প্রশ্ন: ইতিকাফ-এর সময় মোবাইল ফোনে কুরআন তিলাওয়াত, ওয়াজ ইত্যাদি কি শোনা যাবে?
Sunday, April 21, 2024
ইতিকাফ অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহার
জুমাতুল বিদা কী এবং ইসলামের দৃষ্টিতে এটি পালনের কি কোন ভিত্তি আছে
জুমাতুল বিদা বলতে বুঝায়, রমজানের শেষ জুমা সালাতের মাধ্যমে রমজানকে বিদায় জানানো।
আমাদের দেশে দেখা যায়, রমজানের শেষ শুক্রবারকে খুব গুরুত্বের সাথে ‘জুমাতুল বিদা’ হিসেবে পালন করা হয়। এ উপলক্ষে জুমার নামাজে পরিলক্ষিত হয় প্রচুর ভিড়। এ দিনে কেউ কেউ মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে, কেউ কেউ এ দিন উপলক্ষে বিশেষ কিছু নামাজ পড়ে, মসজিদে মসজিদে আয়োজন করা হয় বিশেষ দুআ-মুনাজত, ইফতার পার্টি ইত্যাদি। পরে পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনে নিউজ আসে “যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে সারা দেশে ‘জুমাতুল বিদা’ পালিত হয়েছে”!
তারাবিহ এর সালাত একাকী আদায় করার চেয়ে জামাতের সাথে আদায় করা অধিক উত্তম
তারাবিহ-এর সালাত একাকী আদায় করা যেমন শরিয়ত সম্মত তেমনি জামাতে আদায় করাও শরিয়ত সম্মত। তবে একাকী আদায় করার চেয়ে জামাতের সাথে আদায় করা অধিক উত্তম। কারণ:
◈ ১- একাকী বা বিচ্ছিন্নভাবে তারাবিহ এর সালাত পড়ার চেয়ে মসজিদে জামাতে পড়া উত্তম না হলে উমর ইবনুল খাত্তাব রা. মানুষকে মসজিদে এক ইমামের পেছনে জামাত পূণপ্রতিষ্ঠিত করতেন না এবং এরপর এটিকে “চমৎকার আবিষ্কার نعمة البدعة هذا” বলে অবিহিত করতেন না।
◈ ২- সালাত আদায় শেষ হওয়া পর্যন্ত ইমামের সাথে থাকা সারারাত নফল সালাত আদায়ের সমপরিমাণ মর্যাদার কথা বিশুদ্ধ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন: হাদিসে এসেছে,
مَنْ قَامَ مَعَ الإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ كُتِبَ لَهُ قِيَامُ لَيْلَةٍ
◈ ৩- জামাতে তারাবিহর সালাত আদায় করা মূলত: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি সুন্নতকে পূর্ণজীবিত করার নামান্তর। কারণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন দিন তা পড়েছিলেন। কিন্তু ফরজ হওয়ার আশঙ্কায় তা পরিত্যাগ করেছিলেন।
সহিহ মুসলিমের (৭৬১) ভাষ্যে এসেছে “কিন্তু আমি আশংকা করেছি তোমাদের উপর কিয়ামুল লাইল ফরজ করে দেওয়ার। এমনটি হলে পরে তোমরা তা আদায় করতে পারবে না।”
◈ ৪- উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর পর থেকে বাকি তিন খলিফা সবাই নিয়মিত জামাতের সাথেই তারাবহির সালাত আদায় করেছেন। [ফিকহ বিশ্বকোষ ২৭/১৩৮]
-শাইখ আলবানি বলেন,
” وتشرع الجماعة في قيام رمضان ، بل هي أفضل من الانفراد ، لإقامة النبي صلى الله عليه وسلم لها بنفسه ، وبيانه لفضلها بقوله
টাকা বনাম খাদ্যদ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায়ের ক্ষেত্রে ৮ টি পয়েন্টে একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা
এ ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত এই আটটি পয়েন্ট হয়তো আপনাকে নতুন করে ভাবতে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে ইনশাআল্লাহ।
নিম্নে সংক্ষেপে সেগুলো উপস্থাপন করা হলো:
✅ দুই. বর্তমানে একদল মানুষকে এই যুক্তি দিতে দেখা যাচ্ছে যে, আল্লাহর রাসুলের যুগে খাদ্যদ্রব্যকে কারেন্সি বা নগদ অর্থের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হতো। যার দলিল হিসেবে তারা, হিজামা কারীকে খাদ্যদ্রব্য দ্বারা পারিশ্রমিক দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে থাকেন। হ্যাঁ, এ বিষয়টি আমরা অস্বীকার করি না। তৎকালীন সময়ে দিনার-দিরহাম, দানেক, কিরাত নামক বিভিন্ন ক্যাটাগরির মুদ্রার প্রচলন থাকলেও কখনো কখনো খাদ্যদ্রব্য দ্বারাও পারিশ্রমিক দেওয়া হতো। কিন্তু ফিতরার আদায়ের ক্ষেত্রে নির্ধারিত এক সা পরিমাণ যেসব খাদ্যদ্রব্যের উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো কোনভাবেই নগদ মূল্যের বিকল্প নয়। কেননা লক্ষ্য করুন, হাদিসে বর্ণিত খাদ্যদ্রব্য গুলোর মূল্যমান এক সমান নয়। এক সা যব অথবা গম কি কখনো এক সা কিসমিস অথবা পনিরের সমান হতে পারে? খেজুর আর গম বা জবের বাজার মূল্য কি সমান? কখনোই নয়। আগেও ছিল না। এখনও নেই। এখান থেকে প্রতিমান হয় যে, খেজুর যব, গম, পনির, কিসমিস ইত্যাদি সমমূল্যের না হওয়ার পরেও সবকিছুই ‘এক সা’ পরিমাণ নির্ধারণের বিষয়টি নিছক একটি ইবাদত। অতএব ভুয়া যুক্তি খাটিয়ে এগুলোকে কারেন্সি বানানোর পাঁয়তারা একদমই অগ্রহণযোগ্য।
✅ চার. সুন্নাহ অনুসরণের মধ্যে দেশ ও দেশের মানুষের জন্যই কল্যাণকর।কীভাবে? আমাদের বাংলাদেশে প্রায় ১৫ কোটি মুসলিম জনগোষ্ঠীর জনপ্রতি আড়াই বা তিন কেজি পরিমাণ চাল দেওয়ার বিধান বাস্তবায়িত হলে বাজারে এত বিশাল পরিমাণ চালের যোগান দেওয়ার জন্য দেশে কী পরিমাণ চাষাবাদ করার প্রয়োজন হতো? কী পরিমাণ আবাদি জমির ব্যবহার হতো? কী পরিমাণ শ্রমিক কাজ পেতো? কত মানুষকে এর পেছনে শ্রম ব্যয় করতে হতো? একটু হিসাব করে দেখুন। এর মাধ্যমে মূলত আমাদের কৃষক, শ্রমিক এবং চাষাবাদ, উৎপাদন, পরিবহন ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট সর্বশ্রেণির ব্যবসায়ী উপকৃত হতো। সমৃদ্ধ হতো দেশের অর্থনীতি এবং আরো বেশি সচল হতো অর্থনীতির চাকা। পক্ষান্তরে টাকা দ্বারা ফিতরা দেওয়ার ফলে কেবলমাত্র জন থেকে জনে অর্থ হাত বদল হয়। ফলে দেশের সাধারণ মানুষ এবং দেশের অর্থনীতি উৎপাদনমুখী বিরাট সুফল থেকে বঞ্চিত হয়।
✅ পাঁচ. টাকা দ্বারা ফিতরা আদায়ের ফলে ফিতরা গ্রহণকারী ব্যক্তি টাকা হাতে পেয়ে বিড়ি, সিগারেট, মদ-গাজা বা হারাম বস্তু ক্রয়ের সম্ভাবনা থাকে। এ ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি নিজে গুনাহগার হওয়ার পাশাপাশি তার পরিবারের অন্য সদস্যগণ এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পক্ষান্তরে খাদ্যদ্রব্যে এই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। সাধারণত খাদ্যদ্রব্য দ্বারা পরিবারের সকলেই উপকৃত হয়। অবশ্যই আল্লাহর প্রত্যেকটি বিধানের মধ্যেই হেকমত রয়েছে এবং সেগুলোতে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে যদি তারা তা বুঝতো।
✅ ছয়. ফিতরার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, গরিব-অসহায় মানুষের খাদ্য সংস্থান-যেমনটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ গরিব-অসহায় মানুষ যেন ঈদের দিন অভ্যুক্ত না থেকে যায়। মুসলিমদের জাতীয় উৎসবের দিনে তার বাড়িতে যেন কমপক্ষে কিছু খাবার মজুদ থাকে। সেই খাবার খেয়ে হলেও যেন ঈদের মাঠে যেতে পারে। আমরা জানি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন খেজুর খেয়ে তারপরে ঈদের মাঠে গেছেন। অতএব ওই গরিব মানুষটিও যেন ফিতরার মাধ্যমে প্রাপ্ত খাবার খেয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম-এর এই সুন্নাহটি পালনের সুযোগ পায়। এটি খাদ্য দ্রব্য দ্বারা ফিতরার অন্যতম একটি উপকারিতা।
✅ সাত. ইসলামের বিধি-বিধানগুলো বৈচিত্র্যময়। এই ভিন্নতা ও বৈচিত্র্যময়তার মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন উপকারিতা এবং স্বাদ রয়েছে। তাই দেখা যায়, ইসলাম সম্পদের জাকাতের জন্য অর্থ দেওয়াকে আবশ্যক করেছে। অর্থ ছাড়া অন্য কিছু দেওয়া জায়েজ নেই। যেন মানুষ প্রয়োজন অনুযায়ী তা খরচ করতে পারে। পক্ষান্তরে রমজান শেষে মানুষের গুনাহ মোচন এবং গরিব-অসহায় মানুষের খাবার হিসেবে খাদ্যদ্রব্য নির্ধারণ করেছে। এটি ইবাদত গত বৈচিত্রের একটি উদাহরণ। সুতরাং জাকাতের ক্ষেত্রে যেমন খাদ্যদ্রব্য বা অন্য কিছু ক্রয় করে দেওয়া জায়েজ নেই তেমনি ফিতরার ক্ষেত্রে খাদ্যদ্রব্য ছাড়া অন্য কিছু দেওয়া জায়েজ নেই (বিশেষ প্রয়োজন হলে ভিন্ন কথা)।
✅ আট. এক দুঃখজনক নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেম-ওলামাগণ টাকা দ্বারা ফিতরা দেওয়ার ফতোয়া প্রচারের ফলে খাদ্যদ্রব্য দ্বারা যে ফিতরা দেওয়া সুন্নত (যে বিষয়ে কোন দ্বিমত নেই) সাধারণ মানুষ সেটাই ভুলতে বসেছে। যার কারণে বহু মানুষ আদৌ জানে না যে, খাদ্যদ্রব্য দ্বারা ফিতরা দেওয়া যায়। এবং যারা ফিতরা গ্রহণ করে তারাও অধিকাংশই টাকা ছাড়া অন্য কিছু নিতে নারাজ। এভাবেই আমাদের সমাজে জায়েজের ফতোয়া দিয়ে সুন্নতকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এইসব বিবেক প্রসূত ফতোয়ার মাধ্যমে-যা খুবই দুঃখজনক। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন।
সুন্নত পালনার্থে খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা দিন টাকা দিয়ে নয়
প্রশ্ন: যাকাতুল ফিতর (ফিতরা) হিসেবে টাকা দেওয়া সুন্নত না কি খাদ্যদ্রব্য?
উত্তর: হাদিসে ফিতরা হিসেবে খাদ্যদ্রব্য প্রদানের কথাই বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে দিনার-দিরহামের প্রচলন ছিল কিন্তু তারা কখনো খাদ্যদ্রব্য ছাড়া দিনার-দিরহাম বা অন্য কিছু দ্বারা ফিতরা প্রদান করেছেন বলে কোন তথ্য পাওয়া যায় না।
কী কী জিনিস দ্বারা এবং কত পরিমাণ ফিতরা দেওয়া সুন্নত?
এর উত্তর সহীহ হাদিসে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে যার, ফল কথা হল: খেজুর, যব, কিশমিশ, পনীর কিংবা প্রধান খাদ্য দ্রব্য দ্বারা ফিতরা দেওয়া সুন্নত, মূল্য দ্বারা নয়। আর এক জন ব্যক্তিকে এক সা’ ফিতরা দিতে হবে, যার পরিমাণ সাধারণ মানুষের চার পূর্ণ অঞ্জলি সমান। [ফাতাওয়া মাসায়েল, মাওলানা আব্দুল্লাহেল কাফী, পৃষ্ঠা ১৭২-১৭৩] কেজির ওজনে তা আড়াই কিলোর কম নয়।
‘‘আল্লাহর রাসুল যাকাতুল ফিতর স্বরূপ এক সা কিংবা এক সা যব ফরজ করেছেন মুসলিম দাস ও স্বাধীন, পুরুষ ও নারী এবং ছোট ও বড় সবার উপর। আর তা লোকদের নামাজে বের হওয়ার পূর্বে আদায় করে দিতে আদেশ করেছেন”। [বুখারী, অধ্যায়: যাকাত হাদিস নম্বর ১৫০৩/ মুসলিম নম্বর ২২৭৫]
كُنَّا نُخْرِجُ زَكَاةَ الفِطْرِ صَاعًا مِن طَعَامٍ، أوْ صَاعًا مِن شَعِيرٍ، أوْ صَاعًا مِن تَمْرٍ، أوْ صَاعًا مِن أقِطٍ، أوْ صَاعًا مِن زَبِيبٍ
‘‘আমরা-নবীজীর যুগে যাকাতুল ফিতর বের করতাম এক সা খাদ্য দ্রব্য কিংবা এক সা যব কিংবা এক সা খেজুর কিংবা এক সা পনীর কিংবা এক সা কিশমিশ।’’ [বুখারী- ১৫০৬ মুসলিম-২২৮১]
এই হাদিসে খেজুর ও যব ছাড়া আরও যে কয়েকটি বস্তুর নাম পাওয়া গেল তা হল, কিশমিশ, পনীর এবং খাদ্য দ্রব্য।
উল্লেখ থাকে যে, নবীজীর মৃত্যুর পর মুয়াবিয়া রা.এর খেলাফত কালে অনেকে গম দ্বারা ফিতরা দিতেন। [বুখারী হাদিস নম্বর ১৫০৮ মুসলিম ২২৮১] তাই আমরা যদি সুন্নত অনুসরণ করতে চাই তাহলে আমাদের সমাজের প্রচলিত প্রধান খাদ্য দ্রব্য তথা চাল দ্বারা ফিতরা দেওয়া কর্তব্য। ফিতরার মুল্য দ্বারা অথবা সে টাকা দিয়ে পোশাক, গোশত, চিনি, তেল, ডাল, মসলা, শেমাই ইত্যাদি কিনে দেওয়া সুন্নত পরিপন্থী।
তবে একান্ত জরুরি অবস্থায় টাকা দ্বারা ফিতরা দেওয়া যেতে পারে বলে, অনেক আলেম মন্তব্য করেছেন। যেমন: রোগীর চিকিৎসার জন্য জন্য এই মুর্হতে টাকা প্রয়োজন। চাল দিলে সেটা বিক্রয় করে টাকা সংগ্রহ করতে গেলে রোগীর সমস্যা বেড়ে যেতে পারে…বা এ জাতীয় পরিস্থিতে ফিতরার মূল্য দিলেও আদায় হয়ে যাবে। কারণ এখানে বিশেষ পরিস্থিতে মুল্য দ্বারা ফিতরা প্রদান করা হয়েছে। এটা ব্যতিক্রমি পরিস্থিতি।
প্রবাসীরা কি তাদের ফিতরা দেশে দিতে পারবে এবং দিতে পারলে কীভাবে দিবে
উত্তর: প্রবাসীরা যদি প্রবাসে দুস্থ ও অসহায় মানুষ পায় তাহলে সেখানে ফিতরা দিবে। এটাই উত্তম। একজন মানুষ যেখানে বসবাস করে এবং আয়-উপার্জন করে সেখানকার গরিব-অসহায় মানুষরা ফিতরা পাওয়ার বেশি হকদার। কিন্তু যদি মনে হয়, সে দেশের চেয়ে নিজ দেশে বা অন্য কোথাও সঙ্কট ও অভাব-অনটন বেশি তাহলে সেখানে ফিতরা প্রেরণ করা যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রবাসে যে পরিমাণ ফিতরা দিতে হতো অন্যত্র দিলে সে পরিমাণটা ঠিক রাখা উত্তম। (তবে তা যেন আড়াই বা তিন কেজির কম না হয়)।
◆ উদাহরণ: যে সব বাংলাদেশী মধ্যপ্রাচ্য বা ইউরোপ-আমেরিকায় বসবাস করে তারা সে দেশে সাধারণত: যে মানের চাল খেয়ে থাকে সে মানের আড়াই বা তিন কেজি পরিমাণ চালের মূল্য বাংলাদেশে প্রেরণ করে সেখানে তার পরিবার অথবা অন্য বিশ্বস্ত কাউকে দায়িত্ব দিবে যেন, উক্ত অর্থ সমপরিমাণ চাল ক্রয় করে এলাকার গরিব-অসহায় মানুষের মাঝে বণ্টন করে দেয়। এ ক্ষেত্রে বিদেশের তুলনায় বাংলাদেশে চালের দাম তুলনা মূলক কম হওয়ায় চালের পরিমাণে হয়ত কিছু বেশি হবে। এতে গরিবরা একটু বেশি উপকৃত হবে আশা করা যায়। যদিও দেশের হিসেবে তিন কেজি দিলেও আদায় হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য যে, হাদিসে যেহেতু খাদ্য দ্রব্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে তাই সুন্নত অনুসরণ করতে চাইলে খাদ্য দ্রব্য (নিজ এলাকার প্রধান খাদ্যদ্রব্য যেমন: চাল) দিতে হবে। একান্ত অপরিহার্য পরিস্থিতি না হলে মূল্য বা টাকা দ্বারা ফিতরা দেয়া সুন্নত পরিপন্থী।
✪ সৌদি আরবের স্থায়ীয় ফতোয়া বোর্ড বলেছে:
চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণকে কেন্দ্র করে প্রচলিত কুসংস্কার এবং আমাদের করণীয়
প্রশ্ন: আমাদের সমাজে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী মাকে অনেক নিয়ম পালন করতে বলা হয় এবং অনেক কিছুতে বাধা দেয়া হয়। অন্যথায় গর্ভস্থ সন্তানের নাকি ক্ষতি হয়। এ বিষয়টি কুরআন-হাদিসের আলোকে কতটুকু সঠিক? এবং চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ কালে আমাদের কী করা উচিত?
উত্তর: নি:সন্দেহে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ মহান আল্লাহর সৃষ্টি জগত ও মহাবিশ্বের মধ্যে দুটি বিশাল প্রাকৃতিক পরিবর্তন-যা মহান আল্লাহর অসীম শক্তিমত্তার পরিচয় বহন করে। বিজ্ঞান বলে, চাঁদ যখন পরিভ্রমণ অবস্থায় কিছুক্ষণের জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে কিছু সময়ের জন্য সূর্য আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়। এটাই সূর্যগ্রহণ (Solar eclipse) বা কুসুফ। আর পৃথিবী যখন তার পরিভ্রমণ অবস্থায় চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখনই পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে চাঁদ কিছুক্ষণের জন্য অদৃশ্য হয়ে যায়। এটাই চন্দ্রগ্রহণ (Lunar eclipse) বা খুসুফ।
🌀 সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের সময় করণীয়:
🌀 সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণকে কেন্দ্র করে সমাজে প্রচলিত নানা কুসংস্কার:
যাকাত বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর
◆ ১. প্রশ্ন: আমার যদি ১০ ভরি স্বর্ণ থাকে তাহলে আমি কি ৭.৫ ভরি (নিসাব) বাদ দিয়ে বাকি ২.৫ ভরির জাকাত দিবো নাকি পুরো ১০ ভরির জাকাত দিবো?
উত্তর: পুরো ১০ ভরি স্বর্ণের জাকাত দিবেন। কেননা কারও কাছে জাকাতের নিসাব পরিমাণ অর্থ এক বছর জমা থাকলে পুরো নিসাব থেকে শত করা আড়াই (২.৫%) টাকা হারে জাকাত দিতে হয়।
ঈদের রাতের ফজিলত এবং এই রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করার বিধান
প্রশ্ন: ঈদের রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করার ব্যাপারে ইসলামে কী দিকনির্দেশনা রয়েছে বা এ রাতের ফজিলত কী?
উত্তর: ঈদ মানেই প্রাণে প্রাণে আনন্দের হিল্লোল। ঈদ মানেই ঘরে ঘরে খুশির আমেজ। ঈদের আগমনে মুমিন হৃদয়গুলো আনন্দে উদ্বেলিত হয়। ঈমানদারগণ আল্লাহর প্রতি প্রফুল্ল চিত্তে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং তাকবির ধ্বনির মাধ্যমে তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্বের ঘোষণা দেয়। বিশেষ করে ঈদের রাত থেকেই শুরু হয় আগামীকাল একটি সুন্দর সকালে ঈদকে বরণ করার প্রস্তুতি। কিন্তু ঈদের রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করার ব্যাপারে কোন হাদিস বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয়। বরং এই রাতে বিশেষভাবে কিয়ামুল লাইল করা সংক্রান্ত বর্ণিত হাদিসকে অনেক আলেম বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলেছেন। অনুরূপভাবে দুই ঈদের রাতে দুআ কবুল হওয়া প্রসঙ্গে বর্ণিত হাদিসটিও বানোয়াট।
তাই এ রাতে তাকবির পাঠ ছাড়া বিশেষ কোনও নামাজ, ইবাদত-বন্দেগি বা অন্য কোনও আমল নেই। তবে যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ সালাতে অভ্যস্ত তারা যথারীতি তা পড়তে পারে।
শাইখ উসাইমিন রহ. বলেন, “দু ঈদের রাত জেগে ইবাদত করার ফজিলতের হাদিসগুলো জঈফ (দুর্বল)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো এ দু রাত জেগে ইবাদত করতেন না। তিনি সারা রাত জেগে ইবাদত করেছেন কেবল রমজানের শেষ দশকের রাতগুলোতে-লাইলাতুল কদর (শবে কদর) পাওয়ার আশায়। যখনই শেষ দশক শুরু হত, তিনি সবগুলো রাত জেগে ইবাদত করতেন।”
◍ ঈদের রাতের ফজিলতে বর্ণিত একটি প্রসিদ্ধ জাল/জঈফ বর্ণনা:
এ হাদিসটি সহিহ নয়।
● নওবী রহ. এ হাদিসটিকে মারফু ও মাওকুফ উভয় সূত্রে জইফ বলেছেন।
ঈদুল ফিতরের রাতের ফজিলত এবং এ রাতে করণীয়
প্রশ্ন: ঈদুল ফিতরের রাতে করণীয় এবং এ রাত জেগে নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি করার ফজিলত কি?
উত্তর: ঈদের চাঁদ (শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ) উদিত হলে রমজানের পরিসমাপ্তি ঘটে। এ রাত থেকে আর তারাববির সালাত নেই। সুতরাং যথারীতি রমজানের আগে যে সব সালাত ছিল সেগুলো আদায় করতে হবে। ইশার সালাত আদায় করা হবে সুন্নত ও বিতর সহ। এটাই হল, ঈদের রাত। পরের দিন প্রত্যুষে মুসলিমগণ (যদি ইতোপূর্বে ফিতরা বণ্টন না করা হয়ে থাকে তাহলে) গরিব-দুখীদের মাঝে ফিতরা বণ্টন প্রক্রিয়া সমাপ্ত করে গোসল করে এবং আতর-সুগন্ধি মেখে ঈদের মাঠে যাবে ঈদের সালাতের উদ্দেশ্যে।
◍ ঈদের রাতে করণীয়: তাকবীর পাঠ
◍ তাকবীর হল: “আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার, লা-ইলা-হা ইল্লালা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার ওয়ালিল্লা-হিল হামদ।” (প্রথমে আল্লাহু আকবার তিন বার বলাও হাদিস সম্মত) শেষ রমজানের সূর্য ডোবার পর তথা ঈদের রাত থেকে আরম্ভ করে ঈদের নামাজ শুরু করা পর্যন্ত এ তাকবির পাঠ অব্যাহত থাকবে।
◍ ঈদের রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করা:
এ রাতে তাকবির পাঠ ছাড়া বিশেষ কোনও নামাজ, ইবাদত-বন্দেগি বা অন্য কোনও আমল নেই। এ ব্যাপারে কোনও সহিহ হাদিস সাব্যস্ত হয় নি। তবে যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ সালাতে অভ্যস্ত তারা যথারীতি তা পড়তে পারে।
শাইখ উসাইমিন রহ. বলেন, “দু ঈদের রাত জেগে ইবাদত করার ফজিলতের হাদিসগুলো জঈফ (দুর্বল)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো এ দু রাত জেগে ইবাদত করতেন না। তিনি সারা রাত জেগে ইবাদত করেছেন কেবল রমজানের শেষ দশকের রাতগুলোতে-লাইলাতুল কদর (শবে কদর) পাওয়ার আশায়। যখনই শেষ দশক শুরু হত, তিনি সবগুলো রাত জেগে ইবাদত করতেন।”
◍ ঈদের রাতের ফজিলতে বর্ণিত একটি প্রসিদ্ধ জাল/জঈফ বর্ণনা:
এ হাদিসটি সহিহ নয়।
ঈদের সালাত কোথায় আদায় করা সুন্নত মসজিদে নাকি ঈদগাহে এবং ঈদের পূর্বে দু রাকআত সালাত প্রসঙ্গ
প্রশ্ন: ঈদের সালাত কোথায় পড়া রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত? মসজিদে না কি ঈদগাহে? আর হাদিসে এসেছে, ঈদের সালাতের আগে ও পরে আর কোন সালাত নেই। কিন্তু যদি মসজিদে ঈদের সালাত আদায় করা হয় তাহলে কি বসার আগে দু রাকআত তাহিয়াতুল মসজিদ পড়া যাবে?
❑ ঈদগাহে ঈদের সালাত পড়ার উপকারিতা কি?
◍ ৪. হাদিসে মহিলাদেরকেও ঈদের মাঠে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে-এমনকি ঋতুমতী মহিলাদেরকেও। অবশ্য ঋতুমতী মহিলাদের সালাত না থাকার কারণে তারা মূল সালাতের স্থান থেকে দূরে অবস্থান করলেও তারা মুসলিমদের দুআ ও কল্যাণকর কাজে শরিক হওয়ার সুযোগ পাবে। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
❑ ঈদের সালাতের পূর্বে কোনও সালাত নেই:
❑ মসজিদে ঈদের সালাত আদায় করা হলে দু রাকআত দুখুলুল মসিজদ/তাহিয়াতুল মসজিদ পড়ার বৈধতা:
ঈদের শুভেচ্ছায় ব্যবহৃত বাক্য এবং ঈদ মোবারক বলার বিধান ও সংশয় নিরসন
উত্তর: মুসলিমদের জাতীয় জীবনে অনাবিল আনন্দের বার্তাবাহী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল ঈদ। ঈদ আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা ও কৃতজ্ঞতার মাধ্যম। মানব জীবনের একঘেয়েমি কাটিয়ে নতুন ভাবে পথ চলার অনুপ্রেরণা। দূরকে কাছে করার এবং সম্পর্কগুলোতে নতুনত্ব দেয়ারে এক চমৎকার সুযোগ। এ ক্ষেত্রে ছোট একটি শুভেচ্ছা বার্তা, একটি বাক্য বা মেসেজই বিরাট ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে এ জন্য কোন বাক্যটি ব্যবহার করা উচিৎ আর কোনটি উচিৎ নয়-এ বিষয়ে আমাদের অনেকেরই মাঝে একটা দ্বিধা বা সংশয় কাজ করে। তাই বিষয়টি পরিষ্কার উদ্দেশ্যে এ সংক্ষিপ্ত আলোচনাটি তুলে ধরা হল:
❒ ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর বিধান কি এবং শরিয়তে তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
সুতরাং ঈদের দিন একে অপরকে এভাবে দুআ ও শুভেচ্ছা জানানো জায়েজ। তবে তা শরিয়তের আবশ্য পালনীয় ও ইবাদতের কোন বিষয় নয়। এটি সওয়াব ও ইবাদতের বিষয় হলে অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে যেতেন। তখন তা পালন করা উম্মতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াত এবং হাদিসে ব্যবহৃত শব্দ ছাড়া অন্য শব্দ ব্যবহারে আপত্তি আসতো। যেমন: মুসলিমদের পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যম সালামের গুরুত্ব এবং সালামে ব্যবহৃত বাক্যাবালী সম্পর্কে বহু সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সে কারণে সালাম দেয়া যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও সওয়াবের কাজ তেমনি সালামের জন্য হাদিসের বাক্য বাদ দিয়ে নতুন কোন বাক্য প্রবর্তন করা জায়েজ নয়।
মোটকথা, ঈদ উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করা ইসলামে জায়েজ হলেও এ ব্যাপারে বিশেষ কোনো নির্দেশনা বা বিশেষ কোন বাক্য ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা আসেনি। তবে কেউ যদি সালাফদের অনুসরণে ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম বলে তাহলে নি:সন্দেহে ভালো।
জ্ঞাতব্য, এ দুআটি কেবল ঈদের সাথেই সম্পৃক্ত নয় বরং হজ্জ, উমরা ইত্যাদি যে কোন নেক আমল করার পর তা বলা জায়েজ।
❒ ‘ঈদ মোবারক’ বা ‘ঈদের শুভেচ্ছা/কনগ্রাচুলেশন’ ইত্যাদি বলা কি বিদআত বা গুনাহের?
তিনি আরও বলেন,
ঈদের সালাতের আগে বা পরে ঈদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের বিধান
প্রশ্ন: “ঈদ না আসতেই ঈদের শুভেচ্ছা জানানো সালাফদের নীতি নয়।” অনেকে এরূপ করা বিদআত বলেছেন। কথাটির সত্যতা কতটুকু?