Sunday, May 19, 2024

কাওমে নুহের ধ্বংসের কারণ

 

 আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন ইলাহ নেই। তোমরা কি (তাঁকে) ভয় করবে না? তখন তার সম্প্রদায়ের কাফির-প্রধানরা বলেছিল, এতো তোমাদের মতই একজন মানুষ বৈ নয়। সে তোমাদের উপর প্রাধান্য লাভ করতে চায়। আল্লাহ ইচ্ছা করলে ফেরেশতাই পাঠাতেন, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে এরূপ কথা শুনিনি। সে তো এক উম্মাদ ব্যক্তি বৈ নয়। সুতরাং তার ব্যাপারে তোমরা কিছুকাল অপেক্ষা কর। -[ক্বুরআন ২৩ : ২৩-২৫]

অর্থাৎ নূহ (আ) তাঁর সম্প্রদায়কে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করার এবং তাঁর সঙ্গে কোন প্রতিকৃতি, মূর্তি ও তাগুতের ইবাদাত না করার, এবং ঘোষণা দেন যে, তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, কোন রব নেই।

তবে নূহ (আ) মানুষ হয়ে রাসূল হওয়ায় তাঁর সম্প্রদায় বিস্মিত হয় এবং যারা তাঁর অনুসরণ করেছিল তাদেরকে তাচ্ছিল্য করে ও হেয়প্রতিপন্ন করে। কথিত আছে যে, নূহ (আ) এর বিরোধী সম্প্রদায় ছিল নেতৃস্থানীয় আর তাঁর অনুসারীরা ছিল সমাজের দুর্বল শ্রেণীর লোক।

 আমি নূহকে তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছিলাম। তিনি তাদের মধ্যে পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর অবস্থান করেছিলেন। অতঃপর তাদেরকে মহাপ্লাবণ গ্রাস করেছিল, কারণ তারা ছিল সীমালঙ্ঘনকারী। -[ক্বুরআন ২৯ : ১৪]

এত দীর্ঘকাল ধরে দাওয়াত দেওয়া সত্ত্বেও তাদের অল্প সংখ্যক লোকই তাঁর প্রতি ঈমান এনেছিল এবং প্রজন্ম পরবর্তীদেরকে নূহ (আ) এর প্রতি ঈমান না আনার এবং তাঁর সঙ্গে বিবাদ ও বিরুদ্ধাচারণের ওসীয়ত করে যেত। তাদের সহজাত প্রকৃতিই ঈমান ও সত্যের বিরোধী ছিল।

 নূহ বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমার সম্প্রদায় তো আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। অতএব, আমার ও তাদের মধ্যে কোন ফয়সালা করে দিন এবং আমাকে ও আমার সঙ্গী মুমিনগণকে রক্ষা করুন। -[ক্বুরআন ২৬ : ১১৭-১১৮] 
 আর নূহের প্রতি ওহী প্রেরণ করা হলো যে, যারা ইতিমধ্যেই ঈমান এনেছে তাদের ছাড়া তোমার জাতির অন্য কেউ ঈমান আনবেনা এতএব তাদের কার্যকলাপে বিমর্ষ হবে না। আর আমার সম্মুখে আমারই নির্দেশ মোতাবেক তুমি একটি নৌকা তৈরী করো এবং পাপিষ্ঠদের ব্যাপারে আমাকে কোন কথা বলবে না। অবশ্যই তারা ডুবে মরবে। নূহ নৌকা তৈরী করছিল, আর তাঁর কওমের প্রধান ব্যক্তিরা যখন পার্শ্ব দিয়ে যেত, তখন তাঁকে বিদ্রুপ করত। সে বলল, তোমরা যদি আমাদের উপহাস কর, তবে তোমরা যেমন উপহাস করছ আমরাও তদ্রুপ তোমাদের উপহাস করব। -[ক্বুরআন ১১ : ৩৬-৩৮] 
 এরপর যখন আমার আদেশ আসে এবং চুল্লী প্লাবিত হয়, তখন নৌকায় তুলে নাও, প্রত্যেক জীবের এক এক জোড়া এবং তোমার পরিবারবর্গকে, তাদের মধ্যে যাদের বিপক্ষে পূর্বে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তাদের ছাড়া। এবং তুমি জালেমদের সম্পর্কে আমাকে কিছু বলো না। নিশ্চয় তারা নিমজ্জত হবে। যখন তুমি ও তোমার সঙ্গীরা নৌকায় আরোহণ করবে, তখন বলবে, সকল প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আমাদেরকে জালিম সম্প্রদায়ের কবল থেকে উদ্ধার করেছেন। আর বল, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাকে কল্যাণকর ভাবে নামিয়ে দাও, তুমি শ্রেষ্ঠ অবতারণকারী। -[ক্বুরআন ২৩ : ২৭-২৯] 
 তখন আমি তাকে এবং তার সাথে নৌকায় যারা ছিল তাদেরকে রক্ষা করলাম এবং তাদেরকে (পৃথীবিতে) স্থলাভিষিক্ত করলাম, আর তাদেরকে ডুবিয়ে দিয়েছি যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং লক্ষ্য কর, কেমন পরিণতি ঘটেছে তাদের যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল। -[ক্বুরআন ১০ : ৭৩] 
 বলা হল- হে নূহ! তুমি নেমে পড়, আমার পক্ষ হতে নিরাপত্তা ও বরকত তোমার প্রতি আর তোমার সঙ্গীদের মধ্যে অনেক দলের প্রতি। আর অন্যান্য যেসব সম্প্রদায় রয়েছে আমি তাদের কেও উপকৃত হতে দেব। অতঃপর তাদের উপর আমার কঠিন আযাব আপতিত হবে। -[ক্বুরআন ১১ : ৪৮]


তথ্যসূত্র: আল-বিদাা ওয়ান নিহায়া, ১ম খণ্ড

No comments:

Post a Comment

Translate