Saturday, November 8, 2025

হজ্জ ও ওমরাহ আদায়ের জন্য কিংবা রমাদান মাসে রোযা রাখার সুবিধার্থে ওষুধ খেয়ে নারীদের হায়েয বন্ধ রাখার বিধান

 প্রশ্ন: হজ্জ ও ওমরাহ আদায়ের জন্য কিংবা রমাদান মাসে রোযা রাখার সুবিধার্থে হায়েয (ঋতুস্রাব) বন্ধ রাখার উদ্দেশ্যে যদি কোনো নারী হায়েয-নিবারক ওষুধ বা ট্যাবলেট সেবন করেন, তবে কি এতে গুনাহ হবে?

▬▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর স্বাভাবিক অবস্থায় হায়েযের সময় হায়েয-নিবারক ট্যাবলেট সেবন করে ঋতু বন্ধ রাখা উচিত নয়।বরং আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দীদের জন্য যে স্বাভাবিক নিয়ম ও বিধান নির্ধারণ করেছেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকা এবং সেটাকেই মেনে নেওয়াই উত্তম। কেননা বান্দার প্রকৃত কল্যাণ নিহিত আছে আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকার মধ্যেই। তবে আহালুল আলেমগনের মতে বিশেষ প্রয়োজনে—যেমন হজ্জ, উমরাহ,বা রমজানের শেষ দশক ইবাদত অথবা অন্য কোন জরুরি পরিস্থিতিতে—যদি কোনো অভিজ্ঞ মুসলিম চিকিৎসকের পরামর্শে এই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়, এবং তাতে শারীরিক ক্ষতি বা সন্তান ধারণক্ষমতার কোনো বিপর্যয় না ঘটে, তাহলে শরিয়তে এর অনুমতি আছে। তবে এর দ্বারা ঋতু বন্ধ রাখলে গুনাহ হয়—এ মর্মে শরিয়তে কোনো প্রামাণ্য দলিল নেই। তবুও একজন ঈমানদার নারীর জন্য উত্তম হলো, আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য যে স্বাভাবিক অবস্থার ফয়সালা নির্ধারণ করেছেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকা এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ না করা।এছাড়া, চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এই ধরনের ওষুধ অনেক সময় নারীর ঋতুচক্রে অনিয়ম, ব্যথা বা অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন;لا ضرر ولا ضرار“কোনো ক্ষতি করা যাবে না, আর নিজের বা অন্যের ক্ষতির কারণও হওয়া যাবে না।”(ইবন মাজাহ হা/২৩৪১)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল রমজান মাসে মহিলারা কি মাসিক বন্ধ করার জন্য ওষুধ বা ট্যাবলেট গ্রহণ করতে পারবেন কি না ?
জবাবে স্থায়ী কমিটির আলেমগন বলেন:يجوز أن تستعمل المرأة أدوية في رمضان لمنع الحيض إذا قرر أهل الخبرة الأمناء من الدكاترة ومن في حكمهم أن ذلك لا يضرها، ولا يؤثر على جهاز حملها، وخير لها أن تكف عن ذلك، وقد جعل الله لها رخصة في الفطر إذا جاءها الحيض في رمضان، وشرع لها قضاء الأيام التي أفطرتها ورضي لها بذلك دينا. وبالله التوفيق وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم.”মহিলা রমযান মাসে মাসিক (ঋতুস্রাব) বন্ধ রাখার উদ্দেশ্যে ওষুধ ব্যবহার করতে পারে, যদি বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকগণ অথবা তাদের সমপর্যায়ের বিশেষজ্ঞগণ নিশ্চিত করেন যে এটি তার জন্য ক্ষতিকর নয়, এবং তার প্রজনন-অঙ্গ বা গর্ভধারণের ব্যবস্থায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। তবে তার জন্য উত্তম হলো এ ধরনের ওষুধ ব্যবহার থেকে বিরত থাকা। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তার জন্য ছাড় (রুখসাহ) দিয়েছেন রোযা না রাখার, যখন রমযান মাসে তার মাসিক শুরু হয়। আর যে দিনগুলোতে সে রোজা রাখে না, সে দিনগুলোর কাজা আদায় করার বিধান দিয়েছেন এবং এটাকেই তার জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করেছেন। আর আল্লাহই তাওফীকদাতা। আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ﷺ), তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণের উপর শান্তি ও দয়া বর্ষণ করুন।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ; খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ১৫১; ফাতওয়া নং-১২১৬; প্রশ্ন নং: ৫)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: মহিলার জন্য রমজান মাসে মাসিকের রক্ত নিরোধক ট্যাবলেট সেবন করার হুকুম কী, যাতে করে সে তার রোজা সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয়?
জবাবে শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:لا حرج في ذلك أن تأخذ الحبوب لمنع الحيض حتى تصلي مع الناس وتصوم مع الناس بشرط أن يكون ذلك سليماً لا يضرها عن المشاورة للطبيب، وعن موافقة لزوجها حتى لا تضر نفسها، وحتى لا تعصي زوجها، فإذا كان عن تشاور وعن احتياط من جهة السلامة من الضرر فلا بأس، وهكذا في أيام الحج. “তার জন্য মাসিক নিবারক ট্যাবলেট সেবন করায় কোনো সমস্যা নেই, যাতে করে সে মানুষদের সঙ্গে সালাত পড়তে পারে এবং মানুষদের সঙ্গে রোজা রাখতে পারে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো এই ব্যবস্থাটি নিরাপদ হতে হবে, যা তার কোনো ক্ষতি করবে না।পাশাপাশি এই কাজ (অভিজ্ঞ) ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে এবং স্বামীর সম্মতি নিয়ে সম্পন্ন করতে হবে। যাতে করে সে নিজেকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে এবং স্বীয় স্বামীর অবাধ্য না হয়। এটি যখন পরামর্শের ভিত্তিতে হবে এবং অনিষ্ট থেকে নিরাপদ হওয়ার মতো সতর্কতার ভিত্তিতে হবে, তখন এতে কোনো সমস্যা নেই। অনুরূপভাবে হজের ক্ষেত্রেও একই বিধান।”(বিন বায অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ফাতওয়া নং-১৮৬৯৬)
.
অপর একটি প্রশ্নে ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)-জিজ্ঞেস করা হয়েছিল; সবার সাথে যেন হজ্জের কাজ শেষ করা যায় সেজন্য মেয়েদের ট্যাবলেট খাওয়া কি জায়েয আছে?
উত্তরে ইমাম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:لا حرج أن تأخذ المرأة حبوب منع الحمل تمنع الدورة الشهرية أيام رمضان حتى تصوم مع الناس ، وفي أيام الحج حتى تطوف مع الناس ولا تتعطل عن أعمال الحج ، وإن وجد غير الحبوب شيء يمنع من الدورة فلا بأس إذا لم يكن فيه محذور شرعاً أو مضرة ” انتهى كلام الشيخ عبد العزيز بن باز “রমজান মাসে মেয়েদের গর্ভ নিরোধক বড়ি খেতে অসুবিধা নেই; যাতে করে মাসিক বন্ধ থাকে ও সবার সাথে রোযা রাখতে পারে। এবং ওমরাহ ও হজ্জের দিনগুলোতে খেতে অসুবিধা নেই; যাতে করে সবার সাথে তাওয়াফ করতে পারে ও হজ্জের কাজ বিঘ্ন না হয়। ট্যাবলেট ছাড়া অন্য কিছু যদি পাওয়া যায়, যা মাসিক বন্ধ রাখে তাহলে সেটাতে তো কোন অসুবিধা নেই; যদি শরিয়ত নিষিদ্ধ কোন কিছু এতে না থাকে কিংবা ক্ষতিকর কিছু না থাকে।(শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায এর বক্তব্য থেকে সংকলিত ও সমাপ্ত; মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১৭; পৃষ্ঠা: ৬০; গৃহীত ইসলাম সাওয়াল জবাব ফতোয়া নং-৩৬৬০০)
.
পক্ষান্তরে, আমাদের ইমাম শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) নারীদেরকে এ ধরনের ওষুধ সেবন করে হায়েয বন্ধ রাখার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করেছেন। তাঁর মতে, নারীর উচিত আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারিত প্রাকৃতিক ব্যবস্থার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা এবং সেটিকে কৃত্রিমভাবে পরিবর্তনের চেষ্টা না করা। কেননা, যেমন কেউ যদি জোর করে প্রস্রাব বা পায়খানা আটকে রাখে, তাতে যেমন শরীরের ক্ষতি হয়—তেমনি মাসিকের স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ রাখাও শারীরিক ক্ষতির কারণ এবং প্রাকৃতিক ব্যবস্থার পরিপন্থী। বরং যখন নারী হায়েজ গ্রস্থ হয়, তখন রোযা ও নামায থেকে বিরত থাকা—এ দুটোই আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী আনুগত্যেরই অংশ। এতে নারীর কোনো ঘাটতি বা দোষ নেই; বরং এটি আল্লাহর বিধানের প্রতি বিনয়, সন্তুষ্টি ও পূর্ণ সমর্পণের প্রতিফলন। আমরা এখানে শাইখের দুটি ফাতওয়া উল্লেখ করছি।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: কোন কোন নারী রমযান মাসে ইচ্ছাকৃতভাবে ট্যাবলেট খেয়ে মাসিক (হায়েয) বন্ধ করে রাখেন। এ কাজ করার প্ররোচনা হচ্ছে যাতে করে রমযানের রোযা পরে কাযা পালন করতে না হয়। এটা করা কি জায়েয? এক্ষেত্রে কি বিশেষ কোন শর্ত রয়েছে যাতে করে এ নারীগণ এ কাজটি না করেন?
উত্তরে শাইখ রাহিমাহুল্লাহ বলেন:الذي أراه في هذه المسألة ألا تفعله المرأة وتبقى على ما قدره الله عز وجل وكتبه على بنات آدم فإن هذه الدورة الشهرية لله تعالى حكمة في إيجادها ، هذه الحكمة تناسب طبيعة المرأة فإذا منعت هذه العادة فإنه لا شك يحدث منها رد فعل ضار على جسم المرأة وقد قال صلى الله عليه وسلم : ( لا ضرر ولا ضرار ) هذا بغض النظر عما تسببه هذه الحبوب من أضرار على الرحم كما ذكر ذلك الأطباء ، فالذي أرى في هذه المسألة أن النساء لا يستعملن هذه الحبوب والحمد لله على قدره وحكمته إذا أتاها الحيض تمسك عن الصوم والصلاة وإذا طهرت تستأنف الصيام والصلاة وإذا انتهى رمضان تقضي ما فاتها من الصوم “এ মাসয়ালায় আমার দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে— কোন নারী যেন এ কাজটি না করেন। আল্লাহ্‌ যা নির্ধারণ করে রেখেছেন এবং নারী জাতির জন্য যা লিখে রেখেছেন সেটা সেভাবেই থাকুক। কারণ এ মাসিক দেয়ার মধ্যে আল্লাহ্‌র বিশেষ গূঢ় রহস্য রয়েছে। এই গূঢ় রহস্যটি নারীর প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যদি এই মাসিককে বাধাগ্রস্থ করা হয় নিঃসন্দেহে এর প্রতিক্রিয়ায় নারীর শরীরের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “ক্ষতি করা নয় এবং পাল্টাপাল্টি ক্ষতি করাও নয়”। তাছাড়া এই ট্যাবলেটগুলোর গর্ভাশয়ের উপর ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে যা ডাক্তারগণ উল্লেখ করে থাকেন। তাই এই মাসয়ালায় আমার দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে নারীরা যেন এই ট্যাবলেটগুলো ব্যবহার না করেন। আল্লাহ্‌র তাকদীর ও হেকমতের জন্য তার প্রশংসা। যখন কোন নারীর হায়েয শুরু হবে তখন তিনি রোযা ও নামায থেকে বিরত থাকবেন। যখন পবিত্র হবেন তখন রোযা ও নামায পুনরায় শুরু করবেন। যখন রমযান শেষ হবে তিনি রমযানের ছুটে যাওয়া রোযাগুলোর কাযা পালন করবেন।”(ফাতওয়ায় ইসলামিয়া; গৃহীত ইসলাম সাওয়াল জবাব ফাতওয়া নং-৭৪১৬)
.
ইমাম ইবনু উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)-কে আরও জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: একজন মহিলার স্বাভাবিক মাসিকের সময়কাল পনের দিন। যার মধ্যে রমজানের শুরুতে তাঁর মাসিক হয় পাঁচ দিন, আর শেষ দশ দিনে হয় আরও দশ দিন। তিনি চাচ্ছেন রমজানের শেষ দশ দিন নামায, তাহাজ্জুদ ও ই‘তিকাফে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে মাসিক বন্ধ রাখার ঔষধ গ্রহণ করবেন। এ অবস্থায় তাঁর জন্য এ ওষুধ গ্রহণের শর‘ঈ হুকুম কী? উল্লেখ্য, তাঁর উদ্দেশ্য রোযা কাযা করার কষ্ট এড়ানো নয়; বরং ইবাদতে অংশগ্রহণ করা।
জবাবে শাইখ বলেন:
بناءً على ما سمعتُ من أطباء ثقات أرى ألا تستعمل هذه الحبوب؛ لأنها ضارة على الرحم، وعلى دم المرأة، وعلى العادة، وعلى الجنين، يعني يقولون: من أسباب تشوُّه الأجنَّة الذي كثر في هذا الزمان تناول هذه العقاقير. فالذي أرى أن لا تستعملها، بل أرى أن ترضى بما قدَّر الله عزَّ وجلَّ من هذا الحيض، وليكن لها أسوة بأم المؤمنين عائشة رضي الله عنها، عائشة في حجة الوداع أحرمت بعمرة كسائر النساء، فأتاها الحيض في أثناء الطريق بـسرف، فدخل عليها النبي صلى الله عليه وسلم وهي تبكي، فقال: (ما لك؟ لعلك نفستِ! – يعني: حضتِ! – قالت: نعم يا رسول الله! قال: هذا شيء كتبه الله على بنات آدم).
ما هو عليك أنت وحدك كتبه الله كتابة شرعية أم كونية؟ كتابة كونية، قدر الله عزَّ وجلَّ بكتابته الأزلية التي كتبها في الأزل أن بنات آدم يحضن، فكأنه يقول: هذا شيء مكتوب، ولا فرار عن المكتوب، فاصبري.ثم أمرها عليه الصلاة والسلام أن تحرم بحج، وتدخل الحج على العمرة لتكون قارنة. الشاهد: أني أقول: لا تستعمل النساء هذه الحبوب؛ لما ثبت عندي من أضرارها، ولأن الرضا بما قدر الله على النساء من الحيض الذي فيه الامتناع عن الصوم وعن الصلاة خير من فعل الأسباب المانعة للحيض.ثم اعلم أيضاً أن كل شيء يكون بمقتضى الطبيعة التي جَبَلَ الله عليها الخلق إذا وجد ما يصادم هذا الشيء فإنه يكون ضرراً على البدن، هذا شيء يعرفه الإنسان، وإن لم يكن طبيباً.
شيء بمقتضى الطبيعة والجِبِلَّة لابد أن يخرج فإن حبسه لا شك أنه ضرر، واعتبر ذلك بما لو كان بولاً أو غائطاً، وأكلتَ حبوباً تمسكه، هل سيؤثر ذلك على البدن؟ نعم، سيؤثر على البدن لا شك، وإن كان ما جاءك بول، ولا غائط؛ لكن سيؤثر انحباسه في العروق، والعادة أنه يخرج، لا شك أنه ضرر، كذلك هذا الدم؛ دم الحيض.فالذي نرى أن النساء يتركنه، والحمد لله إذا أفطَرَت فقد أفطَرَت بأمر الله، وإذا ترَكَت الصلاة فقد ترَكَت الصلاة بأمر الله.
“বিশ্বস্ত চিকিৎসকদের কাছ থেকে যা শুনেছি, তার ভিত্তিতে আমার মত হলো—এই (মাসিক বন্ধের) ট্যাবলেটগুলো ব্যবহার করা উচিত নয়; কারণ এগুলো জরায়ুর জন্য ক্ষতিকর, নারীর রক্তের জন্য ক্ষতিকর, স্বাভাবিক মাসিক চক্রের জন্য ক্ষতিকর, এমনকি ভ্রূণের জন্যও ক্ষতিকর। চিকিৎসকরা বলেন: বর্তমান যুগে ভ্রূণের বিকৃতি (জন্মগত ত্রুটি দেখা দেওয়ার) যে কারণগুলো বেড়ে গেছে, তার অন্যতম কারণ হলো এই ওষুধগুলো (মাসিক বন্ধের ট্যাবলেট) সেবন করা। অতএব আমার অভিমত হলো, নারী যেন এই ট্যাবলেটগুলো ব্যবহার না করে; বরং আল্লাহ তাআলা যেভাবে তার জন্য হায়েজ নির্ধারণ করেছেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকে। আর তার উচিত উম্মুল মু’মিনীনা আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)-এর আদর্শ গ্রহণ করা। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বিদায়ী হজ্জের সময় অন্যান্য নারীর মতো ওমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন, কিন্তু সুরাফ নামক স্থানে পৌঁছানোর আগেই তার মাসিক শুরু হয়ে যায়। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাছে প্রবেশ করলেন, আর তিনি কাঁদছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন: “তোমার কী হয়েছে? সম্ভবত: তুমি ঋতুবতী হয়েছো? তিনি বললেন: “হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল!” তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: “এটি এমন একটি বিষয়, যা আল্লাহ আদম-কন্যাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন।”সহীহ মুসলিম হা/২৮০৯) অর্থাৎ এখানে তিনি (ﷺ) বোঝাতে চেয়েছিলেন—এটি কি শুধুই তোমার জন্য নির্ধারিত কোনো শরীয়তগত বিধান? না, বরং এটি আল্লাহর কওনী (সৃষ্টিগত) বিধান। আল্লাহ তাআলা তার প্রাচীন (চিরন্তন) লেখায় এইভাবে নির্ধারণ করেছেন—যে আদমের কন্যারা (মহিলারা) হায়েজগ্রস্থ হবে। অর্থাৎ যেন নবী (ﷺ) বলছেন: “এটি এমন এক বিষয় যা লিখিত হয়ে গেছে, আর লিখিত বিষয় থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই। সুতরাং ধৈর্য ধারণ কর।” এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে নির্দেশ দিলেন, তিনি যেন হজের ইহরাম বেঁধে নেন এবং হজ্জকে ওমরার সঙ্গে মিলিয়ে নেন অর্থাৎ ক্বিরান হজ্জ (হজ ও ওমরা একসঙ্গে) সম্পন্ন করেন। মূল বক্তব্য হলো: আমি বলছি, নারীদের উচিত নয় এই ট্যাবলেটগুলো ব্যবহার করা; কারণ এগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব আমার কাছে প্রমাণিত হয়েছে। তাছাড়া আল্লাহ নারীদের জন্য যেভাবে হায়েজ নির্ধারণ করেছেন—যার কারণে তারা রোজা ও সালাত থেকে বিরত থাকে—তাতে সন্তুষ্ট থাকা, ঋতুস্রাব বন্ধ করার কৃত্রিম উপায় অবলম্বন করার চেয়ে উত্তম। আর এটাও জানা উচিত যে, যেকোনো বিষয়, যা আল্লাহ তার সৃষ্টিতে প্রাকৃতিকভাবে স্থাপন করেছেন, যদি কেউ সেই প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাহলে তা দেহের জন্য ক্ষতিকর হয়। এটি এমন বিষয়, যা মানুষ সহজেই বুঝতে পারে, যদিও সে চিকিৎসক না হয়। যে জিনিস প্রকৃতি ও স্বভাবগত নিয়ম অনুযায়ী দেহ থেকে বেরিয়ে আসার কথা, সেটিকে যদি কেউ আটকে রাখে, নিঃসন্দেহে তা ক্ষতির কারণ হয়।উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ মূত্র বা পায়খানা দেহে আটকে রাখে, অথবা এমন ওষুধ সেবন করে যা এগুলোর নির্গমন রোধ করে, তাহলে কি তা শরীরে প্রভাব ফেলবে না? নিশ্চয়ই ফেলবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। যদিও বাহ্যিকভাবে প্রস্রাব বা পায়খানা বের না হয়, তবুও এগুলোর আটকে থাকা শরীরের শিরা-উপশিরায় প্রভাব ফেলে। কারণ স্বাভাবিকভাবে এগুলোর নির্গমনই দেহের প্রকৃতি—সুতরাং তা বন্ধ করে রাখলে ক্ষতি হওয়াই স্বাভাবিক ও নিশ্চিত বিষয়। ঋতুস্রাবের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সুতরাং আমরা মনে করি, নারীদের উচিত মাসিককে স্বাভাবিকভাবে হতে দেওয়া। আলহামদুলিল্লাহ, যদি সে রোজা ভাঙে— তবে সে তা করেছে আল্লাহরই হুকুমে, আর যদি সে নামাজ ত্যাগ করে, তাও আল্লাহরই নির্দেশে করেছে।”(ইমাম উসাইমীন “মাজালিসু শাহরি রামাযান নামক পুস্তিকা)
.
♦️পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথা পরিষ্কার যে, মহিলাদের মাসিক চক্রকে কৃত্রিমভাবে থামানোর ওষুধ বা ট্যাবলেট ব্যবহার করা উচিত নয় কেননা এগুলো শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ তাআলা নারীদের জন্য যে প্রাকৃতিক নিয়ম নির্ধারণ করেছেন (মাসিকের মাধ্যমে রোজা ও নামাজ থেকে বিরত থাকা), সেটিকে স্বাভাবিকভাবে মেনে চলাই উত্তম। এই নিয়ম মানবদেহের স্বাভাবিক সৃষ্টির অংশ, এবং তা পরিবর্তনের চেষ্টা করলে ক্ষতি হয়। তাই মহিলাদের উচিত মাসিককে স্বাভাবিকভাবে হতে দেওয়া, এবং আল্লাহর বিধান মেনে রোজা ও নামাজ থেকে বিরত থাকা ধৈর্যসহ্য করা। তবে প্রখ্যাত আলেমদের একটি বড় অংশের মতে, হজ্জ বা উমরার মতো বিশেষ পরিস্থিতিতে যদি স্বাস্থ্যগত বা অন্যান্য গুরুতর কারণে ঋতুস্রাব কৃত্রিমভাবে বন্ধ রাখা প্রয়োজন হয়ে ওঠে, তবে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে। যদি এই ক্ষেত্রে ধর্মীয় ও শারীরিক দিক থেকে কোনো সমস্যা থাকে না এবং এতে কোনো গুনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

No comments:

Post a Comment

Translate