আহলুস সুন্নাহর ইমাম আল্লামা শাইখ রবী বিন হাদী আল মাদখালী রহিমাহুল্লাহ তাঁর অসীয়তে বলেন—
“বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম।”
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর কাছে সাহায্য কামনা করি এবং তাঁর কাছেই ক্ষমা চাই। আমরা নিজেদের অন্তরের মন্দ ও আমাদের অসৎ আমল থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে সৎপথে পরিচালিত করেন, কেউ তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন, কেউ তাকে সঠিক পথে আনতে পারে না।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই; তিনি একক, তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُون
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করো এবং অবশ্যই মুসলিম হওয়া ব্যতীত মৃত্যুবরণ করো না ।” [সূরা আলে ইমরান: ১০২]
يَآأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُواْ رَبَّكُمُ ٱلَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفۡسࣲ وَٰحِدَةࣲ وَخَلَقَ مِنۡهَا زَوۡجَهَا وَبَثَّ مِنۡهُمَا رِجَالࣰا كَثِيرࣰا وَنِسَآءࣰۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ ٱلَّذِي تَسَآءَلُونَ بِهِۦ وَٱلۡأَرۡحَامَۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلَيۡكُمۡ رَقِيبࣰا
হে মানুষ! তোমাদের প্রভুকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি (আদম) থেকে সৃষ্টি করেছেন; তার থেকে তার সঙ্গিনীকেও সৃষ্টি করেছেন আর ঐ দুজন থেকেই অনেক নর-নারী (সৃষ্টি করে পৃথিবীতে) ছড়িয়ে দিয়েছেন। আল্লাহকে ভয় করো, যার নামে তোমরা একে অপরের কাছে (যার যার পাওনা) চেয়ে থাক। রক্ত-সম্পর্কের ব্যাপারেও সাবধান থেকো। অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।[সূরা আন-নিসা: ১]
.يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدا
يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَد
فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا
“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো, তিনি তোমাদের কাজগুলোকে শুদ্ধ করে দেবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করে।” [সূরা আল-আহযাব: ৭০–৭১]
অতঃপর —নিশ্চয়ই সর্বশ্রেষ্ঠ কথা হলো আল্লাহর কিতাব এবং সর্বশ্রেষ্ঠ পথ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পথ। আর নিকৃষ্টতম বিষয়সমূহ হল বিদআত, প্রত্যেক বিদআত বিভ্রান্তি, আর প্রত্যেক বিভ্রান্তিই জাহান্নামে নিয়ে যায়।
এরপর বলি, এই অসীয়ত এক দুর্বল বান্দার পক্ষ হতে সাধারণ মুসলমানদের জন্য— যে কিনা দুনিয়া থেকে বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে এবং আখিরাতের পথে যাত্রার জন্য তৈরি। তার উপদেশ হলো—”মুসলমানরা যেনো আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় করে, একত্রে আল্লাহর রজ্জু আঁকড়ে ধরে, বিভক্ত যেনো না হয়, তারা যেনো দ্বীনের মধ্যে দলাদলি না করে। কারণ আল্লাহভীতি, আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার মধ্যেই রয়েছে তাদের দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত সাফল্য ও নেতৃত্ব। পক্ষান্তরে, বিভক্তি ও মতবিরোধ তাদেরকে অপমান ও লাঞ্ছনার দিকে নিয়ে যায়। এই উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি কেবল আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহর ভিত্তিতেই হতে পারে, অন্যথায় সম্ভব না।তাই মুসলিমদের উচিত এই ঐক্যের এই মহান মাধ্যমকে দৃঢ়ভাবে গ্রহণ করা, যা তাদের দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্য এনে দিবে। আর বিভেদ ও মতপার্থক্য থেকে দূরে থাকা উচিত, যা উভয়জাহানে বিপর্যয় ও লাঞ্ছনার কারণ।
আর আমি (বিশেষভাবে) উপদেশ দিচ্ছি সালাফী ভাইদেরকে– যারা কুরআন ও সুন্নাহর উপর দৃঢ়ভাবে অবস্থান করছে এবং মানুষের মাঝে তা প্রচার করছে—তারা যেন দ্বীনের বিভিন্ন দিক যেমন আকীদা, ইবাদত, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে দ্বিগুণ আন্তরিকতা ও শ্রম দিয়ে মুসলমানদের মধ্যে সংশোধনী প্রচেষ্টা চালিয়ে যায় এবং কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তাদের অন্যান্য জীবনধারাকে আলোকিত করে। তারা যেন মুসলমানদেরকে বুঝিয়ে দেয়—তাদের উদ্দেশ্য কল্যাণ ছাড়া কিছু নয়, তারা এই উম্মাহর জন্য সমস্ত অকল্যাণ দূর করতে চায়—যার মূল কারণ কুরআন ও সুন্নাহ থেকে দূরে সরে যাওয়া। আমি উপদেশ দিচ্ছি সমস্ত আলেম ও তালিবে ইলমদের, তারা যেন নিজেদের উম্মাহর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে, এবং উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহ এবং সালাফে সালিহীনের পথে ফিরিয়ে আনার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে। আকীদা, ইবাদত, রাজনীতি, সমাজনীতি, চরিত্র—সব কিছুতেই যেন সেই পূর্বসূরিদের অনুসরণ করা হয় এবং তারা যেন মতের ভেদাভেদ ও প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকে, যা আজ উম্মাহর মাঝে ভীষণ বিপর্যয় এনেছে। এখনই সেই সময়—যখন তাদের উচিত এই মহৎ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সচেষ্ট হওয়া এবং মুসলমানদেরকে অপমান ও লাঞ্ছনাকর পরিস্থিতি থেক্ব উদ্ধার করা। আর এই শেষ উম্মতের সংশোন কেবল সে পথেই হবে, যে পথে পূর্ববর্তী বা উম্মতের প্রথম ব্যক্তিরা সংশোধন করে গেছেন।
এই উম্মত শ্রেষ্ঠত্ব পেয়েছে শুধু এজন্য যে তারা মানবজাতির কল্যাণে বের হয়েছে—সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান—এই ছিল তাদের বৈশিষ্ট্য। প্রথম প্রজন্মের সাহাবিগণ ও তাঁদের অনুসরণকারীরা এই মর্যাদা অর্জন করেছিলেন, যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “মানবজাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ আমার যুগ, এরপর তাদের পরবর্তী, তারপর তাদের পরে যারা আসবে তারা । এরপর এমন এক সম্প্রদায় আসবে—যারা সাক্ষ্য দেবে অথচ তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না , যারা প্রতিজ্ঞা করবে কিন্তু তা পূরণ করবে না, এবং তাদের মধ্যে স্থূলতা বৃদ্ধি পাবে।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম) তিনি আরও বলেন: “একজন একজন করে নেককাররা চলে যাবে, অবশেষে এমন এক দল বাকি থাকবে যারা গম বা খেজুর ছাঁকার পর যে আবর্জনা পড়ে থাকে, তার মতো হবে। আল্লাহ তাদের কোনো গুরুত্ব দিবেন না।” (সহীহ বুখারী) তাই আলেমদের উপর দায়িত্ব— তাঁরা যেন আল্লাহ, তাঁর কিতাব, রাসূল, সাধারণ ও বিশেষ মুসলমানদের জন্য কল্যাণ কামনা করেন—যাতে আল্লাহ তাআলা এই উম্মাহর গাফেল ও দূর্বল অংশকে মুক্তি দিতে পারেন। কেননা এই দুরাবস্থার মূল কারণ হলো—বেশিরভাগ মানুষ কুরআন ও রাসূলের সুন্নাহ থেকে বিচ্যুত! যদি তারা আন্তরিকতা ও দৃঢ়তার সাথে এই আহ্বান প্রচার করে, তাহলে এই উম্মাতের জন্য বিপুল কল্যাণ সাধিত হবে। আমরা আল্লাহ তাবারাকা ও তায়ালার নিকট কামনা করি, তিনি যেন এটি বাস্তবায়ন করেন এবং মুসলিমদের থেকে সমস্ত অপমান ও হীনতার কারণসমূহ দূর করে দেন— সেই সব কারণ— যা দলাদলি, হিংসা, পরস্পর বিদ্বেষ ও শত্রুতার জন্ম দেয়; যেগুলোর প্রভাব ও ফলাফল স্পষ্টভাবে সেই সব হৃদয়বান ব্যক্তি অনুভব করে থাকেন , যিনি উম্মতের জন্য কল্যাণ কামনা করেন।
_______
শ্রুতিলিপি করেছেন: তাঁর ছাত্র।
খালিদ বিন যুহাইর আয-যাফিরি।
এবং আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যেনো এটা সবজায়গায় পত্রিকা ও অন্যান্য মাধ্যমে প্রচার করার জন্য।
উক্তি করেছেন: শায়খ রাবী’ ইবন হাদী আল-মাদখালী।
বৃহস্পতিবার, ২৫ই যুলহিজ্জাহ ১৪২০ হিজরী রাতে।
No comments:
Post a Comment