Monday, October 14, 2024

মাতৃভাষায় জুমার খুতবা দেওয়ার বিধান

 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার খুতবায় আল্লাহর তারীফ করতেন, দরুদ পড়তেন, কুরআন থেকে তেলাওয়াত করতেন এবং কিছু ওয়াজ-নসিহত ও করতেন। নবীদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ

“আমি সব নবীকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিষ্কার বোঝাতে পারে।” [সূরা ইবরাহিম: ৪]

রাসুলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাতৃভাষা যেহেতু আরবি ছিল এবং সাহাবিদেরও ভাষা আরবি ছিল, তাই তিনি আরবিতেই তাদেরকে নসিহত করতেন।

এখন যারা নবীজির নায়েব হয়ে জুমার খুতবা দিবেন তাদেরকেও উল্লেখিত আয়াত ও হাদীছ অনুসারে তাদের শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে মাতৃভাষায় খুতবা দেওয়াটা শরিয়ত সম্মত এবং যুক্তি সংগত।

• এই কারণেই ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন: প্রত্যেক খতিবকে জুমার সময় তাঁর মাতৃভাষায় ওয়াজ করা ওয়াজিব বা অবশ্য কর্তব্য। [তানক্বীহুর রুওয়াত ১/২৬৪]

• আল্লামা তাহাভী হানাফী বলেন: জুমার খুতবা আরবি জানলেও ফারসি ভাষায়ও চলবে। [হাশিয়া তাহতাবী আলা মারাক্বিল ফালাহ ২৭]

• আল্লামা আব্দুল হাই লাখনভী হানাফী রহ. বলেন: শ্রোতাদেরকে তাদের মাতৃভাষায় খুতবা বুঝিয়ে দেওয়া জায়েজ। [মাজমূআহ ফাতাওয়া ১/২৪৫]

• হানাফি ফিক্বহ গ্রন্থ নিহায়া, মুজতাবা, ফাতাওয়া সিরাজিয়্যাহ, মুহীত প্রভৃতি গ্রন্থে আছে যে, ইমাম আবূ হানীফার মতে, ফারসি ভাষাতে জুমার খুতবা দেওয়া জায়েজ।

• হানাফি ফতোয়ার কিতাব শামীতে আছে, আরবি ভাষায় খুতবা দেওয়া শর্ত নয়।

• হানাফী ফিকহ গ্রন্থ হিদায়ায় আছে, প্রত্যেক ভাষায় খুতবার নছীহত চলতে পারে। (কিতাবুল জুমআহ ৫৫-৫৬) [আলোচনা দ্র: আইনী তোহফা সলাতে মুস্তফা ১/৯৮-৯৯]

❑ তবারা আগে ‘বয়ান’ একটি বিদআত:

নিজ ভাষায় খুতবা না দেওয়ার কারণে যেহেতু তা মানুষের বোধগম্য হয় না এজন্যই এই খুতবার আগে খতিবগণ বয়ানের ব্যবস্থা রেখেছেন, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে একটি জঘন্যতম বিদআত। কারণ খুতবা দানের পূর্বে বয়ান দেওয়া এবং ইহাকে এভাবে স্থায়ী রূপ দেওয়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আদৌ প্রমাণিত নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবার পূর্বে কখনো এ ধরণের বয়ান দেন নি। দিতে বলেছেন বলে ও কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।

এজন্যই এ সঊদি আরবের বরেণ্য মুফতি শাইখ ইবনে উসাইমিন রহ: কে মাতৃভাষায় খুতবা প্রদান সম্পর্কে সওয়াল করা হলে তিনি তা সরাসরি জায়েজ বলে মন্তব্য করেন এবং একথা স্পষ্ট ভাবে বলেন যে, খতিবকে নিজ ভাষায় খুতবা দিতে হবে। [দেখুন: শাইখ ইবনে উসাইমিনের ফাতাওয়া আরকানিল ইসলাম]

বর্তমানে আমাদের দেশের বেশ কিছু জামে মসজিদে মাতৃভাষায় খুতবা দেওয়া হয়ে থাকে। বস্তুত: এটাই সুন্নত। এর বিপরীত সুন্নত বিরোধী কাজ যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক ইলম দান করুন এবং যাবতীয় বিদআত পরিত্যাগ করার তাওফিক দিন (আমিন)

❑ সংযুক্তি:

হাদিসে খুতবা (বক্তৃতা) কোন ভাষায় হবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি বা এমন কোন নির্দেশ আসে নি যে, আরবি ভাষায় খুতবা দেওয়া আবশ্যক। সুতরাং মানুষ যে ভাষায় খুতবা শুনলে উপকৃত হবে সে ভাষায় হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

অত:এব, আল্লাহর প্রশংসা, নবীর প্রতি দুরুদ এবং কিছু আয়াত ও হাদিস আরবিতে বলার পর যদি সেগুলো বাংলা বা শ্রোতাদের ভাষায় বুঝিয়ে দেওয়া হয় তাহলে খুতবার উদ্দেশ্যে বাস্তবায়িত হবে।

কারণ হাদিসে এসেছে: সামুরা বিন জুনদুব রা. হতে বর্ণিত,

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يخطب قائماً ويجلس بين الخطبتين ويقرأ آيات ويذكر الناس.

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন এবং দু খুতবার মাঝে বসতেন। কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং মানুষকে উপদেশ দিতেন।” [সহিহ নাসাঈ, হা/১৪১৭-সহিহ]

এখানে বুঝা যাচ্ছে, খতিব সাহেব শ্রোতাদেরকে খুতবার মধ্যে উপদেশ দিবেন ও তাদের করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দিবেন।

আর এ কথা বলা বাহুল্য যে, তাদের অ বোধগম্য ভাষায় বক্তৃতা হলে তারা কিছুই বুঝতে পারবে না- যা খুতবার মূল উদ্দেশ্যে পরিপন্থী।

আরবিতে খুতবা দেওয়া আবশ্যক হলে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবার মধ্যে যে সকল শব্দ ও বাক্য ব্যবহার করেছেন তার বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকত না। অর্থাৎ হাদিসে বর্ণিত ভাষা ছাড়া নিজে বানিয়ে আরবি বলার সুযোগ থাকত না-যেমন সালাতে নিজের মত করে আরবিতে কিরাআত পাঠ করা জায়েজ নয়।‍ অথচ যারা আরবিতে খুতবা দেন তারা কোন আলেমের লিখিত আরবি বক্তব্য পড়ে থাকেন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
লেখক:
শাইখ আখতারুল আমান বিস আব্দুস সালাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।

No comments:

Post a Comment

Translate