী বলব।”
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হে আবু বকর, বলো:

اللَّهُمَّ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ ، عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ ، رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيكَهُ ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي ، وَمِنْ شَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِهِ ، وَأَنْ أَقْتَرِفَ عَلَى نَفْسِي سُوءًا ، أَوْ أَجُرَّهُ إِلَى مُسْلِمٍ

উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা ফাতিরাস-সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্ব, আ-লিমাল-গাইবি ওয়াশ-শাহা-দাহ, লা ইলা-হা ইল্লা-আনত, রাব্বা কুল্লি শাই’য়িন ওয়ামালীকাহু। আউযুবিকা মিন শাররী নাফসী, ওয়া মিন শাররিশ-শায়ত্বানি ওয়া শিরকিহি, ওয়া আন আক্বতারিফা ‘আলা নাফসি সু’আ, আও আজুররাহু ইলা মুসলিম।”
অর্থ: হে আল্লাহ! আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা, অদৃশ্য ও প্রকাশ্য বিষয়ের জ্ঞানী। তুমি ছাড়া কোনও উপাস্য নেই। তুমি সবকিছুর প্রভু ও মালিক। আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার নিজের মন্দ থেকে, শয়তানের মন্দ থেকে এবং তার ফাঁদ থেকে। আর আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই যেন আমি নিজের উপর কোনও ক্ষতি না করি বা তা কোনও মুসলিমের প্রতি নিয়ে না যাই।” [মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি। সহিহ। দ্রষ্টব্য: সহিহুল জামে। হা/৭৮১৩]

আর নিঃসন্দেহে এই ধরনের ক্লিপ শেয়ার করা অন্যান্য মুসলিমদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়।
আল্লাহু আলাম। আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞানী।
[এই ফতোয়াটি islamqa থেকে অনুবাদ করা হয়েছে]

❑ ৩. যদি কোনও ভিডিওতে কপিরাইট দেওয়া থাকে বা তাদের ভিডিও কপি করা নিষেধ এমন কোনও নির্দেশনা থাকে তাহলে অবশ্যই কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সেগুলো ব্যবহার করা বৈধ হবে না। অন্যথায় তা হবে অন্যের অধিকার লঙ্ঘন। তবে এমন কপিরাইট বা নিষেধাজ্ঞা না থাকলে তা নিয়ে বৈধ কাজে নিজের প্রয়োজনে কিংবা ইসলামিক কিংবা অন্য যেকোনো উপকারী কনটেন্ট হলে সেগুলো ইসলাম প্রচার বা মানুষের কল্যাণের স্বার্থে প্রচার বা ব্যবহার করতে কোনও আপত্তি নাই ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহু আলাম।▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার। সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate