জোরে আমীন বলার ছহীহ হাদীছ সমূহ :
(1) عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ إِذَا قَرَأَ وَلاَ الضَّالِّيْنَ قَالَ آمِيْنَ وَرَفَعَ بِهَا صَوْتَهُ.
(১) ওয়ায়েল ইবনু হুজর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন ‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন’ বলতেন, তখন তিনি আমীন বলতেন। তিনি আমীনের আওয়াযটা জোরে করতেন।[1]
(2) عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ قَرَأَ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّيْنَ فَقَالَ آمِيْنَ وَمَدَّ بِهَا صَوْتَهُ.
(২) ওয়ায়েল ইবনু হুজর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন ‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন’ বলতেন তখন তাকে আমীন বলতে শুনেছি। তিনি আমীনের আওয়ায জোরে করতেন।[2] ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন,
وَبِهِ يَقُوْلُ غَيْرُ وَاحِدٍ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ وَالتَّابِعِيْنَ وَمَنْ بَعْدَهُمْ يَرَوْنَ أَنَّ الرَّجُلَ يَرْفَعُ صَوْتَهُ بِالتَّأْمِيْنِ وَلَا يُخْفِيْهَا وَبِهِ يَقُوْلُ الشَّافِعِيُّ وَأَحْمَدُ وَإِسْحَقُ.
‘রাসূলের ছাহাবী, তাবেঈ এবং তাদের পরবর্তী মুহাদ্দিছগণের মধ্যে অনেকেই এই কথা বলেছেন যে, মুছল্লী আমীন জোরে বলবে, নীরবে নয়। ইমাম শাফেঈ, আহমাদ ও ইসহাক্ব এ কথাই বলেছেন’।[3]
(3) عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ أَنَّهُ صَلَّى خَلْفَ رَسُوْلِ اللهِ فَجَهَرَ بِآمِيْنَ.
(৩) ওয়ায়েল ইবনু হুজর (রাঃ) একদা রাসূল (ছাঃ)-এর পিছনে ছালাত আদায় করেন। তখন রাসূল (ছাঃ) জোরে আমীন বলেন।[4]
(4) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ قَالَ إِذَا أَمَّنَ الْإِمَامُ فَأَمِّنُوْا فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ تَأْمِيْنُهُ تَأْمِيْنَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَقَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَقُوْلُ آمِيْنَ.
(৪) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ইমাম যখন আমীন বলবেন, তখন তোমরা আমীন বল। কারণ যার আমীন ফেরেশতাদের আমীনের সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। ইবনু শিহাব বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমীন বলতেন।[5]
(5) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ إِذَا قَالَ الْإِمَامُ غَيْرِالْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّيْنَ فَقُوْلُوْا آمِيْنَ فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.
(৫) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ইমাম যখন ‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন’ বলবেন, তখন তোমরা ‘আমীন’ বল। কারণ যার কথা ফেরেশতাদের কথার সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সকল পাপ ক্ষমা হয়ে যাবে’।[6] অন্য হাদীছে এসেছে, তোমরা আমীন বল আল্লাহ তোমাদের দু‘আ কবুল করবেন।[7] অন্য বর্ণনায় আছে, ক্বারী যখন আমীন বলবেন, তখন তোমরা ‘আমীন’ বল।[8]
ইমাম বুখারী (রহঃ) অনুচ্ছেদ রচনা করে বলেন, بَابُ جَهْرِ الْإِمَامِ بِالتَّأْمِيْنِ وَقَالَ عَطَاءٌ آمِيْنَ دُعَاءٌ أَمَّنَ ابْنُ الزُّبَيْرِ وَمَنْ وَرَاءَهُ حَتَّى إِنَّ لِلْمَسْجِدِ لَلَجَّةً… ‘ইমামের উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলা অনুচ্ছেদ। আত্বা বলেন, আমীন হল দু‘আ। ইবনু যুবাইর এবং তার পিছনের মুছল্লীরা এমন জোরে আমীন বলতেন, যাতে মসজিদ বেজে উঠত..’। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন- بَابُ جَهْرِ الْمَأْمُوْمِ بِالتَّأْمِيْنِ ‘মুক্তাদীর উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলা অনুচ্ছেদ’।[9]
জ্ঞাতব্য : অনেকে দাবী করেন, উক্ত হাদীছগুলোতে আমীন জোরে বলার কথা নেই। অথচ হাদীছে বলা হয়েছে ‘যখন ইমাম আমীন বলবে তখন তোমরা আমীন বল’। তাহলে ইমাম ‘আমীন’ জোরে না বললে মুক্তাদীরা কিভাবে বুঝতে পারবে এবং কখন আমীন বলবে? তাছাড়া মুছল্লীদের আমীনের সাথে ফেরেশতাদের আমীন কিভাবে মিলবে? অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ مَا حَسَدَتْكُمُ الْيَهُوْدُ عَلَى شَيْءٍ مَا حَسَدَتْكُمْ عَلَى السَّلاَمِ وَالتَّأْمِيْنِ.
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা ‘সালাম’ ও ‘আমীন’ বলার কারণে ইহুদীরা তোমাদের সাথে সবচেয়ে বেশী হিংসা করে’।[10]
ইহুদীরা যদি আমীন না শুনতে পায় তাহলে তারা হিংসা করবে কিভাবে? অতএব উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলার সুন্নাত গ্রহণ করাই হবে প্রকৃত মুমিনের দায়িত্ব। কিন্তু দুঃখজনক হল, এতগুলো হাদীছ থাকা সত্ত্বেও ‘হেদায়া’ কিতাবে বলা হয়েছে, মুক্তাদীরা নিম্নস্বরে ‘আমীন’ বলবে’।[11] এটাই মাযহাবী শিক্ষা। এছাড়াও ‘মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে’ বইটিতে নানা কৌশল ও অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেয়া হয়েছে।[12]
অনুরূপভাবে আল্লামা মুনীর আহমদ মুলতানী প্রণীত, রুহুল্লাহ নোমানী অনূদিত এবং আল-মাকবাতুতু (আল-মাকতাবাতুত) তাওফিকিয়্যাহ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম প্রকাশিত ‘আহলে হাদীসের প্রতি ওপেন চ্যালেঞ্জ’ নামে পুস্তকে উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলার সুন্নাতের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে। ফেরেশতাগণ আমীন আস্তে বলেন তাই আমীন আস্তে বলার দাবী করা হয়েছে। কিন্তু ইমাম আমীন জোরে না বললে মুক্তাদীরা যে শুনতে পাবে না এবং ইমামের সাথে আমীন বলতে পারবে না, তা লেখক বুঝেননি। তাছাড়া যঈফ হাদীছ উল্লেখ করে গলাবাজি করেছেন এবং ছহীহ হাদীছগুলোকে গোপন করে পাঠকদেরকে ধোঁকা দিয়েছেন আহলে হাদীসের প্রতি ওপেন চ্যালেঞ্জ, পৃঃ ৮৫-৮৭। মাযহাবী সম্পদকে রক্ষা করতে গিয়ে মিথ্যা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। এর পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ (বাক্বারাহ ৬৫; মায়েদাহ ৬০)।
উল্লেখ্য যে, ‘আহলে হাদীসের প্রতি ওপেন চ্যালেঞ্জ’ বইটিতে প্রথমে ১২টি মাসআলা আলোচনা করা হয়েছে এবং চ্যালেঞ্জ করে ২০ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। উক্ত ১২ মাসআলার মধ্যে অধিকাংশই ছালাত সংক্রান্ত, যা আমাদের বইয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আসলে মাসআলা বর্ণনা করা লেখকের মূল লক্ষ্য নয়; বরং অসত্য কথা বলে গালিগালাজ করা ও পাঠকদেরকে প্রতারণার ফাঁদে আটকানোই মূল উদ্দেশ্য। বইটির শেষে আহলে হাদীসের প্রতি ১০০টি প্রশ্ন করা হয়েছে। তার মধ্যে ৮৬টি প্রশ্নই তাকলীদ সংক্রান্ত, যার শারঈ কোন ভিত্তি নেই। অথচ আহলেহাদীছগণ কখনো বাজে কাজে সময় নষ্ট করেন না। তারা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের প্রতিনিধিত্ব করেন। শিরক, বিদ‘আত ও নব্য জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন, যা তাদের চিরন্তন বৈশিষ্ট্য (মুসলিম হা/৫০৫৯; আহমাদ হা/৪১৪২)। উক্ত লেখক ও অনুবাদক রূপকথার গল্প শুনিয়ে এবং অর্থের লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন। কুরআন-হাদীছ যেন তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। মুখরোচক কথা বলে অর্থে বিনিময়ে বিক্রয় করতে চায়। এধরনের চাকচিক্যময় কথা দ্বারা আদম সন্তানকে বিপদগামী করা কার স্বভাব, তা হয়ত তারা ভুলে গেছেন (আন‘আম ১১২-১১৩)। আমরা আশা করি হক্ব পিয়াসী মুমিনকে যখন শয়তান প্রতারণায় ফেলতে ব্যর্থ হয়, তখন তল্পীবাহক তথাকথিত মাযহাবী গোলামরাও ব্যর্থ হবে ইনশাআল্লাহ।
জ্ঞাতব্য : অনেক মসজিদে ইমাম ‘আমীন’ বলার পূর্বেই মুক্তাদীরা আমীন বলে থাকে। সে জন্য ইমাম ‘য-ল্লীন’ বলার পর ওয়াক্ফ না করেই একই সঙ্গে ‘আমীন’ বলে দেন। কোনটিই সঠিক নয়। বরং ইমাম ওয়াক্ফ করবেন।[13] অতঃপর ইমাম আমীন বলা শুরু করলে মুক্তাদীরাও একই সঙ্গে আমীন বলবে। যাতে করে ইমাম-মুক্তাদীর আমীন ও ফেরেশতাদের আমীন এক সঙ্গে হয়। অন্যথা আমীন বলার ফযীলত থেকে বঞ্চিত হবে।[14] আরো উল্লেখ্য যে, কোন মসজিদে ইমামের আমীন বলা শেষ হলে তারপর মুক্তাদীরা আমীন বলে। এটাও বাড়াবাড়ি।
No comments:
Post a Comment