ইবাদতের প্রাণশক্তি হল, ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত করা। তা সকল প্রকার ইবাদতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে ত্রুটি থাকলে তা আল্লাহর নিকট প্রত্যাখ্যাত হবে।
দ্বীনের ইলম অর্জন নিঃসন্দেহে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত। এক্ষেত্রে যদি নিয়তের মধ্যে ত্রুটি থাকে তাহলে তা ইলম অন্বেষণকারীর জন্য আখিরাতে মহাবিপদের কারণ হবে। অর্থাৎ ইলম শেখার মূল উদ্দেশ্যই যদি হয়, অর্থ উপার্জন, পদমর্যাদা ও সামাজিক অবস্থান সুসংহত করা, যশ ও খ্যাতি লাভ অথবা অন্য কোনও দুনিয়ার স্বার্থ তাহলে তা ইলম অন্বেষণকারীর জন্য ধ্বংস ডেকে আনবে।
তাই ইলম শিক্ষা অর্জনের পূর্বে নিয়তের বিশুদ্ধতা অপরিহার্য। আর তা হল, আল্লাহর দ্বীন জানা, মানা এবং সমাজে তার প্রচার-প্রসারের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
❑ নিম্নে এ বিষয়ে কয়েকটি হাদিস পেশ করা হল:
◈ ১. রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ تَعَلَّمَ عِلْمًا مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ لَا يَتَعَلَّمُهُ إِلَّا لِيُصِيبَ بِهِ عَرَضًا مِنْ الدُّنْيَا لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَعْنِي رِيحَهَا “
“আল্লাহর তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যে ইলম অর্জন করতে হয় তা যদি কোন মানুষ শুধুমাত্র দুনিয়ার সম্পদ উপার্জনের উদ্দেশ্যে শিক্ষা করে তবে সে কিয়ামত দিবসে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।” [সুনান আবু দাউদ, হা/৩৩৬৪,, সহিহহুত তারগিব: ১০৫]
◈ ২. আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ لِيُبَاهِيَ بِهِ الْعُلَمَاءَ أَوْ لِيُمَارِيَ بِهِ السُّفَهَاءَ أَوْ لِيَصْرِفَ وُجُوهَ النَّاسِ إِلَيْهِ فَهُوَ فِي النَّارِ
“যে ব্যক্তি ইলম (জ্ঞান) শিক্ষা করে এই উদ্দেশ্যে যে, সে এর দ্বারা আলিমদের (জ্ঞানীদের) সাথে গর্ব করবে অথবা মূর্খদের সাথে ঝগড়া করবে অথবা মানুষের দৃষ্টি তার দিকে আকৃষ্ট করবে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।”
[সহীহুল জামি’: ৬১৫৮, আলবানি এটিকে সহিহ বলেছেন]
◈ ৩. অপর একটি হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
، ورجلٌ تعلَّمَ العِلْمَ وعلَّمَهُ ، وقَرَأَ القُرآنَ ، فأُتِيَ بهِ فعَرَّفَهُ نِعمَهُ ، فعَرَفَها ، قال : فما عمِلْتَ فيها ؟ قال : تعلَّمْتُ العِلْمَ وعلَّمْتُهُ ، وقَرَأْتُ فِيكَ القُرآنَ ، قال : كذبْتَ، ولكنَّكَ تعلَّمْتَ العِلْمَ لِيُقالَ عالِمٌ ، وقرأْتَ القُرآنَ لِيُقالَ : هو قارِئٌ فقدْ قِيلَ ، ثمَّ أُمِرَ بهِ فسُحِبَ على وجْهِهِ حتى أُلْقِيَ في النارِ
“আর এক ব্যক্তি যে ইলম (জ্ঞান) শিখেছিল ও অপরকে শিখিয়েছিল এবং কুরআন পাঠ করেছিল। তাকে আনা হবে, অতঃপর আল্লাহ তাকে তাঁর নিয়ামতসমূহ চেনাবেন, আর সে তা চিনতে পারবে।
আল্লাহ বলবেন: তুমি এই নিয়ামতসমূহের দ্বারা কী করেছ?
সে বলবে: আমি ইলম শিখেছি ও শিখিয়েছি এবং আপনার সন্তুষ্টির জন্য কুরআন পাঠ করেছি।
আল্লাহ বলবেন: তুমি মিথ্যা বলেছ। বরং তুমি ইলম শিখেছিলে, যেন তোমাকে ‘আলিম’ বলা হয় এবং কুরআন পাঠ করেছিলে, যেন তোমাকে ‘কারী’ বলা হয়। (দুনিয়াতে) তো তা বলা হয়েই গেছে।
অতঃপর তার সম্পর্কে নির্দেশ দেওয়া হবে তখন তাকে উপুড় করে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।”
[সহিহ মুসলিম, হা/১৯০৫। এটি সেই বিখ্যাত হাদিসের অংশ যা অনুযায়ী কিয়ামতের দিন প্রথম যাদের দ্বারা জাহান্নামের আগুন জ্বালানো হবে।তারা হল, একজন শহিদ, একজন আলিম/ক্বারী এবং একজন দানশীল ব্যক্তি যারা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে (রিয়া) তাদের কাজ করেছিল] আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নিয়তের পরিশুদ্ধতা দান করুন এবং তাঁর অসন্তোষ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
No comments:
Post a Comment