প্রশ্ন: আমার শ্বশুরবাড়ির মানুষের কাজ একদমই অগোছালো। প্রতিদিনই এসব বাড়তি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে করতে বিরক্ত হয়ে যাই। প্রশ্ন হলো, এই যে আমি চুপচাপ পরিশ্রম করে যাই এটা কি এক প্রকার ধৈর্য বিবেচিত হবে? এতে কি আমি সওয়াব পাবো?
উত্তর: আমাদের সমাজের অধিকাংশ গৃহবধূকে তাদের স্বামী সংসারে প্রচুর কষ্ট ও পরিশ্রম করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেরা বঞ্চিত হলেও অকাতরে তাদের আরাম-আয়েশ বিসর্জন দিয়ে স্বামী সন্তান এবং পরিবারকে ভালো রাখার জন্য হাসিমুখে সব কষ্ট মেনে নেয়। কিন্তু তারা অনেকে জানেই না, ইসলামে এ জন্য তাদের কী মর্যাদা রয়েছে এবং এ মর্যাদা লাভের শর্ত কী? তাই নিম্নে এ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিকোণ উপস্থাপন করা হলো:

মানুষের সেবা করা বা উপকার করা নিঃসন্দেহে ‘ভালো কাজ’। আর প্রতিটি ভালো কাজেই সদকার সওয়াব রয়েছে ইনশাআল্লাহ।
✪ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
كلُّ معروفٍ صدقةٌ وإن من المعروفِ أن تَلْقَى أخاك بوجهٍ طَلْقٍ وأن تُفْرِغَ من دَلْوِكَ في إناءِ أَخِيك
“প্রত্যেক ভালো কাজই সদকা (দান)। আর ভালো কাজের মধ্যেই এটাও পড়ে যে, তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করবে এবং তোমার বালতির (অতিরিক্ত) পানি তোমার ভাইয়ের পাত্রে ঢেলে দেবে।” [সহিহ বুখারি, হা/ ৬০২১]
✪ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন,
لا تحْقِرَنَّ من المعرُوفِ شيْئًا ، ولوْ أنْ تلْقَى أخاكَ بوجْهٍ طلْقٍ
“সৎকর্মকে কখনোই তুচ্ছ মনে করো না, যদিও তা তোমার ভাইকে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাই হয়।” [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬২৬]
এখানে হাদিসগুলোর মূল বক্তব্য হলো, শুধু অর্থ সাহায্য করাই সদকা নয় বরং প্রতিটি ভালো কাজ, যেমন—কারো সাথে হাসিমুখে কথা বলা, অন্যের প্রয়োজনে সামান্য হলেও সাহায্য-সহযোগিতা করা সদকার অন্তর্ভুক্ত। সে হিসেবে একজন গৃহবধূ তার স্বামী, সন্তান, শ্বশুর-শাশুড়ি বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের যত উপকার করবে প্রতিটি কাজের বিনিময়ে সে সদকার সওয়াব পাবে ইনশাআল্লাহ।
❑ শর্তাবলী:
এই সওয়াব লাভের শর্ত হল, তারা অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করবে এবং আল্লাহর নিকট এর প্রতিদানের নিয়ত করবে। আর উপকার করে কখনো কাউকে খোটা দেবে না। কেননা খোটা দিলে উক্ত সৎ কর্মের সওয়াব নষ্ট হয়ে যায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُم بِالْمَنِّ وَالْأَذَىٰ
“হে ইমানদারগণ! তোমরা তোমাদের সদকাসমূহ বরবাদ করে দিও না উপকারের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া (খোটা দেওয়া) ও কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমে।” [সূরা বাকারা: ২৬৪] পাশাপাশি, যথাসময়ে সালাত আদায়, নন মাহরামদের সামনে পর্দা রক্ষা ইত্যাদি ইসলামের মৌলিক বিধানগুলো ঠিক রাখা আবশ্যক। কেউ যদি এই সকল অপরিহার্য বিধান লঙ্ঘন করে পরিবারের সেবায় লিপ্ত থাকে তাহলে তার এই সওয়াব পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। বরং ফরজ বিধান লঙ্ঘণ করার অপরাধে সে পাপীষ্ঠ বলে গণ্য হবে।

হাদিসে ওই ব্যক্তিকে “উত্তম বা সেরা মানুষ” বলা হয়েছে যে, অধিক পরিমাণে মানুষের উপকার করে।
✪ সাহাবি জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“خيرُ الناسِ أنفعُهم للناسِ”
“সর্বোত্তম মানুষ সে-ই, যে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকার কারী।” [শাইখ আলবানি এটিকে হাসান বলেছেন। সহিহুল জামে, হা/ ৩২৮৯] আরও বহু হাদিসে মানুষের উপকারের ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে।

মানুষের সেবা করা বা তাদের উপকার করা তাদের ভালোবাসা অর্জনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কেননা সাধারণভাবে মানুষ তাকে ভালোবাসে যে তার উপকার করে। যদিও আমাদের সমাজে উপকারের উপকার স্বীকার করা বা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায়ের মনোভাব নিতান্তই কম। কিন্তু অকৃতজ্ঞ মানুষ উপকার কারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলেও মহান আল্লাহ অবশ্যই তাকে আখিরাতে প্রতিদান দান করবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা বলেন,
هَلْ جَزَاءُ الْإِحْسَانِ إِلَّا الْإِحْسَانُ
“উপকারের প্রতিদান কি উপকার ছাড়া আর কিছু হতে পারে?” [সূরা রহমান: ৬০]

আমরা আরও জানি, বিপদ-আপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সাথে সুন্দর ভাষায় ও হাসিমুখে কথা বলা, মানুষের সাথে ভালো আচরণ করা এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা করা, তাদেরকে খুশি রাখা ইত্যাদি সামাজিকভাবে যেমন প্রশংসনীয় বিষয় তেমনি ইসলামের দৃষ্টিতেও উত্তম চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। তার হাদিসে উত্তম চরিত্রের বিশাল ফজিলতের কথা উল্লেখিত হয়েছে। যেমন:
আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ مِنْ أَحَبِّكُمْ إِلَيَّ، وَأَقْرَبِكُمْ مِنِّي مَجْلِسًا يَوْمَ القِيَامَةِ، أَحَاسِنَكُمْ أَخْلَاقًا
“তোমাদের মধ্যে আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় এবং কিয়ামতের দিন আমার কাছে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হবে সেই ব্যক্তি, যার চরিত্র হবে উত্তম।” [তিরমিজি, হাদিস: ২০১৮ | সহিহ]

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল দাওয়াহ অ্যাসোসিয়েশন, সৌদি আরব।
No comments:
Post a Comment