ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকুরী করার বিধান
==================================================================
আমাদের দেশে ইনস্যুরেন্স বা বীমা কোম্পানিগুলো অধিকাংশই বাণিজ্যিক, যা সবই প্রতারণা ও সুদ নির্ভর। তাই এ সকল কোম্পানিতে চাকুরী করা বা তাতে অর্থ লগ্নি করা হারাম।
আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমি (ওআইসির একটি শাখা সংস্থা) এবং সউদী আরবের উচ্চ উলামা পরিষদ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, সব ধরণের বাণিজ্যিক বীমা হারাম। চাই তা জীবন বীমা হোক বা সম্পদের বীমা হোক।
তার কারণ সমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হল:
প্রথমত: বাণিজ্যিক জীবন বীমা হচ্ছে এমন একটি চুক্তি যাতে অর্থের বিনিময় হয়ে থাকে। কিন্তু তাতে আছে কঠিন ধোঁকার সম্ভাবনা। কেননা বীমাকারীর পক্ষে চুক্তির সময় একথা জানা সম্ভব নয় যে, কি পরিমাণ অর্থ সে প্রদান করবে এবং কি পরিমাণ গ্রহণ করবে।
এমনও হতে পারে যে, সে হয়তো এক বা দু কিস্তি অর্থ প্রদান করল এবং তারপরেই কোন দুর্ঘটনা ঘটল। তখন বীমা কর্তৃপক্ষ শর্ত অনুযায়ী বিরাট পরিমাণ অর্থ দিতে বাধ্য থাকবে।
হতে পারে কোন দুর্ঘটনাই ঘটল না। তখন বীমাকারী সকল কিস্তি পরিশোধ করতেই থাকবে। অথচ বেঁচে থাকতে সে শেষে কিছুই পাবে না; তার মৃত্যুর পর তার ওয়ারিছগণ পাবে।
দ্বিতীয়ত: বাণিজ্যিক বীমা মূলত: এক ধরণের জুয়া। কেননা এখানে অর্থ আদান-প্রদানে ঝুঁকি ও প্রতারণার সুযোগ আছে। বিনা অপরাধে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ আছে আবার বিনা প্ররিশ্রমে ও বিনিময় ছাড়াই অধিক লাভবান হওয়ারও সুযোগ আছে।
কেননা বীমাকারী কয়েক কিস্তি দেয়ার পর কোন দুর্ঘটনায় পতিত হল, তখন কর্তৃপক্ষ বীমার যাবতীয় অর্থ দিতে বাধ্য থাকবে, ফলে কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর যদি কোন দুর্ঘটনা না ঘটে তবে কর্তৃপক্ষ বীমার কিস্তির মাধ্যমে লাভবান হতেই থাকবে।
অথচ তাদের এই লাভ বিনিময় ছাড়াই হচ্ছে। অতএব এখানে যখন অজ্ঞতা সুস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তখন তা নিষিদ্ধ জুয়ার পর্যায়ে পড়ে যাচ্ছে।
তৃতীয়ত: বাণিজ্যিক বীমায় তাৎক্ষণিক ও বিলম্বে সুদের ব্যবস্থা আছে। কেননা বীমা কোম্পানি গ্রাহককে বা তার উত্তরাধিকারকে বা অনুমোদিত ব্যক্তিকে জমা কৃত অর্থের চেয়ে বেশী প্রদান করবে, ফলে তা তাৎক্ষণিক সুদের পর্যায়ভুক্ত গণ্য হবে।
আর এই প্রদানটি নির্দিষ্ট একটি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর দেয়ার কারণে তা বিলম্ব সুদেরও অন্তর্ভুক্ত হবে। আর উভয় প্রকার সুদ হারাম।
পঞ্চমত: বাণিজ্যিক বীমার মাধ্যমে অন্যের সম্পদ বিনিময় ব্যতীত অর্জন করার সুযোগ আছে। আর বাণিজ্যিক চুক্তিতে বিনিময় ছাড়া অর্থ উপার্জন হারাম।
ষষ্ঠত: বাণিজ্যিক বীমায় এমন কিছু নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করা হয়, শরীয়তে যা বাধ্য করা হয়নি। এই চুক্তিতে বীমা কর্তৃপক্ষ থেকে কোন দুর্ঘটনা আসেনি বা দুর্ঘটনার কোন কারণও হয়নি, তবু শুধু বামী কারীর সাথে চুক্তির কারণে ‘দুর্ঘটনা হতে পারে’এমন অনুমানের ভিত্তিতে বিমাকারীর কিছু অর্থের বিনিময়ে তাকে অর্থ দিতে বাধ্য থাকবে। এই জন্য এটা হারাম লেনদেন।
ইসলামী শরীয়ত মানুষকে হালাল ভাবে অর্থ উপার্জন ও খরচ করতে যেমন আদেশ করেছে, তেমনি সকল প্রকার হারাম উপার্জনকে বর্জন করতে কঠোরভাবে তাগিদ দিয়েছে।
অন্যতম হারাম উপার্জন হচ্ছে সুদ, যা বিশেষভাবে এই বাণিজ্যিক বীমায় প্রদান করা হয়। এই সুদকে শরীয়ত যেমন হারাম করেছে, তেমনি সুদের সাথে জড়িত সকলকেই অপরাধী সাব্যস্ত করেছে।
No comments:
Post a Comment