কুরআন ও হাদীসের আলোকে চুরি করার শাস্তি📚
{{{{{{{{{{38 সূরা মায়েদাহ}}}}}}}}}}}}}}
وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوٓا أَيْدِيَهُمَا جَزَآءًۢ بِمَا كَسَبَا نَكٰلًا مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
আর পুরুষ চোর ও নারী চোর তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও তাদের অর্জনের প্রতিদান ও আল্লাহর পক্ষ থেকে শিক্ষণীয় আযাবস্বরূপ এবং আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
[১] চুরির শাস্তি হচ্ছে, ডান হাতের কব্জি পর্যন্ত কর্তন করা। তবে কতটুকু চুরি করলে সেটা করা হবে এবং কিভাবে চুরি করলে এ শাস্তি প্রয়োগ করা হবে, এর বিস্তারিত আলোচনা ফিকহ এর কিতাবসমূহ থেকে জেনে নিতে হবে। শর্ত পূরণ ও বাস্তবায়নের বাঁধা অপসারিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দেয়া যাবে না। [বিস্তারিত জানার জন্য তাফসীরে কুরতুবী দ্রষ্টব্য]
{{{{{{{{{{39সূরা মায়েদাহ}}}}}}}}}}}}
فَمَن تَابَ مِنۢ بَعْدِ ظُلْمِهِۦ وَأَصْلَحَ فَإِنَّ اللَّهَ يَتُوبُ عَلَيْهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
অতঃপর যে তার যুলমের পর তাওবা করবে এবং নিজকে সংশোধন করবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
অতঃপর সীমালংঘন করার পর কেউ তওবা করলে ও নিজেকে সংশোধন করলে নিশ্চয় আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু [১]।
[১] চুরি করার পর তাওবাহ করলে, বান্দা ও আল্লাহর মধ্যকার গোনাহ মাফ হবে। কিন্তু বিচারকের কাছে চুরি যদি প্রমাণিত হয়, তবে তাকে তার শাস্তি পেতেই হবে। এ ব্যাপারে দ্বিমত নেই। তবে চুরির মাল ফেরত দিতে হবে কি না এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে দুটি মত রয়েছে। [বিস্তারিত জানার জন্য তাফসীরে ইবন কাসীর দ্রষ্টব্য]
📚। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক দ্বীনারের এক চতুর্থাংশ এবং এর অধিক পরিমাণ মূল্যের মাল চুরির অপরাধে চোরের হাত কর্তন করতেন।
📚। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, আবদ ইবনু হুমায়দ, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … যুহরী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
📚। আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়াহ ও ওয়ালীদ ইবনু শুজা’ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ এক দ্বীনারের এক চতুর্থাংশ এবং এর অধিক মুল্যের মাল চুরি ব্যতীত চোরের হাত কর্তন করা যাবে না।
📚। আবূ তাহির (রহঃ) … হারুন ইবনু সাঈদ আইলী ও আহমাদ ইবনু ঈসা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, এক দ্বীনারের চার ভাগের এক ভাগ এবং এর অধিক মূল্যের সম্পদ চুরি ব্যতীত চোরের হাত কর্তন করা যাবে না।
📚। বিশর ইবনু হাকাম আবদী (রহঃ) … আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, এক দ্বীনারের চার ভাগের এক ভাগ এবং এর অধিক মূল্যের মালচুরি ব্যতীত চোরের হাত কর্তন করা যাবে না।
📚। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) … ইয়াযীদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হাদ (রহঃ) থেকে একই সুত্রে উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
📚। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে একটি (চামড়ার) ঢালের মূল্যের কম সম্পদ চুরির অপরাধে চোরের হাত কর্তন করা হতো না। الْمِجَنِّ শব্দের অর্থ حَجَفَةٍ أَوْ تُرْسٍ “হাজফাহ” বা “তুরস” এ দু’টিই উল্লেখযোগ্য মূল্যের বস্তু।
📚। উসমান ইবনু আবূ শায়বা, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) … হিশাম (রহঃ) থেকে একই উল্লেখিত হুমাইদ রুআসী বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আবদুর রহীম ও আবূ উসামার (রহঃ) এর হাদীসে وَهُوَ يَوْمَئِذٍ ذُو ثَمَنٍ (তা তখনকার দিনে মূল্যবান বস্তু) বাক্যটি রয়েছে।
📚। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ঢাল চুরির অপরাধে এক চোরের হাত কর্তন করেন। ঢালটির মূল্য ছিল তিন দিরহাম।
📚। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, ইবনু রুমহ, যুহায়র ইবনু হারব, ইবনু নুমায়র, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, (অপর এক সনদে) যুহায়র ইবনু হারব, আবূ রাবীআ কামিল, মুহাম্মাদ ইবনু রাফি, আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রাহমান দারেমী, (অপর সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবূ তাহির (রহঃ) … সকলে নাফি’ (রহঃ) থেকে ইবনু উমার (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উল্লেখিত মালিক (রাঃ) থেকে ইয়াহইয়া এর হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্য থেকে কেউ কেউ قِيمَتُهُ শব্দটি উল্লেখ করেছেন এবং কেউ কেউ ثَمَنُهُ শব্দটি উল্লেখ করেছেন।
📚। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা অভিসম্পাত করেন সে চোরের ওপর, যে একটি ডিম (বা ডিমের মূল্যের পরিমাণ বস্তু) চুরি করল। এতে তার হাত কাটা যাবে। আর যে ব্যক্তি একটি দড়ি (কিংবা দড়ির সমম্যূল্যর পরিমাণ বস্তু) চুরি করল, তারও হাত কাটা যাবে।
📚। আমর আন-নাকিদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) … আমাশ (রহঃ) থেকে এই সূত্রে উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি إِنْ سَرَقَ حَبْلاً وَإِنْ سَرَقَ بَيْضَةً (যদিও সে দড়ি চুরি করে এবং ডিম চুরি করে) কথাটি অতিরিক্ত বর্ননা করেছেন।
📚। কুতায়বা ও মুহামাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মাখযুমী গোত্রের একজন মহিলা চুরি করলে তার (প্রতি হদ প্রয়োগের ব্যাপারে) কুরাইশগণ বিভক্ত হয়ে পড়লেন। তাঁরা বলল, কে এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কথা বলতে (সুপারিশ করতে) পারে। তখন তারা বললেন, এ ব্যাপারে উসামা (রাঃ) ব্যতীত আর কারো হিম্মত নেই। তিনি হলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় ব্যক্তি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তিনি এ ব্যাপারে কথোপকথন করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হদের ব্যপারে সুপারিশ করতে চাও? অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেনঃ হে লোক সকল! তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগন ধ্বংস হয়েছে এই কারণে যে, তাদের মধ্যে যখন কোন সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করতো, তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যদি কোন দুর্বল লোক চুরি করত, তবে তারা তার উপর শাস্তি প্রয়োগ করতো। আল্লাহর কসম! যদি ফাতিমা বিনত মুহাম্মদও যদি চুরি করতো, তবে নিশ্চয়ই আমি তার হাত কেটে দিতাম।
ইবনু রুমহ (রহঃ) বর্ণিত অপর এক হাদীসে “নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তীগণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে” বাক্যটি অতিরিক্ত বর্নিত রয়েছে।
📚। আবু তাহির ও হারমালা ইবন ইয়াহইয়া (রহঃ) … রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়শা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, কুরাইশরা এক মহিলার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো, যে মহিলাটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়কালে মক্কা বিজরের সময় চুরি করেছিল। তখন তারা বলল, এ ব্যাপারে কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কথা (সুপারিশ) বলবে? তখন তাঁরা বলল, এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় পাত্র উসামা ব্যতীত আর কার হিম্মাত আছে? অতএব তাঁকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে যাওয়া হল। এ ব্যাপারে উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) কথোপকথন করলেন। এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখমন্ডল বিবর্ণ হয়ে গেল। তখন তিনি বললেনঃ তুমি কি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হদ এর ব্যাপ্যরে সুপারিশ করতে চাও? তখন উসামা (রাঃ) বললেনঃ, হে আল্লাহর রাসুল! আমার জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
বিকাল হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দণ্ডায়মান হয়ে এক ভাষণ দিলেন। প্রথমে তিনি আল্লাহর যথাযথ প্রশংসা করলেন, অতঃপর বললেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগণকে ধ্বংস করা হয়েছে এই জন্য যে, যখন তাদের মধ্যে কোন সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করতো, তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন তাদের মধ্যে কোন দূর্বল লোকচুরি করতো, তখন তার উপর হদ প্রয়োগ করতো।
সেই মহান আল্লাহর কসম যার হাতে আমার জীবন! যদি মুহাম্মদ বিনতে ফাতিমা (রাঃ)ও চুরি করাতো, তবে অবশ্যই আমি তাঁর হাত কেটে দিতাম। এরপর তিনি যে মহিলা চুরি করেছিল তার হাত কাটার নির্দেশ দিলেন। সুতরাং তার হাত কেটে দেয়া হল। ইউনূস (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, অতঃপর সে মহিলা খাটিভাবে তাওবা করল এবং এরপরে তার বিয়ে হলো। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এই ঘটনার পর ঐ মহিলা প্রায়ই আমার কাছে আসতো। তার কোন প্রয়োজন থাকলে আমি তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তুলে ধরতাম।
📚। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মাখযুমী মহিলা বিভিন্ন দ্রব্য ধার নিত অতঃপর সে তা অস্বীকার করতো। এতে নাবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত কাটার নির্দেশ দিলেন। এরপর সেই মহিলার পরিবারবর্গ উসামা (রাঃ) এর কাছে এসে এ ব্যাপারে কথোপকথন করলো। তিনি এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কথা বললেন। অতঃপর তিনি লাইস ও ইউনুস (রহঃ) … এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।
📚। সালামা ইবনু শারীব (রহঃ) … জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা এক মাখযুমী মহিলা চুরি করল। অতঃপর তাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আনা হলে সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী উম্মে সালামার শরণাপন্ন হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ যদি ফাতিমা (রাঃ)ও চুরি করতো, তবে আমি তার হাত কেটে দিতাম। এরপর মহিলাটির হাত কেটে দেয়া হল।
{{{{{{{হাদিসের মানঃ সহিহ}}}}}}}
No comments:
Post a Comment