নিম্নোক্ত হাদিসটি আমাদের দেশে খুবই প্রসিদ্ধ:
যাহোক, নিম্নে এ হাদিসটির গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণের অভিমত ও বিশ্লেষণ তুলে ধরা হল:
নিম্নোক্ত হাদিসটি আমাদের দেশে খুবই প্রসিদ্ধ:
যাহোক, নিম্নে এ হাদিসটির গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণের অভিমত ও বিশ্লেষণ তুলে ধরা হল:
প্রশ্ন: সালাবা নামক এক সাহাবির কথা শুনা যায়, যিনি এক মহিলাকে গোসল রত অবস্থায় দেখেছিলেন। অতঃপর, তিনি গুনাহের ভয়ে কান্না করতে করতে পাহাড়ে চলে গিয়েছিলেন। এই কাহিনীটা কি সত্য?
উত্তর: সাহাবি সালাবা বিন আব্দুর রহমান আল আনসারি রা. কোনও এক গোসল রত নারীকে দেখে ফেলার কারণে কাঁদতে কাঁদতে পাহাড়ে চলে যাওয়া বিষয়ে একটি ঘটনা ফেসবুকে যথেষ্ট ভাইরাল। ঘটনার আগে-পরে জোড়-তালি লাগিয়ে এবং রং মাখিয়ে একেকজন একেকভাবে পোস্ট করছে। এ হাদিসটি মূলত: বর্ণিত হয়েছে, হিলয়াতুল আওয়ালিয়া [৯/৩২৯-৩৩১] এবং মারিফাতুস সাহাবা [১/৪৯৮] ইত্যাদি গ্রন্থে।
কিন্তু বাস্তবতা হল, বিজ্ঞ হাদিছ বিশারদগণের দৃষ্টিতে এটি موضوع বা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন ঘটনা। কারও মতে জইফ।
ইবনুল জাওযী রাহ. এ কাহিনীটিকে তার বিখ্যাত বানোয়াট হাদিস সংকলন আল মাউযুআত الموضوعات [৩/১২১] এবং সুয়ুতী রাহ. তার “আল লাআলি আল মাসনুয়া” اللآلئ المصنوعة في الأحاديث الموضوعة গ্রন্থে ‘বানোয়াট হাদিস’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
মুহাদ্দিস ইবনে ইরাক আল কিনানি এটিকে জইফ/দুর্বল বলেছেন। [দ্রষ্টব্য: তানযিহুশ শরিয়াহ ২/২৮৩]
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে যে সকল ভূমিকম্প দেখা যায়, নি:সন্দেহে তা আল্লাহর এক প্রকার নিদর্শন। তিনি এর মাধ্যমে বান্দাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করতে চান। যেমন: তিনি বলেন,
وَمَا نُرْسِلُ بِالْآيَاتِ إِلا تَخْوِيفًا
وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ
مَا أَصَابَكَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللَّهِ وَمَا أَصَابَكَ مِنْ سَيِّئَةٍ فَمِنْ نَفْسِكَ
فَكُلًّا أَخَذْنَا بِذَنْبِهِ فَمِنْهُمْ مَنْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِ حَاصِبًا وَمِنْهُمْ مَنْ أَخَذَتْهُ الصَّيْحَةُ وَمِنْهُمْ مَنْ خَسَفْنَا بِهِ الْأَرْضَ وَمِنْهُمْ مَنْ أَغْرَقْنَا وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَلَكِنْ كَانُوا أَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ
“শেষ পর্যন্ত প্রত্যেককে আমি তার অপকর্ম ও গুনাহের জন্য পাকড়াও করি। তারপর তাদের কারোর ওপর আমি পাথর বর্ষণকারী বাতাস প্রবাহিত করি এবং কাউকে একটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণ আঘাত হানে। আবার কাউকে আমি ভূমিকম্পের মাধ্যমে ভূমি ধস দিয়ে ভূগর্ভে প্রোথিত করি এবং কাউকে (বন্যা-জলোচ্ছ্বাস-প্লাবন প্রভৃতির মাধ্যমে) পানিতে ডুবিয়ে দিই। আল্লাহ তাদের প্রতি জুলুমকারী ছিলেন না, কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করছিল। [আনকাবুত: ৪০]
وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنْ كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
“যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনতো এবং তাকওয়া অবলম্বন করতো, তাহলে আমি তাদের জন্য আসমান ও জমিনের বরকত সমূহের দুয়ার খুলে দিতাম। কিন্তু তারা তো সত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে। কাজেই তারা যে অপকর্ম করে যাচ্ছিলো তার জন্য আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি।” [আরাফ: ৯৬]
ওমর বিন খাত্তাব রা.-এর যুগে মদিনায় ভূমিকম্প হলে তিনি মানুষকে ওয়াজ-নসিহত করেছিলেন। এতে তিনি বলেছিলেন,
প্রশ্ন: প্রথমে কন্যা সন্তান হওয়া বরকতের কারণ”-এ কথাটি কি সঠিক? ইসলামে কন্যা সন্তানের মর্যাদা কী?
উত্তর: কন্যা সন্তান অত্যন্ত ফজিলত পূর্ণ কিন্তু প্রথমে কন্যা সন্তান হওয়া বরকতের কারণ কথাটি ঠিক নয়। প্রথমে কন্যা সন্তান হওয়া বরকতের কারণ-এ মর্মে কিছু হাদিস পাওয়া যায় কিন্তু সেগুলো একটিও বিশুদ্ধ নয়। বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণ সেগুলোর কোন কোনটিকে জঈফ আর কোন কোনটিকে মউজু বা বানোয়াট হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। ইমাম সাখাবি তার মাকাসেদে হাসানাহ গ্রন্থে, সুয়ুতি কাশফুল খাফা গ্রন্থে এবং আলবানি সিলসিলা যঈফা গ্রন্থে এ সব জাল-জঈফ হাদিস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। সুতরাং আমাদের কর্তব্য, হাদিস যাচায়-বাছায় করা ছাড়া সেগুলো প্রচার না করা। সাবধান!
❑ ইসলামে কন্যা সন্তানের মর্যাদা:
অনেক ভাইকে দেখা যায়, কন্যা সন্তান জন্ম নিলে তারা বেজায় নাখোশ হন। তারা কি ভেবে দেখেছেন তাদের এ মনোভাব কাদের সঙ্গে মিলে যায়? কন্যা সন্তান জন্ম নিলে তাতে রুষ্ট হওয়া মূলত জাহেলি চরিত্রের প্রকাশ, আল্লাহ তাআলা যার সমালোচনা করেছেন পবিত্র কুরআনে।
◈ আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُم بِٱلۡأُنثَىٰ ظَلَّ وَجۡهُهُۥ مُسۡوَدّٗا وَهُوَ كَظِيمٞ – يَتَوَٰرَىٰ مِنَ ٱلۡقَوۡمِ مِن سُوٓءِ مَا بُشِّرَ بِهِۦٓۚ أَيُمۡسِكُهُۥ عَلَىٰ هُونٍ أَمۡ يَدُسُّهُۥ فِي ٱلتُّرَابِۗ أَلَا سَآءَ مَا يَحۡكُمُونَ
“আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়; তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়। আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত। তাকে যে সংবাদ দেয়া হয়েছে, সে দুঃখে সে কওমের থেকে আত্মগোপন করে। অপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দেবে, না মাটিতে পুঁতে ফেলবে? জেনে রেখ, তারা যা ফয়সালা করে, তা কতই না মন্দ!” [সূরা নাহল: ৫৮-৫৯]। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কন্যাদের বড় ভালোবাসতেন। মেয়েরা ছিল তাঁর আদরের দুলালী। আজীবন তিনি কন্যাদের ভালো বেসেছেন এবং কন্যা সন্তান প্রতিপালনে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
◈ আনাস বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ حَتَّى تَبْلُغَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنَا وَهُوَ وَضَمَّ أَصَابِعَهُ»
“যে ব্যক্তি সাবালক হওয়া পর্যন্ত দুটি কন্যার ভার বহন করবে কিয়ামতের দিন আমি আর সে আবির্ভূত হব। একথা বলে তিনি তার হাতের দুই আঙ্গুল একসঙ্গে করে দেখান।” [মুসলিম: ৬৪৬৮]
◈ আয়েশা সিদ্দিকা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
جَاءَتْنِى امْرَأَةٌ وَمَعَهَا ابْنَتَانِ لَهَا فَسَأَلَتْنِى فَلَمْ تَجِدْ عِنْدِى شَيْئًا غَيْرَ تَمْرَةٍ وَاحِدَةٍ فَأَعْطَيْتُهَا إِيَّاهَا فَأَخَذَتْهَا فَقَسَمَتْهَا بَيْنَ ابْنَتَيْهَا وَلَمْ تَأْكُلْ مِنْهَا شَيْئًا ثُمَّ قَامَتْ فَخَرَجَتْ وَابْنَتَاهَا فَدَخَلَ عَلَىَّ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- فَحَدَّثْتُهُ حَدِيثَهَا فَقَالَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم: «مَنِ ابْتُلِىَ مِنَ الْبَنَاتِ بِشَىْءٍ فَأَحْسَنَ إِلَيْهِنَّ كُنَّ لَهُ سِتْرًا مِنَ النَّارِ»
“আমার কাছে এক মহিলা এলো। তার সঙ্গে তার দুই মেয়ে। আমার কাছে সে কিছু প্রার্থনা করল। সে আমার কাছে একটি খেজুর ছাড়া কিছুই দেখতে পেল না। আমি তাকে সেটি দিয়ে দিলাম। সে তা গ্রহণ করল এবং তা দুই টুকরো করে তার দুই মেয়ের মাঝে বণ্টন করে দিল। তা থেকে সে কিছুই খেল না। তারপর সে ও তার মেয়ে দুটি উঠে পড়ল এবং চলে গেল। ইত্যবসরে আমার কাছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন। আমি তাঁর কাছে ওই মহিলার কথা বললাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যাকে কন্যা দিয়ে কোনও কিছুর মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয় আর সে তাদের প্রতি যথাযথ আচরণ করে, তবে তা তার জন্য আগুন থেকে রক্ষাকারী হবে।” [মুসলিম: ৬৮৬২]
কন্যা সন্তান প্রতিপালনে শুধু পিতাকেই নয়; ভাইকেও উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। বোনের কথাও বলা হয়েছে হাদিসে। যেসব ভাই মনে করেন, মেয়ে বা বোনের পেছনে টাকা খরচ করলে ভবিষ্যতের তার কোনও প্রাপ্তি নেই তারা আসলে ভুলের মধ্যে আছেন।
◈ আবু সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا يَكُونُ لِأَحَدٍ ثَلَاثُ بَنَاتٍ، أَوْ ثَلَاثُ أَخَوَاتٍ، أَوْ ابْنَتَانِ، أَوْ أُخْتَانِ، فَيَتَّقِي اللهَ فِيهِنَّ وَيُحْسِنُ إِلَيْهِنَّ إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ»
“কারও যদি তিনটি মেয়ে কিংবা বোন থাকে অথবা দুটি মেয়ে বা বোন থাকে আর সে তাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে এবং তাদের সঙ্গে সদাচার করে, তবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [মুসনাদ আহমদ: ১১৪০৪; বুখারি, আদাবুল মুফরাদ: ৭৯]
◈ আবু সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ كَانَ لَهُ ثَلاَثُ بَنَاتٍ أَوْ ثَلاَثُ أَخَوَاتٍ أَوِ ابْنَتَانِ أَوْ أُخْتَانِ فَأَحْسَنَ صُحْبَتَهُمْ ، وَصَبَرَ عَلَيْهِنَّ وَاتَّقَى اللَّهَ فِيهِنَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ.»
“যার তিন মেয়ে অথবা তিনটি বোন কিংবা দুটি মেয়ে বা দুটি বোন রয়েছে, সে তাদের সঙ্গে সদাচার করে এবং তাদের (বিবিধ সমস্যায়) ধৈর্য ধারণ করে আর তাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে, সে জান্নাতে যাবে।” [মুসনাদ হুমাইদি: ৭৭২]
কন্যা সন্তান প্রতিপালনে যাতে বৈষম্য না করা হয়, বস্তুবাদী ব্যক্তিরা যাতে হীনমন্যতায় না ভোগেন, তাই তাদের কন্যা প্রতিপালনে ধৈর্য ধরার উপদেশ দেয়া হয়েছে। শোনানো হয়েছে পরকালে বিশাল প্রাপ্তির সংবাদ।
◈ আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ كَانَتْ لَهُ ثَلاثُ بَنَاتٍ فَصَبَرَ عَلَى لأْوَائِهِنَّ، وَعَلَى ضَرَّائِهِنَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ، زَادَ فِي رِوَايَةِ مُحَمَّدِ بْنِ يُونُسَ: فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَاثْنَتَيْنِ ؟ قَالَ: وَاثْنَتَيْنِ، قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَوَاحِدَةً؟ قَالَ: وَوَاحِدَةً»
“যার তিনটি কন্যাসন্তান থাকবে এবং সে তাদের কষ্ট-যাতনায় ধৈর্য ধরবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুহাম্মদ ইবনে ইউনুসের বর্ণনায় এ হাদিসে অতিরিক্ত অংশ হিসেবে এসেছে) একব্যক্তি প্রশ্ন করলো, হে আল্লাহর রাসূল, যদি দু জন হয়? উত্তরে তিনি বললেন, দু জন হলেও। লোকটি আবার প্রশ্ন করলো, যদি একজন হয় হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, একজন হলেও।” [বাইহাকি, শুয়াবুল ঈমান : ৮৩১১]
◈ আউফ বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ كَانَ لَهُ ثَلَاثُ بَنَاتٍ يُنْفِقُ عَلَيْهِنَّ حَتَّى يَبِنَّ أَوْ يَمُتْنَ كُنَّ لَهُ حِجَابًا مِنَ النَّارِ»
“যার তিনটি মেয়ে রয়েছে, যাদের ওপর সে অর্থ খরচ করে বিয়ে দেওয়া বা মৃত্যু পর্যন্ত, তবে তারা তার জন্য আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে।” [বাইহাকি, শুয়াবুল ঈমান: ৮৩১২]
◈ আউফ বিন মালেক আশজায়ী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَا مِنْ عَبْدٍ يَكُونُ لَهُ ثَلَاثُ بَنَاتٍ فَيُنْفِقُ عَلَيْهِنَّ حَتَّى يَبِنَّ أَوْ يَمُتْنَ إِلَّا كُنَّ لَهُ حِجَابًا مِنَ النَّارِ» فَقَالَتِ امْرَأَةٌ: يَا رَسُولَ اللهِ، وَاثْنَتَانِ ؟ قَالَ: «وَاثْنَتَانِ»
“যে বান্দার তিনটি মেয়ে রয়েছে, যাদের ওপর সে অর্থ খরচ করে বিয়ে দেওয়া অথবা মৃত্যু পর্যন্ত, তবে তারা তার জন্য আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে। তখন এক মহিলা বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আর দুই মেয়ে? তিনি বললেন, “দুই মেয়েও”।”[বায়হাকি, শুয়াবুল ঈমান: ৮৩১৩]
◈ আবু আম্মার আউফ বিন মালেক রা. থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«أَنَا وَامْرَأَةٌ سَفْعَاءُ الْخَدَّيْنِ كَهَاتَيْنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ” وَجَمَعَ بَيْنَ أُصْبُعَيْهِ السَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى ” امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ آمَتْ مِنْ زَوْجِهَا، حَبَسَتْ نَفْسَهَا عَلَى أَيْتَامِهَا حَتَّى بَانُوا أَوْ مَاتُوا »
“আমি এবং গাল মলিন কারী মহিলা কিয়ামতের দিন এভাবে উঠবো।” এ কথা বলে তিনি তাঁর তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল একত্রিত করে দেখান। (আর গাল মলিন কারী হলেন) “ওই মহিলা যিনি সুন্দরী ও সুবংশীয়া, তার স্বামী মারা গিয়েছেন। তথাপি তিনি তার এতিম সন্তানদের জন্য তাদের বিয়ে বা মরণ পর্যন্ত নিজেকে (কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া থেকে) বিরত রেখেছেন”। [মুসনাদ আহমদ : ২৪০৫২; আবু দাউদ : ৫১৫১; বুখারি, আদাবুল মুফরাদ: ৫১৪৯]
[যেসব মহিলা স্বামী মারা যাবার পর এতিম সন্তানদের পেছনেই জীবন কাটিয়ে দেন, তারা সাধারণত নিজের সৌন্দর্য চর্চার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করার অবকাশ পান না। তাদের ওপর দিয়ে বরং অনেক ঝক্কি-ঝামেলা যায় বলে চেহারার স্বাভাবিক লাবণ্য বজায় থাকে না। “গাল মলিন কারী” বলে সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। ]
◈ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَكُونُ لَهُ ابْنَتَانِ فَيُحْسِنُ إِلَيْهِمَا مَا صَحِبَهُمَا وَصَحِبَتَاهُ إِلَّا أَدْخَلَتَاهُ الْجَنَّةَ»
“যে কোনও মুসলিমের দুটি মেয়ে থাকবে আর সে তাদের সঙ্গে সদাচার করতে যতদিন সে তাদের সঙ্গে থাকবে এবং তারা যতদিন তার সঙ্গে থাকবে, তবে তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।” [বাইহাকি, শুয়াবুল ঈমান: ৮৩১৪; মুসনাদে আবী ইয়ালা: ২৫৭১, সহিহ ইবনে মাজাহ: ২৯৭৫]
◈ মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“«مَنْ كَانَتْ لَهُ ثَلَاثُ بَنَاتٍ أَوْ أَخَوَاتٍ فَكَفَّهُنَّ وَأَوَاهُنَّ وَرَحِمَهُنَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ “، قَالُوا: أَوِ اثْنَتَانِ ؟ قَالَ: ” أَوِ اثْنَتَانِ “، قَالَ: حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُمْ لَوْ قَالُوا: أَوْ وَاحِدَةً قَالَ: أَوْ وَاحِدَةً »
“যার তিন তিনটি কন্যা অথবা বোন আছে আর সে তাদের থেকে অনিষ্ট থেকে রক্ষা করে, তাদের আশ্রয় দেয় এবং তাদের ওপর দয়া করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। সাহাবীরা বললেন, আর দু জন? তিনি বললেন, দু জনও। বর্ণনাকারী বলেন, এমনকি আমরা মনে করলাম যদি তারা বলতেন, আর একজন? তবে তিনি বলতেন, আর একজনও।” [বাইহাকী, শুয়াবুল ঈমান: ৮৩১৫]
◈ উকবা বিন আমর জুহানি রা. থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
“«مَنْ كَانَ لَهُ ثَلَاثُ بَنَاتٍ فَصَبَرَ عَلَيْهِنَّ، فَأَطْعَمَهُنَّ وَسَقَاهُنَّ وَكَسَاهُنَّ كُنَّ لَهُ حِجَابًا مِنَ النَّار»
“যার তিনটি কন্যা সন্তান থাকে আর সে তাদের ব্যাপারে ধৈর্য ধরে, তাদেরকে খাওয়ায়, পান করায় এবং তাদের পোশাকের ব্যবস্থা করে, তবে সে কন্যারা তার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে।” [বাইহাকী, শুয়াবুল ঈমান: ৮৩১৭; মুসনাদ আহমদ: ১৭৪০৩; আবী ইয়া”লা, মুসনাদ: ১৭৬৪]
মনে রাখতে হবে, আজ যে অবিবেচক পিতা কন্যা সন্তান দেখে রাগান্বিত হচ্ছেন, কন্যার মাকে যাচ্ছে তাই গালমন্দ করছেন, কাল তিনি এর জন্য আফসোস করতে পারেন। ছেলেদের অবাধ্যতায় অতিষ্ঠ এ পিতাকে এ মেয়েই একদিন আমোদিত ও সার্থক পিতা বানাতে পারে। আমরা ভুলে যাই স্থূল দৃষ্টিতে অনেক কিছু মন্দ মনে হলেও অনেক সময় তা মঙ্গল বয়ে আনে। এ দিকে ইঙ্গিত করেই পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَإِن كَرِهۡتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡٔٗا وَيَجۡعَلَ ٱللَّهُ فِيهِ خَيۡرٗا كَثِيرٗا
প্রশ্ন: আমার আপুর স্বামী আর শাশুড়ি খারাপ মানুষ হওয়ায় ছয় মাস আগে ডিভোর্স হয়। চলতি মাসে আমারও ডিভোর্স হয়। কারণ আমার মধ্যে শুচিবায়ু রোগ থাকায় তারা আমাকে ‘পাগল’ বলে আখ্যা দেয়! এখন লোকজন আমাকে অনেক খারাপ ও নিচুমানের কথাবার্তা বলছে। দু বোনের জন্য মা-বাবাও অসুস্থ হয়ে গেছে। আমার প্রশ্ন হলো, আল্লাহ কি আছেন? আল্লাহ থাকলে সাহায্য করছেন না কেন? বিয়ে যদি আল্লাহর হুকুমে হয় তাহলে বিয়ে ভঙ্গ হওয়াটা আল্লাহ আটকাতে পারেননি কেন? আমাদেরতো কেউ বিয়ে করবে না। এখন কী করবো? সমাজের কেউ কথা বলছে না। আপনজনরা অনেক অপমান করছে। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করছেন না কেন?
উত্তর: আমরা আপনাদের দুই ডিভোর্সি বোনের জন্য অনেক অনেক সমবেদনা জানাচ্ছি এবং দুআ করছি, তিনি যেন আপনাদেরকে ধৈর্য ধারণের তাওফিক দেন ও কল্যাণের উপরে মৃত্যু অবধি প্রতিষ্ঠিত রাখেন। আমিন।
অতঃপর আপনাদের বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটেছে এ জন্য ‘আল্লাহ আছেন কিনা’ এমন সংশয় প্রকাশ করা কি কোন ইমানদারের জন্য শোভনীয়? পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার বিয়ে বিচ্ছেদ হচ্ছে। অতীতেও হয়েছে। ভবিষ্যতেও হবে। এসবের পেছনে অবশ্যই কিছু কারণ থাকে। সেজন্য কি আল্লাহকে দোষারোপ করা যায়?
▪️ মানুষের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহর বাণী:
মানুষকে আল্লাহ কত চমৎকার দেহবায়ব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন! অতঃপর তাকে খাদ্য-পানীয় ও আলো-বাতাস ও অসংখ্য-অগণিত নেয়ামত দ্বারা প্রতিপালন করেছেন। তাঁর অবাধ্যতা করার পরেও তিনি বান্দার অসংখ্য পাপাচার ক্ষমা করে দেন এবং তাকে দয়া ও মমতা দিয়ে পরিবেষ্টন করে রাখেন। তারপরেও মানুষ নিজেদের কৃতকর্মকে আল্লাহর দোষ হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়! এর থেকে বড় অকৃতজ্ঞতা ও ধৃষ্টতা আর কী হতে পারে?
আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَأَمَّا ٱلۡإِنسَٰنُ إِذَا مَا ٱبۡتَلَىٰهُ رَبُّهُۥ فَأَكۡرَمَهُۥ وَنَعَّمَهُۥ فَيَقُولُ رَبِّيٓ أَكۡرَمَنِ وَأَمَّآ إِذَا مَا ٱبۡتَلَىٰهُ فَقَدَرَ عَلَيۡهِ رِزۡقَهُۥ فَيَقُولُ رَبِّيٓ أَهَٰنَنِ
“মানুষ তো এরূপ যে, তার রব যখন তাকে পরীক্ষা করেন এবং সম্মান ও অনুগ্রহ দান করে তখন সে বলে, ‘আমার রব আমাকে সম্মানিত করেছেন। আর যখন তাকে পরীক্ষা করেন এবং তার রিজিক সংকুচিত করেন তখন সে বলে, ‘আমার রব আমাকে হীন করেছেন!” [সূরা আল ফজর: ১৫ ও ১৬]
তিনি আরো বলেন,
إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ خُلِقَ هَلُوعًا- إِذَا مَسَّهُ ٱلشَّرُّ جَزُوعٗا – وَإِذَا مَسَّهُ ٱلۡخَيۡرُ مَنُوعًا
“নিশ্চয় মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অতিশয় অস্থিরচিত্তরূপে। যখন বিপদ তাকে স্পর্শ করে সে হয় হা-হুতাশকারী। আর যখন কল্যাণ তাকে স্পর্শ করে সে হয় অতি কৃপণ।” [সূরা মাআরিজ ১৯, ২০, ২১]
▪️এখন করণীয়:
মনে রাখতে হবে, বিয়ে করা যেমন আল্লাহর হুকুম তেমনি উভয় পক্ষের মিলমিশ না হলে ডিভোর্স দেওয়াও আল্লাহর বিধান। সুতরাং কেউ যদি আল্লাহর বিধান মেনে শরিয়তসম্মত কারণে ডিভোর্স দেয় তাহলে তো কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যদি জুলুম করে তবে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই জালিমের বিচার করবেন। নিশ্চয়ই তিনি সব চেয়ে বড় ন্যায়বিচারক। আপনাদের পূর্ব স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য জীবন থাকলে হয়তোবা আপনাদের জীবনের জন্য আরও বড় ক্ষতির কারণ হতো। আপনারা আরও বড় ফিতনায় পতিত হতেন। সে কারণে আল্লাহ আপনাদেরকে সেখান থেকে রক্ষা করেছেন এবং আপনাদের জন্য যা কল্যাণকর তিনি তাই করবেন ইনশাআল্লাহ। প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহর পরিকল্পনা সম্পর্কে আমরা কেউই অবহিত নই।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ وَعَسَىٰ أَن تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
“আর তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয় অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না। [সূরা বাকারা: ২১৬]
ভুলে গেলে চলবে না যে, মানব জীবনের ভালো-মন্দ সব কিছু আল্লাহর তকদিরের ভিত্তিতে সংঘটিত হয়-এর উপরে বিশ্বাস করা ঈমানের ছয়টি রোকন বা স্তম্ভের একটি। সুতরাং আল্লাহর ফায়সালার উপর বিশ্বাস রাখা এবং তাতে একজন মুক্তিকামী মুসলিমের জন্য আবশ্যক। তাই আপনাদের দুঃখজনক এই পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করুন। ধৈর্যের মধ্যেই মানুষের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
বিপদে ধৈর্য হারাবেন না, হতাশ হবেন না, সাহস হারাবেন না। মুমিন কখনো হতাশ হয় না। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَا تَا۟یۡـَٔسُوا۟ مِن رَّوۡحِ ٱللَّهِۖ إِنَّهُۥ لَا یَا۟یۡـَٔسُ مِن رَّوۡحِ ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡقَوۡمُ ٱلۡكَـٰفِرُونَ
“এবং আল্লাহর রহমত হতে তোমরা নিরাশ হয়ো না। কারণ আল্লাহর রহমত হতে কেউই নিরাশ হয় না, কাফির সম্প্রদায় ছাড়া। [সূরা ইউসুফ: ৮৬]
ইমানদার ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য হলো, সে সর্বাবস্থায় আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকে এবং তাঁর প্রতি আরো বেশি মনোযোগী হয় এবং নিজের ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে। এ ভাবে সে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে এগিয়ে যায়। আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমিন।
ইসলামে বৃক্ষ রোপনের গুরুত্ব কতটুকু? সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্যে ফুল গাছ লাগানো কি অপচয়?
প্রশ্ন: ইসলামে বৃক্ষ রোপনের গুরুত্ব কতটুকু? আমি যদি শুধুমাত্র ভালো লাগার উদ্দেশ্যে কিছু ফুল গাছ লাগাই তাহলে এতে কি আমার গুনাহ হবে? একজন আমাকে বলেছে যে, যাতে কোন উপকার নাই তা করা উচিত নয়। সে বলে, সবজি বা ফল গাছ লাগালে একটা পাখি খেলেও সওয়াব রয়েছে। তাই আমার ফুল গাছ লাগানো নাকি ফুজুল (অনর্থক) খরচ! এ কথা কি সঠিক? ফুলের রেনু থেকে তো মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে থাকে। উল্লেখ্য যে, আমি দামী গাছ কিনি না। আমাকে দয়া করে উত্তর দিবেন।
উত্তর: ইসলামে বৃক্ষ রোপনের ব্যাপারে পর্যাপ্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বহু হাদিস পাওয়া যায়। নিম্নে সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো:
১. আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا إِلَّا كَانَ مَا أُكِلَ مِنْهُ لَهُ صَدَقَة، وَمَا سُرِقَ مِنْهُ لَهُ صَدَقَةٌ، وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ مِنْهُ فَهُوَ لَهُ صَدَقَةٌ، وَمَا أَكَلَتِ الطَّيْرُ فَهُوَ لَهُ صَدَقَةٌ، وَلَا يَرْزَؤُهُ أَحَدٌ إِلَّا كَانَ لَهُ صَدَقَةٌ.
“একজন মুসলিম যখন কোনো গাছ লাগায় তো এর যে ফল খাওয়া হবে এটা তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হবে। এ থেকে যা চুরি যাবে তাও সদকা হিসেবে গণ্য হবে। হিংস্র প্রাণীও যদি তা থেকে খায় তাও সদকা হবে। পাখি খেলে সদকা হবে। (এমন কি) যে কেউ যে কোনোভাবে এ থেকে (উপকার) গ্রহণ করবে তা সদকা হিসেবে গণ্য হবে।” [সহীহ মুসলিম, হা/ ১৫৫২]
২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا، أَوْ يَزْرَعُ زَرْعًا، فَيَأْكُلُ مِنْهُ طَيْرٌ أَوْ إِنْسَانٌ أَوْ بَهِيمَةٌ، إِلَّا كَانَ لَهُ بِه صَدَقَةٌ.
“যখন কোনো মুসলিম কোন বৃক্ষ রোপন করে অথবা কোনো ফসল বোনে, আর মানুষ, পাখি বা পশু তা থেকে খায় তা রোপণকারীর জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হয়।” [সহীহ বুখারী, হা/২৩২০; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৫৩]
৩. আরেক বর্ণনায় এসেছে, “কিয়ামত পর্যন্ত (অর্থাৎ যতদিন গাছটি বেঁচে থাকবে বা তা থেকে উপকার গ্রহণ করা হবে) সে গাছ তার জন্য সদকায়ে জারিয়া (যে দানের সোয়াব অবিরাম ধারায় অব্যাহত থাকে) হিসেবে গণ্য হবে।” [সহীহ মুসলিম, হা/১৫৫২]
মূলত যে কোন গাছ মানুষের জন্য কল্যাণকর। তা ফুল, ফল, কাঠ, ঔষধি, ছায়াদার অথবা সাধারণ সৌন্দর্য বর্ধক ইত্যাদি যে গাছই হোক না কেন।
▪️পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের অপরিসীম অবদান:
বিশেষ করে ফুল গাছ পরিবেশের সৌন্দর্যকে অনেক গুণ বৃদ্ধি করে, ফুলের সৌন্দর্য দেখে মানুষ বিমোহিত হয় এবং অন্তরে প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা লাভ করে। ফুলের পাপড়িতে নানা মেয়ের রংয়ের সুনিপুণ ছোঁয়া চিন্তাশীল হৃদয়ে মহান স্রষ্টার সৃষ্টি জগৎ সম্পর্কে চিন্তার খোরাক যোগায়, ফুলের রেনুতে বসে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। যে মধুর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।
▪️ শোভা বর্ধন ও সুগন্ধির উদ্দেশ্যে ফুল গাছ লাগানোর ব্যাপারে ফতোয়া:
বিশিষ্ট ফকিহ আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রহ. কে শুধুমাত্র শোভা বর্ধন এবং সুগন্ধির উদ্দেশ্যে গোলাপ ফুলের গাছ লাগানো সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,
ليس في هذا بأس، ليس على الإنسان بأس أن يزرع في البيت من الأشجار والروائح الطيبة ما ينشرح له الصدر وتنبسط إليه النفس؛ فإن هذا من نعم الله على العباد
বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে সমকামিতা নামক প্রকৃতিবিরুদ্ধ ও নিকৃষ্ট কাজটির প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এর প্রচার-প্রসারে পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে হাবুডুবু খাওয়া কিছু পথভ্রষ্ট মানুষ বিভিন্ন ভাবে কাজ করছে। এরা বিভিন্ন এনজিও এর ছাত্র ছায়ায় যুবকদেরকে এই অন্যায় কর্মে লিপ্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ইতোমধ্যে বহু যুবক-যুবতী তাদের খপ্পরে পড়ে শুধু তাদের দ্বীনদারী ও চরিত্রকে ভূলুণ্ঠিত করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং পুরো জীবনটাকেই এক গন্তব্যহীন অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। সে কারণে আমাদের যুব সমাজকে রক্ষা করতে এ বিষয়ে সচেতনতা খুবই জরুরি।
যাহোক, নিম্নে সমকামিতার ভয়াবহতা, ইসলামি ও প্রচলিত আইনে এর শাস্তি এবং এ থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ আলোচনা করা হল:
ইসলামে সমকামিতা (Homosexuality) তথা পুরুষের সাথে পুরুষ অথবা নারীর সাথে নারীর যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, কবিরা গুনাহ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এটি জিনার থেকেও নিকৃষ্ট। কেননা তা প্রকৃতি বিরুদ্ধ যৌনাচার এবং মানবতা বিধ্বংসী আচরণ। মানবজাতির পরিবার গঠনের স্বাভাবিক নিয়ম হল, একজন পুরুষ একজন নারীকে বৈধভাবে বিয়ে করার পর তারা দাম্পত্য জীবন গঠন করবে। অত:পর স্বামী-স্ত্রী মধুর মিলনে স্ত্রী গর্ভধারণ করবে ও সন্তান জন্ম দিবে। অতঃপর বাবা-মা সন্তানের পরিপালনের দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নিবেন। এই তো একটি সুন্দর মানবজীবন। এভাবে মানব সন্তানের বংশ বিস্তার ঘটবে এবং ফুলে-ফলে সুশোভিত হবে এই সুন্দর বসুন্ধরা। কিন্তু সমকামিতা হল, প্রকৃতি বিরুদ্ধ ও ধ্বংসাত্মক কাজ এবং মানবজাতির বংশ বিস্তারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক।
কেন মানুষ সমকামী হয়? বিজ্ঞানীরা সমকামিতার প্রকৃত কারণ জানেন না কিন্তু তারা তাত্ত্বিকভাবে ধারণা করেন যে, জিনগত, হরমোন গত এবং পরিবেশগত কারণসমূহের এক জটিল আন্তক্রিয়ার ফলে এটি ঘটে থাকে। (উইকিপিডিয়া) তবে কিছু মানুষ স্বাভাবিক যৌন চাহিদা তথা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি স্বাভাবিক যৌন আকর্ষণ থাকার পরও বিকৃত মানসিকতার কারণে ইচ্ছাকৃত ভাবে সমকামিতায় লিপ্ত হয়।
❑ ইসলাম সমকামিতার পথ বন্ধ করেছে যেভাবে:
● ইসলাম সমকামিতার পথ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে যে নির্দেশনা প্রদান করেছে তা হল,
❑ ইসলামের দৃষ্টিতে সমকামিতার ভয়াবহতা:
নি:সন্দেহে সমকাম ধ্বংসাত্মক ও অভিশপ্ত পাপকর্ম, আল্লাহর শাস্তির কারণ ও মানবতা বিধ্বংসী অপরাধ। নিম্নে কুরআন-সুন্নাহ ও প্রচলিত আইনের আলোকে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হল:
◈ ২. সমকামিতা একটি অভিশপ্ত কর্ম:
◈ ৩. তাছাড়া সমকামিতাকে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীগণ প্রাণঘাতী এইডস সহ নানা জটিল ও কঠিন রোগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
❑ ইসলামি আইনে সমকামিতার শাস্তি:
ইসলামের ফৌজদারি দণ্ডবিধি অনুযায়ী সমকামিতার শাস্তি হল, মৃত্যুদণ্ড:
অবশ্য যদি কারও সাথে জোরপূর্বক সমকামিতা করা হয় বা যার সাথে এই অন্যায় করা হয়েছে সে যদি অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু বা পাগল হয় তাহলে তার উপর শাস্তি প্রয়োগ করা হবে না।
❑ প্রচলিত আইনে সমকামিতার শাস্তি:
অধিকাংশ সমাজে এবং সরকার ব্যবস্থায় সমকামী আচরণকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। উদাহরণ স্বরূপ: বাংলাদেশ (দশ বছরের থেকে শুরু করে আমরণ সশ্রম কারাদণ্ড) সহ দক্ষিণ এশিয়ার ৬ টি দেশের সংবিধানে ৩৭৭ ধারা এবং ১৯টি দেশে সমপর্যায়ের ধারা এবং সম্পূরক ধারা মোতাবেক সমকামিতা ও পশুকামিতা প্রকৃতি বিরোধী যৌনাচার হিসেবে শাস্তিযোগ্য ও দণ্ডনীয় ফৌজদারি অপরাধ।
বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা মোতাবেক পায়ু মৈথুন শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ, যার শাস্তি দশ বছর থেকে শুরু করে আজীবন কারাদণ্ড এবং সাথে জরিমানাও হতে পারে। এ আইনে বলা হয়েছে:
৩৭৭. প্রকৃতিবিরুদ্ধ অপরাধ: কোন ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় কোন পুরুষ, নারী বা পশু প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সঙ্গম করে, তবে তাকে আজীবন কারাদণ্ড দেয়া হবে, অথবা বর্ণনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কালের কারাদণ্ড প্রদান করা হবে যা দশ বছর পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে, এবং এর সাথে নির্দিষ্ট অঙ্কের আর্থিক জরিমানাও দিতে হবে।
ব্যাখ্যা: ধারা অনুযায়ী অপরাধ প্রমাণে যৌনসংগমের প্রয়োজনীয় প্রমাণ হিসেবে লিঙ্গ প্রবেশের প্রমাণ যথেষ্ট হবে।
৩৭৭ ধারার ব্যাখ্যায় পায়ু সঙ্গম জনিত যে কোন যৌথ যৌন কার্যকলাপকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একারণে, পরস্পর সম্মতিক্রমে বিপরীতকামী মুখকাম ও পায়ু মৈথুনও উক্ত আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে। [মুক্ত বিশ্বকোষ, বাংলাদেশে সমকামীদের অধিকার]
❑ কেউ যদি জন্মগত ভাবে সম লিঙ্গের দিকে আকর্ষণ অনুভব করে তাহলে তার কী করণীয়?
সৃষ্টিগত ভাবে কারো মধ্যে সমলিঙ্গের দিকে আকর্ষণ থাকলে তাকে বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ তাকে এমনটি করেছেন তার প্রতি পরীক্ষা হিসেবে। যেমন অনেক প্রতিবন্ধী মানবিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কারও চোখ নাই, কারও কথা বলার ক্ষমতা নাই, কেউ বা কানে শুনে না ইত্যাদি। ঠিক তেমনি সেও নারীর প্রতি স্বাভাবিক যৌন আকর্ষণ বোধ থেকে বঞ্চিত।
যাহোক, কোন ব্যক্তি যদি ব্যক্তি সমলিঙ্গের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করে তাহলে এ থেকে বাঁচার জন্য তার জন্য নিম্নে ৮টি করণীয় তুলে ধরা হল:
৩) যদি বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মোটেই আকর্ষণবোধ না থাকার কারণে বিয়ে করা সম্ভব না হয় অথচ প্রচণ্ড যৌন বাসনা অনুভব করে তাহলে করণীয় হল, রোজা রাখা। কেননা রোজার মাধ্যমে যৌন বাসনা নিয়ন্ত্রিত থাকে।
সাত জমিনে সাতজন আদম, সাতজন নূহ, সাতজন ইবরাহিম, সাতজন ইসা আ. এবং সাতজন মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থাকা বিষয়ে এক বক্তার বিভ্রান্তির জবাব এবং এ ব্যাপারে ইসলামের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি:
কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা এটি প্রতিষ্ঠিত কথা যে, সাত আসমান যেমন থরে থরে সাজানো আছে ঠিক তেমনটি সাত তবক জমিনও থরে থরে সাজানো আছে। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,
اللَّهُ الَّذِى خَلَقَ سَبْعَ سَمٰوٰتٍ وَمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ يَتَنَزَّلُ الْأَمْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوٓا أَنَّ اللَّهَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَىْءٍ عِلْمً
“আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সপ্ত আসমান এবং জমিনও অনুরূপ। ওগুলোর মধ্যে নেমে আসে তাঁর নির্দেশ, যাতে তোমরা বুঝতে পার যে, অবশ্যই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং জ্ঞানে আল্লাহ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে রয়েছেন।” [সূরা তালাক: ১২]
❑ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদগণের বক্তব্য:
◈ ১. তাফসিরে আহসানুল বায়ান-এ বলা হয়েছে:
أَيْ: خَلَقَ مِنَ الأَرْضِ مِثْلَهُنَّ
“অর্থাৎ সাত আসমানের ন্যায় সাত জমিনও আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন।”
কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন, সাতটি প্রদেশ। তবে এ কথা ঠিক নয়। বরং যেভাবে উপর্যুপরি সাতটি আসমান রয়েছে, অনুরূপ সাতটি জমিনও রয়েছে। এগুলোর মধ্যে দূরত্ব ও ব্যবধানও আছে এবং প্রত্যেক জমিনে আল্লাহর সৃষ্টি আবাদ রয়েছে। [কুরতুবী]
বহু হাদিস দ্বারা এ কথার সমর্থনও হয়। যেমন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুলুম করে বিঘত পরিমাণ জমিন আত্মসাৎ করবে, কিয়ামতের দিন সাত তবক জমিনকে তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।” [মুসলিম, বাণিজ্য অধ্যায়, জুলুম করা হারাম পরিচ্ছেদ]
কেউ কেউ এটাও বলেন যে, প্রত্যেক জমিনে ঐ রকমই পয়গম্বর রয়েছেন, যে রকম পয়গম্বর তোমাদের জমিনে এসেছেন। যেমন: আদমের মত আদম, নুহের মত নুহ, ইবরাহিমের মত ইবরাহিম এবং ইসার মত ইসা (আলাইহিমুস সালাম)। কিন্তু এ কথা কোন সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়।
◈ তাফসিরে ফাতহুল মাজিদে উক্ত আয়াতের তাফসিরে বলা হয়েছে,
(وَّمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ)
অর্থাৎ সাত আসমানের মত সাত জমিনও আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন। হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি জুলুম করে এক বিঘত পরিমাণ অন্যের জমি দখল করে নেবে তাকে সপ্ত জমিনের গলাবন্ধ পরানো হবে।”[সহীহ বুখারী হা. ২৪৫২]
অন্যত্র এসেছে, “তাকে সাত জমিনের নীচ পর্যন্ত ধসিয়ে দেওয়া হবে।” [আহমদ, হা/ ৫৭৪০]
(يَتَنَزَّلُ الْأَمْرُ بَيْنَهُنَّ)
অর্থাৎ যেভাবে প্রত্যেক আসমানে আল্লাহ তাআলার বিধান কার্যকর ও বলবত আছে অনুরূপ প্রত্যেক জমিনেও তাঁর নির্দেশ চলে। সপ্ত আকাশের মত সপ্ত জমিনের পরিচালনাও তিনিই করেন।
❑ সাত জমিনে সাত জন আদম, সাতজন নূহ, সাতজন ইবরাহিম, সাতজন ইসা আ. এবং সাতজন মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থাকার বর্ণনাটি সহিহ নয়:
সাত জমিনে সাতজন আদম, সাতজন নূহ, সাতজন ইবরাহিম, সাতজন ইসা আ. এবং সাতজন মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থাকার পক্ষে ইবনে আব্বাস রা. এর যে বর্ণনাটি পেশ করা হয় তা বিজ্ঞ মুহাদ্দিসদের দৃষ্টিতে সহিহ নয় (শায ও ইসরাইলি বর্ণনা)।
বর্ণনাটি হলো, ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,
سبع أرضين ، في كل أرض نبي كنبيكم ، وآدم كآدم ، ونوح كنوح ، وإبراهيم ، كإبراهيم ، وعيسى كعيسى
“সাত জমিনের প্রতিটি জমিনে তোমাদের নবীর মতই একজন করে নবী, আদমের মত আদম, নূহের মত নুহ, ইবরাহিমের মত ইবরাহিম এবং ইসার মত ইসা আছে।”
◯ মুহাদ্দিস ও বিজ্ঞ আলেমগণের অভিমত নিম্নরূপ:
◆ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. বলেন, এ বর্ণনাটি شاذ ‘শায’। [তুহফাতুন নুবালা/৬৫]
◆ আব্দুর রহমান আল মুআল্লিমি বলেন, إسناده ليس صحيحا “এর সনদ সহিহ নয়।” [আল আনোয়ারুল কাশেফাহ/১১৭]
◆ ইবনে কাসির রাহ. বলেন,
إن صح نقله عنه على أنه أخذه ابن عباس رضي الله عنه عن الإسرائيليات
❑ “সাতটি জমিনের মধ্যে দূরত্ব ৫০০ বছরের রাস্তা” এ মর্মে বর্ণিত হাদিসটি সহিহ নয়:
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
◯ হাদিসটি মান: (সহিহ নয় ✘)
মুহাদ্দিসগণের গবেষণায় সনদের মানদণ্ডে উক্ত হাদিসটি সহিহ নয়। নিম্নে এ প্রসঙ্গে জগদ্বিখ্যাত কয়েকজন মুহাদ্দিসের মতামত তুলে ধরা হল:
১. ইবনুল জাওযী উপরোক্ত হাদিস সম্পর্কে বলেন, لا يصح “এ হাদিসটি সহিহ নয়।” [আল ইলালুল মুতানাহিয়া ১/২৭]
❑ গল্পবাজ বক্তাদের ব্যাপারে সতর্কীকরণ: