প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ ছিলেন এক মহান আদর্শ মানব। তিনি শুধু নবুওয়ত ও রিসালাতের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে নয় বরং সত্যিকার মানুষ হিসেবে তার মধ্যে যে মানবিক অনন্য সাধারণ গুণাবলীর সমাবেশ ঘটেছিলো তা নি:সন্দেহে বিশ্ববাসীর অনুসরণীয়-অনুকরণীয়। এ পর্যায়ে শিশুদের সাথে তাঁর কোমল আচরণ এবং স্নেহ, মমতা ও ভালবাসার এক অপূর্ব খণ্ড চিত্র দেখব ইনশাআল্লাহ।
◈ ১) জাবের ইবনে সামুরাহ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে ফজরের সালাদ আদায় করলাম। অতঃপর তিনি বাড়ির দিকে বের হলে আমিও তার সাথে বের হলাম। পথিমধ্যে তার সাথে কিছু বাচ্চার সাক্ষাৎ হল। তিনি তাদের এক এক করে প্রত্যেকের উভয় গালে হাত বুলাতে লাগলেন।
মাহমুদ রা. বলেন, তিনি আমার উভয় গালে হাত বুলালেন। আমি তার হাতের শীতল সুগন্ধিময় পরশ উপলব্ধি করলাম-যেন তার হাতের সাথে সুগন্ধি ব্যবসায়ীর সামগ্রীর ছোঁয়া লেগেছে।” (সহিহ মুসলিম)
◈ ২) উসামার প্রতি তাঁর ভালোবাসা:
উসামা ইবনে যায়েদ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ধরে তার এক রানে বসাতেন আর হাসানকে বসাতেন অন্য রানে। অতঃপর তাদের একত্র করতেন এবং বলতেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি তাদের উভয়ের প্রতি দয়া করো, কেননা আমি তাদের প্রতি দয়া করি।” (সহিহ বুখারি)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, “হে আল্লাহ, আমি তাদের ভালোবাসি। সুতরাং আপনিও তাদের ভালবাসুন।” (সহিহ বুখারি)
◈ ৩) মাহমুদ ইবনে রবী এর সাথে তাঁর কৌতুক:
শাইখ ইবনে বায রহ. বলেন, “এটা কৌতুক ও উত্তম চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত।”
◈ ৪) শিশুদেরকে আদরের চুমু দেয়া:
◍ খ. আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “কিছু গ্রাম্য লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, “তোমরা তোমাদের বাচ্চাদের চুমো খাও। আমরা তাদের চুমো খাই না।” নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমার অন্তরে দয়া উদ্রেক করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় যদি আল্লাহ তা ছিনিয়ে নিয়ে থাকেন।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
◈ ৫. হাসান ও হুসাইন রা. এর সাথে তাঁর আদর পূর্ণ ব্যবহার:
◍ গ. বারা ইবনে আযেব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি হাসান ইবনে আলী রা.কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাঁধে দেখেছি এবং বলতে শুনেছি, “হে আল্লাহ, আমি তাকে ভালোবাসি। অতএব, আপনিও তাকে ভালবাসুন।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
◈ ৬) সেজদা অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিঠে বাচ্চার আরোহণ:
◈ ৭) নামাজরত অবস্থায় যয়নব রা. এর মেয়েকে কোলে তুলে নেয়া:
আবু কাতাদা থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ পড়া অবস্থায় উমামা বিনতে যয়নবকে বহন করছিলেন। যখন তিনি সেজদা করতেন তখন তাকে রেখে দিতেন আর যখন দাঁড়াতেন তখন তাকে কোলে তুলে নিতেন।” (সহিহ বুখারি)
◈ ৮) শিশু বাচ্চারা কাঁদার সময় তাঁর নামাজ পড়া সংক্ষিপ্ত করা:
তিনি কোনও শিশু বাচ্চার কাঁদার আওয়াজ শুনলে সালাত সংক্ষিপ্ত করতেন। এ ব্যাপারে আবু কাতাদাহ রা. তার পিতা থেকে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যখন আমি সালাতে দাঁড়াই তখন ইচ্ছা থাকে নামায দীর্ঘ করব। কিন্তু যখন কোনও শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনি, তখন তার মায়ের কষ্ট হবে ভেবে আমি নামাজ সংক্ষেপ করি।” (সহিহ বুখারি)
◈ ৯) উম্মে খালেদের সাথে হাবশী ভাষায় কৌতুক:
এ ব্যাপারে উম্মে খালেদ বিনতে খালেদ ইবনে সাঈদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি আমার বাবার সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এলাম। তখন আমার গায়ে হলুদ রঙ্গের জামা ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘ছানাহ! ছানাহ!’’ এটি হাবশী ভাষার শব্দ যার অর্থ, চমৎকার! চমৎকার!
অর্থাৎ বর্ণনাকারী তার দীর্ঘ জীবনের কথা বুঝিয়েছেন। অনেকে বলেছেন, উম্মে খালেদের মতো আর কেহ এত দীর্ঘ জীবন লাভ করে নি।
◈ ১০) আবু উমায়ের সাথে তার কৌতুক:
◈ ১১) শিশু বাচ্চাদের সালাম দেয়া:
আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি শিশু বাচ্চাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাদের সালাম দিতেন এবং বলতেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করতেন। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
◈ ১২) রাসূলের কোলে শিশুদের প্রস্রাব:
◈ ১৩) বড়দের ওপর শিশুদের অগ্রাধিকার দেয়া:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ডান পাশের শিশু ছেলেকে বড়দের আগে শরবত দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সাহল ইবনে সা’দ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এক পেয়ালা শরবত আনা হল। তার থেকে তিনি শরবত পান করলেন এবং তার ডান পাশে ছিল দলের সবচেয়ে ছোট একটি ছেলে, আর বড়রা ছিল তার বাম পার্শ্বে। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “হে ছেলে, তুমি কি আমাকে অনুমতি দেবে যে, আমি তা বড়দের আগে দেব?”
ছেলেটি বলল, “হে আল্লাহর রাসূল, আপনার অনুগ্রহ লাভের ব্যাপারে আমি অন্য কাউকে আমার উপর প্রাধান্য দেব না।”
অতএব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকেই প্রথমে দিলেন। (সহিহ বুখারি)
No comments:
Post a Comment