Saturday, July 19, 2025

স্ত্রীর অনুভূতির কথা বিবেচনা করে বহুবিবাহ পরিত্যাগের বিধান কি

 কাতার ভিত্তিক ইসলাম ওয়েবের আলেমগনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন: আমি একজন পুরুষ এবং দ্বিতীয় বিয়েতে আগ্রহী। আমি আমার স্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম প্রথমে তিনি রাজি থাকলেও পরে তিনি তীব্র আপত্তি জানান। আমি চাই না তার হৃদয়ে কোনো কষ্ট দেই বা তার মন ভাঙে। অথচ আমার আর্থিক, শারীরিক সামর্থ্য ও মানসিক আগ্রহ সবই রয়েছে। আমি নারীর প্রতি স্বাভাবিকভাবে আকৃষ্ট এবং আরও সন্তান লাভেরও ইচ্ছা রাখি। এমতাবস্থায় কেবল স্ত্রীর অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে যদি আমি দ্বিতীয় বিবাহ থেকে বিরত থাকি, তাহলে কি আমি গুনাহগার হিসেবে বিবেচিত হবো? আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিন।

উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াসসালাতু ওয়াস্‌সালামু ‘আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মা বাদঃ স্ত্রীর অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে দ্বিতীয় বিবাহ থেকে বিরত থাকা কোনোভাবেই গোনাহের কাজ নয়। বরং এটি একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, যা পরিস্থিতি, প্রয়োজন এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। ইসলাম একাধিক বিবাহের অনুমতি দিলেও তা বাধ্যতামূলক নয়; বরং এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে যে একজন স্ত্রী নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা উত্তম, না কি একাধিক বিবাহ করা শ্রেয়। যদি বর্তমান স্ত্রী স্বামীকে যৌন চাহিদা থেকে যথেষ্ট পরিমাণে সংযত রাখতে সক্ষম হন এবং তার পাপমুখিতা থেকে রক্ষা করতে সহায়ক হন, তাহলে দ্বিতীয় বিবাহ না করাই অনেক আলেমের দৃষ্টিতে উত্তম। কারণ এতে অন্যায়, জুলুম কিংবা অবিচারের আশঙ্কা কম থাকে। তবে যদি একজন স্ত্রী স্বামীর শারীরিক ও মানসিক চাহিদা পূরণে অক্ষম হন, যার ফলে স্বামীর পাপের দিকে ঝুঁকে পড়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে নিজেকে গুনাহ থেকে রক্ষা করার জন্য দ্বিতীয় বিবাহই তার জন্য অধিক উপযোগী ও নিরাপদ পথ।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
وعلى هذا فنقول: الاقتصار على الواحدة أسلم، ولكن مع ذلك إذا كان الإنسان يرى من نفسه أن الواحدة لا تكفيه ولا تعفه، فإننا نأمره بأن يتزوج ثانية وثالثة ورابعة؛ حتى يحصل له الطمأنينة، وغض البصر، وراحة النفس
এই ভিত্তিতে আমরা বলি একজন স্ত্রীতে সীমাবদ্ধ থাকা বেশি নিরাপদ। তবে যদি কেউ মনে করে যে, একজন স্ত্রী তার জন্য যথেষ্ট নয় এবং সে নিজেকে কুপ্রবৃত্তি থেকে সংযত রাখতে পারে না তাহলে আমরা তাকে দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ স্ত্রী বিবাহ করতে পরামর্শ দিচ্ছি যাতে সে মানসিক প্রশান্তি, দৃষ্টিকে সংযত রাখা এবং অন্তরে স্বস্তি লাভ করতে পারে।”(ইমাম ইবনু উসামীন আশ-শারহুল মুমতি‘, আলা জাদিল মুস্তাকনি খণ্ড: ১২; পৃষ্ঠা: ৪)
.
অতএব স্ত্রীর অনুভূতির প্রতি সম্মান জানিয়ে দ্বিতীয় বিবাহ থেকে বিরত থাকা কোনোভাবেই গোনাহ নয়; বরং কখনো কখনো তা হতে পারে এক প্রাজ্ঞ ও প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত যদি এর মাধ্যমে পরিবারে শান্তি, মানসিক স্বস্তি ও বৈবাহিক স্থিতি অটুট থাকে। তবে যদি আপনি মনে করেন দ্বিতীয় বিবাহ আপনার জন্য বাস্তবিক প্রয়োজনীয় ও কল্যাণকর, তাহলে শরিয়ত সে সুযোগ ও অনুমোদন আপনাকে দিয়েছে। আপনি নিজেই আপনার পারিবারিক বাস্তবতা, প্রয়োজন ও মসলা‌হাত সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো অবগত। তাই এমন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আবেগ নয়, বরং ধৈর্য, ভারসাম্য ও প্রজ্ঞার আলোকে চিন্তা করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। (কিছুটা সংযোজিত ও পরিমার্জিত; ইসলাম ওয়েব ফাতওয়া নং-২৯২৭৪১) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

No comments:

Post a Comment

Translate