প্রশ্ন: কোনও কাজে ব্যর্থ হলে বা উদ্দেশ্য সাধনে বিলম্ব হলে- এ অবস্থায় এমন কোনও দুআ বা আমল আছে কি যা করলে সফল হওয়া যায়?
◆ আল্লাহ তাআলা বলেন,
لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي كَبَدٍ
“নিশ্চয় আমি মানুষকে শ্রমনির্ভররূপে সৃষ্টি করেছি।” [সূরা বালাদ: ৪]
◆ তিনি আরও বলেন,
وَأَن لَّيْسَ لِلْإِنسَانِ إِلَّا مَا سَعَىٰ
“এবং মানুষ তাই পায়, যা সে করে।” [সূরা নাজম: ৩৯]
◆ দুনিয়াবি ক্ষেত্রে সফলতা লাভ করার জন্য যেমন কষ্ট-পরিশ্রম করা জরুরি তেমনি আল্লাহর নৈকট্য হাসিল ও তাঁর সান্নিধ্য লাভের জন্যও প্রয়োজন কষ্ট ও পরিশ্রম। তাই তো আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الْإِنسَانُ إِنَّكَ كَادِحٌ إِلَىٰ رَبِّكَ كَدْحًا فَمُلَاقِيهِ
“হে মানুষ, তোমাকে তোমার পালনকর্তা পর্যন্ত পৌঁছতে কষ্ট স্বীকার করতে হবে। অতঃপর তার সাক্ষাৎ ঘটবে।” [সূরা ইনশিকাক: ৬]
◆ তবে পরিশ্রম করার পর আল্লাহর উপর ভরসা করাও অপরিহার্য। আল্লাহ তাআলা বলেন,
এ বিষয়ে আরও বহু আয়াত রয়েছে।
◆ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال: «لو أنكم كنتم توَكَّلُون على الله حق توَكُّلِهِ لرزقكم كما يرزق الطير، تَغْدُو خِمَاصَاً، وتَرُوحُ بِطَاناَ»
উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “তোমরা যদি যথার্থভাবে আল্লাহ তাআলার ওপর তাওয়াককুল (ভরসা) করতে তাহলে তিনি পাখিদের যেভাবে রিজিক দেন সেভাবে তোমাদেরও রিজিক দিতেন। পাখিরা সকালে খালি পেটে বের হয় এবং সন্ধ্যায় ভরা পেটে ফিরে আসে।” [সহীহ-এটি তিরমিযি ও ইবনে মাজাহ বর্ণনা করেছেন]
এখানে লক্ষণীয় বিষয় যে, পাখিরা পেটে ক্ষুধা নিয়ে অলসতা করে বাসায় বসে থাকে না বরং তারা রোদ-বৃষ্টি, ঝড়, ঠাণ্ডা ও প্রতিকুল পরিবেশেও আল্লাহর উপর ভরসা করে রিজিকের সন্ধানে বের হয়, দীর্ঘ পথ উড়ে যায়, শিকারির ফাঁদে পড়ে জীবন নাশের ঝুঁকি নেয়। তারপর আল্লাহ তাদেরকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেন। ফলে তারা সকালে খালি পেটে বের হলেও সন্ধ্যা তারা তাদের নীড়ে ফিরে আসে পরিতৃপ্ত হৃদয়ে উদর ভর্তি করে। সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ কতই না উত্তম রিজিক দাতা!
সুতরাং মানুষও যদি জীবনে সফলতা লাভ করতে চায় তাকে কষ্ট-পরিশ্রম করতে হবে, দৌড়-ঝাঁপ করতে হবে, ঝুঁকি মাথায় নিতে হবে এবং পরম ধৈর্য ও নিষ্ঠা সহ কাজে লেগে থাকতে হবে। তাহলে হয়তো দয়াময় আল্লাহ তাকে সফলতা দান করবেন। আরবিতে একটা কথা প্রচলিত আছে, من جد وجد “যে চেষ্টা করে সে পায়।”
যাহোক, দুনিয়া কিংবা আখিরাত উভয় ক্ষেত্রে সফলতা লাভের অন্যতম শর্ত হল, চেষ্টা ও সাধনা, কষ্ট ও পরিশ্রম করা। কিন্তু পাশাপাশি আল্লাহর রহমতও প্রয়োজন। আল্লাহর দয়া ছাড়া কেউ সফলতা পাবে না। তা না হলে, কৃষক অক্লান্ত পরিশ্রম করে ফসল ফলানোর পরও অনেক সময় ঘরে ফসল তুলতে পারে না, অনেক দম্পতি একটি সন্তানের অপেক্ষায় নিদারুণ কষ্ট বুকে নিয়ে সারাটা জীবন অতিবাহিত করে দেয় কিন্তু তাদের স্বপ্ন পূরণ হয় না। তাই আল্লাহর রহমত ও সাহায্য প্রাপ্তির জন্য আমাদের করণীয় হল, যেসব কাজে আল্লাহর সাহায্য ও রহমত প্রাপ্তির আশা করা যায় সেগুলো বেশি পরিমাণে করা।
❑ জীবনে সফলতার জন্য আল্লাহর সাহায্য ও রহমত প্রাপ্তির কতিপয় আমল:
◍ ১. রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ। কেননা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, একবার দরুদ পাঠ করলে দয়াময় আল্লাহর পক্ষ থেকে দশটি রহমত অবতীর্ণ হয়। [সহিহ বুখারি]
◍ ২. বেশি বেশি ইস্তিগফার তথা আল্লাহর কাছে নিজের গুনাহ মোচনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। ইস্তিগফার করার বিনিময়ে আল্লাহ বান্দাকে নানাভাবে সাহায্য করেন। [দেখুন: সূরা নূহ: ৯-১]
◍ ৩. ঈমান ও তাকওয়া (আল্লাহ ভীতি) অবলম্বন। এটি আল্লাহর রহমত, বরকত ও হেদায়েত প্রাপ্তির গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। [দেখুন: সূরা আরাফ: ৬৯]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আরও বলেন,
◍ ৪. দুআ করা। দুআ কবুলের অধিক সম্ভাবনাময় সময় ও ক্ষেত্রগুলোতে সফলতা প্রার্থনা করে আল্লাহর কাছে দুআ করা। যেমন: সালাতের সেজদা অবস্থায়, আজান ও ইকামতের মাঝামাঝি সময়, জুমার দিন আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়ের মাঝে, ভোর রাতে, সফর অবস্থায়, রোজা অবস্থায়, যে কোনও নেকির কাজ করে তার ওসিলা দিয়ে দুআ করা, পিতামাতা ও নেককার লোকদের নিকট থেকে দুআ নেওয়া ইত্যাদি।
◍ ৫. কুরআন তিলাওয়াত শুনাও আল্লাহর রহমত প্রাপ্তির অন্যতম মাধ্যম। [দেখুন: সূরা আরাফ: ২০৪]
◍ ৬. আল্লাহর সাহায্য লাভের নিমিত্তে আল্লাহর নাম নিয়ে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে কাজ শুরু করা।
❑ এ ছাড়াও যা করণীয়:
উচ্চারণ: ‘আল্লা-হুম্মা লা-সাহলা ইল্লা মা জাআলতাহু সাহলা, ওয়া আনতা তাজআলুল হাযনা ইযা শি’তা সাহলা।”
অর্থ: “হে আল্লাহ, আপনি যা সহজ করে দেন তা ছাড়া কোনও কিছুই সহজ নেই। আর আপনি চাইলে পেরেশানি যুক্ত কাজও সহজ করে দেন।” [সহিহ ইবনে হিব্বান: ৯৭৪, হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. বলেছেন, এই হদিসটি সহীহ।]
খ. অলসতা থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। এমন একটি দুআ হল:
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি, ওয়া আউযুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউযুবিকা মিনাল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া আউযুবিকা মিন গলাবাতিদ দাইনি ওয়া ক্বাহরির রিজাল।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা থেকে আশ্রয় চাই। আমি আশ্রয় চাই অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, আপনার কাছে আশ্রয় চাই ভীরুতা ও কার্পণ্য থেকে, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই ঋণের বোঝা ও মানুষের রোষানল থেকে।” [বুখারি: ২৮৯৩]
সর্বোপরি, মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তাআলা বান্দার কখনো অকল্যাণ করেন না। যদি কোনও কাজে সফলতা না আসে তাহলে বুঝতে হবে, হয়ত এতেই তার জন্য কল্যাণ নিহিত আছে-যদিও মানুষ ভবিষ্যৎ সম্পর্কে না জানার কারণে ব্যর্থতায় হা-হুতাশ ও কান্নাকাটি করে। কিন্তু মহাবিশ্বের মহাপরিচালক আল্লাহ তাআলা অবশ্যই জানেন, কিসে আমাদের কল্যাণ আর কিসে আমাদের অকল্যাণ রয়েছে। তাই কাজে সফলতা না আসলেও আল্লাহর প্রতি কু ধারণা পোষণ করা যাবে না, হতাশা ও অস্থিরতায় ভোগা যাবে না বরং আল্লাহর তাকদির ও ফয়সালার প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস পোষণ করতে হবে। এটিই হল, একজন একনিষ্ঠ বিশ্বাসী মুমিনের পরিচায়ক।
No comments:
Post a Comment