সাধারণত: মানুষ অর্ধ শাবানের দিনের বেলা রোযা রাখা ও রাতে নফল নামায পড়ে কতিপয় বানোয়াট ও দুর্বল হাদিসের উপরে ভিত্তি করে। নিম্নে এ ধরণের কিছু হাদিস পেশ করা হল মুহাদ্দিসদের পর্যালোচনা সহ:
● ক) আলী ইবনে আবী তালিব রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যখন শাবান মাসের পনের তারিখ আসে তোমরা দিনে রোযা রাখ আর রাতে নফল নামায আদায় কর। কারণ, এ রাতে আল্লাহ তায়ালা নিচের আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন, এমন কেউ আছো যে আমার নিকট ক্ষমা চাও আমি তাকে ক্ষমা করে দিব? এমন কেউ আছো যে আমার নিকট রিযিক চাও আমি তাকে রিযিক দিব? এমন কেউ আছো যে আমার কাছে বিপদ থেকে মুক্তি চাও আমি তাকে বিপদ থেকে মুক্তি দিব?…এভাবে আল্লাহ তায়ালা ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত ডাকতে থাকেন।”
► হাদিসটির মান: মুহাদ্দিসের মতে এ হাদিসটি মাউযু (জাল/বানোয়াট) হাদিস। [পর্যালোচনা দেখুন- ১]
● খ) “হে আলী, যে ব্যক্তি অর্ধ শাবানের রাত্রিতে এমনভাবে একশত রাকাত নামায আদায় করবে যে, প্রতি রাকআতে সূরা ফাতিহার পরে দশবার কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’সূরা পাঠ করবে আল্লাহ তাআলা তার সে রাত্রির যাবতীয় প্রার্থনা পূরণ করবেন।”
► হাদিসটির মান: এটি একটি মাউযু (জাল/বানোয়াট) হাদিস। [পর্যালোচনা দেখুন-২]
গ) “যে ব্যক্তি অর্ধ শাবানের রাতে বার রাকাত নামায পড়বে-প্রতি রাকাতে কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’সূরাটি পড়বে ত্রিশ বার-তাহলে সে জান্নাতে তার আসন না দেখে বের হবে না।”
► হাদিসটির মান: এটি একটি মউযু বা বানোয়াট হাদিস। [পর্যালোচনা দেখুন-৪]
[২ ] ইবনুল জাওযী উক্ত হাদিসটি মাওয়ুআত কিতাবে তিনটি সনদে উল্লেখ করে বলেছেন, এটি যে বানোয়াট তাতে কোন সন্দেহ নেই। তিনটি সনদেই এমন সব বর্ণনাকারী রয়েছে যাদের অধিাকংশই পরিচয় অজ্ঞাত। আরও কতিপয় বর্ণনাকারী খুব দুর্বল। সুতরাং হাদিসটি নিশ্চিতভাবে জাল। অথচ আমরা অনেক মানুষকে দেখি যারা এ সারা রাত ধরে নামায পড়ার পর এদের ফজর নামায ছুটে যায় কিংবা সকালে যখন উঠে অলসতা সহকারে উঠে। কিছু মসজিদের ইমাম শবে বরাতের এ সব নামাযকে সাধারণ জনগণকে একত্রিত করার এবং এর মাধ্যমে নিজেদের রুটি-রুজি ও উন্নতির মাধ্যমে হিসেবে গ্রহণ করেছে। এরা জনগণকে একত্রিত করে তাদের আলোচনা সভাগুলোতে বিভিন্ন কিচ্ছা-কাহিনী আলোচনা করে থাকে। মূলত: এ সবই ভ্রান্ত এবং হকের সাথে সম্পর্ক হীন।
ইব্নুল কায়্যেম জাওযিয়াহ আল মানারুল মুনীফ কিতাবে উক্ত হাদিসটি উল্লেখ করে বলেন: জাল হাদিস সমূহের মধ্যে অর্ধ শাবানের রাত্রের নামায পড়া সম্পর্কিত উক্ত হাদিসটি অন্যতম। এর পর তিনি বলেন: আজব ব্যাপার হল, কিছু মানুষ যারা হাদিসের কিছু ঘ্রাণ পেয়েছে তারাও এ সকল উদ্ভট হাদিস দেখে প্রতারিত হয়ে শবে বরাতের নামায পড়া শুরু করে দেয়।
অনুরূপভাবে ইমাম সুয়ূতী রা. উপরোক্ত হাদিসটি আল লাআলী আল মাসনূআ ’ কিতাবে উল্লেখ করে সেটিকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন। তদ্রূপ ইমাম শাওকানী রা. এটিকে আল ফাওয়ায়েদুল মাজমূআহ কিতাবে জাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
[৩] এ হাদীসটিও ইব্নুল জাওযী রা. তার আল মাওযূআত কিতাবে উল্লেখ করেছেন। এ হাদীসটিও জাল। এ হাদিসটির সনদে এমন একদল বর্ণনাকারী রয়েছে যাদের সকলের পরিচয় অজ্ঞাত। অনুরূপভাবে ইমাম সূয়ূতী রহঃ. আল লাআলী কিতাবে এবং ইমাম ইব্নুল কয়্যেম রহঃ. আল মানারুল মুনীফ কিতাবে উক্ত হাদিসটি উল্লেখ করে এটিকে জাল হাদিস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
No comments:
Post a Comment