মহান আল্লাহ্ বলেন, তোমরা ডাকবে নিজের প্রভুকে নম্র ভাবে ও গোপনে, নিশ্চয়ই সীমালংঘনকারীদেরকে আল্লাহ্ পছন্দ করেন না। সুরা -আ’রাফ ৫৫।
যারা একত্রিত হয়ে উঁচু আওয়াজে ” আল্লাহু আল্লাহু” বা শুধু ”আল্লাহ্ আল্লাহ্” বা ”হু হু” ইত্যাদি শব্দে জিকির করেন তাদের বিরুদ্ধে উপরোক্ত আয়াতই যথেষ্ট।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে কিংবা সাহাবি (রাঃ) দের থেকে এমন কি প্রখ্যাত ইমামগণ থেকে কোন ভাবেই প্রমাণিত নয়, ”আল্লাহু আল্লাহু” বা শুধু ”আল্লাহ্ আল্লাহ্” বা ”হু হু” ইত্যাদি শব্দে জিকির !!!
আল্লাহকে ডাকা মানে এই নয় যে, ”আল্লাহু আল্লাহু” বা শুধু ”আল্লাহ্ আল্লাহ্” বা ”হু হু” বলে ডাকা। এভাবে ডাকার আবিষ্কারক হচ্ছে শিয়ারা যাদের থেকে সূফীবাদের উৎপত্তি।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কোন সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় তিনি কখনও ”আল্লাহু আল্লাহু” বা শুধু ”আল্লাহ্ আল্লাহ্” বা ”হু হু” জিকির করেছেন বা করতে বলেছেন।
আল্লাহ্ বলেন, তোমরা আল্লাহর জিকির কর (ঐভাবে) যেভাবে আল্লাহ্ জিকিরের পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। সুরা বাক্বারাহ ১৯৮।
“যে ব্যক্তি শরীয়তে নতুন কিছু আবিষ্কার করল যা, শরীয়তের অংশ নয় তা বর্জনীয়’’। (মুসলিম)
হাদিসে বর্নিত জিকির থেকে কমের পক্ষে জিকির হচ্ছে,
”আল্লাহু আকবার” বা সুবাহানাল্লাহ বা আলহামদুলিল্লাহ, বা ”লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” !
অতএব রাসুল (সাঃ) এর দেখানো জিকির বাদ দিয়ে মনগড়া সূফী বাদীদের জিকির ”আল্লাহু আল্লাহু” বা শুধু ”আল্লাহ্ আল্লাহ্” বা ”হু হু” জিকির বা শুধু ‘ইল্লাল্লাহ ইল্লাল্লাহ’- ‘আল্লাহ্ ছাড়া’ ‘আল্লাহ্ ছাড়া’ ‘আল্লাহ্ ছাড়া’ ! জিকির নুন্যতম সওয়াব তো আনেই না বরং গুনাহের সৃষ্টি করে। কারন এই ধরনের জিকির রাসুল (সাঃ) এর বিরুদ্ধাচরণ।
তাছাড়া যেকোনো জিকির উঁচু আওয়াজে করলে তা ”রিয়া” তথা ”লোক দেখানো” আমলে পরিণত হওয়ার সুযোগ থাকে। এমন কি কখনও কখনও তা আশেপাশের মানুষের বিরক্তের কারন হয়ে দাড়াতে পারে।
মহান আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,
অতএব আমরা অবশ্যই কম বা বেশি জিকির করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। এবং অবশ্যই তা রাসুল (রাঃ) এর পদ্ধতি মোতাবেক।
আমরা অনেকে ‘ইয়া আল্লাহ্- হে আল্লাহ্’ বলে ডাকি। ঠিক আছে কিন্তু অবশ্যই তা বার বার নয়। যেমন ইয়া আল্লাহ্ ইয়া আল্লাহ্ এইভাবে জিকির নাই।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই যে, আমরা সাধারণত জানি যে মহান আল্লাহর মাত্র ৯৯ টি নাম। এটা সঠিক নয়। আল্লাহর নাম নির্দিষ্ট সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয়।
আল্লাহর নির্দিষ্ট ৯৯ টি নাম সম্বলিত একটি হাদিস বর্নিত হলেও তা সহিহ সাব্যস্ত হয়নি। – শায়খ সালেহ আল উসায়মীন, ফতোয়া আরকানুল ইসলাম, প্রশ্ন উত্তর ৩১, পৃঃ ১১৩।
আল্লাহ্ বলেন, ”আল্লাহর জন্যই যাবতীয় সুন্দর নাম। সুতরাং সে সব নাম ধরেই তাঁকে ডাকো।” সুরা আ’রাফ ১৮০।
রাসুল (সাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর এমন ৯৯টি নাম রয়েছে যে কেউ তা মুখস্ত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। বুখারি ও মুসলিম।
অর্থাৎ শুধু ৯৯ টি নাম সীমাবদ্ধ নয়। বরং অনেক নামের মধ্যে এমন গুণবাচক ৯৯ টি নাম আছে যা মুখস্ত করলে জান্নাত পাওয়া যাবে। – শায়খ সালেহ আল উসায়মীন, ফতোয়া আরকানুল ইসলাম, প্রশ্ন উত্তর ৩১, পৃঃ ১১৪।
আল্লাহু আলেম।
উপকারিতা বিবেচনায় পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে আরও একাধিকবার পড়ার অনুরোধ রাখছি। এবং অবশ্যই নিজ আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবদের শেয়ার করার অনুরোধ রাখছি।
আজকাল আমাদের সমাজের অনেক কথিত ‘হাক্কানি পীর’ এবং ‘আল্লামা’ দের কিতাবে দেখা যায় যে, তাঁরা তাঁদের ভক্ত-আশেকানদের কে অসম্পূর্ণ বাক্য “আল্লাহ্-আল্লাহ্” শব্দ দ্বারা জিকির করতে বলেন! এ-ব্যাপারে সৌদি আরবের বর্তমানে অদ্বিতীয় আলেমে দ্বীন “শাইখ সালিহ আল ফাওযান” যাকে পুরো আরব বিশ্বের তালেবে এলেম তথা ইসলাম চর্চাকারী’রা চেনেন না এমন কোন আরব নেই! তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, এইভাবে, ‘আল্লাহ-আল্লাহ” অসম্পূর্ণ বাক্য দ্বারা জিকিরের হুকুম কি! এর জবাবে উনি যা বলেন, তা নিন্মে পেশ করছিঃ
__________(১)___________
প্রশ্নঃ আল্লাহর বিশেষ কোন নাম ধরে কি তাঁর যিকির করা জায়েয আছে। যেমন মানুষ বলে, ‘আল্লাহ আল্লাহ’ অথবা ‘ইয়া গাফূরু, ইয়া গাফূরু’ ইত্যাদি বলে যিকির করা। আমি জানি ‘আল্লাহ আল্লাহ’ বলা বিদআত। কিন্তু ‘হা’ অক্ষরে পেশ দিয়ে ‘আল্লাহু আল্লাহু’ বলার হুকুম কি?
উত্তরঃ সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যে। ‘আল্লাহ’ শব্দ দ্বারা যিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করতে চাইলে এই ইবাদতে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হেদায়াত কি ছিল তা আমাদের জানা দরকার। যেমনটি অন্যান্য ইবাদতের নিয়মও জানা দরকার। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতে যিকির ও দুয়ার ক্ষেত্রে শুধু ‘আল্লাহ’ শব্দ ব্যবহারের কোন প্রমাণ নেই। চাই আল্লাহ শব্দের ‘হা’ অক্ষরে পেশ দিয়ে হোক বা জযম দিয়ে হোক- কোন প্রমাণ নেই। অনুরূপভাবে শুধু আল্লাহর সুন্দর নামগুলো ধরে তাঁকে ডাকারও কোন দলীল নেই। যেমন মানুষ বলে থাকে, ইয়া লাতীফু ইয়া লাতীফু, অথবা ইয়া গারফূরু ইয়া গাফূরু.. ইত্যাদি।
তাছাড়া এ ধরণের যিকিরগুলোকে অর্থবোধক বাক্য বা কথা বলা হয় না। আর এতে উপকারী কোন অর্থও প্রকাশ পায় না। এটা একক শব্দ যাতে কোন উপকার পাওয়া যায় না। কেননা এই নামগুলো উল্লেখ করে ডেকে যদি কোন আবেদন বা প্রার্থনা পেশ না করা হয়, তবে এই ডাকটাই অনর্থক হয়ে যায়।
তাই যখন বলবে ‘ইয়া আল্লাহ ইরহামনী’ অর্থাৎ হে আল্লাহ আমাকে দয়া কর। ‘ইয়া গাফূরু ইগফির লী’ অর্থাৎ হে ক্ষমাশীল আমাকে ক্ষমা কর, ‘ইয়া রাজ্জাকু উরযুকনী’ হে রিযিকদাতা আমাকে রিযিকদান কর, তখন তা হবে অর্থবোধক বাক্য এবং সেটা বৈধ যিকির।
যিকর শব্দের বাংলা আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, স্মরণ। আল্লাহর স্মরণে যে সব শব্দ বা বাক্য মুখে উচ্চারণ করে বলতে হয়, সাধারণতঃ শরীয়ার পরিভাষায় তাহাই যিক্ র। অবশ্য আন্তরিক স্মরণকেও যিকির বলা যায়। আল্লাহ বলেনঃ (এবং তোমার প্রতিপালককে অধিক স্মরণ করবে এবং সকালে ও সন্ধায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করবে।) [আল ইমরান/৪১]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেনঃ ‘শুধু (আল্লাহর) নাম তা গোপনে হোক কিংবা প্রকাশ্যে তা একটি পূর্ণ কথা নয় আর না একটি পূর্ণ বাক্য। আর না এর সম্পর্ক কুফর বা ঈমানের সাথে আছে, না আদেশ কিংবা নিষেধের সাথে সম্পর্কিত। আর না সালাফ (পূর্বসুরী) থেকে প্রমাণিত আর না নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৈধ করেছেন। [মাজমুউল ফাতাওয়া/১০/৫৫৬] একারণে উক্ত যিক্ র কে অনেক উলামা বিদআত বলেছেন। দেখুন, সাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ হাফেযাহুল্লাহের ওয়েব সাইট। www.islam-qa.com
____________(৩) _____________
প্রশ্ন: শুধু ’আল্লাহু’ ’আল্লাহু’ বলে জিকির করা কি শরীয়ত সম্মত?
উত্তর: আল হামদুলিল্লাহ ওয়াস সালাতু ওয়া সালামু আলা রাসূলিল্লাহ। আম্মা বাদ:
তিনি আরও বলেন:
তিনি আরও বলেন:
একটি হাদীস ও তার জবাব:
আল্লাহ আল্লাহ শব্দে জিকির করার ব্যাপারে নিম্নোক্ত হাদীসটি দ্বারা দলীল পেশ করা হয়:
এ হাদীসেগুলো অর্থ অত্যন্ত স্পষ্ট যে, কিয়ামত এমন এক সময় সংঘটিত হবে যখন পৃথিবীর বুকে এমন একজন মানুষও বিদ্যমান থাকবে না যে ’লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বা ‘আল্লাহ’ শব্দটি মুখে উচ্চারণ করে। সব মানুষ যখন আল্লাহকে ভুলে শিরক, কুফুরী, নোংরামি, ও নানা পাপাচারে ডুবে যাবে তখন এ সকল নিকৃষ্ট মানুষদের উপর কিয়ামত সংঘটিত হবে।
কতিপয় কথোপকথন/ প্রশ্নোত্তর:
উক্ত বিষয়ে আমার লেখাটা ফেসবুকে ছাড়ার পর কিছু ভায়ের সাথে কথোপকথন হয়েছে। এগুলোর মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নিচে তুলে দেয়া হল:
জনৈক প্রশ্নকারী:আল্লাহ তাআলা তাঁর কালামে ইরশাদ করেছেন:
আমার উত্তর: উক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আদেশ করছেন, আমরা যেন তার নামের ওসীলায় তাঁর নিকট দুয়া করি। কোন কিছু চাইতে হলে তার নাম ধরে যেন চাই। তাঁকে যেন তাঁর সুন্দর সুন্দর নাম ধরে তাকে ডাকি। যেমন, রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ডাকার পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছেন এভাবে:
(১) কোন ব্যক্তির জীবনে যখন বিপদ-আপদ, দু:শ্চিন্তা বা পেরেশানী নেমে আসে তখন সে যেন বলে:
(৩) অনুরূপভাবে সূরা হাশরেরর ২২, ২৩ ও ২৪ নং আয়াতে আল্লাহ তায়াল অনেকগুলো নাম বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত তিনটি আয়াত পাঠ করে আল্লাহর নিকট দুয়া করতে বলেছেন, (দারেমী, মাকাল ইবনে ইয়াসার রা. হতে বর্ণিত)
প্রশ্নকারী: আল্লাহ তাঁকে তাঁর সুন্দর নামে ডাকতে আদেশ দিয়েছেন। তাই আমি আল্লাহকে আল্লাহ, আর রাহমান, আর রাহিম নামে ডাকলাম এবং অনেক্ষণ ধরে ডাকলাম। এতে সমস্যাটা কোথায়? আপনার আলোচনা হতে পারে, নির্দিষ্ট সংখ্যাকে জরুরী মনে করা ঠিক না বেঠিক, আল্লাহ, আল্লাহ না বলে কেবল হু হু যিকির করা ঠিক না বেঠিক। কিন্তু একাধিকবার আল্লাহ আল্লাহ ডাকলেই সেটা বেদআত হবে কেন?
উত্তর: আল্লাহর নাম ধরে ডাকার ব্যাপারে তো আপত্তি করা হয় নি। ইয়া আল্লাহ, ইয়া রাহমান, ইয়া হাইউ, ইয়া কাইয়ুমু, অথবা আল্লাহুম্মা.. এভাবে ডাকলে তো তখন সেটা আর অপূর্ণ বাক্য থাকল না। তবে কথা হল, এভাবে ডাকার পর নিজের চাহিদা তুলে ধরতে হবে। যেমন, ইয়া গাফুর, ইগফির লী অর্থাৎ হে ক্ষমাশীল, আমাকে ক্ষমা করুন। ইয়া রাযযাক, উরযুক নী..হে রিজিক দাতা, আপনি আমাকে রিজিক দিন। ডাকার পর যদি কোন কিছু না চাওয়া হয় তবে এই ডাকার কোন অর্থই থাকল না। আপত্তি হল, শুধু আল্লাহু আল্লাহু আল্লাহু বলে অপুর্ণ বাক্য দ্বারা জিকির করার ব্যাপারে।
প্রশ্নকারী: রাসুল সাল্লা্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: إن لله تسعة وتسعين اسماً من حفظها دخل الجنة رواه البخاري লক্ষ্য করুন এখানে حفظها বলা হয়েছে। তো হিফয করার জন্য কি এক শব্দ বারবার পড়তে হয় না। বারবার পড়া বেদআত হলে এগুলোকে হিফয করতে কেন বললেন?
আমার উত্তর: আমাদের আলোচনা একক শব্দে জিকির করা প্রসঙ্গে। আল্লাহর নাম মুখস্ত করার উদ্দেশ্যে বার বার পড়া আর জিকির করা এক কথা নয়।
আরেক জন প্রশ্নকারী: বিলাল রা. কে যখন তার মনীব পাথর চাপা দিয়ে নির্যাতন করছিলো তখন তিনি কেবল ‘আহাদ’ ‘আহাদ’ বলেছিলেন? এ থেকে কি একক শব্দে আল্লাহর জিকির প্রমাণিত হয় না?
আমার উত্তর: খেয়াল করুন, বেলার রা. কে যখন উত্তপ্ত বালির উপর ফেলে বুকের উপর বিরাট পাথর চাপা দিয়ে এক আল্লাহর দাসত্ব পরিহার করার জন্য নির্যাতন করা হচ্ছিল তিনি তখন আল্লাহ আল্লাহ বলে জিকির করেন নি। তিনি আহাদ আহাদ বলেছেন। অর্থাৎ তিনি বুঝাতে চাচ্ছেন আহাদ মানে একক..আল্লাহ এককভাবে ইবাদতের যোগ্য। অন্য কেউ নয়। কারণ, তিনি জানতেন আরবের মুশরেকরা আল্লাহ অস্বীকার করত না। কিন্তু এককভাবে আল্লাহর ইবাদত করাকে অস্বীকার করত। তাই তিনি এই কঠিন পরিস্থিতিতেও তাদেরকে এই একত্তবাদের স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। তিনি সেখান থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কোন দিন আহাদ আহাদ বা আল্লাহ আল্লাহ বলে জিকির করেছেন মর্মে কি কোন প্রমাণ পাওয়া যায়?
– শেইখ আব্দুল্লাহিল হাদী।।
No comments:
Post a Comment