Saturday, July 19, 2025

জান্নাতে প্রবেশের প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে সহিহ আক্বীদার উপর মৃত্যুবরণ করা

 হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেন:

كل من اعتقد الاعتقاد الصحيح ، وأدى الواجبات ، وترك المحرمات – يدخل الجنة ، هذا اعتقاد أهل السنة ، فإنهم يجزمون بالنجاة لكل من اتقى الله ، كما نطق به القرآن” ا
“যে সকল ব্যক্তি (নারী-পুরুষ) সহীহ আক্বীদা পোষণ করে,ফরজ কাজগুলো পালন করে এবং হারাম বিষয়গুলো বর্জন করে —সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহর আক্বীদা। কারণ, তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে (তাকওয়া অবলম্বন করে), সে নিঃসন্দেহে নাজাতপ্রাপ্ত হবে যেমনটি কুরআনে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে।”(মিনহাজুস সুন্নাহ আন-নাববিয়্যাহ” খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৪৯৬)।
.
এখানে ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) স্পষ্টভাবে জান্নাতে প্রবেশের শর্ত হিসেবে তিনটি বিষয়ের উল্লেখ করছেন:১. বিশুদ্ধ আক্বীদা, ২. ওয়াজিব আদায়, ৩. হারাম বর্জন।পাশাপাশি, তিনি আহলুস সুন্নাহর আক্বীদা স্পষ্ট করছেন: আল্লাহভীরু (মুত্তাকি) ব্যক্তি অবশ্যই নাজাতপ্রাপ্ত হবে।
.
শাইখুল ইসলামের মূল বক্তব্যের প্রতিটি বাক্যের বিশ্লেষণ:
❶ “كل من اعتقد الاعتقاد الصحيح”
অর্থাৎ: (যে ব্যক্তি সহীহ বা বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করে)” ইমাম ইবনু তায়মিয়্যাহর মতে, কারো ঈমান ও আমলের মূল ভিত্তি হচ্ছে সহীহ আক্বীদা যেটা হবে কুরআন ও সুন্নাহভিত্তিক, শিরকমুক্ত, বিদআতমুক্ত ও সঠিকভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের পথে প্রতিষ্ঠিত আক্বীদা।
❷ “وأدى الواجبات، وترك المحرمات”
অর্থাৎ: (ফরজ কাজগুলো যথাযথভাবে পালন করে এবং হারাম কাজগুলো থেকে বেঁচে থাকে)” এটি দ্বীনের মূল আমলী কাঠামো: ফরজ পালন ও হারাম বর্জন। ইবাদাত, সালাত, যাকাত, রোযা, হজ্জ—এসব ফরজ। আর হারাম হলো শিরক, সুদ, ব্যভিচার, মদ্যপান, যিনা, গীবত ইত্যাদি।
❸ “يدخل الجنة”
অর্থাৎ: (সে জান্নাতে প্রবেশ করবে)। এটি একটি সাধারণ বিধান বা ওয়াদা (আল্লাহর প্রতিশ্রুতি): যে ব্যক্তি এই তিনটি ভিত্তিকে বাস্তবায়ন করবে, সে পরিণামে জান্নাতপ্রাপ্ত হবে।
❹ “هذا اعتقاد أهل السنة”
অর্থাৎ: (এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহর আক্বীদা) এর অর্থ এই যে, সঠিক আক্বীদা ও আমল ভিত্তিক জান্নাত প্রাপ্তির এই আক্বীদাই হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহর মৌলিক আক্বীদা।
❺ “فإنهم يجزمون بالنجاة لكل من اتقى الله”
অর্থাৎ: (কারণ তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে (তাকওয়া অবলম্বন করে), সে নিঃসন্দেহে নাজাতপ্রাপ্ত হবে)” এখানে ‘তাকওয়া’ বলতে বোঝানো হয়েছে আল্লাহর ফরজ বিধি-বিধান পালনের সঙ্গে সঙ্গে যাবতীয় হারাম কর্মকাণ্ড থেকে বেঁচে থাকা। যে আল্লাহকে ভয় করে, সে গুনাহ থেকে বিরত থাকে এবং দ্বীনের নির্দেশনা অনুসরণ করে।
❻ “كما نطق به القرآن”
অর্থাৎ: (যেমনটি কুরআনে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে)” ইবনু তায়মিয়্যাহ এই আক্বীদাকে কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী বলছেন। যেমন: إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَنَعِيمٍ “নিশ্চয়ই মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতসমূহে ও আরাম-আয়েশে।” (সূরা আত-তূর, আয়াত: ১৭) অপর আয়াতে বলেন; وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ “আর শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য।(সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৮৩)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

No comments:

Post a Comment

Translate