Saturday, July 19, 2025

সালাতুল ইস্তিখারার সালাত সম্পর্কে বিস্তারিত

 প্রশ্ন: সালাতুল ইস্তিখারার সালাত কীভাবে পড়তে হয়, কী দোয়া করা হবে এবং রাকাআত সংখ্যা কত?

▬▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। অতঃপর ইস্তেখারার সালাত আদায় করা সুন্নত। যে ব্যক্তি কোনো কাজ করতে চাইছে কিন্তু দ্বিধা দ্বন্দে ভুগছে তার জন্য নবী (ﷺ) এই বিধান প্রদান করেছেন। ইস্তেখারার বিধান প্রদানের গূঢ় রহস্য হলো এর মাধ্যমে আল্লাহর ফয়সালার কাছে আত্মসমর্পণ করা। চার মাযহাব এই বিষয়ে একমত যে ইস্তেখারা এমন সকল বিষয়ে করা যায় যেগুলোর ক্ষেত্রে কোনটি সঠিক তা বান্দা জানে না। আর দোয়া করতে হয় সালাতের পরে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে হাদীসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে। ইস্তেখারার সালাত নিয়ে আমরা কমপক্ষে ১০টি পয়েন্টে আলোচনা করার চেষ্টা করবো যেমন: (১)। সালাতুল ইস্তেখারার পরিচিতি (২)। ইস্তেখারার উদ্দেশ্য ও হুকুম (কেন আদায় করতে হয়) (৩)। ইস্তেখারার গূঢ় রহস্য বা গুরুত্ব কি! (৪)। ইস্তেখারার সালাত আদায়ের সময় এবং কতবার পড়া উচিত? (৫)। ইস্তেখারার সালাতের রাকআত সংখ্যা ও সূরা (কোন সূরা দিয়ে পড়া উচিত) (৬)। ইস্তেখারা কখন শুরু করা উচিত,(৭)। ইস্তেখারার আগে বা পরে কি ধরণের পরামর্শ বা প্রস্তুতি নেয়া উচিত (৮)। ইস্তেখারায় কী পড়তে হয়;(৯)। ইস্তেখারার দোয়া কখন পড়তে হয়; (১০)। ইস্তেখারার দোয়াটি কি দেখে দেখে পড়া যাবে? নাকি না দেখে মুখস্থ পাঠ করতে হবে ইত্যাদি।
.
❑প্রথম পয়েন্ট: সালাতুল ইস্তেখারার পরিচিতি:
.
আরবি ‘ইস্তিখারা’استخارة শব্দের অর্থ হলো কল্যাণ কামনা করা, ভালো কিছু চাওয়া। বলা হয়: استَخِرِ الله يَخِرْ لك “অর্থাৎ তুমি আল্লাহর কাছে ইস্তিখারা (বাছাইকরণ প্রার্থনা) করো তিনি তোমার জন্য বাছাই করে দিবেন।ইমাম ইবনে হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,”ইস্তিখারা শব্দটি বিশেষ্য। আল্লাহ্‌র কাছে ইস্তিখারা করা মানে কোন একটি বিষয় বাছাই করার ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র সাহায্য চাওয়া। উদ্দেশ্য হচ্ছে, যে ব্যক্তিকে দুটো বিষয়ের মধ্যে একটি বিষয় বাছাই করে নিতে হবে, সে যেন ভালটিকে বাছাই করে নিতে পারে সে প্রার্থনা।
.
শরীয়তের পরিভাষায় ইস্তিখারা হলো,যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করলে, কাজটি করার পূর্বে আল্লাহর সাথে পরামর্শ পথনির্দেশনা চেয়ে সেই কাজটির মধ্যে কল্যাণ প্রার্থনা করা এবং কাজটিতে কোনো অকল্যাণ থাকলে আল্লাহ্ যেন তা দূর করে দেন এবং সঠিক পথনির্দেশ দেখিয়ে দেন, সেটি কামনা করা। অর্থাৎ যেকোন বৈধ বিষয় বা কাজে (যেমন ব্যবসা, সফর, বিবাহের ব্যাপারে) ভালো মন্দ বুঝতে না পারলে, মনে ঠিক-বেঠিক, উচিৎ-অনুচিত বা লাভ-নোকসানের দ্বন্দ্ব হলে আল্লাহর নিকট মঙ্গল প্রার্থনা করতে দুই রাকআত নফল সালাত পড়ে ইস্তিখারার দু’আ পাঠ করা সুন্নত। আরো সহজ করে বলতে গেলে ইস্তিখারা করা হয় দুটো বৈধ কাজের মধ্যে কোনো একটিকে প্রাধান্য দেওয়ার ক্ষেত্রে। ধরুন, একই সাথে দুটো চাকরির অফার এসেছে। দুটো চাকরিই হালাল। বুঝতে পারছেন না, কোনটিতে জয়েন করবেন কিংবা কোনটি আপনার জন্য অধিক কল্যাণকর হবে। তখন আপনি ইস্তিখারা করবেন। আশা করা যায়, আল্লাহ আপনাকে সঠিক পথ দেখাবেন।।
.
❑দ্বিতীয় পয়েন্ট: ইস্তেখারার হুকুম কি:
.
আহালুস আলেমগন এ বিষয়ে একমত যে ইস্তেখারা করা সুন্নত। ইস্তেখারা শরয়ি বিধান হওয়ার দলীল হলো সহিহ বুখারীতে বর্ণিত হাদীস,জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে আমাদেরকে কুরআনের সূরা শেখাতেন সেভাবে সকল বিষয়ে ইস্তেখারা করা শেখাতেন। তিনি বলতেন: যখন তোমাদের কেউ কোন কাজের ইচ্ছা করে তখন সে যেন ফরয নয় এমন দুই রাকাত সালাত আদায় করে নেয়, অতঃপর বলে:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي أَوْ قَالَ: عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ، فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ، اللَّهُمَّ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي أَوْ قَالَ: عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ، فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِي الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ ارْضِنِي بِهِ.
“হে আল্লাহ! আমি আপনার জ্ঞানের মাধ্যমে আপনার কাছে বাছাইকরণ প্রার্থনা করছি। আপনার ক্ষমতার মাধ্যমে আপনার নিকট সক্ষমতা প্রার্থনা করছি এবং আপনার মহান অনুগ্রহের প্রার্থনা করছি। কেননা আপনিই ক্ষমতা রাখেন; আমি রাখি না। আপনিই জানেন; আমি জানি না এবং আপনি গায়েবী বিষয়াবলী সম্পর্কে সম্যক অবগত। হে আল্লাহ! আপনার জ্ঞানে আমার এ কাজ (নিজের প্রয়োজনের নামোল্লেখ করবে) আমার দ্বীনদারির, জীবিকার ও সিদ্ধান্তের পরিণামে ভালো হলে কিংবা বলবে আমার বর্তমান ও ভবিষ্যত জীবনের জন্য ভালো হলে আপনি তা আমার জন্য নির্ধারণ করে দিন। সেটা আমার জন্য সহজ করে দিন, এরপর তাতে বরকত দিন। হে আল্লাহ্‌! আর যদি আপনার জ্ঞানে আমার এ বিষয়টি আমার দ্বীনদারির, জীবিকার ও সিদ্ধান্তের পরিণামে মন্দ হয় কিংবা বলবে আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য মন্দ হয়, তবে আপনি আমাকে তা থেকে ফিরিয়ে দিন এবং সেটাকেও আমার থেকে ফিরিয়ে রাখুন। আমার জন্য যেখানে কল্যাণ আছে সেটি নির্ধারণ করুন, এরপর সেটার প্রতি আমাকে সন্তুষ্ট করে দিন।”(সহীহ বুখারী হা/১১৬৬) হাদিসটি ইমাম বুখারী তার গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে বর্ণনা করেন। কিছু স্থানে أرضني به এর পরিবর্তে رضّني به রয়েছে]
.
❑তৃতীয় পয়েন্ট: ইস্তেখারার সালাতের বিধান আরোপের গূঢ় রহস্য:
.
ইস্তেখারার সালাতের বিধান আরোপের গূঢ় রহস্য হলো নিজের সামর্থ্য ও শক্তি থেকে বের হয়ে আল্লাহর ফয়সালার প্রতি নিজেকে সমর্পণ করা এবং তাঁর কাছে ধর্ণা দেয়া; যাতে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় কল্যাণ নিশ্চিত করা যায়। এর জন্য মহান রবের দরজায় কড়া নাড়ার প্রয়োজন হয়। আর এই কাজে সালাত ও দোয়ার চেয়ে উপকারী কিছু নেই। কারণ সালাত ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহকে সম্মান করা হয়, তাঁর প্রশংসা জ্ঞাপন করা হয় এবং কথায়-কাজে তার মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করা হয়। ইস্তেখারা করার পর তার মন যেদিকে ধাবিত হয় সেটাই সে বাস্তবায়ন করবে।
.
ইমাম গাজ্জালী (রাহিমাহুল্লাহ) ইহইয়াউ ‘উলূমিদ্দীন-এ বলেন:” قال بعض الحكماء : من أُعطي أربعا لم يُمنع أربعا : من أُعطي الشكر لم يُمنع المزيد ، ومن أُعطي التوبة لم يُمنع القبول ، ومن أٌعطي الاستخارةَ لم يُمنع الخِيَرة ، ومن أُعطي المشورة لم يُمنع الصواب “হিকমতশাস্ত্রবিদেরা বলেছেন—”যাকে চারটি জিনিস দেওয়া হয়েছে,তাকে চারটি জিনিস থেকে বঞ্চিত করা হয় না। যে (আল্লাহর প্রতি) কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে,তাকে অধিক দেওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয় না,যে তাওবা করে, তার তাওবা কবুল হওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয় না, যে ইস্তিখারা করে, তাকে কল্যাণকর ফায়সালা থেকে বঞ্চিত করা হয় না,এবং যে পরামর্শ করে,তাকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো থেকে বঞ্চিত করা হয় না।” (গাজ্জালী ইহইয়াউ ‘উলূমিদ্দীন; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২০৬)
.
ইবনু আবিদ্দুনিয়া ‘আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্টি’ গ্রন্থে এবং অন্যত্র তার সনদে ওহব ইবনু মুনাব্বিহ (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণনা করেন, ওহব ইবন মুনাব্বিহ (রহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:قال داود عليه السلام : رب ! أي عبادك أبغض إليك ؟ قال : عبد استخارني في أمر ، فخرت له ، فلم يرض به “দাঊদ (আলাইহিস সালাম) বললেন: “হে আমার প্রতিপালক! তোমার বান্দাদের মধ্যে কে তোমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে ঘৃণিত?” আল্লাহ বলেন: “সে বান্দা, যে আমার কাছে কোনো বিষয়ে ইস্তেখারা করল, আমি তার জন্য সে বিষয়ে উত্তমটাই নির্ধারণ করলাম, কিন্তু সে তাতে সন্তুষ্ট হলো না।”(আর-রিদা ‘আনিল্লাহি বিক্বাদায়িহি; পৃষ্ঠা: ৯২) ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন— এই বর্ননার মাধ্যমে বোঝা যায়, আল্লাহর ফয়সালায় অসন্তুষ্ট হওয়া কত নিকৃষ্ট আচরণ; বিশেষ করে যখন কেউ নিজেই আল্লাহর কাছে উত্তম চেয়ে নেয় এবং তারপর তা মেনে না নেয়।”(ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ওয়াবিলুস সাইয়িব; পৃষ্ঠা: ১৫৭)
.
❑চতুর্থ পয়েন্ট: ইস্তেখারা করার কারণ তথা যে সমস্ত ক্ষেত্রে ইস্তেখারা করতে হয়:
.
ইস্তেখারার কারণ (যে সমস্ত ক্ষেত্রে ইস্তেখারা করতে হয়) হলো: ফিকহী চার মাযহাব একমত যে ইস্তেখারা এমন সকল বৈধ বিষয়ে করতে হয় যেগুলোতে সঠিক সিদ্ধান্ত কী তা বান্দা জানে না। অন্যদিকে যে বিষয়গুলো ভালো নাকি মন্দ তা জানা বিষয়, যেমন: ইবাদত, ভালো কাজ, পাপ কাজ সেগুলোতে ইস্তেখারা করা নিষ্প্রয়োজন। তবে যদি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করতে চায়; যেমন: শত্রু বা ফিতনার আশঙ্কা করার কারণে এই বছরে হজ্জ করবে কিনা? কিংবা অমুক ব্যক্তিকে সঙ্গী হিসেবে নিবে কিনা? সুতরাং ফরজ বা ওয়াজিব, হারাম ও মাকরূহ এই তিনটির কোনোটির ক্ষেত্রে ইস্তেখারা করা যাবে না। ইস্তিখারা করতে হবে কেবল মুস্তাহাব ও মুবাহ (বৈধ) ক্ষেত্রে। মুস্তাহাব বিষয়ের মূল বিধানের ক্ষেত্রে ইস্তেখারা করা যাবে না; কেননা মুস্তাহাব তো কাম্য। কেবল তখনই ইস্তেখারা করা যাবে যখন সাংঘর্ষিক হবে। অর্থাৎ যদি ব্যক্তির কাছে দু’টো মুস্তাহাব বিষয়ের মাঝে পারস্পরিক সংঘর্ষ দেখা দেয় যে সে কোনটি দিয়ে শুরু করবে কিংবা কোনটির মধ্যে নিজেকে সীমিত রাখবে? অন্যদিকে মুবাহ (বৈধ) বিষয়ের মূল কাজের ক্ষেত্রে ইস্তেখারা করা যাবে। দেখুন: ইমাম নববী, শারহু সহীহ মুসলিম; খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ২২৪; ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১১৯৮১)
.
আল মাওযূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ আল-কুয়েতিয়াহ, কুয়েতি ফিক্বহ বিশ্বকোষ গ্রন্থে এসেছে: فالاستخارة لا محل لها في الواجب والحرام والمكروه, وإنما تكون في المندوبات والمباحات، والاستخارة في المندوب لا تكون في أصله; لأنه مطلوب, وإنما تكون عند التعارض, أي إذا تعارض عنده أمران أيهما يبدأ به أو يقتصر عليه ؟ أما المباح فيستخار في أصله“ইস্তিখারার স্থান (প্রয়োগ) ফরয, হারাম ও মাকরূহ কাজের ক্ষেত্রে নয়; বরং তা মুস্তাহাব ও মুবাহ (নিরপেক্ষ) কাজের জন্য নির্ধারিত। মুস্তাহাব কাজের ক্ষেত্রে ইস্তিখারা মূলত তার মৌলিক স্বভাববিরুদ্ধ কারণ এমন কাজ তো পূর্ব থেকেই কাম্য ও উৎসাহিত তবে ইস্তিখারার প্রয়োজন হয় তখন, যখন দুটি মুস্তাহাব কাজ পরস্পর সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ে, এবং মানুষ সংশয়ে পড়ে যে, কোনটি আগে করবে অথবা কোন একটিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে কি না। আর মুবাহ কাজের ক্ষেত্রে ইস্তিখারা তার প্রকৃত অবস্থানেই হয়।”(আল মাওযূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২৪৩)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল:সম্মানিত শাইখ! ইস্তিখারার দুই রাকাআত সলাত কি কি শুধুমাত্র সেইসব বিষয়ে পড়া যায়, যে, যেখানে কল্যাণ বা অকল্যাণ অনির্দিষ্ট? নাকি এমন কাজের জন্যও ইস্তিখারা করা যায় যেগুলো বাহ্যিকভাবে ভালো ও কল্যাণজনক মনে হয়—যেমন: মসজিদের ইমামতি গ্রহণ, কোনো সৎ নারীর বিয়ের প্রস্তাব গ্রহণ ইত্যাদি? উত্তরে তিনি বলেন:
صلاة الاستخارة أن الإنسان إذا هم بأمر وتردد في عاقبته فإنه يستخير الله أي : يسأل الله خير الأمرين : الإقدام أو الترك ، ولكنه لا يستخير في كل شيء ، يعني : ليس للإنسان إذا أراد أن يتغدى أن يقول : أستخير الله . إذا أراد أن يذهب يصلي مع الجماعة أن يقول : أستخير الله ، إنما يستخير الله في أمر لا يدري ما عاقبته ، ومن ذلك : إمامة المسجد ، لو عرض عليه إمامة المسجد ولم يترجح عنده الإقدام أو الترك فليستخر الله ، فالإمامة من حيث هي خير في ذاتها ، لكن العاقبة ؛ لأن الإنسان لا يدري في المستقبل هل يقوم بواجب الإمامة أو لا يقوم ، وهل يستقر في هذا المسجد أو لا يستقر ، وهل يكون ملائماً للجماعة أو غير ملائم ، هو لا يستخير على أن الإمامة من حيث هي خير ، لكن العاقبة ، كم من إنسان كان إماماً في مسجد ثم لحقه من التعب وعدم القيام بالواجب والمشاكل مع الجماعة ما يتمنى أنه لم يكن إماماً ، كذلك المرأة الصالحة ، لكن لا أدري ما العاقبة .والمهم أن كل شيء تتردد فيه فعليك بالله ، الجأ إليه ، اسأله خير الأمرين “
ইস্তিখারার সালাত হচ্ছে মানুষ যখন কোনো বিষয়ে মনস্থির করে এবং তার পরিণতি সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত হয়, তখন সে আল্লাহর কাছে ইস্তিখারা করে; অর্থাৎ, আল্লাহর কাছে দু’টি বিষয়ের মধ্যে উত্তমটি প্রার্থনা করে সামনে অগ্রসর হওয়া অথবা পরিত্যাগ করা। তবে মনে রাখতে হবে, প্রতিটি বিষয়েই ইস্তিখারা করা হয় না। যেমন কেউ যদি ভাবছে দুপুরে কী খাবে, তখন সে বলবে না, “আল্লাহর কাছে ইস্তিখারা করি”। অথবা কেউ যদি জামাতে সালাত আদায় করতে যাচ্ছে, তখন বলবে না, “আমি ইস্তিখারা করব”।ইস্তিখারা কেবল তখনই করা হয়, যখন কোনো বিষয়ের ভবিষ্যৎ পরিণাম সম্পর্কে তার অজানা থাকে। এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, যেমন: মসজিদের ইমামতির প্রস্তাব। যদি কোনো ব্যক্তি ইমামতির প্রস্তাব পায় এবং তার কাছে সিদ্ধান্ত স্পষ্ট না হয়—সে বুঝতে না পারে যে, এতে অগ্রসর হবে নাকি সরে দাঁড়াবে—তাহলে সে আল্লাহর কাছে ইস্তিখারা করুক। ইমামতি নিজেই একটি কল্যাণময় বিষয়, কিন্তু ভবিষ্যৎ ফলাফল অজানা। হতে পারে, সে ইমামতির দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারবে না, অথবা মসজিদের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে না, অথবা স্থায়ী হতে পারবে না। অনেক সময় দেখা গেছে, কেউ মসজিদের ইমাম হয়েছে, কিন্তু পরবর্তীতে এত ভোগান্তি, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা, এবং মুসল্লিদের সঙ্গে সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছে যে, সে আফসোস করেছে: “ইমাম না হলেই ভালো হতো।” একইভাবে,কোনো নেককার মহিলাকে বিয়ে করার প্রস্তাব আসলে সেটার জন্যও ইস্তিখারা করা যেতে পারে—কেননা, আমরা জানি না এর শেষ পরিণতি কী হবে। মূল কথা হলো: যে কোনো বিষয়ে আপনি যদি দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে যান—অগ্রসর হবেন নাকি পিছিয়ে আসবেন—তাহলে ইস্তেখারার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ফিরে যান, তাঁর শরণাপন্ন হন, তাঁর কাছে আশ্রয় নিন এবং দুইয়ের মধ্যে উত্তমটি তাঁর কাছে চেয়ে নিন।”(ইবনু উসামীন; লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, ৮৫/১)।
❑পঞ্চম পয়েন্ট: ইস্তেখারা কখন করতে হয়? ইসলামি শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে দুই ক্ষেত্রে ইস্তিখারা করা যায়। যেমন:
.
(১)। যখন কেউ কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে চায়, তখন ইস্তিখারা করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করা। যেমন: কোনো কষ্টকর ঝুঁকিপূর্ণ সফরে বের হওয়ার আগে ইস্তিখারা করা। ইস্তিখারার পর যদি মন সায় দেয়, তবে বের হবে, অন্যথা অন্য চিন্তা করবে বা অন্যদিন বের হবে। এভাবে যেকোনো কাজ শুরু করার আগে ইস্তিখারা করা উত্তম।
.
(২)। যখন দুটো বৈধ কাজের মধ্যে কোনো একটিকে বেছে নিতে হয়, তখন ইস্তিখারার মাধ্যমে তুলনামূলক ভালো (better) কাজটি নির্বাচন করার জন্য আল্লাহর তাওফিক চাওয়া। বিশেষত, যে কাজটিতে অধিক কল্যাণ রয়েছে, সেটি কামনা করা। যেমন: একই সাথে দুটো চাকরি হলো বা দুটো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ এলো কিংবা বিয়ের দুটো প্রস্তাব এলো। এমতাবস্থায় একটিকে বেছে নিতে হবে, কিন্তু আপনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। তখন ইস্তিখারা করবেন। এরপর মন যেটির দিকে সায় দেবে, সেটি বেছে নেবেন।
.
জেনে রাখা ভাল যে, ইস্তেখারাকারীকে অবশ্যই মন খালি রাখতে হবে। তার মনে নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের প্রতি দৃঢ় প্রত্যয়ী হবে না। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বাণী “কোনো কাজের ইচ্ছা করে” ইঙ্গিত দেয় যে, যখন কোনো বিষয় তার অন্তরে প্রথম উপস্থিত হয় তখনই সে ইস্তেখারা করবে। সলাত ও দোয়ার বরকতে তার সামনে কোনটি কল্যাণকর তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু যদি বিষয়টি তার কাছে সুদৃঢ় হয়ে যায় এবং তাঁর প্রত্যয় তৈরি হয়ে যায় তখন তার মনে এর প্রতি ভালোবাসা ও আগ্রহ তৈরি হয়। এমন অবস্থায় সে যা করার প্রত্যয় করেছে সেটার প্রতি তীব্র টান থাকার কারণে সঠিক বিষয়টি তার অস্পষ্ট থেকে যেতে পারে। আবার হাদীসের কথা: ‘কোনো কাজের ইচ্ছা করে’ দ্বারা প্রত্যয়ও উদ্দেশ্য হতে পারে। কেননা ভাবনা স্থায়ী হয় না। সুতরাং ব্যক্তি এমন কিছুর ব্যাপারেই এগিয়ে যায় কোন ঝোঁকপ্রবণতা ছাড়া যা করার প্রতি সে আগ্রহী। নতুবা যদি প্রতিটি ভাবনায় সে ইস্তেখারা করে তাহলে এমন বিষয়েও সে ইস্তেখারা করবে যেটি তার অপ্রয়োজনীয়। ফলে তার সময়গুলো নষ্ট হবে।
.
❑ষষ্ঠ পয়েন্ট: ইস্তিখারার গুরুত্ব ও উপকারিতা:
.
জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ্ (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে প্রতিটি বিষয়ে (সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে) ইস্তিখারা করতে শেখাতেন, যেভাবে তিনি আমাদেরকে কুরআনের সুরা শেখাতেন।’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১১৬২]। ইস্তিখারা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। ইস্তিখারা করে কোনো কাজ করলে, সেই কাজে গতি পাওয়া যায় এবং এতে আল্লাহর সাহায্য থাকে। ইস্তিখারা করার মাধ্যমে হীনম্মন্যতা দূর হয় এবং মানসিকভাবে সুদৃঢ় থাকা যায়।
.
ইস্তিখারা করার পর আর পেছনে না তাকিয়ে কাজে নেমে পড়তে হয়। কারণ ইস্তিখারার পর যে সিদ্ধান্তটিতে মন সায় দেবে, সেটি আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে, ধরে নিতে হয়। এ ব্যাপারে উমার (রা.) বলেন, ‘কোনো কোনো মানুষ ইস্তিখারার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করে। তখন আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য (সিদ্ধান্ত) বাছাই করে দেন। কিন্তু (বাহ্যিক দৃষ্টিতে বান্দার কাছে তা কল্যাণকর মনে না হওয়ায়) সে আল্লাহর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়। এরপর যখন বিষয়টির সুন্দর পরিণাম দেখতে পায়, তখন বুঝতে পারে, সেই ফায়সালা তার জন্য কতো কল্যাণকর ছিলো।’(ইমাম ইবনুল মুবারক, কিতাবুয যুহদ: ১২৮)
.
❑সপ্তম পয়েন্ট: ইস্তেখারা করা কতটুকু সঠিক?
.
এই ব্যাপারে ইতিহাস বিখ্যাত ইমাম শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেন:“সে ব্যক্তি অনুতপ্ত হবে না যে স্রষ্টার নিকট ইস্তেখারা করে এবং মানুষের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার উপর অটল থাকে।” আল্লাহ তাআলা বলেন:“আর তুমি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মানুষের সাথে পরামর্শ কর। অত:পর আল্লাহর উপর ভরসা করে (সিদ্ধান্তে অটল থাক)। আল্লাহ ভরসাকারীদের পছন্দ করেন।“ [সূরা আলে ইমরান: ১৫৯] কাতাদা(রহঃ) বলেন: “মানুষ যখন আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পরে পরামর্শ করে তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সব চেয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার তাওফীক দেন।” ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: “আল্লাহ তায়ালার নিকট ইস্তেখারা করার পাশাপাশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ভাল লোকদের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার। কারণ, মানুষের জ্ঞান-গরিমা অপূর্ণ। সৃষ্টিগতভাবে সে দুর্বল। তাই যখন তার সামনে একাধিক বিষয় উপস্থিত হয় তখন কি করবে না করবে, বা কি সিদ্ধান্ত নিবে তাতে দ্বিধায় পড়ে যায়।(ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১১৯৮১)
.
❑ অষ্টম পয়েন্ট: ইস্তেখারা করার আগে পরামর্শ নেয়া:
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেন:يُسْتَحَبُّ أَنْ يَسْتَشِيرَ قَبْلَ الاسْتِخَارَةِ مَنْ يَعْلَمُ مِنْ حَالِهِ النَّصِيحَةَ وَالشَّفَقَةَ وَالْخِبْرَةَ، وَيَثِقُ بِدِينِهِ وَمَعْرِفَتِهِ. قَالَ تَعَالَى: وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ وَإِذَا اسْتَشَارَ وَظَهَرَ أَنَّهُ مَصْلَحَةٌ، اسْتَخَارَ اللَّهَ تَعَالَى فِي ذَلِكَ “ইস্তেখারা করার আগে এমন ব্যক্তির পরামর্শ গ্রহণ করা মুস্তাহাব যার কল্যাণকামিতা, সহমর্মিতা ও অভিজ্ঞতা প্রসিদ্ধ এবং যার দ্বীনদারি ও জ্ঞানের ব্যাপারে নির্ভর করা যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন।” যদি পরামর্শ করার মাধ্যমে বিষয়টি কল্যাণকর ফুটে ওঠে তাহলে এ বিষয়ে আল্লাহর কাছে ইস্তেখারা করবে।’ ইবনে হাজার হাইসামী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:حَتَّى عِنْدَ الْمُعَارِضِ (أَيْ تَقَدُّمِ الاسْتِشَارَةِ) لأَنَّ الطُّمَأْنِينَةَ إلَى قَوْلِ الْمُسْتَشَارِ أَقْوَى مِنْهَا إلَى النَّفْسِ لِغَلَبَةِ حُظُوظِهَا وَفَسَادِ خَوَاطِرِهَا. وَأَمَّا لَوْ كَانَتْ نَفْسُهُ مُطْمَئِنَّةً صَادِقَةٌ إرَادَتَهَا مُتَخَلِّيَةً عَنْ حُظُوظِهَا، قَدَّمَ الاسْتِخَارَةَ.“এমনকি সংঘর্ষের ক্ষেত্রে (তথা পরামর্শকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে)। কেননা পরামর্শদাতার অভিমতের প্রতি মনের স্থিরতা ইস্তিখারার চেয়ে অধিক শক্তিশালী; নফসের চাহিদার প্রাবল্য ও নষ্ট চিন্তার আধিক্যের কারণে। পক্ষান্তরে, তার মন যদি প্রশান্ত ও সদিচ্ছার অধিকারী হয় এবং অসৎ চাহিদা থেকে মুক্ত হয় তাহলে ইস্তেখারাকে প্রাধান্য দিবে।”(ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১১৯৮১)
.
❑ নবম পয়েন্ট: ইস্তেখারার সলাতের ক্বিরাত:
.
আমাদের জানা মতে, ইস্তেখারার সলাতের জন্য মূলনীতি অনুযায়ী সূরা ফাতিহা ছাড়া দ্বিতীয় সূরা হিসেবে নিদিষ্ট কোন সূরার কথা রাসূল (ﷺ) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়নি।ফলে সূরা ফাতিহার পর কোন সূরাটি তেলওয়াত করা উত্তম সে প্রসঙ্গে তিনটি মত রয়েছে:
(ক)- হানাফী, মালেকী ও শাফেয়ীরা বলেন: প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে ‘কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুন’ এবং দ্বিতীয় রাকাতে ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ পড়া মুস্তাহাব। ইমাম নববীর এর কারণ হিসেবে বলেন: এমন সলাতে এ সূরাদ্বয় পড়া যথাযথ যেহেতু এ সলাতের পেছনে উদ্দেশ্য হলো আগ্রহের নিষ্ঠা, অকপট আত্মসমর্পণ ও স্বীয় অক্ষমতা প্রকাশ করা। আলেমগণ এই দুই সূরার সাথে কুরআন কারীমের যে আয়াতগুলোতে বাছাইকরণের উল্লেখ এসেছে সে আয়াতগুলো পড়াও জায়েয বলেছেন।
(খ)- সালাফের মাঝে কেউ কেউ ইস্তেখারার সলাতের প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর নিম্নোক্ত আয়াতগুলো পড়াকে ভালো বলেছেন:وَرَبُّكَ يَخۡلُقُ مَا يَشَآءُ وَيَخۡتَارُۗ مَا كَانَ لَهُمُ ٱلۡخِيَرَةُۚ سُبۡحَٰنَ ٱللَّهِ وَتَعَٰلَىٰ عَمَّا يُشۡرِكُونَ 68 وَرَبُّكَ يَعۡلَمُ مَا تُكِنُّ صُدُورُهُمۡ وَمَا يُعۡلِنُونَ 69 وَهُوَ ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۖ لَهُ ٱلۡحَمۡدُ فِي ٱلۡأُولَىٰ وَٱلۡأٓخِرَةِۖ وَلَهُ ٱلۡحُكۡمُ وَإِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ 70 “তোমার প্রভু যা ইচ্ছা ও পছন্দ করেন তাই সৃষ্টি করেন। তাদের কোনো পছন্দ নাই। আল্লাহ কত মহান! তারা (তাঁর সাথে) যা শরীক করে তিনি তার উর্ধ্বে। আর তাদের অন্তর যা লুকিয়ে রাখে এবং তারা যা প্রকাশ করে তোমার প্রভু তা (সব) জানেন। তিনিই আল্লাহ। কোন উপাস্য সত্য নয়; তিনি ছাড়া। প্রথমে ও শেষে সকল প্রশংসা তাঁরই। হুকুমও তাঁরই এবং তাঁরই কাছে তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে।”(সূরা কাসাস: ৬৮-৭০) আর দ্বিতীয় রাকাতে নিম্নোক্ত আয়াত:وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٖ وَلَا مُؤۡمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمۡرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلۡخِيَرَةُ مِنۡ أَمۡرِهِمۡۗ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلٗا مُّبِينٗا“আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো সিদ্ধান্ত নিলে কোনো ঈমানদার পুরুষ কিংবা নারীর পক্ষে ভিন্ন কিছু করার এখতিয়ার থাকে না। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হয় সে স্পষ্টতই পথভ্রষ্ট হয়।”(সূরা আহযাব: ৩৬)
(গ)- অন্যদিকে হাম্বলীদের এবং কিছু ফকীহের মতে, ইস্তেখারার সলাতের কোনো নির্দিষ্ট ক্বিরাত নেই। তৃতীয় মতটিই বিশুদ্ধ।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন: ” وصفتها : أن يصلي ركعتين مثل بقية صلاة النافلة ، يقرأ في كل ركعة فاتحة الكتاب وما تيسر من القرآن ..”এই সালাতের পদ্ধতি হলো—এটি সাধারণ নফল সলাতের মতো দুই রাকাআত। প্রত্যেক রাকাআতে সূরাতুল ফাতিহা এবং কুরআন থেকে যেটুকু সহজ হয় তা পাঠ করবে…”(বিন বায; মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড/১১; পৃষ্ঠা: ৩৮৯ থেকে সংক্ষিপ্ত)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন:أما القراءة فيها فيقرأ بالفاتحة وما تيسر بعدها من القرآن ، سورة كاملة أو بعض سورة “এই সালাতের ক্বিরাতের ক্ষেত্রে সূরাতুল ফাতিহা ও এরপর কুরআন থেকে যা সহজ হয়, তা পড়বে; তা একটি সম্পূর্ণ সূরা হতে পারে অথবা কোনো সূরার কিছু অংশও হতে পারে।” (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ১৬১)।
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন: وليس لها سور معينة فيما أعلم ، بل يقرأ الإنسان ما تيسر من القرآن مع الفاتحة”আমার জানা অনুযায়ী, এই সালাতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সূরা নেই; বরং ফাতিহার সঙ্গে কুরআন থেকে যা সহজ হয় তা পাঠ করবে।”(ইবনু উসাইমীন; উসাইমীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব থেকে সংক্ষিপ্ত)।
.
❑ দশম পয়েন্ট: ইস্তেখারার দোয়া করার স্থান:
ইস্তিখারার দোয়া কখন পড়া উচিত এ বিষয়ে কিছুটা মতানৈক্য থাকলেও বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে,সালাত শেষে সালাম ফিরানোর পর পড়া মুস্তাহাব (সুন্নত) —এ ব্যাপারে অধিকাংশ আলেম একমত।আল-মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যাহ গ্রন্থে এসেছে:قال الحنفية ، والمالكية ، والشافعية ، والحنابلة : يكون الدعاء عقب الصلاة ، وهو الموافق لما جاء في نص الحديث الشريف عن رسول الله صلى الله عليه وسلم “হানাফী, মালেকী, শাফেয়ী ও হাম্বলী মাজহাবের আলেমগন বলেন: দোয়া করতে হবে সলাতের পরপর। এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ“।(আল-মাউসু‘আতুল ফিকহিয়্যাহ” খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২৪১)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন, ” المشروع للمسلم إذا صلى صلاة الاستخارة ، أن يدعو بعد السلام منها لقوله – صلى الله عليه وسلم : ( إذا هم أحدكم بالأمر فليركع ركعتين من غير الفريضة ، ثم ليقل : اللهم إني أستخيرك بعلمك ) الحديث.
وهذا يدل على أن الدعاء يكون بعد السلام من الصلاة “
“মুসলিমদের জন্য শরিয়তের নির্দেশ হল, সে যখন সালাতুল ইস্তিখারার দুই রাকাআত পড়বে, তখন সালাম ফিরানোর পর দোয়া করবে। কারণ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখনই কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার ইচ্ছা করবে, প্রথমে দুই রাকাআত (নফল) সলাত আদায় করবে । এরপর বলবে: আল্লাহুম্মা ইন্নী আসতাখীরুকা বি‘ইলমিকা [হে আল্লাহ! আমি আপনার ইলমের উসিলায় আপনার কাছে (আমার উদ্দিষ্ট বিষয়ের) কল্যাণ চাই]…(অর্থাৎ দোয়া শুরু করুক)।”এ হাদীস প্রমাণ করে যে, দোয়াটি সালাত শেষ করার পর পড়া উচিত।”(মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ৩৮৯)।
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ইস্তিখারার দোয়া কি সালাম ফেরানোর আগেই পড়তে হবে, নাকি সালাত শেষ করে সালাম ফিরানোর পর পড়তে হবে? তারা উত্তর দিয়েছেন:دعاء الاستخارة يكون بعد التسليم من صلاة الاستخارة ” ان”ইস্তিখারার দোয়া সালাত শেষ করে সালাম ফেরানোর পর পড়তে হয়।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খন্ড ৮; পৃষ্ঠা: ১৬২)।
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:دعاء الاستخارة بعد السلام؛ لأن النبي عليه الصلاة والسلام قال فليصل ركعتين ثم ليقل ) وذكر الدعاء “ইস্তিখারার দোয়া সালাম ফেরানোর পর পড়া উচিত; কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: ‘সে যেন প্রথমে দুই রাকাআত সলাত আদায় করবে, এরপর বলবে— এরপর তিনি দোয়াটি উল্লেখ করেছেন।”(ইবনু উসামীন লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, লিক্বা নং-২০)
.
অপরদিকে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) সালাম ফিরানোর পর পড়া উত্তম বলেছেন তিনি ‘আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা’ গ্রন্থে বলেন: مَسْأَلَةٌ فِي دُعَاءِ الِاسْتِخَارَةِ، هَلْ يَدْعُو بِهِ فِي الصَّلاةِ ؟ أَمْ بَعْدَ السَّلامِ؟ الْجَوَابُ: يَجُوزُ الدُّعَاءُ فِي صَلاةِ الاسْتِخَارَةِ، وَغَيْرِهَا: قَبْلَ السَّلامِ، وَبَعْدَهُ، وَالدُّعَاءُ قَبْلَ السَّلامِ أَفْضَلُ؛ فَإِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَكْثَرُ دُعَائِهِ قَبْلَ السَّلامِ، وَالْمُصَلِّي قَبْلَ السَّلامِ لَمْ يَنْصَرِفْ، فَهَذَا أَحْسَنُ.”ইস্তেখারার দোয়ার মাসআলা: এ দোয়া দিয়ে কি সলাতের ভেতরে দোয়া করবে; নাকি সালাম ফেরানোর পরে? উত্তর হলো: ইস্তেখারার সলাতে এবং অন্য যে কোন সলাতে দোয়া করা জায়েয; সেটি সালাম ফেরানোর আগে হোক বা পরে হোক। তবে, সালাম ফেরানোর আগে দোয়া করা উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অধিকাংশ দোয়া ছিল সালাম ফেরানোর আগে। সালাম ফেরানোর আগে মুসল্লী নামায ত্যাগ করেনি; সুতরাং এমন অবস্থায় (দোয়া করা) উত্তম।”(ইবনু তাইমিয়া; আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ২৬৫)।
.
সারকথা: ইস্তিখারার সলাত শেষ করে সালাম ফেরানোর পরই দোয়া করা সুন্নত। এটি অধিকাংশ আলেমের অভিমত এবং সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
.
❑ একাদশতম পয়েন্ট: ইস্তিখারার দু’আ মুখস্থ হওয়া শর্ত নাকি দেখে দেখে পড়া যায়:
.
ইস্তিখারার দুআ পাঠের ক্ষেত্রে মুখস্থ হওয়া আবশ্যক নয়। কেউ যদি কাগজ দেখে পড়ে, তাও যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ। কারণ মূল উদ্দেশ্য হল—আল্লাহর নিকট দুআ করা, আর সে তো তা করেছে। অধিকাংশ আলেম নফল সলাতে মুশহাফ দেখে কুরআন তিলাওয়াতের অনুমতি দিয়েছেন, অথচ সলাতের পরে দুআ পাঠ তো তার চেয়েও সহজ। তবে কেউ যদি মুখস্থ করে পাঠ করতে পারে, তাহলে তা নিঃসন্দেহে উত্তম।
আল-মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যাহ গ্রন্থে এসেছে;ذهب الشافعية والحنابلة إلى جواز القراءة من المصحف في الصلاة , قال أحمد : لا بأس أن يصلي بالناس القيام وهو ينظر في المصحف , قيل له : الفريضة ؟ قال : لم أسمع فيها شيئا . وسئل الزهري عن رجل يقرأ في رمضان في المصحف , فقال : كان خيارنا يقرءون في المصاحف“শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাবের আলেমদের মতে নামাজে মুসহাফ দেখে কুরআন পড়া বৈধ। ইমাম আহমদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, মুসহাফ দেখে তারাবিহর নামাজে ইমামতি করা দোষনীয় নয়। যখন তাঁকে ফরজ সালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়, তিনি বলেন—এ বিষয়ে তিনি কিছু শুনেননি। আর ইমাম যুহরি (রাহিমাহুল্লাহ)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল রমজানে মুসহাফ দেখে কুরআন পাঠ করার ব্যাপারে,তিনি বলেছিলেন: ‘আমাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিরা রমজানে মুসহাফ দেখে কুরআন পড়তেন।”(আল-মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যাহ; খণ্ড: ৩৩; পৃষ্ঠা: ৫৭)
.
শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:لا مانع أن يقرأ الإنسان الدعاء من الورقة إذا كان لا يحفظ وكتب الدعاء في ورقة وقرأه في الأوقات التي يحب أن يدعو فيها مثل آخر الليل أو أثناء الليل أو غيرها من الأوقات، ولكن لو تيسر حفظ ذلك وأن يقرأه عن حضور قلب وعن خشوع كان ذلك أكمل “কোনো বাধা নেই যে মানুষ কাগজ থেকে দু’আ পড়ুক, যদি তার মুখস্থ না থাকে এবং সে যদি কাগজে দু’আ লিখে নেয় এবং তা পড়ে এমন সময়গুলোতে যখন সে দু’আ করতে পছন্দ করে, যেমন রাতের শেষ ভাগে, বা রাতের কোনো সময়, বা অন্য যেকোনো সময়। তবে যদি তা মুখস্থ করা সহজ হয় এবং মনোযোগ ও বিনয়ের সাথে তা পড়া হয়, তাহলে তা অধিক পরিপূর্ণ।”(মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ২৬; পৃষ্ঠা: ১৩৬)।
.
স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:“কোনো কাজ বা প্রয়োজন বা যে কোনো বিষয়ে ইস্তিখারা সলাত আদায়ের ক্ষেত্রে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের বর্ণিত ইস্তিখারার দু’আ মুখস্থ করাটা কি আবশ্যক? নাকি কেবল বই দেখে পড়লেই চলবে?” তারা উত্তরে বলেন:إن حفظت الدعاء للاستخارة وقرأته من الكتاب فالأمر في ذلك واسع، وعليك الاجتهاد في إحضار قلبك والخشوع لله، والصدق في الدعاء..যদি তুমি ইস্তিখারার দুআ মুখস্থ করেও তা বই দেখে পাঠ করো—তাতে কোনো অসুবিধা নেই;এ ব্যাপারে প্রশস্ততা রয়েছে। তবে তোমার উচিত হবে মনোযোগ সহকারে হৃদয় প্রস্তুত করে, বিনয় ও আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর কাছে দু’আ করা।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খন্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ১৬১)।
.
❑ দ্বাদশতম পয়েন্ট: ইস্তিখারার সালাত আদায়ের বিশুদ্ধ পদ্ধতি:
.
আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি, ওয়াজিব ও মুস্তাহাব কর্ম পালন করার ক্ষেত্রে এবং হারাম ও মাকরূহ বিষয় বর্জন করার ক্ষেত্রে ইস্তিখারা করা যাবে না। তাই ইস্তিখারার গণ্ডি সীমাবদ্ধ শুধু মুবাহ বিষয়ের ক্ষেত্রে এবং এমন মুস্তাহাবের ক্ষেত্রে যে মুস্তাহাব অপর একটি মুস্তাহাবের সাথে সাংঘর্ষিক; সুতরাং দুইটির কোনটা আগে পালন করবে কিংবা কোনটা বাদ দিয়ে কোনটা পালন করবে সেক্ষেত্রে। সুতরাং সালাত আদায়ের পদ্ধতি হল: প্রথমে ব্যক্তি (নারী পুরুষ) অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য অযু করবে, তারপর ইস্তেখারার উদ্দেশ্যে দুই রাকআত সাধারণ নফল সালাতের ন্যায় সালাত আদায় করবে ।বিশেষ কোনো নিয়ম নেই।এক্ষেত্রে সূরা ফাতেহার পর যেকোন সূরা পড়া যায় তারপর সালাত শেষে সালাম ফিরিয়ে আল্লাহ তায়ালা বড়ত্ব ও মর্যাদার কথা মনে জাগ্রত করে একান্ত বিনয় ও আন্তরিকতা সহকারে অর্থের দিকে খেয়াল রেখে নিচের দুয়াটি পাঠ করা। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখনই কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার ইচ্ছা করবে, প্রথমে দুই রাকাআত সলাত আদায় করবে । এরপর বলবে—
.
اَللّٰهُمّ إِنِّيْ أَسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ
আল্লাহুম্মা ইন্নী আসতাখীরুকা বি‘ইলমিকা
[হে আল্লাহ! আমি আপনার ইলমের উসিলায় আপনার কাছে (আমার উদ্দিষ্ট বিষয়ের) কল্যাণ চাই]
.
وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ
ওয়া আসতাক্বদিরুকা বিক্বুদরাতিকা
[আপনার কুদরতের উসিলায় আপনার কাছে (কল্যাণ অর্জনের) শক্তি চাই]
.
وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيْمِ
ওয়া আসআলুকা মিন ফাদ্বলিকাল ‘আযীম
[আর আপনার কাছে আপনার মহান অনুগ্রহের কিছুটা আমি চাই]
.
فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ
ফাইন্নাকা তাক্বদিরু, ওয়া লা আক্বদির
[কেননা, (সকল বিষয়ে) আপনার ক্ষমতা রয়েছে; আমার কোনো ক্ষমতা নেই]
.
وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ
ওয়া তা‘অ্লামু, ওয়া লা আ‘অলাম
[আপনি (সবকিছু) জানেন, আমি কিছুই জানি না]
.
وَأَنْتَ عَلَّامُ الغُيُوْبِ
ওয়া আনতা ‘আল্লামুল গুয়ূব
[আপনি অদৃশ্যের সকল বিষয়ে সর্বজান্তা]
.
اَللّٰهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ
আল্লাহুম্মা ইন কুনতা তা‘অ্লামু
[হে আল্লাহ! আপনি যদি জানেন]
.
أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِيْ
আন্না ★হাযাল আমরা★ খাইরাল লী
[★এই কাজটি★ আমার জন্য কল্যাণকর]
.
فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ أَمْرِيْ
ফী দী-নী, ওয়া মা‘আ-শী, ওয়া ‘আ-ক্বিবাতি আমরী
[আমার দ্বীন, আমার জীবন-জীবিকা ও কাজের পরিণামের বিচারে]
.
فَاقْدُرْهُ لِيْ وَيَسِّرْهُ لِيْ
ফাক্বদুরহু লী, ওয়া ইয়াসসিরহু লী
[তাহলে আমার জন্য তা নির্ধারণ করে দিন এবং বিষয়টিকে আমার জন্য সহজ করে দিন]
.
ثُمَّ بَارِكْ لِيْ فِيْهِ
সুম্মা বা-রিক লী ফীহি
[অতঃপর এতে আমার জন্য বরকত দান করুন]
.
وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ
ওয়া ইন কুনতা তা‘অ্লামু
[আর, যদি আপনি জানেন]
.
أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِيْ
আন্না ★হাযাল আমরা★ শাররুল লী
[★এই কাজটি★ আমার জন্য অকল্যাণকর]
.
فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ أَمْرِيْ
ফী দী-নী, ওয়া মা‘আ-শী, ওয়া ‘আ-ক্বিবাতি আমরী
[আমার দ্বীন, আমার জীবন-জীবিকা ও কাজের পরিণামের বিচারে]
.
فَاصْرِفْهُ عَنِّيْ وَاصْرِفْنِيْ عَنْهُ
ফাসরিফহু ‘আন্নী, ওয়াসরিফনী ‘আনহু
[আপনি তা আমার থেকে সরিয়ে দিন এবং আমাকে তা থেকে ফিরিয়ে রাখুন]
.
وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ
ওয়াক্বদুর লিয়াল খাইরা ‘হাইসু কা-না
[আর আমার জন্য কল্যাণের ফায়সালা করুন; তা যেখানেই হোক]
.
ثُمَّ أَرْضِنِيْ بِه
সুম্মা আরদ্বিনী বিহি
[অতঃপর তাতেই আমাকে সন্তুষ্ট রাখুন]
.
জাবির (রা) বলেন, দু‘আটির যে দুই জায়গায় هَذَا الأَمْرَ হাযাল আমর (যার অর্থ) ‘‘এই কাজটি’’ বলা আছে, সেখানে নিজ প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করবে। (কিংবা অন্তত মনে মনে সেটি কল্পনা করবে) (সহীহ বুখারি১১৬৬; তিরমিযি ৪৮০; আবুদাঊদ হা/১৫৩৮; মিশকাত হা/১৩২৩ ‘ঐচ্ছিক সালাত’ অনুচ্ছেদ-৩৯; মির‘আত ৪/৩৬২)। উক্ত দু‘আ শেষ করার পর মন যেদিকে সায় দেবে এবং যেভাবে কাজটি করা কল্যাণকর মনে হবে, সেটিকে সঠিক ভেবে কাজ শুরু করবেন। ধরুন, আপনার কোথাও যাওয়া দরকার আবার বাসার মধ্যেও থাকা দরকার। এমতাবস্থায় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। তখন ইস্তিখারা করবেন। ইস্তিখারার পর যদি মনে হয়, বাসায় থাকাটাই আপনার জন্য অধিক কল্যাণকর হবে, তাহলে আপনি সেটিই করবেন এবং ভেবে নিবেন, এই সিদ্ধান্তটি আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে আর এতেই আপনার কল্যাণ রয়েছে।ইস্তিখারা করার সাথে সাথেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজের জন্য ইস্তিখারা করলে এক বেলা বা কয়েক ঘণ্টা, এমনকি কয়েক দিনও অপেক্ষা করতে পারেন। তবুও সিদ্ধান্ত নিতে কষ্ট হলে প্রয়োজনে একাধিকবার ইস্তিখারা করতে পারেন। এটিও জায়েয। এরপর মন যেদিকে ঝুঁকবে, সেদিকেই কল্যাণ আছে ভেবে নেবেন। এর সাথে সাথে নিজের বিবেক-বুদ্ধির সাহায্য নেবেন এবং নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের সাথেও পরামর্শ করবেন।
.
❑ ত্রয়োদশতম ও সর্বশেষ পয়েন্ট: একাধিকবার ইস্তেখারা করা যাবে নাকি একবারই করতে হবে:
.
অনেক ফুকাহা ও মুহাদ্দিসগণ উল্লেখ করেছেন, যদি কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনও সুস্পষ্ট না হয় এবং ইস্তেখারা কারী যদি দ্বিধা দ্বন্দ্বে থাকেন—দুইটি বিষয়ের মধ্যে কোনটি বেছে নেবেন তা ঠিক করতে না পারেন—তাহলে তিনি সে বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার ইস্তেখারা করতে পারেন।তবে যদি ইস্তিখারার পর অন্তরে স্বস্তি অনুভূত হয়, হৃদয় প্রশান্ত হয়ে যায় অর্থাৎ একধরনের আত্মিক নিশ্চয়তা জাগে তাহলে ঐ বিষয়ে পুনরায় ইস্তিখারা করার প্রয়োজন নেই।”
.
আল-মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যাহ গ্রন্থে এসেছে;
” قال الحنفية، والمالكية، والشافعية: ينبغي أن يكرر المستخير الاستخارة بالصلاة والدعاء سبع مرات؛ لما روى ابن السني عن أنس. قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يا أنس إذا هممت بأمر فاستخر ربك فيه سبع مرات، ثم انظر إلى الذي يسبق إلى قلبك فإن الخير فيه.ويؤخذ من أقوال الفقهاء أن تكرار الاستخارة يكون عند عدم ظهور شيء للمستخير، فإذا ظهر له ما ينشرح به صدره لم يكن هناك ما يدعو إلى التكرار. وصرح الشافعية بأنه إذا لم يظهر له شيء بعد السابعة استخار أكثر من ذلك”
হানাফি, মালিকি এবং শাফেয়ি মাজহাবের ফুকাহাগণ উল্লেখ করেছেন: ইস্তিখারা প্রার্থনাকারী ব্যক্তি যেন সলাত ও দুআর মাধ্যমে সাতবার ইস্তিখারা করে। কেননা,ইবনুস সুন্নী (রাহিমাহুল্লাহ) আনাস ইবনু মালিক (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণনা করেছেন—তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছিলেন: “হে আনাস! যখন কোনো বিষয়ে সংকল্প করো, তখন সে বিষয়ে তোমার প্রতিপালকের নিকট সাতবার ইস্তিখারা করো। এরপর তোমার অন্তরে যেটি প্রাধান্য পায়—জেনে রেখো, সেটিতেই কল্যাণ নিহিত রয়েছে।(বর্ননাটি দুর্বল; দেখুন সিলসিলা জয়ীফা; খণ্ড: ১৪; পৃষ্ঠা: ৯৫২)। ফুকাহাগণের বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়: ইস্তিখারা তখনই পুনরাবৃত্তি করা হবে, যখন ইস্তিখারার পরেও বিষয়টি পরিষ্কার না হয়, অথবা সিদ্ধান্তহীনতা দূর না হয়।কিন্তু যদি ইস্তিখারার পর অন্তর প্রশান্ত হয় ও নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে আত্মা নিশ্চিন্ততা লাভ করে, তাহলে পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন নেই।শাফেয়ি আলেমগণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন: যদি সাতবার ইস্তিখারা করার পরও বিষয়টি স্পষ্ট না হয়, তাহলে ইচ্ছা করলে আরও বেশিবার ইস্তিখারা করা যাবে।”(আল-মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যাহ; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২৪৬)।
.
শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ)–কে প্রশ্ন করা হয়েছিল:ইস্তেখারার সলাত কি একবার পড়া যথেষ্ট, নাকি তা পুনরাবৃত্তি করা শরিয়তসম্মত? তিনি উত্তর দেন:
:” تشرع مكررة ، حتى يطمئن قلبه ، وينشرح صدره لما يريد، ويستشير إخوانه الثقات المعروفين الذين يعتقد فيهم الخير، وأنهم يحبون له الخير يستشيرهم بعد الصلاة، يصلي ركعتين ويستخير ربه بما جاء في حديث جابر -والحديث معروف موجود في رياض الصالحين وغيره- ثم يستشير بعد الدعاء ، فإن انشرح صدره ، وإلا أعاد الصلاة ، وأعاد الاستشارة، وهكذا، مرتين ثلاث أربع أكثر ، حتى يحصل له الطمأنينة والانشراح ، في الزواج أو في شراء بيت أو في سفر إلى بلد أو في إقامة شركة ، أو ما أشبهها من الأمور التي تشتبه عليه، فيستخير الله فيها ويستشير إخوانه الطيبين ثم يعمل ما يطمئن إليه قلبه وينشرح له صدره بعد الاستخارة وبعد الاستشارة”
“হ্যাঁ, ইস্তেখারার সালাত একাধিকবার আদায় করা শরিয়তসম্মত, যতক্ষণ না ব্যক্তি অন্তরে প্রশান্তি অনুভব করে এবং যে কাজটি করতে চায় সে বিষয়ে তার অন্তর প্রশস্ত হয়। তার উচিত এমন বিশ্বস্ত, সৎ ও কল্যাণকামী ভাইদের সঙ্গে পরামর্শ করা—যাদের সম্পর্কে সে নিশ্চিত যে, তারা তাকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসে এবং তার মঙ্গলের চিন্তা করে।এরপর সে দুই রাকাআত সলাত আদায় করবে এবং জাবির (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত হাদীস অনুযায়ী ইস্তিখারার দুআ পাঠ করবে—যে হাদীসটি ‘রিয়াদুস সালিহীন’ ও অন্যান্য গ্রন্থে উল্লেখিত আছে। তারপর ইস্তিখারার দু’আর পর পরামর্শ করবে।যদি ইস্তিখারা ও পরামর্শের পর তার অন্তর প্রশান্তি লাভ করে, তাহলে সে কাজটি করে ফেলবে। আর যদি অন্তর দ্বিধাগ্রস্ত থাকে ও স্বস্তি না পায়, তাহলে আবার ইস্তিখারা করবে, আবার পরামর্শ করবে। এভাবে দু’বার, তিনবার, চারবার—এমনকি যতবার প্রয়োজন হয়—ইস্তিখারা ও পরামর্শ করতে থাকবে, যতক্ষণ না তার অন্তর প্রশান্ত হয় এবং সে যে সিদ্ধান্ত নিতে চায়, সে বিষয়ে মনে এক ধরনের স্থিরতা ও নিশ্চয়তা অনুভব করে। সেই বিষয়টি হতে পারে বিয়ের সিদ্ধান্ত, বাড়ি ক্রয়, ভিন্ন দেশে গমন কিংবা কোনো কোম্পানি প্রতিষ্ঠা—এই ধরনের যে কোনো সিদ্ধান্ত, যা মানুষকে দ্বিধাগ্রস্ত করে তোলে। তার উচিত এসব বিষয়ে আল্লাহর কাছে ইস্তিখারা করা এবং ঈমানদার, অভিজ্ঞ ও মঙ্গলকামী ভাইদের সঙ্গে পরামর্শ করা। এরপর ইস্তিখারা ও পরামর্শের মাধ্যমে অন্তরে যেটিতে প্রশান্তি ও সন্তুষ্টি অনুভব করে—সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।”(বিন বায; ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব; খণ্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ৭৩)।
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
” ثم بعد ذلك الدعاء : إن انشرح صدره بأحد الأمرين ، بالأقدام أو الإحجام : فهذا المطلوب ، يأخذ بما ينشرح به صدره .
فإن لم ينشرح صدره لشيء وبقى مترددا ، أعاد الاستخارة مرة ثانية وثالثة ، ثم بعد ذلك المشورة ، إذا لم يتبين له شيء بعد الاستخارة ، فإنه يشاور أهل الرأي والصلاح …
وإنما قلنا: إنه يستخير ثلاث مرات ، لأن من عادة النبي صلى الله عليه وسلم أنه إذا دعا دعا ثلاثا ، والاستخارة دعاء ، وقد لا يتبين للإنسان خير الأمرين من أول مرة ، بل قد يتبين في أول مرة ، أو في الثانية ، أو في الثالثة ، وإذا لم يتبين فليستشر”
“এরপর আসে দোয়ার বিষয়টি: যদি ইস্তিখারার পর তার অন্তর দুইটি বিষয়ের একটির প্রতি প্রশান্তি অনুভব করে—তা হোক অগ্রসর হওয়ার ব্যাপারে অথবা পিছু হটার বিষয়ে—তাহলে সে সেই দিকটিই গ্রহণ করবে, যাতে তার অন্তর প্রশান্ত হয়। এটাই কাম্য। আর যদি তার অন্তর কোনো কিছুতে স্থির না হয় এবং সে দ্বিধা দ্বন্দ্বে থাকে, তাহলে সে আবার ইস্তিখারা করবে দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার। এরপরও যদি বিষয়টি তার কাছে পরিষ্কার না হয়, তাহলে সে বুদ্ধিমান ও দ্বীনদার ন্যায়পরায়ণ লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করবে। আমরা বলি: সে যেন তিনবার ইস্তিখারা করে। এর কারণ হলো, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন কোনো দো‘আ করতেন, তখন তিনবার করতেন। আর ইস্তিখারা তো একটি দু‘আ। আর মানুষ সবসময় প্রথমবারেই বুঝে উঠতে পারেনা যে,কোনটা তার জন্য কল্যাণকর। বরং কখনো সে তা প্রথমবারেই বুঝে ফেলে, কখনো দ্বিতীয়বারে, আবার কখনো তৃতীয়বারে। আর যদি এতকিছুর পরও কিছু বুঝে না আসে, তাহলে তাকে পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।”(ইবনু উসাইমিন, শারহু রিয়াদিস সালিহিন; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১৬২)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

No comments:

Post a Comment

Translate