প্রশ্ন: সালাতের মাকরূহ কাজগুলো কী কী? এতে কি সালাত ভঙ্গ হয়ে যায়?
Thursday, June 16, 2022
সালাতের মাকরূহ বা অপছন্দীয় কাজ সমূহ
খিটখিটে মেজাজ সমাধানে কিছু পরামর্শ
প্রশ্ন: আমার মেজাজ সব সময় অনেক খিটখিটে হয়ে থাকে। সব সময় কেমন জানি রাগ উঠেই থাকে। আমি অনেক চেষ্টা করি তবুও কন্ট্রোল করতে পারি না। মেজাজ খারাপ হয়ে থাকে সব সময়। আমি কী করলে আমার খিটখিটে মেজাজ ভালো হবে? প্লিজ দয়া করে উত্তর টা দিবেন।
যদি শারীরিক রোগ-ব্যাধির কারণে এমনটি ঘটে তাহলে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আর যদি কোন কারণে অতিরিক্ত মানসিক চাপ অনুভব করেন বা মানসিক অশান্তিতে থাকেন তাহলে তা চিহ্নিত করে তা থেকে মুক্তি লাভের উপায় খুঁজতে হবে। বিশেষ কোনও সমস্যা থাকলে তা দূর করার চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে এই ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার এবং মানসিক প্রশান্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
❑ খিটখিটে মেজাজ মুহূর্তেই ভালো করবে চার খাবার:
◍ চকলেট:
চকলেটে ফিনাইলিথ্যালাইমিনের বেশ কয়েকটি কার্যকর মিশ্রণ রয়েছে যা এন্ডোরফিন এবং আনন্ডামাইডকে বাড়ায়। চকলেট সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণা দেখায় যে, এটি মেজাজ এবং জ্ঞানকে উন্নত করতে পারে, পাশাপাশি এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস।
◍ বাদাম:
আখরোট, চিনা বাদাম, পেস্তা, কিসমিসের আশ্চর্যজনক পুষ্টিমান রয়েছে। এগুলো অবশ্যই আপনার খাবারের তালিকায় যুক্ত করা উচিত। এগুলো ফাইবার, প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটে পূর্ণ সুপার হেলথ খাবার।কাজু বাদাম এবং অন্যান্য বাদাম অল্প করে খান যাতে আপনার কার্ব এবং ক্যালোরি স্তর ঠিক থাকে। সকাল ১১টার দিকে একমুঠো মিশ্র বাদাম খাওয়ার চেষ্টা করুন। এটি স্বাস্থ্যকর নাস্তা। বাদামে আপনার মেজাজ, ত্বক এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের দীর্ঘমেয়াদী সুবিধার জন্য ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে।
◍ ডিম:
আমরা সবাই বিভিন্ন পদ্ধতিতে রান্না করা ডিম খেতে পছন্দ করি। সুসংবাদ হল; ডিম খেলে আপনার মেজাজ ভালো থাকবে। ডিমে প্রোটিন, ভিটামিন ডি, বি ১২ বেশি থাকে এবং কোলিনযুক্ত থাকে, এটি এমন একটি পুষ্টি যা স্নায়ুতন্ত্রকে সমর্থন করে। যা আপনার মেজাজ ভালো রাখতে কাজ করে। এছাড়াও ডিম খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু এবং এটি খাওয়ার অনেক পদ্ধতি রয়েছে।
◍ অ্যাভোকাডো এবং বেল পেপার (ক্যাপসিকাম):
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
সহবাসের সময় আজান হলে কী করণীয়?
প্রশ্ন: সহবাসের সময় আজান হলে কী করণীয়?
কবর জিয়ারত করতে গিয়ে দু হাত উত্তোলন করে দুআ করার বিধান
প্রশ্ন: কবর জিয়ারত করতে গিয়ে কি দু হাত উত্তোলন করে দুআ করার বিধান কি?
إن رفع يديه فلا بأس؛ لما ثبت عن النبي ﷺ في حديث عائشة رضي الله عنها: أنه ﷺ زار القبور ورفع يديه ودعا لأهلها رواه مسلم
“কবরের নিকট সম্মিলিত দুআ করার কোনও ভিত্তি নাই।” মৃতকে কবরের দাফন করার পরপর দুআ করার ক্ষেত্রেও তিনি বলেন, “প্রত্যেকেই নিজে নিজে দুআ করবে। প্রত্যেকই বলবে, হে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দাও, তার প্রতি দয়া করো, তাকে (কবরে ফেরেশতাদের প্রশ্নের) সঠিক উত্তর দেওয়ার শক্তি দাও এবং তাতে সুদৃঢ় রাখো ইত্যাদি।” [শাইখের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট]
পরিবারে থাকলে যদি ঈমানে সমস্যা মনে হয় তাহলে কি করব?
প্রশ্ন: গত ২ মাস ধরে অনেক ধরনের প্রশ্ন মাথায় এসেছে। সবচেয়ে বড় কিছু প্রশ্ন হল মেয়েদের পড়াশুনা নিয়ে, খাবার দাবার, ওষুধপত্র ইত্যাদির ক্ষেত্রে শিরক নিয়ে আর পাক পবিত্রতা নিয়ে। আর হালাল হারাম খাদ্য নিয়েও প্রশ্ন আছে। আমার পরিবারের সদস্যদের ইসলামের জ্ঞান কম। পাক নাপাকি বিষয়ে সচেতন না আবার অজান্তে কুফরিও করে।তাদের সাথে থাকতে গেলে ইমানে সমস্যা মনে হতে থাকে। তাদেরকে যে বুঝাবো সে কথা তারা মানবে কিনা তাও জানি না। এমতাবস্থায় নামাজও পড়তে পারছি না। তাদের কাছে হয়ত মনে হয় আমি বাড়াবাড়ি করি। একজন বলে যে
এই ১৪ বছর বয়সেই পাক নাপাকির মাসায়ালা জানার দরকার নেই।কিন্তু আমি অনেক নিশ্চিত যে নাপাক আছে আমাদের ঘরে। কিন্তু আমি স্টুডেন্ট হওয়ায় তারা আমাকে কাজও করতে দেয় না। দুনিয়ার সাফল্যের জন্য শুধু পড়াশুনাটাই কি প্রধান কাজ?
এই অবস্থায় কি করব একটা পরামর্শ চাচ্ছি। আর কম কথা বলি তাদের সাথে, তাই ইসলাম বিষয়ক কোন কথা শুনতে চাবে কিনা জানিনা। এখন কি করব? তাদের কে ধীরে সুস্থে বুঝাতে গেলে তো কুফরের সম্ভাবনা থেকে যায়। আবার না বুঝালে যে সবসময়েই সমস্যা? এখন কি বাসা ছেড়ে দিব আমি? কিন্তু আমি যে মেয়ে।
উত্তর: আসসালামু আলাইকুম।
১) এগুলো সবই হচ্ছে আপনার কুধারণা। আপনার মধ্যে ওয়াসওয়াসা কাজ করছে। আমাদের জানামতে অনেকের মধ্যেই এ ধরনের খুঁত খুঁত ভাব থাকে। এমনি এমনি পাক-নাপাক নিয়ে ধারণা করতে থাকে। এমনি মনে করে এই বুঝি নাপাকী লেগে গেল, নাপাক হয়ে গেল। না, নাপাকী যতক্ষণ পর্যন্ত স্পষ্ট না দেখবেন ততক্ষণ পর্যন্ত নাপাক হয় না। সুধু যেকোনো জিনিসকে নাপাক বলে দেওয়া তারপর কথা বলতে এইগুলো কুফর। এগুলো সব ওয়াসওয়াসা। কথা বলতে কুফর হবে কেন? শুধু যে কথা বললেই কুফর হয়ে যাবে অথবা কাজের বুয়াকে দিয়ে কাপড় ধুয়ালে কাপড় নাপাক হয়ে যাবে এগুলো আপনার মধ্যে ওয়াসওয়াসা কাজ করছে। এই ওয়াসওয়াসাকে দূর করতে হবে। স্পষ্ট যদি নাপাকী না লাগে তাহলে যে ব্যক্তিই কাপড় ধোয় না কেন নাপাকী লাগার সম্ভাবনা নাই ইন শাহ্ আল্লাহ।
২) ধীরে সুস্থে বোঝাতে গেলে কুফর হবে কেন। এটাও আপনার একটা কুধারণা। আপনার ভিতরে ওয়াসওয়াসা কাজ করতেছে, কুমন্ত্রণা কাজ করতেছে, সন্দেহ কাজ করতেছে। মনের মধ্যে থেকে সন্দেহ দূর করতে হবে, কুমন্ত্রণা দূর করতে হবে, ওয়াসওয়াসা দূর করতে হবে। কথা বললেই কুফর হয় এটা ঠিক নয়, মিশতে গেলেই কুফর হয় এটা ঠিক নয়। কম কথা বলেন ঠিক আছে। কিন্তু মানুষকে সত্য কথা বলতে হবে, ভালো কথা বলতে হবে। কিন্তু কারো সাথে কথা বললেই কুফর হয়ে যাবে। এটা আপনার ওয়াসওয়াসা। সুতরাং মানুষের সাথে মিশতে হবে, তাদের সাথে কথাবার্তা বলতে হবে, তাদেরকে বুঝাতে হবে। আল্লাহ আপনাকে ধৈর্য দান করুন এবং মানুষকে বোঝানোর তৌফিক দান করুন। আমীন।
৩) বাসা ছাড়বেন কেন? এই ভুল আপনি করবেন না। আপনি বাসা ছেড়ে যাবেন কোথায়? বাসাতেই থাকতে হবে। বাসার মানুষের সাথে মিশতে হবে। আপনি সালাত আদায় করবেন, মানুষকে বুঝাবেন। আপনি ইবাদত করবেন, তাদেরকেও বুঝাবেন। কিন্তু বাসা ছেড়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করবেন না।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর দিয়েছেন:
শাইখ সাইফুল ইসলাম মাদানী।
কেউ যদি নারী পুরুষ সমতায় বিশ্বাস করে, এমন মহিলার সাথে স্কুল,কোচিং এ যাওয়া কি সেই মহিলার কুফরি কাজে সাহায্য হবে?
১) আমি যখন বাইরে প্রাইভেট পড়তে যাই, তখন মেয়েরা পড়াশুনা নিয়ে হেল্প চায়, বলে এটা কিভাবে করসিস, আবার আমাকে দেখে বলে তুই অনেক পড়িশ, হয়তবা কেউ কেউ আমাকে দেখে জিদ নিয়ে পড়ে পরীক্ষায় ভাল নাম্বারের জন্য। তারা অজ্ঞতাবশত ফেমিনিজম এ বিশ্বাসী হতে পারে।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে আমার কি তাদেরকে সাহায্য করা উচিত? আর আমাকে দেখে কোন ফেমিনিস্ট আরো উদ্যম নিয়ে পড়লে ( যা আমি জানি না), তাদের এভাবে পরোক্ষভাবে সাহায্য করলে কেমন গুনাহ হবে?
২) কেউ যদি নারী পুরুষ সমতায় বিশ্বাস করে, এমন মহিলার সাথে স্কুল,কোচিং এ যাওয়া কি সেই মহিলার কুফরি কাজে সাহায্য হবে?
উত্তর:
১) পড়ালেখার ব্যাপারে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করতে পারবেন। তবে মেয়ে মেয়েদেরকে সহযোগিতা করবেন এবং ছেলে ছেলেদেরকে সহযোগিতা করবেন। বিপরীত লিঙ্গকে সহযোগিতা করতে গিয়ে যেন ফিতনায় না পড়ে যায় সেদিকে খেয়াল করতে হবে। আর ফেমিনিস্ট এর ব্যাপারে যেহেতু আপনার জানা নাই সেই ক্ষেত্রে চুপ থাকাটাই ভাল। যেই বিষয়ে জানা নাই সেই বিষয়ে চুপ থাকাটাই উত্তম। তবে পড়ালেখার ব্যাপারে কেউ সাহায্য চাইলে তাদেরকে সাহায্য করতে কোন দোষ নাই ইন শাহ্ আল্লাহ।
২) না এমন মহিলার সাথে স্কুল, কোচিং এ যাওয়া তাকে কুফরি কাজে সাহায্য কলার পর্যায়ে পড়বে না। তার কুফরি কথা অনুযায়ী যদি কাউকে বলেন অথবা তা সমর্থন করেন তাহলে তার কুফরি কাজে সাহায্য করা হবে। তবে এধরনের ব্যক্তি থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই ধরনের ব্যক্তিদের থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর দিয়েছেন:
শাইখ সাইফুল ইসলাম মাদানী।
লেখকের লেখা পোস্টে তার নাম উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও সেটা কেটে নিজের মতো করে প্রচার করা
▌প্রশ্ন: লেখকের লেখা পোস্টে তার নাম উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও সেটা কেটে নিজের মতো করে প্রচার করাটা কি ইনসাফ এর মধ্যে পড়ে? আর লেখকের নাম প্রকাশে কি রিয়ার আশঙ্কা রয়েছে?
ইমাম সুয়ূতী বলেন,
من بركة العلم وشكره عزْوُه إلى قائله
‘ইলমের বরকত এবং শুকরিয়া তখন হবে, যখন এটা কোথা থেকে সংকলন করা হয়েছে, তার উৎস পেশ করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, “আব্বাস বিন মুহাম্মাদ আদ দূরী বলেন, “আমি আবু উবাইদকে একথা বলতে শুনেছি, ইলমের শুকরিয়া করা উচিত। তুমি যখন কারো নিকট থেকে উপকৃত হবে, তখন বলবে, আমি এটা জানতাম না, এটা আমার জ্ঞানে ছিল না। এ বিষয়ে উমুক ব্যক্তি বা উমুক কিতাব থেকে এই এই ফায়েদা লাভ করেছি.. এটা হচ্ছে ইলমের শুকরিয়া।” [আল মুযাহহার ২/২৭৩, মাকতাবা শামেলা]
এ ধরণের নিন্দনীয় কাজের ক্ষেত্রে ইমাম আলবানি রহ. নিম্নোক্ত হাদিসটি পেশ করে থাকেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
الْمُتَشَبِّعُ بِمَا لَمْ يُعْطَ كَلَابِسِ ثَوْبَيْ زُورٍ
“মানুষ যে বস্তুর মালিক নয়, তা নিজের বলে প্রকাশ করা, দুটি মিথ্যার চাদর পরিধানকারীর ন্যায়।” (বুখারী ও মুসলিম) [আল কালেমুত তাইয়্যেব- ইবনে তায়মিয়া, তাহকীক আলবানী ভূমিকা, পৃ: ১১]
সুতরাং লেখক এর নাম কেটে নিজের নাম বসিয়ে দেওয়া কিংবা মূল লেখকের নাম সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে লেখা প্রকাশ করার এমন হীন মনোভাব থেকে আমাদের বের হয়ে আসা আবশ্যক।
🔶 ইসলামি লেখার সাথে লেখকের নাম উল্লেখ করা কি রিয়া (প্রদর্শনেচ্ছা)?
রিয়া বিষয়টি নিয়তের উপর নির্ভরশীল। কেউ যদি প্রসিদ্ধি অর্জন, প্রশংসা লাভ বা বাহবা কুড়ানোর নিয়তে এ কাজ করে তাহলে তা রিয়া (প্রদর্শনেচ্ছা) বলে গন্য হবে-যা হারাম বরং ছোট শিরক।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ قَالُوا وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: الرِّيَاءُ، يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِذَا جُزِيَ النَّاسُ بِأَعْمَالِهِمُ اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ كُنْتُمْ تُرَاءُونَ فِي الدُّنْيَا فَانْظُرُوا هَلْ تَجِدُونَ عِنْدَهُمْ جَزَاءً
“তোমাদের উপর সবচেয়ে ভয়ানক যে বিষয়ের আমি আশংকা করছি তা হল শির্ক আসগার (ছোট শির্ক)।’’ তারা বললেনঃ ছোট শির্ক কী হে আল্লাহর রাসূল?
তিনি বললেন, রিয়া। সম্মানিত আল্লাহ যখন মানুষকে তাদের কর্মফল দান করবেন তখন বলবেন, দুনিয়ায় যাদেরকে দেখানোর উদ্দেশ্যে তোমরা আমল করতে তাদের কাছে যাও। দেখ, তাদের কাছে কোন প্রতিদান পাও কি না?’’
[জাইয়েদ (উত্তম) সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ। আরও বর্ণনা করেন, ইমাম বায়হাকি ও ইবনু আবিদ দুনিয়া]
কিন্তু যদি নিজের হক সংরক্ষণ, লেখার দায়-দায়িত্ব গ্রহণ, আমানতদারিতা, মানুষের কাছে লেখার গ্রহণযোগ্যতার উদ্দেশ্যে লেখক নিজের নাম-পরিচয় ইত্যাদি প্রকাশ করে তাহলে তা রিয়ার মধ্যে গণ্য হবে না। বরং অজ্ঞাত ও নাম পরিচয় হীন লেখকের লেখা না পড়াই নিরাপদ। কারণ অনেক বিদআতি ও ভ্রান্ত আকিদার অনুসারী লেখক সুন্দর ও আকর্ষণীয় ভাষায় বিদআত, বাতিল আকিদা ও বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা প্রচার করে থাকে যা সাধারণ মানুষ সহজে ধরতে পারে না। তাই লেখক পরিচিতি থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ-বিশেষ করে দীনী বিষয়ে।
মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (বিখ্যাত তাবিঈ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
إن هذا العلم دين، فانظروا عمن تأخذون دينكم
“নিশ্চয়ই এ ইলম হল, দীন। কাজেই কার কাছ থেকে তোমরা দীন গ্রহণ করছে তা যাচাই করে নাও।”
ইবনু সীরীন রহ. হতে আরও বর্ণিত। তিনি বলেন, “এমন এক সময় ছিল যখন লোকেরা সনদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতো না। কিন্তু পরে যখন ফিতনা দেখা দিল তখন লোকেরা হাদিস বর্ণনাকারীদেরকে বলতো,
سَمُّوا لَنَا رِجَالَكُمْ فَيُنْظَرُ إِلَى أَهْلِ السُّنَّةِ فَيُؤْخَذُ حَدِيثُهُمْ وَيُنْظَرُ إِلَى أَهْلِ الْبِدَعِ فَلاَ يُؤْخَذُ حَدِيثُهُمْ
“তোমরা যাদের নিকট থেকে হাদিস গ্রহণ করেছ, আমাদের কাছে তাদের নাম বল। তারা এ কথা এ কারণে জানতে চাইত, যাতে দেখা যায় তারা আহলে সুন্নাত কিনা? যদি তারা এর অন্তর্ভুক্ত হয় তাহলে তাদের হাদিস গ্রহণযোগ্য হবে। আর যদি দেখা যায় তারা বিদআতি তাহলে তাদের হাদিস গ্রহণ করা হবে না।” [সহীহ মুসলিম এর আল মুকাদ্দামাহ (ভূমিকা)]
এ মর্মে আরও অনেক সতর্কতামূলক বক্তব্য রয়েছে। যদিও এগুলো হাদিস গ্রহণ সম্পর্কে বলা হয়েছে কিন্তু তা মূলত দীনের সামগ্রিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে।
তাছাড়া অনেক সময় লেখকের নাম পরিচয় জানা থাকলে লেখা বিষয়ে তার সাথে যোগাযোগ করা সহজ হয় এবং কোন সংশোধনী বা সংযোজন থাকলে তাকে জানানো যায়। এতে লেখা আর সমৃদ্ধ ও ত্রুটিমুক্ত হয়-যা সকলের জন্য উপকারী।
🔶 অন্যের লেখা কপি করা করার বিধান:
প্রশ্ন: যদি কোনও বইয়ে লেখকের পক্ষ থেকে কপি করার কোনও নিষেধাজ্ঞার কথা লেখা না থাকে অথবা ‘স্বত্ব সংরক্ষিত’ এ ধরণের কোনও লেখা না থাকে,-যা লেখক চাইলে যুক্ত করতে পারতো-তাহলে কি তা কপি করা যাবে?
🔶 বাংলাদেশে কপিরাইট আইন ২০২১ (খসড়া):
ও নদীরে তুই ভাঙ্গলি আমার ঘর
“ও নদীরে তুই ভাঙ্গলি আমার ঘর”
প্রকৃত পক্ষে, এভাবে বাক্য ব্যবহার করা ভাষা সাহিত্যের একটি রীতি। আরবি, বাংলা সহ সব ভাষাতেই এমন রূপক বাক্য ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে।
এ ধরনের ভাষা ব্যবহারকে আরবি সাহিত্যে মাজায বা রূপক বলা হয়।
আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।
হোমিওপ্যাথি ঔষধ ব্যবহারের শরঈ বিধান
প্রশ্ন: হোমিওপ্যাথি মেডিসিন কি হারাম? কারণ এতে সামান্য পরিমাণ অ্যালকোহল মেশানো থাকে।
সুতরাং তা ব্যবহারে কোন দোষ নেই ইনশাআল্লাহ। বিশেষ করে যখন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নির্দেশনা ক্রমে রোগ-ব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য তা ব্যবহার করা জরুরি হয়ে পড়ে।
অ্যালকোহল তখনই হারাম হবে যখন তা মানুষের মস্তিষ্কের বিকৃতি সাধন করে। বিশেষজ্ঞগণ বলেন, সামান্য পরিমাণ অ্যালকোহল (৫%) যদি পানি বা ঔষধে মেশানো হয় তাহলে তার কোনো প্রভাব অবশিষ্ট থাকে না। আর মদ হারাম হওয়ার মূল কারণ হলো, মস্তিষ্কের বিকৃতি সাধন। যখন এই কারণটিই অনুপস্থিত থাকবে তখন তার উপর মদের বিধান প্রযোজ্য হবে না।
তবে সংশয় থেকে বাঁচতে এর বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা সহজলভ্য হলে তা ব্যবহার না করাই ভালো।
উল্লেখ্য যে, বর্তমান যুগে অ্যালকোহলমুক্ত ওষুধ পাওয়া এক কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশ্চাত্য দেশগুলোর প্রায় সব ওষুধেই অ্যালকোহল মেশানো হয়। কিন্তু বিষয়টি কেবল পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ওষুধের সঙ্গে অ্যালকোহল মেশানোর এ সমস্যা আজ প্রায় ইসলামি দুনিয়ার সব দেশেই বিদ্যমান।”
কনে দেখতে গিয়ে বরের পক্ষ থেকে তাকে কিছু টাকা বা উপহার সামগ্রী দেওয়ার বিধান
প্রশ্ন: বিয়ের উদ্দেশ্যে কনে দেখতে গেলে তাকে হাদিয়া/উপহার হিসেবে কিছু টাকা বা কোনও উপহার সামগ্রী দেওয়া কি জায়েজ?
▪️ইসলামে উপহার লেনদেন করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। এতে পারস্পারিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতি সৃষ্টি হয়। এটি উত্তম চরিত্রের বহিঃপ্রকাশও বটে।
বিয়ের পূর্বে কনেকে উপহার দেওয়ার ব্যাপারে পূর্ববর্তী ফিকহগণ বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। কিন্তু তারা কেউ হারাম বলেছেন বলে জানা নাই।
▪️আমাদের সমাজে পাত্রী দেখতে গেলে পাত্রীর হাতে কিছু টাকা বা কোনও উপহার সামগ্রী দেওয়ার প্রথা চালু থাকার একটা কারণ হতে পারে যে, মানুষ যখন কোন মেয়েকে বিয়ের উদ্দেশ্যে দেখতে যায় তখন মেয়ে পক্ষ সাধারণত: তাদের কিছু আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে। সে ক্ষেত্রে তাদের বেশ কিছু খরচ হয়। কিন্তু যেহেতু এখনো তাদের মাঝে বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়তার বন্ধন সৃষ্টি হয় নি তাই খাওয়া-দাওয়ার পর বর পক্ষ মেয়ের হাতে কিছু নগদ অর্থ দিয়ে থাকে। এটা আমাদের দেশের একটা সামাজিক রীতি। এতে দোষের কিছু নেই। কারণ যদি তারা খেয়েদেয়ে হাত ধুয়ে ফিরে চলে আসে-মেয়ে পক্ষকে কিছু টাকা-পয়সা না দেয়- তাহলে এটা অভদ্রতা বা অসামাজিকতা হিসেবে গণ্য হয়।
কখন “ইয়া রাসূলাল্লাহ” বলা শিরক আর কখন জায়েজ?
প্রশ্ন: `ইয়া রাসুলুল্লাহ’ (হে আল্লাহর রাসূল) বলা জায়েজ কি?
◈ রাসূল ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’কে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা জায়েজ হবে কি?
এ বাক্যটি কখনো কখনো বলা শিরক আর কখনো জায়েজ। নিম্নে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হল:
◍ যখন ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ বলা শিরক:
❑ ডাকতে হবে কেবল আল্লাহকে; কোনও নবী-রাসূল, ওলি-আউলিয়া, পীর-বুজুর্গ, জিন বা ফেরেশতাকে নয়:
এ সকল আয়াও হাদিস থেকে প্রমাণিত হল যে, বিপদাপদে সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে একমাত্র আল্লাহকেই ডাকতে হবে। কোনও মৃত ব্যক্তি, নবী, ওলি, ফেরেশতা, জিন বা কোনও অদৃশ্য শক্তি ইত্যাদিকে ডাকা যাবে না। অন্যথায় তা বড় শিরকে পরিণত হবে। আর শিরক হল, আল্লাহর নিকট ক্ষমাহীন ইমান বিধ্বংসী সবচেয়ে বড় অপরাধ। কেউ জেনে বুঝে তাতে লিপ্ত হলে, তার জীবনের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে, তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত এবং জান্নাত চিরকালের জন্য হারাম হয়ে যাবে। (আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমিন।)
◈ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়া থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করার পর কোনও বিপদাপদে বা সমস্যা-সংকটে সাহাবি বা তাবেয়িগন কখনও “ইয়া রাসূলাল্লাহ” (হে আল্লাহর রাসূল) বা “ইয়া নাবিয়াল্লাহ”(হে আল্লাহর নবী) বলে সম্বোধন করে তার নিকট সাহায্যের আবেদন করেছেন বলে প্রমাণিত হয় নি।
❑ কখন কখন ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ বলা জায়েজ?
নিম্নোক্ত ক্ষেত্র সমূহে “ইয়া রাসুলাল্লাহ” বলা দূষণীয় নয়। যেমন:
খ. হাদিসের ইবারতে এ বাক্যটি থাকলে তা পাঠ করতে কোনও আপত্তি নাই। কারণ বহু হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সাহাবিগণ ইয়া রাসূলাল্লাহ (হে আল্লাহর রাসূল) বলে সম্বোধন করতেন।
গ. মদিনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের সন্নিকটে উপস্থিতি হয়ে তার উপর প্রতি সালাত-সালাম পেশ করার সময়।
শেষ জামানা এবং সে সময় সুন্নত আঁকড়ে ধরার অতুলনীয় মর্যাদা
প্রশ্ন: আমরা কি শেষ জামানায় আছি? আমরা কি এখন একটা সুন্নাত পালন করলে ৫০ জন সাহাবির সমপরিমাণ সাওয়াব পাব?
এ ক্ষেত্রে বিখ্যাত হাদিসে জিবরিলও উল্লেখযোগ্য।
🟢 শেষ জামানায় সুন্নত আঁকড়ে ধরার অপরিসীম মর্যাদা:
নিঃসন্দেহে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা তথা তাঁর নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা, ফরজ ও ওয়াজিবগুলো সঠিকভাবে পালনের পাশাপাশি, সুন্নত ও নফল ইবাদতগুলো যথাসম্ভব সম্পাদন করা এবং হারাম ও বিদাআতি আচার-বিশ্বাস থেকে দূরে থাকা। সেই সাথে তা প্রচার-প্রসার করা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কাজ। হাদিসে এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
▪️যেমন:
সনদ বিশ্লেষণ: