প্রশ্নঃ টিভিতে ফুটবল, ক্রিকেট খেলা দেখা শরী‘আতসম্মত হবে কি?
উত্তরঃ নিম্নোক্ত কারণে এগুলি থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
(১) সময় ও অর্থের অপচয়। বিনোদনের নামে এসব খেলা মানুষের সময় নষ্ট করে। তাছাড়া এগুলি মানুষের পকেট ছাফ করে পুঁজিপতিদের পকেট ভর্তি করার একটা ফাঁদ মাত্র। আল্লাহ বলেন, ‘(সেই মুমিনগণ সফলকাম) যারা অনর্থক কাজ হ’তে বিরত থাকে’ (২৩। সূরাহ আল মুমিনূন আয়াতঃ ৩)। তিনি বলেন, তোমরা অপচয় করো না’। নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান ছিল তার প্রতিপালকের প্রতি অকৃতজ্ঞ’ (১৭। সূরাহ আল ইসরা আয়াতঃ ২৬-২৭)।
(২) এসব খেলা মূলতঃ অমুসলিমদের আবিষ্কৃত। সুতরাং অমুসলিম ও কাফেরদের খেলা দেখার মাধ্যমে প্রকারান্তরে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। যা থেকে বিরত থাকা মুসলমানের জন্য আবশ্যক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি যে কওমের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আহমাদ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৭)।
(৩) এসব খেলা একদিকে যেমন মানুষকে আল্লাহ্র স্মরণ থেকে গাফেল করে দেয়, অপরদিকে সমাজে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার প্রসার ঘটায়।
(৪) এর মধ্যে জুয়ার সম্পৃক্ততা রয়েছে, যা এটিকে আরো কঠিন হারামে পরিণত করেছে (০৫। সূরাহ আল মায়েদাহ আয়াতঃ ৯০)।
(৫) এই খেলাগুলো অশ্লীল নাচ গান হয়, নারী পূরুষের অবাধ বিচরণ, এই খেলাকে কেন্দ্র করে হাটে বাজারে জুয়ার আসর, কোটি কোটি টাকা সরকারের অপব্যয়, বিদ্যুতের খরচ ইত্যাদি।
(৬) মদের বিজ্ঞাপন, বেপর্দা নারী বিজ্ঞাপন, মানুষে মানুষে রেশারেশী এমনকি খুনাখুনী পর্যন্ত হয়। অতত্রব এইসব খেলা দেখা হারাম
পিরিয়ডের কারণে ছুটে যাওয়া রোযাগুলো রামাযানের পরবর্তীতে কাজা করলে রামাযানের সমপরিমান সওয়াব পাওয়া যাবে কি?
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
উত্তর : পিরিয়ডের কারণে ছুটে যাওয়া রোযাগুলো রামাযানের পরবর্তীতে কাজা করলেও ইনশাআল্লাহ রামাযানের সমপরিমান সওয়াব পাওয়া যাবে।
অনুরূপভাবে সফর বা অসুস্থ জনিত কারণে রোযা ভঙ্গ করার পর যদি তা পরবর্তীতে কাজা করা হয় তাহলেও একই সওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। কারণ সে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী রোযা ভঙ্গ করেছে। তাছাড়া হাদীসে এসেছে-
«إذا مرضَ العبدُ أو سافر، كُتب له مثل ما كان يعمل، مقيماً صحيحا».
“বান্দা অসুস্থ হলে বা সফর করলে (তার আমলনামায়) ঐ সওয়াব লেখা হবে সুস্থ ও অাবাস অবস্থায় আমল করলে যে সওয়াব লেখা হত।” (সহীহুল জামে, হা/৭৯৯)
〰〰〰〰〰 〰〰〰〰〰
প্রশ্ন : রামাযানে নফল ইবাদত করলে কি দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যায়?
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
উত্তর : রমাযানে নফল ইবাদত করলে দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যায়- এ কথা সঠিক নয়। অনুরূভাবে রামাযানে একটি নফল অন্যান্য মাসে ফরজের সমান সওয়াব অথবা রামাযানে একটি ফরজ অন্যান্য মাসে সত্তরটি ফরজের সমান মর্মে বণিত হাদীসটি যঈফ বা গ্রহণযোগ্য নয়।
উত্তর দিয়েছেন শাইখ Abdullahil Hadi
ছিয়াম অবস্থায় গান শোনা, মিথ্যা কথা বলা, মেয়েদের দিকে কুদৃষ্টি দেওয়া প্রভৃতি পাপ কাজ করলে ছিয়াম বাতিল হয়ে যাবে। উক্ত বক্তব্যটি কি সঠিক?
✔★
উত্তর : কেবল সারাদিন পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকার নাম ছিয়াম নয়। বরং ছিয়াম সাধনা হচ্ছে পানাহার থেকে বিরত থাকার সাথে সাথে সকল প্রকার মিথ্যা থেকে বিরত থাকা। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকে না, সে ব্যক্তির পানাহার থেকে বিরত থাকাতে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই (বুখারী হা/১৯০৩; মিশকাত হা/১৯৯৯) । তাই এক্ষেত্রে ছিয়াম সরাসরি বাতিল না হলেও, নিঃসন্দেহে তা ক্রটিপূর্ণ হবে।আত-তাহরীক: সেপ্টেম্বর 2012
মহিলাগণ কোথায় ইতিকাফ করবে?
এ আয়াতগুলোতে মসজিদে ইতিকাফ করার কথা উল্লেখিত হয়েছে।
নারীদের জন্য তার ঘরকে মসজিদ বলা ঠিক নয়। কারণ, মসজিদে ঋতুবতি মহিলাদের প্রবেশ নিষেধ। ঘর যদি মসজিদ হত তাহলে সে ঘরে মহিলাদের অবস্থান করা বৈধ হত না এবং ঐ ঘর বিক্রয় করা বৈধ হত না।
– আবদুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল।
কেমন হওয়া উচিত স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক?
রোজাদার ভুলক্রমে পানাহার করলে তার ছিয়ামের বিধান কি? কেউ এটা দেখলে তার করণীয় কি?
■উত্তরঃ
=====
রামাযানের রোযা রেখে কেউ যদি ভুলক্রমে খানা-পিনা করে তবে তার ছিয়াম বিশুদ্ধ। তবে স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে বিরত হওয়া ওয়াজিব। এমনকি খাদ্য বা পানীয় যদি মুখের মধ্যে থাকে এবং স্মরণ হয়, তবে তা ফেলে দেয়া ওয়াজিব। ছিয়াম বিশুদ্ধ হওয়ার দলীল হচ্ছে, আবু হুরায়রা (رضى الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেন,
مَنْ نَسِيَ وَهُوَ صَائِمٌ فَأَكَلَ أَوْ شَرِبَ فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ فَإِنَّمَا أَطْعَمَهُ اللَّهُ وَسَقَاهُ
যে ব্যক্তি রোযা রেখে ভুলক্রমে পানাহার করে, সে যেন তার ছিয়াম পূর্ণ করে। কেননা আল্লাহ্ই তাকে খাইয়েছেন ও পান করিয়েছেন। [বুখারী হা/১৯৩৩; মুসলিম হা/২৭৭২]
.
তাছাড়া ভুলক্রমে নিষিদ্ধ কাজ করে ফেললে তাকে পাকড়াও করা হবে না। আল্লাহ্ বলেন,
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا
-হে আমাদের পালনকর্তা আমরা যদি ভুলে যাই বা ভুলক্রমে কোন কিছু করে ফেলি, তবে আমাদের পাকড়াও করবেন না। [সূরা বাক্বারাঃ ২৮৬]
.
কেউ যদি দেখতে পায় যে ভুলক্রমে কোন মানুষ খানা-পিনা করছে, তবে তার উপর ওয়াজিব হচ্ছে, তাকে বাঁধা দেয়া এবং ছিয়ামের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া। কেননা ইহা গর্হিত কাজে বাধা দেয়ার অন্তর্গত। নবী ﷺ বলেন,
مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ
-যে ব্যক্তি কোন গর্হিত কাজ হতে দেখবে, সে যেন হাত দ্বারা বাধা প্রদান করে, যদি সম্ভব না হয় তবে যবান দ্বারা বাধা দিবে, যদি তাও সম্ভব না হয় তবে অন্তর দ্বারা তা ঘৃণা করবে।[[মুসলিম, অধ্যায়ঃ ঈমান, অনুচ্ছেদঃ গর্হিত কাজে বাধা দেয়া ঈমানের অন্তর্ভূক্ত, হা/৮১।]
.
সন্দেহ নেই রোযা রেখে খানা-পিনা করা একটি গর্হিত কাজ। কিন্তু ভুল ক্রমে হওয়ার কারণে তাকে ক্ষমা করা হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি তা দেখবে তার জন্য তাতে বাধা না দেয়ার কোন ওযর থাকতে পারে না।
.
_______________________
লেখক/সংকলকঃ শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)
গ্রন্থঃ ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম
বিভাগঃ সিয়াম
প্রশ্ন নং ৪১০
প্রশ্নঃ সন্তানকে দুগ্ধদানকারীনী কি রোযা ভঙ্গ করতে পারবে? ভঙ্গ করলে কিভাবে কাযা আদায় করবে? নাকি রোযার বিনিময়ে খাদ্য দান করবে?
.
■উত্তরঃ
=====
দুগ্ধদানকারীনী রোযা রাখার কারণে যদি সন্তানের জীবনের আশংকা করে অর্থাৎ রোযা রাখলে স্তনে দুধ কমে যাবে ফলে শিশু ক্ষতিগ্রস্থ হবে, তবে মায়ের রোযা ভঙ্গ করা জায়েয। কিন্তু পরবর্তীতে তার কাযা আদায় করে নিবে। কেননা এ অবস্থায় সে অসুস্থ ব্যক্তির অনুরূপ। যার সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন,
وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ
-আর যে লোক অসুস্থ অথবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করে নিবে।
[সূরা বাক্বারা হা/১৮৫ ]
.
অতএব রোযা রাখার ব্যাপারে যখনই বাধা দূর হবে তখনই কাযা আদায় করবে। চাই তা শীতকালে অপেক্ষাকৃত ছোট দিনে হোক অথবা সম্ভব না হলে পরবর্তী বছর হোক। কিন্তু ফিদ্ইয়া স্বরপ মিসকীন খাওয়ানো জায়েয হবে না। তবে ওযর যদি চলমান থাকে অর্থাৎ সার্বক্ষণিক রোযা রাখায় বাধা দেখা যায় যা বাধা দূর হওয়ার সম্ভবনা না থাকে, তখন প্রতিটি রোযার বদলে একজন করে মিসকীনকে খাওয়াবে।
.
_______________________
লেখক/সংকলকঃ শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)
গ্রন্থঃ ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম
বিভাগঃ সিয়াম
প্রশ্ন নং ৪০৬
■উত্তরঃ
======
তার উপর আবশ্যক হচ্ছে, ঋতু অবস্থায় যে কয়দিনের ছিয়াম আদায় করেছে সেগুলোর কাযা আদায় করা। কেননা ঋতু অবস্থায় ছিয়াম পালন করলে বিশুদ্ধ হবে না এবং গ্রহণীয় হবে না। যদিও তা অজ্ঞতা বশতঃ হয়ে থাকে। তাছাড়া পরবর্তীতে যে কোন সময় তা কাযা করা সম্ভব। কাযা আদায় করার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় নেই।
.
এর বিপরীত আরেকটি মাসআলা হচ্ছে, অল্প বয়সে জনৈক বালিকা ঋতুবতী হয়ে গেছে। কিন্তু লজ্জার কারণে বিষয়টি কারো সামনে প্রকাশ করেনি এবং তার ছিয়ামও পালন করেনি। এর উপর ওয়াজিব হচ্ছে, উক্ত মাসের ছিয়াম কাযা আদায় করা। কেননা নারী ঋতুবতী হয়ে গেলেই প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যায় এবং শরীয়তের যাবতীয় বিধি-বিধান পালন করা তার উপর ফরয হয়ে যায়।
.
_______________________
লেখক/সংকলকঃ শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)
গ্রন্থঃ ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম
বিভাগঃ সিয়াম
প্রশ্ন নং ৩৯৬
No comments:
Post a Comment