Friday, October 31, 2025

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আল্লাহর সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে সর্বোত্তম এবং তাঁর দাফনের স্থান কি কাবাঘরের চেয়ে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন

 প্রশ্ন: রাসূল (ﷺ) কি আল্লাহর সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে সর্বোত্তম এবং তাঁর দাফনের স্থান কি কাবাঘরের চেয়ে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন?

▬▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬▬
প্রথমত: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর প্রথমেই বলা প্রয়োজন—এটি মূলত একটি অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন। এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর জানার মধ্যে কোনো শারঈ কল্যাণ বা বাস্তব উপকার নেই। বরং আমাদের কর্তব্য হলো এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন থেকে দূরে থাকা এবং পরিবর্তে দ্বীনের মৌলিক বিষয়সমূহ—যেমন আকীদা, মানহাজ ও আমলের মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া।
.
দ্বিতীয়ত: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের মর্যাদা, ফযীলত ও বিশেষ গুণাবলীর ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহতে অসংখ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে যা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল স্পষ্টভাবে আমাদেরকে জানিয়েছেন, তা থেকে কোনো সুস্পষ্ট নস নেই যেখানে সরাসরি বলা হয়েছে যে তিনি আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। বরং কুরআন সুন্নাহর দলিল দ্বারা যা পরিষ্কারভাবে উল্লেখিত হয়েছে তা হলো—তিনি মানবজাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ, আদম সন্তানের নেতা এবং মানুষের মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন রাসূল। যেমন আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: (أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، وَأَوَّلُ مَنْ يَنْشَقُّ عَنْهُ الْقَبْرُ ﷺ وَأَوَّلُ شَافِعٍ ، وَأَوَّلُ مُشَفَّعٍ) “কিয়ামতের দিন আমি হব বনী আদমের নেতা। আমার কবর প্রথম উন্মুক্ত করা হবে, আমিই হব প্রথম সুপারিশকারী ব্যক্তি এবং প্রথম যার সুপারিশ গৃহীত হবে”।(সহীহ মুসলিম হা/৫৮৩৪) একদল আলেম এই হাদিস এবং নবী (ﷺ)-এর ফযীলত সম্পর্কিত অন্যান্য প্রমাণাদি থেকে এটি ব্যাখ্যা করেছেন যে, তিনিই সৃষ্টির সেরা। উদাহরণস্বরূপ:
.
ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর শরহে মুসলিম-এ ‘আমি আদম সন্তানের সরদার’ মর্মে বর্ণিত হাদীছের উপর এই নামে অধ্যায় রচনা করেছেন,باب تَفْضِيلِ نَبِيِّنَا صلى الله عليه وسلم عَلَى جَمِيعِ الْخَلاَئِقِ রাসূল (ﷺ) -এর সকল সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব’ অধ্যায়। এরপর হাদিসটির ব্যাখ্যায় ইমাম নববী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর “শারহু সহীহ মুসলিম” গ্রন্থে বলেন:وهذا الحديث دليل لتفضيله صلى الله عليه وسلم على الخلق كلهم ، لأن مذهب أهل السنة أن الآدميين أفضل من الملائكة ، وهو صلى الله عليه وسلم أفضل الآدميين وغيرهم”এই হাদীসটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সমগ্র সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়ার প্রমাণ, কারণ আহলে সুন্নাহর মত হলো:মানুষ ফেরেশতাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর মুহাম্মাদ (ﷺ) সকল মানুষ ও অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ’।”(নববী শারহু সহীহ মুসলিম খণ্ড: ১৫; পৃষ্ঠা: ৪১৩)
.
হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:وقد اتفق المسلمون على أنه صلى الله عليه وسلم أعظم الخلق جاها عند الله، لا جاه لمخلوق أعظم من جاهه، ولا شفاعة أعظم من شفاعته”মুসলিমদের মধ্যে এ বিষয়ে সর্বসম্মত মত (ইজমা) রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আল্লাহর নিকট সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন। সৃষ্ট কোন কিছুর মর্যাদা তাঁর মর্যাদার ঊর্ধ্বে নয়, এবং কোন শাফাআত (সুপারিশ) তাঁর শাফাআতের চেয়ে মহান নয়।”(ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৪৫)
.
একদল আহালুল আলেমদের কলম সর্বদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে “সৃষ্টির সেরা” বলে বর্ণনা করে আসছেন। আলোচনা দীর্ঘায়িত হবে বলে আমরা কেবল তাদের উক্তির কিছু নিদর্শনের দিকেই ইঙ্গিত করছি। উদাহরণস্বরূপ দেখুন: (১).ইমাম শাফিঈ,”আল-উম্ম” খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১৬৭)। (২).ইমাম আব্দুর রাজ্জাক আল-সান’আনি, তাঁর “মুসান্নাফ” খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৪১৯)। (৩).শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়াহ, মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩১৩; এবং খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ১২৭, ৪৬৮)। (৪).ইমাম ইবনু কাইয়িম,”তাহযীবুস সুনান” হাদীস নং ১৭৮৭?। (৫).হাফিয ইবনে হাজার,ফাতহুল বারী” হাদীস নং ৬২২৯)-এর ব্যাখ্যা। (৬).আল-মিরদাওয়ী ‘আল-ইনসাফ’ খণ্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ৪২২)। (৭).আল-আলূসী, রুহুল মা’আনী; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা; ২৮৪। (৮).শাইখ তাহির ইবনু ‘আশূর (রাহিমাহুল্লাহ) তার তাফসীর; আত-তাহরীর ওয়াত তানভীর, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৪২০)। (৯).শাইখ আব্দুর রহমান আস-সা’দী;তাফসিরে সা’দী; পৃষ্ঠা: ৫১, ১৮৫, ৬৯৯)। (১০).শাইখ মুহাম্মদ আল-আমীন আস-শানক্বিতী; আযওয়াউল বায়ান; খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ২১৫। (১১).ইমাম আব্দুল আযীয বিন বায, মাজমুউ ফাতাওয়া; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৭৬, ৩৮৩)।
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণকে প্রশ্ন করা হয়েছিল:আমরা কি বলতে পারি যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানবজাতির শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি, নাকি তিনি সমগ্র সৃষ্টির মধ্যেই শ্রেষ্ঠ? আর অনেকে যেমন বলেন:“তিনি সমগ্র সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ”—এই কথার কোনো শারঈ প্রমাণ কি রয়েছে?
জবাবে তারা বলেছেন:
:”جاء في نصوص كثيرة من الكتاب والسنة بيان عظم قـدر نبينا محمد صلى الله عليه وسلم ورفعة مكانته عند ربه تعالى من خلال الفضائل الجليلـة والخصائص الكريمة التي خصه الله بها ، مما يدل على أنه أفضل الخلق وأكرمهم على الله وأعظمهم جاها عنده سبحانه ، قال الله سبحانه : (وَأَنْزَلَ اللَّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا) النساء/113 ، وأجنـاس الفضل التي فضله الله بها يصعب استقصاؤها ؛ فمن ذلك : أن الله عز وجل اتخذه خليلا ، وجعله خاتم رسله ، وأنزل عليه أفضل كتبه ، وجعل رسالته عامة للثقلين إلى يوم القيامة ، وغفر له ما تقدم من ذنبه وما تأخر ، وأجرى على يديه من الآيات ما فاق به جميع الأنبياء قبله ، وهو سيد ولد آدم ، وأول من ينشق عنه القبر ، وأول شافع ، وأول مشفع ، وبيده لواء الحمد يوم القيامة ، وأول من يجوز الصراط، وأول من يقرع باب الجنة ، وأول مـن يدخلها . . . إلى غير ذلك مـن الخصائص والكرامات الواردة في الكتاب والسنة ، مما جعل العلماء يتفقون على أن النبي صلى الله عليه وسلم هو أعظم الخلق جاها عند الله تعالى ، قـال شيخ الإسلام ابن تيمية رحمه الله تعالى : “وقد اتفق المسلمون على أنه صلى الله عليه وسلم أعظم الخلق جاها عند الله ، لا جاه لمخلوق أعظم من جاهه ، ولا شفاعة أعظم من شفاعته” .فمما ذُكر وغيره يتبين أن نبينا محمدا صلى الله عليه وسلم هو أفضل الأنبياء ، بل وأفضل الخلق ، وأعظمهم منزلة عند الله تعالى ، ولكن مع هذه الفضائل والخصائص العظيمة فإنه صلى الله عليه وسلم لا يرقى عن درجة البشرية ، فلا يجـوز دعاؤه والاستغاثة به من دون الله عز وجل ، كما قـال تعالى: ( قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا ) الكهف/110، وبالله التوفيق ، وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم”
“কুরআন ও সুন্নাহর বহু নস (দলিল)-এ আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহান মর্যাদা ও তাঁর রবের নিকট তাঁর উচ্চ স্থান সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে—যে মর্যাদা প্রকাশ পেয়েছে মহান সব গুণাবলি ও সম্মানজনক বৈশিষ্ট্যসমূহের মাধ্যমে, যা আল্লাহ তাঁকে দান করেছেন।এসবই প্রমাণ করে যে, তিনি সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বোত্তম, আল্লাহর কাছে সর্বাধিক সম্মানিত এবং তাঁর নিকট সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী।আল্লাহ তাআলা বলেন:”আল্লাহ আপনার প্রতি কিতাব ও হিকমত নাযিল করেছেন এবং আপনি যা জানতেন না তা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন, আপনার প্রতি আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে।”(সূরা আন-নিসা: ১১৩) অর্থাৎ:“আল্লাহ আপনার প্রতি কিতাব ও হিকমত নাযিল করেছেন এবং আপনাকে সে সমস্ত বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন যা আপনি জানতেন না। আর আপনার উপর আল্লাহর অনুগ্রহ তো মহা অনুগ্রহ।”আল্লাহ তাঁকে যে সকল ফযীলত দ্বারা ভূষিত করেছেন, সেগুলোর সংখ্যা গণনা করা কঠিন। এর মধ্যে রয়েছে—আল্লাহ তাঁকে তাঁর খলীল (অন্তরঙ্গ বন্ধু) হিসেবে গ্রহণ করেছেন,তাঁকে তাঁর রাসূলদের মধ্যে সর্বশেষ রাসূল বানিয়েছেন, তাঁর উপর তাঁর শ্রেষ্ঠ কিতাব (আল কুরআন) নাযিল করেছেন, তাঁর রিসালাতকে কিয়ামত পর্যন্ত জিন ও মানবজাতির জন্য সাধারণ করেছেন, তাঁর আগের ও পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন, এবং তাঁর হাতে এমন সব মু’জিযা প্রকাশ করেছেন যা তাঁর পূর্বের সমস্ত নবীকে ছাড়িয়ে গেছে। তিনি আদম-সন্তানদের নেতা, সর্বপ্রথম তাঁর থেকে কবর বিদীর্ণ হবে,তিনিই সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং সর্বপ্রথম যার সুপারিশ কবুল হবে। কিয়ামতের দিন তাঁর হাতে থাকবে প্রশংসার পতাকা (লিওয়াউল হামদ), সর্বপ্রথম তিনিই সিরাত (পুলসিরাত) পার হবেন, সর্বপ্রথম তিনিই জান্নাতের দরজায় কড়া নাড়বেন এবং সর্বপ্রথম তিনিই জান্নাতে প্রবেশ করবেন। …এছাড়াও কুরআন ও সুন্নাহতে তাঁর আরও বহু বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা উল্লেখিত হয়েছে।এসব প্রমাণের আলোকে আলেমগণ একমত হয়েছেন যে,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার কাছে সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী।শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যা (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: “সমস্ত মুসলমান এ বিষয়ে একমত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই আল্লাহর নিকট সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদাবান। কোনো মাখলুকের মর্যাদা তাঁর মর্যাদার চেয়ে বড় নয়, এবং কোনো শাফাআত (সুপারিশ) তাঁর শাফাআতের চেয়ে মহত্তর নয়।”অতএব, উপরোক্ত বিষয়াবলির দ্বারা এটি স্পষ্ট হয় যে—আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবল নবীদের মধ্যেই শ্রেষ্ঠ নন, বরং সমগ্র সৃষ্টির মধ্যেই শ্রেষ্ঠতম এবং আল্লাহর নিকট সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী।তবে এই মহান মর্যাদা ও অসংখ্য ফযীলত থাকা সত্ত্বেও তিনি মানুষই;তিনি মানবতার সীমানা অতিক্রম করেননি।সুতরাং আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাঁকে ডাকা, তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা কিংবা তাঁর উদ্দেশে ইবাদত করা জায়েয নয়।কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন:”বলুন, আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ, আমার প্রতি ওহী হয় যে, তোমাদের ইলাহ একমাত্র সত্য ইলাহ। কাজেই যে তার রব-এর সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকাজ করে ও তার রব-এর ইবাদাতে কাউকেও শরীক না করে।”(সূরা আল-কাহাফ: ১১০) অর্থাৎ:“বলুন: আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার প্রতি ওহি প্রেরিত হয় যে, তোমাদের ইলাহ কেবল একজনই ইলাহ। সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাতের আশা রাখে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার রবের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে”।আল্লাহ্‌ই সবচেয়ে ভাল জানেন। আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও তাঁর সাহাবীবর্গের উপর আল্লাহ্‌র রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ২৬; পৃষ্ঠা: ৩৫)স্বাক্ষরকারী আলেমগণ: শাইখ আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ্‌ আলে-শাইখ;শাইখ আব্দুল্লাহ্‌ বিন আব্দুর রহমান আল-গাদইয়ান,শাইখ সালেহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান,শাইখ বকর বিন আব্দুল্লাহ্‌ আবু যাইদ (রাহিমাহুমুল্লাহ)।
.
প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথা পরিষ্কার যে,অধিকাংশ আলেমদের মত হচ্ছে, আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম সর্বশ্রেষ্ঠ।তবে,কুরআন ও সুন্নাহতে সরাসরি এমন কোনো প্রমাণ নেই যা আল্লাহর সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব নিশ্চিত করে। তাই এই মাসালায় সর্বোত্তম এবং নিরাপদ মত হচ্ছে—নবী (ﷺ) সৃষ্টির সেরা” বলা অনেক আলেমের কাছে প্রচলিত হলেও,এর পক্ষে স্পষ্ট দলিল না থাকায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত কথা বলা নিরাপদ নয়। বরং দলিল অনুযায়ী বলা উচিত: “নবী ﷺ হচ্ছেন আদম সন্তানদের নেতা, নবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও আল্লাহর নিকট সর্বাধিক মর্যাদাবান। যেমনটি আমাদের ইমাম সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইবনু উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন। যেমন:
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন;
“المشهور عند كثير من العلماء إطلاق أن محمداً صلى الله عليه وسلم أفضل الخلق ، كما قال الناظم :وأفضل الخلق على الإطلاق *** نبينا فمل عن الشقاقلكن الأحوط والأسلم أن نقول: محمد صلى الله عليه وسلم سيد ولد آدم، وأفضل البشر، وأفضل الأنبياء، أو ما أشبه ذلك اتباعا لما جاء به النص، ولم أعلم إلى ساعتي هذه أنه جاء أن النبي صلى الله عليه وسلم أفضل الخلق مطلقاً في كل شيء . . . فالأسلم أن الإنسان في هذه الأمور يتحرى ما جاء به النص. مثلاً لو قال قائل: هل فضل الله بني آدم عموماً على جميع المخلوقات؟ قلنا: لا؛ لأن الله تعالى قال: (وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيرٍ مِمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلاً) الإسراء/70 ، لم يقل : على كل من خلقنا، فمثل هذه الإطلاقات ينبغي على الإنسان أن يتقيد فيها بما جاء به النص فقط ولا يتعدى . والحمد لله ، نحن نعلم أن محمداً صلى الله عليه وسلم خاتم النبيين ، وأشرف الرسل وأفضلهم وأكرمهم عند الله عز وجل ، وأدلة ذلك من القرآن والسنة الصحيحة معروفة مشهورة ، وأما ما لم يرد به دليل صحيح فإن الاحتياط أن نتورع عنه ، لكنه مشهور عند كثير من العلماء ، تجدهم يقولون : إن محمداً أشرف الخلق”
“অনেক আলেমের মধ্যে এটাই প্রসিদ্ধ যে,তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টির সেরা বলে আখ্যায়িত করেন, যেমন কবি বলেছেন: وأفضل الخلق على الإطلاق نبينا فمل عن الشقاق অর্থাৎ:”সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছেন আমাদের নবী, সুতরাং এ বিষয়ে মতবিরোধ করো না।” কিন্তু সতর্ক ও নিরাপদ অবস্থান হলো এই বলা: মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদম-সন্তানদের নেতা, মানবজাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ, নবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, অথবা এই জাতীয় কিছু বলা,যা স্পষ্ট দলিল দ্বারা প্রমাণিত।আমার জানা মতে, এই মুহূর্ত পর্যন্ত এমন কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ আমার কাছে আসেনি যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিঃশর্তভাবে সব কিছুর মধ্যে সৃষ্টির সেরা…(অর্থাৎ, সব কিছু ও সব সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্বের দিক থেকে সর্বোচ্চ) অতএব, এই বিষয়গুলিতে মানুষের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ হলো কেবল নসে যা এসেছে তার অনুসরণ করা এবং এর বাইরে না যাওয়া। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ প্রশ্ন করে: আল্লাহ কি সাধারণভাবে সমগ্র মানবজাতিকে সব সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন?’ তাহলে আমরা বলব: না, কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন—“আর অবশ্যই আমরা আদম-সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি; স্থলে ও সাগরে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি; এবং তাদেরকে উত্তম রিযক দান করেছি এবং আমরা যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর তাদেরকে শ্ৰেষ্ঠত্ব দিয়েছি।”(সূরা ইসরা ১৭: ৭০) এখানে আল্লাহ বলেননি,“আমার সমস্ত সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি”বরং বলেছেন,“অনেকের ওপর”।তাহলে বোঝা যায়, এই ধরনের সর্বজনীন বাক্য (মুতলাক বাক্য) ব্যবহার করার সময় মানুষকে অবশ্যই কুরআন ও সহীহ সুন্নাহতে যেমনভাবে এসেছে, তেমনভাবেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে, তার বাইরে যাওয়া উচিত নয়।আর সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য,আমরা জানি,মুহাম্মাদ (ﷺ) হচ্ছেন নবীদের সীলমোহর (শেষ নবী), রসূলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ,আল্লাহর নিকটে সবচেয়ে সম্মানিত ও মর্যাদাবান। এর প্রমাণসমূহ কুরআন ও সহীহ হাদীসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত ও সুবিদিত।কিন্তু যেসব বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ও সহীহ প্রমাণ নেই, সেখানে সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বনই উত্তম পথ। তবে এটি (অর্থাৎ “মুহাম্মাদ ﷺ সৃষ্টির সেরা”)—অনেক আলেমদের মাঝে প্রচলিত বা সুপরিচিত বিষয়, আপনি দেখবেন,তারা বলে থাকেন “মুহাম্মাদ ﷺ হচ্ছেন সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম (অশরাফুল খলক)”।(ইবনু উসাইমীন; লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, লিক্বা নং-৫৩/১১)
.
পরিশেষে, আমরা আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর রাসূলের ভালোবাসা দান করেন, আমাদের কাছে তাঁকে সন্তানসন্ততি, পিতামাতা, পরিবার-পরিজন ও নিজেদের জানের চেয়ে বেশি প্রিয় করে দেন। নিশ্চয়ই আল্লাহই সর্বজ্ঞ ও সর্বজ্ঞানী।
▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান হাফিজাহুল্লাহ।
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate