প্রশ্ন: অসুস্থ ব্যক্তি (নারী পুরুষ) কিভাবে সালাত আদায় করবেন?
▬▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
প্রথমত: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর আলোচনার শুরুতেই আমরা একটি বিষয় পরিষ্কার করতে চাই আর তা হচ্ছে, ঈমানের স্তম্ভগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো তাকদীরের প্রতি ঈমান। কোন মুসলিমের ঈমান ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে জানবে যে, সে যাতে আক্রান্ত হয়েছে সেটা তাকে ভুল করে যাওয়ার ছিল না। আর যাতে সে আক্রান্ত হয়নি সেটাতে সে আক্রান্ত হওয়ার ছিল না। আল্লাহ্ তাআলা কোন মুমিনের তাকদীরে যে রোগবালাই, বিপদ-মুসিবত রেখেছেন সেগুলোর ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করা ছাড়া তার সাধ্যে আর কিছু নেই। ধৈর্য ধরা তার পূর্ণাঙ্গ ঈমানের আলামত। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাকে বেহিসাব পুরস্কার দিবেন। সুতরাং অসুস্থতা কিংবা অন্য কোন বিপদ আপদে একজন মুসলিমের মনে এ চিন্তা আসা অনুচিত যে, আল্লাহ্ তার তাকদীরে যা রেখেছেন সেটা নিরেট অকল্যাণ। কেননা আল্লাহ্র কর্মে নিরেট অকল্যাণ নেই। বান্দার উপর আল্লাহ্ যা তাকদীর করেন (নির্ধারণ করেন) এ ক্ষেত্রে আল্লাহ্র প্রজ্ঞাপূর্ণ গূঢ় রহস্য রয়েছে।ব্যক্তি যে অবস্থার মধ্যে আছেন হতে পারে এর মধ্যে প্রভুত কল্যাণ রয়েছে; যা তিনি জানেন না। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “এমনও হতে পারে যে, তোমরা একটা জিনিস অপছন্দ করছ অথচ আল্লাহ্ তার মধ্যে অনেক কল্যাণ রেখেছেন।”(সূরা নিসা, আয়াত: ১৯) প্রখ্যাত সাহাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ্ যার কল্যাণ চান তাকে বিপদগ্রস্ত করেন।”(সহিহ বুখারী হা/৫৬৪৫) বিপদগ্রস্ত করেন: অর্থাৎ বিপদের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন যাতে করে এই বিপদের বিনিময়ে তাকে সওয়াব দিতে পারেন।
.
অতএব এই প্রতিবন্ধত্বের মাধ্যমে আল্লাহ্ ব্যক্তিকে পরীক্ষা করার অর্থ এ নয় যে, আল্লাহ্ তাকে ভালবাসেন না। বরং হতে পারে এর বিপরীতটাই ঠিক। প্রখ্যাত সাহাবী আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় বিপদ যত বড় প্রতিদান তত বড়। নিশ্চয় আল্লাহ্ কোন কওমকে ভালবাসলে তাদেরকে পরীক্ষা করেন।অতএব, যে সন্তুষ্ট হয় তার জন্য রয়েছে সন্তুষ্টি। আর যে অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য রয়েছে অসন্তুষ্টি।”(সুনানে তিরমিযি হা/২৩৯৬; সুনানে ইবনে মাজাহ হা/৪০৩১)
ধৈর্যশীল সওয়াবপ্রত্যাশী বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি সর্বাধিক বড় উপকার যেটা পাবে সেটা হল তার রবের সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাত করা যে, তার কোন গুনাহ নেই। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“মুমিন নর ও নারীর নিজের জান, সন্তান ও সম্পদের উপর বিপদ আসতেই থাকে; এক পর্যায়ে সে এমন অবস্থায় আল্লাহ্র সাথে সাক্ষাত করে যে, তার কোন গুনাহ নেই।”(সুনানে তিরমিযি হা/২৩৯৯) এ কারণে ধৈর্যশীল সওয়াবপ্রত্যাশী বিপদগ্রস্ত মানুষেরা কিয়ামতের দিন মহান মর্যাদার অধিকারী হবেন। এমনকি দুনিয়াতে যারা সুস্থ ছিল তারা কামনা করবে যদি তারাও তাদের মত হত। জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “কিয়ামতের দিন পরীক্ষার শিকার লোকদেরকে যখন পুরস্কার দেয়া হবে তখন সুস্থ লোকেরা কামনা করবে যদি দুনিয়াতে তাদের চামড়াগুলো কাঁচি দিয়ে কাটা হত।(সুনানে তিরমিযি হা/২৪০২) আমরা মহান আল্লাহর নিকট দুনিয়াবি যাবতীয় রোগ-বালাই ও বিপদ-মুসিবত থেকে নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।
.
.
দ্বিতীয়ত: এ বিষয়টি জানা জরুরি যে, রোগী হওয়া সত্ত্বেও নামাজ কখনোই মাফ নয়। বরং, ইসলামে নামাজ সর্বাবস্থায়ই ফরজ স্বাস্থ্যবান হোক বা অসুস্থ, প্রত্যেক মুমিন নারী-পুরুষের জন্য তা আদায় করা আবশ্যক। যতক্ষণ পর্যন্ত তার বোধশক্তি অক্ষুণ্ন থাকে, ততক্ষণ অবশ্যই তাকে নামাজ পড়তে হবে, সে যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন।যদি তার ওযু বা গোসলের সামর্থ্য না থাকে, তবে তায়াম্মুম করতে হবে। আর যদি তায়াম্মুমও করা সম্ভব না হয়, তাহলেও নামাজ পড়তে হবে বিনা ওযু, বিনা তায়াম্মুম, এমনকি অপবিত্র অবস্থাতেও। আবার পবিত্র জায়গায় নামাজ আদায় করা আবশ্যক কিন্তু পবিত্র জায়গা না পেলে অপবিত্র স্থানেই নামাজ আদায় করতে হবে, কারণ ইসলামে নামাজ বর্জনের কোনো অনুমতি নেই। রোগী যদি দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে না পারে, তাহলে বসে নামাজ পড়বে। বসার ক্ষেত্রে হাঁটু গেড়ে বাবুর মতো বসা উত্তম, যেমনটি কোনো কোনো সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ-ও করেছেন (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৮২৭)। সাহাবি আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) অসুস্থ অবস্থায় এভাবেই নামাজ আদায় করতেন। কেউ চাইলে তাশাহহুদের বৈঠকের ভঙ্গিতে বসেও নামাজ পড়তে পারে
(ফিকহুস সুন্নাহ্ আরবী; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৪৩) আবার বসে নামাজ পড়া সম্ভব না হলে ডান পার্শ্বে শুয়ে সালাত আদায় করবে, তাও সম্ভব না হলে চিৎ হয়ে শুয়ে মাথা কিছুটা উঁচু করে কেবলার দিকে মুখ ও পা রেখে নামাজ পড়বে। আবার এমনও হতে পারে ব্যাক্তি দাঁড়াতে সক্ষম কিন্তু বসতে অপারগ তাহলে দাঁড়িয়েই নামাজ আদায় করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:“তোমরা দাঁড়িয়ে, বসে এবং পার্শ্বে শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ কর।”(সূরা আন-নিসা: ১০৩) তিনি আরও বলেন: “তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী।”(সূরা আত-তাগাবুন: ১৬)
ইমরান ইবনু হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,”আমার অর্শরোগ ছিল। তাই আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর খিদমতে ছালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম, তিনি বললেন, দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করবে, তা না পারলে বসে; যদি তাও না পার তাহলে শুয়ে”।(সহীহ বুখারী, হা/১১১৭)।
.
কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও যদি রোগী বসে না পড়ে দাঁড়িয়ে নামায পড়ে, তাহলে তার জন্য রয়েছে ডবল সওয়াব। একদা একদল লোকের নিকট মহানবী (ﷺ) বের হয়ে দেখলেন, তারা অসুস্থতার কারণে বসে বসে নামায পড়ছে। তা দেখে তিনি বললেন, “বসে নামায পড়ার সওয়াব দাঁড়িয়ে নামায পড়ার সওয়াবের অর্ধেক।” অনুরুপ বসে নামায পড়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যদি আরামনেওয়ার জন্য রোগী শুয়ে নামায পড়ে তাহলে তার জন্য রয়েছে অর্ধেক সওয়াব। (সহীহ বুখারী হা/১১১৫) যতটা সম্ভব দাঁড়িয়ে এবং যতটা প্রয়োজন বসেও নামায পড়তে পারে। বৃদ্ধ বয়সে মহানবী (ﷺ) রাতের নামাযে বসে ক্বিরাআত করতেন। অতঃপর ৩০/৪০ আয়াত ক্বিরাআত বাকী থাকলে তিনি উঠে তা পাঠ করে রুকূ করতেন। (সহীহ বুখারী হা/১১১৮) রোগী সাধ্যমত রুকূ-সিজদাহ করবে। না পারলে মস্তক দ্বারা ইঙ্গিত করবে। রুকূর চাইতে সিজদার সময় অধিক ঝুঁকবে। তা সম্ভব না হলে চোখের ইশারায় রুকূ-সিজদাহ করবে। রুকূর চাইতে সিজদার ক্ষেত্রে চক্ষুকে অধিকতর নিমীলিত করবে। হাত বা আঙ্গুল দ্বারা ইশারা বিধিসম্মত নয়। কারণ, অনুরুপ নির্দেশ শরীয়তে আসেনি।চক্ষু দ্বারা ইশারা সম্ভব না হলে অন্তরে (কল্পনায়) কিয়াম, রুকূ ও সিজদা আদির নিয়ত করে তকবীর, কিরাআত ও দুআ-দরুদ পাঠ করবে।আত্মাকে কষ্ট দিয়ে সাধ্যের অতীত আমল করা শরীয়তে পছন্দনীয় নয়। সিজদাহ মাটিতে না করতে পারলে কোন জিনিস উঁচু করে বা তুলে তাতে সিজদাহ করা বৈধ নয়। একদা মহানবী (ﷺ) এক রোগীকে দেখা করতে গিয়ে দেখলেন, সে বালিশের উপর সিজদাহ করছে। তিনি তা নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। সে একটি কাঠ নিলে কাঠটাকেও ছুঁড়ে ফেললেন। অতঃপর বললেন, “যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে মাটিতে নামায পড় (সিজদাহ কর)। তা না পারলে কেবল ইশারা কর। আর তোমার রুকূর তুলনায় সিজদাকে অধিক নিচু কর।” (ত্বাবারানী, মু’জাম, বাযযার, বায়হাকী, সিলসিলাহ সহীহাহ হা/৩২৩) অবশ্য দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পড়ে যাওয়ার ভয় হলে দেওয়াল বা খুঁটিতে ভর করে দাঁড়াতে পারে। মহানবী (ﷺ) যখন বৃদ্ধ হয়ে পড়লেন এবং স্বাস্থ্য মোটা হয়ে গেল, তখন তাঁর নামাযের জায়গায় একটি খুঁটি বানানো হয়েছিল; যাতে তিনি ভর করে নামায পড়তেন। (আবূ দাঊদ,সিলসিলাহ সহীহাহ হা/ ৩১৯) রোগী হলেও প্রত্যেক নামায যথাসময়ে পড়বে। না পারলে জমা করার নিয়ম অনুযায়ী ২ ওয়াক্তের নামায জমা করে পড়বে। অসুস্থ অবস্থায় পূর্ণরুপে নামায আদায় করতে সক্ষম না হলেও সুস্থ অবস্থার মত পূর্ণ সওয়াব লাভ হয়ে থাকে রোগীর। মহানবী (ﷺ) বলেন, “বান্দা যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে অথবা সফর করে, তখন আল্লাহ তাআলা তার জন্য সেই সওয়াবই লিখে থাকেন, যে সওয়াব সে সুস্থ ও ঘরে থাকা অবস্থায় আমল করে লাভ করত।”(মুসনাদে আহমেদ, সহীহুল জামে হা/৭৯৯) অসুস্থতার সময় রোগীর বেকার বসে বা শুয়ে থাকার সময়। এ সময়কে মূল্যবান জেনে আল্লাহর যিকির করা উচিৎ রোগীর। কষ্টের সময়ে কেবল তাঁরই সকাশে আকূল আবেদনের সাথে নফল নামায ও খাস মুনাজাত করার এটি একটি সুবর্ণ সময়। রাত্রে বহু রোগীর ঘুম আসে না। এমন অনিদ্রায় ফালতু রাত্রি অতিবাহিত না করে তাহাজ্জুদ পড়ে রোগী তার পরপারের জন্য সম্বল বৃদ্ধি করতে পারে। (বিস্তারিত জানতে সালাতে মুবাশ্বির বইটি পড়তে পারেন)।
.
অসুস্থ ব্যক্তি (নারী পুরুষ) কিভাবে সালাত আদায় করবেন? এমনকি একটি প্রশ্ন:সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:
.
জবাবে তারা বলেছেন:
.
(১)- অসুস্থ ব্যক্তির উপর তার সাধ্যমত দাঁড়িয়ে নামায পড়া ওয়াজিব।
.
(২)- যে ব্যক্তি দাঁড়াতে পারবে না সে বসে বসে নামায পড়বে। উত্তম হলো দাঁড়ানোর সকল স্থানে চারজানু হয়ে বসবে।
.
(৩)- যদি বসে নামায পড়তে অক্ষম হয় তাহলে শোয়া অবস্থায় কাত হয়ে কিবলামুখী হয়ে। ডান কাত হয়ে পড়া মুস্তাহাব।
.
(৪)- যদি কাত হয়ে নামায পড়তে অক্ষম হয় তাহলে চিৎ হয়ে শুয়ে দুই পা কিবলামুখী করে নামায পড়বে।
.
(৫)- যে ব্যক্তি দাঁড়াতে সক্ষম, কিন্তু রুকু-সিজদা করতে পারে না, তার দাঁড়ানো মওকূফ হয়ে যাবে না। বরং সে দাঁড়িয়ে নামায পড়বে। ইশারায় রুকু দিবে। এরপর বসবে এবং ইশারায় সিজদা দিবে।
.
(৬)- তার চোখে যদি কোনো রোগ থাকে এবং কোন নির্ভরযোগ্য ডাক্তার বলেন: আপনি চিৎ হয়ে শুয়ে নামায পড়লে আপনার চিকিৎসা করা সম্ভব; অন্যথায় নয় তাহলে সে চিৎ হয়ে শুয়ে নামায পড়তে পারবে।
.
(৭)- যে ব্যক্তি রুকু-সিজদা করতে অক্ষম সে ইশারায় রুকু-সিজদা করবে। সিজদায় রুকুর চেয়ে বেশি নিচু হবে।
.
(৮)- যে ব্যক্তি শুধু সিজদা দিতে অক্ষম সে রুকু দেওয়ার পর ইশারা-ইঙ্গিতে সিজদা দিবে।
.
(৯)- যে ব্যক্তির জন্য পিঠ বাঁকা করা সম্ভব নয় সে ঘাড় নিচু করবে। যার পিঠ বাঁকা হয়ে রুকুকারীর মতো অবস্থা হয়ে গিয়েছে সে যখন রুকু করতে চাইবে তখন আরেকটু বেশি নোয়াবে। আর সিজদায় সে তার চেহারাকে যতটুকু সম্ভব যমীনের কাছে নিয়ে যাবে।
.
(১০)- যদি সে মাথা দিয়ে ইশারা করতে না পারে তাহলে তাকবীর দিয়ে ক্বিরাত পড়বে এবং মনে মনে দাঁড়ানো, রুকু করা, রুকু থেকে ওঠা, সিজদা করা, সিজদা থেকে ওঠা, দুই সিজদার মাঝে বসা, তাশাহ্হুদের জন্য বসার নিয়ত করবে এবং এই অবস্থাগুলোর যিকিরসমূহ পড়বে। কিছু অসুস্থ লোক আঙুল দিয়ে ইশারা করে নামায পড়ে এর কোনো ভিত্তি নেই।
.
(১১)- অসুস্থ ব্যক্তি নামাযরত অবস্থায় কোনো অক্ষমতা থেকে সক্ষম হলে; যেমন: দাঁড়ানো, বসা, রুকু দেওয়া, সিজদাহ করা বা ইঙ্গিত করার সক্ষমতা অর্জন করলে সে উক্ত সক্ষমতার অবস্থায় স্থানান্তরিত হবে এবং নামাযের বাকি অংশ সেভাবে পূর্ণ করবে।
.
(১২)- অসুস্থ ব্যক্তি অথবা অন্য কোন ব্যক্তি কোন নামায না পড়ে ঘুমিয়ে গেলে অথবা নামায পড়তে ভুলে গেলে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া কিংবা স্মরণে আসার সাথে সাথে তার জন্য সেই নামায পড়া ওয়াজিব। এই নামায পড়ার জন্য অনুরূপ নামাযের ওয়াক্ত প্রবেশ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করা তার জন্য জায়েয নেই।
.
(১৩)- কোনো অবস্থাতেই নামায ছেড়ে দেওয়া জায়েয নেই। বরং শরয়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সর্বাবস্থায় নামাযের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে; সেটা সুস্থ-অসুস্থ উভয় অবস্থায়। কারণ এটি ইসলামের খুঁটি এবং শাহাদাতাইনের (সাক্ষ্যদ্বয়ের) পরে সবচেয়ে বড় ফরয। তাই কোনো মুসলিম অসুস্থ হলেও তার যদি আকল-বুদ্ধি ঠিক থাকে তাহলে তার জন্য নামায ছেড়ে দেওয়া জায়েয নাই যে, এক পর্যায়ে ওয়াক্ত পার হয়ে যাবে। বরং তার উপর ওয়াজিব পূর্বের প্রদত্ত বিবরণ অনুসারে সাধ্যমত যথাসময়ে নামায পড়া। কিছু কিছু রোগী সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত নামায পেছাতে থাকে। এটা জায়েয নেই। পবিত্র শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই।
.
(১৪)- অসুস্থ ব্যক্তির জন্য প্রত্যেক ওয়াক্তের নামায স্ব স্ব ওয়াক্তে পড়া কষ্টকর হয়ে গেলে তিনি যোহর ও আসর একত্রে পড়তে পারেন এবং মাগরিব ও এশা একত্রে পড়তে পারেন। তার সুবিধামত অগ্রিম একত্রিতকরণ বা বিলম্বে একত্রিতকরণ করতে পারেন। তিনি চাইলে যোহরের সাথে আসরকে অগ্রিম পড়তে পারেন। আবার যোহরকে পিছিয়ে আসরের সাথে পড়তে পারেন। তিনি চাইলে মাগরিবের সাথে এশাকে অগ্রিম পড়তে পারেন। আবার মাগরিবকে পিছিয়ে এশার সাথেও পড়তে পারেন। আর ফজরকে আগের অথবা পরের কোনো নামাযের সাথে একত্রে পড়তে পারবেন না। কারণ ফজরের ওয়াক্ত এর আগের ও পরের কোনো ওয়াক্ত থেকে বিচ্ছিন্ন।আল্লাহই তৌফিকদাতা। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবারবর্গ ও তাঁর সাহাবীদের উপর।ফতুয়া প্রদানকারী;শাইখ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায, শাইখ আব্দুল আযীয আলুশ শাইখ,শাইখ আব্দুল্লাহ ইবনে গুদাইয়্যান,শাইখ সালেহ আল-ফাউযান এবং শাইখ বকর আবু যাইদ। (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ২৪; পৃষ্ঠা: ৪০৫; ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১০৫৩৫৬)।
.
পরিশেষে আমরা আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন অসুস্থ মুসলমানদেরকে সুস্থ করে দেন, তাদেরকে ধৈর্য রাখা ও সন্তুষ্ট থাকার তাওফিক দেন এবং তাদেরকে উত্তম বিনিময় দান করেন। আমীন! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
No comments:
Post a Comment