সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফতোয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (আল-লাজনাতুদ দা’ইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) প্রদত্ত ফতোয়া—
প্রশ্ন: “অনেক বিকলাঙ্গ ও ভিখারী মক্কা মুকাররমায় হেরেম শরীফের মধ্যে হাজি, জেয়ারতকারী ও ওমরাকারীদের কাছে হাত পাতে। বিশেষ করে সাফা-মারওয়ার মধ্যবর্তী রাস্তায় তারা হাত প্রসারিত করে। আমি একবার এরকম কথা শুনেছি যে, মাসজিদের মধ্যে দান-খয়রাত করা না-জায়েজ। প্রশ্ন হলো—হেরেমের মধ্যে তাদেরকে দান করা কি জায়েজ? বিশেষত দুই হেরেম শরীফে এবং আমভাবে সকল মাসজিদে দান-খয়রাত করা কি জায়েজ? আমাদেরকে বিষয়টি অবহিত করুন। জাযাকুমুল্লাহু খাইরা।”
উত্তর: “মাসজিদে ভিক্ষা চাওয়ার বিধান প্রসঙ্গে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) যে উত্তর দিয়েছেন, তা হলো—“মাসজিদের ভিতরে হোক, চাই বাহিরে হোক, মৌলিকভাবে জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ভিক্ষা চাওয়া হারাম। যদি তার প্রয়োজন থাকে, আর সে মাসজিদে ভিক্ষা চায়, মানুষের ঘাড় ডিঙিয়ে যেয়ে অথবা অন্য কোনোভাবে মানুষকে কষ্ট দেয় না, সে যা বর্ণনা করে এবং নিজের যে অবস্থা ব্যক্ত করে—সে ব্যাপারে মিথ্যার আশ্রয় নেয় না, এত জোরে কথা বলে না, যার কারণে লোকেরা কষ্ট পায়—যেমন: খুতবা চলাকালীন সময়ে ভিক্ষা চাওয়া, অথবা লোকেরা মনোযোগ দিয়ে ‘ইলমী আলোচনা শুনছে, সেখানে সে লোকদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে প্রভৃতি—তাহলে তার জন্য ভিক্ষা চাওয়া জায়েজ আছে। আর আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।”
পক্ষান্তরে মাসজিদের অভ্যন্তরে দান-খয়রাত করায় কোনো সমস্যা নেই। ইমাম মুসলিম তাঁর ‘সাহীহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, জারীর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, “আমরা ভোরের দিকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এ সময় তাঁর কাছে নগ্নপদ, বস্ত্রহীন, গলায় চামড়ার আবা পরিহিত ও নিজেদের তরবারি ঝুলন্ত অবস্থায় একদল লোক আসল। এদের অধিকাংশ কিংবা সকলেই মুদ্বার গোত্রের লোক ছিল। অভাব অনটনে তাদের এ করুণ অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মুখমণ্ডল পরিবর্তিত ও বিষণ্ন হয়ে গেল। তিনি ভিতরে প্রবেশ করলেন, অতঃপর বেরিয়ে আসলেন। তিনি বিলাল (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে আজান দিতে নির্দেশ দিলেন। বিলাল (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) আজান ও ইকামাত দিলেন। নামাজ শেষ করে তিনি উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন এবং এ আয়াত পাঠ করলেন: “হে মানবজাতি, তোমরা নিজেদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে একটি মাত্র ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন। … নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের রক্ষণাবেক্ষণকারী।” (সূরাহ নিসা: ১) অতঃপর তিনি সূরা হাশরের এ আয়াত পাঠ করলেন: “হে ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। প্রত্যেক ব্যক্তি যেন ভবিষ্যতের জন্য নিজে কী সঞ্চয় করেছে, সেদিকে লক্ষ করে।” (সূরাহ হাশর: ১৮)
অতঃপর উপস্থিত লোকদের কেউ তার দিনার, কেউ দিরহাম, কেউ কাপড়, কেউ এক সা‘ আটা ও কেউ এক সা‘ খেজুর দান করল। অবশেষে তিনি বললেন, “এক টুকরা খেজুর হলেও নিয়ে আসো।” বর্ণনাকারী বলেন, আনসার সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি একটি বিরাট থলি নিয়ে আসলেন। এর ভারে তার হাত অপারগ হয়ে যাচ্ছিল কিংবা অপারগ হয়ে গেল। অতঃপর লোকেরা সারিবদ্ধভাবে একের পর এক দান করতে থাকল। ফলে খাদ্য ও কাপড়ের দুটি স্তুপ হয়ে গেল। এ দেখে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চেহারা মুবারক খাঁটি সোনার ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে হাসতে লাগল।
তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, “যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোনো উত্তম প্রথা বা কাজের প্রচলন করে, সে তার উক্ত কাজের সওয়াব পাবে এবং তার পরে যারা তার এ কাজ দেখে তা করবে, সে এর বিনিময়েও সওয়াব পাবে। তবে এতে তাদের সওয়াব কোনো অংশে হ্রাস করা হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোনো খারাপ প্রথা বা কাজের প্রচলন করবে, তাকে তার এ কাজের পাপ বহন করতে হবে। তারপর যারা তাকে অনুসরণ করে এ কাজ করবে তাদের সমপরিমাণ পাপও তাকে বইতে হবে। তবে এতে তাদের পাপ কোনো অংশেই হ্রাস করা হবে না।” (সাহীহ মুসলিম, হা/১০১৭; ‘জাকাত’ অধ্যায়; অধ্যায় নং: ১৩ পরিচ্ছেদ: ২০)
আর আল্লাহই তৌফিকদাতা। হে আল্লাহ, আমাদের নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার পরিজন ও সাহাবীগণের ওপর আপনি দয়া ও শান্তি বর্ষণ করুন।”
প্রশ্ন: “আমি একটি মাসজিদের ইমাম। নামাজের পর আমি অনেক ভিক্ষুকের মুখোমুখি হই। আমার জন্য ভিক্ষুকদেরকে কথা বলা থেকে বারণ করা এবং তাদেরকে মাসজিদের গেটের পাশে চলে যেতে বলা কি জায়েজ হবে, না কি না-জায়েজ হবে?”
উত্তর: “আমি এমন কোনো শার‘ঈ দলিল জানি না, যা মাসজিদের মধ্যে ভিক্ষা চাওয়া থেকে অভাবী ব্যক্তিকে বাধা দেওয়া আবশ্যক গণ্য করে। তবে যদি জানা যায় যে, সে একজন মিথ্যুক, সে আসলে অভাবী নয়, তাহলে তাকে এই কাজে বাধা দিতে হবে। আল্লাহ সবাইকে উত্তম কাজের তৌফিক দিন।” [২]
[১]. ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ, খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ২৯০; ফতোয়া নং: ৬৬৫১; প্রশ্ন নং: ৪; ফতোয়ার আরবি টেক্সট আল-আইম্মাহ (alaemmah) ডট কম থেকে সংগৃহীত।
[২]. মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ৩০; পৃষ্ঠা: ১৭২; গৃহীত: binbaz.org.sa।
No comments:
Post a Comment