Tuesday, December 2, 2025

ভূমিকম্প কিংবা আগুন সংঘটিত হলে সালাত ছেড়ে দেয়ার হুকুম কি

 পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর ভূমিকম্প,আগুন কিংবা অন্য যেকোন সমস্যার কারণে নামায ছেড়ে দেয়ার দুটি অবস্থা হতে পারে।

▪️প্রথম অবস্থা: যদি সালাতটি নফল (ঐচ্ছিক) সালাত হয়, তবে বিষয়টি সহজ। কারণ ওজর (বৈধ কারণ) ছাড়াই নফল সালাত ভেঙে দেওয়া জায়েজ, সুতরাং ওজর থাকলে তো তা আরও বেশি জায়েজ হবে। এটি হলো শাফেয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের মত এবং এটাই বিশুদ্ধ মত। এর প্রমাণ হলো: উম্মুল মু’মিনীন আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন। তিনি বললেন, তোমার কাছে কী (খাবার) কিছু আছে? আমি বললাম, না (কিছুতো নেই)। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে আমি (আজ) সিয়াম পালন করবো! এরপর আর একদিন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার কাছে এলেন। (জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে কী খাবার কিছু আছে?) আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের জন্য ‘হায়স’ হাদিয়্যাহ্ এসেছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আনো, আমাকে দেখাও। আমি সকাল থেকে সওম রেখেছি। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘হায়স’ খেয়ে নিলেন।”(সহীহ মুসলিম হা/১১৫৪, তিরমিযী হা/ ৭৩৩, নাসায়ী হা/২৩২৭,সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/২১৪৩)
.
​আল মাওযূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ আল-কুয়েতিয়াহ, কুয়েতি ফিক্বহ বিশ্বকোষ গ্রন্থে এসেছে:” أما قطع التطوع بعد الشروع فيه فقد اختلف الفقهاء في حكمه فقال الحنفية والمالكية: لا يجوز قطعه بعد الشروع بلا عذر كالفرض ويجب إتمامه؛ لأنه عبادة.وقال الشافعية والحنابلة: يجوز قطع التطوع، عدا الحج والعمرة، لحديث ( المتنفل أمير نفسه ) – أخرجه الترمذي من حديث أم هانئ بلفظ: ( الصائم أمير أو أمين نفسه ) -، ولكن يستحب إتمامه .أما الحج والعمرة فيجب إتمامهما، وإن فسدا إذا شرع فيهما، لأن نفلهما كفرضهما“নফল (ঐচ্ছিক) ইবাদত শুরু করার পর তা ভেঙে দেওয়ার বিধান সম্পর্কে ফকীহদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। হানাফি ও মালিকি ফকীহগণ বলেন:নফল ইবাদত শুরু করার পর কোনো ওজর (উপযুক্ত কারণ) ছাড়া তা ভঙ্গ করা বৈধ নয়; বরং ফরজ ইবাদতের মতোই তা সম্পন্ন করা আবশ্যক,কারণ এটিও একটি ইবাদত। অন্যদিকে শাফেয়ী ও হাম্বলী ফকীহগণ বলেন:হজ্ব ও ওমরাহ ছাড়া অন্যান্য নফল ইবাদত শুরু করার পর তা ভেঙে দেওয়া বৈধ। এ মতের প্রমাণ হলো রাসূল (ﷺ)-এর হাদীস: “(নফলকারীর) নিজের ব্যাপারে সে নিজেই আমির (নিজ সিদ্ধান্তের অধিকারী)”ইমাম তিরমিযী উম্মে হানী (রাঃ) থেকে “নফল রোযা পালনকারী নিজের আমানাতদার।’—এ শব্দে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।” (তিরমিযী হা/৭৩১) তবে নফল ইবাদত সম্পন্ন করে ফেলা উত্তম (মুস্তাহাব)।কিন্তু হজ্ব ও ওমরাহর ক্ষেত্রে বিধান ব্যতিক্রম;কারণ—এই দুটিতে (নফলও হোক, ফরজও হোক) একবার ইহরাম বেঁধে শুরু করলে তা নষ্ট হয়ে গেলেও সম্পন্ন করা ওয়াজিব; কেননা নফল হজ-ওমরাহর বিধানও ফরজের মতোই।”
(আল-মাউসু’আতুল-ফিকহিয়্যাহ; খণ্ড: ৩৪; পৃষ্ঠা;৫১)
.
▪️দ্বিতীয় অবস্থা: যদি সালাতটি ফরজ সালাত হয় তাহলে মূলনীতি হলো, যে ব্যক্তি ফরজ সালাত শুরু করেছে, কোনো বৈধ ওজর ছাড়া তার জন্য তা ভেঙে দেওয়া জায়েজ নয়। সুতরাং ফরজ সালাত আদায়ের সময় যদি অপ্রত্যাশিতভাবে ভূমিকম্প, অগ্নিসংযোগ বা অনুরূপ কোনো মারাত্মক দুর্যোগ শুরু হয় এবং মুসল্লির দৃঢ় বিশ্বাস হয় যে, এ দুর্ঘটনাতে সে আক্রান্ত হবে এবং ওই স্থান ত্যাগ করলে তিনি নিশ্চিত বিপদ থেকে রক্ষা পাবেন, তবে আত্মরক্ষার জন্য সালাত ভেঙে দেওয়া এবং দ্রুত স্থান ত্যাগ করা তাঁর কর্তব্য। এই পরিস্থিতিতে তিনি পরিবেশ ও বিপদ বিবেচনা করে, নিরাপদ স্থানে গিয়ে পরবর্তীতে তাঁর অসম্পূর্ণ সালাত পূর্ণ করবেন অথবা ছেড়ে দেবেন। তার যদি ধারণা হয় যে, সালাতের স্থানে থাকলে তার মৃত্যু হবে সেক্ষেত্রে তার জন্য সেখানে অবস্থান করা জায়েয হবে না। যদি থেকে যায় তাহলে সে যেন নিজেকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করল। তদ্রূপ অন্য কাউকে মৃত্যু থেকে বাঁচানোর জন্য নামায ছেড়ে দেয়াও তার উপর আবশ্যক; যেমন পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে, আগুনে পুড়ে যাওয়া থেকে কিংবা কূপে পড়ে যাওয়া থেকে। এ বিষয়ের মূল দলিল হল আল্লাহ্‌ তাআলার বাণী:وَلا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ “তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না। আর ভাল কাজ করো; যারা ভাল কাজ করে আল্লাহ্‌ তাদেরকেই ভালোবাসেন।”(সূরা বাক্বারা: ১৯২) এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: لَا ضَرَرَ وَلا ضِرَارَ “নিজে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া কিংবা অন্যকে ক্ষতিগ্রস্থ করা নয়”।(মুসনাদে আহমাদ ও সুনানে ইবনে মাজাহ হা/২৩৪১) এবং আলবানী হাদিসটিকে ‘সহিহ ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থে সহিহ বলেছেন)
.
আল-মাউসু’আ আল-ফিকহিয়্যা আল-কুয়েতিয়্যা’ গ্রন্থে এসেছে:” قطع العبادة الواجبة بعد الشروع فيها ، بلا مسوغ شرعي : غير جائز باتفاق الفقهاء، لأن قطعها بلا مسوغ شرعي عبث يتنافى مع حرمة العبادة ، وورد النهي عن إفساد العبادة، قال تعالى: ( وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ ) . أما قطعها بمسوغ شرعي : فمشروع، فتقطع الصلاة لقتل حية ونحوها ، للأمر بقتلها، وخوف ضياع مال له قيمة ، له أو لغيره، ولإغاثة ملهوف، وتنبيه غافل أو نائم قصدت إليه نحو حية، ولا يمكن تنبيهه بتسبيح، ويقطع الصوم لإنقاذ غريق، وخوف على نفس، أو رضيع”ফকীহগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলো যে—শার’ঈ কোনো ওজর ছাড়া শুরু করার পর কোনো ওয়াজিব ইবাদত ভঙ্গ করা বৈধ নয়। কারণ শার’ঈ ওজর ছাড়া ইবাদত ভেঙে ফেলা ইবাদতের মর্যাদা ও পবিত্রতার পরিপন্থী একটি অনর্থক কাজ; আর ইবাদত নষ্ট করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন:“তোমরা নিজেদের আমলসমূহ বিনষ্ট করে দিও না।” (সূরা মুহাম্মদ: ৩৩) তবে যদি কোনো শার’ঈ কারণ উপস্থিত থাকে তবে ইবাদত ভেঙে দেওয়া বৈধ। যেমন সালাতে থাকা অবস্থায় সাপ–বিচ্ছু ইত্যাদি মেরে ফেলার প্রয়োজন হলে সালাত ভাঙা বৈধ; কারণ এ ধরনের ক্ষতিকর প্রাণী হত্যা করার নির্দেশ রয়েছে।তদ্রূপ, নিজের অথবা অন্য কারো মূল্যবান সম্পদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে, কিংবা কোনো বিপদগ্রস্থ ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে হলে, অথবা কোনো অসচেতন বা ঘুমন্ত ব্যক্তিকে সাপ-বিচ্ছুর দিকে এগিয়ে যেতে দেখে তাকে সতর্ক করা প্রয়োজন হলে এবং কেবল তাসবীহ পড়া দ্বারা তাকে সতর্ক করা সম্ভব না হলে এ অবস্থায় সালাত ভেঙে সতর্ক করা বৈধ। একইভাবে, ডুবন্ত ব্যক্তিকে বাঁচানোর জন্য, নিজের জীবনের নিরাপত্তাহীনতার কারণে, অথবা শিশুর হিফাযতের স্বার্থে রোজা ভেঙে দেওয়া বৈধ।”(আল-মাউসু‘আতুল ফিকহিয়্যাহ, খণ্ড: ৩৪; পৃষ্ঠা: ৫১)
.
ইমাম আল-বাহূতী (রাহিমাহুল্লাহ) কাশশাফুল ক্বিনা গ্রন্থে বলেন:
“(ويجب رد كافر ، معصوم) بذمة أو هدنة أو أمان ، (عن بئر ونحوه) ، كحية تقصده (كـ) رد (مسلم) عن ذلك ، بجامع العصمة .(و) يجب (إنقاذ غريق ونحوه) ، كحريق ؛ (فيقطع الصلاة لذلك) ، فرضا كانت أو نفلا، وظاهره: ولو ضاق وقتها، لأنه يمكن تداركها بالقضاء، بخلاف الغريق ونحوه .(فإن أبى قطعها) ، أي الصلاة ، لإنقاذ الغريق ونحوه : أثم ، و(صحت) صلاته ، كالصلاة في عمامة حرير”
“যে কাফেরের জান নিরাপদ—যিম্মী হওয়ার কারণে, কিংবা চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কারণে কিংবা নিরাপত্তা দেয়ার কারণে তাকে কূপ ও এ জাতীয় অন্য কিছুতে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করা আবশ্যক। যেমন কোন সাপ যদি তার উপর আক্রমণ করে। যেমনিভাবে কোন মুসলিমকে এসব থেকে রক্ষা করা আবশ্যক। যেহেতু উভয় প্রাণই মাসুম (নিরাপত্তাপ্রাপ্ত)। পানিতে ডুবে যাচ্ছে কিংবা আগুনে পুড়ে যাচ্ছে এমন ব্যক্তিকে রক্ষা করা আবশ্যক। এর জন্য সালাত ছেড়ে দিতে হবে; সেটা ফরয সালাত হোক কিংবা নফল নামায হোক। এর প্রত্যক্ষ মর্ম হল: এমনকি যদি ওয়াক্ত একেবারে সংকীর্ণ হয়ে যায় তবুও। যেহেতু কাযা পালন করার মাধ্যমে সালাতের প্রতিকার করার সুযোগ আছে। কিন্তু পানিতে পড়ে যাওয়া ব্যক্তি কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তির ক্ষেত্রে সে সুযোগ নেই। যদি পানিতে পড়া ব্যক্তি বা এ জাতীয় অন্য দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিকে বাঁচানোর জন্য সালাত ছেড়ে না দেয় তাহলে সে গুনাহগার হবে। তবে তার সালাত সহিহ হবে; যেমনিভাবে রেশমের পাগড়ী পরে সালাত পড়লেও সালাত শুদ্ধ হয়।”(কাশশাফুল ক্বিনা; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩৮০)
.
ইবনে রজব হাম্বলি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
وقال قتادة: إن أُخذ ثُوبه : يتبع السارقَ ، ويدع الصلاة. وروى عبد الرزاق في (كتابه)، عن معمر، عن الحسن وقتادة :في رجل كان يصلي، فأشفق أن تذهب دابته ، أو أغار عليها السبع؟ قالا: ينصرف .وعن معمر، عن قتادة، قالَ: سألته، قلت: الرجل يصلي، فيرى صبياً على بئر، يتخوف أن يسقط فيها، أفينصرف؟ قال: نعم. قلت: فيرى سارقاً يريد أن يأخذ نعليه؟ قال: ينصرف .
ومذهب سفيان: إذا عرض الشيء المتفاقم، والرجل في الصلاة : ينصرف إليه . رواه عنه المعافى . وكذلك إن خشي على ماشيته السيل، أو على دابته .ومذهب مالك: من انفلتت دابته وهو يصلي؛ مشى فيما قرب، إن كانت بين يديه، أو عن يمينه أو عن يساره، وإن بعدت: طلبها، وقطع الصَّلاة. ومذهب أصحابنا: لو رأى غريقاً، أو حريقاً، أو صبيين يقتتلان، ونحو ذلك، وهو يقدر على إزالته: قطع الصلاة وأزاله .ومنهم من قيده بالنافلة. والأصح: أنه يعم الفرض وغيره. وقال أحمد – فيمن كان يلازم غريماً له، فدخلا في الصلاة، ثم فر الغريم وهو في الصلاة -: يخرج في طلبه. وقال أحمد – أيضا -: إذا رأى صبياً يقع في بئر، يقطع صلاته ويأخذه . قال بعض أصحابنا: إنما يقطع صلاته إذا احتاج إلى عمل كثير في أخذه، فإن كان العمل يسيراً لم تبطل به الصلاة. وكذا قال أبو بكر ، في الذي خرج وراء غريمه ؛ أنه يعود ، ويبني على صلاته. وحمله القاضي على أنه كان يسيراً. ويحتمل أن يقال: هو خائف على ماله، فيغتفر عمله، وإن كثر”
“ক্বাতাদাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: যদি কেউ তার কাপড় নিয়ে যায় তাহলে সে সালাত ছেড়ে দিয়ে চোরের পিছু নিবে। আব্দুর রাজ্জাক তাঁর কিতাবে মা’মার থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি হাসান ও কাতাদা থেকে বর্ণনা করেছেন যে: এক ব্যক্তি সালাত পড়ছিল। এর মধ্যে সে তার পশুটি ছুটে চলে যাওয়ার আশংকা করলো কিংবা কোন হিংস্র জানোয়ার তার উপর আক্রমণ করার আশংকা করলো? তারা উভয়ে বলেন: সে সালাত ছেড়ে দিবে। মা’মার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি কাতাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন: জনৈক লোক নামায পড়ছে। এর মধ্যে সে দেখতে পেল যে, একটি বাচ্চা কূপের ধারে। আশংকা হচ্ছে বাচ্চাটি কূপের মধ্যে পড়ে যাবে। সে কি সালাত ছেড়ে দিবে? তিনি বললেন: হ্যাঁ। আমি বললাম: কেউ দেখল যে, চোর তার জুতাজোড়া নিয়ে যাচ্ছে? তিনি বললেন: সালাত ছেড়ে দিবে। সুফিয়ানের মাযহাব হচ্ছে: কোন ব্যক্তি সালাতে থাকাবস্থায় যদি বিপদজনক কিছুর সম্মুখীন হোন তাহলে তিনি সালাত ছেড়ে দিবেন। এটি মুআফি তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন। অনুরূপ বিধান প্রযোজ্য হবে যদি কেউ নিজের পশুপাল বা আরোহণের পশু পানির ঢলের শিকার হওয়ার আশংকা করেন। ইমাম মালেকের মাযহাব হচ্ছে: যে ব্যক্তি সালাতরত অবস্থায় তার আরোহণের পশু ছুটে গেছে; যদি তার কাছাকাছি হয় সামনের দিকে হোক, ডানে হোক বা বামে হোক সে তার দিকে হেঁটে যাবে। আর যদি দূরে হয় তাহলে সালাত ছেড়ে দিয়ে পশুর সন্ধান করবে। আমাদের মাযহাবের আলেমদের অভিমত হচ্ছে: যদি কোন লোককে ডুবে যেতে দেখে কিংবা পুড়ে যেতে দেখে কিংবা দুই বালককে মারামারি করতে দেখে ইত্যাদি এবং তার এ অনিষ্ট দূর করার সক্ষমতা থাকে তাহলে সে সালাত ছেড়ে দিবে এবং এ অনিষ্ট দূর করবে। কোন কোন আলেম এটাকে নফল সালাতের সাথে বিশিষ্ট করেছেন। সর্বাধিক সঠিক অভিমত হচ্ছে: এটি নির্বিশেষে ফরয সালাত ও অন্যান্য সালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ইমাম আহমাদ বলেন: যে ব্যক্তি তার ঋণপ্রাপ্য ব্যক্তিকে অনুসরণ করেন, তারা উভয়ে সালাত শুরু করল, একটু পরে সে ব্যক্তি সালাতে থাকাবস্থায় ঋণী লোকটি পালিয়ে যেতে লাগল: তখন ঋণী লোকটিকে ধরার জন্য তিনি সালাত থেকে বেরিয়ে যাবেন। ইমাম আহমাদ আরও বলেন: যদি কেউ কোন বাচ্চাকে কূপে পড়ে যেতে দেখে তখন সালাত ছেড়ে দিয়ে বাচ্চাটিকে বাঁচাবে। আমাদের কোন কোন আলেম বলেছেন: যদি বাচ্চাটিকে বাঁচাতে গিয়ে আমলে কাছির (অনেক কাজ) করতে হয় তাহলে সেক্ষেত্রে সালাত কর্তন করবে। আর যদি অল্পতে বাঁচানো যায় তাহলে এতে করে তার সালাত বাতিল হবে না। আবু বকর একই ধরণের কথা ঋণপ্রাপ্য ব্যক্তির অনুসরণে যে ব্যক্তি বেরিয়েছে তার ব্যাপারে বলেছেন যে, সে ব্যক্তি ফিরে এসে অবশিষ্ট সালাত পূর্ণ করবে। কাযী এ অভিমতকে এ অর্থে ব্যাখ্যা করেছেন যে, যদি সেটা অল্প কর্ম হয়। এমন একটি ব্যাখ্যাও করা যেতে পারে যে: সে তার সম্পদের ব্যাপারে আতংকিত। তাই তার সে কর্ম অধিক হলেও সেটি মার্জনীয়।”(ইবনে রজব ‘ফাতহুল বারী’; খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ৩৩৬-৩৩৭)
.
পরিশেষে, উপর্যুক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, কোনো ব্যক্তি যদি নিজের জীবননাশের আশঙ্কা করেন বা এমন কারো জীবন হুমকির মুখে পড়ে যাকে তিনি বাস্তবিকভাবে রক্ষা করতে সক্ষম তাহলে তার জন্য সালাত চালিয়ে যাওয়া বৈধ নয়। এ বিধান ফরজ সালাত হোক বা নফল উভয়ের ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। অতএব এ পরিস্থিতিতে সালাত অব্যাহত রাখলে তিনি গুনাহগার হবেন। আর যদি সালাত চালিয়ে যাওয়ার কারণে তিনি নিজে মৃত্যুবরণ করেন বা আহত হন তবে তিনি নিজেকেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছেন বলে গণ্য হবেন। আল্লাহই সর্বজ্ঞ। আরও বিস্তারিত জানতে দেখুন; ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৩২৬০৭০)
▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

No comments:

Post a Comment

Translate