*পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণ*
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَعَلَـى الْمَوْلُوْدِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ
অর্থাৎ, জনকের কর্তব্য যথাবিধি তাদের ভরণপোষণ করা। (সূরা বাক্বারাহ ২৩৩)
তিনি আরো বলেন,
لِيُنْفِقْ ذُوْ سَعَةٍ مِنْ سَعَتِهِ وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنْفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللهُ لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلَّا مَا آتَاهَا
অর্থাৎ, সামর্থ্যবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবনোপকরণ সীমিত সে আল্লাহ যা দান করেছেন, তা হতে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন, তার চেয়ে গুরুত্বর বোঝা তিনি তার উপর চাপান না। (সূরা ত্বালাক্ব ৭)
তিনি অন্যত্র বলেন,
وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِّنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُـخْلِفُهُ
অর্থাৎ, তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে, তিনি তার বিনিময় দেবেন। (সূরা সাবা’ ৩৯)
(২৬৩৪) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এক দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় কর, এক দীনার ক্রীতদাস মুক্ত করার কাজে ব্যয় কর, এক দীনার কোন মিসকীনকে সদকাহ কর এবং এক দীনার তুমি পরিবার পরিজনের জন্য ব্যয় কর। এ সবের মধ্যে ঐ দীনারের বেশী নেকী রয়েছে যেটি তুমি পরিবার-পরিজনের উপর ব্যয় করবে।’’ (মুসলিম ২৩৫৮)
(২৬৩৫) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্বাধীনকৃত গোলাম আবূ আব্দুল্লাহ মতান্তরে আবু আব্দুর রহমান সাওবান ইবনে বুজদুদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘(সওয়াবের দিক দিয়ে) সর্বশ্রেষ্ঠ দীনার সেইটি, যে দীনারটি মানুষ নিজ সন্তান-সন্ততির উপর ব্যয় করে, যে দীনারটি আল্লাহর রাস্তায় তার সওয়ারীর উপর ব্যয় করে এবং সেই দীনারটি যেটি আল্লাহর পথে তার সঙ্গীদের পিছনে খরচ করে।’’ (মুসলিম ২৩৫৭)
(২৬৩৬) উম্মে সালামাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, একদা আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি যদি (আমার প্রথম স্বামী) আবূ সালামাহর সন্তান-সন্ততির উপর ব্যয় করি, তাতে কি আমি নেকী পাব? আমি তো তাদেরকে এভাবে ছেড়ে দিতে পারছি না, তারা তো আমারই সন্তান।’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, তুমি তাদের উপর ব্যয় করার দরুন নেকী পাবে।’’ (বুখারী ১৪৬৭, ৫৩৬৯, মুসলিম ২৩৬৭)
(২৬৩৭) সা’দ ইবনে আবী অক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর দীর্ঘ হাদীসে বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছেন, ‘‘আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তুমি যা ব্যয় করবে, তোমাকে তার বিনিময় দেওয়া হবে। এমনকি তুমি যে গ্রাস তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও তারও বিনিময় তুমি পাবে!’’ (বুখারী ১২৯৫, মুসলিম ৪২৯৬)
(২৬৩৮) আবূ মাসউদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘সওয়াবের আশায় কোন ব্যক্তি যখন তার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করে, তখন তা সাদকাহ হিসাবে গণ্য হয়।’’ (বুখারী ৫৫,৫৩৫১, মুসলিম ২৩৬৯)
(২৬৩৯) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘একটি মানুষের পাপী হওয়ার জন্য এটা যথেষ্ট যে, সে তাদের (অধিকার) নষ্ট করবে (অর্থাৎ, তাদের ভরণপোষণে কার্পণ্য করবে) যাদের জীবিকার জন্য সে দায়িত্বশীল।’’ (আহমাদ, আবূ দাউদ ১৬৯২, হাকেম, বাইহাকী, সহীহুল জামে’ ৪৪৮১)
উক্ত অর্থ সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,) ‘‘মানুষের পাপী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে যার খাদ্যের মালিক, তার খাদ্য সে আটকে রাখে।’’ (মুসলিম ২৩৫৯)
(২৬৪০) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রতিদিন সকালে দু’জন ফিরিশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, ‘হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের বিনিময় দিন।’ আর অপরজন বলেন, ‘হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস দিন।’’ (বুখারী ১৪৪২, মুসলিম ২৩৮৩)
(২৬৪১) হাকীম বিন হিযাম (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘উপরের (দাতা) হাত নিচের (গ্রহীতা) হাত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। যাদের ভরণপোষণ তোমার দায়িত্বে আছে তাদেরকে আগে দাও। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে সাদকাহ করা উত্তম। যে ব্যক্তি (হারাম ও ভিক্ষা করা থেকে) পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন এবং যে পরমুখাপেক্ষিতা থেকে বেঁচে থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবশূন্য ক’রে দেন।’’ (বুখারী ১৪২৭)
(২৬৪২) আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘হে আদম সন্তান! উদ্বৃত্ত মাল (আল্লাহর পথে) খরচ করা তোমার জন্য মঙ্গল এবং তা রুখে রাখা তোমার জন্য অমঙ্গল। আর দরকার মত মালে নিন্দিত হবে না। প্রথমে তাদেরকে দাও, যাদের ভরণপোষণ তোমার দায়িত্বে। আর উপরের হাত নিচের হাত অপেক্ষা উত্তম। (মুসলিম ২৪৩৫, আহমাদ ২২৬২১, তিরমিযী ২৩৪৩)
(২৬৪৩) আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘অবশ্যই আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে তার দায়িত্বাধীন ব্যক্তি ও বিষয় সম্পর্কে (কিয়ামতে) প্রশ্ন করবেন; ‘সে কি তার যথার্থ রক্ষণাবেক্ষণ করেছে, নাকি তার প্রতি অবহেলা করেছে?’ এমন কি গৃহকর্তার নিকট থেকে তার পরিবারের লোকেদের বিষয়েও কৈফিয়ত নেবেন।’’ (নাসাঈ, ইবনে হিব্বান ৪৪৭৫, সহীহুল জামে’ ১৭৭৪)
(২৬৪৪) আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, একদা (আবূ সুফয়ানের স্ত্রী) মুআবিয়ার মা হিন্দ্ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন যে, ‘আবূ সুফয়ান একজন কৃপণ লোক। আমি তার সম্পদ থেকে (তার অজান্তে) যা কিছু নিই, তা ছাড়া সে আমার ও আমার সন্তানকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খরচ দেয় না।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমার ও তোমার সন্তানের প্রয়োজন মোতাবেক খরচ (তার অজান্তে) নিতে পার।’’ (বুখারী ২২১১, মুসলিম ৪৫৭৪-৪৫৭৭)
No comments:
Post a Comment