প্রশ্ন: আমরা ৬ ভাগে কুরবানি দিয়েছি। কিন্তু ভাগ করার সময়ে ৭ ভাগ করা হয়েছে। এখানকার নিয়ম নাকি ১ ভাগ কসাইদের দেওয়া। কিন্তু এমনটা করা জায়েজ নাই-বলার পরেও তারা শুনেনি। এখন আমাদের কুরবানি কি সঠিক হয়েছে?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
Monday, June 19, 2023
কসাইকে পারিশ্রমিক হিসেবে কুরবানির মাংস দেওয়া জায়েজ নেই
নবি-রাসুল, শহিদ, ওলি-আওলিয়া প্রমূখগণ কি কবরে জীবিত আছেন
নবি-রাসুল, শহিদ, ওলি-আওলিয়া প্রমূখগণ কি কবরে জীবিত আছেন? এ ব্যাপারে আমাদের আকিদা-বিশ্বাস কেমন হওয়া উচিৎ?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
নিম্নে আমরা এ বিষয়টি কুরআন-সুন্নাহ ও বিশ্বখ্যাত আলেমদের অভিমতের আলোকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। وبالله التوفيق
❑ জীবনের পরে আরেক জীবন:
❑ সকল নবি-রাসূল মৃত্যু বরণ করেছেন (ঈসা আ. ছাড়া):
মৃত্যু এক অবধারিত সত্যের নাম। এর থেকে কেউ পালাতে পারবে না। দুনিয়ার জীবনের নির্দিষ্ট সময়কাল অতিবাহিত হওয়ার পর সকল মানুষকে আখিরাতের অনন্ত জীবনের দিকে পাড়ি জমাতে হবে। সেই অলঙ্ঘনীয় সিস্টেমের আলোকে প্রথম মানুষ আদম আ. থেকে শুরু কর সকল নবি-রসূল সহ যুগযুগান্তরের অসংখ্য বনি আদম দুনিয়া ছেড়ে সেই অনন্তের পথে পাড়ি জমিয়েছে। এখনো যারা জীবিত আছে তাদেরকেও সেই পথেরই পথিক হতে হবে। এর মধ্যে কোনও সন্দেহ নেই
এছাড়াও বহু বিশুদ্ধ হাদিসে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মৃত্যুর ঘটনা বিবৃত হয়েছে।
❑ নবি-রাসুলগণ কবরে জীবতি আছেন-এর ব্যাখ্যা কী?
বহু বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা এটিও প্রমাণিত হয়েছে যে, শুধু আমাদের নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নয় বরং সকল নবি-রসুলগণ কবরে জীবিত অবস্থায় আছেন এবং তারা সেখানে কখনো সালাত আদায় করেন। এসব হাদিসের ব্যাখ্যা জানার জন্য প্রথমে এ সংক্রান্ত কিছু হাদিস উল্লেখ করে নবি-রসুলদের কবরের জীবিত থাকা প্রসঙ্গে মতামত ও ফতোয়া উল্লেখ করব ইনশাআল্লাহ।
এ মর্মে কতিপয় সহিহ হাদিস নিম্নরূপ:
“এরপর নবীদের এক জামাতেও আমি নিজেকে দেখতে পেলাম। মুসা আ. কে সালাতে দণ্ডায়মান দেখলাম। তিনি শানুয়াহ গোত্রের লোকদের ন্যায় মধ্যম আকৃতি। তার চুল ছিল কোঁকড়ানো। ঈসা আ. কেও সালাতে দাঁড়ানো দেখলাম। তিনি তোমাদের এ সাথীর মতোই দেখতে অর্থাৎ মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মতো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তারপর সালাতের সময় হল, আমি তাদের ইমামতি করলাম। সালাত শেষে এক ব্যক্তি আমাকে বললেন, হে মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ইনি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক মালিক। তাকে সালাম করুন। আমি তার দিকে তাকালাম। তিনি আমাকে আগেই সালাম করলেন।” [সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১। ঈমান, পরিচ্ছেদ: ৭৫. মরিয়ম পুত্র ঈসা আ. ও মাসিহুদ দজ্জাল-এর বর্ণনা]
❑ নবি-রসূলগণ কবরে জীবিত থাকা বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমদের অভিমত:
◈ ৩. ইবনে আব্দুল হাদি [মৃত্যু: ৭৪৪ হি.] বলেন,
“رد الروح على الميت في البرزخ ، ورد السلام على من يسلم عليه لا يستلزم الحياة التي يظنها بعض الغالطين ، وإن كان نوع حياة برزخية وقول من زعم أها نظير الحياة المعهودة مخالف للمنقول والمعقول ”
“বারজাখে (কবরে) মৃত্যুকে রূহ ফিরিয়ে দেওয়া এবং যে তাকে সালাম দিবে তার সালামের জবাব দেওয়া দ্বারা সেই জীবন আবশ্যক হয় না যেটা কিছু ভুল কারীরা ধারণা করে থাকে। যদিও তা এক প্রকার বারজাখি জীবন। যে বলে যে, তা দুনিয়ার পরিচিত জীবনের অনুরূপ তার কথা দলিল ও যুক্তি বিরুদ্ধ কথা।” [আস সারিম আল মুনকি]
◈ ৪. ইমাম সাখাবি [মৃত্যু: ৯০২ হিজরি] বলেন,
نحن نؤمِنُ ونُصَدِّقُ بأنَّه صلَّى اللهُ عليه وسلَّم حيٌّ يُرزَقُ في قبرِه، وأنَّ جَسَدَه الشَّريفَ لا تأكُلُه الأرضُ، والإجماعُ على هذا
“আমরা ইমান রাখি এবং সত্য বলে বিশ্বাস করি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কবরে জীবিত অবস্থায় রিজিক প্রাপ্ত হচ্ছেন এবং তার দেহ শরিফকে মাটি খেতে পারবে না। এ বিষয়ে ইজমা রয়েছে।” [আল কাউলুল বাদি, পৃষ্ঠা নম্বর: ১৭]
◈ ৫. সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড:
◈ ৬. শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. [১৩৩০ হি./১৯১২ খৃ.] বলেন,
قد صرَّح الكثيرون من أهلِ السُّنَّةِ بأنَّ النَّبِيَّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم حيٌّ في قبرِه حياةً برزخيَّةً لا يَعْلَمُ كُنْهَها وكيفيَّتَها إلَّا اللهُ سُبحانَه، وليست من جنسِ حياةِ أهلِ الدُّنيا، بل هي نوعٌ آخَرُ يَحصُلُ بها له صلَّى اللهُ عليه وسلَّم الإحساسُ بالنعيمِ، ويَسمَعُ بها سلامَ المُسلِّمِ عليه عندما يرُدُّ اللهُ عليه رُوحَه ذلك الوَقتَ
“অনেক আহলুস সুন্নাহ স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কবরে জীবিত আছেন। কিন্তু সেটা হল, বারজাখি জীবন। যার ধরণ ও প্রকৃত অবস্থা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। তা দুনিয়ার জীবনের মত নয়। বরং তা এক ভিন্ন ধরণের জীবন-যার মাধ্যমে সে সুখ অনুভব করে, কোন ব্যক্তি সালাম দিলে তার সালাম শুনতে পায় যখন সে সময় আল্লাহর তার রূহকে ফিরিয়ে দেন।”
◈ ৭. আল্লামা আলবানি রাহ. [১৯৯৯ খৃ.] বলেন,
❑ কবর ও আখিরাতের জীবন সম্পর্কে আমাদের আকিদা-বিশ্বাস কেমন হওয়া বাঞ্ছনীয়?
কুরআনের আয়াত ও বহু হাদিস দ্বারা কবরে ও আখিরাতের জীবন প্রমাণিত। আলেমগণও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কথা বলেছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এ বিষয়ে মুসলিমদের জন্য যে বিশ্বাস রাখা অপরিহার্য তা হলো, দুনিয়ার জীবনের সাথে আখিরাতের জীবনের কোন সাদৃশ্য নেই। কবরের জীবনের ধরন ও প্রকৃতি কি তা মানুষের অজানা। তার ধরন ও প্রকৃতি কেমন হবে তা একমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন। অর্থাৎ এটি ইলমে গায়েব দৃশ্য জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। তাই এ কথা বলা যাবে না যে, তারা কবরের জীবনে দুনিয়ার জীবনের মতই খাওয়া-দাওয়া করে, বাজার-ঘাট করে, ঘুমায়, বিয়ে-শাদি করে ইত্যাদি। এ বিষয়ে মাথা ঘামানোর জন্য আমরা নির্দেশিত নই। আমাদের করণীয় হল, যেভাবে হাদিসে এসেছে হুবহু সেভাবে বিশ্বাস করা। এই বিশ্বাস ঈমানের ছয়টি রোকন এর মধ্যে অন্যতম।
❑ কিয়ামত পরবর্তী জীবন:
হজ বা উমরা সফরে মহিলাদের জন্য হোটেলে সালাত আদায় করা অধিক উত্তম মসজিদে হারামে সালাত আদায় করার থেকে
প্রশ্ন: আমার মা এবার হজের যাবেন ইনশাআল্লাহ। হজের গাইড বইয়ে লেখা দেখলাম, “মহিলাদের মসজিদের জামাতের চাইতে হোটেলে সালাত পড়াই অধিক উত্তম।” কথাটা কতটুকু সত্য জানতে চাই।▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
এ মর্মে আরো একাধিক হাদিস রয়েছে।
🔹আল্লামা মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন আলবানিকে প্রশ্ন করা হয় যে, হাদিসে আছে যে, “একজন মহিলার জন্য বাড়িতে সালাত আদায় করা অধিক উত্তম মসজিদ থেকে।” কিন্তু কোন মহিলা যদি মক্কায় থাকে তার জন্যও কি হারামে সালাত পড়ার থেকে হোটেলে সালাত পড়া অধিক উত্তম হবে?
উত্তরে তিনি বলেন,
স্বামীর পিতা চিরকালের জন্য মাহরাম এমনকি তালাক সংঘটিত হওয়ার পরও
প্রশ্ন: কোনও মহিলার তালাক সংঘটিত হওয়ার পরও কি তার স্বামীর পিতা (তার শ্বশুর) তার জন্য মাহরাম থাকবে নাকি তিনি নন মাহরাম বলে গণ্য হবেন?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
◍ শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,
দাঁড়িয়ে পানাহার করা কি হারাম বা মাকরূহ
প্রশ্ন: আমি জানতে চাই, দাঁড়িয়ে বা হেঁটে খানা খাওয়া এবং পান করার ব্যাপার ইসলামের বিধান কি?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: দাঁড়িয়ে খাওয়া বা পান করা জায়েজ তবে বসে করা উত্তম। অনেকে মনে করে, দাঁড়িয়ে খাওয়া বা পান করা হারাম (নিষেধ) অথবা মকরুহ (অপছন্দনীয়)। এ ধারণা ঠিক নয়।
নিন্মে এ বিষয়ে কতিপয় হাদীস, সেগুলোর সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা এবং আলেমদের বক্তব্য তুলে ধরা হল:
❐ ১. আলি রা. হতে বর্ণিত। তিনি দাঁড়িয়ে পান করলেন। অত:পর বললেন,
إِنَّ نَاسًا يَكْرَهُ أَحَدُهُمْ أَنْ يَشْرَبَ وَهُوَ قَائِمٌ ، وَإِنِّي رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَلَ كَمَا رَأَيْتُمُونِي فَعَلْتُ
“কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে পান করাকে অপছন্দ করে। কিন্তু আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঠিক এইভাবে পান করতে দেখেছি, যেভাবে তোমরা আমাকে পান করতে দেখলে।” [সহিহুল বুখারি: ৫৬১৫]
❐ ২. মুসনাদে আহমদে আলি রা. হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি দাঁড়িয়ে পানি পান করলেন:
فَنَظَرَ إِلَيْهِ النَّاسُ كَأَنَّهُمْ أَنْكَرُوهُ فَقَالَ : مَا تَنْظُرُونَ ! إِنْ أَشْرَبْ قَائِمًا فَقَدْ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَشْرَبُ قَائِمًا ، وَإِنْ أَشْرَبْ قَاعِدًا فَقَدْ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَشْرَبُ قَاعِدًا
“তখন কিছু মানুষ তাঁর দিকে এমনভাবে তাকাল যে, বুঝা গেল, তারা যেন এটাকে গর্হিত কাজ মনে করে। তখন তিনি বললেন, তোমরা কী দেখছ? আমি যদি দাঁড়িয়ে পান করি তাহলে (জেনে রাখো যে,) আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দাঁড়িয়ে পান করতে দেখেছি আর আমি যদি বসে পান করি তাহলেও (জেনে রাখ) যে, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বসে পান করতে দেখেছি।” [মুসনাদ আহমদ, হা/৭৯৭, আহমদ শাকের তাহকীক মুসনাদ আহমদে বলেন, এর সনদ সহীহ]
❐ ৩. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
كُنَّا نَأْكُلُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نَمْشِي ، وَنَشْرَبُ وَنَحْنُ قِيَامٌ
“রাসুলুল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে আমরা চলতে চলতে আহার করতাম এবং দাঁড়িয়ে পান করতাম।” [সুনান তিরমিযী, হাদিস নাম্বার ১৮৮১, সহীহ-আলবানি]। এ সব হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, রাসুলুল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ দাঁড়িয়ে ও হাঁটা অবস্থায় পানাহার করতেন। সুতরাং এটি জায়েয হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ রইল না।
❖ দাঁড়িয়ে পান করার নিষেধাজ্ঞা:
কিছু হাদিসে দাঁড়িয়ে পান করা ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যেমন আনাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকদেরকে দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। [মুসলিম ২০২৪, তিরমিযী ১৮৭৯, আবু দাউদ ৩৭১৭, ইবনে মাজাহ ৩৪২৩, আহমদ ১১৭৭৫]
এই হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। এ মর্মে আরও কিছু হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
❑ দাঁড়িয়ে পান করলে বমি করে ফেলে দেওয়ার নির্দেশ সংক্রান্ত হাদিসটি রহিত:
ফতোয়া কী এবং ফতোয়া কার কাছ থেকে নেওয়া যাবে আর আর কাছ থেকে নেওয়া যাবে না
ফতোয়া কী? ফতোয়া কার কাছ থেকে নেওয়া যাবে আর আর কাছ থেকে নেওয়া যাবে না (ফতোয়া প্রদানের শর্তাবলী)
❑ ফতোয়া শব্দের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ:
❑ ফতোয়ার প্রয়োজনীয়তা, আমাদের দেশের মুফতিগণের অবস্থা এবং ফতোয়ার শর্তাবলি:
ফতোয়া ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ জীবন চলার পথে মানুষ নিত্য নতুন সমস্যার সম্মুখীন হয়, জীবনের বাঁকে বাঁকে মানুষ নানা ধরণের সংশয় ও জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হয়। দেশ, সমাজ, পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী সমস্যায় ভিন্নতা থাকে। ইসলামের দৃষ্টিতে সে সব সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদেরকে আলেমদের শরণাপন্ন হতে হয়। বিজ্ঞ আলেমরা কুরআন-সুন্নাহর নির্যাস থেকে আমাদেরকে সমস্যার সমাধান এবং সে ক্ষেত্রে করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দেন। ফলে আমরা জটিলতা থেকে মুক্তি পাই এবং সহজে ইসলামের বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে পারি।
কিন্তু দুর্ভাগ্য জনক হলেও বাস্তব কথা হলো, আমাদের দেশে যাদেরকে আমরা ‘আলেম’ বলে চিনি তাদের অধিকাংশের মধ্যেই ফতোয়া দেওয়ার মতো যোগ্যতা নেই ব্রাদার্স, সাধারণ তালেবুল ইলম কিংবা সাধারণ দ্বীন চর্চা কারী ব্যক্তি তো দূরের কথা।
– ফতোয়ার শর্তাবলী:
আলেমগণ ফতোয়া দেওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো, ইলমুল কুরআন (নাসেখ-মনসুখ, মুহকাম-মুতাশাবিহ, আম-খাস, মুতলাক-মুকাইয়াদ, শানে নুজুল ইত্যাদি), তাফসির, হাদিস, উসুলে হাদিস (হাদিসের সহিহ-জয়ীফ মান নির্ণয়, রিজাল শাস্ত্র ইত্যাদি), আরবি ভাষা সাহিত্য (ইলমুল বালাগাহ বা অলঙ্কার শাস্ত্র, কবিতা ও গভীর ভাষাজ্ঞান) ও ব্যাকরণ (নাহু-সরফ), ফিকহ, উসুলে ফিকহ, সালাফদের ফতোয়া, মতামত, মতবিরোধ ও ইজমা এবং বিশুদ্ধ আকিদা-এর পাশাপাশি ফিকহুল ওয়াকে (পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট) ইত্যাদি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থাকা। পাশাপাশি একজন মুফতি হবেন, তাকওয়াবান বা পরহেজগার-আল্লাহ ভীরু, আমানতদার বা বিশ্বস্ত, ব্যক্তিত্ববান, সুস্থ বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন এবং বিচক্ষণ ইত্যাদি। আলেমগণ এ বিষয়গুলো বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
“আল্লাহর দ্বীনের বিষয়ে এমন ব্যক্তি ছাড়া কারও ফতোয়া দেওয়া বৈধ নয় যে, আল্লাহর কিতাবের নাসেখ-মনসুখ, মুহকাম-মুতাশাবিহ, ব্যাখ্যা, শানে নুজুল, মক্কি-মাদানি, এর উদ্দেশ্য কী, কোন বিষয়ে নাজিল হয়েছে ইত্যাদি বিষয় জানে। পাশাপাশি আল্লাহর রসুলের হাদিসের নাসেখ-মনসুখ বিষয়ে স্পষ্ট জ্ঞান রাখে, হাদিস বিষয়ে তেমন জ্ঞান রাখে যেমন জ্ঞান রাখে কুরআনের বিষয়ে, আরবি ভাষা, আরবি কবিতা এবং কুরআন ও প্রয়োজনীয় বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখে। এর সাথে সে ন্যায়-ইনসাফকে ব্যবহার করবে, কম কথা বলবে, তৎসঙ্গে বিভিন্ন দেশে আলেমদের মতবিরোধ বিষয়ে দৃষ্টি রাখবে। তাহলে তার মধ্যে ফতোয়া প্রদানের পরিপক্বতা ও যোগ্যতা সৃষ্টি হবে। এমন হলে তার জন্য হালাল-হারাম বিষয়ে কথা বলা ও ফতোয়া দেওয়া অনুমতি রয়েছে। অন্যথায় সে ইলমি কথাবার্তা বলতে পারে কিন্তু ফতোয়া দিবে না।” [আল ফাকিহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ-খতিব বাগদাদি ২/২৩৪]
তাই সাধারণ মানুষের উচিত, দেখেশুনে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আলেমদেরকে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা। বিশেষ করে এ ক্ষেত্রে ইলমের জগতে সুপরিচিত বিদগ্ধ ও বড় আলেমদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যার তার কাছে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা দ্বীনের জন্য মোটেও নিরাপদ নয়।
❑ ইলম বিহীন ফতোয়া প্রদানের ভয়াবহতা এবং সালাফদের ফতোয়া ভীতি:
যারা ইচ্ছেমত ফতোয়া দেয় তাদের উচিত, আল্লাহকে ভয় করা। কেননা এটা অনেক বড় আমানত। ইলম বিহীন ফতোয়া দেওয়ার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। (আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমিন)
“জেনে রাখুন, ফতোয়া দেওয়ার বিষয়টি বড় বিপদ জনক এবং ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী। কিন্তু বিশাল মর্যাদারও বিষয়। কারণ মুফতি (ফতোয়া প্রদানকারী) নবি-রসুলদের উত্তরাধিকারী এবং ফরজে কেফায়ার দায়িত্ব পালনকারী কিন্তু ভুল সিদ্ধান্ত প্রদানের আশঙ্কাজনক অবস্থার সম্মুখীন। এ কারণে আলেমগণ বলেন যে, মুফতি হল, আল্লাহর পক্ষ থেকে সাক্ষর দান কারী।” [আদাবুল ফতোয়া, পৃষ্ঠা নম্বর: ১৩]
এ জন্য সালাফগণ ফতোয়া প্রদানের ব্যাপারে খুবই ভীত থাকতেন এবং যথাসম্ভব এ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতেন।