Wednesday, October 29, 2025

দাঈর অপরিহার্য গুণাবলি

 দাওয়াহ ইল্লাল্লাহ বা আল্লাহর পথে আহবান করা হল, সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং মর্যাদা পূর্ণ কাজ। এটিই ছিল যুগে যুগে সকল নবী-রসুলের মূল দায়িত্ব এবং মিশন। এটি সরাসরি মহান আল্লাহর নির্দেশ। সে কারণে দাওয়াতের কাজ করা সাধ্য অনুযায়ী প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজ। যার যতটুকু সামর্থ্য ও যোগ্যতা আছে সে তার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে দাওয়াতের পথে অবদান রাখবে। আল্লাহর পথে আহ্বানকারী (দাঈ) তিনি সেই সম্মানিত ব্যক্তি, যিনি মানবতাকে সত্যের পথে আহ্বান করেন, সৎকাজের আদেশ দেন ও অসৎকাজ থেকে বিরত রাখার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শুধু মানুষকে আহ্বান করেন না নিজেও হন সেই আহ্বানের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। তার দাওয়াত মুখে শুধু নয়, চরিত্র ও আচরণে প্রতিফলিত হয়। দাঈ মানে শুধু বক্তা বা লেখক নন। তিনি সেই মানুষ, যার প্রতিটি কথা, আচরণ ও হাসিতেও দাওয়াতের আলো ঝলমল করে। সে কারণে তার মধ্যে কিছু গুণাবলী থাকা অপরিহার্য। নিম্নে একজন দাঈর মধ্যে যে সকল গুনাবলী থাকা অত্যন্ত জরুরি সেগুলো কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:

১. আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক: আল্লাহর পথের আহ্বানকারী তাকওয়া বা আল্লাহভীতি, হারাম থেকে দূরে থাকা, আমলে সালেহ বা সৎকর্ম এবং অধিক পরিমাণে দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবেন।
২. মানুষের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক: এক জন দাঈ মানুষের সাথে আন্তরিকতা পূর্ণ আচরণ, সাহায্য, সহানুভূতি এবং ভালোবাসার মাধ্যমে হৃদয়ের সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবেন।
৩. উদার ও প্রশস্ত দৃষ্টিভঙ্গি: দাঈর জন্য সংকীর্ণতা মুক্ত ও সচ্ছ হৃদয়ের অধিকারী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সর্বক্ষেত্রে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আলোকে ন্যায়-নীতি ও ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি লালন করবেন।
৪. যাদেরকে দাওয়াত দেওয়া হবে তাদের সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা: তিনি যাদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছাবেন তাদের সংস্কৃতি, মানসিকতা ও প্রয়োজন সম্পর্কে জ্ঞান রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের সাথে কথা বলা এবং আচরণের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
৫. সহনশীলতা ও ক্ষমা: দাওয়াতের বিরোধিতা বা শত্রুতার মুখোমুখি হলে কিংবা কেউ কথা ও আচরণে কষ্ট দিলে সে ক্ষেত্রে সহনশীলতা এবং ক্ষমার মনোভাব বজায় রেখে সংযম পূর্ণ কোমল আচরণ করবে‌।
৬. কথা ও কাজের মিল: একজন দাঈর কথা এবং কাজের মিল থাকা অপরিহার্য।
৭. সত্যের ওপর অবিচলতা ও একাগ্রতা: দাঈ চাপ, ভয় বা প্রলোভনের মুখেও হক থেকে সরবে‌ না।
৮. বিনয় ও নম্রতা: যে ব্যক্তি দাওয়াতের পথে কাজ করবে সে অহংকার মুক্ত জীবন গঠন করবে‌। অহংকার শুধু হারাম নয় বরং কবিরা গুনাহ। তার কর্তব্য, সবার সঙ্গে ভদ্রতা ও নম্রতা পূর্ণ আচরণ করা। বিনয় ও নম্রতা মানুষকে কাছে টানে এবং অহংকার ও উগ্রতা মানুষকে দূরে ঠেলে দেয়।
৯. সাহস ও দৃঢ়তা: একজন দাঈ হবে সাহসী এবং নির্ভীক। সে হবে সত্যের পক্ষে ইস্পাত কঠিন চিত্তের অধিকারী। সে কখনো ভীরু ও কাপুরুষতার পরিচয় দিবে না। প্রয়োজনে সে ত্যাগ স্বীকার করার জন্যও প্রস্তুত থাকবে।
১০. ইখলাস বা আন্তরিকতা: সকল দাওয়াতি কাজ শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা অপরিহার্য। এক্ষেত্রে কোন ব্যক্তিগত যশ-খ্যাতি, অর্থ উপার্জন কিংবা দুনিয়াবি স্বার্থচিন্তা থাকবে না।
১১. সবর বা ধৈর্য: দাওয়াতের ফলাফল বিলম্বিত হলেও সে আশা না হারিয়ে অবিচলভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। কেননা ধৈর্য সফলতার চাবিকাঠি।
১২. লেবাস-পোশাক এবং ব্যক্তিত্বে পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি থাকা: আল্লাহর প্রতি আহ্বানকারী পরিচ্ছন্ন ও মার্জিত পোশাক পরিধান করবেন, দাওয়াতের মর্যাদার সাথে মানানসই ব্যক্তিত্ব বজায় রাখবেন এবং সম্মানজনকভাবে নিজেকে মানুষের সামনে উপস্থাপন করবেন।
১৩. জ্ঞানের উপরে ভিত্তি করে দাওয়াত দেওয়া: দাঈর জন্য আবশ্যক হচ্ছে, তিনি যে বিষয়ের দিকে মানুষকে আহ্বান করবেন সেই বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন ও পড়াশোনা করা এবং সমসাময়িক বিষয়াদির দিকে নজর রাখা। জ্ঞান হল, আলো। জ্ঞান হল, শক্তি। জ্ঞান মানুষকে শক্তি এবং সাহসিকতার সাথে পথ চলতে সাহায্য করে। একজন দাঈ এই সকল গুনাবলী অর্জন করে তিনি নিজের জীবনকে দাওয়াতের ময়দানে জীবন্ত উদাহরণে পরিণত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। মহান আল্লাহ তওফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।

No comments:

Post a Comment

Translate