প্রশ্ন: কোন নারী হজ্জের দিনগুলোর শুরুতে মক্কায় প্রবেশ করার পূর্বে কিংবা হজ্জ উমরাহর মাঝখানে যদি তার মাসিক শুরু হয়ে যায় তাহলে তিনি কি করবেন?
▬▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬▬
প্রথমত: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর যদি কোনো নারী হায়েয (ঋতুস্রাব) অবস্থায় মীকাত অতিক্রম করেন এবং হজ্ব বা উমরাহ করার নিয়ত করেন, তবে তার জন্য মীকাতেই ইহরাম বাঁধা ওয়াজিব। এক্ষেত্রে মক্কায় পৌঁছানোর পরে ইহরাম বাঁধা বা পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা তার জন্য জায়েজ নয়।আর ইহরাম হচ্ছে নুসুকে (হ্জ্জ-উমার কাজে) প্রবেশের নিয়ত করা; ইহরামের কাপড় পরিধান নয়।দুঃখজনক হলেও সত্যি, হজ্জ ও উমরার উদ্দেশ্য নিয়ে মিকাত পার হওয়ার সময় যদি কোনো নারী হায়েযগ্রস্ত হয়ে যান তখন কেউ কেউ এ ধারণা করে ইহরাম করেন না যে, পবিত্র অবস্থায় ইহরাম করা শর্ত। তাই ইহরাম ছাড়া তারা মিকাত অতিক্রম করেন। এটি স্পষ্ট ভুল। কারণ হায়েয ইহরামের প্রতিবন্ধক নয়। বরং হায়েযগ্রস্ত নারীও ইহরাম করবেন এবং অন্যেরা যা যা করে তিনিও তা তা করবেন শুধু বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করবেন না; সালাত আদায় করবেন না,পবিত্র হওয়ার পরে তাওয়াফ করবেন। যদি কোনো নারী ইহরাম না বেঁধে মিকাত পার হয়ে যান তাহলে তার উপর ওয়াজিব হল পুনরায় মিকাতে ফিরে আসা। যদি তিনি ফিরে না আসেন তাহলে একটি ওয়াজিব ছেড়ে দেয়ার কারণে তার উপর মক্কায় দম (পশু উৎসর্গ) দেয়া ওয়াজিব।সুতরাং নারী হায়েজগস্থ হলেও তিনি মীকাত থেকে ইহরাম বেধে এরপর তিনি মক্কায় এসে হজ্জের যাবতীয় আমল সম্পাদন করবেন;শুধুমাত্র বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া পাহাড়ে সাঈ (প্রদক্ষিণ) করা ব্যতীত।এই দুই আমল তিনি হায়েয (ঋতুস্রাব) থেকে পবিত্র হওয়ার পর পর্যন্ত স্থগিত রাখবেন।আর যদি কোনো নারীর ইহরাম গ্রহণের পর, কিন্তু তাওয়াফের আগে হায়েয শুরু হয়, তিনিও একইভাবে তাওয়াফ ও সাঈ বিলম্বিত করবেন যতক্ষণ না পবিত্র হন।কিন্তু যে নারী তাওয়াফ সম্পন্ন করার পর হায়েযে আক্রান্ত হন, তিনি হায়েয অবস্থাতেই সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে সাঈ সম্পন্ন করবেন—এতে কোনো অসুবিধা নেই।কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সুন্নাহ এবং আলেমদের সর্বসম্মত ঐক্যমতের দ্বারা প্রমাণিত যে,হায়েজ (ঋতুস্রাব) যেমন ইহরামের পরিপন্থী নয়।তেমনি বিশুদ্ধ মতে সাঈর জন্যও পবিত্রতা শর্ত নয়। (বিস্তারিত জানতে দেখুন; ফাতওয়া ইসলামিয়্যা; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ২০২; ইবনু উসাইমীন আল-শারহুল মুমতি; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৪৪১)
.
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আসমা বিনতু ‘উমায়স (রাঃ) যুল হুলায়ফাহ্ নামক স্থানে সন্তান প্রসব করলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাকর (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলেন এবং তিনি তদানুযায়ী তাকে গোসল করে ইহরাম বাঁধতে বললেন।”(সহিহ মুসলিম হা/২৭৯৯; ই.ফা. ২৭৭৬, ই.সে. ২৭৭৪) হাদিসটির ব্যাখ্যায় ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: “(نفست) অর্থ: তিনি প্রসব করলেন। এতে প্রমাণিত হয়: মাসিকগ্রস্ত (حائض) এবং প্রসূতি (نفساء) নারীর ইহরাম সঠিক, এবং ইহরামের জন্য তাদের গোসল করা মুস্তাহাব।”(গৃহীত; ইসলাম সাওয়াল জবাব ফাতওয়া নং-৪৯৯৯২)
.
অপর বর্ননায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী ‘আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমরা বিদায় হজ্জের সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বের হয়ে ‘উমরাহ’র নিয়্যাতে ইহ্রাম বেধেছিলাম….. এরপর আমি মক্কায় ঋতুবতী অবস্থায় পৌঁছলাম। কাজেই বায়তুল্লাহ তাওয়াফ ও সাফা মারওয়ার সা’য়ী কোনটিই আদায় করতে সমর্থ হলাম না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমার অসুবিধার কথা জানালে তিনি বললেনঃ মাথার চুল খুলে নাও এবং তা আঁচড়িয়ে নাও এবং হজ্জের ইহ্রাম বহাল রাখ এবং ‘উমরাহ ছেড়ে দাও। আমি তাই করলাম..” (সহীহ বুখারী হা/১৫৫৬; সহীহ মুসলিম হা/১২১১) ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) এটি ‘মাসিকগ্রস্থ ও প্রসূতি নারী কীভাবে ইহরাম বাঁধবে’ (باب كيف تهل الحائض والنفساء) অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। সহীহ বুখারী: ২৫/৩১)
.
হাদিসটির ব্যাখ্যায় শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন:فِي هَذَا دَلِيل عَلَى أَنَّ الْحَائِض وَالنُّفَسَاء وَالْمُحْدِث وَالْجُنُب يَصِحّ مِنْهُمْ جَمِيع أَفْعَال الْحَجّ وَأَقْوَاله وَهَيْئَاته إِلا الطَّوَاف وَرَكْعَتَيْهِ , فَيَصِحّ الْوُقُوف بِعَرَفَاتٍ وَغَيْره كَمَا ذَكَرْنَا , وَكَذَلِكَ الأَغْسَال الْمَشْرُوعَة فِي الْحَجّ تُشْرَع لِلْحَائِضِ وَغَيْرهَا مِمَّنْ ذَكَرْنَا . وَفِيهِ دَلِيل عَلَى أَنَّ الطَّوَاف لا يَصِحّ مِنْ الْحَائِض , وَهَذَا مُجْمَع عَلَيْهِ اهـ“এই হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, মাসিকগ্রস্ত নারী (الحائض), প্রসূতি নারী (النُّفَسَاء), অযুবিহীন ব্যক্তি (المُحْدِث) এবং জুনুব (বড় নাপাক) ব্যক্তির তাওয়াফ ও তার দুই রাকাআত সালাত ব্যতীত হজ্জের যাবতীয় কথা,কাজ এবং অবস্থা সঠিক।সুতরাং,আরাফাতে অবস্থান করা ও হজ্জের অন্যান্য কাজ,যেমনটি আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি, সবই তাদের পক্ষ থেকে সহীহ।তদ্রূপ,হজ্জের সময়ে শরীয়তে নির্ধারিত যেসব গোসল রয়েছে,তা হায়েজগ্রস্ত নারীসহ উপরোক্ত সকল ব্যক্তির জন্যও শরীয়তসম্মত। এছাড়া, এই হাদীস থেকে এ কথাও প্রমাণিত হয় যে, মাসিকগ্রস্ত নারীর তাওয়াফ সহীহ নয় — এবং এ বিষয়ে আলেমদের সর্বসম্মত ঐকমত্য (ইজমা) রয়েছে।”
ইবনু ‘আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,الْحَائِضُ وَالنُّفَسَاءُ إِذَا أَتَتَا عَلَى الْوَقْتِ تَغْتَسِلَانِ، وَتُحْرِمَانِ وَتَقْضِيَانِ الْمَنَاسِكَ كُلَّهَا غَيْرَ الطَّوَافِ بِالْبَيْتِ.”হায়িয ও নিফাসগ্রস্ত নারীরা মীকাত পৌঁছার পর গোসল করবে, ইহরাম বাঁধবে এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ছাড়া (হজ্জের) অন্যান্য সমস্ত কাজ সম্পন্ন করবে।”(আবু দাউদ হা/১৭৪৪; সনদ বিশুদ্ধ)
.
হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) তার ফাতাওয়া আল-কুবরা-তে বলেছেন:الْحَائِضُ وَالنُّفَسَاءُ أَمَرَهُمَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِالإِحْرَامِ وَالتَّلْبِيَةِ , وَمَا فِيهِمَا مِنْ ذِكْرِ اللَّهِ , وَشُهُودِهِمَا عَرَفَةَ مَعَ الذِّكْرِ وَالدُّعَاءِ , وَرَمْيِ الْجِمَارِ , مَعَ ذِكْرِ اللَّهِ وَغَيْرِ ذَلِكَ , وَلا يُكْرَهُ لَهَا ذَلِكَ , بَلْ يَجِبُ عَلَيْهَا “হায়েজা (ঋতুমতী) নারী ও নেফাসগ্রস্ত (প্রসূতি) নারীকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহরাম বাঁধতে ও তালবিয়া পাঠ করতে আদেশ দিয়েছেন, আর সেগুলোতে আল্লাহর যিকির রয়েছে, তিনি তাদেরকে আল্লাহর যিকর ও দু‘আর সঙ্গে আরাফাতে উপস্থিত হতে, এবং আল্লাহর যিকর সহকারে জামারায় পাথর নিক্ষেপ করতে ও এ-জাতীয় অন্যান্য ইবাদত সম্পাদনে নির্দেশ দিয়েছেন।এসব তাদের জন্য অপছন্দনীয় (মাকরূহ) নয়; বরং তা তাদের জন্য ওয়াজিব (অবশ্যকীয়)।”(ইবনু তাইমিয়্যাহ ফাতাওয়া আল-কুবরা, খন্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪৪৭)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: হায়েযগ্রস্ত নারীর হজ্জ করার হুকুম কী?
জবাবে স্থায়ী কমিটির আলেমগন বলেন:
الحيض لايمنع من الحج، وعلى من تحرِم وهي حائض أن تأتي بأعمال الحج، غير أنها لاتطوف بالبيت إلا إذا انقطع حيضها واغتسلت، وهكذا النفساء، فإذا جاءت بأركان الحج فحجها صحيح. “
“হায়েয হজ্জ আদায়ে প্রতিবন্ধক নয়। হায়েয অবস্থায় যে নারী ইহরাম বাঁধেন তিনি হজ্জের সকল আমল সম্পাদন করবেন; শুধু বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করা ব্যতীত। তাঁর হায়েয শেষ হওয়ার পর ও গোসল করার পর তিনি বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করবেন। নিফাসগ্রস্ত নারীর হুকুমও একই রকম। যদি হায়েযগ্রস্ত নারী হজ্জের রুকনসমূহ আদায় করেন তাহলে তার হজ্জ সহিহ।”(ফাতাওয়াল লাজনাহ্ আদ্দায়িমা লিল বুহুস আল-ইলমিয়্যা ওয়াল ইফতা; খণ্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ১৭২, ১৭৩)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
والمرأة التي تريد العمرة لا يجوز لها مجاوزة الميقات إلا بإحرام حتى لو كانت حائضاً، فإنها تحرم وهي حائض وينعقد إحرامها ويصح، والدليل لذلك أن أسماء بنت عميس زوجة أبي بكر – رضي الله عنهما – ولدت والنبي صلى الله عليه وسلّم نازل في ذي الحليفة يريد حجة الوداع، فأرسلت إلى النبي صلى الله عليه وسلّم كيف أصنع؟ قال: اغتسلي واستثفري بثوب وأحرمي.
ودم الحيض كدم النفاس، فنقول للمرأة الحائض – إذا مرت بالميقات وهي تريد العمرة أو الحج نقول لها -: اغتسلي واستثفري بثوب وأحرمي، والاستثفار معناه: أنها تشد على فرجها خرقة وتربطها ثم تحرم سواء بالحج أو بالعمرة، ولكنها إذا أحرمت ووصلت إلى مكة لا تأتي إلى البيت ولا تطوف به حتى تطهر، ولهذا قال النبي صلى الله عليه وسلّم لعائشة حين حاضت في أثناء العمرة قال لها: افعلي ما يفعل الحاج غير أن لا تطوفي في البيت حتى تطهري هذه رواية البخاري ومسلم، وفي صحيح البخاري أيضاً ذكرت عائشة أنها لما طهرت طافت بالبيت وبالصفا والمروة، فدل هذا على أن المرأة إذا أحرمت بالحج أو العمرة وهي حائض أو أتاها الحيض قبل الطواف: فإنها لا تطوف ولا تسعى حتى تطهر وتغتسل، أما لو طافت وهي طاهرة وبعد أن انتهت من الطواف جاءها الحيض: فإنها تستمر وتسعى ولو كان عليها الحيض، وتقص من رأسها، وتنهي عمرتها؛ لأن السعي بين الصفا والمروة لا يشترط له الطهارة. “
“যে নারী হজ্জ আদায় করতে চান তার জন্যে ইহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করা জায়েয হবে না; এমন কি সে নারী যদি হায়েযগ্রস্ত হন তবুও। কেননা তিনি হায়েযগ্রস্ত হলেও ইহরাম বাঁধবেন এবং তার ইহরাম বাঁধা শুদ্ধ হবে। দলিল হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বিদায় হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে যুল হুলাইফাতে অবস্থান করছিলেন তখন আবু বকর (রাঃ) এর স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) সন্তান প্রসব করলেন। তখন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লামের কাছে লোক পাঠালেন: তিনি কি করবেন? তখন তিনি বললেন: আপনি গোসল করে নিন, একটা কাপড় বেঁধে নিন এবং ইহরাম করুন।
নিফাসের রক্ত হায়েযের রক্তের ন্যায়। তাই যে ঋতুবতী নারী উমরা কিংবা হজ্জ পালনের উদ্দেশ্য নিয়ে মীকাত পার হচ্ছে আমরা তাকে বলব: আপনি গোসল করে নিন এবং একটা কাপড় বেঁধে নিন এবং ইহরাম করুন।হাদীছে উল্লেখিত استثفار শব্দটির অর্থ হচ্ছে- লজ্জাস্থানের উপরে একটা কাপড় বেঁধে নিবে। এরপর হজ্জ কিংবা উমরার ইহরাম করবে। কিন্তু, সে নারী মক্কায় পৌঁছার পর পবিত্র হওয়ার আগে বায়তুল্লাহ্তে আসবে না এবং তাওয়াফ করবে না। যেহেতু আয়েশা (রাঃ) যখন উমরা পালনকালে হায়েযগ্রস্ত হলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম তাকে বলেন: “একজন হাজী যা যা করে তুমিও তা তা করবে তবে, পবিত্র হওয়ার আগে বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করবে না।” এটি সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমের বর্ণনা। সহিহ বুখারীর অপর বর্ণনাতে আছে আয়েশা (রাঃ) বলেছেন: “তিনি যখন পবিত্র হয়েছেন তখন তিনি বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করেছেন ও সাফা-মারওয়া সাঈ করেছেন”। এতে প্রমাণিত হয় যে, কোন নারী যদি হায়েয অবস্থায় ইহরাম বাঁধেন কিংবা তাওয়াফ করার আগে তার মাসিক শুরু হয় তাহলে তিনি পবিত্র হওয়া ও গোসল করার আগে তাওয়াফ করবেন না এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ (প্রদক্ষিণ) করবেন না। আর তিনি যদি পবিত্র অবস্থায় তাওয়াফ করে থাকেন, কিন্তু তাওয়াফ শেষ করার পর তার মাসিক শুরু হয় সেক্ষেত্রে তিনি উমরার আমল চালিয়ে যাবেন এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করবেন; এমন কি হায়েয অবস্থা সত্ত্বেও। তিনি মাথার চুল ছোট করে উমরার কাজ সমাপ্ত করবেন। কেননা সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ে সাঈ করার ক্ষেত্রে পবিত্রতা শর্ত নয়।”(সিত্তুনা সুআলান ফিল হায়যি (সুআল: ৫৪)
.
দ্বিতীয়ত: যে নারী উমরা সমাপ্ত করার আগে তার হায়েয শুরু হয়ে গেছে তিনি কি করবেন।
.
আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, হায়েযের কারণে হজ্জ বা উমরার ইহরাম বাঁধতে কোন বাধা নেই। কিন্তু হায়েযগ্রস্ত নারীর জন্যে পবিত্র হওয়ার আগে বায়তুল্লাহকে তাওয়াফ করা হারাম। কেননা আয়েশা (রাঃ) যখন মক্কাতে প্রবেশ করার আগে হায়েযগ্রস্ত হয়েছেন তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেছেন:“একজন হাজী যা যা করে তুমিও তা তা কর। তবে, তুমি পবিত্র হওয়ার আগে তাওয়াফ করবে না।”(সহিহ বুখারী হা/১৬৬০) সহিহ বুখারীতে আরও সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি যখন পবিত্র হয়েছেন তখন বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেছেন এবং সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাঈ বা প্রদক্ষিণ করেছেন। এর থেকে জানা গেল যে, কোন নারী তাওয়াফ করার আগে হায়েযগ্রস্ত হলে তিনি পবিত্র হওয়ার আগে তাওয়াফ ও সাঈ করবেন না।
.
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, যদি কোন নারী হজ্জ-উমরাহ অবস্থায় হায়েজগ্রস্ত হয়ে যায় তাহলে তার কর্তব্য হচ্ছে- প্রথমে মাসিক শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা। এরপর পবিত্র হলে তিনি গোসল করবেন, তারপর বায়তুল্লাহ তাওয়াফ সম্পন্ন করবেন এবং সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাঈ করবেন। এরপর চুল কাটবেন। এর মাধ্যমে তিনি তার উমরার কর্ম সমাপ্ত করলেন। এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো— তিনি যেহেতু মিকাত থেকে ইহরাম বেঁধেছিলেন, তাই পবিত্র হওয়ার পর মক্কার অন্য কোনো স্থান থেকে নতুন করে ইহরাম বাঁধার প্রয়োজন নেই। বরং তাঁর অবস্থানস্থল থেকেই কাবার দিকে গিয়ে উমরাহর তাওয়াফ সম্পন্ন করবেন। এছাড়া ইহরাম অবস্থায় মাসিক হওয়ায় তাঁর ওপর কোনো ফিদিয়া বা কাফফারা ওয়াজিব হবে না। হজ্জের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য; অর্থাৎ তিনি হায়েজ অবস্থায় হজ্জের যাবতীয় আমল সম্পূর্ণ করবেন শুধুমাত্র বাইতুল্লাহ তাওয়াফ ছাড়া।তাঁর হায়েয শেষ হওয়ার পর ও গোসল করার পর তিনি বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করবেন। নিফাসগ্রস্ত নারীর হুকুমও একই রকম। যদি হায়েযগ্রস্ত নারী হজ্জের রুকনসমূহ আদায় করেন তাহলে তার হজ্জ সহিহ। পাশাপাশি জেনে রাখা ভাল যে, হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারীর উপর বিদায়ী তাওয়াফ নেই। এটি নারীদের জন্য ইসলামী শরিয়তের বিশেষ ছাড়। হায়েযগ্রস্ত নারীর জন্য বিদায়ী তাওয়াফ না করে তার ফ্যামিলির সাথে দেশে ফিরে যাওয়া বৈধ। সুতরাং হে মুসলিম বোন, এ সহজীকরণ ও এ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করুন।(বিস্তারিত জানতে দেখুন ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৮২০১২)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
No comments:
Post a Comment