ভাল মৃত্যুর উপায়
==================================================================
এক:
হুসনুল খাতিমা বা ভাল মৃত্যু…
ভাল মৃত্যু মানে- মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহর ক্রোধ উদ্রেককারী গুনাহ হতে বিরত থাকতে পারা, পাপ হতে তওবা করতে পারা, নেকীর কাজ ও ভাল কাজ বেশি বেশি করার তাওফিক পাওয়া এবং এ অবস্থায় মৃত্যু হওয়া। এই মর্মে আনাস বিন মালিক (রাঃ) হতে সহিহ হাদিসে এসেছে তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
“আল্লাহ যদি কোন বান্দার কল্যাণ চান তখন তাকে (ভাল) কাজে লাগান।” সাহাবায়ে কেরাম বললেন: কিভাবে আল্লাহ বান্দাকে (ভাল) কাজে লাগান? তিনি বলেন: “মৃত্যুর পূর্বে তাকে ভাল কাজ করার তাওফিক দেন।” [মুসনাদে আহমাদ (১১৬২৫), তিরমিযি (২১৪২), আলবানি ‘সিলসিলা সহিহা’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন (১৩৩৪)।
ভাল মৃত্যুর বেশ কিছু আলামত আছে। এর মধ্যে কোন কোন আলামত শুধু মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তি নিজে বুঝতে পারে এবং কোন কোন আলামত অন্যান্য মানুষও জানতে পারে।
দুই:
মৃত্যুকালে বান্দার নিকট তার ভাল মৃত্যুর যে আলামত প্রকাশ পায় সেটা হচ্ছে- বান্দাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অনুগ্রহ লাভের সুসংবাদ দেয়া হয়। এই মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
“নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় পেও না, চিন্তিত হইও না এবং তোমরা প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর।”[সূরা ফুসসিলত, আয়াত: ৩০]
মৃত্যুকালে মুমিন বান্দাদেরকে এই সুসংবাদ দেয়া হয়। দেখুন: তাফসিরে সাদী, পৃষ্ঠা- ১২৫৬।
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন: “হাদিসের অর্থ হচ্ছে- যখন মানুষের মৃত্যুর গড়গড়া শুরু হয়ে যায়, যে অবস্থায় আর তওবা কবুল হয় না, সে অবস্থার পছন্দ-অপছন্দকে এখানে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। মুমূর্ষু ব্যক্তির কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে পড়ে, তার পরিণতি কী হতে যাচ্ছে সেটা তার সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়।
• ভাল মৃত্যুর আলামত অনেক। আলেমগণ কুরআন-হাদিস খুঁজে এই আলামতগুলো বের করার চেষ্টা করেছেন। এই আলামতগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১. মৃত্যুর সময় ‘কালেমা’ পাঠ করতে পারা।
২. মৃত্যুর সময় কপালে ঘাম বের হওয়া।
৩. জুমার রাতে বা দিনে মৃত্যুবরণ করা।
৪. আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা।
দলিল হচ্ছে আল্লাহ তাআলার বাণী:
“আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়,তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত। আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তার প্রেক্ষিতে তারা আনন্দ উদযাপন করছে। আর যারা এখনও তাদের কাছে এসে পৌঁছেনি তাদের পেছনে তাদের জন্যে আনন্দ প্রকাশ করে। কারণ, তাদের কোন ভয় ভীতিও নেই এবং কোন চিন্তা ভাবনাও নেই। আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের জন্যে তারা আনন্দ প্রকাশ করে এবং তা এভাবে যে, আল্লাহ, ঈমানদারদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৯-১৭১]
৫. প্লেগ রোগে মারা যাওয়া।
এবং
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি তখন তিনি আমাকে জানান যে, “এটি হচ্ছে- আল্লাহর পক্ষ থেকে আযাব। আল্লাহ যাদেরকে শাস্তি দিতে চান তাদের উপর এই রোগ নাযিল করেন। আর আল্লাহ এই রোগ মুমিনদের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছেন। যে মুমিন প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ এলাকাতে অবস্থান করবে, ধৈর্যধারণ করবে, সওয়াবের প্রত্যাশা করবে এবং এই একীন রাখবে যে, আল্লাহ তার জন্য যা লিখে রেখেছেন সেটাই ঘটবে সে ব্যক্তি শহিদের সমান সওয়াব পাবে।” [সহিহ বুখারি (৩৪৭৪)]
৬. যে কোন পেটের পীড়াতে মৃত্যুবরণ করা।
৭. কোন কিছু ধ্বসে পড়ে অথবা পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করা।
৮. প্রসবউত্তর প্রসূতির মৃত্যু অথবা গর্ভবতী অবস্থায় নারীর মৃত্যু।
এর দলিল হচ্ছে আবু দাউদ (৩১১১) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
সুররা (নাভি): নবজাতকের জন্মের পর ধাত্রী নাড়ী কাটেন এবং সামান্য কিছু অংশ রেখে দেন। যে অংশটুকু রেখে দেন সেটাকে সুররা বা নাভি বলে। আর যে অংশটুকু কেটে ফেলেন সেটাকে সুরার (নাভিরজ্জু) বলা হয়।
৯. আগুনে পুড়ে, প্লুরিসি (ফুসফুসের আবরক ঝিল্লির প্রদাহজনিত রোগবিশেষ) এবং যক্ষ্মা রোগে মৃত্যু।
(সংকলক বলেন, এই হাদিসের জনৈক বর্ণনাকারী বায়তুল মোকাদ্দাসের খাদেম আবুল আওয়াম হাদিসটির অংশ হিসেবে “আগুনে পুড়ে মৃত্যু ও যক্ষ্মা রোগ” এর কথাও বর্ণনা করেছেন।) আলবানি বলেছেন: হাদিসটি হাসান-সহিহ।[সহিহুত তারগিব ওয়াত তারহিব (১৩৯৬)]
১০. নিজের ধর্ম, সম্পদ ও জীবন রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করা।
১১. আল্লাহর রাস্তায় প্রহরীর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে ব্যক্তি মারা যায় সেও শহিদ।
১২. ভাল মৃত্যুর আরো একটি আলামত হলো- নেক আমলরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা।
এই আলামতগুলো ব্যক্তির ভাল মৃত্যুর সুসংবাদ দেয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা নির্দিষ্টভাবে কোন ব্যক্তির ব্যাপারে এ নিশ্চয়তা দিব না যে, তিনি জান্নাতি। শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাদের ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন তারা ছাড়া। যেমন চার খলিফার ব্যাপারে তিনি নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন।
আল্লাহ আমাদের সকলকে ভাল মৃত্যু দান করুন।
No comments:
Post a Comment