প্রশ্ন: সংসার ভাঙ্গার মূল কারণ গুলো কী কী? সংসার ভাঙ্গার একমাত্র করণ কি স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে না দেওয়া? কারণ আমার স্বামী বলেন যে, “নারীদের সংসার ভাঙতো না যদি তারা পুরুষদেরকে বাইরে পরকীয়া করতে না দিয়ে একাধিক বিয়ে করতে দিত।”
আমি ইসলাম পালনে নতুন। তাই স্পষ্টভাবে এসব জানি না। আমার স্বামীর এ কথা কি ইসলামের আলোকে সঠিক?
১. আপনার স্বামীর উক্ত কথাটি পরিপূর্ণ সঠিক নয়। অর্থাৎ স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে না দেওয়াই সংসার ভাঙ্গার একমাত্র কারণ নয়। তবে অনেকগুলো কারণের মধ্যে এটিও একটি কারণ।
নিম্নে সংসার ভঙ্গের কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ উল্লেখ করা হলো:
মূলত সংসার ভঙ্গের পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকে। কখনো স্বামীর কারণে, কখনো স্ত্রীর কারণে আবার কখনো উভয়ের কারণে দাম্পত্য জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে।
☄️ ক. স্বামীর পক্ষ থেকে যে সব কারণে সংসার ভাঙ্গতে পারে:
অনেক সময় স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রী বা স্ত্রীর পরিবারের প্রতি খারাপ ব্যবহার, স্ত্রীকে অবজ্ঞা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, তার প্রতি শারীরিক বা মানসিক জুলুম-নির্যাতন করা, তার প্রাপ্য হক আদায় না করা, তার সাথে প্রতারণা ও বিশ্বাস ঘাতকতা করা, পরকীয়ায় লিপ্ত থাকা, শারীরিক অক্ষমতা, মাদকাসক্তি ও নেশা গ্রহণ, এমন কোনও বদ অভ্যাস বা শারীরিক সমস্যা থাকা যা স্ত্রী কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। ইত্যাদি নানা কারণে সংসার ভেঙ্গে যেতে পারে।
☄️ খ. স্ত্রীর পক্ষ থেকে যে সব কারণে সংসার ভাঙ্গতে পারে:
☄️ গ. উভয়ের পক্ষ থেকে যে সব কারণে সংসার ভাঙ্গতে পারে:
▪️২. স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাইলে শরিয়তের দৃষ্টিতে স্ত্রীর করণীয় কী?
কোন স্বামী যদি একাধিক বিয়ের ইচ্ছে করে বা তার একাধিক বিয়ে করা তার জন্য প্রয়োজনীয় হয় তাহলে কোন স্ত্রীর জন্য তাতে বাধা দেওয়া বা এ ক্ষেত্রে তাকে হুমকি-ধমকি দেওয়া বা শারীরিক-মানসিক ইত্যাদি কোনোভাবে কষ্ট দেওয়া শরিয়ত সম্মত নয়। কারণ এই অধিকার স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাকে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
وَإِنۡ خِفۡتُمۡ أَلَّا تُقۡسِطُواْ فِي ٱلۡيَتَٰمَىٰ فَٱنكِحُواْ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ ٱلنِّسَآءِ مَثۡنَىٰ وَثُلَٰثَ وَرُبَٰعَۖ فَإِنۡ خِفۡتُمۡ أَلَّا تَعۡدِلُواْ فَوَٰحِدَةً أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُمۡۚ ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَلَّا تَعُولُواْ
“তাহলে তোমরা নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই, তিন বা চার বিয়ে করো। আর যদি আশংকা কর যে সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনকেই বা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকেই গ্রহণ কর। এতে পক্ষপাতিত্ব না করার সম্ভাবনা বেশি।” [সূরা নিসা: ৩]
স্বামী যদি দ্বিতীয় বিয়ে করে তাহলে স্ত্রী এ ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ধৈর্য ধারণ করবে। কোনভাবেই ধৈর্যধারণ সম্ভব না হলে সে খোলা তালাকের মাধ্যমে সংসার ত্যাগ করবে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই এই কারণে স্বামীর সাথে খারাপ ব্যবহার করা বা তাকে কোনভাবেই কষ্ট দেওয়া জায়েজ নেই। কারণ ইসলামে কোন মুসলিমকে কষ্ট দেওয়া গালাগালি করা হারাম ও কাবিরা গুনাহ। আর তা যদি হয় স্বামীর সাথে তাহলে তা আরও বেশি গর্হিত কাজ। কারণ মহান আল্লাহ স্বামীকে অনেক বেশি মর্যাদা দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ বলেন,
ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ وَبِمَآ أَنفَقُواْ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡۚ فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ وَٱلَّٰتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَٱهۡجُرُوهُنَّ فِي ٱلۡمَضَاجِعِ وَٱضۡرِبُوهُنَّۖ فَإِنۡ أَطَعۡنَكُمۡ فَلَا تَبۡغُواْ عَلَيۡهِنَّ سَبِيلًاۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيّٗا كَبِيرٗا
“পুরুষরা নারীদের কর্তা। কারণ আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং এজন্যে যে, পুরুষ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। কাজেই পূণ্যশীলা স্ত্রীরা অনুগতা এবং লোকচক্ষুর আড়ালে আল্লাহর হেফাজতে তারা হেফাজত করে। আর স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশংকা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের শয্যা বর্জন কর এবং তাদেরকে প্রহার কর । যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অন্বেষণ করো না । নিশ্চয় আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, মহান।” [সূরা নিসা: ৩৪]
হাদিসে বলা হয়েছে যে, পৃথিবীতে যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সেজদার অনুমতি দেওয়া হত তাহলে স্ত্রীদেরকে আদেশ করা হতো তারা যেন তাদের স্বামীদেরকে সেজদা করে।
এ বিষয়ে আরও একাধিক হাদিস রয়েছে।
No comments:
Post a Comment