সফর অবস্থায় স্বলাত ক্বছর করে পড়াকে অবজ্ঞা করা
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর স্বলাত- এর অংশবিশেষশায়খ মুযাফফর বিন মুহসিন
‘ক্বছর’ অর্থ কমানো। চার রাক‘আত বিশিষ্ট স্বলাতকে দু’রাক‘আত করে পড়াকে ‘ক্বছর’ বলে। ক্বছর করা আল্লাহর পক্ষ থেকে ছাদাক্বাহ বা রহমত। ‘জমা’ অর্থ একত্রিত করা। যোহর ও আছর এবং মাগরিব ও এশার স্বলাত এক সঙ্গে আদায় করা। এ ব্যাপারে সরাসরি হাদীছ থাকলেও অধিকাংশ মুছল্লী অতি পরহেযগারিতা দেখাতে গিয়ে এই সুন্নাতকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বরং পূর্ণ স্বলাত আদায় করতে গিয়ে গাড়ী ধরার ব্যস্ততায় স্বলাতকে তাড়াহুড়ায় পরিণত করে। সফর অবস্থায় স্বলাত ক্বছর ও জমা করার যে হিকমত, তা অনেকেই বুঝতে চায় না। সময়ের ঘাটতি, স্থান পাওয়া, পবিত্রতা হাছিলের জন্য সুযোগ মত পানি পাওয়া, স্বলাতের চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা, প্রশান্তির
সাথে স্বলাত আদায় করা ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে তারা কখনো চিন্তা করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, সফর অবস্থায় স্বলাত ক্বছর
وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَقْصُرُوْا مِنَ الصَّلَاةِ إِنْ خِفْتُمْ أَنْ يَفْتِنَكُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا إِنَّ الْكَافِرِيْنَ كَانُوْا لَكُمْ عَدُوًّا مُبِيْنًا.
‘যখন তোমরা সফর কর, তখন তোমাদের স্বলাতে ‘ক্বছর’ করায় কোন দোষ নেই। যদি তোমরা আশংকা কর যে, কাফেররা তোমাদেরকে উত্যক্ত করবে। নিশ্চয়ই কাফেররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ (নিসা ১০১)।
عَنْ يَعْلَى بْنِ أُمَيَّةَ قَالَ قُلْتُ لِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ( لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَقْصُرُوْا مِنَ الصَّلاَةِ إِنْ خِفْتُمْ أَنْ يَفْتِنَكُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا) فَقَدْ أَمِنَ النَّاسُ فَقَالَ عَجِبْتُ مِمَّا عَجِبْتَ مِنْهُ فَسَأَلْتُ رَسُوْلَ اللهِ عَنْ ذَلِكَ فَقَالَ صَدَقَةٌ تَصَدَّقَ اللهُ بِهَا عَلَيْكُمْ فَاقْبَلُوْا صَدَقَتَهُ.
ইয়ালা ইবনু উমাইয়া (রাঃ) বলেন, আমি একদা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-কে নিম্নের আয়াত পড়ে বললাম, ‘তোমাদের স্বলাত ‘ক্বছর’ করায় কোন দোষ নেই। যদি তোমরা আশংকা কর যে, কাফেররা তোমাদেরকে উত্যক্ত করবে’। মানুষ এখন নিরাপদ হয়েছে। তিনি বললেন, তুমি যেমন আশ্চর্য হয়েছ আমিও তেমনি এতে আশ্চর্য হয়েছিলাম। অতঃপর আমি রাসূল (ﷺ)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বললেন, ‘এটা ছাদাক্বাহ। আল্লাহ তোমাদের প্রতি ছাদাক্বাহ করেছেন। তোমরা তার ছাদাক্বাহ গ্রহণ কর’।[1]
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ فِىْ غَزْوَةِ تَبُوْكَ إِذَا زَاغَتِ الشَّمْسُ قَبْلَ أَنْ يَرْتَحِلَ جَمَعَ بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ وَإِنْ يَرْتَحِلْ قَبْلَ أَنْ تَزِيْغَ الشَّمْسُ أَخَّرَ الظُّهْرَ حَتَّى يَنْزِلَ لِلْعَصْرِ وَفِى الْمَغْرِبِ مِثْلَ ذَلِكَ إِنْ غَابَتِ الشَّمْسُ قَبْلَ أَنْ يَرْتَحِلَ جَمَعَ بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ وَإِنْ يَرْتَحِلْ قَبْلَ أَنْ تَغِيْبَ الشَّمْسُ أَخَّرَ الْمَغْرِبَ حَتَّى يَنْزِلَ لِلْعِشَاءِ ثُمَّ جَمَعَ بَيْنَهُمَا.
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) তাবূক যুদ্ধে অবস্থান করছিলেন। সওয়ার হওয়ার পূর্বে যদি সূর্য ঢুলে পড়ত, তখন তিনি যোহর ও আছর জমা করতেন। আর যদি সূর্য ঢুলে পড়ার পূর্বে সওয়ার হতেন, তখন যোহরকে দেরী করতেন আছর পর্যন্ত। অনুরূপ করতেন মাগরিবের স্বলাতের ক্ষেত্রে। সওয়ার হওয়ার পূর্বে যদি সূর্য ডুবে যেত, তাহলে মাগরিব ও এশা জমা করতেন। আর সূর্য ডুবার পূর্বে যদি সওয়ার হতেন, তখন মাগরিবকে দেরী করতেন এবং এশার স্বলাতের জন্য নেমে পড়তেন। অতঃপর মাগরিব ও এশা জমা করতেন।[2]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَجْمَعُ بَيْنَ صَلاَةِ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ إِذَا كَانَ عَلَى ظَهْرِ سَيْرٍ وَيَجْمَعُ بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ.
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) যখন সফর অবস্থায় থাকতেন, তখন যোহর ও আছর জমা করতেন। অনুরূপ মাগরিব ও এশাও জমা করে আদায় করতেন।[3]
✔ (২) ক্বছরের জন্য ৪৮ মাইল নির্ধারণ করা :
হাদীছে কোন নির্দিষ্ট দূরত্বের কথা নেই। এক হাদীছে এসেছে, রাসূল (ﷺ) তিন মাইল কিংবা তিন ফারসাখ বা ৯ মাইল যাওয়ার পর দুই রাক‘আত পড়তেন।[1] শুরাহবীল ইবনু সামত ১৭ বা ১৮ মাইল পর পড়তেন।[2] ইবনু ওমর ও ইবনু আববাস (রাঃ) চার বুরদ বা ১৬ ফারসাখ অর্থাৎ ৪৮ মাইল অতিক্রম করলে ক্বছর করতেন।[3] নির্দিষ্ট কিছু বর্ণিত হয়নি। অতএব সফর হিসাবে গণ্য করা যায়, এরূপ সফরে বের হলে নিজ বাসস্থান থেকে বেরিয়ে কিছুদূর গেলেই ‘ক্বছর’ করা যায়।
عَنْ أَنَسٍ يَقُوْلُ صَلَّيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ الظُّهْرَ بِالْمَدِيْنَةِ أَرْبَعًا وَصَلَّيْتُ مَعَهُ الْعَصْرَ بِذِى الْحُلَيْفَةِ رَكْعَتَيْنِ.
আনাস (রাঃ) বলতেন, আমি রাসূল (ﷺ)-এর সাথে মদীনায় যোহরের স্বলাত চার রাক‘আত পড়েছি। আর যিল হুলায়ফা গিয়ে আছরের স্বলাত দুই রাক‘আত পড়েছি।[4]
রাসূল (ﷺ) একটানা ১৯ দিন ‘ক্বছর’ করেছেন।[5] অর্থাৎ যত দিন তিনি অবস্থান করেছেন, ততদিন ক্বছর করেছেন। তাই স্থায়ী না হওয়া পর্যন্ত স্বলাত ক্বছর ও জমা করে পড়া যাবে। অনেক ছাহাবী দীর্ঘ দিন সফরে থাকলেও ক্বছর করতেন।[6] ছাহাবীগণ সফরে থাকা অবস্থায় ক্বছর করাকেই অগ্রাধিকার দিতেন।[7] অতএব সফরে স্বলাতকে ক্বছর ও জমা করার সুন্নাতকে অবজ্ঞা করা যাবে না।
✔ (৩) হজ্জের সফরে স্বলাত ক্বছর না করা :
হজ্জের সফরে ক্বছর ও জমা স্বলাতের বিধানকে প্রত্যাখ্যান করা অন্যায়। কিছু জাল ও যঈফ হাদীছের কারণে উক্ত সুন্নাতকে অবজ্ঞা করা উচিত নয়।[1] কারণ হাদীছে সরাসরি রাসূল (ﷺ) ও ছাহাবীগণের আমল বর্ণিত হয়েছে।
عَنْ أَنَسٍ يَقُوْلُ خَرَجْنَا مَعَ النَّبِىِّ مِنَ الْمَدِيْنَةِ إِلَى مَكَّةَ فَكَانَ يُصَلِّى رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ حَتَّى رَجَعْنَا إِلَى الْمَدِيْنَةِ…
আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল (ﷺ)-এর সাথে মদীনা থেকে মক্কার দিকে বের হয়েছিলাম। পুনরায় মদীনায় ফিরে আসা পর্যন্ত তিনি দুই রাক‘আত দুই রাক‘আত করে স্বলাত আদায় করেছিলেন।[2] অন্য হাদীছে এসেছে, কারণ স্বয়ং রাসূল (ﷺ), আবুবকর ও ওমর (রাঃ) স্বলাত ক্বছর ও জমা করেছেন।[3]
অতএব রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাতকে নির্দ্বিধায় মেনে নিতে হবে। প্রথমে দুই রাক‘আত যোহরের স্বলাত অতঃপর আছরের দুই রাক‘আত পড়বে পৃথক পৃথক ইক্বামতে। অনুরূপভাবে মাগরিব ও এশা এক সঙ্গে আদায় করবে। প্রথমে ইক্বামত দিয়ে মাগরিব তিন রাক‘আত পড়বে অতঃপর পৃথক ইক্বামতে এশা দুই রাক‘আত আদায় করবে।
إِنَّهُمْ كَانُوْا يَجْمَعُوْنَ بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ فِى السُّنَّةِ فَقُلْتُ لِسَالِمٍ أَفَعَلَ ذَلِكَ رَسُوْلُ اللهِ فَقَالَ سَالِمٌ وَهَلْ تَتَّبِعُوْنَ فِىْ ذَلِكَ إِلاَّ سُنَّتَهُ.
নিশ্চয় ছাহাবীগণ সুন্নাতের অনুসরণে যোহর ও আছর স্বলাত জমা করে আদায় করতেন। রাবী বলেন, আমি সালেমকে বললাম, রাসূল (ﷺ) কি এটা করেছেন? তিনি উত্তরে বললেন, এ বিষয়ে তোমরা রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাত ছাড়া অন্য কারো অনুসরণ করবে কি? [4]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ جَمَعَ النَّبِىُّ بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ بِجَمْعٍ كُلُّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا بِإِقَامَةٍ …
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) মাগরিব এবং এশার স্বলাত জমা করতেন। উভয়ের জন্য পৃথক ইক্বামত দেয়া হত।[5]
জ্ঞতব্য : (ক) সফরে সুন্নাত পড়ার প্রয়োজন নেই।[6] তবে বিতর, তাহাজ্জুদ ও ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত পড়বে। রাসূল (ﷺ) এগুলো কখনো
ছাড়তেন না।[7] (খ) মুসাফির ব্যক্তি মুক্বীম ইমামের পিছনে স্বলাত আদায় করলে ৪ রাক‘আত পড়বে। মুসাফির একাকী স্বলাত আদায় করলে দু’রাক‘আত পড়বে। মুসাফির ইমামতি করলেও দু’রাক‘আত পড়তে পারে।[8] আবু মেযলাজ বলেন, আমি ইবনু ওমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, মুসাফির ব্যক্তি মুক্বীম মুছল্লীর সাথে দু’রাক‘আত স্বলাত পেলে ঐ দু’রাক‘আতই কি তার জন্য যথেষ্ট হবে, না তাকে ৪ রাক‘আতই পড়তে হবে? তিনি হেসে উঠে বললেন, মুসাফির তাদের সমান স্বলাত আদায় করবে।[9] (গ) মুক্বীম অবস্থায় বৃষ্টির কারণে ক্বছর ছাড়াই দু’ওয়াক্তের স্বলাত এক সাথে আদায় করা যায়।[10]
সফর অবস্থায় স্বলাত ক্বছর সফর অবস্থায় স্বলাত ক্বছর সফর অবস্থায় স্বলাত ক্বছর সফর অবস্থায় স্বলাত ক্বছর সফর অবস্থায় স্বলাত ক্বছর সফর অবস্থায় স্বলাত ক্বছর সফর অবস্থায় স্বলাত ক্বছর সফর অবস্থায় স্বলাত ক্বছর সফর অবস্থায় স্বলাত ক্বছর সফর অবস্থায় স্বলাত ক্বছর সফর অবস্থায় স্বলাত ক্বছর সফর অবস্থায় স্বলাত ক্বছর।।
No comments:
Post a Comment