তথাকথিত প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে আসার গল্প: পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকা ভয়াবহ প্রতারণা ও আন্তর্জাতিক চক্রের ফাঁদ।
সাম্প্রতিক সময়ে আমরা প্রায়শই খবরের শিরোনামে দেখি, “বিদেশ থেকে প্রেমের টানে ছুটে এলেন…।” আপাতদৃষ্টিতে চমকপ্রদ মনে হলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তথাকথিত ‘প্রেমের গল্প’-এর অধিকাংশই নিছক প্রতারণা, ব্যক্তিগত স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক চক্রের সূক্ষ্ম পরিকল্পনার ফসল। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠা এই সম্পর্কগুলোর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে আপনার বা আপনার পরিবারের জন্য মারাত্মক বিপদ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চক্রগুলো সাধারণত নিম্নোক্ত ভয়াবহ উদ্দেশ্য নিয়ে সক্রিয় থাকে:
✪ ১. ধর্মীয় মিশন ও স্থায়ী বসবাসের কৌশল:
বিদেশী মিশনারি সংস্থা বা ব্যক্তিরা কূটনীতির মাধ্যমে সরাসরি ভিসা বা দীর্ঘমেয়াদী বসবাসের অনুমতি পেতে ব্যর্থ হলে, তারা এই ‘প্রেমের কৌশল’ ব্যবহার করে।
তারা স্থানীয় কোনো ব্যক্তির (ছেলে বা মেয়ে) সাথে তথাকথিত প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে এবং এদেশে এসে বিয়ে করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে।
তারপর একবার বসবাস নিশ্চিত হলে, তারা ধীরে ধীরে তাদের ধর্ম প্রচারের আসল মিশন শুরু করে। তারা সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে, এমনকি পুরো পরিবারকে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করে। এই মিশনে অনেক ক্ষেত্রে বিদেশী খৃষ্টান মিশনারী ও এনজিওগুলোর যোগসাজশ থাকে।
✪ ২. বিদেশে নারী পাচার ও অবৈধ কাজে বাধ্য করা:
অনেক ক্ষেত্রে তথাকথিত এই প্রেম ব্যবহৃত হয় দেশ থেকে নারীদের পাচারের মাধ্যম হিসেবে।
বিদেশী প্রতারকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদ পাতে এবং উন্নত জীবন, চাকরি বা ভালো ভবিষ্যতের প্রলোভন দেখিয়ে দেশ থেকে নারীদের বিদেশে নিয়ে যায়।
বিদেশে নেওয়ার পর তাদেরকে পতিতালয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয় অথবা নানা ধরনের অবৈধ ও অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হয়, যার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ।
✪ ৩. সাময়িক উপভোগ ও প্রতারণামূলক বিবাহ:
অনেক বিদেশী কেবল সাময়িক মনোরঞ্জন বা উপভোগের জন্য এদেশে আসে।
তথাকথিত প্রেম এবং দ্রুত বিয়ের মাধ্যমে তারা এদেশে ‘জামাই আদরে’ কিছুদিনের জন্য বিলাসী জীবনযাপন করে।
অতঃপর কিছুদিন সেই নারীকে উপভোগ করার পর, তারা কোনো ধরনের যোগাযোগ না রেখেই হঠাৎ নিজ দেশে ফিরে যায়। ফলে স্থানীয় মেয়েটি চরম হতাশা ও ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
✪ ৪. অর্থ আত্মসাৎ ও উন্নত জীবনের লোভ:
অনেক সময় এই চক্রগুলো প্রেমের নাটক করে বিশাল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।
প্রেমিক/প্রেমিকা বা তাদের পরিবারের সদস্যদের বিদেশে নিয়ে যাওয়া, সেখানে উন্নত জীবন, চাকরি, ব্যবসা ইত্যাদির মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে তারা বিশ্বাস অর্জন করে।
অতঃপর বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হওয়ার পর তারা বিশাল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যায় এবং ভুক্তভোগীরা সর্বস্বান্ত হন।
❑ ইসলামি দৃষ্টিকোণ ও বিশেষজ্ঞদের চূড়ান্ত সতর্কতা:
বিশেষজ্ঞগণ তাই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিদেশীদের সাথে এই ধরনের সম্পর্ক গড়ার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ এর পেছনে কেবল প্রতারণাই নয়, জীবনের বড় ধরনের ঝুঁকিও থাকে।
মনে রাখতে হবে, ইসলামে নারী-পুরুষের মধ্যে বিবাহের বন্ধন ছাড়া তথাকথিত প্রেম, বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড সংস্কৃতি সম্পূর্ণরূপে হারাম। প্রেমের নামে জিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া ইসলামে এক ভয়ানক কবিরা গুনাহ (গুরুতর পাপ), যা পার্থিব ও পরকালে কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তাই কোনো প্রকার প্রলোভন বা আবেগের বশে না গিয়ে, অপরিচিত বিদেশী বা আন্তর্জাতিক চক্রের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে কঠোরভাবে সতর্ক থাকুন এবং ধর্মীয় বিধি-বিধান মেনে চলুন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
জুবাইল দাওয়াহ অ্যাসোসিয়েশন, সৌদি আরব।
No comments:
Post a Comment