Monday, October 14, 2024

প্রাপ্ত বয়স্ক নারীকে দ্বীনহীন পাত্রের সাথে জোরপূর্বক বিবাহ দিতে চাইলে

 প্রাপ্ত বয়স্ক নারীকে দ্বীনহীন পাত্রের সাথে জোরপূর্বক বিবাহ দিতে চাইলে উক্ত নারী যদি বিয়ে করতে রাজি না হয় তাহলে কি ঐ নারী গুনাহগার হবে? আর এ ক্ষেত্রে ঐ নারীর করণীয় কী?

প্রশ্ন: আমার পরিবার থেকে আমাকে জোর করে বিয়ে দিতে চায়। এমনকি তারা সব সময় অর্থ সম্পদ দেখে শুধু তাই না তারা নামাজ, রোজা,পর্দা করার বিষয়ে নারাজ। মানে তাদের কথা সবার সামনে যেতে হবে। এই নিয়ে আমার পরিবারের সাথে আমার ঝামেলা হয়েছে। আমি অনেক কষ্টে জেনারেল লাইনে পড়েও দ্বীনের পথে টিকে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাচ্ছি। আমি দ্বীনি পরিবার দেখে বিয়ে করতে চাই। যার মাধ্যমে আমি আমার পরিপূর্ণ ইসলাম মানতে পারবো, সকল নন মাহরামদের থেকে বেঁচে থাকতে পারবো। আমি কোনো বেদ্বীন ছেলেকে বিয়ে করতে চাই না। এগুলো নিয়ে পরিবারের সাথে অনেক ঝামেলা চলতেছে। আমি যে আমার পরিবারের সাথে এমন করছি এতে কি আমার গুনাহ হবে? কারণ আমি বেদ্বীন ছেলেকে বিয়ে করবো না। এক্ষেত্রে আমার করণীয় কি?

উত্তর: ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর বিয়ের পূর্বে তার সম্মতি নেওয়া অপরিহার্য। তার সম্মতি ব্যতিরেকে জোরপূর্বক বিবাহ দেওয়া বৈধ নয়।
আবু সালামাহ রা. হতে বর্ণিত, আবু হুরায়রা রা. তাদের কাছে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لاَ تُنْكَحُ الأَيِّمُ حَتّٰى تُسْتَأْمَرَ وَلاَ تُنْكَحُ الْبِكْرُ حَتّٰى تُسْتَأْذَنَ قَالُوا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَكَيْفَ إِذْنُهَا قَالَ أَنْ تَسْكُتَ.
“বিধবা/স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে তার সম্মতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারী নারীকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দেয়া যাবে না।”
লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল, কেমন করে তার অনুমতি নেয়া হবে?
তিনি বললেন, “তার চুপ থাকাটাই হচ্ছে তার অনুমতি।”
[৬৯৭০; মুসলিম ১৬/৮, হাঃ ১৪১৯, আহমদ ৯৬১১] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬০)

এ সম্পর্কে ইমাম মুসলিম হাদিস বর্ণনা করেছেন- পূর্বে বিবাহ হয়েছিল এমন মহিলা তার নিজের বিয়েতে মত জানানোর ব্যাপারে তাদের অভিভাবক অপেক্ষাও বেশি অধিকার রাখে। আর অবিবাহিত মেয়েদের নিকট তাদের পিতা বিয়ের মত জানতে চাইলে তাদের চুপ থাকাই তাদের অনুমতি জ্ঞাপক।
সুতরাং অভিভাবকের জন্য আবশ্যক হচ্ছে, বিয়ের পূর্বে অবশ্যই প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে, বোন প্রমুখ যার বিয়ে দিতে চায় তার সাথে কথা বলবে, তার ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে মূল্যায়ন করবে, তার আগ্রহ-অনাগ্রহকে আমলে নিয়ে তারপর বিয়ের সিদ্ধান্ত নিবে। যদি তার সম্মতি থাকে তাহলে বিয়ে দিবে; অন্যথায় এ ক্ষেত্রে অগ্রসর হবে না। এটাই ইসলামের বিধান। এ বিধান লঙ্ঘন করা কোনও অভিভাকের জন্য বৈধ নয়। এর পরিণতি খুবই খারাপ। এমন জোর-জবরদস্তি বা কনের অনুমতি হীন বিয়েতে দাম্পত্য জীবন চরম বিশৃঙ্খল এবং হুমকির সম্মুখীন হয়। অথচ এ বিধান টি আমাদের সমাজে অনেক ক্ষেত্রে অবহেলিত। (আল্লাহ ক্ষমা করুন)

সুতরাং কোন মেয়ে যদি কোন বিয়ের প্রস্তাবকে দ্বীনহীনতা কিংবা অপছন্দ হওয়ার কারণে ফিরিয়ে দেয় তাহলে তাতে কোন গুনাহ নেই। এজন্য সে গুনাহগার হবে না। তার বাবা-মা অসন্তুষ্ট হলেও সে তাদের অবাধ্য বলে গণ্য হবে না। কেননা এটি তার আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate