প্রিয় ভাই ও বোন, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
পৃথিবীতে অসংখ্য-অগণিত প্রশ্নের মধ্যে কোন প্রশ্নটি সব চেয়ে দামী? উত্তর হল, সেই প্রশ্নটিই সব চেয়ে দামী যা আল্লাহ তায়ালার পরিচয় দিতে মানবতাকে সাহায্য করে। যার মাধ্যমে আল্লাহর তাওহীদ বা একত্ববাদ সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। কারণ, এই তাওহীদের মাধ্যমেই মুসলিম জাতি অন্য সকল ধর্মের অনুসারীদের থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এটাই জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে মূল বিভাজন রেখা তৈরি করে। এ জন্যই আল্লাহ তায়ালা, মানুষ, জিন, ফেরেশতা সৃষ্টি করেছেন। জান্নাত, জাহান্নাম, হিসাব-নিকাশ ইত্যাদির ব্যবস্থা রেখেছেন। যুগে যুগে আসমানী কিতাব নাজিল হয়েছে, নবী-রাসূলগণকে প্রেরণ করা হয়েছে এই তাওহীদ তথা এক আল্লাহর দাসত্বের পথে আহবানের নিমিত্তে। এই তাওহীদ বিষয়েই নিচের প্রশ্নোত্তরটি। এতে বিস্তারিতভাবে তাওহীদের পরিচয় ও প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি তা মনোযোগ সহকারে পাঠ করবেন এবং অন্যের নিকট তা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করবেন। জাযাকুমুল্লাহ খাইরান।
- ১) তাওহীদুর রুবূবীয়্যাহ (রব হিসেবে আল্লাহর একত্ববাদ)
- ২) তাওহীদুল উলুহীয়্যাহ (মাবুদ হিসেবে আল্লাহর একত্ববাদ)
- ৩) তাওহীদুল আসমা অস্ সিফাত (আল্লাহর নাম গুণাবলীতে একত্ববাদ)
কুরআন ও হাদীছ গভীরভাবে গবেষণা করে আলেমগণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, তাওহীদ উপরোক্ত তিন প্রকারের মাঝে সীমিত।
هَلْ مِنْ خَالِقٍ غَيْرُ اللَّهِ يَرْزُقُكُمْ مِنَ السَّمَاءِ وَالاَرْضِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ
“আল্লাহ ছাড়া কোন স্রষ্টা আছে কি? যে তোমাদেরকে আকাশ ও জমিন হতে জীবিকা প্রদান করে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই।” (সূরা ফাতিরঃ ৩) কাফিরদের অন্তসার শুন্য মা’বূদদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে আল্লাহ বলেন:
“সুতরাং যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি কি তারই মত, যে সৃষ্টি করে না? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?” (সূরা নাহলঃ ১৭) সুতরাং আল্লাহ তাআ’লাই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা। তিনি সকল বস্তু সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন। আল্লাহ তাআ’লার কর্ম এবং মাখলুকাতের কর্ম সবই আল্লাহর সৃষ্টির অন্তর্ভূক্ত। তাই আল্লাহ তাআ’লা মানুষের কর্মসমূহও সৃষ্টি করেছেন- একথার উপর ঈমান আনলেই তাকদীরের উপর ঈমান আনা পূর্ণতা লাভ করবে। যেমন আল্লাহ বলেছেন,
وَ اللَّهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُوْنَ
تَبَارَكَ اللَّهُ اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ
“আল্লাহ সৃষ্টিকর্তাদের মধ্যে উত্তম সৃষ্টিকর্তা।” (সূরা মুমিনূনঃ ১৪) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কিয়ামতের দিন ছবি অংকনকারীদেরকে বলা হবে, তোমরা দুনিয়াতে যা সৃষ্টি করেছিলে, তাতে রূহের সঞ্চার কর। (বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল বুয়ূ)
উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তর এই যে, আল্লাহর মত করে কোন মানুষ কিছু সৃষ্টি করতে অক্ষম। মানুষের পক্ষে কোন অস্তিত্বহীনকে অস্তিত্ব দেয়া সম্ভব নয়। কোন মৃত প্রাণীকেও জীবন দান করা সম্ভব নয়। আল্লাহ ছাড়া অন্যের তৈরী করার অর্থ হল নিছক পরিবর্তন করা এবং এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তরিত করা মাত্র। মূলতঃ তা আল্লাহরই সৃষ্টি। ফটোগ্রাফার যখন কোন বস্তুর ছবি তুলে, তখন সে উহাকে সৃষ্টি করে না। বরং বস্তুটিকে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তন করে মাত্র। যেমন মানুষ মাটি দিয়ে পাখির আকৃতি তৈরী করে এবং অন্যান্য জীব-জন্তু বানায়। সাদা কাগজকে রঙ্গীন কাগজে পরিণত করে। এখানে মূল বস্তু তথা কালি, রং ও সাদা কাগজ সবই তো আল্লাহর সৃষ্টি। এখানেই আল্লাহর সৃষ্টি এবং মানুষের সৃষ্টির মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে উঠে।
تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
أَوْ مَا مَلَكْتُمْ مَفَاتِحَهُ
إِلا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ
“তবে তোমাদের স্ত্রীগণ অথবা তোমাদের আয়ত্বধীন দাসীগণ ব্যতীত।” (সূরা মুমিনূনঃ ৬) আরো অনেক দলীলের মাধ্যমে জানা যায় যে, আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরও রাজত্ব রয়েছে। তবে এই রাজত্ব আল্লাহর রাজত্বের মত নয়। সেটা অসম্পূর্ণ রাজত্ব। তা ব্যাপক রাজত্ব নয়। বরং তা একটা নির্দিষ্ট সীমা রেখার ভিতরে। তাই উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, যায়েদের বাড়ীতে রয়েছে একমাত্র যায়েদেরই কর্তৃত্ব ও রাজত্ব। তাতে আমরের হস্তক্ষেপ করার কোন ক্ষমতা নেই এবং বিপরীত পক্ষে আমরের বাড়ীতে যায়েদও কোন হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তারপরও মানুষ আপন মালিকানাধীন বস্তুর উপর আল্লাহ প্রদত্ত নির্ধারিত সীমা-রেখার ভিতরে থেকে তাঁর আইন-কানুন মেনেই রাজত্ব করে থাকে। এজন্যই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অকারণে সম্পদ বিনষ্ট করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
وَلَا تُؤْتُوا السُّفَهَاءَ أَمْوَالَكُمْ الَّتِي جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ قِيَامًا
“যে সমস্ত ধন-সম্পদ আল্লাহ তোমাদের জীবন ধারণের উপকরণ স্বরূপ দান করেছেন, তা তোমরা নির্বোধ লোকদের হাতে তুলে দিওনা।” (সূরা নিসাঃ ৫) মানুষের রাজত্ব ও মুলূকিয়ত খুবই সীমিত। আর আল্লাহর মালিকান ও রাজত্ব সর্বব্যাপী এবং সকল বস্তুকে বেষ্টনকারী। তিনি তাঁর রাজত্বে যা ইচ্ছা, তাই করেন। তাঁর কর্মের কৈফিয়ত তলব করার মত কেউ নেই। অথচ সকল মানুষ তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ
“সৃষ্টি করা ও আদেশ দানের মালিক একমাত্র তিনি। বিশ্ব জগতের প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলা অতীব বরকতময়।” (সূরা আ’রাফঃ ৫৪) আল্লাহর এই পরিচালনা সর্বব্যাপী। কোন শক্তিই আল্লাহর পরিচালনাকে রুখে দাঁড়তে পারে না। কোন কোন মাখলূকের জন্যও কিছু কিছু পরিচালনার অধিকার থাকে। যেমন মানুষ তার ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি এবং কর্মচারীদের উপর কর্তৃত্ব করে থাকে। কিন্তু এ কর্তৃত্ব নির্দিষ্ট একটি সীমার ভিতরে। উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমাদের বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণিত হল যে, তাওহীদে রুবূবীয়্যাতের অর্থ সৃষ্টি, রাজত্ব এবং পরিচালনায় আল্লাহকে একক হিসাবে বিশ্বাস করা।
إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
“নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি শির্কে লিপ্ত হবে, আল্লাহ তার উপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তার ঠিকানা জাহান্নাম। আর জালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।” (সূরা মায়িদাঃ ৭২) কুরআনের প্রতিটি পাঠকই একথা অবগত আছে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সমস্ত কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করেছেন, তাদের জান-মাল হালাল মনে করেছেন এবং তাদের নারী-শিশুকে বন্দী করেছেন ও তাদের দেশকে গণীমত হিসাবে দখল করেছেন, তারা সবাই একথা স্বীকার করত যে, আল্লাহই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালক। তারা এতে কোন সন্দেহ পোষণ করত না। কিন্তু যেহেতু তারা আল্লাহর সাথে অন্যেরও উপাসনা করত, তাই তারা মুশরিক হিসাবে গণ্য হয়েছে এবং তাদের জান-মাল হরণ হালাল বিবেচিত হয়েছে।
সুতরাং আল্লাহ নিজেকে যে নামে পরিচয় দিয়েছেন বা নিজেকে যে গুণাবলীতে গুণান্বিত করেছেন, তাঁর উপর ঈমান আনয়ন করা আবশ্যক। এ সমস্ত নাম ও গুণাবলীর আসল অর্থ আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করে তার উপর ঈমান আনতে হবে- কোন প্রকার ধরণ বর্ণনা করা বা দৃষ্টান্ত পেশ করা যাবেনা। এই প্রকারের তাওহীদে আহলে কিবলা তথা মুসলমানদের বিরাট একটি অংশ গোমরাহীতে পতিত হয়েছে। এক শ্রেণীর লোক আল্লাহর সিফাতকে অস্বীকারের ক্ষেত্রে এতই বাড়াবাড়ি করেছে যে, এর কারণে তারা ইসলাম থেকে বের হয়ে গেছে। আর এক শ্রেণীর লোক মধ্যম পন্থা অবলম্বন করেছে। আর এক শ্রেণীর লোক আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের কাছাকাছি। কিন্তু সালাফে সালেহীনের মানহাজ হল, আল্লাহ নিজের জন্য যে নাম নির্ধারণ করেছেন এবং নিজেকে যে সবগুণে গুণাম্বিত করেছেন, সে সব নাম ও গুণাবলীরর উপর ঈমান আনয়ন করতে হবে।
وَقَالَتْ الْيَهُودُ يَدُ اللَّهِ مَغْلُولَةٌ غُلَّتْ أَيْدِيهِمْ وَلُعِنُوا بِمَا قَالُوا بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوطَتَانِ يُنفِقُ كَيْفَ يَشَاءُ
“ইয়াহুদীরা বলে আল্লাহর হাত বন্ধ হয়ে গেছে। বরং তাদের হাতই বন্ধ। তাদের উক্তির দরুন তারা আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হয়েছে, বরং আল্লাহর উভয় হাত সদা উম্মুক্ত, যেরূপ ইচ্ছা ব্যয় করেন।” (সূরা মায়িদাঃ ৬৪)
এখানে আল্লাহ তাআ’লা নিজের জন্য দু’টি হাত সাব্যস্ত করেছেন। যা দানের জন্য সদা প্রসারিত। সুতরাং আল্লাহর দু’টি হাত আছে। এর উপর ঈমান আনতে হবে। কিন্তু আমাদের উচিৎ আমরা যেন অন্তরের মধ্যে আল্লাহর হাত কেমন হবে সে সম্পর্কে কোন কল্পনা না করি এবং কথার মাধ্যমে যেন তার ধরণ বর্ণনা না করি ও মানুষের হাতের সাথে তুলনা না করি। কেননা আল্লাহ বলেছেন,
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
“কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা শুরাঃ ১১) আল্লাহ বলেন,
قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّي الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
“হে মুহাম্মাদ! আপনি ঘোষণা করে দিন যে, আমার প্রতিপালক প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা, পাপকাজ, অন্যায় ও অসংগত বিদ্রোহ ও বিরোধিতা এবং আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করা, যার পক্ষে আল্লাহ কোন দলীল-প্রমাণ অবতীর্ণ করেন নি, আর আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যে সম্বন্ধে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই, (ইত্যাদি কাজ ও বিষয় সমূহ) হারাম করেছেন।” (সূরা আরাফঃ ৩৩) আল্লাহ আরো বলেন,
وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا
“যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নাই, সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হয়ো না, নিশ্চয়ই কর্ণ, চক্ষু, অন্তর ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে।” (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৩৬) সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর হাত দু’টিকে মানুষের হাতের সাথে তুলনা করল, সে আল্লাহর বাণী “কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়” একথাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল এবং আল্লাহর বাণী,
فَلَا تَضْرِبُوا لِلَّهِ الْأَمْثَالَ
“তোমরা আল্লাহর জন্য দৃষ্টান্ত পেশ করো না।” (সূরা নাহলঃ ৭৪) এর বিরুদ্ধাচরণ করল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর গুণাবলীর নির্দিষ্ট কোন কাইফিয়ত বর্ণনা করল, সে আল্লাহর ব্যাপারে বিনা ইলমে কথা বলল এবং এমন বিষয়ের অনুসরণ করল, যে সম্পর্কে তার কোন জ্ঞান নেই।
আল্লাহর সিফাতের আরেকটি উদাহরণ পেশ করব। তা হল আল্লাহ আরশের উপরে সমুন্নত হওয়া। কুরআনের সাতটি স্থানে আল্লাহ তাআ’লা উল্লেখ করেছেন যে তিনি আরশের উপরে বিরাজমান। প্রত্যেক স্থানেই (استوى على العرش) “ইসতাওয়া আলাল আরশি” বাক্যটি ব্যবহার করেছেন। আমরা যদি আরবী ভাষায় ইসতিওয়া শব্দটি অনুসন্ধান করতে যাই তবে দেখতে পাই যে,(استوى) শব্দটি সব সময় (على) অব্যয়ের মাধ্যমে ব্যবহার হয়ে থাকে। আর (استوى) শব্দটি এভাবে ব্যবহার হলে ‘সমুন্নত হওয়া’ এবং ‘উপরে হওয়া’ ব্যতীত অন্য কোন অর্থে ব্যবহার হয় না। সুতরাং الرَّحْمَنُ عَلَىْ العَرْشِ اسْتَوَى এবং এর মত অন্যান্য আয়াতের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ সৃষ্টি জগতের উপরে সমুন্নত হওয়া ছাড়াও আরশের উপরে বিশেষ একভাবে সমুন্নত। প্রকৃতভাবেই আল্লাহ আরশের উপরে। আল্লাহর জন্য যেমনভাবে সমুন্নত হওয়া প্রযোজ্য, তিনি সেভাবেই আরশের উপরে সমুন্নত। আল্লাহর আরশের উপরে হওয়া এবং মানুষের খাট-পালং ও নৌকায় আরোহনের সাথে কোন সামঞ্জস্যতা নেই। এমনিভাবে মানুষের যানবাহনের উপরে চড়া এবং আল্লাহর আরশের উপরে হওয়ার মাঝে কোন সামঞ্জস্যতা নেই। আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
وَجَعَلَ لَكُمْ مِنْ الْفُلْكِ وَالْأَنْعَامِ مَا تَرْكَبُونَ لِتَسْتَوُوا عَلَى ظُهُورِهِ ثُمَّ تَذْكُرُوا نِعْمَةَ رَبِّكُمْ إِذَا اسْتَوَيْتُمْ عَلَيْهِ وَتَقُولُوا سُبْحانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنقَلِبُونَ
إِنَّا جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
(উৎস: আল্লামা মুহাম্মাদ বিন সলিহ আল উছাইমীন (রহ:) কর্তৃক প্রণীত ফাওয়া আরকানুল ইসলাম, ঈমান অধ্যায়, ১ নং প্রশ্ন। )
অুনবাদক: শাইখ আব্দুল্লাহ শহেদ মাদানী
সম্পাদক: শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী
No comments:
Post a Comment