আমাদের মুসলিম সমাজে আজকাল এবোর্শান বিষয়টা এত সহজ হয়ে গেছে যে, হসপিটালগুলোতে MR, MVA, D&C, D&E প্রভৃতি নামে মুড়ি-মুড়কির দরে এবোর্শান করানো হয়, অথচ আল্লাহর কাছে এটি মারাত্মক জঘন্য একটি কাজ। আসুন এই বিষয়ে ফিক্বহের মাস’আলা জেনে নিই, আশা করি সাধারণ মানুষ এবং বিশেষ করে আমাদের ডাক্তার সমাজ একটু হলেও সচেতন হবেন।
প্রথমতঃ কিছু আলেমের মতে, এবোর্শান করা সর্বাবস্থায় হারাম।
দ্বিতীয়তঃ অধিকাংশ আলেমের মতে, এবোর্শান হারাম, অল্প কয়েকটি অবস্থা ব্যতীত। অবস্থাগুলো নিম্নরূপঃ
মাতৃগর্ভে ভ্রূণের ক্রমবিকাশকে কুরআন-হাদীসের আলোকে ৩ টি ধাপে ভাগ করা যায়ঃ
১। গর্ভধারণের প্রথম ৪০ দিন পর্যন্তঃ এই সময় পর্যন্ত ভ্রূণকে বলা হয় ‘নুতফাহ’ বা শুক্রবিন্দু। এই অবস্থায় ভ্রূণের ভেতরে ‘রূহ’ থাকেনা বিধায় অল্প কিছু ক্ষেত্রে উলামাদের কেউ কেউ এবোর্শানকে জায়েয বলেছেন, এসব ক্ষেত্র ব্যতিরেকে এই অবস্থায়ও এবোর্শান হারাম। কারণগুলো নিম্নরূপ-
* মেডিকেলীয় প্রয়োজনঃ এমন কোন কারণ যাতে মায়ের শারীরিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে, অথবা বাচ্চার কোন সমস্যা যাতে বাচ্চা আর সামনে প্রোগ্রেস করবেনা, নিউরাল টিউব ডিফেক্ট, থ্যালাসেমিয়া মেজর, কিংবা এরকম কোন রোগ যার কারণে বাচ্চা জন্মের পরেও বেশিদিন বাচবে না এমন।
* সামাজিক প্রয়োজনঃ রেইপের কারণে কেউ প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলে, অথবা সন্তানের বাবা মারা যাওয়ায় বিধবা মা এর পক্ষে সন্তান লালন পালন অসম্ভব হয়ে যাবে বলে মনে হয়, কিংবা সন্তানের বাবা সন্তানের মাকে এবোর্শান না করলে তালাক দেয়ার হুমকি দেয় এরকম বিশেষ ক্ষেত্রে।
প্রথম ৪০ দিনের মধ্যে কেবল এরকম বিশেষ কিছু ক্ষেত্রেই এবোর্শান করা জায়েয। যদিও ‘সামাজিক প্রয়োজন’ পয়েন্টেও অনেক উলামা একমত নন, তাদের মতে এসব ক্ষেত্রেও প্রেগন্যান্সি কন্টিনিউ করতে হবে। এক্ষেত্রেও এবোর্শান হারাম।
* মেডিকেলীয় তথা স্বাস্থ্যগত প্রয়োজনঃ এমন কোন কারণ যাতে মা অথবা বাচ্চা কোন একজনের জীবন ঝুকির সম্মুখীন হয়।
এই ধাপে ‘সামাজিক কারণ’ এ এবোর্শান করার অনুমতি নেই।
৩। ১২০ দিন অর্থাৎ ৪ মাস পূর্ণ হওয়ার পরঃ এই সময়ে একজন ফিরিশতা এসে ভ্রূণের দেহে ‘রূহ’ ফুকে দিয়ে যান এবং তাঁর ক্বদর লিখে দেয়া হয়ঃ সে কেমন আমল করবে, তাঁর রিযকের বণ্টন কেমন হবে, তার হায়াত কতদিন হবে এবং সে কি মন্দভাগ্য হবে না সোভাগ্যশালী হবে।
এই ধাপে রূহ এর উপস্থিতির কারণে ভ্রূণকে পূর্ণ মানব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই অবস্থায় এবোর্শান হারাম এবং তা মানবহত্যার শামিল বলে বিবেচ্য। শুধুমাত্র একটি কারণে কেউ কেউ এবোর্শানের অনুমতি দিয়েছেন, তা হলো- এমন কোন শারীরিক অবস্থা যাতে প্রেগন্যান্সি কন্টিনিউ করা হলে মায়ের জীবননাশ নিশ্চিত এমন আশংকা থাকে, কেবলমাত্র এই একটি অবস্থায় সন্তানের জীবনের উপরে মায়ের জীবনের প্রাধান্য দিয়ে মায়ের জীবন বাচানোর তাগিদে এবোর্শান জায়েয করা হয়েছে, বাকি সব অবস্থায় হারাম।
*** কেবল এবং কেবলমাত্র দারিদ্র্যের ভয়ে এবোর্শান করা পুরোপুরি হারাম। কেননা, ‘মুখ দিয়েছেন যিনি, আহার দেবেন তিনি’, এটাই সত্য। আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা নিজেই কুরআনে ঘোষণা দিচ্ছেনঃ
وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلَاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ إِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئًا كَبِيرًا…
“আর তোমরা দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করোনা। আমরাই তাদেরকে রিযক্ব দিয়ে থাকি এবং তোমাদেরকেও। নিশ্চয়ই তাদেরকে হত্যা করা বড় গর্হিত কাজ।” [সূরা ইসরা: আয়াত ৩১]
যেই মায়েরা, বাবারা নিজেরাই সন্তানের সূত্রপাত করে এবোর্শানের জন্য ডাক্তারের কাছে দৌড়ান, কিংবা যে ডাক্তার ভাই বোনেরা হিসেব নিকেশ ছাড়াই এবোর্শান করিয়ে দেন কিংবা দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের দোহাই দিয়ে এবোর্শানকে উৎসাহিত করেন, তারা চিন্তা করে দেখুন, কত বড় একটা কবীরা গুনাহ অবলীলায় করে ফেলছেন!! আল্লাহর কাছে এর হিসেব দিতে পারবেন??
[কোন বিষয়ে ভুল মনে হলে আমাকে ধরিয়ে দেবেন। অনিচ্ছাসত্ত্বেও গুরুত্বপূর্ণ একটা টপিকে ডাক্তার সমাজের পক্ষ থেকে অন্য ডাক্তারদের সচেতন করে দেয়া জরুরী মনে করেই লিখেছি, আমার কোন ভুল হয়ে গেলে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন।]
সংগৃহীত : (নিশাত তাম্মিম)
No comments:
Post a Comment