মূলঃ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দিন আল আলবানি
ভাষান্তরঃ আবু হিশাম মুহাম্মাদ ফুয়াদ
১১ নং মূলনীতিঃ কোনো দুর্বল (দ্বঈফ) হাদীস দূর্বলতাসমূহ উল্লেখ না করে বর্ণনা করা বৈধ নয়।
বর্তমান যুগে বিশেষ করে এই সময়টায় এমন অনেক লেখক রয়েছেন যারা তাদের মাযহাবী নানা ইখতিলাফে বিশেষত সে ক্ষেত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনায় তারা সে হাদীসের দুর্বলতাগুলো উল্লেখ না করেই বর্ণনা করে থাকেন। অধিকন্তু এটি সুন্নাহর প্রতি অবহেলা বা ইচ্ছাকৃত আর নয়তো অভিজ্ঞদের কিতাবাদি থেকে বের করার আলসেমির ফসল। আবার তাদের মধ্যে কেউ কেউ অর্থাৎ কোনো কোনো অভিজ্ঞও এ বিষয়ে কোমলতা দেখান বিশেষ করে আমলের ফযিলতের বর্ণনাগুলোর ক্ষেত্রে।
আমলের ফাযায়েলে আসা দ্বঈফ হাদীসগুলো বর্ণনায় চুপ থাকার হুকুম এটি। আর তাহলে দ্বীনের আহকামের ক্ষেত্রে যে দ্বইফ হাদিস করবে তার হুকুমটি কেমন হবে?
দেখুন, যে-ই এমনটি করুক না কেন সে এই দু রকমের কোনো একটিঃ
১।
- হতে পারে তিনি হাদীসের দুর্বলতাসমূহ জানেন কিন্তু তিনি সেগুলো জানাচ্ছেন না। সে ক্ষেত্রে তিনি মুসলিমদের সাথে প্রতারণা করছেন এবং তিনি অবশ্যই উপরোক্ত সতর্কবার্তার অন্তর্ভুক্ত হবেন।
ইবনে হিব্বান তাঁর আদ দু‘আফা (১/৭-৮) তে লিখেছেন,
ইবনে আব্দিল হাদি নকল করেছেন তাঁর আস সারিমুল মুনক্বি (১৬৫-১৬৬)-তে এবং আমি এর পক্ষে।
২।
- আর নয়তো উনি হাদীসের দুর্বলতাগুলো জানেন না। সে ক্ষেত্রেও তিনি গুণাহ-র কাজ করছেন। তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দিকে কোনো কিছু নিসবত করেছেন জ্ঞান ছাড়াই।
রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“একজনের মিথ্যাবাদী হবার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে যা শোনে তাই বলে বেড়ায়।”[৩]
তাই, সে রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার পাপের ভাগিদার হবে।
আর এটি ইঙ্গিত করে যে, সে তাদের মধ্যে থেকে যারা যা শোনে, যা বই থেকে পড়ে তাই বলে বেড়ায় এবং এটা অবশ্যই রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর মিথ্যার শামিল। তাই সে দুই মিথ্যাবাদির একজনঃ
- আদি মিথ্যুক – যে মিথ্যা উৎপন্ন করে।
- অপর মিথ্যুক – যে মিথ্যা ছড়িয়ে দেয়।
ইবনে হিব্বান আরো বলেন (১/৯)
“ এই বর্ণনাটি প্রত্যেকের জন্য সতর্কবাণী যে তারা যেনো উক্ত হাদীসের সহীহ হবার ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে তা বর্ণনা না করে।”
আন নাবাওয়ী স্পষ্ট করে বলেছেন,
“যে ব্যক্তি হাদীসের দূর্বলতা-সবলতার বিষয়গুলো চেনে না বা জানেই না তার জন্য হাদীস বর্ণনা করা জায়েজ নয় যতক্ষন না সে ঐ বিষয়ে গবেষণা করে, হাদীসটি যাচাই করে অথবা সে বিষয়ে যারা অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী কারো কাছ থেকে জেনে না নিচ্ছেন।[৪]
বিস্তারিত জানতে দেখুন ‘আদ দয়ীফা’– র মুকাদ্দামা (ভূমিকা) পৃঃ ১০-১২
-নাসিরুদ্দিন আল আলবানি, তামামুল মিন্নাহ ফিত তা’লিক্বি ‘আলা ফিক্বহিস সুন্নাহ, ২য় সংস্করণ, আম্মান, দারুর রায়াহ লিন নাশর ওয়াত তাওযি, ১৪০৮ হিজরি [১৯৮৮], http://ia801305.us.archive.org/34/items/FP0045/0045.pdf , পৃষ্ঠাঃ ৩২-৩৪
পাদটীকা
[১] বা’ঈথ ‘আলা ইনকারুল বিদ’আ ওয়াল হাওয়াদিথ, পৃঃ ৩০
[২] সাহীহ মুসলিম, আবুল হুসাইন আসাকির আদদীন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ আন নাইসাবুরি, ১/৭; উইযারাত আস শু’উন আল ইসলামিয়্যাহ ওয়া আল দা’ওয়াহ আল ইরশাদ আল সাওদিয়্যাহ
[৩] মুসলিম বর্ণনা করেন (নং ৫) তাঁর ‘সাহীহ’ -র ভূমিকায়। এটি আস সাহীহাহ তে (নং ২০৫) -ও এসেছে।
[৪]আরো দেখুন ‘ক্বাওয়া’ঈদ আত তাহদীথ’
স্বত্বাধিকারী © www.darhadith.com
No comments:
Post a Comment