***” হিংসা “***
উদাহরণ স্বরূপ তাবুকের যুদ্ধে গমনের সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন সকলের নিকট দান চাইলেন, তখন ওমর ফারূক (রাঃ) বলেন যে, আমি আমার অর্ধেক মাল-সম্পদ নিয়ে হাযির হ’লাম। আর মনে মনে ভাবলাম, আজ আমি আবুবকরকে ছাড়িয়ে যাব। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে বললেন, مَا أَبْقَيْتَ لأَهْلِكَ؟ ‘তুমি তোমার পরিবারের জন্য কি রেখে এসেছ? বললাম, অতটা। এরপর আবুবকর এলেন তার সব মাল-সম্পদ নিয়ে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে একই কথা জিজ্ঞেস করলেন। জবাবে তিনি বললেন, أَبْقَيْتُ لَهُمُ اللهَ وَرَسُولَهُ ‘আমি তাদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে রেখে এসেছি’। তখন আমি বললাম, لاَ أُسَابِقُكَ إِلَى شَىْءٍ أَبَدًا ‘কোন ব্যাপারেই আমি কখনো আপনার সাথে পেরে উঠিনি’।[3]
এটা ছিল আখেরাতে নেকী অর্জনের প্রতিযোগিতা। তাই এটি প্রশংসনীয়। কিন্তু যখন এটি দুনিয়াবী সম্পদ অর্জনের প্রতিযোগিতা হবে। সেখানে প্রথমে হিংসা না থাকলেও পরে তা পারস্পরিক হিংসা ও বিদ্বেষে রূপ নেবে। যেমন আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের বললেন, إِذَا فُتِحَتْ عَلَيْكُمْ فَارِسُ وَالرُّومُ أَىُّ قَوْمٍ أَنْتُمْ যখন তোমরা পারস্য ও রোমক সাম্রাজ্য জয় করবে, তখন তোমরা কেমন হবে? আব্দুর রহমান বিন ‘আওফ বললেন, যেমন আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেনأَوْ غَيْرَ ذَلِكَ، تَتَنَافَسُونَ ثُمَّ تَتَحَاسَدُونَ ثُمَّ تَتَدَابَرُونَ ثُمَّ تَتَبَاغَضُونَ أَوْ نَحْوَ ذَلِكَ বরং অন্য কিছু। তোমরা প্রতিযোগিতা করবে। অতঃপর পরস্পরে হিংসা করবে। অতঃপর পরস্পরকে পরিত্যাগ করবে। অতঃপর পরস্পরে বিদ্বেষ করবে বা অনুরূপ করবে’।[4] তিনি বলেন, فَوَاللهِ مَا الْفَقْرَ أَخْشَى عَلَيْكُمْ وَلَكِنِّى أَخْشَى أَنْ تُبْسَطَ الدُّنْيَا عَلَيْكُمْ كَمَا بُسِطَتْ عَلَى مَنْ قَبْلَكُمْ فَتَنَافَسُوهَا كَمَا تَنَافَسُوهَا فَتُهْلِكَكُمْ كَمَا أَهْلَكَتْهُمْ ‘আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের দরিদ্রতাকে ভয় পাইনা। বরং আমি তোমাদের ব্যাপারে ভয় পাই যে, তোমাদের উপর দুনিয়াবী প্রাচুর্য আসবে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর এসেছিল। অতঃপর তোমরা প্রতিযোগিতা করবে। যেমন তারা করেছিল। অতঃপর প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে ধ্বংস করে দিবে, যেমন তাদেরকে ধ্বংস করেছিল’।[5] অন্য বর্ণনায় এসেছে,وَتُلْهِيَكُمْ كَمَا أَلْهَتْهُمْ ‘তোমাদেরকে উদাসীন করে দিবে, যেমন তাদেরকে উদাসীন করেছিল’। [6]
উক্ত হাদীছে যে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে, তার দু’টি দিক রয়েছে। এক- যদি উক্ত প্রাচুর্যকে ধ্বংস করার চিন্তা কারু মাথায় আসে, তবে সেটা হবে ‘হিংসা’। যা নিন্দনীয়। দুই- যদি তার হেদায়াত কামনা করে এবং নিজেও অনুরূপ প্রাচুর্যের কামনা করে, তবে সেটা হবে বৈধ ও প্রশংসনীয়। যাকে কুরআনে ও হাদীছে ‘তানাফুস’ (التنافس) বা প্রতিযোগিতা বলা হয়েছে।
[1]. বুখারী হা/৭৩; মিশকাত হা/২০২ ‘ইলম’ অধ্যায়।
[2]. মুসলিম শরহ নববী হা/৮১৬-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ।
[3]. আবুদাঊদ হা/১৬৭৮; তিরমিযী হা/৩৬৭৫; মিশকাত হা/৬০২১।
[4]. মুসলিম হা/২৬৬২; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৯৬।
[5]. তিরমিযী হা/২৪৬২, ইবনু মাজাহ হা/৩৯৯৭।
[6]. বুখারী হা/৬৪২৫; মুসলিম হা/২৯৬১; মিশকাত হা/৫১৬৩।
No comments:
Post a Comment