Monday, July 8, 2024

মনে সুখ নাই রে সুখ পরানের পাখি

 


মনে সুখ নাইরে সুখ পরানের পাখি,
১৮ খান কইরা বিয়া জেলায় জেলায় থাকি।
প্রথমেতে করলাল বিয়া জেলার শহর ঢাকা,
বৌ আমারে ভালোবাসেনা, ভালো বাসে টাকা।
মনে সুখ নাইরে সুখ পরানের পাখি,
১৮ খান কইরা বিয়া জেলায় জেলায় থাকি।
তারপরে তে করলাম বিয়া যাইয়া গোয়ালন্দ,
বাসর ঘরে ঢুইকা দেখি শুটকি মাছের গন্ধ।
মনে সুখ নাইরে সুখ পরানের পাখি,
১৮ খান কইরা বিয়া জেলায় জেলায় থাকি।
তার পরেতে করলাম বিয়া গিয়া নোয়াখালি,
বৌ আমার ভালো লাগে না ভালো লাগে শালি।
মনে সুখ নাইরে সুখ পরানের পাখি,
১৮ খান কইরা বিয়া জেলায় জেলায় থাকি।
তার পরেতে করলাম বিয়া গিয়া দূরে ভোলা,
ধানের গোলার বাসর ঘরে ঢুইকা দেখি বৌয়ের কোলে পোলা।
মনে সুখ নাইরে সুখ পরানের পাখি,
১৮ খান কইরা বিয়া জেলায় জেলায় থাকি।
তার পরেতে করলাম বিয়া গিয়া নীলফামারী
শ্বশুর বাড়ি গেলে, বৌয়ের চেয়ে বেশি ভালোবাসে শ্বাশুড়ী।
মনে সুখ নাইরে সুখ পরানের পাখি,
১৮ খান কইরা বিয়া জেলায় জেলায় থাকি।
তার পরেতে করলাম বিয়া ছোটো শহর গাইবান্ধা
বাসর ঘরে ঢুকইকা দেখি বৌ আমার এক্কেরে আন্ধা।
মনে সুখ নাইরে সুখ পরানের পাখি,
১৮ খান কইরা বিয়া জেলায় জেলায় থাকি।
তার পরেতে করলাম বিয়া জেলা চকোরিয়া
বউ আমার প্রক্সি মারে, করে পরকিয়া।
মনে সুখ নাইরে সুখ পরানের পাখি,
১৮ খান কইরা বিয়া জেলায় জেলায় থাকি।
তারপরেতে করলাম বিয়া জেলা চুয়াডাঙ্গা
বিয়ার রাতে শুইতে যাইয়া দেখি দেখি খাটের পায়া ভাঙ্গা ।
মনে সুখ নাইরে সুখ পরানের পাখি,
১৮ খান কইরা বিয়া জেলায় জেলায় থাকি।
তার পরেতে করলাম বিয়া জেলা সাতক্ষীরা
বিয়ার রাতে বুঝলাম বউ কাটে কথায় কথায় কিরা ।
মনে সুখ নাইরে সুখ পরানের পাখি,
১৮ খান কইরা বিয়া জেলায় জেলায় থাকি।
তার পরেতে করলাম বিয়া জেলা চিটাগাং
বউ আমার সারাক্ষণ করে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ।
মনে সুখ নাইরে সুখ পরানের পাখি,
১৮ খান কইরা বিয়া জেলায় জেলায় থাকি।
তার পরেতে করলাম বিয়া জেলা কুমিল্লা
বাসর ঘরে গিয়া হুনি তার হইছে আরেকখান বিয়া হিল্লা।
মনে সুখ নাইরে সুখ পরানের পাখি,
১৮ খান কইরা বিয়া জেলায় জেলায় থাকি।
তারপরেতে করলাম বিয়া জেলা নরসিংন্দি
বউ আমার বাংলা কয়না খালি কয় হিন্দি।
মনে সুখ নাইরে সুখ পরানের পাখি,
১৮ খান কইরা বিয়া জেলায় জেলায় থাকি।
তার পরেতে করলাম বিয়া জেলা রংপুর
বাসর ঘরে ঢুইকা দেখি বউ রঙ্গ রসে ভরপুর ।
মনে সুখ নাইরে সুখ পরানের পাখি,
১৮ খান কইরা বিয়া জেলায় জেলায় থাকি।
তার পরেতে করলাম বিয়া জেলা বরিশাল
বউ আমার দেখতে মরিচের মত লাল!
তার পরেতে করলাম বিয়া জেলা রাজবাড়ি
বাসর ঘরে ঢুইকা দেখি বউয়ের মুখে দাড়ি।
তার পরেতে করলাম বিয়া জেলা ঠাকুরগাও
বাসর ঘরে ঢুইকা দেখি বউ ৩ পলার মাও।

কিয়ামতের অন্যতম একটি আলামত হলো স্ত্রী তার স্বামীর ব্যবসা-বাণিজ্যে সাহায্য করবে এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

 প্রশ্ন: “কিয়ামতের অন্যতম ছোট আলামত হলো, স্ত্রী তার স্বামীকে ব্যবসায় সহযোগিতা করবে”-এটা কি সঠিক? ব্যবসায় সাহায্য করাও কি কিয়ামতের লক্ষণ? বিষয়টি বুঝিয়ে দিলে উপকৃত হবো ইনশাআল্লাহ।

উত্তর: হ্যাঁ, উক্ত হাদিসটি সহিহ এবং এটি কিয়ামতের অন্যতম একটি ছোট আলামত।

নিম্নে এ সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা প্রদান করা হলো: وبالله التوفيق

হাদিসে বলা হয়েছে, কিয়ামতের অন্যতম একটি আলামত হলো যে, কিয়ামতের পূর্বে এত বেশি ব্যবসা-বাণিজ্য ছড়িয়ে পড়বে যে, একজন স্ত্রী তার স্বামীকে ব্যবসার কাজে সাহায্য করবে। যেমন: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إنَّ بين يَدَيِ الساعةِ فُشُوَّ التِّجارةِ حَتَّى تُعِينَ الْمَرأةُ زَوجَها على التِّجارةِ

“নিশ্চয় কিয়ামতের পূর্বে ব্যবসা-বাণিজ্যের এত ব্যাপকতা ঘটবে যে, স্ত্রী তার স্বামীকে ব্যবসা-বাণিজ্যে সহযোগিতা করবে।” [মুসনাদে আহমদ, ১/৪০৭, আল আদাবুল মুফরাদ, হাকিম, শুয়াইব আরনাবুত মুসনাদে আহমদ-এর তাহকিক গ্রন্থে এ হাদিসটিকে হাসান বলেছেন, হা/ ৩৮৭০ ও ৩৯৮২]

❑ হাদিসটির ব্যাখ্যা:

এ হাদিসে কিয়ামতের পূর্বে যে সব ছোট আলামত প্রকাশ পাবে সেগুলোর মধ্যে দুটি আলামতের কথা বলা হয়েছে। যথা:

১. কিয়ামতের পূর্বে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপক বিস্তার লাভ করবে।
২. নারীরা তাদের স্বামীদেরকে ব্যবসায়িক কর্মে সহায়তা করবে।

সুবহানাল্লাহ! আমরা আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভবিষ্যতবাণীর বাস্তবতা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার চরম উন্নতি, টিভি-চ্যানেলে বিভিন্ন পণ্যের ব্যাপক প্রচার-প্রসার এবং নিত্য-নতুন নানা আধুনিক প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের যুগে বিশ্ব অর্থনীতিতে অফলাইন-অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্যের যে সর্বগ্রাসী রূপ পরিলক্ষিত হচ্ছে তা কল্পনাতীত। আই ফোন, স্মার্ট ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ অসংখ্য বাহনে ভর করে ইন্টারনেট এখন বিশ্ববাণিজ্যের লাইফ লাইন হয়ে উঠেছে। ফেসবুক-এর সূচনা, ইউটিউব, নেটফ্লিক্সসহ অসংখ্য গণমাধ্যম পুরো সিস্টেমে সত্যিকার অর্থেই বড় এক ঝাঁকুনি দিয়েছে। বিশেষ করে অনলাইনের যুগে একজন মানুষ ঘরে বসেই বিশ্ববাজারে বড় বড় ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

অনুরূপভাবে এটাও আমাদের অজানা নয় যে, বর্তমান যুগে অর্থনীতির এ বিশাল কর্মযজ্ঞে অনেক স্ত্রী তাদের স্বামীর ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা ও দেখভাল করে থাকে। অথচ সালাফদের যুগে এটি প্রচলিত ছিল না। কিন্তু আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভবিষ্যতবাণী অনুযায়ী কিয়ামতের আলামত হিসেবে তা বাস্তবে পরিণত হয়েছে।

আল্লাহর নবি কোনও কথা বলতেন না আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহি মারফতে নির্দেশিত হওয়া ব্যতিরেকে-এ হাদিসটি তার আরেকটি উজ্জ্বল প্রমাণ। এটি তাঁর নবুওয়তের সত্যতারও প্রমাণ বহণ করে। আল হামদুলিল্লাহ।

❑ ইসলামের দৃষ্টিতে স্বামীর ব্যবসা-বাণিজ্যে স্ত্রীর সাহায্য-সহযোগিতা করার বিধান কী?

শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে একজন স্ত্রী যদি তার স্বামীকে এ ক্ষেত্রে সাহায্য-সহযোগিতা করে তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে তাতে কোনও দোষ নেই। ইসলাম ওয়েবে
উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,

وهذا وإن كان فيه بيان حال لم يكن معهوداً عند السلف وهو بيع وشراء النساء في التجارة؛ إلا أنه لا يدل على تحريم ذلك

“এ হাদিসে যদিও এমন একটা অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে যেটা সালাফদের নিকট সুপরিচিত ছিল না। আর তা হলো, ব্যবসার ক্ষেত্রে নারীদের ক্রয়-বিক্রয়। তবে এ হাদিস এ কাজকে হারাম প্রমাণ করে না।”

এর মাধ্যমে নিঃসন্দেহে অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে স্বামী উপকৃত হয় এবং পারিবারের ঘানি টানার ক্ষেতে একটা সাহায্যকারী মানুষ পেয়ে তার বোঝা হালকা হয়। যদিও তা স্ত্রীর মূল দায়িত্ব নয়। তার প্রধান দায়িত্ব হলো, স্বামীর সেবা করা, সন্তান প্রতিপালন করা এবং বাড়িতে অবস্থান করে স্বামীর সম্পদ হেফাজত করা। নিঃসন্দেহে এটা তার উপর অর্পিত অনেক বড় দায়িত্ব। পারিবারিক সুখ-শান্তি এবং সন্তান-সন্ততিকে সঠিকভাবে প্রতিপালনের স্বার্থে প্রতিটি নারীর এই দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করা কর্তব্য। এই সুখ-শান্তি পরিবার থেকে উঠে গেলে তা ধ্বংস হতে বাধ্য।

আর মনে রাখতে হবে যে, কিয়ামতের আলামত মানেই খারাপ কিছু নয়। কিছু কিছু কিয়ামতের আলামত অবশ্যই ভালো। যেমন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আগমন কিয়ামতের একটি আলামত। কারণ তিনি সর্বশেষ নবি। কিয়ামতের পূর্বে আর কোন নবির আগমন ঘটবে না। অর্থাৎ এর পরই কিয়ামত সংঘটিত হবে।

মোটকথা, একজন স্ত্রী যদি আল্লাহকে খুশি করার জন্য শরিয়তের সীমা রক্ষা করে স্বামী, সন্তান-সন্ততি ও পরিবারের জরুরত মেটানোর ক্ষেত্রে স্বামীর ব্যবসায়িক কাজে কিছুটা অবদান রাখে তাহলে তা নাজায়েজ নয়। বরং এতে সে ইনশাআল্লাহ সওয়াব পাওয়া যাবে। যেমন: সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. দ্বীনের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় আয়-রোজগারের দিকে তেমন সময় দিতে পারতেন না। ফলে এতে তাদের সংসারের টানাপোড়ন চলতো। এজন্য তাঁর স্ত্রী সেলাইয়ের কাজ করে আয়-রোজগার করতেন এবং সংসারের খরচ চালাতেন।

❑ স্বামীর ব্যবসায়িক কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করা কখন হারাম?

একজন মুসলিম মহিলা যদি স্বামীর ব্যবসায় সহায়তার নামে আল্লাহর অবশ্য পালনীয় পর্দার বিধান লঙ্ঘন করে, পরপুরুষের সাথে অবাধে মেলামেশা করে, বাইরে বের হওয়ার সময় আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করে, পুরুষদের মত পোশাক-আশাক পরিধান করে, স্বামী বা মাহরাম পুরুষ ছাড়া ব্যবসায়িক কাজে দূর-দূরান্তে ছুটে বেড়ায় কিংবা স্বামীর হারাম ব্যবসা ও লেন-দেনে সাহায্য-সহযোগিতা করে তাহলে তা নিঃসন্দেহে হারাম। এমন কি কোনও ফাসেক বা দ্বীনের সঠিক জ্ঞান বঞ্চিত স্বামী যদি স্ত্রীকে এসব হারাম কাজের নির্দেশ প্রদান করে তাহলে স্ত্রীর জন্য তার নির্দেশ পালন করা বৈধ নয়।

বাস্তবতা হচ্ছে, বর্তমান যুগে দেখা যাচ্ছে, অনেক মহিলা অর্থ বাজারে ইসলামি অনুশাসনকে উপেক্ষা করে পুরুষদের মতই পুরো দস্তুর ব্যবসায়িক হয়ে স্বামী, সন্তান ও সংসারকে জলাঞ্জলি দিয়ে বসেছে। যার ফলে ঘরে ঘরে অশান্তি, তালাক, পরকীয়া, নারী নির্যাতন, সন্তান-সন্ততির লেখাপড়া, স্বাস্থ্য এবং চারিত্রিক স্খলন ইত্যাদির ভয়াবহ পরিণতি অবধারিত হয়ে উঠেছে।

কিন্তু এই হাদিসের ইংগিত সম্ভবত: এ যুগের ওইসকল নারীবাদী স্ত্রীদের দিকে ইশারা করা হয়েছে, যারা ইসলামের পর্দা ব্যবস্থাকে ‘নারীর অধিকার হরণ’ বলে মনে করে এবং ‘চাকরি ও ব্যবসা বাণিজ্যে’র খোলা ময়দানে উন্মুক্তভাবে শরিক হয়ে দেখাতে চায় যে,

১. তারা তাদের ন্যায্য অধিকারকে কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে!
২. তারা সমাজের সামনে নমুনা হতে চায়, যাতে বাকি নারীরাও শরয়ি পর্দার অনধিকার চর্চাকে ছিন্ন করে বাড়ির বাইরে ব্যাপক হারে বেরিয়ে এসে পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারে!
(আল্লাহ এদের অনিষ্ট থেকে মুসলিম জাতিকে হেফাজত করুন। আমিন)

➧ উল্লেখ্য যে, একটা হাদিসে স্ত্রীদেরকে স্বামীর ব্যবসায় সাহায্য করাকে কিয়ামতের পূর্বে সংঘটিত বিভিন্ন পাপ ও হারাম কাজের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু সনদগতভাবে তা সহিহ নয়। হাদিসটি হলো:

من اقتراب الساعة اثنتان وسبعون خصلة، إذا رأيتم الناس أماتوا الصلاة، وأضاعوا الأمانة، وأكلوا الربا…..، وشاركت المراة زوجها في التجارة،

আবু নুয়াইম তার আল-হিলইয়াহ গ্রন্থে (৩/৩৫৮)। শাইখ আলবানি বলেন, এ হাদিসটি দুর্বল। [দ্র. সিলসিলা যাইফাহ, হা/১১৭১]

আবু নুয়াইম বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে ওবায়েদ ইবনে ওমায়ের কর্তৃক বর্ণিত হাদিসটি غريب। আমার জানা মতে, তার থেকে একমাত্র ফারাজ ইবনে ফুযালাহই বর্ণনা করেছেন।

শাইখ আলবানি বলেন, এ হাদিসটি দুর্বল যেমনটি হাফেজ ইরাকী বলেছেন। এ হাদিসের সনদে (উপরোক্ত সমস্যা ছাড়) দ্বিতীয় আরেকটি সমস্যা হচ্ছে এই যে, এটি মুনকাতি (অর্থাৎ সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে)। দ্র. জঈফ ও জাল হাদিস, ১/ বিবিধ]

✅ সারসংক্ষেপ:
১. কিয়ামতের পূর্বে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপক হারে বিস্তৃত হবে। এমন পরিস্থিতিতে এ ক্ষেত্রে মহিলারা তাদের স্বামীদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করবে। এটি কেয়ামতের অন্যতম ছোট আলামত।
বর্তমান পরিস্থিতি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভবিষ্যৎ বাণীকে সত্য বলে প্রমাণ করে। যা তার নবুয়তের সত্যতার একটি প্রমাণ আলহামদুলিল্লাহ।

২. আল্লাহ তাআলা ব্যবসাকে হালাল করেছেন। অতএব একজন স্ত্রী যদি এই হালাল কাজে শরিয়তের সীমারেখার মধ্যে থেকে তার স্বামীকে সাহায্য করে তাহলে তাতে কোন দোষ নেই। হারাম তখন হবে যখন স্বামীকে ব্যবসায় সাহায্য করার নামে একজন মহিলা পর্দা লঙ্ঘন এবং অন্যান্য হারাম কর্মে লিপ্ত হবে। আল্লাহু আলাম।▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

নারীরা শয়তানের ফাঁদ শীর্ষক প্রচলিত হাদিসটি জাল বা বানোয়াট

 আমাদের সমাজে নিম্নোক্ত হাদিসটি ব্যাপকভাবে প্রসিদ্ধ। অনেক ইসলামি বই-পুস্তক এবং বক্তাদের মুখে তা প্রায় শোনা যায়। প্রচলিত হাদিসটি হলো,

النساء حبائل الشيطان
“নারীরা শয়তানের ফাঁদ।” কিন্তু মুহাদ্দিসদের গবেষণায় উক্ত হাদিসটি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদিস হিসেবে প্রমাণিত নয়। অনেক মুহাদ্দিসের মতে তা বানোয়াট বা জাল। আবার অনেকের মতে তা সনদগতভাবে অত্যন্ত দুর্বল।

নিম্নে এ ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের মতামত উল্লেখ পূর্বক হাদিসটি মান উল্লেখ করা হলো:

◈ ১. আবুশ শাইখ আসপাহানি [আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ আসপাহানি (জন্ম:২৭৪, মৃত্যু: ৩৬৯ হিজরি মোতাবেক ৮৮৭-৯৭৯ খৃষ্টাব্দ)] তার আল আমসাল গ্রন্থে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি লম্বা বক্তৃতা উল্লেখ করেছেন। সে বক্তৃতার মধ্যে উক্ত বাক্যটি রয়েছে। কিন্তু উক্ত বক্তৃতাটি সহিহ সনদে প্রমাণিত নয়। বরং তা মুহাদ্দিসগণের নিকট ضعيف جدا বা অত্যধিক দুর্বল। কেননা এর সনদে দু জন অভিযুক্ত রাবি (বর্ণনাকারী) রয়েছে। যেমন:

◆ ক. আবু উবায়দ আল আত্তার। তিনি متروك الحديث বা মুহাদ্দিসগণের নিকট পরিত্যাজ্য।
◆ খ. আমর বিন সাবেত। এই ব্যক্তি শিয়া-রাফেজি এবং দুর্বল।

◈ ২. এ হাদিসটি মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-এ ইবনে মাসউদ রা. থেকে মওকুফ সূত্রে উল্লেখিত হয়েছে। অর্থাৎ এই সূত্র অনুযায়ী এটি প্রখ্যাত সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর বক্তব্য; আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদিস নয়।

◈ ৩. ইমাম বায়হাকি তার দালায়েলুন নবুওয়াহ কিতাবেও উক্ত লম্বা বক্তৃতাটি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেটিও সনদগতভাবে শুদ্ধ নয় বরং তা ضعيف جدا বা অত্যধিক দুর্বল। কেননা এর বর্ণনা সূত্রে ৪ জন রাবি বা বর্ণনাকারীর ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণ আপত্তি করেছেন। মুহাদ্দিসগণ বলেন,
ابو أمية الطرسوسى ضعيف.
يعقوب بن محمد بن عيسى الزهرى و هو ضعيف في حديثه نكارة، و لكن يعتبر به.
عبد العزيز بن عمران الزهرى و هو ابن أبي ثابت و هو متروك الحديث.
عبدالله بن مصعب و أبيه لم أعرفهما

◈ ৪. এ ছাড়াও কাসেম বিন মুসা [মৃত্যু: ৩০২ হিজরি] তার জুয-এ উক্ত লম্বা বক্তৃতাটি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেটিও সনদগতভাবে মুনকার। কারণ মুহাদ্দিসগণ বলেন,
عبد الله بن مصعب بن خالد الجهنى و أبيه مجهولان

“আব্দুল্লাহ বিন মুসআব বিন খালেদ আল জুহানি বর্ণনা করেছেন তার পিতা থেকে। কিন্তু দুজনই মাজহুল বা অজ্ঞাত পরিচয়।”

قال العراقي في تخريج الاحياء:” أخرجه الأصفهاني في الترغيب والترهيب من حديث خالد بن زيد الجهني بإسناد فيه جهالة
[সোর্স: al-maktaba]

◈ ৫. ইমাম সাখাবি এ হাদিসটিকে তার বানোয়াট বা জাল হাদিস সংকলন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
[দ্রষ্টব্য: আল মাকাসিদুল হাসানা كتاب المقاصد الحسنة في بيان كثير من الأحاديث المشتهرة على الألسنة, বানোয়াট হাদিস নং-১২৭৪]

◈ ৬. আল্লামা মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন আলবানি রাহ. “নারীরা শয়তানের ফাঁদ” শীর্ষক প্রচলিত এ হাদিসটি সম্পর্কে বলেন,

هذا لا اصل له في الحديث ، ومعناه لا ينبغي إطلاقه علي الناس لأن فيه هضم لهن بصورعامة والنساء كما قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ( شقائق الرجال) ففيهن الطالحة والصالحة كالرجال ، وإن كان الرجال تميزوا عليهن بكثرة الصالحين كما أشار الرسول صلى الله عليه وسلم بقوله كمل من الرجال كثير ولم يكمل من النساء إلا آسيا ومريم

“হাদিসে এ কথার কোনও ভিত্তি নাই। আর তার মমার্থটাও মানুষের উপর ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা উচিত নয়। কারণ তা সাধারণভাবে নারীদের জন্য অপমান জনক। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

النِّسَاءُ شَقَائِقُ الرِّجَالِ

“নারীরা পুরুষদের সমকক্ষ।”

সুতরাং পুরুষদের মত তাদের মধ্যেও ভালো-মন্দ রয়েছে। যদিও পুরুষরা এদিক থেকে বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত যে, তাদের মধ্যে নারীদের তুলনায় সৎ লোকের সংখ্যা বেশি। যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন,

كَمَلَ مِنَ الرِّجالِ كَثِيرٌ، ولَمْ يَكْمُلْ مِنَ النِّساءِ إلَّا مَرْيَمُ بنْتُ عِمْرانَ، وآسِيَةُ امْرَأَةُ فِرْعَوْنَ

“পুরুষদের মধ্যে অনেক মানুষ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। কিন্তু মহিলাদের মধ্যে ইমরান কন্যা মরিয়ম আ. এবং ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া আ., খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ-এর মত আর কেউ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেনি।” (অন্য বর্ণনায় ফাতিমা রা.-এর নাম এসেছে-অনুবাদক)। [source: kulalsalafiyee]

তবে অন্যত্র এ হাদিসটিকে জইফ বা দুর্বল বলেছেন। [সিলসিলা যাইফা, ২৪৬৪, যইফুত তারগিব, ১৪১৪]

অবশ্য এ হাদিস বানোয়াট হলেও এ মর্মার্থটাকে অনেক আলেম সঠিক বলেছেন। কারণ শয়তান নারীর ফাঁদে ফেলে অসংখ্য দ্বীনদার-পরহেজগার ভালো মানুষকে ধ্বংস করেছে। এটা বাস্তব সত্য। অর্থাৎ এটি হাদিস নয় তবে একটি আরবি প্রবাদ বাক্য। এর মাধ্যমে দুশ্চরিত্রা নারীদের থেকে সাবধান করা হয়েছে; সকল নারী উদ্দেশ্য নয়।

নারী ফিতনার ব্যাপারে কুরআন এবং বিশুদ্ধ হাদিসে অনেক সতর্কতা মূলক বক্তব্য এসেছে। সেগুলোই আমাদের জন্য যথেষ্ট। এসব জাল-বানোয়াট বা অপ্রমাণিত হাদিসের আদৌ কোনও প্রয়োজন নেই। আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরণের ফিতনা-ফ্যাসাদ থেকে রক্ষা করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম।

লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Translate