Wednesday, September 3, 2025

ইসলামে মেহমানদারীর বিধান ও আদব সমূহ

 প্রশ্ন: ইসলামে মেহমানদারীর বিধান কি? আতিথেয়তার আদব সমূহ সম্পর্কে শার’ই নির্দেশনা জানতে চাই?

▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর প্রকৃত মুসলিম মেহমান আসলে কখনো বিরক্ত হয় না, মন খারাপও করে না। বরং সে খুশি হয় এবং মেহমানের সম্মান ও ইজ্জত যথাযথভাবে রক্ষা করে। কারণ সে জানে, মেহমান আসলে তার অধিকার অনুযায়ী সম্মান পাবে। আবু শুরাইহ আল আদাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) যখন এ হাদীসটি বলেছেন তখন আমার দু’কান তা শুনেছে এবং দু’চোখ তা দেখেছে। তিনি বলেছেন-من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فليكرم ضيفه جائزته. قالوا وما جائزته قال يومه وليله والضيافة ثلاثة ايام فما كان وراء ذٰلك فهو صدقة عليه. وقال من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فليقل خيرا أو ليصمت”যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে তার উচিত সাধ্যমত অতিথি আপ্যায়ন করা। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, সাধ্যমত কথার তাৎপর্য কী? তিনি বললেন, একদিন একরাত। মেহমানদারী সর্বোচ্চ তিন দিন। এর বেশী যদি কেউ করে সেটি তার বদান্যতা। তিনি আরও বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে তার উচিত ভালো কথা বলা অথবা চুপ থাকা”।(সহীহ বুখারী; হা/৫৬৭৩; সহীহ মুসলিম হা/৪৮) লোকমান হাকিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, চারটি বস্তু থেকে কারোরই অনীহা থাকা উচিৎ নয়, যদিও সে আমীর বা ভদ্রলোক হোক: (১).পিতার সম্মানে জায়গা ছেড়ে দেওয়া। (২).মেহমানের মেহমানদারি করা। (৩).স্বীয় বাহনের পরিচর্যা করা। (৪).আলিমের খেদমত করা। বকর বিন আব্দুল্লাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,‌إِذَا ‌أَتَاكَ ‌ضَيْفٌ فَلَا تَنْتَظِرْ بِهِ مَا لَيْسَ عِنْدَكَ، وَتَمْنَعْهُ مَا عِنْدَكَ، بَلْ قَدِّمْ إِلَيْهِ مَا حَضَرَ، وَانْتَظِرْ بِهِ بَعْدَ ذَلِكَ مَا يَزِيدُ مِنْ إِكْرَامِهِ، “যখন তোমার বাড়িতে কোন মেহমান আসবে, তখন তোমার ঘরে যা নেই তা আনার জন্য মেহমানকে অপেক্ষায় রেখো না। আর তোমার ঘরে যা আছে তা দিয়ে আপ্যায়ন করবে না এমনটি যেন না হয়; বরং উপস্থিত যা পাও, তা-ই তার সামনে পেশ কর। এরপর অন্য কিছু দিয়ে আরো আপ্যায়ন করার ব্যবস্থা করতে পার”।(বুরজুলানী, আল-কারামু ওয়াল জূদ, পৃষ্ঠা: ৫২)
.
▪️ইসলামে মেহমানদারি করার শারঈ হুকুম কি?
.
ইসলামে অতিথেয়তার গুরুত্ব অপরিসীম।শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে আতিথেয়তার হুকুম সম্পর্কে ইমামগনের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।আলেমগন কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে এটিকে তিন স্তরে ভাগ করেছেন:
.
(১).বাধ্যতামূলক (ওয়াজিব) অধিকার: একজন অতিথিকে কমপক্ষে একদিন একরাত স্বাগত ও সেবা দেওয়া।
(২).সুন্নত আদব: অতিথিকে তিন দিনের জন্য যত্ন ও সম্মান প্রদর্শন করা।
(৩).সাধারণ সদকা:আর তিন দিনের পর থেকে তা হবে সদকা ও সৎকাজ,ব্যক্তি চাইলে করবে, চাইলে করবে না।
অর্থাৎ এটি ব্যক্তির ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। এইভাবে অতিথির সম্মান নিশ্চিত করা ইসলামে অত্যন্ত প্রিয় ও প্রশংসনীয় কাজ হিসেবে বিবেচিত।আর নবী (ﷺ) সহিহ হাদিসে, এ তিনটি স্তরই বর্ণনা করেছেন যা আবু শুরাইহ আল খুযায়ী থেকে এসেছে।(সহীহ বুখারী হা/৫৬৭৩; সহীহ মুসলিম হা/৪৮)
.
ইমাম খাত্তাবি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন বলেছেন:
قوله : (جائزته يوم وليلة) سئل مالك بن أنس عنه فقال : يُكرمه ، ويتحفه ، ويخصه ، ويحفظه ، يوماً وليلة ، وثلاثة أيام ضيافة .قلت : يريد أنه يتكلف له في اليوم الأول بما اتسع له من بِر ، وألطاف ، ويقدِّم له في اليوم الثاني والثالث ما كان بحضرته ، ولا يزيد على عادته ، وما كان بعد الثلاث : فهو صدقة ، ومعروف ، إن شاء فعل ، وإن شاء ترك .
(তার অতিথি সেবার অধিকার এক দিন ও এক রাত)। এ বিষয়ে মালিক ইবনে আনাসকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন: তাকে সম্মান করবে, উপহার দেবে, বিশেষভাবে যত্ন নেবে এবং তার হেফাজত করবে একদিন ও একরাত, আর তিন দিন হলো অতিথেয়তা।আমি (খাত্তাবি) বলি: তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে প্রথম দিনে তার জন্য সাধ্যানুযায়ী যত্ন ও অনুগ্রহ করবে, আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে তার সামনে যা উপস্থিত আছে তাই পরিবেশন করবে, অতিরিক্ত কিছু করবে না। আর তিন দিনের পর থেকে তা হবে সদকা ও সৎকাজ, চাইলে করবে, চাইলে করবে না।”(মাআলিমুস সুনান; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৩৮)
.
আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, আল-মুহাদ্দিস, আল-মুফাসসির, আল-ফাক্বীহ, ইমাম ইবনু ক্বাইয়্যিম আল-জাওযিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন:
إن للضيف حقّاً على مَن نزل به ، وهو ثلاث مراتب : حق واجب ، وتمام مستحب ، وصدقة من الصدقات ، فالحق الواجب : يوم وليلة , وقد ذكر النبي صلى الله عليه وسلم المراتب الثلاثة في الحديث المتفق على صحته من حديث أبي شريح الخزاعي – وساق الحديث السابق –
“অতিথির অধিকার রয়েছে যে ব্যক্তি তার কাছে অবতরণ করে, আর এর তিনটি স্তর আছে: একটি হচ্ছে বাধ্যতামূলক অধিকার, আরেকটি পূর্ণাঙ্গ সুন্নত আদব, আরেকটি হলো সাধারণ সদকা। বাধ্যতামূলক অধিকার হলো: একদিন ও একরাত। আর নবী ﷺ এ তিনটি স্তরই বর্ণনা করেছেন সহিহ হাদিসে, যা আবু শুরাইহ আল খুযায়ী থেকে এসেছে এবং তিনি আগের হাদিস বর্ণনা করেছেন।”(ইবনু ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৬৫৮)
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন;والواجب يوم ليلة ، والكمال ثلاثة أيام ؛ لما روى أبو شريح الخزاعي – وساق الحديث -“বাধ্যতামূলক হলো এক দিন ও এক রাত, আর পূর্ণতা হলো তিন দিন; কারণ আবু শুরাইহ আল-খুযায়ী থেকে হাদিস এসেছে এবং তিনি হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।”(ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী, খন্ড: ১১; পৃষ্ঠা: মুগনী ১১/৯১)
.
অতিথি যাকে সম্মান করা ওয়াজিব,এবং যার অধিকার গৃহস্বামীর ওপর প্রযোজ্য, তিনি হলেন ভ্রমণকারী অতিথি অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজের শহর বা গ্রাম ছেড়ে অন্য জায়গা থেকে এসেছে। সুতরাং যার ঘরে তিনি অবতরণ করবেন, তার কর্তব্য হলো তাকে আহার করানো ও যথাযথ সম্মান দেওয়া। যদি গৃহস্বামী তা না করে, তবে অতিথির তার সম্পদের ওপর অধিকার থাকে।তবে এ বিধান স্থানীয় দর্শনার্থীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, যে ভ্রমণকারী নয়। এ ধরনের অতিথিকে বলা যেতে পারে: “ফিরে যান।” যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:وَإِنْ قِيلَ لَكُمُ ارْجِعُوا فَارْجِعُوا هُوَ أَزْكَى لَكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ
“যদি তোমাদেরকে বলা হয়: ‘ফিরে যাও’, তবে তোমরা ফিরে যাবে; এটা তোমাদের জন্য অধিক পবিত্র। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবগত।” (সূরা নূর: ২৮) আমাদের এ কথার সমর্থনে বহু সহীহ হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে অতিথির অধিকার মূলত ভ্রমণকারীর জন্য, স্থানীয় অধিবাসীর জন্য নয়। যেমন উকবাহ বিন আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বললাম, আপনি আমাদেরকে বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে থাকেন। আমরা এমন সব জনপদে যাত্রাবিরতি করি যারা আমাদের আপ্যায়ন করে না। এ ব্যাপারে আপনার কি অভিমত? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বলেনঃ যদি তোমরা কোন বসতি এলাকায় যাত্রাবিরতি করো এবং তারা মেহমানের আপ্যায়নযোগ্য ব্যবস্থা করলে তা তোমরা গ্রহণ করো। আর যদি তারা তা না করে, তবে তাদের থেকে তাদের সামর্থ্য অনুসারে মেহমানদারির ন্যায্য দাবি আদায় করো।”(সহীহুল বুখারী হা/২৪৬১, ৬১৩৭, সহীহ মুসলিম হা/১৭২৭) আতিথেয়তার (অতিথি আপ্যায়নের) বিধান এবং কার ওপর এটি প্রযোজ্য এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
.
আল মাওসু‘আতুল ফিকহিয়্যাহ-তে বলা হয়েছে:
“وقد ذهب الحنفية والمالكية والشافعية إلى أن الضيافة سنَّة ، ومدتها ثلاثة أيام ، وهو رواية عن أحمد .والرواية الأخرى عن أحمد – وهي المذهب – أنها واجبة ، ومدتها يوم ليلة ، والكمال ثلاثة أيام . وبهذا يقول الليث بن سعد .ويرى المالكية وجوب الضيافة في حالة المجتاز الذي ليس عنده ما يبلغه ويخاف الهلاك .والضيافة على أهل القرى والحضر ، إلا ما جاء عن الإمام مالك ، والإمام أحمد – في رواية – أنه ليس على أهل الحضر ضيافة ، وقال سحنون : الضيافة على أهل القرى ، وأما أهل الحضر فإن المسافر إذا قدم الحضر وجد نزلاً – وهو الفندق – فيتأكد الندب إليها ولا يتعين على أهل الحضر تعينها .
“হানাফি, মালিকি ও শাফেয়ি ফকিহদের মতে অতিথেয়তা সুন্নাত, আর এর মেয়াদ তিন দিন। ইমাম আহমদ (রাহিমাহুল্লাহ)-এরও একটি বর্ণনা এ কথাই নির্দেশ করে। তবে তাঁর আরেকটি বর্ণনা যেটি তাঁর মাযহাব হিসেবেই গ্রহণ করা হয়েছে সেটা হলো: অতিথেয়তা ওয়াজিব; এর মেয়াদ এক দিন এক রাত। আর তিন দিন পর্যন্ত তা পূর্ণতা বা সম্পূর্ণ সুন্নাতরূপে গণ্য হবে। এ মতের সাথে ইমাম লাইস ইবনু সা‘দ রহ.-ও একমত। মালিকিরা আরও বলেছেন: যদি কোনো পথিক থাকে যার কাছে কিছুই নেই, আর আশঙ্কা থাকে যে সে ক্ষুধায় কষ্ট পেয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন তার জন্য অতিথেয়তা ওয়াজিব হবে। অতিথেয়তা গ্রামাঞ্চল ও শহরের লোকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে ইমাম মালিক রহ. এবং ইমাম আহমদ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর একটি বর্ণনায় এসেছে: শহরের লোকদের জন্য অতিথেয়তা (ওয়াজিব হিসেবে) নেই। সানহুন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: অতিথেয়তা গ্রামীণ লোকদের ওপর ওয়াজিব, কিন্তু নগরবাসীর ওপর নয়। কারণ, শহরে আগন্তুক এলে সেখানে সরাইখানা (হোটেল) পাওয়া যায়। তাই শহরে অতিথেয়তা করার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে ঠিকই, তবে তা শহরের অধিবাসীদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।(আল-মাউসু‘আতুল ফিকহিয়্যাহ, খণ্ড: ২৮, পৃষ্ঠা: ৩১৬–৩১৭)
.
সবচেয়ে সঠিক অভিমত আল্লাহই সর্বজ্ঞাত হলো: পথচারী মুসাফিরের জন্য আতিথেয়তা করা ওয়াজিব। এ হুকুমে শহরবাসী ও গ্রামবাসীর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই; বরং সবার জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] হাজ্জাওয়ির (রহিমাহুল্লাহ) এই কথার ব্যাখ্যায় বলেছেন:
وَتَجِبُ ضِيَافَةُ المُسْلِمِ الْمُجْتَازِ بِهِ فِي الْقُرَى يَوْماً وَلَيْلَةً” .
قال : قوله : ” وتجب ضيافة المسلم ” : ” تجب ” هذا بيان حكم الضيافة ، والضيافة أن يَتلقَّى الإنسان مَن قدم إليه ، فيكرمه ، وينزله بيته ، ويقدم له الأكل ، وهي من محاسن الدين الإسلامي ، وقد سبقنا إليها إبراهيم عليه الصلاة والسلام ، كما قال الله تعالى : ( هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ ضَيْفِ إِبْرَاهِيمَ الْمُكْرَمِينَ ) الذاريات/ 24 ، أي : الذين أكرمهم إبراهيم ، ولا يمتنع أن يقال : والذين أكرمهم الله عزّ وجل بكونهم ملائكة .فحكم الضيافة واجب ، وإكرام الضيف – أيضاً – واجب ، وهو أمر زائد على مطلق الضيافة ، قال النبي عليه الصلاة والسلام : ( من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فليكرم ضيفه ) ، أي : من كان يؤمن إيماناً كاملاً : فليكرم ضيفه …. قوله : ” المجتاز به ” يعني : الذي مرَّ بك وهو مسافر ، وأما المقيم : فإنه ليس له حق ضيافة ، ولو كان المقيم له حق الضيافة : لكان ما أكثر المقيمين الذين يقرعون الأبواب ! فلا بد أن يكون مجتازاً ، أي : مسافراً ومارّاً ، حتى لو كان مسافراً مقيماً يومين ، أو ثلاثة ، أو أكثر : فلا حق له في ذلك ، بل لا بد أن يكون مجتازاً .قوله : ” في القرى ” دون الأمصار ، والقرى : البلاد الصغيرة ، والأمصار : البلاد الكبيرة ، قالوا : لأن القرى هي مظنة الحاجة ، والأمصار بلاد كبيرة فيها مطاعم ، وفنادق ، وأشياء يستغني بها الإنسان عن الضيافة ، وهذا – أيضاً – خلاف القول الصحيح ؛ لأن الحديث عامّ ، وكم من إنسان يأتي إلى الأمصار وفيها الفنادق ، وفيها المطاعم ، وفيها كل شيء ، لكن يكرهها ويربأ بنفسه أن يذهب إليها ، فينزل ضيفاً على صديق ، أو على إنسان معروف ، فلو نزل بك ضيف – ولو في الأمصار – : فالصحيح : الوجوب .
“গ্রামে পথিক মুসলিমের জন্য এক দিন এক রাতের আতিথেয়তা ওয়াজিব।তিনি বলেন: “আতিথেয়তা ওয়াজিব” বলতে বোঝানো হয়েছে যে, যখন কোনো ব্যক্তি তোমার কাছে আসে, তাকে সম্মান প্রদর্শন করা, তার জন্য ঘরে স্থান দেওয়া এবং খাবার পরিবেশন করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত। আতিথেয়তার সূচনা করেছিলেন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম।আল্লাহ বলেন: “আপনার কাছে কি ইবরাহীমের সম্মানীত মেহমানদের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে?”(সূরা যারিয়াত: ২৪) অর্থাৎ ইবরাহীম যে মেহমানদের সম্মান করতেন, তারা আল্লাহর দৃষ্টিতেও সম্মানিত ছিলেন। কারণ তারা ছিলেন ফেরেশতা। অতএব আতিথেয়তার হুকুম ওয়াজিব। অতিথিকে সম্মান করাও ওয়াজিব, যা সাধারণ আতিথেয়তার অতিরিক্ত একটি শিষ্টাচার। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:”যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী, সে যেন তার অতিথিকে সম্মান করে।অর্থাৎ যে ব্যক্তি পূর্ণ ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই অতিথিকে সম্মান করে। পথিক বলতে বোঝায় সেই ব্যক্তি, যে তোমার কাছে এসেছে কিন্তু সফরে আছে। স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ব্যক্তির জন্য আতিথেয়তার অধিকার প্রযোজ্য নয়। কারণ যদি স্থায়ীদের জন্যও তা প্রযোজ্য হত, তাহলে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ দরজায় কড়া নাড়ত। এমনকি যদি কেউ দু’দিন বা তিন দিন অবস্থান করে, তাহলেও তার জন্য আতিথেয়তার হক নেই; তিনি অবশ্যই পথচলতি হতে হবে।“গ্রামে” বলা হয়েছে শহরের বদলে,গ্রাম বলতে ছোট জনপদকে বোঝানো হয়েছে, আর শহর বলতে বড় নগরকে। তারা বলেন:কারণ গ্রামে সাধারণত সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকে। অন্যদিকে শহরে হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য ব্যবস্থা থাকে, যা মানুষের আতিথেয়তার ওপর নির্ভরশীলতা কমায়। তবে হাদীসের দিক থেকে এটিকে সীমাবদ্ধ করা ঠিক নয়। কারণ হাদীসের বক্তব্য সাধারণ। অনেক সময় এমন ঘটে যে কেউ বড় শহরে আসলেও হোটেল বা রেস্টুরেন্ট পছন্দ করে না, বরং কোনো বন্ধু বা পরিচিত জনের বাসায় অতিথি হতে চায়। সুতরাং, যদি শহরেও অতিথি আসে সঠিক মত হলো: তার আতিথেয়তা ওয়াজিব।”(ইবনু উসাইমীন; শারহুল মুমতি আলা জাদিল মুস্তাকনি খণ্ড: ১৫; পৃষ্ঠা: ৪৮–৫১)।
.
▪️এক নজরে আতিথেয়তার আদব সমূহ:
মানুষ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী বা অন্য কারো নিকটে অতিথি হয় ও আতিথ্য গ্রহণ করে। ইসলাম এক্ষেত্রে কিছু আদব পালন করার নির্দেশ দিয়েছে। এগুলি মেনে চলার মাধ্যমে পাস্পরিক সম্পর্ক সুন্দর করা এবং নেকী অর্জনের চেষ্টা করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। নিম্নে আতিথেয়তার আদব উল্লেখ করা হল:
.
(১).মেহমানকে স্বাগত জানানো: মেহমানকে অভ্যর্থনা জানানো মুস্তাহাব। রাসূল (ﷺ) তাঁর নিকটে আগত মেহমানদেরকে স্বাগত জানাতেন।(দেখুন সহীহ বুখারী হা/৩৫৭, ৩১৭১; সহীহ মুসলিম হা/৩৩৬)
.
(২).অতিথিকে সম্মান করা: অতিথিকে সম্মান করা রাসূল (ﷺ)-এর নির্দেশ। তাই সাধ্যমত মেহমানকে সম্মান করা মেযবানের জন্য যরূরী। রাসূল (ﷺ) বলেন,وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ،”যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন মেহমানের সম্মান করে”।(সহীহ বুখারী হা/৬০১৮-১৯; সহীহ মুসলিম হা/৪৭)
.
(৩).অতিথিকে দ্রুত খাবার পরিবেশন করা ও তার প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রাখা: অতিথি এলে বিলম্ব না করে খাবার পরিবেশন করা উচিত, যেমন নবী ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) তাঁর অতিথিদের জন্য দ্রুত গো-মাংস প্রস্তুত করে সামনে রেখেছিলেন।”(সূরা যারিয়াত: ২৪-২৭)।একইভাবে তাদের জন্য গোসলখানা, টয়লেট ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবস্থাও করা উচিত।
.
(৪).সম্ভব হলে মেহমানের আপ্যায়ন নিজে করা: মেহমানের আপ্যায়ন সাধ্যপক্ষে মেযবানকে নিজেই করা উচিত। যেমন ইবরাহীম (আঃ) নিজেই মেহমানদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করেছিলেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, فَرَاغَ إِلَى أَهْلِهِ فَجَاءَ بِعِجْلٍ سَمِينٍ، فَقَرَّبَهُ إِلَيْهِمْ قَالَ أَلَا تَأْكُلُونَ، ‘অতঃপর সে দ্রুত চুপিসারে নিজ পরিবারবর্গের কাছে গেল এবং একটি মোটা-তাজা গো-বাছুর (ভাজা) নিয়ে আসল। অতঃপর সে তা তাদের সামনে পেশ করল ও বলল, ‘তোমরা কি খাবে না’? (সূরা যারিয়াত: ২৬-২৭)। এজন্য ইমাম বুখারী অধ্যায় রচনা করেছেন,باب إِكْرَامِ الضَّيْفِ وَخِدْمَتِهِ إِيَّاهُ بِنَفْسِهِ ‘মেহমানের সম্মান করা এবং নিজেই মেহমানের খিদমত করা’ অনুচ্ছেদ।(সহীহ বুখারী, তরজমাতুল বাব, নং ৮৫)
.
(৫).অতিথির সাথে অভিনয় বা ভান না করা: অতিথির সাথে কৃত্রিম আচরণ না করা কিংবা এমন কোন ব্যবহার না করা যাতে তার নিকটে অভিনয় প্রকাশ পায়। আনাস (রাঃ) বলেন, كُنَّا عِنْدَ عُمَرَ فَقَالَ نُهِينَا عَنِ التَّكَلُّفِ، ‘আমরা ওমর (রাঃ)-এর কাছে ছিলাম। তখন তিনি বললেন, (যাবতীয়) কৃত্রিমতা হ’তে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে।(সহীহ বুখারী হা/৭২৯৩) অন্যত্র রাসূল (ﷺ) বলেন,لاَ يَتَكَلَّفَنَّ أَحَدٌ لِضَيْفِهِ مَا لاَ يَقْدِرُ عَلَيْهِ-“কেউ যেন তার মেহমানের সাথে এমন কৃত্রিম আচরণ না করে, যা করার সাধ্য (প্রকৃতপক্ষে) তার নেই”।(সহীহুল জামে‘ হা/৭৬০৮; সিলসিলা সহীহাহ হা/২৪৪০)
.
(৬).অতিথিকে নিজেদের উপরে প্রাধান্য দেওয়া: নিজের ও পরিবারের প্রয়োজনের উপরে অতিথিকে প্রাধান্য দেওয়া। এতে আল্লাহর সন্তোষ লাভ করা যায়। এক্ষেত্রে আবু তালহা (রাঃ) ও তার স্ত্রী কর্তৃক মেহমান আপ্যায়নের ঘটনা স্মর্তব্য।(দেখুন বুখারী হা/৩৭৯৮; সহীহ মুসলিম হা/২০৫৪)
.
(৭).ডানদিক থেকে খাবার পরিবেশন শুরু করা: প্রথমে ডান দিক থেকে খাবার পরিবেশন করা সুন্নাত।(সহীহ বুখারী হা/২৩৫১, ২৩৫২; সহীহ মুসলিম হা/২০২৯, ২০৩০; মিশকাত হা/৪২৭৩, ৪২৭৪)
.
(৮).মেহমানের সামনে রাগ না করা ও অসহনশীল না হওয়া: মেহমানের সামনে রাগ প্রকাশ করা এবং তার সম্মুখে অসহনশীল আচরণ করা সমীচীন নয়।(দেখুন: সহীহ বুখারী হা/৬০২, ৬১৪০)
.
(৯).সেবার মাধ্যমে অতিথিকে কষ্ট না দেওয়া: অতিথির সেবা-যত্ন করতে গিয়ে এমন অতিরিক্ত কিছু না করা যাতে সেটা তার কষ্টের কারণ হয়। যেমন জোর করে বেশী খাবার তুলে দেওয়া কিংবা তার সাথে বেশী সময় দিতে গিয়ে এবং তার সাথে আলাপচারিতা করতে গিয়ে তার বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটানো ইত্যাদি।
.
(১০).মেহমানের কারণে বিরক্তি বা অস্বস্তি প্রকাশ না করা: মেহমানের আগমনের কারণে বিরক্তি প্রকাশ না করা এবং তার সাথে কথাবার্তা ও আচরণে যেন সেটা প্রকাশ না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। তার সাথে হাসিমুখে ও ভালভাবে কথা বলা এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাক্ষাৎ করা। তার আগমনে মেযবান অসন্তুষ্ট নয়, এটা যাতে মেহমানের সামনে ফুটে ওঠে সেই চেষ্টা করা।আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,«الكلمة الطيبة صدقة»“সুন্দর কথা সদকা স্বরূপ।”(সহীহ বুখারী হা/২৯৮৯)
.
(১১).মেহমান খাবার গ্রহণ শেষ করার পূর্বে খাবার তুলে না নেওয়া: খাবার পরিবেশনের পরে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, মেহমান তার প্রয়োজন মত খাবার গ্রহণ করেছেন কি-না। তার প্রয়োজন পূর্ণ হওয়ার পূর্বে খাবার উঠিয়ে নেওয়া সমীচীন নয়। অনেক ক্ষেত্রে মেহমান লজ্জায় খাবার কম খেতে পারে কিংবা খাদ্যের পাত্র তুলে নেওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করলে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও তিনি লজ্জায় খাবার গ্রহণ শেষ করতে পারেন। তাই পাত্র তোলার পূর্বে এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
.
(১২).বিদায়কালে মেহমানের সাথে বাড়ীর দরজা পর্যন্ত এগিয়ে যাওয়া: মেহমান যখন চলে যেতে চাইবেন তখন তার সাথে বাড়ীর দরজা পর্যন্ত এগিয়ে যাওয়া মুস্তাহাব। এতে বদান্যতা যেমন প্রকাশ পায়, তেমনি এটা মেহমানের সমাদর ও যত্নের পূর্ণতা এবং তার উত্তম আতিথেয়তার বহিঃপ্রকাশ”(ফাৎহুল বারী; খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ৫২৮)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি
সম্পাদনায়: ইব্রাহিম বিন হাসান হাফিজাহুল্লাহ।
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।

ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ এর কিছু নাসীহাহ

 1: সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেন:

إذا تزوج الرجل بإمرأة صالحة، فإنه يعيش حياة مُنسجمة حتى لو كان فقيرًا رزقنا الله وإياكم.

“যদি একজন পুরুষ একজন সৎ ও চরিত্রবান নারীকে বিয়ে করেন, তাহলে তিনি একটি সুখী ও শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করবেন,এমনকি যদি তিনি (পুরুষ) গরীবও হন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এমন একজন (রিজিক) জীবনসঙ্গী দান করুন”। (আল-ইত্তিহাফ; পৃষ্ঠা: ৮৫৮)
.
2: বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম,সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন : আমি একজন নারী। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য আমার ছবি উঠানো আবশ্যক। সুতরাং এক্ষেত্রে আমার জন্য ছবি তোলা কি বৈধ হবে?

শাইখ উত্তরে বলেন,

الطالبة والمرأة على وجه العموم لا يجوز تصويرها لأن تصويرها أشد من تصوير الرجل لأن صورتها ستتداول ويتناقلها الرجال فلا يجوز لها ذلك فإذا توقف تعليمها على الصورة فأنا أرى أنها تترك التعلم لأن التعلم ليس لازم لها إذا تعلمت أمور دينها وأمور صلاتها هذا يكفى من التخصص فالتصوير حرام شديد التحريم وتصوير النساء أشد لما فيه من الفتنه فالتعليم الذي ليس هو واجب وإنما هو من النقل أو من فضائل الأعمال لا ترتكب المحرم من أجله نعم

“স্ত্রীলোক হোক কিংবা কোন ছাত্রী উভয়ের জন্য একই বিধান যে, তাদের ছবি তোলা বৈধ নয়। কেননা তাদের ছবি পুরুষদের ছবির চেয়ে বেশি ফেতনা সৃষ্টি করে এবং তাদের ছবি নিয়ে ছেলেরা বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য ও বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করে যেটা বৈধ নয়। তবে যদি এই ছবির জন্য তার জ্ঞানার্জন করা বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ হল- সে সেখানে জ্ঞানার্জন করা থেকে বিরত থাকবে। কেননা তার জন্য সেখানে জ্ঞানার্জন করা আবশ্যক নয়। যদি সে দ্বীনি বিষয়ে শিক্ষা অর্জন করে থাকে, তাহলে এটাই তার জন্য যথেষ্ট। কেননা ছবি হারাম। এবং এটি ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আর মেয়েদের ছবি তোলা তো আরো নিষিদ্ধ। কেননা তাতে ফেতনার আশংকা অনেক বেশি এবং এমন কিছু বিষয় জানা যার মাধ্যমে তোমার দ্বীন স্থির থাকবে এসব বিষয়ে অতিরিক্ত জ্ঞানার্জন আবশ্যক নয়। বরং এটি নফল কিংবা ফাযায়েলে আমলের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই এই কারণে সে যেন কোন হারাম কাজ সম্পাদন না করে”।(শাইখের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ফাতওয়া নং-২০৩২)

3: বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম,সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন : শিক্ষার কি নির্ধারিত কোন সময় আছে, নাকি একজন ব্যক্তি সারা জীবনই জ্ঞানার্জনে অব্যাহত থাকবে?

উত্তরে শাইখ বলেন,

طلب العلم ليس له وقت محدد في حياة الإنسان يطلب العلم في كل حياته العلم لا يشبع منه وليس له نهاية كلما تزود الإنسان منه ازداد من الخير والعمل الصالح فلا يقف عن طلب العلم وفوق كل ذى علم عليم (فَتَعَالَى اللَّهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ وَلَا تَعْجَلْ بِالْقُرْآنِ مِن قَبْلِ أَن يُقْضَى إِلَيْكَ وَحْيُهُ وَقُل رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا) [سورة طـه: 114] التزود من طلب العلم مطلوب ولا يتوقف الإنسان عند حد منع وهو يقدر على المواصلة على طلب العلم فيواصل طلب العلم وكل ما بادر من الصغر فهو أحسن من الطالب الذي يطلب العلم بعدما يكبر وإن كان كل ذلك خير لكن طلب العلم في سن الشباب مبكرا يكون أفضل ولهذا يقولون العلم في الصغر كالنقش في الحجر لأن ذاكرة الشاب تختلف عن ذاكرة الكبير ذاكرة الشاب تكون أصفى وأقوى والعلم يثبت فيها أكثر مما يثبت في ذاكرة الكبير.

“জ্ঞান অন্বেষণের নির্ধারিত কোন সময় নেই। একজন ব্যক্তি সারাজীবনই জ্ঞানার্জনে অতিবাহিত করবে। আর জ্ঞানার্জনে কখনও পরিতৃপ্ত হওয়া যায় না এবং শিক্ষার কোন সমাপ্তিও নেই। যখন কোন ব্যক্তি এই জ্ঞান সরবরাহ করবে তখন তার কল্যাণ অর্জন ও সৎকর্ম আরো বৃদ্ধি পাবে। কাজেই কোন ব্যক্তি যেন জ্ঞানার্জনে ক্ষান্ত না হয়। মহান আল্লাহ বলেন, وَ فَوۡقَ کُلِّ ذِیۡ عِلۡمٍ عَلِیۡمٌ ‘আর প্রত্যেক জ্ঞানবান ব্যক্তির উপর আছে সর্বজ্ঞানী’ (সুরা ইউসুফ : ৭৬)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,وَقُلۡ رَّبِّ زِدۡنِیۡ عِلۡمًا ‘হে আমার রব! আমাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ করুন’ (সুরা ত্ব-হা: ১১৪)। সুতরাং জ্ঞান সরবরাহ করা অপরিহার্য। কাজেই একজন ব্যক্তির সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সে যেন জ্ঞান অন্বেষণে অব্যাহত থাকতে ক্ষান্ত না হয়। এক্ষেত্রে তার উচিত হল ভালোভাবে জ্ঞানার্জন চালিয়ে যাওয়া। যদি কেউ ছোটতে জ্ঞানার্জন শুরু করে তাহলে সে তো ঐ ছাত্রের চেয়ে উত্তম বলে বিবেচিত হবে যে বড় হয়ে জ্ঞান অন্বেষণ করে। যদিও যে কোন বয়সেই জ্ঞানার্জনে কল্যাণ নিহিত। কিন্তু যুবক বয়সে দ্রুত ইলম হাসিল করা উৎকৃষ্টতর। এ কারণে আলেমগণ বলেন, العلم في الصغر كالنقش في الحجر ‘শৈশবে জ্ঞান আহরণ করা পাথরে খোদায় করার ন্যায়’। কেননা তরুণদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধদের স্মৃতি শক্তির চেয়ে আলাদা হয়। তাদের মেধা অনেক স্বচ্ছ ও সুদৃঢ় হয়। অধিকন্তু বৃদ্ধ বয়সের চেয়ে যুবক বয়সে অনেক বেশি জ্ঞান অন্বেষণ করা যায়।(শাইখের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ফাতওয়া নং-২০৩২)।

4: বিভিন্ন দলের নেতার হাতে বাইআত করা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে:
.
বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেন,

” البيعة لا تكون إلا لولي أمر المسلمين ، وهذه البيعات المتعددة مبتدعة ، وهي من إفرازات الاختلاف ، والواجب على المسلمين الذين هم في بلد واحد وفي مملكة واحدة أن تكون بيعتهم واحدة لإمام واحد ، ولا يجوز المبايعات المتعددة ”

“বাইআত শুধুমাত্র মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে করতে হবে। এ ছাড়া যত বাইআত আছে এগুলো বিদআত। এ বাইআতগুলো অনৈক্যের কারণ। একই দেশের একই রাজ্যের মুসলমানদের উপর আবশ্যকীয় হলো একজন রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বাইআত করা। একাধিক বাইআত করা নাজায়েয।(আল-মুনতাকা মিন ফাতাওয়াস শাইখ সালেহ আল-ফাওযান খন্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩৬৭)
.
5: সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য,বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেন,

خلقك الله لعبادته، وإنما سخر لك هذه الموجودات من أجل أن تستعين بها على عبادته- لأنك لا تستطيع أن تعيش إلا بهذه الأشياء، ولا تتوصل إلى عبادة الله إلا بهذه الأشياء، سخرها الله لك لأجل أن تعبده، ليس من أجل أن تفرح بها وتسرح وتمرح وتفسُق وتفجر تأكل وتشرب ما اشتهيت،

“আল্লাহ তোমাকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি সৃষ্টিজগতের সবকিছুকে তোমার অনুগত করেছেন এগুলির সাহায্যে তাঁর ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য। কারণ তুমি এগুলি ব্যতীত বেঁচে থাকতে পারবে না এবং আল্লাহর ইবাদতেও নিয়জিত থাকতে পারবে না। আল্লাহ তাঁর ইবাদত করার নিমিত্তেই এগুলিকে তোমার অনুগত করে দিয়েছেন। এজন্য নয় যে,তুমি এগুলির মাধ্যমে আনন্দ-উল্লাস করবে, দম্ভভরে পৃথিবীতে বিচরণ করবে, পাপে ডুবে থাকবে এবং মনের চাহিদা অনুযায়ী পানাহার করবে”।(ইমাম সালেহ বিন ফাওযান, শারহুল ক্বাওয়া‘ইদিল আরবা‘আ, পৃষ্ঠা: ১৪)

6: বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেন:

《 اللسَان خطِير جدًّا ، اللسَان أشدُ من السَّيف . السَّيف يمكن تقتُل به واحدًا أو اثنَين ، لكن اللِسان تقتُل به أمَّة !

জিহ্বা খুবই বিপজ্জনক, জিহ্বা তরবারির চেয়েও ধারালো। তরবারি দিয়ে আপনি একজন বা দুইজনকে হত্যা করতে পারেন, কিন্তু জিহ্বা দিয়ে আপনি একটি জাতিকে হত্যা করতে পারেন। (শারহু কিতাবিল ফিতান ওয়াল হাওয়াদিস পৃষ্ঠা: ২৩৮)

7: যার-তার কাছ থেকে ইলম অর্জনের আগে সতর্ক থাকা প্রয়োজন উল্লেখ করে আমাদের ইমাম, সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন:
.
যে সকল ব্যক্তি দাওয়াহ্-র সাথে সম্পৃক্ত,তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া অত্যাবশ্যক। যেমন:- তাদের জ্ঞানার্জনের মাধ্যম কী? তাদের আক্বীদাহ ও মানহাজ কী? তাদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে অবশ্যই খোঁজখবর নেওয়া উচিত। কেননা তাদের কথা এবং কার্যকলাপের দ্বারা (মানুষ) পথভ্রষ্ট হওয়ার পূর্বে সর্তকতা নেওয়া উচিত। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে,যখন ফিতনার দিকে আহবানকারীর সংখ্যা প্রচুর। [আল-ইজাবাতুল-মুহিম্মাহ ফীল মাশাকীলিল মুলিম্মাহ, পৃষ্ঠা: ৩৪]

8: সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেন:
.
বিদ‘আতীদের প্রতিবাদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আলিমদের পদ্ধতি হলো- তারা এ ব্যাপারে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাতের উপর নির্ভর করে থাকেন। আর এটিই হলো সঠিক ও সন্তোষজনক পদ্ধতি। তারা বিদ‘আতীদের কথাগুলো প্রথমে বর্ণনা করেন। তারপর একটি একটি করে খন্ডন করেন। সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা ওয়াজিব এবং বিদ‘আত থেকে বিরত থাকা যরূরী, এসকল বিষয়ে তারা কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণাদি উপস্থিত করে থাকেন। বিদ‘আতীদের প্রতিবাদে তারা অসংখ্য বই-পুস্তকও রচনা করেছেন।(আল-ইরশাদু ইলা সহীহিল ই‘তিকাদি ওয়ার রাদ্দি ‘আলা আহলিশ শিরকি ওয়াল ইলহাদ, পৃষ্ঠা: ৩০২-৩০৩) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।

5: সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য,বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ,আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] মুসলিম উম্মার সম্পদ। তিনি আক্বীদা মানহাজসহ বহু গ্রন্থের রচিয়তা, সম্পাদক এবং অনুবাদক।এমনকি শাইখের লিখিত কিছু বই বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ মদিনা ইউনিভার্সিটির পাঠ্যতেও রয়েছে।
.
শাইখ ইবনে বায রহিমাহুল্লাহকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপনার পরে আমরা কার কাছে দীনের বিষয়াদি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবো? জবাবে ইবনে বায রহিমাহুল্লাহ বললেন, আপনারা সালেহ ফাওযান জিজ্ঞসা করবেন। এমনি শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে সালিহ আল-উছাইমীন রহিমাহুল্লাহকে যখন জিজ্ঞাসা করা হলো, আমরা আপনার পরে কাকে জিজ্ঞাসা করবো? তিনি জবাব দিলেন যে, আপনারা সালিহ ফাওযানকে জিজ্ঞাসা করবেন। কেননা তিনি একজন ফকীহ এবং ধার্মিক। শাইখ ইবনে গুদাইয়্যান প্রায়ই বলতেন, আপনারা দীনের ব্যাপারে শাইখ সালেহ ফাওযানকে জিজ্ঞাসা করবেন। আল্লাহ যেন তার আনুগত্যের উপর তার বয়স বৃদ্ধি করেন, তার শেষ পরিণাম যেন ভালো করেন এবং যেন হকের উপর তাকে টিকিয়ে রাখেন।(দেখুন আল ইরশাদ-সহীহ আকীদার দিশারী ভূমিকা দ্রষ্টব্য)।

ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইদরীস আশ-শাফিঈ আল-মাক্কী রাহিমাহুল্লাহ এর কিছু নাসীহাহ

 1: শাইখুল ইসলাম নাসিরুল হাদীস ফাক্বীহুল মিল্লাত ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইদরীস আশ-শাফি‘ঈ আল-মাক্কী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৫০ হি: মৃত: ২০৪ হি.] বলেছেন:

صَحِبْتُ الصُّوفِيَّةَ. فَمَا انْتَفَعْتُ مِنْهُمْ إِلَّا بِكَلِمَتَيْنِ، سَمِعْتُهُمْ يَقُولُونَ: الْوَقْتُ سَيْفٌ. فَإِنْ قَطَعْتَهُ وَإِلَّا قَطَعَكَ. وَنَفْسُكَ إِنْ لَمْ تَشْغَلْهَا بِالْحَقِّ، وَإِلَّا شَغَلَتْكَ بِالْبَاطِلِ.

“আমি সূফীদের সঙ্গ পেয়েছি, কিন্তু তাদের থেকে দুটি বাক্য ছাড়া কোনো উপকার পাইনি। আমি তাদের বলতে শুনেছি—
.
(১).সময় হলো একটি তলোয়ার; তুমি যদি তাকে কাটতে পারো, তাহলে তো ভালো। অন্যথা সে-ই তোমাকে কেটে ফেলবে।
.
(২).তোমার মনকে যদি তুমি সঠিক কাজে ব্যস্ত না রাখো, তবে তা বৃথা কাজে তোমাকে ব্যস্ত করে ফেলবে।”(ইবনু ক্বাইয়িম,মাদারিজুস সালিকীন বায়না ইয়্যাকা না‘বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতা‘ঈন; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১২৪-১২৫)

2: শাইখুল ইসলাম নাসিরুল হাদীস ফাক্বীহুল মিল্লাত ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইদরীস আশ-শাফি‘ঈ আল-মাক্কী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৫০ হি: মৃত: ২০৪ হি.] থেকে বর্ণিত অন্যতম সুন্দর একটি বর্ণনা হলো যা তার ছাত্র রবী ইবনে সুলাইমান তার থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন: আমি মুহাম্মাদ ইবনে ইদরীস আশ-শাফেয়ীর কাছে উপস্থিত হয়ে দেখলাম তার কাছে একখন্ড মাটির টুকরোতে প্রশ্ন এসেছে: ‘আল্লাহর এই বাণী:
کَلَّاۤ اِنَّهُمۡ عَنۡ رَّبِّهِمۡ یَوۡمَئِذٍ لَّمَحۡجُوۡبُوۡنَ
“কিছুতেই (তাদের কথা সঠিক) নয়, সেদিন তারা তাদের প্রভু থেকে অবশ্যই আড়াল থাকবে।”[সূরা মুতাফফিফীন: ১৫]-এর ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?’ ইমাম শাফেয়ী বললেন: لما أن حجب هؤلاء في السخط، كان في هذا دليلٌ على أن أولياءه يرونه في الرضى“যেহেতু তিনি (আল্লাহ) অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের (কাফেরদের) থেকে নিজেকে আড়াল করেছেন, এর থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে তিনি সন্তুষ্ট থাকার কারণে তাঁর মিত্ররা (মুমিনরা) তাঁকে দেখতে পাবে।”(ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৪৫২৫)

3: শাইখুল ইসলাম নাসিরুল হাদীস ফাক্বীহুল মিল্লাত ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইদরীস আশ-শাফি‘ঈ আল-মাক্কী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৫০ হি: মৃত: ২০৪ হি.] বলেছেন,

: ” وكان الإجماع من الصحابة والتابعين ومن بعدهم ومن أدركناهم يقولون: الإيمان قول وعمل ونية لا يجزئ واحد من الثلاثة إلا بالآخر ”

“সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাদের পরে যারা এসেছেন এবং যাদের সঙ্গে আমরা সাক্ষাৎ করেছি সকলের ঐকমত্য ছিল এই বিষয়ে যে, ঈমান হল: কথা (বক্তব্য), আমল (কর্ম) ও নিয়ত (উদ্দেশ্য)। এই তিনটির মধ্যে কোনো একটি এককভাবে যথেষ্ট নয়;বরং তিনটিই একত্রে থাকা আবশ্যক।”(লালাকাই,শারহু উসুলিল ই‘তিকাদি আহলিস সুন্নাহ, খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ৯৫৬; ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ২০৯)
.
4: শাইখুল ইসলাম নাসিরুল হাদীস ফাক্বীহুল মিল্লাত ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইদরীস আশ-শাফি‘ঈ আল-মাক্কী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৫০ হি: মৃত: ২০৪ হি.] কত চমৎকারই না বলেছেন:

كَمْ مِن صحيحٍ ماتَ مِن غيرِ عِلَّةٍ * وكَمْ مِن عَليلٍ عَاشَ حِينَاً مِن الدَهرِ وكَمْ مِن فَتَى يُمسي ويُصبح ضاحكاً * وأكفانه في الغيب تُنسج وهو لا يدري

‘এমন বহু সুস্থ ব্যক্তি আছে,যারা কোনো রোগ ছাড়াই আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করে, আবার অনেক অসুস্থ ব্যক্তি অনেক বছর ধরে বেঁচে থাকে। কত তরুণ দিনের শুরু এবং শেষ হাসি-খুশি কাটায়, অথচ সে জানে না যে, তার কাফনের কাপড় অনাদরে প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা তার অগোচরে তৈরি হয়ে যাচ্ছে।” (দীওয়ানে ইমাম শাফেঈ)
.
5: শাইখুল ইসলাম নাসিরুল হাদীস ফাক্বীহুল মিল্লাত ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইদরীস আশ-শাফি‘ঈ আল-মাক্কী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৫০ হি: মৃত: ২০৪ হি.] বলেছেন,

أَشَدُّ الأَعْمَالِ ثَلاثَةٌ: الْجُودُ مِنْ قِلَّةٍ، وَالْوَرَعُ فِي خَلْوَةٍ وَكَلِمَةُ حَقٍّ عِنْدَ مَنْ يُرْجَى وَيُخَافُ، ‘

সবচেয়ে কঠিন আমল তিনটি।

(১).সম্পদ কম হওয়া সত্ত্বেও দান-সাদাক্বাহ করা,
(২).নির্জনে-নিভৃতে আল্লাহকে ভয় করা ও
(৩).যার কাছে কিছু প্রত্যাশা করা হয় ও যাকে দেখলে ভীতির সঞ্চার হয়, তার সামনে হক কথা বলা”।(ইবনুল জাওযী, আত-তাবসিরাহ; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩০৪; সিফাতুস সাফওয়া; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪৩৫)

ইমাম ফুদ্বাইল বিন ইয়াদ্ব রাহিমাহুল্লাহ এর কিছু নাসীহাহ

 1: প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ, আহলুস সুন্নাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘আলিম, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ফুদ্বাইল বিন ‘ইয়াদ্ব (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৮৭ হি.] বলেছেন,

الزمْ طريقَ الهدَى ، ولا يضرُّكَ قلَّةُ السالكين ، وإياك وطرقَ الضلالة ، ولا تغترَّ بكثرة الهالكين ”

“তুমি হেদায়াতের (সঠিক পথের) ওপর অটল থেকো, এতে যদি পথচারীর সংখ্যা কমও হয়,তবুও তা তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।আর তুমি গোমরাহির (বিভ্রান্তির) পথ থেকে সতর্ক থাকো,যদিও সেই পথে চলার লোক অনেক হয়,তবুও সংখ্যার মোহে পড়ে ধোঁকা খেয়ো না।”(ইমাম নববী; আল মাজমু: পৃষ্ঠা: ২২১; ইমাম শাতিবী; আল-ই’তিসাম খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৮৩)

2: প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ, আহলুস সুন্নাহ’র অন্যতম শ্রেষ্ঠ ‘আলিম, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ফুদ্বাইল বিন ‘ইয়াদ্ব (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৮৭ হি.] বলেছেন:

إذا كان يُسأل الصادقين عن صدقهم، مثل إسماعيل وعيسى عليهما السلام فكيف بالكاذبين أمثالنا ؟!!

“(বিচার দিবসে) যদি ইসমাঈল ও ঈসা (আলাইহিমাস সালাম) এর মতো সত্যবাদীদেরই তাঁদের (ঈমানের) সত্যবাদিতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়,তাহলে আমাদের মতো মিথ্যাবাদীদের কী অবস্থা হবে?!!” (মুনতালাকাতু তালিবিল ইলম: খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩৫)
.
3: ইমাম ফুদ্বাইল বিন ‘ইয়াদ্ব (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৮৭ হি.] বলেন,

الْمُؤْمِنُ يَسْتُرُ وَيَنْصَحُ، وَالْفَاجِرُ يَهْتِكُ وَيُعَيِّرُ

“মুমিন (কারো দোষ দেখলে তা) গোপন করে এবং তাকে (গোপনে) নসীহত করে। আর পাপী ব্যক্তি (দোষ গোপন না করে তাকে) অপমান ও (জনসম্মুখে) লজ্জিত করে”।(ইবনু রজব হাম্বলী, জামে‘উল ‘উলূম ওয়াল হিকাম: ১/২২৫)।

4: ফুযাইল ইবনু ‘ইয়ায (রাহিমাহুল্লাহ) (জন্ম: ১০৭ মৃত্যু: ১৮৭ হি.) বলেন,

مَنْ أَحَبَّ صَاحِبَ بِدْعَةٍ أَحْبَطَ اللهُ عَمَلَهُ وَأَخْرَجَ نُوْرَ الْإِسْلَامِ مِنْ قَلْبِهِ، وَمَنْ زَوَّجَ كَرِيْمَتَهُ مِنْ مُبْتَدِعٍ فَقَدْ قَطَعَ رَحِمَهَا، وَمَنْ جَلَسَ مَعَ صَاحِبِ بِدْعَةٍ لَمْ يُعْطَ الْحِكْمَةَ، وَإِذَا عَلِمَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ رَجُلٍ أَنَّهُ مُبْغِضٌ لِصَاحِبِ بِدْعَةٍ رَجَوْتُ أَنْ يَغْفِرَ اللهُ لَهُ.

যে ব্যক্তি বিদ‘আতীকে ভালোবাসে আল্লাহ তা‘আলা তার আমলকে ধ্বংস করে দেন এবং তার অন্তর থেকে ইসলামের জ্যোতিকে বের করে দেন। আর যে কোন বিদ‘আতীর কন্যাকে বিবাহ করে তার প্রতি রহম বা আল্লাহর দয়া কেটে যায়। যে বিদ‘আতীর সাথে উপবেশন করে তাকে হেকমত বা প্রজ্ঞা দান করা হয় না। আর আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন ব্যক্তির ব্যাপারে জানেন যে, সে বিদ‘আতীর সাথে বিদ্বেষপরায়ণ, আমি আশা করি আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন’।(আল-জামিঊ লি আহকামিল কুরআন, খন্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১৩)

ইমাম মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদিঈ রাহিমাহুল্লাহ এর কিছু নাসীহাহ

 1: ইয়েমেনের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন:

(ليس لدينا وقت للمدافعة عن أنفسنا لكن عن السنة لو
تعاضضنا بالضروس فلا نترك أحدا يتكلم في سنة رسول الله صلى الله عليه وعلى آله وسلم سواء أكان شيعيا أو صوفيا أو من الإخوان المسلمين فنحن فداء للسنّة وأعراضنا فداء للسنة)

“নিজেদেরকে ডিফেন্ড করার সময় আমাদের নেই, তবে আমরা সুন্নাহকে ডিফেন্ড করি। এমনকি আমাদের উপর যদি কঠিন যুদ্ধ ও নির্যাতনও চাপিয়ে দেওয়া হয়, তবুও আমরা কখনোই রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাহর বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস দেখানো কাউকে ছেড়ে দেব না;হোক সে শিয়া, সূফী অথবা হোক সে ইখওয়ানুল মুসলিমীনের কেউ, কারণ আমরা সুন্নাহর স্বার্থে উৎসর্গিত হওয়ার জন্যই,এবং আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে সুন্নাহ।”(ফাদ্বাইহ ওয়া নাসাইহ, পৃষ্ঠা: ১৫৪)।
.
2: ইয়েমেনের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন:

الإيمان بالله، طلب العلم، والزوجة الصالحة؛ هذا في هذا الزمان من أفضل ما يُستراح به بعد الإيمان بالله

“আল্লাহর উপর ঈমান,জ্ঞান অর্জন এবং নেককার স্ত্রী এই যুগে এগুলোই আল্লাহর প্রতি ঈমানের পর সর্বোত্তম প্রশান্তি ও স্বস্তি লাভের মাধ্যম।”(ইমামুল আলমা‘ই; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৫৩)
.
3: ইয়েমেনের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন:

(الذي أنصح به نفسي وكل أحد أن يشغل نفسه بالعلم وهموم الدنيا ليس لها نهاية ، وإياكم أن تشتغلوا بمشاكل الحياة ، لو اشتغلنا بها لما استطعنا أن نطلب علما.)

“আমি নিজেকে এবং প্রত্যেককেই যেটা নসীহা করি,তা হলো—(দ্বীনি) জ্ঞান অন্বেষণে নিজেকে নিয়োজিত রাখো,কেননা দুনিয়ায় দুশ্চিন্তার কোন শেষ নেই। সাবধান!জীবনের দুশ্চিন্তায় জড়াবে না! যদি আমরা সেসব নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম,তাহলে কোনোদিনই (দ্বীনি ইলম) জ্ঞান অর্জন করতে পারতাম না।”(আল-বাশা’ইর ফিস-সিমা‘ইল মুবাশির, পৃষ্ঠা: ২১)

ইমাম যাহাবী রাহিমাহুল্লাহ এর কিছু নাসীহাহ

 1: ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৪৮) বলেন:

وَلَوْ أَنَّ كُلَّ مَنْ أَخْطَأَ فِي اجْتِهَادِهِ – مَعَ صِحَّةِ إِيْمَانِهِ، وَتَوَخِّيْهِ لاتِّبَاعِ الحَقِّ – أَهْدَرْنَاهُ، وَبَدَّعنَاهُ، لَقَلَّ مَنْ يَسلَمُ مِنَ الأَئِمَّةِ مَعَنَا، رَحِمَ اللهُ الجَمِيْعَ بِمَنِّهِ وَكَرَمِهِ.”

“যদি আমরা এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে যিনি সঠিক আকীদা ও সত্য অনুসরণের আন্তরিক চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও ইজতিহাদে ভুল করেছেন তাদেরকে বাতিল বলে দিতাম বা বিদআতী বলতাম, তাহলে আমাদের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যক আলেমই এর থেকে নিরাপদ থাকবেন।আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ ও দয়া দ্বারা সবাইকে রহমত দান করুন।”(সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা; খণ্ড: ১৪; পৃষ্ঠা: ৩৭৬)

2: ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৪৮) বলেন:

وإذا رأيت المتكلم المبتدع يقول: دعنا من الكتاب والأحاديث الآحاد وهات العقل، فاعلم أنه أبو جهل، وإذا رأيت السالك التوحيدي يقول: دعنا من النقل ومن العقل، وهات الذوق والوجد، فاعلم أنه إبليس قد ظهر بصورة بشر، أو قد حل فيه، فإن جبنت منه، فاهرب، وإلا فاصرعه، وابرك على صدره، واقرأ عليه آية الكرسي، واخنقه

“যদি তুমি কোনো বিদআতী বক্তাকে বলতে শুনো: ‘আমাদের কিতাব (কুরআন) ও আহাদ হাদিস একপাশে সরিয়ে রাখো, বরং যুক্তি-প্রমাণ নিয়ে এসো’, তাহলে নিশ্চিত জেনে রেখো—সে আবু জাহল। আর যদি তুমি কোনো এমন ব্যক্তিকে দেখতে পাও, যে আত্মশুদ্ধি ও তাসাউফের দাবিদার হয়ে বলে: ‘আমাদের দলিল-প্রমাণ (কুরআন ও হাদিস) এবং যুক্তিকে সরিয়ে রাখো, বরং অনুভূতি ও আধ্যাত্মিক স্বাদ আস্বাদন করো’, তাহলে জেনে রেখো—সে শয়তান, যে হয়তো মানুষের আকৃতি ধারণ করেছে, অথবা এমন এক ব্যক্তি, যার মধ্যে শয়তান প্রবেশ করেছে। যদি তুমি তাকে দেখে ভয় পাও, তাহলে পালিয়ে যাও। আর যদি তুমি সক্ষম হও, তাহলে তাকে পরাস্ত করো—তার বুকের উপর চেপে বসো, আয়াতুল কুরসি পাঠ করো এবং তাকে পরাভূত (দমন) করো।”(ইমাম যাহাবী;সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৪৭২)
.
3: হাফেয যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৪৮] বলেন:

ينبغي للعالم أن يتكلم بنية وحسن قصد ، فإن أعجبه كلامه فليصمت ، وإن أعجبه الصمت فلينطق ، ولا يفتر عن محاسبة نفسه فإنها تحب الظهور والثناء .

“আলেমের উচিত সৎ নিয়ত ও সঠিক উদ্দেশ্যে কথা বলা। যদি তার নিজের কথা তাকে মুগ্ধ করে, তবে তিনি চুপ থাকবেন। আর যদি নীরবতা তাকে মুগ্ধ করে, তবে তিনি কথা বলবেন। তিনি কখনো নিজের নফসের হিসাব নেওয়া থেকে বিরত থাকবেন না, কারণ নফস সর্বদা প্রদর্শন ও প্রশংসাই ভালোবাসে।”(মুনতালাকাতু তালিবিল ইলম: খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৩৫)
.
4: ইমাম যাহাবী রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৪৮) ইমাম ইবনু আব্দিল বার্র (রাহিমাহুল্লাহ) সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন,

إِذَا أَخْطَأَ إِمَامٌ فِي اجْتِهَادِهِ لاَ يَنْبَغِي لَنَا أَنْ ننسَى مَحَاسِنهُ وَنُغطِي معَارِفه بَلْ نستغفرُ لَهُ وَنَعْتَذِرُ عَنْهُ

“ইমাম যদি কোন ইজতিহাদের ক্ষেত্রে ভুল করেন, তবে আমাদের জন্য তার কল্যাণময় দিকগুলি ভুলে যাওয়া এবং তার জ্ঞানবত্তা (পাণ্ডিত্য) কে ঢেকে দেওয়া উচিৎ হবে না। বরং আমরা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব এবং তার পক্ষ থেকে ওযর পেশ করব”। (যাহাবী;সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা; খণ্ড: ১৮; পৃষ্ঠা: ১৫৭)। আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী

5: যারা আলেমদের ভুলের ব্যাপারে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে তাদেরকে ইমাম আল-হা’ফিয শামসুদ্দিন আয-যাহাবী (রহি’মাহুল্লাহ) উপদেশ দিয়ে বলেছেন,

فلو أننا أهدرنا كل عالم زل لما سلم معنا إلا القليل، فلا تحط يا أخي على العلماء مطلقا ولا تبالغ في تقريظهم مطلقا واسأل الله أن يتوفاك على التوحيد

“আমরা যদি আলেমদের ভুলের কারণে তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে বাদ দেই, তাহলে খুব কম আলেমই বাকী থাকবে।সুতরাং প্রিয় ভাই আমার! আলেমদের (ভুলের কারণে) তাদের সমালোচনার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না, আবার তাদের প্রশংসার ব্যাপারে অতিরঞ্জন করো না। আল্লাহর কাছে দুয়া করো, তোমার মৃত্যুটা যেন তাওহীদের উপরে হয়।”(তারিখুল ইসলাম: ৩০/২৫৬)

6: ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৪৮) বলেন:

“ثم إن الكبير من أئمة العلم إذا كثر صوابه وعُلم تحريه للحق واتسع علمه وظهر ذكاؤه وعرف صلاحه وورعه واتباعه يغفر له زلله ولا نضلله ونطرحه وننسى محاسنه؛ نعم ولا نقتدي به في بدعته وخطئه ونرجو له التوبة من ذلك”

“অতঃপর যদি বড় কোন আলেম যার ভুলের চেয়ে সঠিক বেশি এবং জানা যায় যে,তিনি সত্য অনুসন্ধানে কঠোর, তার জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত, তার বিচক্ষণতা, সততা ও পরহেজগারিতা সুবিদিত- এমতবস্থায় তার কোন ভুল ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা হবে। আমরা তাকে পথভ্রষ্ট বলব না বা বয়কট করব না এবং তার সৎকর্মগুলোও ভুলে যাব না। তবে হ্যাঁ, আমরা তার বিদআত বা ভুলের অনুসরণ করব না এবং প্রত্যাশা করব যে, তিনি সেগুলো থেকে তাওবা করবেন”।(যাহাবী;সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ২৭১)

প্রখ্যাত তাবি তাবিঈ শাইখুল ইসলাম ইমাম আওযাঈ রাহিমাহুল্লাহ এর কিছু নাসীহাহ

 1: প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম আওযা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫৭ হি.] বলেন:

.
عَلَيْكَ بِآثَارِ مَنْ سَلَفَ، وَإِنْ رَفَضَكَ النَّاسُ، وَإِيَّاكَ وَآرَاءَ الرِّجَالِ، وَإِنْ زَخْرَفُوا لَك الْقَوْلَ
.
“তোমার জন্য অবশ্য কর্তব্য হল সালাফদের পদাঙ্ক অনুসরণ করা, যদিও মানুষ তোমাকে প্রত্যাখ্যান করে। আর মানুষের নিজস্ব মতামত তোমার কাছে যতই চটকদার বা উজ্জ্বল মনে হোক না কেন,সেটা গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধান থাকবে”।(ইবনুল মুফলিহ, আল-আদাবুশ শার‘ঈয়াহ, খন্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১০২)

2: প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ,শাইখুল ইসলাম, ইমাম আওযা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫৭ হি.]-কে বলা হলো:

أنا أُجالِس أهل السُنَّة، وأجالس أهل البدع!

“এক ব্যক্তি বলে, আমি আহলুস সুন্নাহদের সঙ্গে বসি, আবার আহলুল বিদআতদের সঙ্গেও বসি।”
.
এ কথা শুনে ইমাম আওযা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন:

هذا رجلٌ يريد أن يُساوي بين الحق والباطل”

“এই ব্যক্তি চায় হক এবং বাতিলকে সমান করে দিতে।” (অর্থাৎ সত্য এবং মিথ্যাকে সমান মর্যাদা দিতে চায়)। (ইবনু বাত্তাহ,আল-ইবানা আল-কুবরা; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৪৫৬)
.
3: ইমাম আওযা‘ঈ (রহঃ) বলেন,
.
عَلَيْكَ بِآثَارِ مَنْ سَلَفَ، وَإِنْ رَفَضَكَ النَّاسُ، وَإِيَّاكَ وَآرَاءَ الرِّجَالِ، وَإِنْ زَخْرَفُوا لَك الْقَوْلَ
.
তোমার জন্য অবশ্য কর্তব্য হল সালাফদের পদাঙ্ক অনুসরণ করা, যদিও মানুষ তোমাকে প্রত্যাখ্যান করে। আর মানুষের নিজস্ব মতামত তোমার কাছে যতই চটকদার বা উজ্জ্বল মনে হোক না কেন,সেটা গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধান থাকবে’।(ইবনুল মুফলিহ, আল-আদাবুশ শার‘ঈয়াহ, খন্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১০২)

ইমাম আবূ মুহাম্মাদ হাসান বিন আলী বিন খালফ আল-বারবাহারী রাহিমাহুল্লাহ এর কিছু নাসীহাহ

1: ইমাম আবূ মুহাম্মাদ হাসান বিন ‘আলী বিন খালফ আল-বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩২৯ হি.] বলেছেন,

إذا وقعت الفتنة فالزم جوف بيتك وفر من جوار الفتنة وإياك والعصبية وكل ما كان من قتال بين المسلمين على الدنيا فهو فتنة فاتق الله وحده لا شريك له ولا تخرج فيها ولا تقاتل ولا تهوى ولا تشايع ولا تمايل ولا تحب شيئا من أمورهم.

“যখন ফিতনা সংগঠিত হবে, তখন তুমি তোমার বাড়ীর ভিতরে অবস্থান করবে, ফিতনার নিকট থেকে পলায়ন করবে এবং স্বজনপ্রীতি থেকে বিরত থাকবে। আর ফিতনা হল-দুনিয়াতে সংঘটিত হওয়া মুসলিমদের মাঝে পরস্পরের ঝগড়াসমূহ। সুতরাং এক আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করবে। যার কোন অংশীদার নেই এবং বাড়ী থেকে তুমি বের হবে না, পরস্পর ঝগড়া করবে না, এর প্রতি আকাঙ্ক্ষাও করবে না, বিভিন্ন দলে বিভক্তও হবে না, এদিক-ওদিক দৃষ্টি দিবে না এবং তাদের কোন বিষয়কে ভালবাসবে না”।(কিতাবু শারহিস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ৪৭; তাহক্বীক্ব: ড. মুহাম্মাদ সাঈদ সালিম আল-কাহতানী (দাম্মাম, সউদী আরব দারু ইবনিল ক্বাইয়িম, ১ম সংস্করণ ১৪০৮ হি.),

2: ইমাম বারবাহারি (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:

” جس نے کتاب و سنت کی مخالفت کی وہ بدعتی ہے، گرچہ کہ اس کے پاس علم و کتب کا بڑا ذخیرہ ہی کیوں نہ ہو!۔

“যে ব্যক্তি কিতাব (আল-কুরআন) ও সুন্নাহর (রাসূল (ﷺ)-এর হাদিস) বিরোধিতা করে, সে বিদআতী,যদিও তার কাছে বিপুল জ্ঞান ও অসংখ্য বই-পুস্তকের ভাণ্ডার থাকে”(শারহুস সুন্নাহ: ২৭০) 

প্রখ্যাত তাবিঈ হাসান বিন ইয়াসার ওরফে হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ এর কিছু নাসীহাহ

 1: ইলম ও আমলের মধ্যে সমন্বয় করা জরুরি:

.
প্রখ্যাত তাবি‘ঈ,হাসান বিন ইয়াসার ওরফে হাসান বসরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:১১০ হি.] বলেন:

أَطْلُبُ الْعِلْمَ طَلَبًا ‌لَا ‌يَضُرُّ ‌بِالْعِبَادَةِ، وَأَطْلُبُ الْعِبَادَةَ طَلَبًا لَا يَضُرُّ بِالْعِلْمِ، فَإِنَّ مَنْ عَمِلَ بِغَيْرِ عِلْمٍ كَانَ مَا يُفْسِدُ أَكْثَرَ مِمَّا يُصْلِحُ،

“আমি এমনভাবে ইলম অন্বেষণ করি, যা ইবাদতের জন্য ক্ষতিকর হবে না। আর আমি এমনভাবে ইবাদত করি, যা ইলম অন্বেষণের জন্য ক্ষতিকর হবে না। কেননা যে ব্যক্তি ইলম ছাড়া আমল করে সে যতটা না সংশোধন করে তার চেয়ে বেশী অনিষ্ট করে”।(মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ;খণ্ড;৭;পৃষ্ঠা;১৮৭; যামাখশারী,রাবীউল আবরার;খণ্ড;৪;পৃষ্ঠা;৩২)
.
2: প্রখ্যাত তাবি‘ঈ,হাসান বিন ইয়াসার ওরফে হাসান বসরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:১১০ হি.] বলেন:

مكارم الأخلاق المؤمن قوة في لين وحزم في دين وإيمان في يقين وحرص على العِلْمِ وَاقْتِصَاد في اللفقة وبذل فِي السَّعَةِ وقناعة في الفاقة ورحمة للمجهود وإعطاء في حَقٌّ وَبر في استقامة

“একজন মুমিনের উত্তম চরিত্র হল: নমনীয়তায় দৃঢ়তা, ধর্মে দৃঢ় অবস্থান, নিশ্চিয়তার উপর ঈমান, জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ, ব্যয়ে মিতব্যয়ীতা, প্রাচুর্যে দান, দারিদ্র্যে সন্তুষ্টি, কষ্টভোগকারীর প্রতি দয়া, ন্যায়ের পথে দান, এবং সৎপথে থেকে উত্তম আচরণ করা।”(কিতাবু মিন আখবারিস সালাফিজ সালিহ,পৃষ্ঠা; ৩০২)

3: প্রখ্যাত তাবি‘ঈ,হাসান বিন ইয়াসার ওরফে হাসান বসরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:১১০ হি.] বলেন:

‘الْمُؤْمِنُ حَلِيمٌ لَا يَجْهَلُ وَإِنْ جُهِلْ عَلَيْهِ حَلِيمٌ لَا يَظْلِمُ وإن ظلِمَ غَفَرَ لَا يَقْطَعُ وَإِنْ قُطِعَ وَصَل لَا يَبْخَلُ وَإِنْ يُجْلُ عَلَيْهِ صَبَرَ.

“মুমিন (খাঁটি ঈমানদার) ব্যক্তি সহনশীল। সে অজ্ঞতাপূর্ণ আচরণ করে না। যদিও তার সাথে অজ্ঞতাপূর্ণ আচরণ করা হয়। সে অন্যদের উপর অন্যায় করে না, যদিও তার উপর অন্যায় করা হয়, তবে সে ক্ষমা করে। সে সম্পর্ক ছিন্ন করে না, যদিও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়, তবে সে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখে। সে কৃপণ নয়, যদিও তার সাথে কৃপণতাপূর্ণ আচরণ করা হয়, তবে সে ধৈর্যধারণ করে”। (ইবনু আবিদ দুনইয়া,আল-হিলমু, হা/৬১,পৃষ্ঠা; ৫৩)

4: প্রখ্যাত তাবি‘ঈ,হাসান বিন ইয়াসার ওরফে হাসান বসরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:১১০ হি.] বলেন:

إخواننا أحب إلينا من أهلنا وأولادنا لأن أهلنا يذكروننا بالدنيا وإخواننا يذكروننا بالآخرة

“আমাদের (দ্বীনি) ভাইয়েরা আমাদের নিকট আমাদের পরিবার ও সন্তান-সন্ততির চেয়েও অধিক প্রিয়; কারণ, পরিবার-পরিজন আমাদের দুনিয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, আর ভাইয়েরা আমাদের আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।”(গাজালী;ইয়াহইয়াউ উলুমিদ্দিন খন্ড:২ পৃষ্ঠা:১৭৬)

5: প্রখ্যাত তাবি‘ঈ ইমাম হাসান বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:১১০হি.] থেকে বর্ণিত হয়েছে,একদা হাসান বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে বলা হলো,

ﺇﻥ ﻧﺎﺳﺎً ﻳﻘﻮﻟﻮﻥ : ﻣﻦ ﻗﺎﻝ : ‏( ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ‏) ﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ . ﻓﻘﺎﻝ : ﻣﻦ ﻗﺎﻝ ‏( ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ‏) ﻓﺄﺩَّﻯ ﺣﻘﻬﺎ ﻭﻓﺮﺿﻬﺎ ﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ

“কিছু মানুষ বলে, যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, বলবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ তিনি (হাসান বসরি) বললেন: ‘যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, এবং এর হক ও এর ফরজসমূহ আদায় করবে—তবে সেই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’”(ইবনু রাজাব আল হাম্বালী, ইখলাসি ওয়া তাহক্বীকু মা‘নাহা; পৃষ্ঠা: ১৪; আল-মাকতাবুল ইসলামী, বৈরুত কর্তৃক প্রকাশিত)
.
6: প্রখ্যাত তাবেঈ আহলুস সুন্নাহ’র অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম
হাসান বিন ইয়াসার ওরফে হাসান বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:১১০ হি:] বলেন:

«كان أهل الجاهلية إذا خطب الرجل المرأة تقول:ما حسبه،
وما حسبها؟فلما جاء الإسلام،قالوا:ما دينه،وما دينها؟وأنتم اليوم تقولون:ما ماله،وما مالها؟»

“জাহেলী (ইসলাম পূর্ব) যুগে যখন কোনো পুরুষ কোনো মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিত তখন তারা জিজ্ঞেস করত,ছেলের বংশ কি? মেয়ের বংশ কি? [তথা তখন পাত্র-পাত্রীর বংশ মর্যাদা সম্পর্কে জানতে চাইত]।
.
অতঃপর ইসলামের আগমনের পর তারা জিজ্ঞেস করতঃ ছেলের দ্বীনের অবস্থা কি? বা মেয়ের দ্বীনের অবস্থা কি? [তথা পাত্র-পাত্রী দ্বীনদার কিনা এটা জানতে চাইত]।
.
আর আজকের দিনে এসে আপনারা জিজ্ঞেস করেন- ছেলের সম্পদের পরিমাণ কত? মেয়ের সম্পদের পরিমাণ কত? [তথা দ্বীন বাদ দিয়ে অর্থ সম্পদকে প্রাধান্য দিয়ে সম্পদের পরিমাণ জানতে চাওয়া](ইবনু আব্দিল বার, বাহজাতুল মাজালিস,২/৩৮ ও ১৮১)
.
7: জাকারিয়া ইবনু ইয়াহিয়া আমাদেরকে বলেছেন, উবাইদুল্লাহ ইবনু আয়শা আমাদেরকে বলেছেন , এবং সালামা ইবনু সাঈদ আমাদেরকে বলেছেন,তিনি বলেন…”

شاور رجلٌ الحسن فقال: يا أبا سعيد! لي ابنةٌ أحبها، وقد خطبها رجالٌ من أهل الدنيا، فمن ترى لي أن أزوجها؟
فقال: زوجها من تَقي، إن أحبها أكرمها، وإن أبغضها لم يظلمها.

জৈনক ব্যক্তি ইমাম হাসান বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)-এর কাছে পরামর্শ চেয়ে বললেন, হে আবু সাঈদ! আমার একটি মেয়ে রয়েছে, যাকে আমি অত্যন্ত ভালোবাসি। অনেক লোক, যারা দুনিয়াদার ও সম্পদশালী,তারা তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। এখন আপনি কী পরামর্শ দেন, আমি কাকে তার জন্য যোগ্য পাত্র বলে বিবেচনা করব এবং তার সঙ্গে তাকে বিবাহ দেব?
.
ইমাম হাসান বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন: তাকে এমন একজন সৎ ও ধার্মিক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দিন, যার অন্তরে তাকওয়া (আল্লাহভীতি) রয়েছে। কারণ, যদি সে তাকে ভালোবাসে,তবে তাকে যথাযোগ্য সম্মান দেবে। আর যদি কোনো কারণে অপছন্দ করে, তবুও তার সঙ্গে কোনো অন্যায় বা অবিচার করবে না”।(আন-নাফাকাতু আলাল আ’য়ালী লি ইবনে আবিদ দুনিয়া,খন্ড:১ পৃষ্ঠা: ২৭৩;বর্ণনা: ১২৫;ইহইয়াউ উলুমুদ্দিন, খন্ড: ২ পৃষ্ঠা: ৪১;আদাবুল হাসান বসরি লি ইবনে জাওযী রহ, পৃষ্ঠা: ৩১]
.
8: এক ব্যক্তি ইমাম হাসান বসরি (রহিমাহুল্লাহ)-এর কন্যাকে এক লক্ষ দিরহাম মোহরের বিনিময়ে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। এ সময় হাসান বসরির স্ত্রী বললেন:

«زَوِّجُهُ؛فَقَدْ أَرْغَبَها في الصَّدَاقِ،وبذل لها ما ترى،فقال الحسن: إنَّ رجلاً بذل في صداق امرأة مئة ألفٍ لَجَاهِلٌ مَغْرُورٌ يَجِبُ أَلَا يُرْغَبَ فِي مُناكَحَتِهِ،ولا يُحْرَصَ على مُصاهَرَتِهِ.وترك تزويجه، وزَوَّجَها من رجل صالح.»

“আপনি মেয়েকে তার সাথে বিয়ে দিয়ে দিন। দেখুন, সে মেয়ের জন্য কত বেশি মোহর দিতে আগ্রহী।” এ কথা শুনে হাসান বসরি (রহ.) বললেন: “যে ব্যক্তি স্ত্রীকে মোহরের পেছনে এক লক্ষ দিরহাম খরচ করে, সে একজন অজ্ঞ ও প্রতারিত ব্যক্তি। এমন একজনকে মেয়ে বিয়ে দেওয়া কিংবা তার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।” তৎক্ষণাৎ তিনি ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং পরবর্তীতে তার কন্যার জন্য একজন ধর্মপরায়ণ ও নৈতিকতাসম্পন্ন পাত্র পছন্দ করে তাকে বিয়ে দেন”।(আদাবুল হাসান আল-বাসরি – ইবনুল জাওযী, পৃষ্ঠা: ৩১)
.
9: ইমাম হাসান বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:

اَلْمُؤْمِنُ كَالْغَرِيبِ لاَ يَجْزَعُ مِنْ ذُلِّهَا، وَلاَ يُنَافِسُ فِي عِزِّهَا، لَهُ شَأْنٌ، وَلِلنَّاسِ شَأْنٌ- وَجِّهُوا هَذِهِ الْفُضُولَ حَيْثُ وَجَّهَهَا اللهُ ‘

“মুমিন হলো অপরিচিতের মতো। দুনিয়ার কোনো অপমান বা লাঞ্ছনায় সে উৎকণ্ঠিত হয় না আবার মর্যাদার প্রতিযোগিতায়ও লিপ্ত হয় না। তার নিজের জন্য যেমন একটি মর্যাদা রয়েছে, তেমনি মানুষের জন্যও তাদের নিজস্ব মর্যাদা রয়েছে। সুতরাং, এই দুনিয়াবী তুচ্ছ ও নিরর্থক বিষয়গুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও এবং আল্লাহ যে দিকে ডেকেছেন সেই পথে এগিয়ে যাও।”(মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হা/৩৬৩৫৮,জামেঊল ঊলূম ওয়াল হিকাম;২/৩৭৯)
.
10: বিদআতীরা ডিবেট/বিতর্কের আহ্বান করলে কী করবেন? আপনি অবশ্যই হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহর নীতিতে যাবেন।
▬▬▬▬▬▬▬▪️🌻▪️▬▬▬▬▬▬▬
প্রখ্যাত তাবি‘ঈ ইমাম হাসান বসরী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে এক ব্যক্তি এসে বললো,

: يا أبا سعيد ! إني أريد أن أخاصمك

“হে আবু সাঈদ, আসুন, আপনার সাথে দীনের কিছু মাসআলায় ডিবেট করি।

জবাবে হাসান বসরী বলেন,,

: إليك عني، فإني قد عرفت ديني، وإنما يخاصمك الشاك في دينه

“আমি তো আমার দীনকে জেনেবুঝে গ্রহণ করেছি, তুমি যদি তোমার দীন হারিয়ে ফেলে থাক,তবে সেটা খুঁজে বেড়াও।” অপর বর্ননায় এসেছে,তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:

اذهب إلى شاك مثلك يناظرك، فإني قد عرفت ديني

“তোমার মত সন্দেহবাদীর কাছে যাও যে তোমার সাথে বিতর্ক করবে,কারণ আমি আমার ধর্ম শিখেছি”।(আল-আজুররী,আশ শারীআহ,আসার নং ১৯৭৭) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)

11: ইমাম হাসান বসরি (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:১১০ হি:] বলেন,

الفتنة إذا أقبلت عرفها كل عالم، وإذا أدبرت عرفها كل جاهل

“যখন ফিতনা আসে, তখন সকল আলিম একে চিনতে পারে,আর সকল অজ্ঞ একে তখনই চিনতে পারে তখন,যখন তা চলে যায়।”

12: সর্বাবস্থায় আপনার পালনকর্তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করুন:
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
ইমাম হাসান বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ) আল্লাহর বাণী সম্পর্কে বলেছেন, إِنَّ الْإِنْسَانَ لِرَبِّهِ لَكَنُوْدٌ ‘নিশ্চয়ই মানুষ তার পালনকর্তার প্রতি অকৃতজ্ঞ’ (সূরা আদিয়াত ১০০/৬)। মানুষ তার উপর আপতিত মুসীবতগুলো গণনা করে কিন্তু তাকে প্রদত্ত নে‘মত সমূহের কথা ভুলে যায়।(তাফসীর ইবনু কাসীর খন্ড:৪ পৃষ্ঠা: ৭০০)
.
13: একদা হাসান আল বাসরী (রাহ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘ইবলিসের স্ত্রীর নাম কী?’ তিনি উত্তরে বলেন, ‘আমি তার বিয়েতে উপস্থিত ছিলাম না। তাই বলতে পারছি না।’
.
যেমন প্রশ্ন তেমন উত্তর। এখান থেকে আমরা কি শিখলাম? বর্তমানে ও এমন অনেক মানুষ আছে যারা এই ধরনের অদ্ভুত প্রশ্ন করেন যেটা যানার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই,কল্যান নেই।অথচ আমরা এমন অদ্ভুত গুরুত্বহীন প্রশ্ন করি একটি হাদীসে , রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি যে সম্পর্কে তোমাদের বলিনি, সে সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞেস করো না। কারণ, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগণ তাদের নবীগণের নিকট অধিক প্রশ্নের কারণে এবং তাঁদের সাথে মতবিরোধের কারণে ধ্বংস হয়েছে। অতএব আমি তোমাদেরকে কোন বিষয়ের নির্দেশ দিলে তোমরা তা যথাসাধ্য পালন করো এবং কোন বিষয়ে আমি তোমাদের নিষেধ করলে তা থেকে তোমরা বিরত থাকো। [সহীহ বুখারী ৭২৮৮, মুসলিম ১৩৩৭, তিরমিযী ২৬৭৯, আহমাদ ৭৩২০] (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।

ইবনু রজব আল-হাম্বালী আল-বাগদাদী রাহিমাহুল্লাহ এর কিছু নাসীহাহ

 1: ❖ বুদ্ধিমানদের জন্য গান-বাজনার ফিতনা থেকে সতর্কবার্তা……!

.
হাফিয যাইনুদ্দীন আবুল ফারজ ‘আব্দুর রহমান বিন শিহাব—যিনি ইবনু রজব আল-হাম্বালী আল-বাগদাদী নামে প্রসিদ্ধ—রাহিমাহুল্লাহ [জন্ম: ৭৩৬ হি. মৃত: ৭৯৫ হি:] বলেছেন,

واعلم أن سماع الأغاني يضاد سماع القرآن من كل وجه، فإن القرآن كلام الله، ووحيه ونوره الذي أحيا الله به القلوب الميتة، وأخرج العباد به من الظلمات إلى النور، والأغاني وآلاتها مزامير الشيطان ، فإن الشيطان قرآنه الشعر، ومؤذنه المزمار، ومصائده النساء كذا قال قتادة وغيره من السلف.

জেনে রেখো, গান শ্রবণ করা কুরআন শ্রবণের সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, কুরআন হলো আল্লাহর কালাম, তাঁর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ ওহি, এমন এক আলোকধারা যার মাধ্যমে আল্লাহ মৃত অন্তরসমূহকে জীবিত করেছেন এবং বান্দাদের অন্ধকার থেকে আলোতে এনেছেন।পক্ষান্তরে গান ও তার যন্ত্রপাতি হলো শয়তানের বাদ্যযন্ত্র। কারণ শয়তানের কুরআন হলো কবিতা,তার মুয়াজ্জিন হলো বাঁশি এবং তার ফাঁদ হলো নারীরা। এমনটাই বলেছেন কাতাদাহ ও অন্যান্য সালাফগণ।”(ইবনু রজব; মাজমু‘উর রসাঈল; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৪৭১)
.

2: ❖ সত্যিকারের ইলম মানে অধিক কথাবার্তা বা তর্ক-বিতর্কে জয়ী হওয়া নয়…..!
.
হাফিয ইবন রজব হাম্বালী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর মূল্যবান রিসালা “ফাদলু ইলমিস সালাফ আলা ইলমিল খালাফ” অর্থাৎ পরবর্তীদের জ্ঞানের উপর পূর্ববর্তীদের জ্ঞানের মর্যাদা” নামক গ্রন্থের (পৃষ্ঠা নং-৫)-এ বলেন:

وقد فتن كثير من المتأخرين بهذا ، فظنوا أن من كثر كلامه وجداله وخصامه في مسائل الدين : فهو أعلم ممن ليس كذلك !!وهذا جهل محض ؛ وانظر إلى أكابر الصحابة وعلمائهم ، كأبي بكر وعمر وعلي ومعاذ وابن مسعود وزيد بن ثابت ؛ كيف كانوا : كلامهم أقل من كلام ابن عباس ، وهم أعلم منه .وكذلك كلام التابعين أكثر من كلام الصحابة ، والصحابة أعل منهم .وكذلك تابعوا التابعين ، كلامهم أكثر من كلام التابعين ، والتابعون أعلم منهم .فليس العلم بكثرة الرواية ، ولا بكثرة المقال ؛ ولكنه نور يقذف في القلب يفهم به العبد الحق ، ويميز به بينه وبين الباطل ، ويعبر عن ذلك بعبارات وجيزة محصلة للمقاصد ”

“পরবর্তী যামানার অনেক মানুষ এ ক্ষেত্রে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। তারা ধারণা করেছেন যে, দ্বীনি বিষয়ে যিনি বেশি কথা বলতে পারেন, বেশি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে পারেন তিনি অন্যের চেয়ে বড় জ্ঞানী!!এটি নিরেট মূর্খতা। আবু বকর (রাঃ), উমর (রাঃ), আলী (রাঃ), মুয়ায (রাঃ), ইবনে মাসউদ (রাঃ), যায়েদ বিন ছাবেত (রাঃ) প্রমুখ বড় বড় আলেম সাহাবীদের দিকে তাকিয়ে দেখুন; তাঁরা কেমন ছিলেন: তাঁদের কথাবার্তার পরিমাণ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর চেয়ে কম ছিল। কিন্তু, তাঁরা ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর চেয়ে বড় আলেম ছিলেন। তাবেয়ীদের কথা সাহাবীদের চেয়ে বেশি ছিল; অথচ সাহাবীরা তাবেয়ীদের চেয়ে বড় আলেম ছিলেন।তাবে-তাবেয়ীদের অবস্থাও একই রকম। তাবেয়ীদের চেয়ে তাদের কথা বেশি ছিল; অথচ তাবেয়ীরা তাদের চেয়ে বড় আলেম ছিলেন। সুতরাং, বেশি বেশি বর্ণনা করতে পারা, কথা বলতে পারা ইলম নয়। বরং ইলম হচ্ছে- এমন একটি নূর যা অন্তরে ঢেলে দেওয়া হয়; যার মাধ্যমে বান্দা হককে বুঝতে পারে, হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে এবং ঈপ্সিত উদ্দেশ্য অর্জিত হয় এমন সংক্ষিপ্ত কথার মাধ্যমে সেটা প্রকাশ করতে পারে।”(ইবনু রজব; ফাদলু ইলমিস সালাফ আলা ইলমিল খালাফ; পৃষ্ঠা: ৫)
.
3: ❖ সত্যিকারের ইলম মানে অধিক কথাবার্তা বা তর্ক-বিতর্কে জয়ী হওয়া নয়…..!
.
হাফিয ইবন রজব হাম্বালী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর মূল্যবান রিসালা “ফাদলু ইলমিস সালাফ আলা ইলমিল খালাফ” অর্থাৎ পরবর্তীদের জ্ঞানের উপর পূর্ববর্তীদের জ্ঞানের মর্যাদা” নামক গ্রন্থের (পৃষ্ঠা নং-৫)-এ বলেন:

وقد فتن كثير من المتأخرين بهذا ، فظنوا أن من كثر كلامه وجداله وخصامه في مسائل الدين : فهو أعلم ممن ليس كذلك !!وهذا جهل محض ؛ وانظر إلى أكابر الصحابة وعلمائهم ، كأبي بكر وعمر وعلي ومعاذ وابن مسعود وزيد بن ثابت ؛ كيف كانوا : كلامهم أقل من كلام ابن عباس ، وهم أعلم منه .وكذلك كلام التابعين أكثر من كلام الصحابة ، والصحابة أعل منهم .وكذلك تابعوا التابعين ، كلامهم أكثر من كلام التابعين ، والتابعون أعلم منهم .فليس العلم بكثرة الرواية ، ولا بكثرة المقال ؛ ولكنه نور يقذف في القلب يفهم به العبد الحق ، ويميز به بينه وبين الباطل ، ويعبر عن ذلك بعبارات وجيزة محصلة للمقاصد ”

“পরবর্তী যামানার অনেক মানুষ এ ক্ষেত্রে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। তারা ধারণা করেছেন যে, দ্বীনি বিষয়ে যিনি বেশি কথা বলতে পারেন, বেশি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে পারেন তিনি অন্যের চেয়ে বড় জ্ঞানী!!এটি নিরেট মূর্খতা। আবু বকর (রাঃ), উমর (রাঃ), আলী (রাঃ), মুয়ায (রাঃ), ইবনে মাসউদ (রাঃ), যায়েদ বিন ছাবেত (রাঃ) প্রমুখ বড় বড় আলেম সাহাবীদের দিকে তাকিয়ে দেখুন; তাঁরা কেমন ছিলেন: তাঁদের কথাবার্তার পরিমাণ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর চেয়ে কম ছিল। কিন্তু, তাঁরা ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর চেয়ে বড় আলেম ছিলেন। তাবেয়ীদের কথা সাহাবীদের চেয়ে বেশি ছিল; অথচ সাহাবীরা তাবেয়ীদের চেয়ে বড় আলেম ছিলেন।তাবে-তাবেয়ীদের অবস্থাও একই রকম। তাবেয়ীদের চেয়ে তাদের কথা বেশি ছিল; অথচ তাবেয়ীরা তাদের চেয়ে বড় আলেম ছিলেন। সুতরাং, বেশি বেশি বর্ণনা করতে পারা, কথা বলতে পারা ইলম নয়। বরং ইলম হচ্ছে- এমন একটি নূর যা অন্তরে ঢেলে দেওয়া হয়; যার মাধ্যমে বান্দা হককে বুঝতে পারে, হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে এবং ঈপ্সিত উদ্দেশ্য অর্জিত হয় এমন সংক্ষিপ্ত কথার মাধ্যমে সেটা প্রকাশ করতে পারে।”(ইবনু রজব; ফাদলু ইলমিস সালাফ আলা ইলমিল খালাফ; পৃষ্ঠা: ৫)
.

4: ❖ ইবনু রজব আল-হাম্বালী আল-বাগদাদী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ৭৩৬ হি.মৃত:৭৯৫ হি:] বলেছেন,

وكثيراً ما يمدح مَنْ لا يستحق المدح، ويلعن من لا يستحق اللّعن.
“অনেক সময় এমন ব্যক্তির প্রশংসা করা হয়, যে প্রশংসার যোগ্য নয়; এবং এমন ব্যক্তিকে অভিশাপ দেওয়া হয়, যে অভিশাপের যোগ্য নয়।”(মাজমূ রাসায়েল ইবনু রজব; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১১০; শারহু হাদিস লাব্বাইক: পৃষ্ঠা: ৪৭)।

5: ❖ ইমাম ইবনু রজব আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৯৫ হি.] বলেছেন,

,أن العبد إذا اشتد عليه الكرب فإنَّه يحتاج حينئذٍ إِلَى مجاهدة الشيطان؛ لأنّه يأتيه فيقنطه ويسخطه، فيحتاج العبد إِلَى مجاهدته ودفعه، فيكون ثواب مجاهدة عدوه ودفعه: دفع البلاء عنه ورفعه،

“যখন বান্দার উপর বিপদ ঘনীভূত হয়, তখন তাকে শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। কেননা শয়তান এসে তাকে (কুমন্ত্রণা দিয়ে) নিরাশ ও রাগান্বিত করে তোলে। তাই বান্দাকে সংগ্রাম করে শয়তানকে প্রতিহত করতে হয়। অবশেষে শত্রুর বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও তাকে দমন করার পুরস্কার স্বরূপ বান্দার উপর থেকে সেই বিপদ উঠিয়ে নেওয়া হয় এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়”।(ইবনু রজব; নূরুল ইক্বতিবাস; পৃষ্ঠা: ১৫১)

ইমাম ইবনুল জাওযী রাহিমাহুল্লাহ এর কিছু নাসীহাহ

 1: এক মুহূর্ত সময়ও অবহেলায় নষ্ট করা যাবে না………..।

.
ইমাম ইবনুল জাওযী (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর পুত্রকে একটা উপদেশমূলক চিঠি লিখেন, সেখানে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এই হাদীস উল্লেখ করেন, مَنْ قَالَ سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ غُرِسَتْ لَهُ نَخْلَةٌ فِي الْجَنَّةِ، “যে ব্যক্তি বলবে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ রোপণ করা হবে’। অতঃপর বলেন, ‘দেখো বৎস! যে ব্যক্তি জীবনের সময়গুলোকে অবহেলায় নষ্ট করে দেয়, সে জান্নাতের কত গাছ রোপণের সুযোগ হারাচ্ছে!”(ফাতাওয়া আশ-শাবাকা আল-ইসলামিইয়াহ; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা; ৫৩৪)

2: সুন্দর একটি শিক্ষণীয় ঘটনা………………!
.
ইবনুল জাওযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:

كان ملِك كثيرَ المال ، وكانت له ابنة لم يكن له ولد غيرها ، وكان يحبها حبّاً شديداً ، وكان يلهيها بصنوف اللهو ، فمكث كذلك زماناً ، وكان إلى جانب الملك عابدٌ ، فبينا هو ذات ليلة يقرأ إذ رفع صوته وهو يقول يا أيها الذين آمنوا قوا أنفسكم وأهليكم ناراً وقودها الناس والحجارة فسمعت الجارية قراءته ، فقالت لجواريها : كفوا ، فلم يكفوا ، وجعل العابد يردد الآية والجارية تقول لهم : كفوا ، فلم يكفوا ، فوضعت يدها في جيبها فشقت ثيابها ، فانطلقوا إلى أبيها فأخبروه بالقصة ، فأقبل إليها ، فقال : يا حبيبتي ما حالك منذ الليلة ؟ ما يبكيك ؟ وضمها إليه ، فقالت : أسألك بالله يا أبت ، لله عز وجل دار فيها نار وقودها الناس والحجارة ؟ قال : نعم ، قالت : وما يمنعك يا أبت أن تخبرني ، والله لا أكلتُ طيِّباً ، ولا نمتُ على ليِّنٍ حتى أعلم أين منزلي في الجنة أو النار .

“এক রাজা ছিলেন বিপুল সম্পদের অধিকারী। তার কোনো ছেলে সন্তান না থাকলেও একজন মেয়ে সন্তান ছিল। মেয়েকে তিনি খুবই ভালোবাসতেন। তাকে নানান খেল-তামাশায় ব্যস্ত রাখতেন। এভাবে বেশ কিছু সময় কেটে গেল। রাজার পাশে একজন ইবাদতগুজার মানুষ থাকতেন। এক রাতে তিনি কুরআন পড়তে গিয়ে এই আয়াতটা জোরে পড়লেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে রক্ষা করো যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর।” ঐ মেয়ে তার পড়া শুনতে পাচ্ছিল। সে তার দাসীদেরকে বলল: তোমরা থামো। তারা থামছিল না। এদিকে ইবাদতগুজার লোকটা বারবার আয়াতটা পড়ছিল। আর মেয়েটা দাসীদেরকে বলে যাচ্ছিল: তোমরা থামো। তারা থামল না। মেয়েটা তার বুকের জামায় হাত দিয়ে সেটা ছিঁড়ে ফেলল। দাসীরা তার বাবার কাছে গিয়ে ঘটনাটি বলল। মেয়ের বাবা তাকে বলল: ‘মামনি, গত রাত থেকে তোমার কী হয়েছে? তুমি কী জন্য কাঁদছ?’ তিনি তাকে জড়িয়ে ধরলেন। মেয়ে বলল: আব্বু! আমি আল্লাহর ওয়াস্তে আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি, ‘আল্লাহর কি এমন একটা আগুনের স্থান আছে যেটার জ্বালানী হবে: মানুষ এবং পাথর?’ তিনি বললেন: হ্যাঁ। মেয়ে বলল: ‘বাবা, এটা আমাকে জানাতে কীসে তোমাকে নিষেধ করল? আল্লাহর কসম! আমি আর কখনো ভালো কিছু খাবো না, নরম বিছানায় ঘুমাব না যতক্ষণ না আমি জানতে পারছি আমার বাসস্থান কোথায় হবে? জান্নাতে; নাকি জাহান্নামে?”।(সিফাতুস সাফওয়াহ খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৪৩৭-৪৩৮) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)

3: ইমাম ইবনুল জাওযি (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:৫৯৭ হি.] বলেন:

فإذا جاء إبليس؛ فقال: كَم تدعوهُ ولا ترى إجابة! فقُل: أنا أتعبَّدُ بالدُّعاء

“যদি ইবলিস (শয়তান) এসে বলে,‘‘তুমি তাঁকে (আল্লাহকে) কত ডাকছ, অথচ কোনো সাড়া পাচ্ছ না’’, তাহলে তুমি বলো, ‘আমিতো দু‘আর মাধ্যমে ইবাদত করছি!”(ইবনুল জাওযী; সায়দুল খাত্বের; পৃষ্ঠা: ২২২)
.
ইবনুল জাওযী “আমিতো দু‘আর মাধ্যমে ইবাদত করছি” এই কথা বলার মাধ্যমে নিম্নোক্ত হাদিসের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন,হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—إنَّ الدُّعاءَ هوَ العبادةُ ‘‘নিশ্চয়ই দু‘আ হলো ইবাদত।’’(ইমাম ইবনু মাজাহ, হা/১৪৭৯)
.
4: ইমাম ইবনুল জাওযি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:

الشهور الاثني عشر كمثل أولاد يعقوب عليه السلام
وشهر رمضان بين الشهور كيوسف بين إخوته
فكما أن يوسف أحب الأولاد إلى يعقوب
كذلك رمضان أحب الشهور إلى علام الغيوب.
جاء إخوة يوسف معتمدين عليه في سد الخلل وإزاحة العلل ،بعد أن كانوا أصحاب خطايا وزلل،

“বছরের বারোটি মাস যেন (নবি) ইয়াকুব (আ.)-এর বারো জন পুত্রের ন্যায়৷ তাদের মধ্যে ইউসুফ (আ.) যেমন তাঁর পিতার নিকট সর্বাধিক প্রিয় ছিলেন, তেমনি রামাদান মাসও আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বেশি প্রিয়। ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা যেমন নিজেদের ভুল-ত্রুটি ও পাপের পর তাঁর সাহায্যে এসেছিল অভাব পূরণ ও কষ্ট মোচনের জন্য, তেমনি রমাদানও আসে (বান্দার জন্য) পাপ মোচনের সুযোগ নিয়ে৷”(বুস্তানুল ওয়াঈযীন; পৃষ্ঠা: ২৩০)(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)

5: ইবনুল জাওযি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

واعلم أن التأديب مثله كمثل البذر، والمؤدِّب كالأرض ، متى كانت الأرض رديئة : ضاع البذر فيها ، ومتى كانت صالحة ، نشأ ونما ”
“জেনে রাখুন সন্তানকে আদব-কায়দা শিক্ষা দেয়ার উদাহরণ হচ্ছে বীজের মত। আদব শিক্ষাদানকারী হচ্ছেন জমিনের মত। যদি জমিন খারাপ হয় তাহলে বীজ নষ্ট হয়ে যাবে। আর জমিন ভাল হলে বীজ অঙ্কুরিত হবে ও বৃদ্ধি পাবে।” (ইবনুল মুফলিহ ‘আদাবুস শারইয়্যাহ’ খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৫৮০)

6: ইবনুল জাওযি (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:

أنت في طلب الدنيا صحيح الجسم، وفي طلب الآخرة بك أوجاع! كم تعرج عن سُبل التقوى يا أعرج الهمة، يا من يبقى في القاع! –

“তুমি দুনিয়া তলব করতে গেলে শারীরিকভাবে সুস্থ-সবল থাকো, কিন্তু আখেরাত তলব করতে গেলেই তোমার দেহ যেন ক্লান্ত ও রোগাক্রান্ত! হে দুর্বল সংকল্পের মানুষ! তাকওয়ার পথ থেকে তুমি কতবার পিছলে গিয়েছ! হে (তুমি) সেই ব্যক্তি, যে সর্বদা নিচে পড়ে থাকে!”(ইবনুল জাওযি বাহরুদ দুমূ; পৃষ্ঠা: ৫৩)
.
7: ইমাম ইবনুল জাওযী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৫৯৭ হি.]
বলেন,

ويتبين فهم الصبي وعلو همته وتقصيرها باختياراته لنفسه؛ وقد تجتمع الصبيان للعب فيقول العالي الهمة: من يكون معي، ويقول القاصر: مع من أكون. ‌ومتى ‌علت ‌همته ‌آثر ‌العلم،

“(নিশ্চয়ই) শিশুর বুদ্ধিমত্তা, উচ্চ মনোবল বা তার ঘাটতি বোঝা যায় নিজের জন্য সে কী বাছাই করে সেটার মাধ্যমে। যখন শিশুরা খেলাধুলার জন্য একত্রিত হয়, তখন উচ্চ মনোবলের অধিকারী শিশু (ছেলেটা) বলে,”আমার সাথে কে কে আসবে”? আর দুর্বল মনোবলের শিশু বলে,”আমি কার সাথে যাব”? আর যে বাচ্চার মনোবল অনেক উচ্চ স্তরের হয়,তখন সে ইলম অর্জনের পথকে অগ্রাধিকার দেয় (বেছে নেয়)”।(ইবনুল জাওযী; তাম্বীহুন নায়েম; পৃষ্ঠা: ৫২)
.
8: ইমাম ইবনুল জাওযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:

,من يريد تعجيل الإجابة، ويتذمر إن لم تتعجل، فذاك ضعيف الإيمان، ويرى أن له حقًّا في الإجابة، وكأنه يتقاضى أجرة عمله

“যে ব্যক্তি দ্রুত (তাড়াতাড়ি) দু‘আ কবুল হওয়ার প্রত্যাশা করে। আর দ্রুত কুবল না হলে (অধৈর্য হয়ে পড়ে) অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে,সে দুর্বল ঈমানের অধিকারী। (কেননা) সে মনে করে,দু‘আ কবুল হওয়া তার ন্যায্য অধিকার, যেন সে তার আমলের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে কোনো পাওনা আদায় করছে।”(ইবনুল জাওযী; সায়দুল খাত্বির; পৃষ্ঠা: ৪৩৯)
.
9: ইমাম ইবনুল জাওযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

إِخْوَانِي: تَفَكَّرُوا لِمَاذَا خُلِقْتُمْ فَالتَّفَكُّرُ عِبَادَةٌ،

“হে আমার ভাইয়েরা! কেন তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে, তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা কর। (মনে রেখ!) এই চিন্তা-ভাবনা করাও এক ধরনের ইবাদত”। (ইবনুল জাওযী; আত-তাবসিরাহ: ২/৭২)

10: সুন্দর একটি শিক্ষণীয় ঘটনা………………!
.
ইবনুল জাওযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:

كان ملِك كثيرَ المال ، وكانت له ابنة لم يكن له ولد غيرها ، وكان يحبها حبّاً شديداً ، وكان يلهيها بصنوف اللهو ، فمكث كذلك زماناً ، وكان إلى جانب الملك عابدٌ ، فبينا هو ذات ليلة يقرأ إذ رفع صوته وهو يقول يا أيها الذين آمنوا قوا أنفسكم وأهليكم ناراً وقودها الناس والحجارة فسمعت الجارية قراءته ، فقالت لجواريها : كفوا ، فلم يكفوا ، وجعل العابد يردد الآية والجارية تقول لهم : كفوا ، فلم يكفوا ، فوضعت يدها في جيبها فشقت ثيابها ، فانطلقوا إلى أبيها فأخبروه بالقصة ، فأقبل إليها ، فقال : يا حبيبتي ما حالك منذ الليلة ؟ ما يبكيك ؟ وضمها إليه ، فقالت : أسألك بالله يا أبت ، لله عز وجل دار فيها نار وقودها الناس والحجارة ؟ قال : نعم ، قالت : وما يمنعك يا أبت أن تخبرني ، والله لا أكلتُ طيِّباً ، ولا نمتُ على ليِّنٍ حتى أعلم أين منزلي في الجنة أو النار .

“এক রাজা ছিলেন বিপুল সম্পদের অধিকারী। তার কোনো ছেলে সন্তান না থাকলেও একজন মেয়ে সন্তান ছিল। মেয়েকে তিনি খুবই ভালোবাসতেন। তাকে নানান খেল-তামাশায় ব্যস্ত রাখতেন। এভাবে বেশ কিছু সময় কেটে গেল। রাজার পাশে একজন ইবাদতগুজার মানুষ থাকতেন। এক রাতে তিনি কুরআন পড়তে গিয়ে এই আয়াতটা জোরে পড়লেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে রক্ষা করো যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর।” ঐ মেয়ে তার পড়া শুনতে পাচ্ছিল। সে তার দাসীদেরকে বলল: তোমরা থামো। তারা থামছিল না। এদিকে ইবাদতগুজার লোকটা বারবার আয়াতটা পড়ছিল। আর মেয়েটা দাসীদেরকে বলে যাচ্ছিল: তোমরা থামো। তারা থামল না। মেয়েটা তার বুকের জামায় হাত দিয়ে সেটা ছিঁড়ে ফেলল। দাসীরা তার বাবার কাছে গিয়ে ঘটনাটি বলল। মেয়ের বাবা তাকে বলল: ‘মামনি, গত রাত থেকে তোমার কী হয়েছে? তুমি কী জন্য কাঁদছ?’ তিনি তাকে জড়িয়ে ধরলেন। মেয়ে বলল: আব্বু! আমি আল্লাহর ওয়াস্তে আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি, ‘আল্লাহর কি এমন একটা আগুনের স্থান আছে যেটার জ্বালানী হবে: মানুষ এবং পাথর?’ তিনি বললেন: হ্যাঁ। মেয়ে বলল: ‘বাবা, এটা আমাকে জানাতে কীসে তোমাকে নিষেধ করল? আল্লাহর কসম! আমি আর কখনো ভালো কিছু খাবো না, নরম বিছানায় ঘুমাব না যতক্ষণ না আমি জানতে পারছি আমার বাসস্থান কোথায় হবে? জান্নাতে; নাকি জাহান্নামে?”।(সিফাতুস সাফওয়াহ; খণ্ড; ৪; পৃষ্ঠা; ৪৩৭-৪৩৮) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)

11: ইমাম ইবনুল জাওযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
.
নিশ্চয়ই জ্ঞানই (দ্বীনের) মূল স্তম্ভ এবং সবচেয়ে বড় আলোক বর্তিকা। কখনো কখনো (দ্বীনী জ্ঞানার্জনের নিমিত্তে) বইয়ের পাতাগুলো উল্টানো নফল সিয়াম,সালাত,হজ্জ এবং জিহাদ অপেক্ষা উত্তম হয়ে থাকে। এমন অনেক মানুষ আছে,যে ইলম থেকে বিমুখ থাকার কারণে নিজের ইবাদতে প্রবৃত্তির অনুসরণে ডুবে থাকে। সে নফল ইবাদত করতে গিয়ে অনেক অকাট্য ফরয ইবাদতকে নষ্ট করে দেয়। স্পষ্ট ওয়াজিবকে তরক করে তার ধারণাপ্রসূত উত্তম (?) কাজ করে (অথচ শরী‘আতে সেটা উত্তম কাজ নয়)। হায়! যদি তার নিকটে সঠিক জ্ঞানের আলোকবর্তিকা থাকত, তাহলে অবশ্যই সে সঠিক পথের দিশা লাভ করত।(ইবনুল জাওযী; সায়দুল খাত্বের পৃষ্ঠা: ১১৩)

12: ইমাম ইবনুল জাওযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,নিশ্চয়ই জ্ঞানই (দ্বীনের) মূল স্তম্ভ এবং সবচেয়ে বড় আলোকবর্তিকা। কখনো কখনো (দ্বীনী জ্ঞানার্জনের নিমিত্তে) বইয়ের পাতাগুলো উল্টানো নফল সিয়াম, সালাত,হজ্জ এবং জিহাদ অপেক্ষা উত্তম হয়ে থাকে। এমন অনেক মানুষ আছে,যে ইলম থেকে বিমুখ থাকার কারণে নিজের ইবাদতে প্রবৃত্তির অনুসরণে ডুবে থাকে। সে নফল ইবাদত করতে গিয়ে অনেক অকাট্য ফরয ইবাদতকে নষ্ট করে দেয়। স্পষ্ট ওয়াজিবকে তরক করে তার ধারণাপ্রসূত উত্তম (?) কাজ করে (অথচ শরী‘আতে সেটা উত্তম কাজ নয়)। হায়! যদি তার নিকটে সঠিক জ্ঞানের আলোকবর্তিকা থাকত,তাহলে অবশ্যই সে সঠিক পথের দিশা লাভ করত।(ইবনুল জাওযী; সায়দুল খাত্বের পৃষ্ঠা: ১১৩)

13 : ইমাম ইবনুল জাওযি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,ইবলিস (শয়তান) এসে যদি বলে, ‘‘তুমি তাঁকে কত ডাকছ, অথচ কোনো সাড়া পাচ্ছ না’’, তাহলে তুমি বলো, ‘আমিতো দু‘আর মাধ্যমে ইবাদত করছি!’
কারণ তিনি আল্লাহ বলেন,ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ، ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব’ [সূরা গাফির/মুমিন ৪০/৬০]।
.
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—
.
إنَّ الدُّعاءَ هوَ العبادةُ
‘‘নিশ্চয়ই দু‘আ হলো ইবাদত।’’ [ইমাম ইবনু মাজাহ; আস-সুনান: ১৪৭৯; হাদীসটি সহীহ]
.
অন্যত্র তিনি বলেন,
أَفْضَلُ الْعِبَادَةِ الدُّعَاءُ
‘উত্তম ইবাদত হচ্ছে দো‘আ’।[সহীহুল জামে‘ হা/১১২২; সিলসিলা সহীহাহ হা/১৫৭৯; হাদীসটি সহীহ ] আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী।

Translate