Wednesday, October 29, 2025

বিতিরের সালাত আদায়ের সর্বোত্তম পদ্ধতি

 প্রশ্ন: বিতিরের সালাত আদায়ের সর্বোত্তম পদ্ধতি কী? বিতিরের সালাত সম্পর্কে A To Z জানতে চাই।

▬▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর,আল্লাহ তা‘আলার একান্ত সান্নিধ্য লাভের জন্য ফরয ইবাদত যেমন যরূরী, তেমনি ফরয ইবাদতের ঘাটতি পূরণ করার জন্য নফল ইবাদত যরূরী। আমাদের অনেকের বিভিন্ন সময়ে ফরয সালাতে ঘাটতি হয়ে যায়। এক্ষেত্রে হাশরের ময়দানে ফরয সালাতের ঘাটতি পূরণ হবে নফল সালাত দ্বারা। আর নফল সালাতসমূহের মধ্যে বিতির একটি। এই সিরিজে আমরা বিতিরের নামাযের পদ্ধতি সম্পর্কে নিম্নোক্ত পয়েন্টে সংক্ষেপে কথা বলতে পারি:
.
বিতিরের সালাতের ফযীলত:
.
বিতিরের নামায আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এমনকি কিছু আলেম তথা হানাফী আলেমগণ মনে করে এটা ওয়াজিব। কিন্তু বিশুদ্ধ মত হচ্ছে এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদা। যে নামায প্রতিটি মুসলিমের নিয়মিত আদায় করা ও পরিহার না করা বাঞ্চনীয়।
.
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মহান ইমাম,শাইখুল ইসলাম আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বাল আশ-শাইবানী (রাহিমাহুল্লাহ)[ মৃত্যু:২৪১ হি.] বলেন:من ترك الوتر فهو رجل سوء لا ينبغي أن تقبل له شهادة”যে ব্যক্তি বিতিরের নামায পড়ে না সে মন্দ ব্যক্তি। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা উচিত নয়।”(ইবনু কুদামাহ আল মুগনী খণ্ড:২ পৃষ্ঠা;১১৮) এর থেকে বিতিরের নামাযের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।
.
বিতিরের সালাত আদায়ের হুকুম:
.
আলেমগণ বিতিরের নামায ওয়াজিব কি ওয়াজিব নয়— এ বিষয়ে মতপার্থক্য করেছেন।তবে শারঈ দলিলের আলোকে সুপ্রসিদ্ধ তিনটি মাযহাব;মালেকি,শাফেয়ি এবং হাম্বলী মাযহাবের শক্তিশালী মত এবং হানাফি মাজহাবের অন্যতম ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ বিন আল-হাসানসহ অধিকাংশ আলেমগনের অধিক বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী, বিতির (বেজোড়) নামায সুন্নতে মুয়াক্কাদা (তাগিদপূর্ণ সুন্নত)। যদিও কোন কোন ফিকাহবিদ আলেমের মতে, বিতির নামায ওয়াজিব। বিতির নামায ওয়াজিব না হওয়ার পক্ষে দলিল হচ্ছে: মহান আল্লাহ বলেন,حٰفِظُوۡا عَلَی الصَّلَوٰتِ وَ الصَّلٰوۃِ الۡوُسۡطٰی ٭ وَ قُوۡمُوۡا لِلّٰهِ قٰنِتِیۡنَ “তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হবে, বিশেষত মধ্যবর্তী সালাতের এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা দাঁড়াবে বিনীতভাবে;(সূরা বাকারাহ;২৩৮) এই আয়াতে অধিকাংশ আলেমের মতে মধ্যবর্তী সালাতের অর্থ হচ্ছে আসরের সালাত। কেননা, এর একদিকে দিনের দুটি সালাত – ফজর ও যোহর এবং অপরদিকে রাতের দুটি সালাত – মাগরিব ও এশা রয়েছে। আর মাঝে মাঝখানে আসর। এখন বিতরের সালাত যদি ফরজ হয় তাহলে সালাতের ওয়াক্ত সংখ্যা হয় ছয় কিন্তু সবাই একমত সালাতের ওয়াক্ত হচ্ছে পাঁচ সুতরাং এক্ষেত্রে বিতর মধ্যবর্তী হওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া বিতর ওয়াজিব নয় তার আর একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ হচ্ছে,সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম এর হাদিস: প্রখ্যাত সাহাবী তালহা বিন উবাইদুল্লাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: এক লোক রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আল্লাহ্‌ আমার উপর কী কী নামায ফরয করেছেন আমাকে তা অবহিত করুন। তখন তিনি বললেন: (الصَّلَوَاتِ الْخَمْسَ إِلا أَنْ تَطَّوَّعَ شَيْئًا ) ولفظ مسلم : ( خَمْسُ صَلَوَاتٍ فِي الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ . فَقَالَ : هَلْ عَلَيَّ غَيْرُهَا ؟ قَالَ : لا ، إِلا أَنْ تَطَوَّعَ ) “পাঁচ ওয়াক্ত নামায; তবে আপনি কোন নফল নামায আদায় করতে চাইলে সেটা আলাদা” আর সহিহ মুসলিমের ভাষ্যে এসেছে “দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায। সে বলল: আমার উপর এগুলো ছাড়া আর কিছু আছে? তিনি বললেন: না। তবে, আপনি নফল আদায় করতে পারেন”।(সহিহ বুখারী হা/১৮৯১; ও সহিহ মুসলিম;হা/১১)
.
উক্ত হাদীসের আলোকে শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,فِيهِ :أَنَّ صَلاة الْوِتْر لَيْسَتْ بِوَاجِبَةٍ “এই হাদিসে প্রমাণ রয়েছে যে, বিতির নামায ওয়াজিব নয়।(ইমাম নববী, শারহু ছহীহ মুসলিম,খন্ড:১ পৃষ্ঠা;১৬৯)
.
হাফিয ইবনু হাজার আল-আসকালানি,(রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম:৭৭৩ হি: মৃত:৮৫২ হি:] তার ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে বলেন:فيه : أَنَّهُ لا يَجِب شَيْء مِنْ الصَّلَوَات فِي كُلّ يَوْم وَلَيْلَة غَيْر الْخَمْس , خِلافًا لِمَنْ أَوْجَبَ الْوِتْر أَوْ رَكْعَتَيْ الْفَجْر “এই হাদিসে প্রমাণ রয়েছে যে, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায ছাড়া আর কোন নামায ওয়াজিব নয়; এর বিপরীতে কেউ কেউ বিতির নামাযকে ও ফজরের দুই রাকাত সুন্নতকে ওয়াজিব বলেছেন।(ফাতহুল বারী ফী শারহিল বুখারী, খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ১০৭)
.
এছাড়াও বিতর ওয়াজিব নয় এর পক্ষে আরো একটি দলিল হচ্ছে,নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু’আয (রাঃ)-কে ইয়ামান দেশে (শাসক হিসেবে) প্রেরণ করেন। অতঃপর বললেন, সেখানকার অধিবাসীদেরকে অবগত কর যে, أَنَّ اللَّهَ قَدِ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، “আল্লাহ তা’আলা তাদের উপর প্রতি দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন”।(সহিহ বুখারী হা/ ১৩৯৫) .
.
ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মতে বিতিরের নামায আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু বিশুদ্ধ মত সেটাই যা আমি উল্লেখ করেছি;অর্থাৎ বিতির নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।পাশাপাশি এটাও বলবো বিতির ওয়াজিব না হলেও এ নামায সবচেয়ে তাগিদপূর্ণ সুন্নত নামায।নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক হাদিসে এ নামায আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। এবং তিনি নিজেও বাড়িতে ও সফরে কোনো সময়ই ছাড়তেন না, যা একাধিক সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তাই জেনে বুঝে ইচ্ছাকৃত এ সালাত ত্যাগ করা উচিত নয়। কিন্তু কখনো আয়াত করতে ভুলে গেলে কিংবা দুই একবার ত্যাগ করলে গুনাহ হবেনা ইনশাআল্লাহ।
.
সহীহ মুসলিমে এসেছে, আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:( أَوْتِرُوا قَبْلَ أَنْ تُصْبِحُوا ) “তোমরা ভোর হওয়ার আগে বিতির নামায আদায় কর”(সহিহ মুসলিম হা;৭৫৪) সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে এসেছে- আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ( يَا أَهْلَ الْقُرْآنِ ، أَوْتِرُوا ، فَإِنَّ اللَّهَ وِتْرٌ يُحِبُّ الْوِتْرَ ),“ওহে আহলে কুরআন, তোমরা বিতির (বেজোড়) নামায আদায় কর। কারণ নিশ্চয় আল্লাহ্‌ হচ্ছেন- বেজোড়। তিনি বেজোড়কে পছন্দ করেন”।(ইমাম আলবানী ‘সহিহ সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে’ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন;আবু দাউদ হা/৪১১৬) তাই নিজ গৃহে অবস্থানকালে কিংবা সফরে থাকাকালেও এ নামায নিয়মিত আদায় করা উচিত; যেভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদায় করতেন। সহীহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন:( كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي فِي السَّفَرِ عَلَى رَاحِلَتِهِ حَيْثُ تَوَجَّهَتْ بِهِ يُومِئُ إِيمَاءً صَلاةَ اللَّيْلِ إِلا الْفَرَائِضَ وَيُوتِرُ عَلَى رَاحِلَتِهِ ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে অবস্থায় বাহনের পিঠে ইশারা করে রাত্রিকালীন নামায আদায় করতেন; বাহন যেই দিকে মুখ করে চলুক না কেন। তবে, ফরয নামায ছাড়া। আর তিনি বাহনের পিঠেই বিতির নামায আদায় করতেন”।(সহীহ বুখারী হা/১০০০;ও সহীহ মুসলিম হা/ ৭০০)
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন, ” الوتر غير واجب وبهذا قال مالك والشافعي . وقال أبو حنيفة : هو واجب ” . ثم قال : ” قال أحمد : من ترك الوتر عمدا فهو رجل سوء ، ولا ينبغي أن تقبل له شهادة ، وأراد المبالغة في تأكيده لما قد ورد فيه من الأحاديث في الأمر به ، والحث عليه “বিতিরের নামায ওয়াজিব নয়। এটি মালেক ও শাফেয়ির অভিমত। আবু হানিফা বলেছেন: ওয়াজিব”। এরপর তিনি বলেন: আহমাদ বলেছেন: যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে বিতিরের নামায পড়ে না সে একজন খারাপ লোক। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা উচিত নয়। এ বিষয়ে অনেক হাদিস বর্ণিত হওয়ার কারণে তিনি এর উপর জোর তাগিদ দিতে ও উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন”।(ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী,খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৮২৭ কিছুটা পরিমার্জিত ও সমাপ্ত]
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: বিতিরের নামায কি ওয়াজিব? যে ব্যক্তি একদিন বিতির নামায পড়ে অন্যদিন পড়ে না তাকে কি শাস্তি পেতে হবে?
জবাবে তাঁরা বলেন:
صلاة الوتر سنة مؤكدة ، ينبغي أن يحافظ المؤمن عليها ، ومن يصليها يوما ويتركها يوما لا يؤاخذ ، لكن ينصح بالمحافظة على صلاة الوتر ثم يشرع له أن يصلي بدلها من النهار ما فاته شفعا ؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم كان يفعل ذلك ، كما ثبت عن عائشة رضي الله عنها قالت : كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا شغله نوم أو مرض عن صلاة الليل صلى من النهار ثنتي عشرة ركعة . خرجه مسلم في صحيحه ، وكان صلى الله عليه وسلم يصلي من الليل غالبا إحدى عشرة ركعة ، يسلم من كل اثنتين ويوتر بواحدة ، فإذا شغل عن ذلك بنوم أو مرض صلى من النهار اثنتي عشرة ركعة ، كما ذكرت ذلك رضي الله عنها ، وعلى هذا إذا كانت عادة المؤمن في الليل خمس ركعات فنام عنها أو شغل عنها بشيء شُرع له أن يصلي من النهار ست ركعات يسلم من كل اثنتين ، وهكذا إذا كانت عادته ثلاثا صلى أربعا بتسليمتين ، وإذا كانت عادته سبعا صلى ثمان يسلم من كل اثنتين
বিতিরের নামায সুন্নতে মুয়াক্কাদা। মুমিনের উচিত এ নামায নিয়মিত আদায় করা। যে ব্যক্তি এ নামায একদিন আদায় করে, অন্যদিন আদায় করে না তাকে শাস্তি পেতে হবে না। কিন্তু, তাকে এ নামায নিয়মিত আদায় করার উপদেশ দেয়া হবে। তাছাড়া বিতির বা বেজোড় নামায ছুটে গেলে সে ব্যক্তি এর বদলে দিনের বেলায় জোড় নামায আদায় করে নিতে পারেন। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে করতেন। যেমনটি আয়েশা (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি ঘুমের কারণে কিংবা রোগের কারণে রাতের নামায আদায় করতে না পারতেন তাহলে তিনি দিনের বেলায় ১২ রাকাত নামায আদায় করতেন।[সহিহ মুসলিম] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিকাংশ সময় রাতের নামায ১১ রাকাত আদায় করতেন। প্রত্যেক দুই রাকাতে সালাম ফিরাতেন। এবং এক রাকাত বিতির আদায় করতেন। যদি তিনি ঘুমের কারণে কিংবা রোগের কারণে এ নামায আদায় করতে না পারতেন তখন তিনি দিনের বেলায় ১২ রাকাত নামায আদায় করতেন; যেমনটি আয়েশা (রাঃ) উল্লেখ করেছেন। এর ভিত্তিতে বলা যায় কোন ব্যক্তির স্বভাব যদি হয় তিনি প্রতি রাতে ৫ রাকাত নামায আদায় করেন, কিন্তু কোনদিন ঘুমের কারণে কিংবা অন্য কোন ব্যস্ততার কারণে আদায় করতে না পারেন তাহলে দিনের বেলা তার জন্য ৬ রাকাত নামায আদায় করার বিধান রয়েছে। তিনি প্রত্যেক দুই রাকাতে সালাম ফিরাবেন। অনুরূপভাবে তার অভ্যাস যদি হয় ৩ রাকাত নামায আদায় করা তাহলে তিনি দুই সালামে ৪ রাকাত আদায় করবেন। যদি তার অভ্যাস হয় ৭ রাকাত আদায় করা তাহলে তিনি ৮ রাকাত আদায় করবেন; প্রত্যেক দুই রাকাতে সালাম ফিরাবেন।”(ফাতাওয়াল লাজনাহ্‌ আল-দায়িমা; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১৭২)।
.
▪️বিতিরের সালাতের ওয়াক্ত:
.
এশার নামায পড়ার পর থেকে বিতিরের নামাযের সময় শুরু হয়। এমনকি কেউ যদি এশার নামাযকে মাগরিবের নামাযের সাথে একত্রে পড়ে তার ক্ষেত্রেও।অতঃপর ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত এর সময় অবশিষ্ট থাকে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:(إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَمَدَّكُمْ بِصَلاةٍ وهي الْوِتْرُ جَعَلَهُ اللَّهُ لَكُمْ فِيمَا بَيْنَ صَلاةِ الْعِشَاءِ إِلَى أَنْ يَطْلُعَ الْفَجْرُ) “নিশ্চয়ই আল্লাহ একটি নামায দ্বারা তোমাদের সাহায্য করেছেন। তা হচ্ছে বিতিরের নামায। আল্লাহ তোমাদের জন্য এর সময়কে এশার নামাযের পর থেকে ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত নির্ধারণ করে দিয়েছেন।”(তিরমিযী হা/৪২৫) ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) সহীহুত তিরমিযীতে এ হাদিসকে সহিহ বলে গণ্য করেছেন)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন:الوتر من صلاة الليل ، وهو سنة ، وهو ختامها ، ركعة واحدة يختم بها صلاة الليل في آخر الليل ، أو في وسط الليل ، أو في أول الليل بعد صلاة العشاء ، يصلي ما تيسر ثم يختم بواحدة”বিতিরের নামায একপ্রকার রাতের নামায, এটি আদায় করা সুন্নত এবং এটি রাতের নামাযের সর্বশেষ নামায। বিতিরের নামায এক রাকাত; যে একরাকাত নামায দিয়ে রাতের নামাযের সমাপ্তি টানা হয়। এটি রাতের শেষাংশে কিংবা মধ্যরাতে কিংবা এশার পর রাতের প্রথমাংশে আদায় করা হয়। যত রাকাত ইচ্ছা রাতের নামায পড়ার পর এক রাকাত বিতিরের নামায দিয়ে শেষ করা হয়”(মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ৩০৯)
.
▪️বিতিরের সালাত ওয়াক্তের শুরুতে পড়া উত্তম;নাকি বিলম্বে পড়া:
.
সুন্নাহ প্রমাণ করে যে, কোনো ব্যক্তি যদি শেষ রাতে ঘুম থেকে ওঠার ব্যাপারে আশাবাদী হয় তাহলে তার জন্য শেষ রাত পর্যন্ত বিলম্ব করে বিতিরের নামায পড়া উত্তম। কারণ শেষ রাতের নামায উত্তম। এই নামাযে অনেক (ফেরেশতা) উপস্থিত থাকে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:(مَنْ خَافَ أَنْ لا يَقُومَ مِنْ آخِرِ اللَّيْلِ فَلْيُوتِرْ أَوَّلَهُ وَمَنْ طَمِعَ أَنْ يَقُومَ آخِرَهُ فَلْيُوتِرْ آخِرَ اللَّيْلِ فَإِنَّ صَلاةَ آخِرِ اللَّيْلِ مَشْهُودَةٌ وَذَلِكَ أَفْضَلُ) “যে ব্যক্তি শেষ রাতে উঠতে না পারার আশঙ্কা করবে সে যেন রাতের শুরুতেই বিতির পড়ে নেয়। আর যে ব্যক্তি রাতের শেষ ভাগে নামায পড়ার ইচ্ছা রাখে সে যেন রাতের শেষ ভাগেই বিতির পড়ে। কারণ রাতের শেষ ভাগের নামাযে ফেরেশতারা হাজির হন। সেটাই অধিক উত্তম।”(সহীহ মুসলিম হা/৭৫৫)
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেন:وهذا هو الصواب، ويُحمل باقي الأحاديث المطلقة على هذا التفضيل الصحيح الصريح، فمن ذلك حديث: (أوصاني خليلي أن لا أنام إلا على وتر). وهو محمول على من لا يثق بالاستيقاظ “এ অভিমতই সঠিক। অন্য সাধারণ হাদীসগুলোকে এই স্পষ্ট সহিহ উত্তমতার অর্থে ব্যাখ্যা করতে হবে। যেমন এক হাদীসে এসেছে: ‘আমার খলিল (প্রিয় ব্যক্তিত্ব) আমাকে উপদেশ দিয়েছেন আমি যেন বিতিরের নামায না পড়ে না ঘুমাই।’ এই হাদীসটি এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে যে ঘুম থেকে উঠতে পারার ব্যাপারে নিশ্চিত নয়।”(ইমাম নববী শরহে মুসলিম; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২৭৭)
.
▪️একই রাতে কি দুইবার বিতির পড়া যাবে কি? যদি কেউ ইমামের সাথে বিতির সালাত পড়ার পর শেষ রাতে আবার সালাত পড়ে?
.
কোন মুসলিম যদি বিতির নামায পড়ে ফেলার পরেও শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়তে চান তাহলে তিনি দুই রাকাআত দুই রাকাআত করে সালাত আদায় করবেন। রাসূল (ﷺ) বিতর সালাত আদায়ের পরও দু’রাক‘আত সালাত পড়তেন।(তিরমিযী, হা/৪৭১;মিশকাত হা/১২৮৪) তবে পরে আর বিতির পড়তে হবে না।কারন রাসূল (ﷺ) বলেন,”এক রাতে দু’বার বিতর সালাত নেই”(আবু দাউদ হা/১৪৩৯;সহীহুল জামে হা/৭৫৬৭) তবে যিনি নিয়মিত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করেন তিনি প্রথম রাতে বিতির আদায় না করে চেষ্টা করবেন শেষ রাতে তাহাজ্জুদ শেষে বিতির আদায় করতে কেননা রাতের সর্বশেষ সালাত হিসেবে বিতির আদায় করা মুস্তাহাব কিন্তু যে ব্যক্তি শেষ রাতে জাগ্রত না হওয়ার আশংকা করবে সে প্রথমাংশে বিতির আদায় করে নিবেন।(দেখুন সহীহ মুসলিম হা/৭৫৫; মিশকাত হা/১২৬০) এছাড়াও কেউ যদি বিশেষ করে রমাদান মাসে ইমামের পিছনে তারাবি পড়ে অতঃপর শেষে ইমাম যখন বিতির পড়েন আর মুত্তাদী যদি শেষ রাতের জন্য বিতির রেখে দিতে চায় তাহলে তিনি ইমাম যখন বিতিরের সালাত আদায় শেষে সালাম ফিরাবেন তখন তিনি সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবেন এবং অতিরিক্ত এক রাকাআত যোগ করবেন যাতে শেষ রাতে তিনি বিতির আদায় করতে পারেন।
.
বিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ,সৌদি ফাতাওয়া বোর্ডের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী,শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: আমি যদি রাতের প্রথমভাগে বিতির সালাত পড়ে ফেলি; এরপর রাতের শেষভাগে কিয়ামুল লাইল পড়ি সেক্ষেত্রে আমি কি পদ্ধতিতে সালাত পড়ব?
উত্তরে তিনি বলেন: যদি আপনি বিতির নামায পড়ে ফেলেন এরপর রাতের শেষভাগে আল্লাহ আপনাকে কিয়ামুল লাইল পড়ার তাওফিক দেন তাহলে আপনি জোড় সংখ্যক অর্থাৎ দুই রাকাআত দুই রাকাআত করে নামায আদায় করবেন; বিতির বা বেজোড় সংখ্যক নয়। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী “এক রাতে দুইবার বিতির নেই”। আয়েশা (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতির নামায পড়ে ফেলার পর বসে বসে দুই রাকাআত নামায আদায় করতেন। এ দুই রাকাআত নামায আদায় করার হেকমত আল্লাহই ভাল জানেন- উম্মতকে এ বিষয়ে অবহিত করা যে, বিতির নামাযের পর নামায পড়া জায়েয আছে।(সুনানে তিরমিযী, হা/৪৭১; মিশকাত, হা/১২৮৪; মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ৩১১; ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৩৮৪০০)
.
ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]-কে আরও জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:ইমাম বিতিরের সালাত আদায় শেষ করলে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে যায় এবং অতিরিক্ত এক রাকাত যোগ করে যাতেশেষ রাতে তিনি বিতির পড়তে পারেন। এই আমলের হুকুম কি? এতে কি তিনি “ইমামের সাথে সালাত সম্পন্ন করেছেন” ধরা যাবে?
তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) উত্তরে বলেন: “আমরা এতে কোন দোষ দেখি না। আলেমগণএটা পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন।তিনি এটা করেন যেন বিতির (বেজোড়) নামাযটা শেষ রাতেই আদায় করতে পারেন। তাঁর ক্ষেত্রে এ কথা বলাও সত্য হবে যে, “ইমাম শেষ করা পর্যন্ত তিনি ইমামের সাথে নামায আদায় করেছেন”। কারণ ইমাম নামায শেষ করা পর্যন্ত তিনি তো ইমামের সাথে ক্বিয়াম করেছেন এবং এরপর তিনি এক রাকাত যোগ করেছেনঅন্য একটি শরয়ি কল্যাণের কারণে। সেটা হলো-বিতির (বেজোড়) নামাযটা যাতে শেষ রাতেআদায় করা যায়। তাই এতে কোন সমস্যা নেই। অতিরিক্ত এ রাকাতেরকারণে এ ব্যক্তি ‘যারা ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত নামায পড়েছেন’ তাদের দল থেকে বের হয়ে যাবে না। বরং তিনি তো ইমামের সাথে সম্পূর্ণ নামায আদায় করেছেন। তবে ইমামের সাথে নামায শেষ করেননি;কিছুটা বিলম্বে শেষ করেছেন।”(মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ৩১২)
.
▪️বিতিরের সালাতেরপদ্ধতি:
.
বিতিরের নামায আদায়ের সর্বনিম্ন পরিমাণ হচ্ছে এক রাকাআত।কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘বিতির হচ্ছে শেষ রাতের এক রাকাআত।’(সহীহ মুসলিম হা/৭৫২) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন: ‘রাতের নামায দুই রাকাত দুই রাকাআত করে। তোমাদের কেউ যদি ভোর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করে তাহলে সে যেন এক রাকাআত নামায পড়ে নেয়। এই রাকাআত তার পূর্বের আদায়কৃত নামাযকে বেজোড় করে দিবে।” কেউ যদি এক রাকাআতে সীমিত থাকে তাহলে সে সুন্নত আদায় করল। … তিন, পাঁচ, সাত ও নয়… ইত্যাদি রাকাআত বিতির নামায পড়াও জায়েয।
.
তিন রাকাআত বিতির পড়লে এর দুটি রূপ। উভয়টি শরিয়তসম্মত:
.
এক: এক তাশাহহুদের মাধ্যমে টানা তিন রাকাআত পড়া। কারণ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীস আছে, তিনি বলেন: “كان النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لا يسلّم في ركعتي الوتر”، وفي لفظ: “كان يوتر بثلاث لا يقعد إلا في آخرهن”নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতিরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না।’ অন্য বর্ণনায় আছে: ‘তিনি তিন রাকাত বিতির পড়তেন, সর্বশেষ রাকাতে ছাড়া বসতেন না।”(হাদীসটি নাসাঈ; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২৩৪; ও ইমাম বাইহাকী; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৩১; হা/৪৮০৩; মুস্তাদরাক হাকেম, হা/১১৪০ বর্ণনা করেন। ইমাম নববী ‘মাজমূ গ্রন্থে: খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৭ তে বলেন: ইমাম নাসাঈ হাদীসটি হাসান সনদে এবং বাইহাকী সহিহ সনদে বর্ণনা করেছেন] অপর বর্ননায় উবাই ইবনু কা‘ব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। প্রথম রাক‘আতে ‘সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা’ দ্বিতীয় রাক‘আতে ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফেরূন’ এবং তৃতীয় রাক‘আতে ‘কুল হুওয়াল্লা-হুল আহাদ’ পড়তেন এবং তিনি রুকূর পূর্বে কুনূত পড়তেন। অতঃপর যখন তিনি শেষ করতেন তখন শেষে তিনবার বলতেন ‘সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস’।শেষবার টেনে বলতেন (নাসাঈ খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৯১ হা/১৬৯৯,সনদ সহীহ)।
.
দুই: দুই রাকাআত পড়ে সালাম ফিরিয়ে ফেলা। এরপর এক রাকাআত পৃথকভাবে পড়া। দলিল হলো আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত,তিনি বিতরের দুই রাক‘আত এবং এক রাক‘আতের মাঝে সালাম ফিরাতেন এবং তিনি বলেছেন,রাসূল (ﷺ) এমনটি করেছেন (সহীহ ইবনু হিব্বান,হা/২৪৩৫; হাফিয ইবনু হাজার ফাতহুল বারী গ্রন্থে বলেন: হাদীসটির সনদ শক্তিশালী; দেখুন; ফাতহুল বারী; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৪৮২) ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা), ইমাম মালেক, শাফেয়ী, আহমাদ, ইসহাক (রাহিমাহুমুল্লাহ) প্রমুখ এভাবেই বিতর পড়তেন।(ইবনু কুদামাহ আল মুগনী, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা; ৫৮৮)
.
আর যদি পাঁচ অথবা সাত রাকাআত পড়ে তাহলে নিরবচ্ছিন্নভাবে পড়বে, কেবল শেষ রাকাআতের বৈঠকে বসে তাশাহহুদ পড়বেন এবং সালাম ফেরাবেন। দলিল হলো আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তেরো রাকাত নামায পড়তেন। এর মধ্যে পাঁচ রাকাত বিতির পড়তেন, যার শেষ রাকাত ছাড়া কোনো রাকাতে তিনি বসতেন না।”(সহীহ মুসলিম হা/৭৩৭) অপর বর্ননায় উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন: ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ এবং সাত রাকাত বিতির পড়তেন। এর মাঝে সালাম বা কথার মাধ্যমে কোনো বিরতি দিতেন না।”(মুসনাদে আহমদ; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ২৯০; ও নাসাঈ হা/১৭১৪) বর্ণনা করেন।ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) আল-ফাতহুর রাব্বানী গ্রন্থে বলেন: হাদীসটির সনদ উত্তম। আল-ফাতহুর রাব্বানী: ২/২৯৭; ইমাম আলবানী সহীহুন নাসাঈতে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন)
.
আর যদি নয় রাকাআত বিতির পড়েন তাহলে নিরবচ্ছিন্ন পড়বেন, যার মধ্যে কেবল অষ্টম রাকাআতে তাশাহহুদের জন্য বসবেন। তারপর সালাম না ফিরিয়ে উঠে যাবেন এবং নবম রাকাআতে তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফেরাবেন। এর সপক্ষে দলীল হচ্ছে সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীস, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন: ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয় রাকাত নামায পড়তেন। অষ্টম রাকাত ছাড়া কোনো রাকাতে তিনি (তাশাহহুদের জন্য) বসতেন না। বসে আল্লাহর যিকির করতেন, তাঁর প্রশংসা করতেন, তাঁর নিকট দোয়া করতেন (অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করতেন)। তারপর সালাম না ফিরিয়ে নবম রাকাতের জন্যে দাঁড়িয়ে যেতেন। নবম রাকাত শেষ করে তাশাহহুদ পাঠ করার জন্য বসতেন। বসে আল্লাহর যিকির করতেন, তার প্রশংসা করতেন ও তাঁর নিকট দোয়া করতেন (অর্থাৎ তাশাহহুদ পড়তেন)। এরপর আমাদেরকে শুনিয়ে সশব্দে সালাম ফিরাতেন।”(সহীহ সহিহ মুসলিমে হা/৭৪৬)
.
আর যদি এগারো রাকাআত বিতির পড়েন, তাহলে প্রত্যেক দুই রাকাআত পড়ার পরে সালাম ফেরাবেন এবং শেষে এক রাকাআত বিতির পড়বেন।বিতিরের নামাযের এই রূপগুলোর বিবরণ সুন্নাহতে বর্ণিত হয়েছে। সর্বোত্তম হচ্ছে একজন মুসলিম সবসময় একই পদ্ধতিতে বিতির পড়বেন না। বরং কখনো এই পদ্ধতি, আবার কখনো ঐ পদ্ধতিতে বিতির পড়বেন; যাতে করে সে সকল সুন্নত আদায় করতে সক্ষম হয়।
.
▪️মাগরিবের মতো করে বিতির পড়া যাবে?
.
তিন রাকাআত বিতরের সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে উপরোক্ত দুইটি পদ্ধতির বাইরে আমাদের সমাজে আরেকটি পদ্ধতি প্রচলিত আছে। তা হলো— বিতরকে মাগরিবের নামাযের মতো আদায় করা; অর্থাৎ দুই রাকাআত পড়ে তাশাহুদ শেষে সালাম না ফিরিয়ে তৃতীয় রাকাআতের জন্য দাঁড়ানো। দুঃখজনক হলেও সত্য, মাযহাবী অনুগামিতা ও গোঁড়ামির কারণে এই পদ্ধতিই বহু সমাজে ব্যাপকভাবে চালু রয়েছে। অথচ এ রূপে বিতর আদায়ের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে কোনো সহীহ হাদীস প্রমাণিত নয়; বরং নবী ﷺ স্পষ্টভাবে বিতরকে মাগরিবের মতো পড়তে নিষেধ করেছেন।যেমন;আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, لاَ تُوْتِرُوْا بِثَلاَثٍ أَوْتِرُوْا بِخَمْسٍ أَوْ سَبْعٍ وَلاَ تُشَبِّهُوْا بِصَلاَة الْمَغْرِبِ.”তোমরা (মাগরিবের সালাতের ন্যায়) তিন রাক‘আত বিতর পড় না, পাঁচ, সাত রাক‘আত পড়। আর মাগরিবের সালাতের ন্যায় আদায় কর না”।(সহীহ ইবনে হিব্বান হা/২৪২০,মুস্তাদরাক হাকিম,১/৩০৪, বায়হাকী ৩/৩১, ইমাম দারাক্বুত্বনী,হা/১৬৩৪; ইমাম দারাক্বুত্বনী উক্ত হাদীসকে সহীহ বলেছেন (দারাক্বুত্বনী;খণ্ড;২;পৃষ্ঠা;২৪ হা/১৬৩৪) আর মাগরিবের মত পড়ার আরো যত হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার সবগুলোই যঈফ।(ইমাম আলবানী ইওয়াউল গালীল; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১৫০ হা/৪২১; মুসনাদে আহমাদ হা/২৫২৬৪)
.
প্রচলিত হানাফিরা যে বর্ননাটি সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করে সেটি হলো: আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, রাতের বিতর তিন রাকাত, উহা হল দিনের বিতর মাগরিবের মত।”(দারাকুৎনী হা/১৬৩৭,বায়হাকী হা/৪৮১২) তাহক্কীক: এ হাদীসটি ইমাম দারাকুতনী (রাহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি সহীহ নয় সনদ যঈফ।কারন উক্ত বর্ণনাতে ইয়াহইয়া বিন যাকারিয়া কূফী ইবনু আবিল হাওয়াজিব নামে দুর্বল রাবী আছেন। ইমাম বাইহাক্বী বলেন,হাদীসটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণিত হলেও তা মূলতঃ ইবনে মাসউদের নিজস্ব কথা হিসেবে প্রমাণিত।(নাসবুর রায়া ২/১১৬)। ভারতবর্ষে হাদীসশাস্ত্রের দিকপাল, মিশকাতুল মাসাবীহ’র বিখ্যাত ভাষ্যগ্রন্থ মির‘আতুল মাফাতীহ’র সম্মানিত মুসান্নিফ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, আল-আল্লামাহ, ইমাম উবাইদুল্লাহ আব্দুস সালাম মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪১৪ হি./১৯৯৪ খ্রি.] বলেছেন, عِنْدَ الْإِيْتَارِ بِثَلاَثٍ ‘তিন রাক‘আত বিতরে দ্বিতীয় রাক‘আতে বৈঠক করার পক্ষে আমি কোন মারফূ সহীহ দলীল পাইনি।(মির‘আতুল মাফাতীহ হা/১২৬২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)
.
বিতিরের সালাতের পূর্ণতার ন্যূনতম রূপ:
বিতিরের নামাযে পূর্ণতার ন্যূনতম পদ্ধতি হচ্ছে দুই রাকাআত পড়ে সালাম ফেরাবেন। তারপর আরও এক রাকাআত পড়ে সালাম ফেরাবেন। এক সালামে তিন রাকাআত পড়া জায়েয। তবে সেক্ষেত্রে একবার তাশাহহুদ পড়তে হবে, দুইবার নয়; যেমনটি ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
.
▪️বিতিরের সালাতে কী পড়বেন?
.
বিতিরের নামাযে সূরা ফাতিহার পর যে কোন সূরা পড়া যায়। তবে মুস্তাহাব হল,তিন রাকাআত বিতির নামাযের মধ্যে প্রথম রাকাআতে গোটা সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাআতে সূরা ইখলাস পড়বেন।কারণ ইমাম নাসাঈ বর্ণনা করেন: উবাই ইবনে কা’ব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতিরের নামাযে سَبِّحْ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى (সূরা আ’লা),قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ (সূরা কাফিরুন) এবং قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (সূরা ইখলাস) পড়তেন।(ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) সহীহুন নাসাঈতে এ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন নাসাঈ হা/১৭২৯) অপর বর্ননা থেকে জানা যায়, মহানবী (ﷺ) কখনো কখনো তৃতীয় রাকআতে সূরা ইখলাসের সাথে সূরা নাস ও ফালাকও পাঠ করতেন।যেমন আবদুল আযীয ইবনু জুরাইজ (রহ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আয়িশাহ (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের সালাতে কি (সূরা) পড়তেন? তিনি বলেন,كَانَ يَقْرَأُ فِي الرَّكْعَةِ الأُولَى بِـ ‏(سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى)‏ وَفِي الثَّانِيَةِ ‏(قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ)‏ وَفِي الثَّالِثَةِ ‏(قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ)‏ وَالْمُعَوِّذَتَيْنِ”তিনি প্রথম রাকাআতে সূরাহ সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আলা,দ্বিতীয় রাকআতে সূরাহ কাফিরূন, তৃতীয় রাকআতে সূরা ইখলাস ও মুআব্বিযাতাইন (সূরা ফালাক ও নাস) পড়তেন।”(সুনানে তিরমিযী হা/৪৬৩, আবূ দাঊদ হা/১৪২৩ সনদ সহীহ) এই হাদীস থেকে বোঝা যায় যে তিন রাক‘আত বিতর নামায এক সালামে আদায় করতে হবে। আল্লামাহ যায়লা‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এই হাদীস প্রমাণ করে যে তৃতীয় রাক‘আতটি পূর্বের দুই রাক‘আতের সঙ্গে সংযুক্ত—এটি তাদের থেকে পৃথক কোনো নামায নয় (অর্থাৎ দুই রাক‘আত শেষে বসে সালাম ফিরিয়ে আবার এক রাক‘আত আলাদা করে নয়)। কারণ, যদি এটি আলাদা হতো, তবে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবশ্যই বলতেন: “وفي ركعة الوتر أو الركعة المفردة…”অর্থাৎ, বিতর সালাতের রাক্‘আতে কিংবা আলাদা রাক্‘আত কিংবা আরো অনুরূপ কথা বলতেন”।(আন-নাসবুর রায়াহ্; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩০৫)এছাড়া, এই হাদীস থেকে আরও প্রমাণ পাওয়া যায় যে, বিতরের তৃতীয় রাকআতে পরপর সূরা আল-ইখলাস, সূরা আল-ফালাক এবং সূরা আন-নাস একসাথে তিলাওয়াত করা শরিয়তসম্মত বা সুন্নাত। তবে, অধিকাংশ আলেমের মতে,শুধু সূরা আল-ইখলাস পড়াই উত্তম ও পছন্দনীয়।
.
▪️বিতিরের সালাতে দু’আয় কুনূত পড়ার স্থান কোনটি?
.
বিতরের নামাজে দু‘আয় কুনুত পড়া মুস্তাহাব (সুন্নতে মুস্তাহাবা)। মাঝে মধ্যে তা ছেড়ে দিলেও কোনো সমস্যা নেই।কুনুত পাঠের স্থান সম্পর্কে দু’টি পদ্ধতি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত—একটি হলো রুকুতে যাওয়ার আগে পড়া,অন্যটি হলো রুকু থেকে উঠার পর দাঁড়িয়ে পড়া।তবে উত্তম ও অধিক অনুসরণযোগ্য পদ্ধতি হলো—রুকু থেকে উঠার পর দাঁড়িয়ে কুনুত পড়া, তারপর সিজদায় যাওয়া।এর প্রমাণ হলো—হুমায়দ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে কুনুত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রুকুর পর দু‘আ কুনুত পড়তেন।” অন্য একটি বর্ণনায় আছে— “তিনি (ﷺ) কখনো রুকুর আগে, আবার কখনো রুকুর পর কুনুত পড়তেন।”(সহীহ বুখারী হা/১০০২, ৪০৯৬) অপর হাদিসে প্রখ্যাত সাহাবী উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন বিতর পড়তেন তখন রুকূর পূর্বে কুনূত পড়তেন।”(ইবনু মাজাহ হা/১১৮২) তবে সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমের হাদীস এবং জমহুর ওলামাদের মতে রুকূ‘র পরে কুনূত পড়া উত্তম।
.
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] কুনুত সম্পর্কে বলেন:
وَأَمَّا الْقُنُوتُ: فَالنَّاسُ فِيهِ طَرَفَانِ وَوَسَطٌ: مِنْهُمْ مَنْ لا يَرَى الْقُنُوتَ إلا قَبْلَ الرُّكُوعِ، وَمِنْهُمْ مَنْ لا يَرَاهُ إلا بَعْدَهُ. وَأَمَّا فُقَهَاءُ أَهْلِ الْحَدِيثِ كَأَحْمَدَ وَغَيْرِهِ فَيُجَوِّزُونَ كِلا الأَمْرَيْنِ لِمَجِيءِ السُّنَّةِ الصَّحِيحَةِ بِهِمَا. وَإِنْ اخْتَارُوا الْقُنُوتَ بَعْدَهُ ; لأَنَّهُ أَكْثَرُ وَأَقْيَسُ
“আর কুনুত সম্পর্কে দুটি চরম দৃষ্টিভঙ্গি এবং একটি মধ্যম দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।কেউ বলেন যে,কুনূত শুধুমাত্র রুকু করার আগে পড়তে হবে। আবার কেউ বলেন যে এটি শুধুমাত্র রুকু করার পরে পড়তে হবে।আর আহলুল হাদীসের ফকীহগণ,যেমন ইমাম আহমদ ও অন্যরা উভয় পদ্ধতিকেই বৈধ মনে করেন,কারণ উভয়ই সহীহ সুন্নাহতে উল্লেখ আছে,তবে তারা (ইমাম আহমদ ও আহলুল হাদীসের ফকীহগণ) রুকুর পরে কুনুত পড়াকে অগ্রাধিকার দিতেন,কারণ সেটিই অধিক (হাদীস দ্বারা) প্রমাণিত ও অধিক কিয়াসসম্মত”(ইবনু তাইমিয়্যাহ;মাজমূঊল ফাতাওয়া খন্ড: ২৩; পৃষ্ঠা: ১০০)
.
সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:বিতির নামাযে কুনুতের দো‘আ রুকুর আগে পড়া উত্তম, নাকি রুকুর পরে?
জবাবে শাইখ বলেন;أكثر الأحاديث والذي عليه أكثر أهل العلم: أن القنوت بعد الركوع، وإن قنت قبل الركوع فلا حرج، فهو مُخير بين أن يركع إذا أكمل القراءة، فإذا رفع وقال: ربنا ولك الحمد قنت… وبين أن يقنت إذا أتم القراءة ثم يُكبر ويركع، كل هذا جاءت به السنة “অধিকাংশ হাদীস অনুযায়ী এবং জমহুর আলেমের মতানুযায়ী কুনূত রুকু’র পরে পড়া উচিত, কিন্তু কেউ যদি রুকু’র পূর্বে তা পাঠ করে তাতেও কোনো দোষ নেই এক্ষেত্রে তার ইখতিয়ার হয়েছে।(অর্থাৎ সে দুটি বিকল্পের মধ্যে যেকোনো একটি গ্রহণ করতে পারে) তিনি চাইলে কিরাআত সম্পূর্ণ করার পর রুকু করতে পারেন; তারপর রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে “রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ” বলে তারপর তিনি কুনূত পাঠ করতে পারেন, অথবা তিনি চাইলে সালাতে কিরাআত শেষ করার পর প্রথমে কুনুত পাঠ করে,তারপর আল্লাহু আকবার বলে রুকু করতে পারেন।উভয় পদ্ধতিই সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত।”(ইবনে উসাইমিন আল-শারহুল মুমতি; খন্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৫)
.
▪️বিতির সালাতে দু’আয় কুনুত কোনটি পড়া উচিত? মুখস্থ না থাকলে কি পড়বে?
.
বিতরের প্রসিদ্ধ কুনুত হচ্ছে,ইমাম আবু দাউদ কর্তৃক হাসান বিন আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস তিনি বলেন: রাসূলুল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে কিছু বাণী শিখিয়ে দিয়েছেন সেগুলো আমি বিতিরের নামায দোয়ায়ে কুনুত হিসেবে পড়ি:اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ ، وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ ، وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ ، إِنَّكَ تَقْضِي وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ ، وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ ، وَلَا يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ(বাংলা উচ্চারণ:-আল্লা-হুম্মাহ্ দিনী ফীমান হাদাইতা, ওয়া ‘আ-ফিনী ফীমান ‘আ-ফাইতা, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লাইতা, ওয়া বা-রিক লী ফীমা- আ’অ্‌তাইতা, ওয়া ক্বিনী শার্‌রা মা- ক্বাদ্বাইতা, ফাইন্নাকা তাক্বদ্বী, ওয়ালা- ইউক্বদ্বা ‘আলাইকা, ওয়া ইন্নাহু লা- ইয়াযিল্লু মান ওয়া-লাইতা, ওয়ালা- ইয়া’ইঝ-ঝু মান ‘আ-দাইতা, তাবা-রাক্‌তা রাব্বানা- ওয়া তা’আ-লাইতা। অর্থ:”হে আল্লাহ আপনি যাদেরকে হেদায়েত দান করেছেন, আমাকে তাদের সাথে হেদায়েত করুন। আপনি যাদেরকে নিরাপত্তা দান করেছেন, আমাকেও তাদের সাথে নিরাপত্তা দান করুন। আপনি যাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, তাদের সাথে আমার দায়িত্বও গ্রহণ করুন। আপনি আমাকে যা কিছু দান করেছেন, তাতে বরকত দান করুন। আপনি যে (তাক্বদীর) নির্ধারণ করেছেন, তার অকল্যাণ থেকে আমাকে বাঁচান। কেননা আপনিই নির্ধারণ করেন, আপনার নির্ধারণের বিরুদ্ধে কোন আপত্তি নেই। নিশ্চয় আপনি যাকে নৈকট্য দান করেন, কেউ তাকে অপমানিত করতে পারে না। আপনি যার সাথে শত্রুতা করেন, সে সম্মানিত হতে পারে না। আপনার কল্যাণ অবারিত হোক এবং আপনার মর্যাদা সমুন্নত হোক।”(আবু দাউদ হা/১৪২৫ সনদ বিশুদ্ধ)
.
উক্ত কুনুত মুখস্থ না থাকলে বিতিরের নামাযে কোন একটি কাগজ কিংবা পুস্তিকা থেকে দেখে দেখে দোয়ায়ে কুনুত পড়তে কোন অসুবিধা নেই; যাতে করে আপনি দোয়াটি মুখস্ত করে নিতে পারেন। মুখস্থ হয়ে গেলে আর বই দেখা লাগবে না; আপনি মুখস্থ থেকে দোয়া করতে পারবেন; যেমন যে ব্যক্তির কুরআনের বেশি কিছু মুখস্থ নেই নফল নামাযে তার জন্য কুরআনুল কারিম দেখে পড়া জায়েয আছে।এমনকি বিতিরের নামাযে দোয়ায়ে কুনুত হুবহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত শব্দে হওয়া ওয়াজিব নয়। বরং মুসল্লি অন্য কোন দোয়াও করতে পারেন এবং হাদিসের শব্দের বাইরে কিছু বাড়াতেও পারেন। এমনকি যদি কুরআনের যেসব আয়াতে দোয়া আছে এমন কিছু আয়াত পড়েন সেটাও জায়েয আছে। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: জেনে রাখুন, অগ্রগণ্য মাযহাব মতে, কুনুতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই। তাই যে কোন দোয়া পড়লে এর দ্বারা কুনুত হয়ে যাবে; এমনকি দোয়া সম্বলিত এক বা একাধিক কুরআনের আয়াত পড়লেও কুনুতের উদ্দেশ্য হাছিল হয়ে যাবে। তবে, হাদিসে যে দোয়া এসেছে সেটা পড়া উত্তম।”(ইমাম নববীর ‘আল-আযকার; পৃষ্ঠা: ৫০)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]- কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রমযান মাসে বিতিরের নামাযে দোয়ায়ে কুনুত পড়ার হুকুম কি? দোয়ায়ে কুনুত বাদ দেয়া কি জায়েয? জবাবে তিনি বলেন:القنوت سنة في الوتر وإذا تركه في بعض الأحيان : فلا بأس “বিতির নামাযে দোয়ায়ে কুনুত পড়া সুন্নত। যদি কখনও কখনও বাদ দেয় এতে কোন অসুবিধা নেই।
.
ইমাম (রাহিমাহুল্লাহ)-কে আরও জিজ্ঞেস করা হয়: যে ব্যক্তি প্রতি রাতে বিতিরের নামাযে দোয়ায়ে কুনুত পড়ে; এ আমল কি সলফে সালেহীন থেকে বর্ণিত আছে?
উত্তরে তিনি বলেন:لا حرج في ذلك بل هو سنة لأن النبي صلى الله عليه وسلم لما علم الحسين بن علي رضي الله عنهما القنوت في الوتر لم يأمر بتركه بعض الأحيان ولا بالمداومة عليه فدل ذلك على جواز الأمرين ، ولذا ثبت عن أبي ابن كعب رضي الله عنه حين كان يصلي بالصحابة رضي الله عنهم في مسجد رسول الله صلى الله عليه وسلم أنه كان يترك القنوت بعض الليالي ولعل ذلك ليعلم الناس أنه ليس بواجب . والله ولي التوفيق “এতে কোন অসুবিধা নেই। বরং এটি পালন করা সুন্নত। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুসাইন বিন আলী (রাঃ) কে বিতিরের নামাযের ‘দোয়ায়ে কুনুত’ শিখাতেন। তিনি দোয়ায়ে কুনুত কখনও কখনও বাদ দেয়া কিংবা নিয়মিত পড়া কোন নির্দেশ দেননি। এতে প্রমাণিত হয় যে, উভয়টি করা জায়েয। উবাই বিন কাব (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি যখন মসজিদে নববীতে সাহাবীদের ইমামতি করতেন তখন তিনি কোন কোন রাতে দোয়ায়ে কুনুত পড়তেন না; সম্ভবত তিনি এটা এ জন্য করতেন যাতে করে মানুষ জানতে পারে যে, দোয়ায়ে কুনুত পড়া ওয়াজিব নয়। আল্লাহই তাওফিকদাতা।”(ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১৫৯)
.
▪️বিতিরে কুনুত পড়ার সময় হাত তোলা যাবে কি?
.
বিতর নামাযে কুনূত দো‘আর সময় হাত তোলা বা না তোলা—উভয় আমলই সালাফে সালেহীনের কাছ থেকে প্রমাণিত রয়েছে।”(দেখুন; তুহফাতুল আহওয়াযী খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪৬৪) যেমন,খলিফায়ে রাশিদ ওমর ইবনুল খাত্তাব, প্রখ্যাত সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ, আনাস ইবনে মালিক ও আবূ হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) প্রমুখ সাহাবী থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, তাঁরা কুনূতের সময় বক্ষসমান উচ্চতায় হাত উঠিয়ে দো‘আ করতেন।মুহাদ্দিসগণ এর দ্বারা বিতিরের কুনূত হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।(দলিলসূত্র: আস-সুনানুল কুবরা লিল-বায়হাক্বী ২/২১১-২১২; মির‘আতুল মাফাতীহ ৪/৩০০; তুহফাতুল আহওয়াযী ২/৫৬৭; ইরওয়াউল গালীল ২/১৮১)
.
ইমাম বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)বলেন,”বিতরের কুনূতে হাত উত্তোলন করা শরী‘আত সম্মত। কেননা তা কুনূতে নাযেলার মতই (মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ৩০; পৃষ্ঠা: ৫১)।ইমাম ইবনু উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ওমর (রাঃ) হ’তে সহীহ সূত্রে বিতরের সালাতে হাত উঠানোর বর্ণনা রয়েছে (মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ১৪; পৃষ্ঠা; ৮১)।তবে হাত তুলে দু’আ করার পরে মুখে হাত বুলানো সুন্নাত নয়। কারণ,এ ব্যাপারে যত হাদীস এসেছে সবগুলোই দুর্বল। (দেখুন আবুদাঊদ হা/১৪৮৫; বায়হাকী, মিশকাত হা/২২৫৫; ইরওয়া হা/৪৩৩; ইবনু উসাইমীন আশ শারহুল মুমতে খন্ড: ৪/৫৫)
.
বিতিরের কাযা কিভাবে আদায় করার নিয়ম:
.
কেউ যদি রাতে বিতর না পড়ে ঘুমিয়ে যায় এবং ঘুম থেকে উঠে দেখে ফজরের সময় হয়ে গেছে তাহলে ও বিতিরের সালাতের কাযা পড়া যায়। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন,“যে ব্যক্তি বিতির না পড়ে ঘুমিয়ে যায় অথবা পড়তে ভুলে যায় সে ব্যক্তি যেন স্মরণ হওয়া মাত্র তা পড়ে নেয়।”(মুসনাদে আহমাদ,সহীহুল জামে হা/৬৫৬২) তিনি আরো বলেন,“যে ব্যক্তি ঘুমিয়ে থেকে বিতির না পড়তে পারে সে ব্যক্তি যেন ফজরের সময় তা পড়ে নেয়।(সুনানে তিরমিযী হা/৪২২;সহীহুল জামে ৬৫৬৩) খোদ রাসূল ﷺ)-এর কোন রাত্রে বিত্‌র না পড়ে ফজর হয়ে গেলে তখনই বিত্‌র পড়ে নিতেন।(মুসনাদে আহমাদ, ৬/২৪৩, বায়হাকী ১/৪৭৯) একদা এক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)-এর দরবারে এসে বলল,”হে আল্লাহর নবী! ফজর হয়ে গেছে অথচ আমি বিতির পড়তে পারিনি।’ তিনি বললেন, “বিতির তো রাত্রেই পড়তে হয়।” লোকটি পুনরায় বলল, ‘হে আল্লাহর নবী! ফজর হয়ে গেছে অথচ আমি বিতির পড়তে পারিনি।’এবারে তিনি বললেন,“এখন পড়ে নাও।”(ত্বাবারানী, সিলসিলাহ সহীহাহহা/১৭১২) এ হাদীস থেকে স্পষ্ট হয় যে, ফজর হয়ে গেলেও বিতর নামায বিতরের মতই কাযা পড়া যাবে।(সিলসিলাহ সহীহাহ, ৪/২৮৯ দ্র:)
.
যদি বিতরের নামাজের সময় আপনি নামাজে থাকেন এবং ফজরের আযান হয়ে যায়,তখন করনীয় কি এই সম্পর্কে বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,المشروع لكل مؤمن ومؤمنة الإيتار في كل ليلة ، ووقته ما بين صلاة العشاء إلى طلوع الفجر ، لما ثبت في الصحيحين عن ابن عمر رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُما عن النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أنه قال : (صَلاة اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى ، فَإِذَا خَشِيَ الصُّبْحَ صَلَّى رَكعةً وَاحِدَةً تُوتِرُ لَهُ مَا صَلَّى ) . . . .والأحاديث في هذا الباب كثيرة ، وهي دالة على أن الوتر ينتهي بطلوع الفجر ، وإذا لم يعلم المصلي طلوع الفجر اعتمد على المؤذن المعروف بتحري الوقت ، فإذا أذن المؤن الذي يتحرى وقت الفجر فاته الوتر ، أما من أذن قبل الفجر فإنه لا يفوت بأذانه الوتر ، ولا يحرم به على الصائم الأكل والشرب ، ولا يدخل به وقت صلاة الفجر . . . .وبما ذكرنا يتضح أن وقت الوتر ينتهي بأول الأذان إذا كان المؤذن يتحرى الصبح في أذانه ، لكن إذا أذن المؤذن والمسلم في الركعة الأخيرة أكملها لعدم اليقين بطلوع الفجر بمجرد الأذان ، ولا حرج في ذلك إن شاء الله”প্রত্যেক মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য প্রতি রাতে বিতির নামায আদায় করা সুন্নত। এর সময় শুরু হয় এশার নামাজের পর থেকে এবং শেষ হয় ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত। কেননা,সহীহ বুখারী ও মুসলিমে ইবনু উমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:”রাতের সালাত দু’ দু’ (রাক’আত) করে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি ফজর হবার আশঙ্কা করে, সে যেন এক রাক’আত সালাত আদায় করে নেয়। আর সে যে সালাত আদায় করলো, তা তার জন্য বিতর হয়ে যাবে।”(সহিহ বুখারী হা/৯৯০) এই বিষয়ে আরও বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ফজর উদিত হওয়ার সাথে সাথেই বিতিরের সময় শেষ হয়ে যায়।আর কেউ যদি নিশ্চিতভাবে না জানে যে ফজরের সময় প্রবেশ করেছে কি না, তাহলে সে সেই মুয়াজ্জিনের আযানের ওপর নির্ভর করতে পারে—যিনি ফজরের সময় নির্ধারণে সতর্ক ও নির্ভরযোগ্য। সুতরাং,যদি সেই মুয়াজ্জিন ফজরের সময় প্রবেশের ভিত্তিতে আযান দেন,তবে এর অর্থ হচ্ছে বিতিরের সময় শেষ হয়ে গেছে।কিন্তু কেউ যদি বিতিরের নামাজে থাকে এবং ঠিক তখনই আযান হয়ে যায়, সে তার বিতিরের নামাজ সম্পন্ন করতে পারে; কেননা শুধু মাত্র আযান হওয়াতে ফজরের সময় প্রবেশ নিশ্চিত হয় না।ইনশাআল্লাহ এতে কোনো দোষ নেই।”(বিন বায;মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১১২৫; পৃষ্ঠা: ৩০৫).
.
এছাড়াও সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]–কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: একজন ব্যক্তি বিতরের নামাজ পড়ছিল,আর ঐ সময় ফজরের আযান শুরু হয়ে গেল, এখন সে কি তার নামাজ সম্পূর্ণ করবে? উত্তরে শাইখ বলেন:”نعم ، إذا أذن وهو أثناء الوتر فإنه يتم صلاته ولا حرج عليه“হ্যাঁ, যদি আযান শুরু হয় এবং সে বিতরের মধ্যে থাকে, তাহলে সে নামাজ শেষ করবে। এতে কোনো সমস্যা নেই।”(ইবনু উসাইমীন,মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড: ১৪: পৃষ্ঠা: ১১৫) সুতরাং ফজরের আযানের আগে পর্যন্ত বিতির নামাযের সময় থাকে। যদি আযান শুরু হওয়ার সময় আপনি বিতির নামাযে লিপ্ত থাকেন, তাহলে নামায সম্পন্ন করতে পারেন। আর যদি পর্যাপ্ত সময় থাকে, তবে কুনুত পড়া জায়েয; কিন্তু সময় সংকট হলে কুনুত বাদ দিয়ে বিতির নামায শেষ করাই উত্তম।
.
উল্লেখ্য যে, রাতে ঘুমের কারনে বিতর ক্বাযা হয়ে গেলে এবং সূর্য উঠার পরে বিতর সালাত পড়লে জোড় পড়তে হবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে করতেন। যেমনটি আয়েশা (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে। সুতরাং বিতির এক রাক‘আত পড়ার অভ্যাস থাকলে এক সঙ্গে দুই রাক‘আত পড়বেন এবং সালাম ফিরাবেন। তিন রাক‘আত পড়ার অভ্যাস থাকলে দুই সালামে (২+২) চার রাক‘আত পড়বেন। আর পাঁচ রাক‘আত পড়ার অভ্যাস থাকলে তিন সালামে (২+২+২) ছয় রাক‘আত পড়বেন। আরো অতিরিক্ত পড়তে হলে এভাবেই পড়তে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবেই পড়তেন। প্রায় সময় রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের ছালাত ১১ রাক‘আত আদায় করতেন। কোন কারণে রাত্রে আদায় করতে না পারলে দিনের বেলায় বারো রাক‘আত পড়তেন”।(সহীহ মুসলিম হা/১৬২৮ মিশকাত হা/১৫২৭) তাই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুসরণ হিসাবে এটাই উম্মাহর জন্য করণীয়”।(বিন বায,মাজমূঊ ফাতাওয়া; খণ্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ৩০০; ইবনু তায়মিয়াহ মাজমূঊল ফাতাওয়া; খণ্ড; ২৩; পৃষ্ঠা: ৯০; ইবনে উসাইমীন; মাজমূ ফাতাওয়া; খণ্ড: ১৪; পৃষ্ঠা: ১১৪) আর যদি কেউ ওযর ছাড়াও বিতর সালাত ত্যাগ করে তাহ’লে ক্বাযা আদায় করা যরূরী নয় তবে অবশ্যই নিয়মিত পড়া উচিত। (ইবনু হাযার ফাৎহুল বারী; খণ্ড; ২; পৃষ্ঠা: ৪৮০; ইবনু আব্দিল বার্র; আল-ইস্তিযকার; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১২২-১২৩)
.
দিনের বেলা বিতিরের কাযা আদায় সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন,
ثم يشرع له أن يصلي بدلها من النهار ما فاته شفعا ؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم كان يفعل ذلك ، كما ثبت عن عائشة رضي الله عنها قالت : كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا شغله نوم أو مرض عن صلاة الليل صلى من النهار ثنتي عشرة ركعة . خرجه مسلم في صحيحه ، وكان صلى الله عليه وسلم يصلي من الليل غالبا إحدى عشرة ركعة ، يسلم من كل اثنتين ويوتر بواحدة ، فإذا شغل عن ذلك بنوم أو مرض صلى من النهار اثنتي عشرة ركعة ، كما ذكرت ذلك رضي الله عنها ، وعلى هذا إذا كانت عادة المؤمن في الليل خمس ركعات فنام عنها أو شغل عنها بشيء شُرع له أن يصلي من النهار ست ركعات يسلم من كل اثنتين ، وهكذا إذا كانت عادته ثلاثا صلى أربعا بتسليمتين ، وإذا كانت عادته سبعا صلى ثمان يسلم من كل اثنتين
“অতঃপর বিতির বা বেজোড় নামায ছুটে গেলে সে ব্যক্তি এর বদলে দিনের বেলায় জোড় নামায আদায় করে নিতে পারেন। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে করতেন। যেমনটি আয়েশা (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি ঘুমের কারণে কিংবা রোগের কারণে রাতের নামায আদায় করতে না পারতেন তাহলে তিনি দিনের বেলায় ১২ রাকাত নামায আদায় করতেন।[সহিহ মুসলিম] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিকাংশ সময় রাতের নামায ১১ রাকাত আদায় করতেন। প্রত্যেক দুই রাকাতে সালাম ফিরাতেন। এবং এক রাকাত বিতির আদায় করতেন। যদি তিনি ঘুমের কারণে কিংবা রোগের কারণে এ নামায আদায় করতে না পারতেন তখন তিনি দিনের বেলায় ১২ রাকাত নামায আদায় করতেন; যেমনটি আয়েশা (রাঃ) উল্লেখ করেছেন। এর ভিত্তিতে বলা যায় কোন ব্যক্তির স্বভাব যদি হয় তিনি প্রতি রাতে ৫ রাকাত নামায আদায় করেন, কিন্তু কোনদিন ঘুমের কারণে কিংবা অন্য কোন ব্যস্ততার কারণে আদায় করতে না পারেন তাহলে দিনের বেলা তার জন্য ৬ রাকাত নামায আদায় করার বিধান রয়েছে। তিনি প্রত্যেক দুই রাকাতে সালাম ফিরাবেন। অনুরূপভাবে তার অভ্যাস যদি হয় ৩ রাকাত নামায আদায় করা তাহলে তিনি দুই সালামে ৪ রাকাত আদায় করবেন। যদি তার অভ্যাস হয় ৭ রাকাত আদায় করা তাহলে তিনি ৮ রাকাত আদায় করবেন; প্রত্যেক দুই রাকাতে সালাম ফিরাবেন।”(ফাতাওয়াল লাজনাহ্‌ আল-দায়িমা; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১৭২)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬
আপনাদের দ্বীনি ভাই: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

No comments:

Post a Comment

Translate