❑ ফতোয়া-১: প্রশ্ন: মহিলাদের অডিও ক্লিপ বা বক্তব্য ইন্টারনেটে প্রচার করার হুকুম কী?
উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। দরূদ ও সালাম রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি। অতঃপর
মূলত নারীর কণ্ঠস্বর পর্দার অন্তর্ভুক্ত নয় (অর্থাৎ তা নিজে নিজে হারাম নয়) যতক্ষণ না সেই কণ্ঠে কোমলতা, চটুলতা, হাসাহাসি বা পুরুষদের মন দুর্বল করে দেওয়ার মতো নম্রতা বা আকর্ষণ সৃষ্টি হয়।
✪ আল-মাওসু‘আতুল ফিকহিয়্যাহ (কুয়েতি ফিকাহ বিশ্বকোষ) (৪/৯০) গ্রন্থে এসেছে:
“إنْ كَانَ صَوْتَ امْرَأَةٍ ، فَإِنْ كَانَ السَّامِعُ يَتَلَذَّذُ بِهِ ، أَوْ خَافَ عَلَى نَفْسِهِ فِتْنَةً، حَرُمَ عَلَيْهِ اسْتِمَاعُهُ ، وَإِلاَّ فَلاَ يَحْرُمُ ، وَيُحْمَل اسْتِمَاعُ الصَّحَابَةِ رِضْوَانُ اللَّهِ عَلَيْهِمْ أَصْوَاتَ النِّسَاءِ حِينَ مُحَادَثَتِهِنَّ عَلَى هَذَا ، وَلَيْسَ لِلْمَرْأَةِ تَرْخِيمُ الصَّوْتِ وَتَنْغِيمُهُ وَتَلْيِينُهُ ، لِمَا فِيهِ مِنْ إثَارَةِ الْفِتْنَةِ ، وَذَلِكَ لِقَوْلِهِ تَعَالَى : (فَلاَ تَخْضَعْنَ بِالْقَوْل فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ)
“যদি কোনও নারীর কণ্ঠস্বর হয় আর শোনার সময় শ্রোতা তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে লালসা অনুভব করে অথবা নিজের মনে ফিতনার আশঙ্কা করে। তবে তা শোনা হারাম। তবে যদি এমন কিছু না হয় তাহলে হারাম নয়। সাহাবায়ে কেরাম (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) নারীদের সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁদের কণ্ঠস্বর শুনতেন এটিই তার প্রমাণ। তবে নারীর জন্য কণ্ঠে কোমলতা, মিষ্টি স্বরে অথবা গানে সুর তোলার মতো করে কথা বলার অনুমতি নেই। কারণ এতে ফিতনার আশঙ্কা থাকে।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَلاَ تَخْضَعْنَ بِالْقَوْل فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ
“তোমরা কথা বলার সময় নম্র স্বরে কথা বলো না, যাতে যার অন্তরে ব্যাধি আছে সে কুমতলব করে না বসে।” [সূরা আহযাব: ৩২]
✪ সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটির আলেমগণ বলেছেন:
صوت المرأة نفسه ليس بعورة، لا يحرم سماعه، إلا إذا كان فيه تكسر في الحديث، وخضوع في القول ، فيحرم منها ذلك لغير زوجها ، ويحرم على الرجال سوى زوجها استماعه ؛ لقوله تعالى : ( يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا ) الأحزاب/ 32 .
“নারীর কণ্ঠস্বর নিজে নিজে পর্দার অন্তর্ভুক্ত নয় এবং তা শোনাও হারাম নয়। তবে যদি তাতে চটুলতা, কোমলতা অথবা আকর্ষণীয় ভঙ্গি থাকে তাহলে তা হারাম—স্বামী ব্যতীত অন্য পুরুষদের জন্য। কারণ আল্লাহ বলেন:
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا
“হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা সাধারণ নারীদের মতো নও, যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর। অতএব তোমরা কোমলভাবে কথা বলো না, যাতে যার অন্তরে ব্যাধি আছে সে কুমতলব করে না বসে। আর তোমরা স্বাভাবিকভাবে কথা বলো।” [সূরা আহযাব, আয়াত: ৩২]
এই ফতোয়ায় স্বাক্ষরদানকারী আলেমগণ হলেন:
– শায়খ আব্দুল আজিজ ইবনে বায
– শায়খ আব্দুর রাযযাক আফিফি
– শায়খ আব্দুল্লাহ গুদাইয়ান
– শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনে কুউদ
[ফতোয়ায়ে লাজনাহ দায়েমাহ ১৭/২০২]
সারসংক্ষেপ: আপনি ইন্টারনেটে যে অডিও ক্লিপটি প্রচার করতে চান তা যদি উপকারী কোনও বিষয়বস্তু নিয়ে হয় এবং এতে কণ্ঠে চটুলতা, কোমলতা, আকর্ষণ বা গান-মেজাজ না থাকে আর কণ্ঠ ছাড়া অন্য কিছু প্রকাশ না হয় তাহলে এতে কোনও দোষ নেই ইনশাআল্লাহ।
আর যদি ক্লিপটি শুধুমাত্র নারীদের জন্য নির্ধারিত হয় বা তাদের উদ্দেশ্য করেই প্রকাশ করা হয় তাহলে তা আরও উত্তম। আল্লাহু আলাম। আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত। [উৎস: islamqa]
❑ ফতোয়া-২: গণমাধ্যমে নারীর কণ্ঠস্বর শোনা এর শরয়ী বিধান কী?
আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ.-এর এর নিকট প্রশ্ন করা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে (যেমন: রেডিও, টেলিভিশন) অনেক প্রোগ্রাম নারীরা পরিচালনা করেন। এমনকি ইসলামি অনুষ্ঠানেও তারা উপস্থাপনা করে থাকেন। এ অবস্থায় মুসলিমদের জন্য তাদের কণ্ঠ শুনা কি বৈধ? উত্তরে তিনি বলেন, “নারীর কণ্ঠস্বর নিজেই সতর (পর্দা) নয়। বরং সতর হচ্ছে, তার কণ্ঠের কোমলতা, আকর্ষণীয়তা এবং ভঙ্গিমাপূর্ণভাবে কথা বলা। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ
“হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা সাধারণ নারীদের মতো নও, যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো। তবে কোমলভাবে কথা বলো না, যাতে যার অন্তরে রোগ আছে সে লালসা না পোষণ করে।” [সূরা আহজাব: ৩২]
প্রথমত: নারীদের রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদিতে ব্যবহার করা (অর্থাৎ তাদেরকে এসব মাধ্যমে উপস্থাপক বা বক্তা বানানো) উচিত নয়।
তবে যদি এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে একজন ব্যক্তি যদি অনুভব করে যে, তিনি ওই কণ্ঠস্বর শুনে আসক্ত হচ্ছেন, মন তাতে ঝুঁকছে, কিংবা কণ্ঠ শুনে উপভোগ করছেন তাহলে তার উচিত তা থেকে দূরে থাকা এবং না শোনা। অন্যদিকে, যদি কোনও উপকারী কথা থাকে যেমন: উপদেশ, সতর্কবাণী, বা প্রয়োজনীয় তথ্য আর শ্রোতা নিজে কোনও ধরনের আসক্তি বা শারীরিক চাহিদা অনুভব না করেন বরং নিছক উপকারের জন্য শোনেন তাহলে আশা করা যায়, এতে তার ধর্মীয় ক্ষতির কোনও আশঙ্কা নেই এবং এতে কোনও দোষ নেই। [উৎস: binbaz]
❑ ফতোয়া-৩: নারীর কণ্ঠে আবৃত্তি করা কবিতার ভিডিও ইন্টারনেটে প্রকাশ করার হুকুম কী?
প্রশ্ন: একটি ভিডিও ইন্টারনেটে আপলোড করার হুকুম কী, যাতে কোনও নারীর কণ্ঠে আবৃত্তি করা কবিতা রয়েছে? আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিন।
উত্তর: আলহামদু লিল্লাহ, ওয়া সাল্লাতু ওয়া সালামু ‘আলা রসূলিল্লাহ, ওয়া ‘আলা আলিহি ও সাহবিহি, আম্মা বাদ:
নারীর কণ্ঠস্বর শরিয়তের বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী নিজে সতর (পর্দা) নয়। তাই যদি উক্ত ভিডিও এবং তাতে আবৃত্তি করা কবিতা শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনও নিষিদ্ধ বিষয়বস্তু থেকে মুক্ত থাকে এবং আবৃত্তি কারী নারী পর্দা মেনে চলে এবং তার কণ্ঠে “খুযু বিল কাওল” (ভঙ্গিমাপূর্ণ কোমলতা ও আকর্ষণীয়তা) না থাকে তাহলে এমন ভিডিও ইন্টারনেটে প্রকাশ করার কোনও বাধা নেই। “মাতালিব উলি নুহা” গ্রন্থে কবিতা সম্পর্কে বলা হয়েছে:
ويباح مِنْه مَا لَا سُخْفَ فِيهِ غَيْرُ مُنَشِّطٍ عَلَى شَرٍّ، وَمُثَبِّطٍ عَنْ خَيْرٍ، إذْ الشِّعْرُ كَالْكَلَامِ حَسَنُهُ حَسَنٌ وَقَبِيحُهُ قَبِيحٌ
“যে কবিতায় অশ্লীলতা নেই, যা মন্দ কাজে উৎসাহ দেয় না বা ভালো কাজ থেকে বিরত রাখে না, তা বৈধ। কারণ, কবিতা কথাবার্তার মতোই ভালোটা ভালো আর মন্দটা মন্দ।”
অতএব এমন বৈধ কবিতা নারীর কণ্ঠে শোনাও বৈধ যদি তাতে কণ্ঠের কোমলতা না থাকে, কেউ তা শুনে কণ্ঠস্বর দ্বারা আসক্ত না হয় এবং তার দিকে তাকিয়ে উপভোগ না করে। আল মায়াবী ( المايابي) তাঁর نوازل العلوي শিরোনামের কবিতায় বলেন:
وكل ما له أبيح النظرُ فمع قصد لذة ينحظرُ
“যে সব কিছু দেখা বৈধ তা যদি ভোগের উদ্দেশ্যে দেখা হয় তবে তা নিষিদ্ধ হয়ে যায়।” আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার। সৌদি আরব।
No comments:
Post a Comment